প্রশ্ন ৫৯ --> ইসলাম এর মূল উদ্দেশ্য কি রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন ?
মূল প্রশ্নঃ
ইসলাম এর মূল উদ্দেশ্য কি রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন ? একটা বইতে পড়লাম , "ওই ইবাদত সম্পর্কে লোকেরা বুঝে রেখেছে যে টা কেবল সালাত , সিয়াম , তাসবিহ ও তাহ্লীল এর নাম ।দুনিয়াবি বিষয়ে তাদের কোনও মাথাবাথা নেই । অথচ আসল কথা হল সালাত সিয়াম হাজ্জ ও তাসবিহ সবকিছু মানুষকে উক্ত বড় ইবাদত (হুকুমত ও অন্যান্য দুনিয়াবি বিষয়) এর জন্য প্রস্তুতকারী অনুশীলন বা ট্রেনিং কোর্স মাত্র । (তাহফিমাত ১ম খণ্ড , ৬৯ পৃষ্ঠা ) এই যুক্তি বা মতবাদ কতটুকু সঠিক ?
উত্তর :
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
ইসলামের মূল উদ্যেশ্য বুঝতে হলে আমাদের বুঝতে হবে ইসলাম কী।এ সম্পর্কে একটি প্রখ্যাত হাদিস উল্লেখ করছি।
# একদিন উমার (রা) সহ আরো কয়েকজন সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সা) -র সাহায্যে নিয়োজিত ছিলেন। এমন সময় একজন আগন্তুক তাদের কাছে এলেন। তার পরিধেয় পোশাকটি ছিল ধবধবে সাদা, মাথার চুল ছিল কুচকুচে কালো। তার মধ্যে ভ্রমণজনিত কোন ক্লান্তির ছাপ ছিল না। সাহাবীদের কাছেও তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ অপরিচিত একজন ব্যক্তি। সেই অপরিচিত ব্যক্তিটি নিজের দুই হাঁটু রাসূলুল্লাহ (সা) -র দুই হাঁটুর সাথে লাগিয়ে বসে পড়লেন আর নিজের দুই হাত রাসূলুল্লাহ (সা) -র দুই উরুর উপর রাখলেন। তারপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হে মুহাম্মাদ (সা) আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বলুন। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, ইসলাম হলো তুমি এ কথার সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহ্ -র রাসূল। সালাত প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত প্রদান করবে, রামাদান মাসে রোযা রাখবে এবং বায়তুল্লাহ্ পৌছার সামর্থ্য থাকলে হজ্জ্ব পালন করবে। আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। আগন্তুকের কথা শুনে সাহাবীরা বিস্মিত হলেন, কে এই অপরিচিত লোক? যে রাসূলুল্লাহ্ -কে প্রশ্ন করছে আবার তা সত্যায়িতও করছে।আগন্তুক আবারো প্রশ্ন করলেন,হে মুহাম্মাদ (সা) আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, ঈমান হলো আল্লাহ্ -র প্রতি,তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর অবতীর্ণ ঐশী গ্রন্হগুলোর প্রতি,তাঁর রাসূলগণের প্রতি, পরকালের প্রতি এবং তাকদীরের ভালো মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।আগন্তুক আবারো বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন।