বারনাবাস এর ইঞ্জিল (Gospel) থেকে...পর্ব ৮
{ আগের পর্ব পড়ে না থাকলে, পড়ে আসতে অনুরোধ করছি... যদি পড়া না থাকে তাহলে ৭ম পর্বের লিঙ্ক এখানে আর, একদম প্রথম থেকে পড়তে চাইলে, এখানে ক্লিক করুন :) }
একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার, বর্তমান বাইবেলের John 20:19 এ বলা আছে, পুনর্জীবিত যীশু যখন সাহাবীদের কাছে আসলেন, তারা ভূত দেখার মতো চমকে উঠে। যীশু কীভাবে সম্বোধন করলেন জানেন? :) তিনি সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বললেন, "শালোম আলেইকেম" যার অর্থ হিব্রুতে "Peace Be Upon You." :)
যাক, একটা ব্যাপার। বারনাবাস এর মতে, ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিল জুডাস। এহুদা। আসলে, একমাত্র বারনাবাসই কিন্তু একমাত্র গস্পেল না যেটাতে বলা হয়েছে এ কথা। যীশু যে আসলে ক্রুশবিদ্ধ হননি, এ সত্যটা অনেক গস্পেলেই ছিল! উদাহরণ স্বরূপ বলতে পারি, গস্পেল অফ পিটার। এখানেও এ কথা আছে। আগেই বলেছি, ৩২৫ সালে কাউন্সিল অফ নাইসিয়াতে বাইবেল এর লিখনীগুলো নির্বাচনের সময় চুজ করা হয় সেই গস্পেলগুলোকে যেগুলো "গুজব"-এ বিশ্বাস করা হয়েছিল। এতে খ্রিস্টধর্ম ধ্বংসের ষড়যন্ত্রকারীদের হাত থাকতে পারে... এ বিষয়ে ইনশাল্লাহ শেষ পর্বে লিখব...
কয়েকজন ইসলামি চিন্তাবিদ মনে করেন, ঈসাকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয় বটে তবে তিনি মারা যাননি, অর্থাৎ তাঁকে হত্যা করা হয়নি। যেমনটা কুরআনে বলা হয়েছে।
কুরআনের ৪:১৫৭ অনুযায়ী চিন্তা করলে নিচের ৩ রকমের জোর দেয়া যায়, দেখুন- আমি ইংলিশে লিখছি... "তারা তাঁকে হত্যা করেনি, ক্রুশবিদ্ধও করেনি।"
১) “They did not kill him” (তারা করে নি। ইহুদীরা না। তাহলে অন্য কেউ? এরকম একটা জোর দেয়া যায়।)
২) “They did not kill him” (তারা হত্যা করতে পারেনি। অর্থাৎ এত কিছুর পর তিনি বেঁচে ছিলেন।)
৩) “They did not kill him” (তারা তাঁকে মানে ঈসাকে হত্যা করেনি।)
দেখুন, ১ নং পয়েন্ট, এটা সিওর সব দিক থেকে, ইহুদীরা দায়ী ছিল। সো, এ পয়েন্ট বাদ।
