বারনাবাস এর ইঞ্জিল (Gospel) থেকে...পর্ব ৫
{ আগের পর্ব পড়ে না থাকলে, পড়ে আসতে অনুরোধ করছি... যদি পড়া না থাকে তাহলে ৪র্থ পর্বের লিঙ্ক এখানে আর, একদম প্রথম থেকে পড়তে চাইলে, এখানে ক্লিক করুন :) }
Mary Magdalene; এ নামটা কয়েক বছর ধরেই মানুষ খুব ভাল করে চেনে। খ্রিস্টান ধর্মের আর কাউকে না চিনুক, যীশু আর মেরিকে বলতে গেলে সবাই চেনে। মেরি বলতে, যীশুর (আ) মা মেরীর কথা বলছি না। বলছি, মেরি মাগদালিন এর কথা। কেন? Dan Brown এর দা ভিঞ্চি কোড মেরি আর যীশুকে বিশ্ববিখ্যাত করতে বিশাল অবদান রেখেছে। সত্য কথা, ইসলাম, বাইবেল আর বারনাবাস- কোথাও এমন একটা আয়াত পাওয়া যাবে না, যেখানে বলা হয়েছে মেরি ছিল যীশুর স্ত্রী। এটা সম্পূর্ণ বানানো একটা কথা। তবে, এটা আপনি যদি মনে করেন, এটা ব্রাউনের আবিস্কার তাহলে কিন্তু আপনি বড় ভুল ভাবছেন। ব্রাউন এ ধারণাটা ধার করেছেন। আর প্রয়োগ করেছেন তাঁর উপন্যাসে। ১৯৮২ সালে প্রকাশিত The Holy Blood and the Holy Grail থেকে তাঁর আইডিয়া ধার করেছেন তিনি। সে যাই হোক, এটা প্রমাণ করা যায়, ভিঞ্চি কোডে তিনি কীভাবে তথ্যের ভুল interpretation করে ভুল সিদ্ধান্ত তুলে ধরেছেন। তবে, এটা ঠিক যে, উপন্যাস হিসেবে ভিঞ্চি কোড অসাধারণ! ভিঞ্চি কোডের অসারতা প্রমাণের জন্য একটা বিশাল পোস্ট লিখা যায়! তবে, মেরি সম্পর্কে কেবল একটি কথাই লিখা, মেরি ছিল আগে একজন পাবলিক sinner; এটার ইন্টারপ্রেটেশন যে যেভাবে করার করবে... তবে, মেরি রয়াল ব্লাডলাইনের, এমন কোন প্রমাণ নেই...
ইসলাম কী বলে?
ঈসা ৩০ বছর বয়সে নবী হন। তিনি ৩ বছর ধর্মপ্রচার করেন। ৩৩ বছর বয়সে তিনি আসমানে আরোহণ করেন। কুরআন ২৫ বার ঈসার কথা বলেছে, তাঁর জীবনের কত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আমাদের জানিয়েছে, বিবাহ করলে সেটা জানানোর কথা...
হাদিস আমাদের জানায়, আবার এসে তিনি ৪০ বছর থাকবেন পৃথিবীতে। তাঁর মানে তিনি ৭৩ বছর বয়সে মারা যাবেন। তাঁর কবর হবে মুহাম্মাদ (স) এর পাশে, মদিনায়। ২য় বার এসেই তিনি বিবাহ করবেন, এর আগে না। মানে, বিয়ে করেননি। তখন তাঁর সন্তান হবে।
যাই হোক, তখনকার সময়ে ইসরাইলে মরিয়ম বা মারিয়া বা মেরি অনেক কমন একটি নাম ছিল। অনেকের নামই মেরি ছিল। আমি, কেবল ঈসার মায়ের নামের ক্ষেত্রে মরিয়ম ব্যবহার করলাম, অন্য ক্ষেত্রে“মেরি”।
তখন, কবর দেয়ার রীতি ছিল, একটা পাথরের গর্তে লাশ রেখে গর্তের মুখে পাথর রেখে দেয়া। এটাকেSepulcher বলা হয়। পাথরের সমাধি।
এখন, বারনাবাসের লিখনি শুরু করা যাক। গত পর্বের পর থেকে...
