বারনাবাস এর ইঞ্জিল (Gospel) থেকে...পর্ব ৬
{ আগের পর্ব পড়ে না থাকলে, পড়ে আসতে অনুরোধ করছি... যদি পড়া না থাকে তাহলে ৫ম পর্বের লিঙ্ক এখানে আর, একদম প্রথম থেকে পড়তে চাইলে, এখানে ক্লিক করুন :) }
Judas.
এই একটা নাম যেটা ২০০০ বছর ধরে কোন খ্রিস্টান রাখে না। কেন?
ঠিক যে কারণে আমরা বাঙালিরা মীর জাফর নাম রাখতে কুণ্ঠিত হই।
জুডাস নামের প্রতিশব্দই হয়ে গিয়েছে বিশ্বাসঘাতক। মাত্র ৩০ রৌপ্য মুদ্রা ঘুষের বিনিময়ে সে ধরিয়ে দেয় যীশুকে। তাই 30 pieces of silver বলতে বুঝায় কাউকে betray করার জন্য যে ঘুষ নেয়া হয়...
তাঁর পুরো নাম ছিল Judas Iscariot , হিব্রু উচ্চারণ এহুদা ইস্কারিয়ত।
এহুদার মৃত্যু নিয়ে বাইবেল এর লেখকরা নিজেই দেখা যায় একমত না। তারা confused; আসলে এহুদার কী হয়েছিল?
এক জায়গায় লিখা হয়েছে, এহুদা আত্মহত্যা করে। (Matthew 27:3–10) আরেক জায়গায় লিখা তাঁর পেট থেকে নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে সে মারা যায়suddenly এক মাঠে... (Acts of the Apostles)
আসলে কী হয়েছিল সেটা আল্লাহ জানেন। বারনাবাস পড়লে অবশ্য একটা উত্তর পাওয়া যায়...
আরেকটা ব্যাপার, The Holy Grail; এটা নিয়ে যে খ্রিস্টান দুনিয়ায় কত জল্পনা কল্পনা হয়েছে...
বলা হয়ে থাকে, যীশু লাস্ট সাপারের সময় যে কাপ ব্যবহার করেছিলেন সেটার বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। সেই কাপ দিয়ে Joseph of Arimathea ক্রুশবিদ্ধ যীশুর রক্ত ধারণ করেন। এর ক্ষমতা হিসেবে বলা হয়, ঐ কাপ দিয়ে কেউ পানি বা কিছু পান করলে সে অমরত্ব পাবে, সব রোগ ভাল হয়ে যাবে... ইত্যাদি। এই কাপ পরে তিনি লুকিয়ে ফেলেন। কেউ বলে ব্রিটেনে পাঠিয়ে দেন বংশপরম্পরায় সংরক্ষন করার জন্য... এ কাপকেই বলে HOLY GRAIL; অথচ এর কোন ভিত্তি নেই, কারণ যীশু তো ক্রুশবিদ্ধই হন নি। তাই লিজেন্ড হিসেবেই টিকে আছে হলি গ্রেইল। লাস্ট সাপার অবশ্য সত্যি।
যাই হোক, এবার শুরু করা যাক বারনাবাস এর লিখা... এখন থেকে কিন্তু ক্রুশবিদ্ধ হবার ফাইনাল কাহিনী শুরু হবে... আগের পর্বের পর থেকে continued...
অধ্যায় ২০১
প্রধান ইহুদী ইমাম কায়াফা ঈসাকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করল। ঈসা যখন বাইতুল মুকাদ্দাসে ঢুকলেন, তখন তারা তাঁর সামনে নিয়ে এল এক মহিলাকে, যার সম্পর্কে ব্যভিচারের অভিযোগ আনা হয়েছিল। তারা নিজেরা বলাবলি করল, “ঈসা যদি এ মহিলাকে রক্ষা করে তাহলে সেটা হবে তাওরাত বিরোধী, কারণ মুসার আইনে আছে ব্যভিচারীর শাস্তি পাথর মেরে হত্যা। আর যদি ঈসা একে শাস্তি দেয় তাহলে সেটা হবে তাঁর প্রচারিত ধর্মকথার বিরোধী। কারণ, সে ক্ষমা-মহত্ত্ব-ঔদার্যের কথা প্রচার করে।”
তারা ঈসার কাছে এসে বলল, “এ মহিলা ব্যভিচার করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। মুসার কিতাব মতে তাঁকে পাথর মারতে হবে। আপনি কী বলেন?”