২ নং পয়েন্ট, এটা অনেক চিন্তাবিদ বলেন, আসলে তাঁকে হত্যা করতে পারেনি। তাঁকে ক্রুশে দিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তিনি সহ্য করেছিলেন। কিন্তু আল্লাহ বলেছেন, "তারা তাঁকে হত্যা করেনি, ক্রুশবিদ্ধও করেনি।" আল্লাহ কত সুন্দরভাবে পরিষ্কার করে দিয়েছেন। কিন্তু, তারা বলেন, আসলে, ক্রুসিফাই শব্দের অর্থ ক্রুশবিদ্ধ করেমারা, কেবল ক্রুশে চড়ানো নয়। তাই যদি হত তাহলে, আল্লাহ কি হত্যা আর ক্রুশের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করতেন? এজন্য, আমি এ তত্ত্ব বিশ্বাস করি না। মানতে পারি না।
আরেকটা মজার ব্যাপার আমি খেয়াল করলাম, বাইবেল পড়তে গিয়ে, ক্রুশবিদ্ধ "যীশু"র সামনে মা মেরি কাঁদছেন... তখন যীশু তাঁকে সম্বোধন করছেন, "হে মহিলা!!" (জন ১৯:২৬) আপনি কি আপনার মাকে ওহে মহিলা বলে সম্বোধন করবেন? যেখানে চরম কষ্টের সময় আমরা মা বা আম্মু চিৎকার করি, সেখানে তিনিহে মহিলা বলছেন! :) এতে কি মাথায় আসছে আপনার? হয় তিনি যীশু এবং তিনি খুবই অভদ্র আর মায়ের সাথে খারাপ আচরণ করেন, অথবা তিনি যীশুই নন।
কুরআন কোনটাকে সাপোর্ট করে? আসুন দেখি-
"ঈসা বললেন... তিনি (আল্লাহ) আমাকে করেছেন মায়ের প্রতি অনুগত, আর তিনি আমাকে উদ্ধত করে বানাননি।" (মারিয়াম, ১৯:৩২)
কত সুন্দর করে আল্লাহ বলে দিয়েছেন, বিশেষ করে এ পয়েন্টটা মেনশন করে দিয়েছেন... মাঝে মাঝে একদম এক্সাক্ট আয়াত পেলে অবাক হয়ে যাই। :D তাহলে, কুরআন প্রথম অপশন ক্যানসেল করে দিল। থাকল ২য় অপশন, খুবই যুক্তিসঙ্গত অপশন।
এ পয়েন্টটা কেন ডিবেটের সময় কেউ বলেন না? আমি বুঝি না... :(
আরেকটা ব্যাপার, কারা এহুদার বডি চুরি করল, এবং কেন হতে পারে, লাভ কী, এ ব্যাপারে কার কী থিয়োরি আছে সেটা কমেন্ট এ উল্লেখ করলে খুব খুশি হব... :D
ইহুদীরা বিশ্বাস করে, যে ক্রুশে চড়ে মারা গেল সে অভিশপ্ত। (তাওরাত, ২য় বিবরণ, ২১:২৩) এ জন্য যীশু মসীহ (খ্রিস্ট) কিনা আসলেই, সেটা তারা পরীক্ষা করে দেখল। যেহেতু ক্রুশবিদ্ধ হয়েছে, তাহলে সে আসলে মসীহ না। ভণ্ড।
কিন্তু, আসলে তো ঈসা (আ) হলেন ক্রাইস্ট, মসীহ।
যাক, এবার আগের পর্বের পর থেকে শুরু করা যাক, বারনাবাসের গস্পেল...
অধ্যায় ২১৭
...
এরপর তারা এহুদাকে বেঁধে নিয়ে গেল গভর্নর পাইলেটের কাছে। কেউ জানত না যে, পাইলেট গোপনে ঈসাকে বিশ্বাস করতেন আর ভালবাসতেন। তাই পাইলেট তাঁকে তাঁর কক্ষে একা ঢুকতে দিলেন, জিজ্ঞেস করলেন, তাঁর প্রতি কেন সবাই এমন করছে? অবশ্য, তিনি এহুদাকে ঈসা ভেবেছিলেন।
এহুদা বলল, “আরে! আপনিও দেখি ওদের মতো পাগল হয়ে গিয়েছেন!”