এরপর সেই আগন্তুক আরেকটি প্রশ্ন করলেন, আমাকে ইহ্সান সম্পর্কে বলুন। রাসূল (সা) বললেন, ইহসান হলো, এমনভাবে ইবাদতে মনোনিবেশ করা, যেন মনে হয়, তুমি আল্লাহ্ -কে দেখছো। যদি তুমি তাঁকে নাও দেখো, তাহলে ভাববে তিনি তো তোমাকে দেখছেন। আগন্তুক আবারো বললেন, আমাকে কেয়ামত সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ (সা) নিজের অপারগতা প্রকাশ করে বললেন, এ বিষয়ে প্রশ্নকারীর চেয়ে যাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে তিনি অধিক অবহিত নন। তখন আগন্তুক বললেন, আমাকে এর কিছু নিদর্শন সম্পর্কে বলুন। উত্তরে রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, যখন দাসী তার মনিবের জননী হবে, যখন দেখতে পাবে, নগ্নপদ, বিবস্ত্রদেহ, দরিদ্র মেষপালকেরা গর্বের সাথে বিরাট বিরাট অট্টালিকা তৈরীর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। উমার (রা) -এর বর্ণনামতে এরপরেই আগন্তুক চলে গেলেন। কোন কোন উৎসমতে রাসূলুল্লাহ্ সাহাবীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন সেই আগন্তুককে পুনরায় ডেকে আনার জন্য, কিন্তু সাহাবীরা সেই আগন্তুককে আর খুজে পেলেন না। যা হোক, আগন্তুক চলে যাবার পর, উমার (রা) সহ অন্যান্য সাহাবীরা বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন। রাসূল (সা) উনাকে বললেন, হে উমার! তুমি জানো এই প্রশ্নকারী কে? উমার (রা) বললেন, আল্লাহ্ ও তার রাসূলই ভালো জানেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, তিনি জিবরাঈল। তিনি এসেছিলেন তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দিতে।
উপরোক্ত ঘটনাটি একটি ঐতিহাসিক হাদীস যা হাদীসে জিবরাঈল নামে অধিক পরিচিত। হাদীসটি বিশুদ্ধ। এই একটি হাদীসই যেন ইসলামের সারাংশ, মুহাম্মাদ (সা) -এর কথা ও কাজের উপর লিপিবদ্ধ হাদীসগুলোর মধ্যে অন্যতম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটি মুসলিম শরীফের ১ম বই কিতাবুল ঈমানের ১ম হাদীস। মুসলিম শরীফ শুরুই হয়েছে এই হাদীসটি দিয়ে। এ হাদীসটি বুখারী শরীফেও রয়েছে।
# যারা ইসলাম কবুল করতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে আসতেন, তাঁদের কে উদ্দেশ্য করে বলতেন, তোমরা আমার কাছে এই মর্মে বায়’আত গ্রহণ কর যে, আল্লাহ্র সঙ্গে কিছু শরীক করবে না, চুরি করবে না, যিনা করবে না, তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দেবে না এবং নেক কাজে নাফরমানী করবে না......। { সহীহ বুখারি,প্রথম খন্ড,অধ্যায়ঃ ২/ ঈমান , হাদিস নাম্বার: ১৭}
ইসলামের মূল ভিত্তি সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে,
# ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু 'আনহুম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: "ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর স্থাপিত। এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ্ ব্যতীত আর কোন সত্য মা'বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। সালাত প্রতিষ্ঠা করা।যাকাত দেয়া। হজ্জ করা। রমাদানে সওম সাধনা করা। [বুখারী: ৮]
