প্রশ্ন ৬৬ --> সালাতুত তাসবীহ সম্পর্কে জানতে চাই ?
উত্তর :
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
সালাতুত তাসবীহ সংক্রান্ত হাদীসটি হল :
# ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আব্বাস ইবনে আব্দিল মুত্তালিবকে বলেছেন, হে চাচা, আমি কি আপনাকে দেব না? আমি কি আপনাকে প্রদান করব না? আমি কি আপনার নিকটে আসব না? আমি কি আপনার জন্য দশটি সৎ গুনের বর্ণনা করব না যা করলে আল্লাহ তাআলা আপনার আগের ও পিছনের, নতুন ও পুরাতন, ইচ্ছায় ও ভুলবশত কৃত, ছোট ও বড়, গোপন ও প্রকাশ্য সকল গুনাহ মাফ করে দেবেন। আর সে দশটি সৎ গুন হলো: আপনি চার রাকাত নামাজ পড়বেন। প্রতি রাকাআতে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পড়বেন। প্রথম রাকাতে যখন কিরাআত পড়া শেষ করবেন তখন দাঁড়ানো অবস্থায় ১৫ বার বলবেন:
سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ {সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লহু আকবার}
এরপর রুকুতে যাবেন এবঃ রুকু অবস্থায় (উক্ত দুআটি) ১০ বার পড়বেন।এরপর রুকু থেকে মাথা ওঠাবেন এবং ১০ বার পড়বেন।এরপর সিজদায় যাবেন। সিজদারত অবস্থায় ১০ বার পড়বেন। এরপর সিজদা থেকে মাথা উঠাবেন অতঃপর ১০ বার পড়বেন। এরপর আবার সিজদায় যাবেন এবং সিজদারত অবস্থায় ১০ বার পড়বেন। এরপর সিজদা থেকে মাথা ওঠাবেন এবং ১০ বার পড়বেন। এ হলো প্রতি রাকাতে ৭৫ বার।আপনি চার রাকাতেই অনুরূপ করবেন।যদি আপনি প্রতিদিন আমল করতে পারেন, তবে তা করুন। আর যদি না পারেন,তবে প্রতি জুমাআয় একবার। যদি প্রতি জুমআয় না করেন তবে প্রদি মাসে একবার। আর যদি তাও না করেন তবে জীবনে একবার। (বর্ণনায় ইবনে মাজাহ)
“সালাতুস তাসবীহ” সংক্রান্ত অধিকাংশ হাদীসই অত্যন্ত যয়ীফ বা দুর্বল সনদে বর্ণিত। একমাত্র এ হাদীসটিকে কোনো কোনো মুহাদ্দিস সহীহ বা গ্রহণযোগ্য হিসাবে গণ্য করেছেন।
ইমাম তিরমিযী প্রখ্যাত তাবে-তাবেয়ী আব্দুল্লাহ ইবনু মুবারাক (মৃত্যু ১৮১ হি) থেকে “সালাতুত তাসবীহ” আদায়ের আরেকটি নিয়ম উল্লেখ করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনু মুবারকের মতে এ অতিরিক্ত যিকর আদায়ের নিয়ম হলো: নামায শুরু করে শুরুর দোয়া বা সানা পাঠের পরে ১৫ বার, সূরা ফাতেহা ও অন্য কোনো সূরা শেষ করার পরে ১০ বার, রুকুতে ১০ বার, রুকু থেকে উঠে ১০ বার, প্রথম সাজদায় ১০ বার, দুই সাজাদার মাঝে ১০ বার ও দ্বিতীয় সাজদায় ১০ বার মোট ৭৫ বার প্রতি রাক’আতে।
অর্থাৎ, এই নিয়মে কিরাআতের পূর্বে ও পরে দাঁড়ানো অবস্থায় ২৫ বার তাসবীহ পাঠ করা হয় আর দ্বিতীয় সাজাদার পরে বসা অবস্থায় কোনো তাসবীহ পড়া হয় না। পূর্বের হাদীসে বর্ণিত নিয়মে কিরাআতের পূর্বে কোনো তাসবীহ নেই। দাঁড়ানো অবস্থায় শুধু কিরাআতের পরে ১৫ বার তাসবীহ পড়তে হবে। প্রত্যেক রাক’আতে দ্বিতীয় সাজদার পরে বসে ১০ বার তাসবীহ পড়তে হবে।