গভর্নর বুঝতে পারলেন না। তিনি তাঁর সাথে পাক কিতাবের ব্যাপারে কথা বলতে চাইলেন, “জান তো, আমি একজন ইহুদী না? আমাকে সত্যি কথা বল। আমি ন্যায়বিচার করব। আমার হাতে তোমাকে মুক্ত করার আবার মৃত্যুদণ্ড দেয়ার ক্ষমতাও আছে।”
এহুদা বলল, “বিশ্বাস করুন, আপনি আমাকে মারলে একজন নিরপরাধ লোককে মারা হবে; দেখুন, আমি তো এহুদা ইস্কারিয়ত; ঈসা নাসারা নই। ঈসা একজন জাদুকর। সে তাঁর জাদু দিয়ে আমার চেহারা বদলে দিয়েছে।”
এ কথা শুনে গভর্নর পাইলেট খুবই আশ্চর্য হলেন, তিনি তাঁকে ছেড়ে দিতে চাইলেন। তিনি বেরিয়ে এসে বললেন, “আমি তো এ লোকের মধ্যে কোন দোষ খুঁজে পাচ্ছি না। এ লোক বলছে যে সে নাকি এহুদা, যে কিনা ঈসাকে ধরিয়ে দিতে গিয়েছিল। সে বলছে, গালিলির ঈসা জাদু করে তাঁর চেহারা পালটে দিয়েছে। এ কথা সত্য হলে এ নিরপরাধ লোককে মারা বড় অন্যায় হবে। আর যদি সে ঈসা হয় কিন্তু মনে করে সে ঈসা না, তাহলে সে তো পাগল হয়ে গিয়েছে। পাগলকে হত্যা করা নিষিদ্ধ।”
তখন ইহুদীরা চিৎকার করে উঠল, “সে ঈসা নাসারা! আমরা তাঁকে চিনি। তাঁর অপরাধের জন্যই আমরা তাঁকে আপনার হাতে দিয়েছি। সে কেবল পাগলের অভিনয় করছে যেন সে ছাড়া পেয়ে আবার কুফরি করতে পারে।”
পাইলেট এ মামলা থেকে মুক্তি চাইলেন। তিনি বললেন, “সে তো গালিলির অধিবাসী। আর গালিলির রাজা তো হেরোদ। তাই তাঁকে হেরোদ বিচার করবেন।”
তারা এহুদাকে হেরোদের কাছে নিয়ে গেল। হেরোদ চাইতেন ঈসা তাঁর ঘরে যাক, কিন্তু হেরোদ ইহুদী না হওয়ায় ঈসা তাঁর ঘরে যেতেন না। কিন্তু এবার এহুদাকে দেখে হেরোদ আশ্চর্য হলেন। তিনিও তাঁকে ঈসা ভাবলেন।
হেরোদ এহুদাকে অনেক প্রশ্ন করলেন। কিন্তু এহুদার উত্তরগুলো অসঙ্গত হল। বারবার সে বলল, যে সে ঈসা না। তখন হেরোদ তাঁকে বিদ্রূপ করলেন। তিনি তাঁকে সাদা একটা কাপড় পড়ালেন। যেমনটা তখন বোকাদের পড়ান হত। তিনি তাঁকে পাইলেটের কাছে ফেরত পাঠালেন, বললেন, “ইসরাইলবাসীদের উপর অবিচার করো না! একে শাস্তি দাও!”
এ কথা হেরোদ বলেছিলেন কেন? কারণ, ইহুদী ইমামরা তাঁকে ঘুষ দিয়েছিল। রাজার আদেশ মানা বাধ্যতামূলক তাই গভর্নর পাইলেটকে তাই করতে হল।
পাইলেট তাঁকে ইহুদীদের হাতে ছেড়ে দিলেন হত্যা করবার জন্য। কিন্তু আল্লাহ এহুদাকে ক্রুশে চড়ানোর জন্য সংরক্ষন করলেন। যেন সে বিস্বাসঘাতকতার শাস্তি পায় ঠিকই। তাই সৈন্যদের অসহনীয় পাশবিক নির্যাতনে এহুদার দেহ রক্তে লাল হয়ে গেল, কিন্তু সে মরল না। বিদ্রূপ করে তারা তাঁকে একটা পুরনো পোশাক পড়াল। বলল, “দেখ, এ পোশাকে আমাদের নতুন রাজাকে কত মানাচ্ছে! এখন তাঁকে মুকুট পড়াতে হবে!” তারা অনেক কাঁটা যোগাড় করে আনল আর মুকুট বানাল। তারপর সে মুকুট এহুদার মাথায় পড়িয়ে তাঁকে উঁচু স্থানে বসাল।
সৈন্যরা ব্যঙ্গাত্মকভাবে তাঁকে স্যালুট দিতে লাগল। তারপর সামনে হাত পেতে বলল, “আপনাকে মুকুট পড়ান হয়েছে; বোকা রাজা, আপনি কি আপনার সৈন্যদের কোন পুরস্কার দেবেন না?”