** সালাত,সিয়াম,হাজ্জ ও তাসবিহ সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?
সলাতঃ
# ''কোন মুমিন ব্যক্তি এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হল সালাত ত্যাগ করা।'' (সহীহ মুসলিম)
# রাসূল (সা) বলেছেন, "কিয়ামতের দিন বান্দার সর্বপ্রথম সলাতের হিসাব হবে ৷যার সলাত ঠিক হবে তার সব আমল সঠিক হবে ৷ " (তাবারানী, আল-আওসাত্ব, সিলসিলাহ সহীহা: ১৩৫৮)
সিয়ামঃ
" হে ঈমানদারগন!সিয়াম(রোযা) তোমাদের জন্য ফরয করা হয়েছে যেমনটি করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ৷যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার ৷ (বাকারাহ: ১৮৩)
# হযরত আবূ উমামাহ (রা) হতে বর্নিত,তিনি বলেন, আমি বললাম,হে আল্লাহর রাসূল(সা) আমাকে এমন কোন আমলের কথা বলেন,যা দ্বারা আল্লাহ আমাকে লাভবান করবেন ৷(অন্য বর্ননায় আছে যার মাধ্যমে আমি জান্নাতে যেতে পার) তিনি (সা) বললেন, তুমি রোযা রাখ,কারন রোযার সমতূল্য কিছুই নেই ৷পুনরায় আমি বললাম ৷ হে আল্লাহর রাসূল (সা)আমাকে কোন আমলের আদেশ করুন ৷তিনি(সা)বললেন, তুমি রোযা রাখ, কারন রোযার সমতূল্য কোন কিছুই নেই ৷(নাসাঈ, ইবনে খুযাইমা,হাকেম,মুস্তাদরাক,তারগীব,আলবানী: ৩৭৩)
হজঃ
'নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর, যা মানুষের জন্য নির্ধারিত হয়েছে, সেটা হচ্ছে সেই ঘর, যা মক্কায় অবস্থিত, তা সারা জাহানের জন্য হেদায়াত ও বরকতময়। এতে রয়েছে বহু প্রকৃষ্ট নিদর্শন ও মাকামে ইব্রাহীম। যে লোক এতে প্রবেশ করবে, সে নিরাপত্তা লাভ করবে। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এ ঘরের হজ করা মানুষের ওপর কর্তব্য_যে সেখানে পেঁৗছার সামর্থ্য রাখে। আর যে লোক তা মানবে না, আল্লাহ সারা বিশ্বের কোন কিছুরই পরোয়া করেন না।।' (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৯৬-৯৭)।
# 'যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ বিশুদ্ধভাবে পালন করল, সে যেন মায়ের গর্ভ থেকে নিষ্পাপ হয়ে পৃথিবীতে জন্ম নিল। তিনি আরো বলেন,'গুনাহ এবং অন্যান্য খারাবি থেকে যে হজ পবিত্র হবে, তার পুরস্কার বেহেশত ছাড়া অন্য কিছুই নয়।' (বুখারি ও মুসলিম)
তাসবিহঃ
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা বেশী বেশী আল্লাহর স্মরণ করো এবং সকাল-সন্ধ্যা তাঁর পবিত্রতা বর্ণণা/তাসবীহ্ পাঠ কর।” (সূরা আহ্যাব ৪১,৪২)
# রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘তোমাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে যে প্রতিদিন এক হাজার নেকী অর্জন করতে চায়?’ তার সাথে বসা এক ব্যক্তি তাঁকে প্রশ্ন করল: ‘একদিনে এক হাজার নেকী- এটা কী ভাবে সম্ভব?’
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ‘এক শ বার তাসবীহ পাঠ করলে (অর্থাৎ ১০০ বার সুবহানাল্লাহ পড়লে) এতে তার জন্য এক হাজার নেকী লেখা হবে অথবা এক হাজার গুনাহ্ তার আমলনামা থেকে মুছে যাবে।’ (মুসলিম : ২৬৯৮)