ঈসা নিচু হয়ে মাটিতে আঙ্গুল দিয়ে একটি আয়নার ছবি আঁকতে লাগলেন। তারা উত্তরের জন্য চাপাচাপি করতে লাগল। তখন ঈসা মাথা তুলে ঐ আয়নার ছবির দিকে তাক করে বললেন, “তোমাদের মধ্যে যে গুনাহ মুক্ত সে প্রথম পাথরটি নিক্ষেপ করুক।” তারপর তিনি আবার আয়না আঁকতে লাগলেন, এটা দেখে সবাই চলে যেতে লাগল। সবার আগে গেল বুড়োরা, কারণ তাদের গুনাহের কথা মনে পড়ে গিয়েছে।
ঈসা মাথা তুলে দেখলেন ঐ মহিলা ছাড়া আর কেউ নেই। ঈসা বললেন, “ওরা কোথায় যারা তোমাকে অভিযুক্ত করল?”
মহিলা কাঁদতে কাঁদতে বলল, “প্রভু, তারা চলে গিয়েছে। আর আল্লাহর কসম... আমি আর গুনাহ করব না।”
ঈসা বললেন, “আলহামদুলিল্লাহ। শান্তিতে চলে যাও। আর গুনাহ করো না। আল্লাহ আমাকে শাস্তি দিতে পাঠাননি।”
এরপর ঈসা ইহুদী ইমাম আর ফারিসিদের জড়ো করে বললেন, “আমাকে বল: ধর, তোমার ১০০ ভেড়া আছে। এর মধ্যে একটি ভেড়া হারিয়ে গেল, তখন তুমি কি বাকি ৯৯টা ভেড়া রেখে ঐ একটা ভেড়া খুঁজতে যাবে না? আর যখন তুমি ঐ ভেড়াটাকে খুঁজে পাবে, তখন কি সেটা এনে তুমি প্রতিবেশীদের চিৎকার করে বলবে না, ‘দেখ! দেখ! আমি আমার হারানো ভেড়াটাকে খুঁজে পেয়েছি!’ ? অবশ্যই তোমরা এমন করবে। কারণ, তোমরা তোমাদের ভেড়াগুলোকে ভালবাস, আর যেটা হারিয়ে যায় সেটা খুঁজে পেলে অনেক খুশি হও। তাহলে বল, আল্লাহ কি তাঁর বান্দাদেরকে এর চেয়ে কম ভালোবাসবেন??? না!!! আমি আল্লাহর কসম করে বলছি, যখন কেউ তওবা করে তখন আল্লাহর ফেরেশতাদের মধ্যে খুশির রোল পড়ে যায়, কারণ তওবা তো আল্লাহর মহিমাকেই প্রকাশ করে।”
অধ্যায় ২০৯
(কয়েকদিন পর যখন ইতোমধ্যে ইহুদী ইমামরা ডিসিশন নিয়ে ফেলেছে ঈসাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে)
যখন ঈসার মা মরিয়ম প্রার্থনা করতে শুরু করলেন, তখন ফেরেশতা জিবরাঈল এলেন আর তাঁকে ঈসার মৃত্যুদণ্ডাদেশের কথা জানালেন। এরপর বললেন, “ভয় করো না, মরিয়ম, কারণ আল্লাহ তাঁকে রক্ষা করবেন।”
এ কথা শুনে মরিয়ম দ্রুত নাসরাত গ্রাম ছেড়ে জেরুজালেমে রওনা দিলেন ছেলেকে শেষবার দেখার জন্য। তিনি জেরুজালেমে তাঁর বোন মরিয়ম সালোমির (Mary Salome) এর বাড়িতে এলেন ছেলেকে খুঁজতে কাঁদতে কাঁদতে।
কিন্তু ঈসা তখন সিদ্রন ঝরনার (Fountain of Cedron) আড়ালে আত্মগোপনে ছিলেন। তাই মরিয়ম তাঁর ছেলেকে দেখতে পেলেন না। তবে সেই লজ্জাজনক ঘটনার পর আল্লাহর আদেশে ফেরেশতা জিবরাঈল, মিকাইল, আজ্রাইল আর ইসরাফিল ঈসাকে মা মরিয়মের কাছে এনেছিলেন। কিন্তু সে ঘটনা তো আরও পরের।
অধ্যায় ২১২