অন্যদিকে, ষড়যন্ত্রকারী ইহুদীরা দেখল, ঈসা (এহুদা) মরে নি!! তারা ভাবল পাইলেট তাঁকে ছেড়ে দিবেন। তারা পাইলেটের কাছ থেকে এহুদাকে ক্রুশে দেয়ার আদেশ আদায় করল। পাইলেট আদেশ দিলেন, এহুদাকে ক্রুশে ঝুলানো হোক। তাঁর সাথে আরও দুজন ডাকাতকেও ক্রুশে দেয়া হল।
তারা তখন এহুদাকে কাল্ভারি পর্বতের গল্গথা নামের জায়গায় নিয়ে গেল। এ জায়গায় তখনকার অপরাধীদের ক্রুশে ঝুলানো হত। সেখানে তারা এহুদাকে ক্রুশবিদ্ধ করল।
সত্যি বলছি, এহুদা কিছুই করতে পারল না, কিছুই না...
শুধু শেষ দিকে, মারা যাবার আগে সে কেবল চিৎকার করে উঠল, “ইলাহি, ইলাহি, লামা সাবাখতানি?? (খোদা আমার! খোদা আমার! কেন তুমি আমায় পরিত্যাগ করলে?) তুমি কি দেখছ না যে, ঐ ভণ্ড জাদুকরটি পালিয়ে গেছে আর আমি নির্দোষভাবে এখানে মারা যাচ্ছি?” এরপর সে মারা গেল।
বিশ্বাস করুন, তাঁর কণ্ঠস্বর, চেহারা, গঠন সবই এত বেশি ঈসার মতো দেখা যাচ্ছিল যে তাঁর সাহাবিরাও বিশ্বাস করল যে, সে ঈসা। অনেকেই ধর্ম ত্যাগ করল, ভাবল যে আসলেই ঈসা একজন ভণ্ড নবী। তাঁর সব কাজ কালো জাদু দিয়ে করা। ঈসা বলেছিলেন তিনি কিয়ামতের আগে আগে মরবেন, এর আগে তাঁকে উঠিয়ে নেয়া হবে। কিন্তু, ওরা দেখল তা হয়নি।
কিন্তু, যারা ঈমান ত্যাগ করেনি তারাও প্রচণ্ড দুঃখ পেল, এহুদাকে দেখে তারা ভুলে গেল ঈসা কী বলে গিয়েছিলেন। ঈসার মাকে নিয়ে ইউহানা (জন) আর মেরি মাগডালিন কাল্ভারি পাহাড়ে গিয়েছিল। কাঁদতে কাঁদতে তারা ঈসার মৃত্যু দেখল। নিকোদিমা আর আরামাথিয়া গ্রামের ইউসুফ (Joseph of Aramethea) এর সহায়তায় তারা গভর্নরের কাছ থেকে এহুদার লাশ কবর দিতে চেয়ে নিল।
কাঁদতে কাঁদতে ক্রুশ থেকে নামান হল এহুদার লাশ...
শেষ পর্যন্ত তাঁকে ইউসুফের সমাধিতে রাখা হল। তাঁর লাশকে শত সুগন্ধিতে মাখান হল।
অধ্যায় ২১৮
তারপর সবাই ঘরে ফিরল। আমি ইউহানা (জন), তাঁর ভাই ইয়াকুব (জেমস) আর মা মরিয়মের (মেরি) সাথে নাসরাত গ্রামে ফিরে এলাম।
এর মাঝে এক ঘটনা ঘটল... আল্লাহর ভয় নেই মনে এমন কিছু কুচক্রী লোক রাতের আধারে সমাধির মুখ থেকে পাথর সরিয়ে এহুদার লাশ চুরি করল আর লুকিয়ে ফেলল। তারা রটিয়ে দিল যে ঈসা মৃত্যু থেকে জীবিত হয়েছেন; ব্যাপক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হল। তখন ইমাম কায়াফা ফতোয়া জারি করলেন, কেউ ঈসা নাসারার কথা বলতে পারবে না। ফতোয়া অমান্য করায় অনেককে শাস্তি পেতে হল, অনেককে পাথর মেরে হত্যা করা হল।
নাসরাত গ্রামে এ খবর এসে পোঁছাল যে, ঈসা ক্রুশে মারা যাবার পর পুনর্জীবিত হয়েছেন। তখন আমি ঈসার মাকে অনুরোধ জানালাম কান্না থামাতে। তাঁর ছেলে পুনর্জীবিত হয়েছেন।