অধ্যায় ৯৮
ঈসা কথা বলা শেষ করলে, সবাই চলে যেতে লাগল। রাজা হেরোদ, গভর্নর আর ইমামেরা তুমুল তর্ক শুরু করে দিল ঈসার বাণী নিয়ে। অবশেষে, ইমামরা অনুরোধ করল, গভর্নর যেন রোমান সিনেটে পুরো ব্যাপারটি জানিয়ে চিঠি লিখেন। গভর্নর সেটা করলেন। ইসরাইলের প্রতি সিনেটের বিশেষ কারণে দরদ ছিল। আদেশ জারি করা হল, কেউ যেন কখনও এমনকি মৃত্যুমুখেও ইহুদী নবী ঈসা নাসারাকে খোদা বা খোদার পুত্র না বলে। নির্দেশনামা তামায় খোদাই করে বাইতুল মুকাদ্দাসের দরজায় টানানো হল।
জনতার বিশাল একটা অংশ চলে যাবার পরেও প্রায় ৫০০০ লোক থাকল, নারী-শিশু গণনায় না এনেও। বেশিরভাগই ঈসার কথা শুনতে দূর থেকে এসেছেন। ২ দিন ধরে অনেকে না খেয়ে আছেন... ঈসা এটা বোঝার পর দয়া বোধ করলেন। তিনি ফিলিপকে বললেন, “আমরা এত রুটি কোথায় পাই যেন তারা ক্ষুধায় না মারা যায়?”
ফিলিপ বলল, “২০০ স্বর্ণমুদ্রা দিয়েও এত রুটি কেনা যাবে না!”
আন্ড্রু বলল, “ঐ যে ঐ ছেলেটার কাছে ৫টা রুটি আর ২টা মাছ আছে। কিন্তু কী আর হবে এতটুকু দিয়ে...”
ঈসা বললেন, “সবাইকে ঘাসে বসাও। ৫০ আর ৪০ করে করে।”
এরপর ঈসা রুটি হাতে নিলেন আর বললেন, “বিসমিল্লাহ!” আর রুটি ভেঙে সাহাবীদের দিলেন, আর সাহাবীরা দিল জনতাকে। মাছের ক্ষেত্রেও একই কাজ করলেন। প্রত্যেকে খেল পেট ভরে!! এরপর সাহাবীরা খাবারের উচ্ছিষ্ট সংগ্রহ করলেন, দেখা গেল ১২টা ঝুড়ি ভরে গেছে!
সবাই ভাবল, এটা কি স্বপ্ন?? পরের এক ঘণ্টা সবাই এ মুজেজা ছাড়া আর কিছু নিয়ে চিন্তা বা কথা বলতে পারল না। এরপর ঈসা আল্লাহকে ধন্যবাদ দিয়ে সবাইকে বিদায় দিলেন। কিন্তু, ৭২ জন ছিল যারা যেতেই চাচ্ছিল না। ঈসা তাদেরকে সাহাবী হিসেবে গ্রহণ করলেন।
অধ্যায় ১২৯
(জেরুজালেমে)
ঈসা বয়ান শেষ করলেন, যেখানে তিনি মিথ্যা দেবদেবীর সম্পর্কে বলেছেন। দোয়া শেষে সবাই “আমিন” রবে মুখরিত হয়ে উঠল।
ঈসা নেমে আসলেন মিম্বার থেকে, নিচে দাঁড়িয়ে ছিল অনেক অসুস্থ মানুষ, তিনি তাদেরকে আল্লাহর নামে সুস্থ করে তুললেন। তখন সদ্য-সুস্থ হওয়া এক কুষ্ঠরোগী সাইমন ঈসাকে রাতের খাবারের নিমন্ত্রণ করল। ইমামেরা ততদিনে ঈসাকে ঘৃণা করা শুরু করে দিয়েছে। কারণ, ঈসা তাদের গোপন কথা বলে দিচ্ছেন। (তারা আল্লাহর ওয়াস্তে দেয়া জনগনের টাকা আত্মসাৎ করত।) ইমামেরা তাড়াতাড়ি রোমান সৈন্যদের গিয়ে বলে দিল, ঈসা তাদের দেবদেবীদের অপমান করেছেন। ইমামদের উদ্দেশ্য ঈসাকে মেরে ফেলা।
ঈসা সাইমনের বাড়িতে ঢুকলেন। যখন তিনি বসে খাচ্ছিলেন, তখন একটা মেয়ে যে কিনা public sinner, নাম মেরি, দৌড়ে ঘরে ঢুকল। সে ঈসার পায়ের কাছে পড়ে কাঁদতে লাগল। তার অশ্রুতে ভেসে গেল মাটি।
সাইমনের সাথে আরও কয়েকজন বসে খাচ্ছিল, একজন পাপী মেয়ে ওর ঘরে ঢুকেছে তারই আমন্ত্রিত একজনের কারণে, এটা ভেবেই সে অপমানিত বোধ করছিল। মনে মনে ভাবছে, “এ লোক যদি সত্যিই যদি নবী হত, তাহলে কি জানত না যে, এ মেয়ে কত খারাপ?!”