“হে আল্লাহ, আপনি সব পারেন, সব দেখাশোনা করেন। এ দুনিয়ার উপর করুনা করে আপনি আপনার সেই রাসুলকে তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দিন।” ঈসা তিন বার আমিন বললেন। সাহাবীরাও আমিন বলল। কিন্তু এহুদা (JUDAS) কিছুই বলল না। কারণ, সে কিছুই বিশ্বাস করত না।
অধ্যায় ২১৩
যখন ভেড়া খাবার উৎসব এগিয়ে আসল, তখন নিকোদিমা গোপনে ঈসা আর সাহাবীদের কাছে ভেড়া পাঠিয়ে দিল, আর সাথে সাথে এটাও জানিয়ে দিলেন, রাজা হেরোদ কী দণ্ড দিয়েছেন। ঈসা বললেন, “আলহামদুলিল্লাহ! কারণ, হে আল্লাহ, তুমি আমাকে তোমার নবীদের অন্তর্ভুক্ত করেছ। তোমাকে ধন্যবাদ, আল্লাহ, আমি আমার নবীর দায়িত্ব সম্পন্ন করেছি।”
এরপর তিনি এহুদার দিকে ফিরলেন আর বললেন, “বন্ধু, দাঁড়িয়ে আছ কেন? আমার সময় প্রায় শেষ। তুমি দ্রুত তোমার কাজ কর।”
সাহাবীরা ভাবল, ঈসা হয়ত ঈদুল ফিসাখের (PASSOVER) জন্য কিছু কিনতে পাঠাচ্ছেন। কিন্তু ঈসা জানতেন, এহুদা বিশ্বাসঘাতক। তাই তিনি চাচ্ছিলেন সে যেন চলে যায়, ফলে তিনি কিছু কথা সাহাবীদের বলতে পারেন। এহুদা বলল, “প্রভু, আমি খেয়ে তারপর যেতে চাই।”
“চল, খাই,” বললেন ঈসা, “আমি যাওয়ার আগে তোমাদের সাথে এ শেষ খাওয়াটা (THE LAST SUPPER)খেতে চাই।”
এ কথা বলে তিনি তোয়ালে শরীরে পেঁচালেন। বেসিন থেকে পানি নিয়ে সাহাবীদের পা ধুতে গেলেন। তিনি প্রথমে এহুদার পা ধুলেন, এরপর পিটারের কাছে এলেন। পিটার বলল, “প্রভু, আমার পা ধুচ্ছেন কেন?”
ঈসা বললেন, “আমি যা জানি সেটা তোমরা জান না, পরে জানবে।”
পিটার বলল, “আমার পা আপনি কখনও ধুবেন না প্রভু!”
ঈসা বললেন, “তাহলে তুমি কিয়ামতের দিন আমার সাথে থাকবে না।”
পিটার বলল, “প্রভু, না, তাহলে আপনি কেবল পা নয়, মাথা আর হাতও ধুয়ে দিন...”
সাহাবীরা সবাই পানি দিয়ে ধৌত হলে ঈসার সাথে খেতে বসল।
ঈসা বললেন, “আমি তোমাদের ধুয়েছি, কিন্তু ... এক সাগর পানি দিয়ে ধুলেও সে পাক হবে না যে আমাকে বিশ্বাস করে না।” ঈসা জানতেন তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে, বললেন, “আমি সত্যি বলছি, তোমাদের মধ্যে একজন আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে। সে আমাকে ভেড়ার মতো বিক্রি করতে চাবে; কিন্তু, লানত ওর উপর, কারণ তাঁর সম্পর্কে নবী দাউদ ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, ‘নিজের খোঁড়া গর্তে সে নিজেই পড়বে’।”
সাহাবীরা তখন জিজ্ঞেস করল, “কে সেই বিস্বাসঘাতক??” (ঈসা উত্তর দেন নি।)
যখন ভেড়ার মাংস খাওয়া হচ্ছিল, তখন এহুদা তাঁকে জিজ্ঞেস করল গোপনে, “প্রভু, আমিই কি সেই লোক?”