অতএব,আমরা উপরের আলোচনা থেকে বুঝতে পারলাম যে,সালাত,সাওম,হজ এগুলো ইসলামের ভিত্তি ও ফরয ইবাদত।সালাত,সাওম,হজ,তাসবিহ-তাহলিল এগলো স্বতন্ত্র ইবাদত এবং এর জন্য সওয়াব বিদ্যমান।অতএব আমাদের জন্য এটি বলা সঙ্গত নয় যে মানুষকে উক্ত বড় ইবাদত (হুকুমত ও অন্যান্য দুনিয়াবি বিষয়) এর জন্য প্রস্তুতকারী অনুশীলন বা ট্রেনিং কোর্স মাত্র-এই কথাটি সঠিক নয়।যদিও দুনিয়ার বুকে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা আমাদের একটি বড় দায়িত্ব,অপরিহার্য কাজ,তথাপি অন্যান্য ইবাদতগুলোকে ট্রেনিঙের পর্যায়ে ফেলে দেওয়া ঠিক নয়।একেকটি ফরযের জন্য আমাদের আলাদাভাবে হিসাব দিতে হবে,ট্রেনিঙের ক্ষেত্রে এ কথাটি খাটে না।প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, ‘তাফহিমাত’ আবুল আলা মওদুদির লেখা গ্রন্থ।ইনি লেখনী দ্বারা অনেক শরয়ী বিষয় সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করলেও অনেক বিতর্কিত আকিদার জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত এবং মূলধারার আলেমগণের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত।তাই আমাদের জন্য নিরাপদ হচ্ছে মওদুদির রচনার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করা এবং ওনার থেকে মত গ্রহণের পূর্বে অভিজ্ঞ আলেমের সঙ্গে পরামর্শ করা।ওনার রচনা ও মতবাদ এড়িয়ে যাওয়াই আমাদের জন্য অধিক নিরাপদ।
মওদুদি সম্পর্কিত ফতোয়ার লিঙ্কঃ
Mufti Online
Darul Ifta
এবং আল্লাহই ভালো জানেন।আশা করি আপনার উত্তরটি পেয়েছেন।
MRM-2.5
ইসলাম এর মূল উদ্দেশ্য কি রাজনৈতিক ক্ষমতা অর্জন ? একটা বইতে পড়লাম , "ওই ইবাদত সম্পর্কে লোকেরা বুঝে রেখেছে যে টা কেবল সালাত , সিয়াম , তাসবিহ ও তাহ্লীল এর নাম ।দুনিয়াবি বিষয়ে তাদের কোনও মাথাবাথা নেই । অথচ আসল কথা হল সালাত সিয়াম হাজ্জ ও তাসবিহ সবকিছু মানুষকে উক্ত বড় ইবাদত (হুকুমত ও অন্যান্য দুনিয়াবি বিষয়) এর জন্য প্রস্তুতকারী অনুশীলন বা ট্রেনিং কোর্স মাত্র । (তাহফিমাত ১ম খণ্ড , ৬৯ পৃষ্ঠা ) এই যুক্তি বা মতবাদ কতটুকু সঠিক ?
উত্তর :
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
ইসলামের মূল উদ্যেশ্য বুঝতে হলে আমাদের বুঝতে হবে ইসলাম কী।এ সম্পর্কে একটি প্রখ্যাত হাদিস উল্লেখ করছি।
# একদিন উমার (রা) সহ আরো কয়েকজন সাহাবী রাসূলুল্লাহ (সা) -র সাহায্যে নিয়োজিত ছিলেন। এমন সময় একজন আগন্তুক তাদের কাছে এলেন। তার পরিধেয় পোশাকটি ছিল ধবধবে সাদা, মাথার চুল ছিল কুচকুচে কালো। তার মধ্যে ভ্রমণজনিত কোন ক্লান্তির ছাপ ছিল না। সাহাবীদের কাছেও তিনি ছিলেন সম্পূর্ণ অপরিচিত একজন ব্যক্তি। সেই অপরিচিত ব্যক্তিটি নিজের দুই হাঁটু রাসূলুল্লাহ (সা) -র দুই হাঁটুর সাথে লাগিয়ে বসে পড়লেন আর নিজের দুই হাত রাসূলুল্লাহ (সা) -র দুই উরুর উপর রাখলেন। তারপর তিনি জিজ্ঞাসা করলেন, হে মুহাম্মাদ (সা) আমাকে ইসলাম সম্পর্কে বলুন। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, ইসলাম হলো তুমি এ কথার সাক্ষ্য দিবে যে, আল্লাহ্ ব্যতীত কোন ইলাহ্ নেই এবং নিশ্চয়ই মুহাম্মাদ (সা) আল্লাহ্ -র রাসূল। সালাত প্রতিষ্ঠা করবে, যাকাত প্রদান করবে, রামাদান মাসে রোযা রাখবে এবং বায়তুল্লাহ্ পৌছার সামর্থ্য থাকলে হজ্জ্ব পালন করবে। আগন্তুক বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন। আগন্তুকের কথা শুনে সাহাবীরা বিস্মিত হলেন, কে এই অপরিচিত লোক? যে রাসূলুল্লাহ্ -কে প্রশ্ন করছে আবার তা সত্যায়িতও করছে।