ঈসা জানলেন সাইমন কী ভাবছে, তাই বললেন, “সাইমন, তোমাকে আমার একটা কথা বলার আছে।” সাইমন বলল, “জি, বলুন।”
অধ্যায় ১৩০
ঈসা বললেন, “দুজন ঋণীর গল্প বলি। একই লোকের কাছে তাদের ঋণ ছিল। একজন ৫০ টাকা, আরেকজন ৫০০ টাকা। একজনও ঋণ পরিশোধ করতে পারল না। দয়ালু মহাজন ২জনের ঋণই মাফ করে দিলেন। এখন বল তো, এ দুজনের মধ্যে কে মহাজনকে বেশি ভালবাসবে?”
সাইমন বলল, “অবশ্যই যার বেশি ঋণ মাফ করা হয়েছে সে।”
ঈসা বললেন, “ঠিক বলেছ; এখন শোন, এ মেয়েটি আর তোমার ব্যাপার খেয়াল করেছ? তোমরা দুজনই আল্লাহর কাছে ঋণী। একজনের শরীরে কুস্থ, আরেকজনের আত্মায় কুষ্ঠ। আল্লাহ তোমাদের দুজনের কুষ্ঠতাই ভাল করে দিয়েছেন, দুজনের ঋণই মাফ। তুমি আমাকে কম ভালোবাসো। কারণ, তুমি ভাব, তুমি কম পেয়েছ আল্লাহর কাছ থেকে। আমি তোমার ঘরে ঢুকেছি, অথচ তুমি আমাকে হাত পা ধোয়ার পানি পর্যন্ত দাও নি। কিন্তু, এ মেয়েটিকে দেখ। সে এ ঘরে ঢুকেই নিজের চোখের পানিতে মেঝে ভাসিয়ে দিয়েছে। আমি সত্যি বলছি, বেশি উপহার পেয়েছে এ মেয়েটাই, কারণ সে বেশি ভালবেসেছে। তাঁর গুনাহ মাফ।” এরপর মেরিকে বললেন, “যাও, তোমার উপর শান্তি বর্ষিত হোক, তোমার প্রতিপালক তোমার গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন। আর গুনাহ করো না। তোমার ঈমান তোমাকে বাঁচিয়েছে।”
(মাগদালা শহরের বাসিন্দা ছিল বলে মেরিকে মেরি মাগদালিন বলা হয়। এরপর থেকে মেরি ঈসার সাহাবা হয়ে যায়।)
অধ্যায় ১৯২
(বেশ কিছু দিন পরের কথা)
... কথা শেষ করে ঈসা খেতে বসলেন ইমাম নিকোদিমার সাথে। ঠিক তখনই মেরি, যে কিনা ঈসার পায়ের কাছে কেঁদেছিল, নিকোদিমার বাড়িতে দৌড়ে ঢুকল এবং আবার কাঁদতে লাগল, “প্রভু, আমি আপনার সামান্য দাসী। আপনার মাধ্যমে আমি আল্লাহর করুনা পেয়েছি। আমার এক বোন আছে। আর আছে এক ভাই, যে কিনা এখন মৃত্যুশয্যায়।”
ঈসা বললেন, “তোমার বাড়ি কোথায়? বল। আমি সেখানে গিয়ে আল্লাহর কাছে তাঁর জন্য দোয়া করব।”
“আমার বাড়ি মাগদালা শহরে। কিন্তু, আমার ভাইবোন থাকে বেথানি শহরে।”
“যাও, আমি তোমার ভাইয়ের বাসায় আসব... ভয় করো না, সে বাঁচবে।”
তখন মেরি চলে গেল আর বেথানি শহরে এসে দেখল তাঁর ভাই সেইদিনই মারা গেছে!! তাঁকে কবর দেয়া হয়েছে তাঁর পূর্বসূরীদের সাথে পাথরের সমাধিতে।
অধ্যায় ১৯৩
ঈসা নিকোদিমার বাসায় থাকলেন ২ দিন। তৃতীয় দিন তিনি বেথানি গেলেন। বেথানির কাছাকাছি পৌঁছালে তিনি তাঁর ২ সাহাবীকে বললেন শহরে আগে আগে গিয়ে মেরিকে জানাতে যে ঈসা এসেছেন। খবর পেয়ে মেরি বেথানি থেকে ছুটে বেরিয়ে এলো। কাঁদতে কাঁদতে বলল, “প্রভু, আপনি বলেছিলেন আমার ভাই বাঁচবে। কিন্তু, আজ ৪ দিন হল সে কবরে। আমি যদি আপনাকে একটু আগে জানাতে পারতাম!”