ঈসা বললেন, “তুমি ঠিক বলেছ।”
১১ জন সাহাবী সে কথা শুনতে পেল না।
খাওয়া শেষে শয়তান এহুদার উপর ভর করল। ঈসা তাঁকে বললেন, “যাও, তোমার কাজ তাড়াতাড়ি কর।”
অধ্যায় ২১৪
এহুদা চলে গেলে ঈসা নামাজ আদায় করতে বাগানে এলেন। তিনি নিয়ম মত, মাটিতে হাঁটু ঠেকিয়ে সিজদা দিলেন। তিনি প্রার্থনা করতে থাকলেন আল্লাহর কাছে।
ওদিকে এহুদা ঈসার গোপন স্থান প্রধান ইহুদী ইমাম কায়াফাকে জানাতে গেল, বলল, “আপনি যদি আমার পুরস্কার ঠিক মত দেন, তাহলে আজ রাতেই আমি ঈসাকে আপনার হাতে তুলে দিব। সে এখন একা আছে, ওর ১১ সাথীর সাথে।”
প্রধান ইমাম কায়াফা বললেন, “কত চাও তুমি?”
এহুদা বলল, “৩০ রুপার মুদ্রা।”
ইমাম এহুদাকে গুণে গুণে ৩০টা রুপার মুদ্রা দিল। এরপর একজন ফারিসিকে পাঠিয়ে দিল রাজা হেরোদের কাছ থেকে সৈন্য আনতে। সৈন্যরা এহুদাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল জেরুজালেম থেকে... গেতসিমান বাগানের দিকে, যেখানে ঈসা আছেন।
পরের পর্ব
Judas.
এই একটা নাম যেটা ২০০০ বছর ধরে কোন খ্রিস্টান রাখে না। কেন?
ঠিক যে কারণে আমরা বাঙালিরা মীর জাফর নাম রাখতে কুণ্ঠিত হই।
জুডাস নামের প্রতিশব্দই হয়ে গিয়েছে বিশ্বাসঘাতক। মাত্র ৩০ রৌপ্য মুদ্রা ঘুষের বিনিময়ে সে ধরিয়ে দেয় যীশুকে। তাই 30 pieces of silver বলতে বুঝায় কাউকে betray করার জন্য যে ঘুষ নেয়া হয়...
তাঁর পুরো নাম ছিল Judas Iscariot , হিব্রু উচ্চারণ এহুদা ইস্কারিয়ত।
এহুদার মৃত্যু নিয়ে বাইবেল এর লেখকরা নিজেই দেখা যায় একমত না। তারা confused; আসলে এহুদার কী হয়েছিল?
এক জায়গায় লিখা হয়েছে, এহুদা আত্মহত্যা করে। (Matthew 27:3–10) আরেক জায়গায় লিখা তাঁর পেট থেকে নাড়িভুঁড়ি বের হয়ে সে মারা যায়suddenly এক মাঠে... (Acts of the Apostles)
আসলে কী হয়েছিল সেটা আল্লাহ জানেন। বারনাবাস পড়লে অবশ্য একটা উত্তর পাওয়া যায়...
আরেকটা ব্যাপার, The Holy Grail; এটা নিয়ে যে খ্রিস্টান দুনিয়ায় কত জল্পনা কল্পনা হয়েছে...
