ASK ISLAM BANGLA
  • Home
  • রচনাবলী
  • সাধারণ প্রশ্ন-উত্তর
  • ইসলামি সাধারণ জ্ঞান
  • ইসলাম বিরোধী প্রশ্নের জবাব
  • ইসলামের সেই কাহিনীগুলো
  • সাহাবীদের কাহিনী
  • গল্পে গল্পে শিখী
  • ROAD TO PEACE
  • Forum

ঐশী কথন ৫

১ম পর্ব
২য় পর্ব
৩য় পর্ব
৪র্থ পর্ব

বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম

আমরা এবার অন্য একটি উদাহরণের দিকে তাকাই। আমরা উল্লেখিত উভয় শহরের সাথে পরিচিত: ইয়াসরিব এবং মদিনা। এই দুটো নাম কি একই শহরের নয়? নিশ্চয়ই।কুরআনে অসংখ্যবার মদিনা শহরের নাম মদিনাই এসেছে। কিন্তু ইয়াসরিব এসেছে কেবল একবারই। ইয়াসরিব নামটি কেবল এসেছে সুরা আহযাবে। কুরআনের অন্য কোথাও এই নাম ব্যবহৃত হয় নি। প্রসঙ্গক্রমে বলি, দুটোই মদিনার নাম। অতএব যে কেউ ডেভিল’স এডভোকেট হয়ে তর্ক জুড়ে দিতে পারে যে, “ওহে! এই শব্দ দুটোই সমার্থক, নয় কি? সুতরাং আমি কেন ইয়াসরিবের জায়গায় মদিনা কিংবা মদিনার জায়গায় ইয়াসরিব পরিবর্তন করতে পারবো না? তোমরা তো বলো কুরআন নিখুঁত, বিজড়িত যার শব্দ নির্বাচন। তোমরা তো জানই যে ইয়াসরিব আর মদিনা একই। তবে একটির স্থলে অপরটি বসাও না কেন? এমন কি সমস্যা? “

আর এখানেই ইতিহাসের পাঠ। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের পূর্বে মদিনার নাম কি ছিল? ইয়াসরিব। তিনি এই শহরে আসার পর নিরঙ্কুশভাবে নেতা নির্বাচিত হন আর এই শহরের নামকরন করা হয়: ‘মদিনাতুন নাবী’ অর্থ্যাৎ নবীর শহর সংক্ষেপে মদিনা। মদিনা হলো মদিনাতুন নাবীর সংক্ষিপ্ত রূপ। কেবল মদিনা অর্থ শহর। আর এই শহরের নাম ছিল ইয়াসরিব। আপনি এভাবেও ভাবতে পারেন, নবীজীর পূর্বে এর নাম ছিলো ইয়াসরিব আর নবীজী আসার পরে  মদিনা। কিন্তু যে বিষয়টি কৌতুহলোদ্দীপক তা হলো সুরা আহযাবে (সুরা নং ৩৩) মদিনা আর ইয়াসরিব উভয় নামই এসেছে। এরচেয়েও বেশী কৌতুহলোদ্দীপক হল সুরা আহযাব হলো মাদানী সুরা। মাদানী সুরার বৈশিষ্ঠ্য হিসেবে আমরা কি জানি? এই সুরাগুলো নাযিলের সময় রাসুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কোথায় ছিলেন? তিনি ছিলেন মদিনায়। অতএব এই শহরকে মদিনাই বলার কথা। কিন্তু আমরা দেখি ইয়াসরিব। এখানে ধাঁধাটি খেয়াল করেছেন? মদিনা ছিলো মদিনাতুন নাবীর সংক্ষিপ্ত রূপ। মদিনা যখন শত্রুবাহিনী দ্বারা চতুর্দিক থেকে ঘেরাও হয়েছিলো, তাদের সাথে কিছু ইয়াহুদী গোত্রও যোগ দিয়েছিলো। তারা কুরাইশদের প্রণোদিত করেছিলো জমায়েত হয়ে আসার জন্য; উহুদ যুদ্ধের পরবর্তীতে। তারা বিভিন্ন গোত্রের কাছে গিয়ে এবং ছোট ছোট গোত্রের সাথে জোটবদ্ধ হয়ে এক বিশাল সৈন্যসামন্তের বহর নিয়ে সমগ্র মদিনা ঘেরাও করেছিলো। মদিনা সপ্তাহান্ত পর্যন্ত অবরুদ্ধ ছিলো। এই ভীতিকর পরিস্থিতি আরো নাজুক হয়েছিলো কিছু অভ্যন্তরীন লোকের কারনে। তারা ছিলো নামকাওয়াস্তে মুসলিম কিন্তু তাদের অন্তরে ঈমান ছিলো না। এদেরকে কি বলা হয়? মুনাফিকুন। আর এই মুনাফিকদের কিছু রাসুলুল্লাহর আগমনের পূর্বে নেতা ছিলো কোন শহরের? ইয়াসরিবের। যখন নবীজী আসলেন তখন তারা তাদের পদ ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়েছিলেন। তাদের পদ ছেড়ে দেয়ার ফলে কে নেতা হয়েছিলেন? রাসুলুল্লাহ্ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। যখন তাদেরকে ঘিরে ফেলা হয়েছিলো তারা এটাকে সুযোগ হিসেবে দেখেছিলো এবং বলতে চেয়েছিলো দেখ তার নেতৃত্ব আমাদের কোথায় নিয়ে এসেছে। তারা বললো: “এবং যখন তাদের একদল বলেছিল, হে ইয়াসরেববাসী, এটা টিকবার মত জায়গা নয়, তোমরা ফিরে চল।“ [সুরা আহযাব:১৩] ফিরে চল, কিসের দিকে? এটাকে আবার ইয়াসরিব বানানোর দিকে। আমরা ফিরে যাই নবী নেতৃত্বে আসার পূর্বের দিকে।“  ইয়াসরিব শব্দটি ব্যবহারের ফলে কি প্রকাশিত হয়ে পড়লো? তাদের সত্যিকারের আনুগত্যের দিক। যদি তারা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে সত্যিই নেতা হিসেবে মেনে নিতো তবে কোন শব্দটি ব্যবহার করতো? মদিনা। আর আল্লাহ্ তা’আলা তাদের ব্যবহৃত শব্দ কুরআনে উল্লেখের মাধ্যমে জানিয়ে দিয়েছেন তাদের আনুগত্য, তাদের আকাঙ্খা: “এটি আবার ইয়াসরিবে পরিণত হবে আর মদিনা থাকবে না।”