ঈসা বললেন, “মেরি! তোমার ভাই মরে নি, কেবল ঘুমাচ্ছে! (রূপক)”
মেরি বলল, “হ্যাঁ, প্রভু। সে ঘুমাচ্ছে। তবে, এ ঘুম থেকে সে উঠবে সেদিনই যেদিন আল্লাহর ফেরেশতা শিঙ্গার আওয়াজ দেবে। কিয়ামতের দিন।”
ঈসা বললেন, “বিশ্বাস কর মেরি। সে এর আগেই জাগবে। আল্লাহ আমাকে এ ঘুমের উপর ক্ষমতা দিয়েছেন। বিশ্বাস কর, তোমার ভাই মৃত না। কারণ, মৃত তো কেবল সেই যে আল্লাহর করুনা না পেয়ে মরে।” মেরি দ্রুত ফিরে গিয়ে তাঁর বোন মারথা (Martha)কে জানালো ঈসার আসার কথা।
মেরীর ভাই লাসার (Lazarus) এর মৃত্যুর জন্য জেরুজালেম থেকে অনেকেই এসেছিলো। ইহুদী ইমাম আর ফারিসিরা সেখানে ছিল।
মারথা ঈসার আসার খবর শুনে ছুটে বেরিয়ে এলো। তাঁকে অনুসরণ করে ইহুদী জনতাও এলো, তারা অবশ্য ভেবেছিল সে বুঝি তাঁর ভাইয়ের সমাধিতে কাঁদতে যাচ্ছে। কিন্তু, দেখল সে ঈসা নাসারার কাছে গেল! মারথা বলল, “প্রভু, আল্লাহ যদি আপনাকে এখানে রাখত, তাহলে আমার ভাই মরত না!”
ঈসা চোখের পানি ফেলে বললেন, “কোথায় শুয়ে রেখেছ তাঁকে?”
তারা বলল, “এসে দেখুন।”
ইহুদী ফারিসিরা বলাবলি করতে লাগল, “এ লোকটিই না নাইন শহরে এক মেয়েকে মৃত্যু থেকে জীবিত করেছিল? তাহলে, ও বলার পরেও কেন লাসার মারা গেল?” (ঈসা এর আগে এক ছোট মেয়েকে জীবিত করেছিলেন।)
ঈসা সমাধির কাছে গেলেন। সেখানে সবাই কাঁদছিল। ঈসা বললেন, “কেঁদো না। কারণ, সে ঘুমাচ্ছে। আমি তাঁকে জাগাবো।”
ফারিসিরা বলল, “আল্লাহে যেন তোমাকে এমন ঘুম পারিয়ে দেন।” তখন ঈসা বললেন, “আমার সময় এখনও আসেনি। কিন্তু যখন আসবে, তখন আমি অন্যদের মতই মরব, আর খুব তাড়াতাড়িই জাগবো (কারণ, কিয়ামাত কাছেই থাকবে)।”
ঈসা বললেন, “সমাধির মখ থেকে পাথর সরাও।”
মারথা বলল, “প্রভু, লাশ ৪ দিনের পচা।”
ঈসা বললেন, “তবে আমি এখানে কেন? মারথা, তুমি কি বিশ্বাস করো না? যে, আমি তাঁকে জাগাবো?”
মারথা বলল, “আমি জানি, আপনি আল্লাহর নবী। আল্লাহ আপনাকে পাঠিয়েছেন।”
তখন ঈসা আকাশের দিকে হাত তুলে বললেন, “আমাদের পূর্বপুরুষদের আল্লাহ! ইব্রাহিম আর ইসমাইলের আল্লাহ! ইসহাকের প্রভু, তোমার নাম পবিত্র, মহিমান্বিত তুমি, এ মহিলাদের কষ্ট লাঘব করো।”
সবাই বলল, “আমিন।”
ঈসা জোরে বললেন, “লাসার, আস!!!”