বলা হয়ে থাকে, যীশু লাস্ট সাপারের সময় যে কাপ ব্যবহার করেছিলেন সেটার বিশেষ ক্ষমতা রয়েছে। সেই কাপ দিয়ে Joseph of Arimathea ক্রুশবিদ্ধ যীশুর রক্ত ধারণ করেন। এর ক্ষমতা হিসেবে বলা হয়, ঐ কাপ দিয়ে কেউ পানি বা কিছু পান করলে সে অমরত্ব পাবে, সব রোগ ভাল হয়ে যাবে... ইত্যাদি। এই কাপ পরে তিনি লুকিয়ে ফেলেন। কেউ বলে ব্রিটেনে পাঠিয়ে দেন বংশপরম্পরায় সংরক্ষন করার জন্য... এ কাপকেই বলে HOLY GRAIL; অথচ এর কোন ভিত্তি নেই, কারণ যীশু তো ক্রুশবিদ্ধই হন নি। তাই লিজেন্ড হিসেবেই টিকে আছে হলি গ্রেইল। লাস্ট সাপার অবশ্য সত্যি।
যাই হোক, এবার শুরু করা যাক বারনাবাস এর লিখা... এখন থেকে কিন্তু ক্রুশবিদ্ধ হবার ফাইনাল কাহিনী শুরু হবে... আগের পর্বের পর থেকে continued...
অধ্যায় ২০১
প্রধান ইহুদী ইমাম কায়াফা ঈসাকে ফাঁসানোর পরিকল্পনা করল। ঈসা যখন বাইতুল মুকাদ্দাসে ঢুকলেন, তখন তারা তাঁর সামনে নিয়ে এল এক মহিলাকে, যার সম্পর্কে ব্যভিচারের অভিযোগ আনা হয়েছিল। তারা নিজেরা বলাবলি করল, “ঈসা যদি এ মহিলাকে রক্ষা করে তাহলে সেটা হবে তাওরাত বিরোধী, কারণ মুসার আইনে আছে ব্যভিচারীর শাস্তি পাথর মেরে হত্যা। আর যদি ঈসা একে শাস্তি দেয় তাহলে সেটা হবে তাঁর প্রচারিত ধর্মকথার বিরোধী। কারণ, সে ক্ষমা-মহত্ত্ব-ঔদার্যের কথা প্রচার করে।”
তারা ঈসার কাছে এসে বলল, “এ মহিলা ব্যভিচার করতে গিয়ে ধরা পড়েছে। মুসার কিতাব মতে তাঁকে পাথর মারতে হবে। আপনি কী বলেন?”
ঈসা নিচু হয়ে মাটিতে আঙ্গুল দিয়ে একটি আয়নার ছবি আঁকতে লাগলেন। তারা উত্তরের জন্য চাপাচাপি করতে লাগল। তখন ঈসা মাথা তুলে ঐ আয়নার ছবির দিকে তাক করে বললেন, “তোমাদের মধ্যে যে গুনাহ মুক্ত সে প্রথম পাথরটি নিক্ষেপ করুক।” তারপর তিনি আবার আয়না আঁকতে লাগলেন, এটা দেখে সবাই চলে যেতে লাগল। সবার আগে গেল বুড়োরা, কারণ তাদের গুনাহের কথা মনে পড়ে গিয়েছে।
ঈসা মাথা তুলে দেখলেন ঐ মহিলা ছাড়া আর কেউ নেই। ঈসা বললেন, “ওরা কোথায় যারা তোমাকে অভিযুক্ত করল?”