এই বিষয়টি আরো প্রকট আর বোধগম্য হয় যখন আমরা কুরআনের অন্যত্র তাকাই। সুরা মুনাফিকুন, কাদের উদ্দেশ্য করা হয়েছে? মুনাফিকদের। আর মুনাফিকদের উদ্দেশ্য করা এই সুরা বেশ কৌতুহলোদ্দীপক। এর শুরুতে মুনাফিকরা তাদের আনুগত্য প্রদর্শনের জন্য যায় আর বলে: “মুনাফিকরা আপনার কাছে এসে বলেঃ আমরা সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আপনি নিশ্চয়ই আল্লাহর রসূল।” [সুরা মুনাফিকুন: ০১]। একজন মুসলিমের সবসময় এ কথা বলার প্রয়োজন নেই; কেবল ইসলাম গ্রহণের সময় বলতে হয়। অন্যথায় সে জানে তিনি আল্লাহর রাসূল। কিন্তু কেউ যখন কোন কিছুর ঘাটতি পুষিয়ে দিতে চায় তখন বলে, যেভাবে বাচ্চারা বলে, ‘আমি এটা করিনি’। তখন প্রশ্ন আসে, কি করনি? সেখানে কলুষিত বিবেকবোধ কাজ করে। এই কলুষিত বিবেকবোধই তাদেরকে এমনটি বলায়: ‘আমরা বিশ্বাস করি আপনিই আল্লাহর রাসুল’। কিন্তু মরিয়া পরিস্থিতিতে ভুল শব্দ তাদের মুখ দিয়ে বেরিয়ে আসলো আর উন্মোচিত হল তাদের সত্যিকারের আনুগত্য!

আরেকটি কৌতুহলোদ্দীপক উপমা হলো: মক্কা এবং বাক্কা। কুরআনের এই দুইটি নাম আপনারা শুনে থাকবেন। এ দুটোরই উল্লেখ কুরআনে আছে; সুরা মুহাম্মাদে আল্লাহ্ আজ্জা ওয়া জাল মক্কা শব্দটি ব্যবহার করেছেন। অন্যত্র তিনি ব্যবহার করেছেন বাক্কা। ঐতিহাসিকভাবে, এই দুটি নামেই মক্কা পরিচিত। অনেকে এটা নিয়ে ইখতিলাফ করেছেন বাক্কা হলো প্রথম নাম এবং মক্কা পরবর্তীতে নামকরণ হয়েছে। যদিও সঠিক মত হচ্ছে, ভাষাবিদরা প্রমাণ করেছেন মক্কাই প্রথম নাম আর বাক্কা হলো উপনাম। এটা এসেছে আরবী ‘বাক্ক’ থেকে যার অর্থ জনাকীর্ণ/ ঘনবসতিপূর্ণ। এর অর্থ হলো অনেক জনসমাগম, অত্যধিক ভিড়ের ব্যাপার; আধুনিক আরবীতে যাকে বলা হয় ‘আল-ইজদিহাম’। এখন, সুরা আলে ইমরানে যখন বাক্কা শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে হাজ্জের জন্য যাতে ‘বা’ এসেছে জনাকীর্ণ বুঝাতে: “আর এ ঘরের হজ্ব করা হলো মানুষের উপর আল্লাহর প্রাপ্য;” [সুরা আলে ইমরান: ৯৭] হাজ্জের সাথে কি আসে? জনাকীর্ণতা। আর এই প্রসঙ্গে উত্তম শব্দ কোনটি? বাক্কা। কিন্তু সুরা মুহাম্মাদে হাজ্জের উল্লেখ নেই আর সেখানে ব্যবহৃত হয়েছে মক্কা। সুবহানআল্লাহ্।

একেবারেই তুচ্ছ একটি বিষয়, মক্কা আর বাক্কা, বিনিমেয়। দুটো একই শব্দ কিন্তু কুরআনের নির্ভুলতার সোপান এতই উচ্চকিত যা অতুলনীয়। মানুষের পক্ষে কখনোই সম্ভব নয় এমন উচ্চতায় পৌছানোর চিন্তাও করা, যখন তারা কথা বলে। সুতরাং কুরআন থেকে আমরা একটি বিষয় শিখি আমাদের জিহবা কতোটা সংযত রাখা উচিত? আল্লাহ্ আজ্জা ওয়া জালের সুন্নাহ এমনই; তিনি অত্যন্ত নিখুঁত আর পুঙ্খানুপুঙ্খভাবে খুঁটিনাটির বর্ণনা সহকারে বলেন।

লেখককে ফলো করুন
site search by freefind advanced

© 2014 by Ask Islam Bangla.
Powered by Create your own unique website with customizable templates.