আব্দুল্লাহ ইবনু মুবারক বলেন, যদি এ সালাত রাত্রে আদায় করে তাহলে দু রাক’আত শেষে সালাম ফিরিয়ে আবার দু রাক’আত পৃথকভাবে আদায় করবে। “সালাতুত তাসবীহ” আদায়ের সময় রুকু ও সাজদায় প্রথমে রুকু ও সাজদার মাসনূন তাসবীহ ‘সুবহানার রাব্বিয়্যাল আযীম’ ও ‘সুবহানা রাব্বিয়্যাল আ’লা’ নূন্যতম তিন বার করে পাঠ করার পরে অতিরিক্ত তাসবীহগুলি পাঠ করতে হবে।
উল্লেখ যে হাদীসগুলো যইফ হওয়ায় আলেমদের মধ্যে মতভেদ আছে । দুর্বল হাদীসের ব্যাপারে ইমাম সুয়ুতি আর ইমাম নববীর বক্তব্য দেখুন,
"দূর্বল(যদি জাল না হয় বা এর বিপরীতে সহীহ হাদীস বিদ্যমান না থাকে তবে সে) হাদীসের উপর আমল করা জায়েয বরং মুস্তাহাব"-[ইমাম নববী,আল আযকার,পৃঃ ৭]
"ফজিলতের ক্ষেত্রে দূর্বল গ্রহনযোগ্য"-[সূয়ূতী,তাদরীর রাবী ১/৩৫০;আবদুল হাই লাখনবী,যাফরুল আমানী ২০৯-২২৪]
তাই অনেক আলেম এই আমলের কথা স্বীকার করেন ।
আবার অনেক আলেম এই দুর্বল সনদের জন্য এই নামায পড়া হতে বিরত থাকতে বলেন ।
দেখুন বিরত থাকতে বলা আলেমদের বক্তব্য ,Islam QA - There is no saheeh hadeeth about Salaat al-Tasbeeh
Islam QA - Is there any valid proof for Salaat al-Tasaabeeh?
পরিশেষে আল্লাহই এ ব্যাপারে ভাল জানেন ।
সতর্কতা অবলম্বনই শ্রেয় ।
STA-34.74
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
সালাতুত তাসবীহ সংক্রান্ত হাদীসটি হল :
# ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম আব্বাস ইবনে আব্দিল মুত্তালিবকে বলেছেন, হে চাচা, আমি কি আপনাকে দেব না? আমি কি আপনাকে প্রদান করব না? আমি কি আপনার নিকটে আসব না? আমি কি আপনার জন্য দশটি সৎ গুনের বর্ণনা করব না যা করলে আল্লাহ তাআলা আপনার আগের ও পিছনের, নতুন ও পুরাতন, ইচ্ছায় ও ভুলবশত কৃত, ছোট ও বড়, গোপন ও প্রকাশ্য সকল গুনাহ মাফ করে দেবেন। আর সে দশটি সৎ গুন হলো: আপনি চার রাকাত নামাজ পড়বেন। প্রতি রাকাআতে সূরা ফাতিহা ও অন্য একটি সূরা পড়বেন। প্রথম রাকাতে যখন কিরাআত পড়া শেষ করবেন তখন দাঁড়ানো অবস্থায় ১৫ বার বলবেন:
سُبْحَانَ اللَّهِ وَالْحَمْدُ لِلَّهِ وَلَا إِلَهَ إِلَّا اللَّهُ وَاللَّهُ أَكْبَرُ {সুবহানাল্লাহি ওয়ালহামদুলিল্লাহি ওয়া লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াল্লহু আকবার}
এরপর রুকুতে যাবেন এবঃ রুকু অবস্থায় (উক্ত দুআটি) ১০ বার পড়বেন।এরপর রুকু থেকে মাথা ওঠাবেন এবং ১০ বার পড়বেন।এরপর সিজদায় যাবেন। সিজদারত অবস্থায় ১০ বার পড়বেন। এরপর সিজদা থেকে মাথা উঠাবেন অতঃপর ১০ বার পড়বেন। এরপর আবার সিজদায় যাবেন এবং সিজদারত অবস্থায় ১০ বার পড়বেন। এরপর সিজদা থেকে মাথা ওঠাবেন এবং ১০ বার পড়বেন। এ হলো প্রতি রাকাতে ৭৫ বার।আপনি চার রাকাতেই অনুরূপ করবেন।যদি আপনি প্রতিদিন আমল করতে পারেন, তবে তা করুন। আর যদি না পারেন,তবে প্রতি জুমাআয় একবার। যদি প্রতি জুমআয় না করেন তবে প্রদি মাসে একবার। আর যদি তাও না করেন তবে জীবনে একবার। (বর্ণনায় ইবনে মাজাহ)