কাঁদতে কাঁদতে মরিয়ম বললেন, “চল, আমরা আমার ছেলেকে দেখতে জেরুজালেম যাই। তাঁকে দেখলে আমি শান্তিতে মরতে পারব।”
আমরা রওনা দিলাম।
পরের পর্ব
একটা ইন্টারেস্টিং ব্যাপার, বর্তমান বাইবেলের John 20:19 এ বলা আছে, পুনর্জীবিত যীশু যখন সাহাবীদের কাছে আসলেন, তারা ভূত দেখার মতো চমকে উঠে। যীশু কীভাবে সম্বোধন করলেন জানেন? :) তিনি সাহাবীদের উদ্দেশ্যে বললেন, "শালোম আলেইকেম" যার অর্থ হিব্রুতে "Peace Be Upon You." :)
যাক, একটা ব্যাপার। বারনাবাস এর মতে, ক্রুশবিদ্ধ হয়েছিল জুডাস। এহুদা। আসলে, একমাত্র বারনাবাসই কিন্তু একমাত্র গস্পেল না যেটাতে বলা হয়েছে এ কথা। যীশু যে আসলে ক্রুশবিদ্ধ হননি, এ সত্যটা অনেক গস্পেলেই ছিল! উদাহরণ স্বরূপ বলতে পারি, গস্পেল অফ পিটার। এখানেও এ কথা আছে। আগেই বলেছি, ৩২৫ সালে কাউন্সিল অফ নাইসিয়াতে বাইবেল এর লিখনীগুলো নির্বাচনের সময় চুজ করা হয় সেই গস্পেলগুলোকে যেগুলো "গুজব"-এ বিশ্বাস করা হয়েছিল। এতে খ্রিস্টধর্ম ধ্বংসের ষড়যন্ত্রকারীদের হাত থাকতে পারে... এ বিষয়ে ইনশাল্লাহ শেষ পর্বে লিখব...
কয়েকজন ইসলামি চিন্তাবিদ মনে করেন, ঈসাকে ক্রুশবিদ্ধ করা হয় বটে তবে তিনি মারা যাননি, অর্থাৎ তাঁকে হত্যা করা হয়নি। যেমনটা কুরআনে বলা হয়েছে।
কুরআনের ৪:১৫৭ অনুযায়ী চিন্তা করলে নিচের ৩ রকমের জোর দেয়া যায়, দেখুন- আমি ইংলিশে লিখছি... "তারা তাঁকে হত্যা করেনি, ক্রুশবিদ্ধও করেনি।"
১) “They did not kill him” (তারা করে নি। ইহুদীরা না। তাহলে অন্য কেউ? এরকম একটা জোর দেয়া যায়।)
২) “They did not kill him” (তারা হত্যা করতে পারেনি। অর্থাৎ এত কিছুর পর তিনি বেঁচে ছিলেন।)
৩) “They did not kill him” (তারা তাঁকে মানে ঈসাকে হত্যা করেনি।)
দেখুন, ১ নং পয়েন্ট, এটা সিওর সব দিক থেকে, ইহুদীরা দায়ী ছিল। সো, এ পয়েন্ট বাদ।
২ নং পয়েন্ট, এটা অনেক চিন্তাবিদ বলেন, আসলে তাঁকে হত্যা করতে পারেনি। তাঁকে ক্রুশে দিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু তিনি সহ্য করেছিলেন। কিন্তু আল্লাহ বলেছেন, "তারা তাঁকে হত্যা করেনি, ক্রুশবিদ্ধও করেনি।" আল্লাহ কত সুন্দরভাবে পরিষ্কার করে দিয়েছেন। কিন্তু, তারা বলেন, আসলে, ক্রুসিফাই শব্দের অর্থ ক্রুশবিদ্ধ করেমারা, কেবল ক্রুশে চড়ানো নয়। তাই যদি হত তাহলে, আল্লাহ কি হত্যা আর ক্রুশের কথা আলাদাভাবে উল্লেখ করতেন? এজন্য, আমি এ তত্ত্ব বিশ্বাস করি না। মানতে পারি না।