লাসারের লাশ জ্যান্ত হয়ে কবর থেকে উঠে আসল। ঈসা সাহাবীদের বললেন, “খুলে দাও তাঁকে।” কারণ, তাঁর গায়ে কাফনের কাপড় ছিল।
অনেক ইহুদী আর ফারিসি ঈসার উপর সেখানেই ঈমান আনল। কারও, মুজেজাটি আসলেই খুব অবাক করা ছিল। যারা অবিশ্বাসী রইল তখনও, তারা জেরুজালেমে পৌঁছে প্রধান ইহুদী ইমাম কায়াফাকে জানালো লাসারের পুনর্জীবিত হবার ঘটনা; জানালো, কত জন লোক নতুন করে নাসারা (খ্রিস্টান) হয়েছে।
(লাসার ঈসার সাহাবী হয়ে গেল। তখন থেকে ইহুদী ইমামেরা মিলে ঈসাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা শুরু করল। যার ফল ঈসার তথাকথিত ক্রুশের ঘটনা।)
পরের পর্ব
Mary Magdalene; এ নামটা কয়েক বছর ধরেই মানুষ খুব ভাল করে চেনে। খ্রিস্টান ধর্মের আর কাউকে না চিনুক, যীশু আর মেরিকে বলতে গেলে সবাই চেনে। মেরি বলতে, যীশুর (আ) মা মেরীর কথা বলছি না। বলছি, মেরি মাগদালিন এর কথা। কেন? Dan Brown এর দা ভিঞ্চি কোড মেরি আর যীশুকে বিশ্ববিখ্যাত করতে বিশাল অবদান রেখেছে। সত্য কথা, ইসলাম, বাইবেল আর বারনাবাস- কোথাও এমন একটা আয়াত পাওয়া যাবে না, যেখানে বলা হয়েছে মেরি ছিল যীশুর স্ত্রী। এটা সম্পূর্ণ বানানো একটা কথা। তবে, এটা আপনি যদি মনে করেন, এটা ব্রাউনের আবিস্কার তাহলে কিন্তু আপনি বড় ভুল ভাবছেন। ব্রাউন এ ধারণাটা ধার করেছেন। আর প্রয়োগ করেছেন তাঁর উপন্যাসে। ১৯৮২ সালে প্রকাশিত The Holy Blood and the Holy Grail থেকে তাঁর আইডিয়া ধার করেছেন তিনি। সে যাই হোক, এটা প্রমাণ করা যায়, ভিঞ্চি কোডে তিনি কীভাবে তথ্যের ভুল interpretation করে ভুল সিদ্ধান্ত তুলে ধরেছেন। তবে, এটা ঠিক যে, উপন্যাস হিসেবে ভিঞ্চি কোড অসাধারণ! ভিঞ্চি কোডের অসারতা প্রমাণের জন্য একটা বিশাল পোস্ট লিখা যায়! তবে, মেরি সম্পর্কে কেবল একটি কথাই লিখা, মেরি ছিল আগে একজন পাবলিক sinner; এটার ইন্টারপ্রেটেশন যে যেভাবে করার করবে... তবে, মেরি রয়াল ব্লাডলাইনের, এমন কোন প্রমাণ নেই...
ইসলাম কী বলে?
ঈসা ৩০ বছর বয়সে নবী হন। তিনি ৩ বছর ধর্মপ্রচার করেন। ৩৩ বছর বয়সে তিনি আসমানে আরোহণ করেন। কুরআন ২৫ বার ঈসার কথা বলেছে, তাঁর জীবনের কত গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা আমাদের জানিয়েছে, বিবাহ করলে সেটা জানানোর কথা...
হাদিস আমাদের জানায়, আবার এসে তিনি ৪০ বছর থাকবেন পৃথিবীতে। তাঁর মানে তিনি ৭৩ বছর বয়সে মারা যাবেন। তাঁর কবর হবে মুহাম্মাদ (স) এর পাশে, মদিনায়। ২য় বার এসেই তিনি বিবাহ করবেন, এর আগে না। মানে, বিয়ে করেননি। তখন তাঁর সন্তান হবে।
যাই হোক, তখনকার সময়ে ইসরাইলে মরিয়ম বা মারিয়া বা মেরি অনেক কমন একটি নাম ছিল। অনেকের নামই মেরি ছিল। আমি, কেবল ঈসার মায়ের নামের ক্ষেত্রে মরিয়ম ব্যবহার করলাম, অন্য ক্ষেত্রে“মেরি”।
তখন, কবর দেয়ার রীতি ছিল, একটা পাথরের গর্তে লাশ রেখে গর্তের মুখে পাথর রেখে দেয়া। এটাকেSepulcher বলা হয়। পাথরের সমাধি।
এখন, বারনাবাসের লিখনি শুরু করা যাক। গত পর্বের পর থেকে...
অধ্যায় ৯৮
ঈসা কথা বলা শেষ করলে, সবাই চলে যেতে লাগল। রাজা হেরোদ, গভর্নর আর ইমামেরা তুমুল তর্ক শুরু করে দিল ঈসার বাণী নিয়ে। অবশেষে, ইমামরা অনুরোধ করল, গভর্নর যেন রোমান সিনেটে পুরো ব্যাপারটি জানিয়ে চিঠি লিখেন। গভর্নর সেটা করলেন। ইসরাইলের প্রতি সিনেটের বিশেষ কারণে দরদ ছিল। আদেশ জারি করা হল, কেউ যেন কখনও এমনকি মৃত্যুমুখেও ইহুদী নবী ঈসা নাসারাকে খোদা বা খোদার পুত্র না বলে। নির্দেশনামা তামায় খোদাই করে বাইতুল মুকাদ্দাসের দরজায় টানানো হল।
জনতার বিশাল একটা অংশ চলে যাবার পরেও প্রায় ৫০০০ লোক থাকল, নারী-শিশু গণনায় না এনেও। বেশিরভাগই ঈসার কথা শুনতে দূর থেকে এসেছেন। ২ দিন ধরে অনেকে না খেয়ে আছেন... ঈসা এটা বোঝার পর দয়া বোধ করলেন। তিনি ফিলিপকে বললেন, “আমরা এত রুটি কোথায় পাই যেন তারা ক্ষুধায় না মারা যায়?”