“সালাতুস তাসবীহ” সংক্রান্ত অধিকাংশ হাদীসই অত্যন্ত যয়ীফ বা দুর্বল সনদে বর্ণিত। একমাত্র এ হাদীসটিকে কোনো কোনো মুহাদ্দিস সহীহ বা গ্রহণযোগ্য হিসাবে গণ্য করেছেন।
ইমাম তিরমিযী প্রখ্যাত তাবে-তাবেয়ী আব্দুল্লাহ ইবনু মুবারাক (মৃত্যু ১৮১ হি) থেকে “সালাতুত তাসবীহ” আদায়ের আরেকটি নিয়ম উল্লেখ করেছেন। আব্দুল্লাহ ইবনু মুবারকের মতে এ অতিরিক্ত যিকর আদায়ের নিয়ম হলো: নামায শুরু করে শুরুর দোয়া বা সানা পাঠের পরে ১৫ বার, সূরা ফাতেহা ও অন্য কোনো সূরা শেষ করার পরে ১০ বার, রুকুতে ১০ বার, রুকু থেকে উঠে ১০ বার, প্রথম সাজদায় ১০ বার, দুই সাজাদার মাঝে ১০ বার ও দ্বিতীয় সাজদায় ১০ বার মোট ৭৫ বার প্রতি রাক’আতে।
অর্থাৎ, এই নিয়মে কিরাআতের পূর্বে ও পরে দাঁড়ানো অবস্থায় ২৫ বার তাসবীহ পাঠ করা হয় আর দ্বিতীয় সাজাদার পরে বসা অবস্থায় কোনো তাসবীহ পড়া হয় না। পূর্বের হাদীসে বর্ণিত নিয়মে কিরাআতের পূর্বে কোনো তাসবীহ নেই। দাঁড়ানো অবস্থায় শুধু কিরাআতের পরে ১৫ বার তাসবীহ পড়তে হবে। প্রত্যেক রাক’আতে দ্বিতীয় সাজদার পরে বসে ১০ বার তাসবীহ পড়তে হবে।
আব্দুল্লাহ ইবনু মুবারক বলেন, যদি এ সালাত রাত্রে আদায় করে তাহলে দু রাক’আত শেষে সালাম ফিরিয়ে আবার দু রাক’আত পৃথকভাবে আদায় করবে। “সালাতুত তাসবীহ” আদায়ের সময় রুকু ও সাজদায় প্রথমে রুকু ও সাজদার মাসনূন তাসবীহ ‘সুবহানার রাব্বিয়্যাল আযীম’ ও ‘সুবহানা রাব্বিয়্যাল আ’লা’ নূন্যতম তিন বার করে পাঠ করার পরে অতিরিক্ত তাসবীহগুলি পাঠ করতে হবে।
উল্লেখ যে হাদীসগুলো যইফ হওয়ায় আলেমদের মধ্যে মতভেদ আছে । দুর্বল হাদীসের ব্যাপারে ইমাম সুয়ুতি আর ইমাম নববীর বক্তব্য দেখুন,
"দূর্বল(যদি জাল না হয় বা এর বিপরীতে সহীহ হাদীস বিদ্যমান না থাকে তবে সে) হাদীসের উপর আমল করা জায়েয বরং মুস্তাহাব"-[ইমাম নববী,আল আযকার,পৃঃ ৭]
"ফজিলতের ক্ষেত্রে দূর্বল গ্রহনযোগ্য"-[সূয়ূতী,তাদরীর রাবী ১/৩৫০;আবদুল হাই লাখনবী,যাফরুল আমানী ২০৯-২২৪]
তাই অনেক আলেম এই আমলের কথা স্বীকার করেন ।
আবার অনেক আলেম এই দুর্বল সনদের জন্য এই নামায পড়া হতে বিরত থাকতে বলেন ।
দেখুন বিরত থাকতে বলা আলেমদের বক্তব্য ,Islam QA - There is no saheeh hadeeth about Salaat al-Tasbeeh
Islam QA - Is there any valid proof for Salaat al-Tasaabeeh?
পরিশেষে আল্লাহই এ ব্যাপারে ভাল জানেন ।
সতর্কতা অবলম্বনই শ্রেয় ।
STA-34.74
© 2013 by Ask Islam Bangla.