আরেকটা মজার ব্যাপার আমি খেয়াল করলাম, বাইবেল পড়তে গিয়ে, ক্রুশবিদ্ধ "যীশু"র সামনে মা মেরি কাঁদছেন... তখন যীশু তাঁকে সম্বোধন করছেন, "হে মহিলা!!" (জন ১৯:২৬) আপনি কি আপনার মাকে ওহে মহিলা বলে সম্বোধন করবেন? যেখানে চরম কষ্টের সময় আমরা মা বা আম্মু চিৎকার করি, সেখানে তিনিহে মহিলা বলছেন! :) এতে কি মাথায় আসছে আপনার? হয় তিনি যীশু এবং তিনি খুবই অভদ্র আর মায়ের সাথে খারাপ আচরণ করেন, অথবা তিনি যীশুই নন।
কুরআন কোনটাকে সাপোর্ট করে? আসুন দেখি-
"ঈসা বললেন... তিনি (আল্লাহ) আমাকে করেছেন মায়ের প্রতি অনুগত, আর তিনি আমাকে উদ্ধত করে বানাননি।" (মারিয়াম, ১৯:৩২)
কত সুন্দর করে আল্লাহ বলে দিয়েছেন, বিশেষ করে এ পয়েন্টটা মেনশন করে দিয়েছেন... মাঝে মাঝে একদম এক্সাক্ট আয়াত পেলে অবাক হয়ে যাই। :D তাহলে, কুরআন প্রথম অপশন ক্যানসেল করে দিল। থাকল ২য় অপশন, খুবই যুক্তিসঙ্গত অপশন।
এ পয়েন্টটা কেন ডিবেটের সময় কেউ বলেন না? আমি বুঝি না... :(
আরেকটা ব্যাপার, কারা এহুদার বডি চুরি করল, এবং কেন হতে পারে, লাভ কী, এ ব্যাপারে কার কী থিয়োরি আছে সেটা কমেন্ট এ উল্লেখ করলে খুব খুশি হব... :D
ইহুদীরা বিশ্বাস করে, যে ক্রুশে চড়ে মারা গেল সে অভিশপ্ত। (তাওরাত, ২য় বিবরণ, ২১:২৩) এ জন্য যীশু মসীহ (খ্রিস্ট) কিনা আসলেই, সেটা তারা পরীক্ষা করে দেখল। যেহেতু ক্রুশবিদ্ধ হয়েছে, তাহলে সে আসলে মসীহ না। ভণ্ড।
কিন্তু, আসলে তো ঈসা (আ) হলেন ক্রাইস্ট, মসীহ।
যাক, এবার আগের পর্বের পর থেকে শুরু করা যাক, বারনাবাসের গস্পেল...
অধ্যায় ২১৭
...
এরপর তারা এহুদাকে বেঁধে নিয়ে গেল গভর্নর পাইলেটের কাছে। কেউ জানত না যে, পাইলেট গোপনে ঈসাকে বিশ্বাস করতেন আর ভালবাসতেন। তাই পাইলেট তাঁকে তাঁর কক্ষে একা ঢুকতে দিলেন, জিজ্ঞেস করলেন, তাঁর প্রতি কেন সবাই এমন করছে? অবশ্য, তিনি এহুদাকে ঈসা ভেবেছিলেন।
এহুদা বলল, “আরে! আপনিও দেখি ওদের মতো পাগল হয়ে গিয়েছেন!”
গভর্নর বুঝতে পারলেন না। তিনি তাঁর সাথে পাক কিতাবের ব্যাপারে কথা বলতে চাইলেন, “জান তো, আমি একজন ইহুদী না? আমাকে সত্যি কথা বল। আমি ন্যায়বিচার করব। আমার হাতে তোমাকে মুক্ত করার আবার মৃত্যুদণ্ড দেয়ার ক্ষমতাও আছে।”
এহুদা বলল, “বিশ্বাস করুন, আপনি আমাকে মারলে একজন নিরপরাধ লোককে মারা হবে; দেখুন, আমি তো এহুদা ইস্কারিয়ত; ঈসা নাসারা নই। ঈসা একজন জাদুকর। সে তাঁর জাদু দিয়ে আমার চেহারা বদলে দিয়েছে।”
এ কথা শুনে গভর্নর পাইলেট খুবই আশ্চর্য হলেন, তিনি তাঁকে ছেড়ে দিতে চাইলেন। তিনি বেরিয়ে এসে বললেন, “আমি তো এ লোকের মধ্যে কোন দোষ খুঁজে পাচ্ছি না। এ লোক বলছে যে সে নাকি এহুদা, যে কিনা ঈসাকে ধরিয়ে দিতে গিয়েছিল। সে বলছে, গালিলির ঈসা জাদু করে তাঁর চেহারা পালটে দিয়েছে। এ কথা সত্য হলে এ নিরপরাধ লোককে মারা বড় অন্যায় হবে। আর যদি সে ঈসা হয় কিন্তু মনে করে সে ঈসা না, তাহলে সে তো পাগল হয়ে গিয়েছে। পাগলকে হত্যা করা নিষিদ্ধ।”