ফিলিপ বলল, “২০০ স্বর্ণমুদ্রা দিয়েও এত রুটি কেনা যাবে না!”
আন্ড্রু বলল, “ঐ যে ঐ ছেলেটার কাছে ৫টা রুটি আর ২টা মাছ আছে। কিন্তু কী আর হবে এতটুকু দিয়ে...”
ঈসা বললেন, “সবাইকে ঘাসে বসাও। ৫০ আর ৪০ করে করে।”
এরপর ঈসা রুটি হাতে নিলেন আর বললেন, “বিসমিল্লাহ!” আর রুটি ভেঙে সাহাবীদের দিলেন, আর সাহাবীরা দিল জনতাকে। মাছের ক্ষেত্রেও একই কাজ করলেন। প্রত্যেকে খেল পেট ভরে!! এরপর সাহাবীরা খাবারের উচ্ছিষ্ট সংগ্রহ করলেন, দেখা গেল ১২টা ঝুড়ি ভরে গেছে!
সবাই ভাবল, এটা কি স্বপ্ন?? পরের এক ঘণ্টা সবাই এ মুজেজা ছাড়া আর কিছু নিয়ে চিন্তা বা কথা বলতে পারল না। এরপর ঈসা আল্লাহকে ধন্যবাদ দিয়ে সবাইকে বিদায় দিলেন। কিন্তু, ৭২ জন ছিল যারা যেতেই চাচ্ছিল না। ঈসা তাদেরকে সাহাবী হিসেবে গ্রহণ করলেন।
অধ্যায় ১২৯
(জেরুজালেমে)
ঈসা বয়ান শেষ করলেন, যেখানে তিনি মিথ্যা দেবদেবীর সম্পর্কে বলেছেন। দোয়া শেষে সবাই “আমিন” রবে মুখরিত হয়ে উঠল।
ঈসা নেমে আসলেন মিম্বার থেকে, নিচে দাঁড়িয়ে ছিল অনেক অসুস্থ মানুষ, তিনি তাদেরকে আল্লাহর নামে সুস্থ করে তুললেন। তখন সদ্য-সুস্থ হওয়া এক কুষ্ঠরোগী সাইমন ঈসাকে রাতের খাবারের নিমন্ত্রণ করল। ইমামেরা ততদিনে ঈসাকে ঘৃণা করা শুরু করে দিয়েছে। কারণ, ঈসা তাদের গোপন কথা বলে দিচ্ছেন। (তারা আল্লাহর ওয়াস্তে দেয়া জনগনের টাকা আত্মসাৎ করত।) ইমামেরা তাড়াতাড়ি রোমান সৈন্যদের গিয়ে বলে দিল, ঈসা তাদের দেবদেবীদের অপমান করেছেন। ইমামদের উদ্দেশ্য ঈসাকে মেরে ফেলা।
ঈসা সাইমনের বাড়িতে ঢুকলেন। যখন তিনি বসে খাচ্ছিলেন, তখন একটা মেয়ে যে কিনা public sinner, নাম মেরি, দৌড়ে ঘরে ঢুকল। সে ঈসার পায়ের কাছে পড়ে কাঁদতে লাগল। তার অশ্রুতে ভেসে গেল মাটি।
সাইমনের সাথে আরও কয়েকজন বসে খাচ্ছিল, একজন পাপী মেয়ে ওর ঘরে ঢুকেছে তারই আমন্ত্রিত একজনের কারণে, এটা ভেবেই সে অপমানিত বোধ করছিল। মনে মনে ভাবছে, “এ লোক যদি সত্যিই যদি নবী হত, তাহলে কি জানত না যে, এ মেয়ে কত খারাপ?!”