আগন্তুক আবারো প্রশ্ন করলেন,হে মুহাম্মাদ (সা) আমাকে ঈমান সম্পর্কে বলুন। রাসূলুল্লাহ (সা) বললেন, ঈমান হলো আল্লাহ্ -র প্রতি,তাঁর ফেরেশতাদের প্রতি, তাঁর অবতীর্ণ ঐশী গ্রন্হগুলোর প্রতি,তাঁর রাসূলগণের প্রতি, পরকালের প্রতি এবং তাকদীরের ভালো মন্দের প্রতি বিশ্বাস স্থাপন করা।আগন্তুক আবারো বললেন, আপনি ঠিকই বলেছেন।এরপর সেই আগন্তুক আরেকটি প্রশ্ন করলেন, আমাকে ইহ্সান সম্পর্কে বলুন। রাসূল (সা) বললেন, ইহসান হলো, এমনভাবে ইবাদতে মনোনিবেশ করা, যেন মনে হয়, তুমি আল্লাহ্ -কে দেখছো। যদি তুমি তাঁকে নাও দেখো, তাহলে ভাববে তিনি তো তোমাকে দেখছেন। আগন্তুক আবারো বললেন, আমাকে কেয়ামত সম্পর্কে অবহিত করুন। রাসূলুল্লাহ (সা) নিজের অপারগতা প্রকাশ করে বললেন, এ বিষয়ে প্রশ্নকারীর চেয়ে যাকে জিজ্ঞাসা করা হয়েছে তিনি অধিক অবহিত নন। তখন আগন্তুক বললেন, আমাকে এর কিছু নিদর্শন সম্পর্কে বলুন। উত্তরে রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, যখন দাসী তার মনিবের জননী হবে, যখন দেখতে পাবে, নগ্নপদ, বিবস্ত্রদেহ, দরিদ্র মেষপালকেরা গর্বের সাথে বিরাট বিরাট অট্টালিকা তৈরীর প্রতিযোগিতায় লিপ্ত। উমার (রা) -এর বর্ণনামতে এরপরেই আগন্তুক চলে গেলেন। কোন কোন উৎসমতে রাসূলুল্লাহ্ সাহাবীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন সেই আগন্তুককে পুনরায় ডেকে আনার জন্য, কিন্তু সাহাবীরা সেই আগন্তুককে আর খুজে পেলেন না। যা হোক, আগন্তুক চলে যাবার পর, উমার (রা) সহ অন্যান্য সাহাবীরা বেশ কিছুক্ষণ অপেক্ষা করলেন। রাসূল (সা) উনাকে বললেন, হে উমার! তুমি জানো এই প্রশ্নকারী কে? উমার (রা) বললেন, আল্লাহ্ ও তার রাসূলই ভালো জানেন। রাসূলুল্লাহ্ (সা) বললেন, তিনি জিবরাঈল। তিনি এসেছিলেন তোমাদের দ্বীন শিক্ষা দিতে।
উপরোক্ত ঘটনাটি একটি ঐতিহাসিক হাদীস যা হাদীসে জিবরাঈল নামে অধিক পরিচিত। হাদীসটি বিশুদ্ধ। এই একটি হাদীসই যেন ইসলামের সারাংশ, মুহাম্মাদ (সা) -এর কথা ও কাজের উপর লিপিবদ্ধ হাদীসগুলোর মধ্যে অন্যতম ও সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। এটি মুসলিম শরীফের ১ম বই কিতাবুল ঈমানের ১ম হাদীস। মুসলিম শরীফ শুরুই হয়েছে এই হাদীসটি দিয়ে। এ হাদীসটি বুখারী শরীফেও রয়েছে।
# যারা ইসলাম কবুল করতে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর কাছে আসতেন, তাঁদের কে উদ্দেশ্য করে বলতেন, তোমরা আমার কাছে এই মর্মে বায়’আত গ্রহণ কর যে, আল্লাহ্র সঙ্গে কিছু শরীক করবে না, চুরি করবে না, যিনা করবে না, তোমাদের সন্তানদের হত্যা করবে না, কাউকে মিথ্যা অপবাদ দেবে না এবং নেক কাজে নাফরমানী করবে না......। { সহীহ বুখারি,প্রথম খন্ড,অধ্যায়ঃ ২/ ঈমান , হাদিস নাম্বার: ১৭}
ইসলামের মূল ভিত্তি সম্পর্কে হাদিসে বলা হয়েছে,
# ইবন উমার রাদিয়াল্লাহু 'আনহুম থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু 'আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেছেন: "ইসলাম পাঁচটি ভিত্তির উপর স্থাপিত। এ সাক্ষ্য দেয়া যে, আল্লাহ্ ব্যতীত আর কোন সত্য মা'বূদ নেই এবং মুহাম্মাদ আল্লাহর রাসূল। সালাত প্রতিষ্ঠা করা।যাকাত দেয়া। হজ্জ করা। রমাদানে সওম সাধনা করা। [বুখারী: ৮]