তখন ইহুদীরা চিৎকার করে উঠল, “সে ঈসা নাসারা! আমরা তাঁকে চিনি। তাঁর অপরাধের জন্যই আমরা তাঁকে আপনার হাতে দিয়েছি। সে কেবল পাগলের অভিনয় করছে যেন সে ছাড়া পেয়ে আবার কুফরি করতে পারে।”
পাইলেট এ মামলা থেকে মুক্তি চাইলেন। তিনি বললেন, “সে তো গালিলির অধিবাসী। আর গালিলির রাজা তো হেরোদ। তাই তাঁকে হেরোদ বিচার করবেন।”
তারা এহুদাকে হেরোদের কাছে নিয়ে গেল। হেরোদ চাইতেন ঈসা তাঁর ঘরে যাক, কিন্তু হেরোদ ইহুদী না হওয়ায় ঈসা তাঁর ঘরে যেতেন না। কিন্তু এবার এহুদাকে দেখে হেরোদ আশ্চর্য হলেন। তিনিও তাঁকে ঈসা ভাবলেন।
হেরোদ এহুদাকে অনেক প্রশ্ন করলেন। কিন্তু এহুদার উত্তরগুলো অসঙ্গত হল। বারবার সে বলল, যে সে ঈসা না। তখন হেরোদ তাঁকে বিদ্রূপ করলেন। তিনি তাঁকে সাদা একটা কাপড় পড়ালেন। যেমনটা তখন বোকাদের পড়ান হত। তিনি তাঁকে পাইলেটের কাছে ফেরত পাঠালেন, বললেন, “ইসরাইলবাসীদের উপর অবিচার করো না! একে শাস্তি দাও!”
এ কথা হেরোদ বলেছিলেন কেন? কারণ, ইহুদী ইমামরা তাঁকে ঘুষ দিয়েছিল। রাজার আদেশ মানা বাধ্যতামূলক তাই গভর্নর পাইলেটকে তাই করতে হল।
পাইলেট তাঁকে ইহুদীদের হাতে ছেড়ে দিলেন হত্যা করবার জন্য। কিন্তু আল্লাহ এহুদাকে ক্রুশে চড়ানোর জন্য সংরক্ষন করলেন। যেন সে বিস্বাসঘাতকতার শাস্তি পায় ঠিকই। তাই সৈন্যদের অসহনীয় পাশবিক নির্যাতনে এহুদার দেহ রক্তে লাল হয়ে গেল, কিন্তু সে মরল না। বিদ্রূপ করে তারা তাঁকে একটা পুরনো পোশাক পড়াল। বলল, “দেখ, এ পোশাকে আমাদের নতুন রাজাকে কত মানাচ্ছে! এখন তাঁকে মুকুট পড়াতে হবে!” তারা অনেক কাঁটা যোগাড় করে আনল আর মুকুট বানাল। তারপর সে মুকুট এহুদার মাথায় পড়িয়ে তাঁকে উঁচু স্থানে বসাল।
সৈন্যরা ব্যঙ্গাত্মকভাবে তাঁকে স্যালুট দিতে লাগল। তারপর সামনে হাত পেতে বলল, “আপনাকে মুকুট পড়ান হয়েছে; বোকা রাজা, আপনি কি আপনার সৈন্যদের কোন পুরস্কার দেবেন না?”
অন্যদিকে, ষড়যন্ত্রকারী ইহুদীরা দেখল, ঈসা (এহুদা) মরে নি!! তারা ভাবল পাইলেট তাঁকে ছেড়ে দিবেন। তারা পাইলেটের কাছ থেকে এহুদাকে ক্রুশে দেয়ার আদেশ আদায় করল। পাইলেট আদেশ দিলেন, এহুদাকে ক্রুশে ঝুলানো হোক। তাঁর সাথে আরও দুজন ডাকাতকেও ক্রুশে দেয়া হল।
তারা তখন এহুদাকে কাল্ভারি পর্বতের গল্গথা নামের জায়গায় নিয়ে গেল। এ জায়গায় তখনকার অপরাধীদের ক্রুশে ঝুলানো হত। সেখানে তারা এহুদাকে ক্রুশবিদ্ধ করল।
সত্যি বলছি, এহুদা কিছুই করতে পারল না, কিছুই না...