ঈসা জানলেন সাইমন কী ভাবছে, তাই বললেন, “সাইমন, তোমাকে আমার একটা কথা বলার আছে।” সাইমন বলল, “জি, বলুন।”
অধ্যায় ১৩০
ঈসা বললেন, “দুজন ঋণীর গল্প বলি। একই লোকের কাছে তাদের ঋণ ছিল। একজন ৫০ টাকা, আরেকজন ৫০০ টাকা। একজনও ঋণ পরিশোধ করতে পারল না। দয়ালু মহাজন ২জনের ঋণই মাফ করে দিলেন। এখন বল তো, এ দুজনের মধ্যে কে মহাজনকে বেশি ভালবাসবে?”
সাইমন বলল, “অবশ্যই যার বেশি ঋণ মাফ করা হয়েছে সে।”
ঈসা বললেন, “ঠিক বলেছ; এখন শোন, এ মেয়েটি আর তোমার ব্যাপার খেয়াল করেছ? তোমরা দুজনই আল্লাহর কাছে ঋণী। একজনের শরীরে কুস্থ, আরেকজনের আত্মায় কুষ্ঠ। আল্লাহ তোমাদের দুজনের কুষ্ঠতাই ভাল করে দিয়েছেন, দুজনের ঋণই মাফ। তুমি আমাকে কম ভালোবাসো। কারণ, তুমি ভাব, তুমি কম পেয়েছ আল্লাহর কাছ থেকে। আমি তোমার ঘরে ঢুকেছি, অথচ তুমি আমাকে হাত পা ধোয়ার পানি পর্যন্ত দাও নি। কিন্তু, এ মেয়েটিকে দেখ। সে এ ঘরে ঢুকেই নিজের চোখের পানিতে মেঝে ভাসিয়ে দিয়েছে। আমি সত্যি বলছি, বেশি উপহার পেয়েছে এ মেয়েটাই, কারণ সে বেশি ভালবেসেছে। তাঁর গুনাহ মাফ।” এরপর মেরিকে বললেন, “যাও, তোমার উপর শান্তি বর্ষিত হোক, তোমার প্রতিপালক তোমার গুনাহ মাফ করে দিয়েছেন। আর গুনাহ করো না। তোমার ঈমান তোমাকে বাঁচিয়েছে।”
(মাগদালা শহরের বাসিন্দা ছিল বলে মেরিকে মেরি মাগদালিন বলা হয়। এরপর থেকে মেরি ঈসার সাহাবা হয়ে যায়।)
অধ্যায় ১৯২
(বেশ কিছু দিন পরের কথা)
... কথা শেষ করে ঈসা খেতে বসলেন ইমাম নিকোদিমার সাথে। ঠিক তখনই মেরি, যে কিনা ঈসার পায়ের কাছে কেঁদেছিল, নিকোদিমার বাড়িতে দৌড়ে ঢুকল এবং আবার কাঁদতে লাগল, “প্রভু, আমি আপনার সামান্য দাসী। আপনার মাধ্যমে আমি আল্লাহর করুনা পেয়েছি। আমার এক বোন আছে। আর আছে এক ভাই, যে কিনা এখন মৃত্যুশয্যায়।”
ঈসা বললেন, “তোমার বাড়ি কোথায়? বল। আমি সেখানে গিয়ে আল্লাহর কাছে তাঁর জন্য দোয়া করব।”
“আমার বাড়ি মাগদালা শহরে। কিন্তু, আমার ভাইবোন থাকে বেথানি শহরে।”
“যাও, আমি তোমার ভাইয়ের বাসায় আসব... ভয় করো না, সে বাঁচবে।”
তখন মেরি চলে গেল আর বেথানি শহরে এসে দেখল তাঁর ভাই সেইদিনই মারা গেছে!! তাঁকে কবর দেয়া হয়েছে তাঁর পূর্বসূরীদের সাথে পাথরের সমাধিতে।
অধ্যায় ১৯৩
ঈসা নিকোদিমার বাসায় থাকলেন ২ দিন। তৃতীয় দিন তিনি বেথানি গেলেন। বেথানির কাছাকাছি পৌঁছালে তিনি তাঁর ২ সাহাবীকে বললেন শহরে আগে আগে গিয়ে মেরিকে জানাতে যে ঈসা এসেছেন। খবর পেয়ে মেরি বেথানি থেকে ছুটে বেরিয়ে এলো। কাঁদতে কাঁদতে বলল, “প্রভু, আপনি বলেছিলেন আমার ভাই বাঁচবে। কিন্তু, আজ ৪ দিন হল সে কবরে। আমি যদি আপনাকে একটু আগে জানাতে পারতাম!”