মহিলা কাঁদতে কাঁদতে বলল, “প্রভু, তারা চলে গিয়েছে। আর আল্লাহর কসম... আমি আর গুনাহ করব না।”
ঈসা বললেন, “আলহামদুলিল্লাহ। শান্তিতে চলে যাও। আর গুনাহ করো না। আল্লাহ আমাকে শাস্তি দিতে পাঠাননি।”
এরপর ঈসা ইহুদী ইমাম আর ফারিসিদের জড়ো করে বললেন, “আমাকে বল: ধর, তোমার ১০০ ভেড়া আছে। এর মধ্যে একটি ভেড়া হারিয়ে গেল, তখন তুমি কি বাকি ৯৯টা ভেড়া রেখে ঐ একটা ভেড়া খুঁজতে যাবে না? আর যখন তুমি ঐ ভেড়াটাকে খুঁজে পাবে, তখন কি সেটা এনে তুমি প্রতিবেশীদের চিৎকার করে বলবে না, ‘দেখ! দেখ! আমি আমার হারানো ভেড়াটাকে খুঁজে পেয়েছি!’ ? অবশ্যই তোমরা এমন করবে। কারণ, তোমরা তোমাদের ভেড়াগুলোকে ভালবাস, আর যেটা হারিয়ে যায় সেটা খুঁজে পেলে অনেক খুশি হও। তাহলে বল, আল্লাহ কি তাঁর বান্দাদেরকে এর চেয়ে কম ভালোবাসবেন??? না!!! আমি আল্লাহর কসম করে বলছি, যখন কেউ তওবা করে তখন আল্লাহর ফেরেশতাদের মধ্যে খুশির রোল পড়ে যায়, কারণ তওবা তো আল্লাহর মহিমাকেই প্রকাশ করে।”
অধ্যায় ২০৯
(কয়েকদিন পর যখন ইতোমধ্যে ইহুদী ইমামরা ডিসিশন নিয়ে ফেলেছে ঈসাকে মৃত্যুদণ্ড দেয়া হবে)
যখন ঈসার মা মরিয়ম প্রার্থনা করতে শুরু করলেন, তখন ফেরেশতা জিবরাঈল এলেন আর তাঁকে ঈসার মৃত্যুদণ্ডাদেশের কথা জানালেন। এরপর বললেন, “ভয় করো না, মরিয়ম, কারণ আল্লাহ তাঁকে রক্ষা করবেন।”
এ কথা শুনে মরিয়ম দ্রুত নাসরাত গ্রাম ছেড়ে জেরুজালেমে রওনা দিলেন ছেলেকে শেষবার দেখার জন্য। তিনি জেরুজালেমে তাঁর বোন মরিয়ম সালোমির (Mary Salome) এর বাড়িতে এলেন ছেলেকে খুঁজতে কাঁদতে কাঁদতে।
কিন্তু ঈসা তখন সিদ্রন ঝরনার (Fountain of Cedron) আড়ালে আত্মগোপনে ছিলেন। তাই মরিয়ম তাঁর ছেলেকে দেখতে পেলেন না। তবে সেই লজ্জাজনক ঘটনার পর আল্লাহর আদেশে ফেরেশতা জিবরাঈল, মিকাইল, আজ্রাইল আর ইসরাফিল ঈসাকে মা মরিয়মের কাছে এনেছিলেন। কিন্তু সে ঘটনা তো আরও পরের।
অধ্যায় ২১২
“হে আল্লাহ, আপনি সব পারেন, সব দেখাশোনা করেন। এ দুনিয়ার উপর করুনা করে আপনি আপনার সেই রাসুলকে তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দিন।” ঈসা তিন বার আমিন বললেন। সাহাবীরাও আমিন বলল। কিন্তু এহুদা (JUDAS) কিছুই বলল না। কারণ, সে কিছুই বিশ্বাস করত না।
অধ্যায় ২১৩
যখন ভেড়া খাবার উৎসব এগিয়ে আসল, তখন নিকোদিমা গোপনে ঈসা আর সাহাবীদের কাছে ভেড়া পাঠিয়ে দিল, আর সাথে সাথে এটাও জানিয়ে দিলেন, রাজা হেরোদ কী দণ্ড দিয়েছেন। ঈসা বললেন, “আলহামদুলিল্লাহ! কারণ, হে আল্লাহ, তুমি আমাকে তোমার নবীদের অন্তর্ভুক্ত করেছ। তোমাকে ধন্যবাদ, আল্লাহ, আমি আমার নবীর দায়িত্ব সম্পন্ন করেছি।”
এরপর তিনি এহুদার দিকে ফিরলেন আর বললেন, “বন্ধু, দাঁড়িয়ে আছ কেন? আমার সময় প্রায় শেষ। তুমি দ্রুত তোমার কাজ কর।”
সাহাবীরা ভাবল, ঈসা হয়ত ঈদুল ফিসাখের (PASSOVER) জন্য কিছু কিনতে পাঠাচ্ছেন। কিন্তু ঈসা জানতেন, এহুদা বিশ্বাসঘাতক। তাই তিনি চাচ্ছিলেন সে যেন চলে যায়, ফলে তিনি কিছু কথা সাহাবীদের বলতে পারেন। এহুদা বলল, “প্রভু, আমি খেয়ে তারপর যেতে চাই।”
“চল, খাই,” বললেন ঈসা, “আমি যাওয়ার আগে তোমাদের সাথে এ শেষ খাওয়াটা (THE LAST SUPPER)খেতে চাই।”
এ কথা বলে তিনি তোয়ালে শরীরে পেঁচালেন। বেসিন থেকে পানি নিয়ে সাহাবীদের পা ধুতে গেলেন। তিনি প্রথমে এহুদার পা ধুলেন, এরপর পিটারের কাছে এলেন। পিটার বলল, “প্রভু, আমার পা ধুচ্ছেন কেন?”