শুধু শেষ দিকে, মারা যাবার আগে সে কেবল চিৎকার করে উঠল, “ইলাহি, ইলাহি, লামা সাবাখতানি?? (খোদা আমার! খোদা আমার! কেন তুমি আমায় পরিত্যাগ করলে?) তুমি কি দেখছ না যে, ঐ ভণ্ড জাদুকরটি পালিয়ে গেছে আর আমি নির্দোষভাবে এখানে মারা যাচ্ছি?” এরপর সে মারা গেল।
বিশ্বাস করুন, তাঁর কণ্ঠস্বর, চেহারা, গঠন সবই এত বেশি ঈসার মতো দেখা যাচ্ছিল যে তাঁর সাহাবিরাও বিশ্বাস করল যে, সে ঈসা। অনেকেই ধর্ম ত্যাগ করল, ভাবল যে আসলেই ঈসা একজন ভণ্ড নবী। তাঁর সব কাজ কালো জাদু দিয়ে করা। ঈসা বলেছিলেন তিনি কিয়ামতের আগে আগে মরবেন, এর আগে তাঁকে উঠিয়ে নেয়া হবে। কিন্তু, ওরা দেখল তা হয়নি।
কিন্তু, যারা ঈমান ত্যাগ করেনি তারাও প্রচণ্ড দুঃখ পেল, এহুদাকে দেখে তারা ভুলে গেল ঈসা কী বলে গিয়েছিলেন। ঈসার মাকে নিয়ে ইউহানা (জন) আর মেরি মাগডালিন কাল্ভারি পাহাড়ে গিয়েছিল। কাঁদতে কাঁদতে তারা ঈসার মৃত্যু দেখল। নিকোদিমা আর আরামাথিয়া গ্রামের ইউসুফ (Joseph of Aramethea) এর সহায়তায় তারা গভর্নরের কাছ থেকে এহুদার লাশ কবর দিতে চেয়ে নিল।
কাঁদতে কাঁদতে ক্রুশ থেকে নামান হল এহুদার লাশ...
শেষ পর্যন্ত তাঁকে ইউসুফের সমাধিতে রাখা হল। তাঁর লাশকে শত সুগন্ধিতে মাখান হল।
অধ্যায় ২১৮
তারপর সবাই ঘরে ফিরল। আমি ইউহানা (জন), তাঁর ভাই ইয়াকুব (জেমস) আর মা মরিয়মের (মেরি) সাথে নাসরাত গ্রামে ফিরে এলাম।
এর মাঝে এক ঘটনা ঘটল... আল্লাহর ভয় নেই মনে এমন কিছু কুচক্রী লোক রাতের আধারে সমাধির মুখ থেকে পাথর সরিয়ে এহুদার লাশ চুরি করল আর লুকিয়ে ফেলল। তারা রটিয়ে দিল যে ঈসা মৃত্যু থেকে জীবিত হয়েছেন; ব্যাপক বিভ্রান্তি সৃষ্টি হল। তখন ইমাম কায়াফা ফতোয়া জারি করলেন, কেউ ঈসা নাসারার কথা বলতে পারবে না। ফতোয়া অমান্য করায় অনেককে শাস্তি পেতে হল, অনেককে পাথর মেরে হত্যা করা হল।
নাসরাত গ্রামে এ খবর এসে পোঁছাল যে, ঈসা ক্রুশে মারা যাবার পর পুনর্জীবিত হয়েছেন। তখন আমি ঈসার মাকে অনুরোধ জানালাম কান্না থামাতে। তাঁর ছেলে পুনর্জীবিত হয়েছেন।
কাঁদতে কাঁদতে মরিয়ম বললেন, “চল, আমরা আমার ছেলেকে দেখতে জেরুজালেম যাই। তাঁকে দেখলে আমি শান্তিতে মরতে পারব।”
আমরা রওনা দিলাম।
পরের পর্ব
লেখককে ফলো করুন
|
© 2013 by Ask Islam Bangla.