ঈসা বললেন, “মেরি! তোমার ভাই মরে নি, কেবল ঘুমাচ্ছে! (রূপক)”
মেরি বলল, “হ্যাঁ, প্রভু। সে ঘুমাচ্ছে। তবে, এ ঘুম থেকে সে উঠবে সেদিনই যেদিন আল্লাহর ফেরেশতা শিঙ্গার আওয়াজ দেবে। কিয়ামতের দিন।”
ঈসা বললেন, “বিশ্বাস কর মেরি। সে এর আগেই জাগবে। আল্লাহ আমাকে এ ঘুমের উপর ক্ষমতা দিয়েছেন। বিশ্বাস কর, তোমার ভাই মৃত না। কারণ, মৃত তো কেবল সেই যে আল্লাহর করুনা না পেয়ে মরে।” মেরি দ্রুত ফিরে গিয়ে তাঁর বোন মারথা (Martha)কে জানালো ঈসার আসার কথা।
মেরীর ভাই লাসার (Lazarus) এর মৃত্যুর জন্য জেরুজালেম থেকে অনেকেই এসেছিলো। ইহুদী ইমাম আর ফারিসিরা সেখানে ছিল।
মারথা ঈসার আসার খবর শুনে ছুটে বেরিয়ে এলো। তাঁকে অনুসরণ করে ইহুদী জনতাও এলো, তারা অবশ্য ভেবেছিল সে বুঝি তাঁর ভাইয়ের সমাধিতে কাঁদতে যাচ্ছে। কিন্তু, দেখল সে ঈসা নাসারার কাছে গেল! মারথা বলল, “প্রভু, আল্লাহ যদি আপনাকে এখানে রাখত, তাহলে আমার ভাই মরত না!”
ঈসা চোখের পানি ফেলে বললেন, “কোথায় শুয়ে রেখেছ তাঁকে?”
তারা বলল, “এসে দেখুন।”
ইহুদী ফারিসিরা বলাবলি করতে লাগল, “এ লোকটিই না নাইন শহরে এক মেয়েকে মৃত্যু থেকে জীবিত করেছিল? তাহলে, ও বলার পরেও কেন লাসার মারা গেল?” (ঈসা এর আগে এক ছোট মেয়েকে জীবিত করেছিলেন।)
ঈসা সমাধির কাছে গেলেন। সেখানে সবাই কাঁদছিল। ঈসা বললেন, “কেঁদো না। কারণ, সে ঘুমাচ্ছে। আমি তাঁকে জাগাবো।”
ফারিসিরা বলল, “আল্লাহে যেন তোমাকে এমন ঘুম পারিয়ে দেন।” তখন ঈসা বললেন, “আমার সময় এখনও আসেনি। কিন্তু যখন আসবে, তখন আমি অন্যদের মতই মরব, আর খুব তাড়াতাড়িই জাগবো (কারণ, কিয়ামাত কাছেই থাকবে)।”
ঈসা বললেন, “সমাধির মখ থেকে পাথর সরাও।”
মারথা বলল, “প্রভু, লাশ ৪ দিনের পচা।”
ঈসা বললেন, “তবে আমি এখানে কেন? মারথা, তুমি কি বিশ্বাস করো না? যে, আমি তাঁকে জাগাবো?”
মারথা বলল, “আমি জানি, আপনি আল্লাহর নবী। আল্লাহ আপনাকে পাঠিয়েছেন।”
তখন ঈসা আকাশের দিকে হাত তুলে বললেন, “আমাদের পূর্বপুরুষদের আল্লাহ! ইব্রাহিম আর ইসমাইলের আল্লাহ! ইসহাকের প্রভু, তোমার নাম পবিত্র, মহিমান্বিত তুমি, এ মহিলাদের কষ্ট লাঘব করো।”
সবাই বলল, “আমিন।”
ঈসা জোরে বললেন, “লাসার, আস!!!”
লাসারের লাশ জ্যান্ত হয়ে কবর থেকে উঠে আসল। ঈসা সাহাবীদের বললেন, “খুলে দাও তাঁকে।” কারণ, তাঁর গায়ে কাফনের কাপড় ছিল।
অনেক ইহুদী আর ফারিসি ঈসার উপর সেখানেই ঈমান আনল। কারও, মুজেজাটি আসলেই খুব অবাক করা ছিল। যারা অবিশ্বাসী রইল তখনও, তারা জেরুজালেমে পৌঁছে প্রধান ইহুদী ইমাম কায়াফাকে জানালো লাসারের পুনর্জীবিত হবার ঘটনা; জানালো, কত জন লোক নতুন করে নাসারা (খ্রিস্টান) হয়েছে।
(লাসার ঈসার সাহাবী হয়ে গেল। তখন থেকে ইহুদী ইমামেরা মিলে ঈসাকে হত্যার ষড়যন্ত্র করা শুরু করল। যার ফল ঈসার তথাকথিত ক্রুশের ঘটনা।)
পরের পর্ব
লেখককে ফলো করুন
|
© 2013 by Ask Islam Bangla.