ঈসা বললেন, “আমি যা জানি সেটা তোমরা জান না, পরে জানবে।”
পিটার বলল, “আমার পা আপনি কখনও ধুবেন না প্রভু!”
ঈসা বললেন, “তাহলে তুমি কিয়ামতের দিন আমার সাথে থাকবে না।”
পিটার বলল, “প্রভু, না, তাহলে আপনি কেবল পা নয়, মাথা আর হাতও ধুয়ে দিন...”
সাহাবীরা সবাই পানি দিয়ে ধৌত হলে ঈসার সাথে খেতে বসল।
ঈসা বললেন, “আমি তোমাদের ধুয়েছি, কিন্তু ... এক সাগর পানি দিয়ে ধুলেও সে পাক হবে না যে আমাকে বিশ্বাস করে না।” ঈসা জানতেন তাঁর সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করা হবে, বললেন, “আমি সত্যি বলছি, তোমাদের মধ্যে একজন আমার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করবে। সে আমাকে ভেড়ার মতো বিক্রি করতে চাবে; কিন্তু, লানত ওর উপর, কারণ তাঁর সম্পর্কে নবী দাউদ ভবিষ্যৎবাণী করেছিলেন, ‘নিজের খোঁড়া গর্তে সে নিজেই পড়বে’।”
সাহাবীরা তখন জিজ্ঞেস করল, “কে সেই বিস্বাসঘাতক??” (ঈসা উত্তর দেন নি।)
যখন ভেড়ার মাংস খাওয়া হচ্ছিল, তখন এহুদা তাঁকে জিজ্ঞেস করল গোপনে, “প্রভু, আমিই কি সেই লোক?”
ঈসা বললেন, “তুমি ঠিক বলেছ।”
১১ জন সাহাবী সে কথা শুনতে পেল না।
খাওয়া শেষে শয়তান এহুদার উপর ভর করল। ঈসা তাঁকে বললেন, “যাও, তোমার কাজ তাড়াতাড়ি কর।”
অধ্যায় ২১৪
এহুদা চলে গেলে ঈসা নামাজ আদায় করতে বাগানে এলেন। তিনি নিয়ম মত, মাটিতে হাঁটু ঠেকিয়ে সিজদা দিলেন। তিনি প্রার্থনা করতে থাকলেন আল্লাহর কাছে।
ওদিকে এহুদা ঈসার গোপন স্থান প্রধান ইহুদী ইমাম কায়াফাকে জানাতে গেল, বলল, “আপনি যদি আমার পুরস্কার ঠিক মত দেন, তাহলে আজ রাতেই আমি ঈসাকে আপনার হাতে তুলে দিব। সে এখন একা আছে, ওর ১১ সাথীর সাথে।”
প্রধান ইমাম কায়াফা বললেন, “কত চাও তুমি?”
এহুদা বলল, “৩০ রুপার মুদ্রা।”
ইমাম এহুদাকে গুণে গুণে ৩০টা রুপার মুদ্রা দিল। এরপর একজন ফারিসিকে পাঠিয়ে দিল রাজা হেরোদের কাছ থেকে সৈন্য আনতে। সৈন্যরা এহুদাকে নিয়ে বেরিয়ে গেল জেরুজালেম থেকে... গেতসিমান বাগানের দিকে, যেখানে ঈসা আছেন।
পরের পর্ব
লেখককে ফলো করুন
|
© 2013 by Ask Islam Bangla.