** সালাত,সিয়াম,হাজ্জ ও তাসবিহ সম্পর্কে ইসলাম কী বলে?
সলাতঃ
# ''কোন মুমিন ব্যক্তি এবং শিরক ও কুফরের মধ্যে পার্থক্য হল সালাত ত্যাগ করা।'' (সহীহ মুসলিম)
# রাসূল (সা) বলেছেন, "কিয়ামতের দিন বান্দার সর্বপ্রথম সলাতের হিসাব হবে ৷যার সলাত ঠিক হবে তার সব আমল সঠিক হবে ৷ " (তাবারানী, আল-আওসাত্ব, সিলসিলাহ সহীহা: ১৩৫৮)
সিয়ামঃ
" হে ঈমানদারগন!সিয়াম(রোযা) তোমাদের জন্য ফরয করা হয়েছে যেমনটি করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের উপর ৷যাতে তোমরা তাকওয়া অর্জন করতে পার ৷ (বাকারাহ: ১৮৩)
# হযরত আবূ উমামাহ (রা) হতে বর্নিত,তিনি বলেন, আমি বললাম,হে আল্লাহর রাসূল(সা) আমাকে এমন কোন আমলের কথা বলেন,যা দ্বারা আল্লাহ আমাকে লাভবান করবেন ৷(অন্য বর্ননায় আছে যার মাধ্যমে আমি জান্নাতে যেতে পার) তিনি (সা) বললেন, তুমি রোযা রাখ,কারন রোযার সমতূল্য কিছুই নেই ৷পুনরায় আমি বললাম ৷ হে আল্লাহর রাসূল (সা)আমাকে কোন আমলের আদেশ করুন ৷তিনি(সা)বললেন, তুমি রোযা রাখ, কারন রোযার সমতূল্য কোন কিছুই নেই ৷(নাসাঈ, ইবনে খুযাইমা,হাকেম,মুস্তাদরাক,তারগীব,আলবানী: ৩৭৩)
হজঃ
'নিঃসন্দেহে সর্বপ্রথম ঘর, যা মানুষের জন্য নির্ধারিত হয়েছে, সেটা হচ্ছে সেই ঘর, যা মক্কায় অবস্থিত, তা সারা জাহানের জন্য হেদায়াত ও বরকতময়। এতে রয়েছে বহু প্রকৃষ্ট নিদর্শন ও মাকামে ইব্রাহীম। যে লোক এতে প্রবেশ করবে, সে নিরাপত্তা লাভ করবে। আল্লাহর সন্তুষ্টির জন্য এ ঘরের হজ করা মানুষের ওপর কর্তব্য_যে সেখানে পেঁৗছার সামর্থ্য রাখে। আর যে লোক তা মানবে না, আল্লাহ সারা বিশ্বের কোন কিছুরই পরোয়া করেন না।।' (সুরা আলে ইমরান, আয়াত ৯৬-৯৭)।
# 'যে ব্যক্তি আল্লাহর উদ্দেশ্যে হজ বিশুদ্ধভাবে পালন করল, সে যেন মায়ের গর্ভ থেকে নিষ্পাপ হয়ে পৃথিবীতে জন্ম নিল। তিনি আরো বলেন,'গুনাহ এবং অন্যান্য খারাবি থেকে যে হজ পবিত্র হবে, তার পুরস্কার বেহেশত ছাড়া অন্য কিছুই নয়।' (বুখারি ও মুসলিম)
তাসবিহঃ
“হে ঈমানদারগণ! তোমরা বেশী বেশী আল্লাহর স্মরণ করো এবং সকাল-সন্ধ্যা তাঁর পবিত্রতা বর্ণণা/তাসবীহ্ পাঠ কর।” (সূরা আহ্যাব ৪১,৪২)
# রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন: ‘তোমাদের মধ্যে এমন কেউ কি আছে যে প্রতিদিন এক হাজার নেকী অর্জন করতে চায়?’ তার সাথে বসা এক ব্যক্তি তাঁকে প্রশ্ন করল: ‘একদিনে এক হাজার নেকী- এটা কী ভাবে সম্ভব?’
রাসূলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বললেন: ‘এক শ বার তাসবীহ পাঠ করলে (অর্থাৎ ১০০ বার সুবহানাল্লাহ পড়লে) এতে তার জন্য এক হাজার নেকী লেখা হবে অথবা এক হাজার গুনাহ্ তার আমলনামা থেকে মুছে যাবে।’ (মুসলিম : ২৬৯৮)
অতএব,আমরা উপরের আলোচনা থেকে বুঝতে পারলাম যে,সালাত,সাওম,হজ এগুলো ইসলামের ভিত্তি ও ফরয ইবাদত।সালাত,সাওম,হজ,তাসবিহ-তাহলিল এগলো স্বতন্ত্র ইবাদত এবং এর জন্য সওয়াব বিদ্যমান।অতএব আমাদের জন্য এটি বলা সঙ্গত নয় যে মানুষকে উক্ত বড় ইবাদত (হুকুমত ও অন্যান্য দুনিয়াবি বিষয়) এর জন্য প্রস্তুতকারী অনুশীলন বা ট্রেনিং কোর্স মাত্র-এই কথাটি সঠিক নয়।যদিও দুনিয়ার বুকে ইসলামী হুকুমত প্রতিষ্ঠা আমাদের একটি বড় দায়িত্ব,অপরিহার্য কাজ,তথাপি অন্যান্য ইবাদতগুলোকে ট্রেনিঙের পর্যায়ে ফেলে দেওয়া ঠিক নয়।একেকটি ফরযের জন্য আমাদের আলাদাভাবে হিসাব দিতে হবে,ট্রেনিঙের ক্ষেত্রে এ কথাটি খাটে না।প্রসঙ্গত উল্লেখযোগ্য যে, ‘তাফহিমাত’ আবুল আলা মওদুদির লেখা গ্রন্থ।ইনি লেখনী দ্বারা অনেক শরয়ী বিষয় সুন্দরভাবে ব্যাখ্যা করলেও অনেক বিতর্কিত আকিদার জন্য ব্যাপকভাবে সমালোচিত এবং মূলধারার আলেমগণের দ্বারা প্রত্যাখ্যাত।তাই আমাদের জন্য নিরাপদ হচ্ছে মওদুদির রচনার ব্যাপারে সাবধানতা অবলম্বন করা এবং ওনার থেকে মত গ্রহণের পূর্বে অভিজ্ঞ আলেমের সঙ্গে পরামর্শ করা।ওনার রচনা ও মতবাদ এড়িয়ে যাওয়াই আমাদের জন্য অধিক নিরাপদ।
মওদুদি সম্পর্কিত ফতোয়ার লিঙ্কঃ
Mufti Online
Darul Ifta
এবং আল্লাহই ভালো জানেন।আশা করি আপনার উত্তরটি পেয়েছেন।
MRM-2.5
© 2013 by Ask Islam Bangla.