ঐশী কথন ৪
১ম পর্ব
২য় পর্ব
৩য় পর্ব
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
বিভিন্ন দিক থেকে কুরআনের সাহিত্যমান নিঃসন্দেহেই অসাধারণ! আর যে কেউ চাইলে এই বিষয়ের উপর বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পড়াশুনা চালিয়ে নিতে পারে। কুরআনের অনন্য এরূপ অনেকগুলো মাত্রার তিনটি এখানে তুলে ধরা হলো।
আর প্রথম মাত্রাটি হলো শব্দচয়নে নির্ভূলতা কিংবা নিখুঁত শব্দচয়ন। যখন আমি কিংবা আপনি কথা বলি তখন আমরা একসাথে অনেক শব্দ বলি কিন্তু আমরা প্রতিটি শব্দের দিকে আলাদাভাবে মনোযোগ দেই না। আমাদের যোগাযোগের মূল লক্ষ্য থাকে মূলভাবের প্রকাশ ঘটানো বরং শব্দে নয়। যখন আপনি লিখতে বসেন তখন আপনি কি করেন? আপনি কিছু লিখেন, অতঃপর তা সম্পাদন করতে চাইবেন, তা আরো ভালভাবে বলতে চাইবেন। এবং আপনি পুনরায় কিছু শব্দের পুনঃবিন্যাস ঘটাবেন এবং এভাবে বাক্যকে পুনরায় সাজাবেন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে লিখা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ পদ্ধতি কি হতে? বলা হতে! বলার ব্যাপারটি স্বতঃস্ফুর্ত। আর তা মুহূর্তেই করতে হয়। সেখানে আপনার শব্দ সম্পাদনের কোন সুযোগ নেই। এটা এমনিতেই বেরিয়ে আসে। কিন্তু লিখার ব্যাপারটি অনেক সুচিন্তিত কেননা সেখানে সম্পাদনার একটি প্রক্রিয়া থাকে। এখন, আমরা আগেই বলেছি অবিশ্বাসীরা বলতো কুরআন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী কিন্তু বিশ্বাসীরা জানতো এটা আল্লাহ্ সুবহানুহ্ তা’আলার বাণী। একজন মানুষের বাণী অকাট্যরূপে শব্দসহকারে গণনা করা হয় না, আর তা স্বভাতঃই হয় না। কিন্তু আল্লাহর বাণী নিখুঁত কারন তা যে উৎস হতে আসছে তা নিখুঁত। আর তা বিধৃত হয়েছে কুরআনের হাজারো উদাহরণে। আর এটা নিজেই একটা স্বকীয় বিষয়: কুরআনের নিখুঁত শব্দচয়ণ। আর এর কিছু সংক্ষিপ্ত উদাহরণই তুলে ধরবো।
শোয়াইব আলাইহিস সালাম, আমরা জানি তিনি আল্লাহর প্রেরিত একজন নবী। আর একজন নবী হিসেবে কুরআনে অসংখ্যবার তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল বলেন, “আমি মাদইয়ানের প্রতি তাদের ভাই শোয়ায়েবকে প্রেরণ করেছি।“ [সুরা আরাফঃ ৮৫]
এখানে আপনাদের সেই জাতির নাম বলতে চেয়েছি যার তিনি অধিবাসী। মাদইয়ান। মাদইয়ান একইসাথে দুটি বিষয়ের নাম, এই ব্যাপারটি খেয়াল রাখতে হবে। মাদইয়ান দুটি বিষয়ঃ মাদইয়ান জায়গার নাম এবং ঐ জাতির নাম। এবং আল্লাহ্ তাআলা বলেন, মাদইয়ানের প্রতি তাদের ভাই শোয়ায়েবকে প্রেরণ করেছি। সুরা শোয়ারায় (সুরা নং ২৬), আল্লাহ্ সুবহানুহ্ তা’আলা বিভিন্ন নবীদের কথা বলেছেন। তিনি বলেন: “যখন তাদের ভাই লূত তাদেরকে বললেন, যখন তাদের ভাই সালেহ, তাদেরকে বললেন, তখন তাদের ভাই হুদ তাদেরকে বললেন, যখন তাদের ভ্রাতা নূহ তাদেরকে বললেন,”।
যখন তাদের ভাই নূহ তাদেরকে বললেন; যখন তাদের ভাই নূহ তার জাতিকে বলছেন। এভাবে, পরবর্তী গল্প অন্য একজন নবীর। যখন তাদের ভাই সালিহ তাদেরকে বললেন, তার নিজের জাতির প্রতি। এরপর হুদ আলাইহিস সালামের বর্ণনা। যখন তাদের ভাই হুদ তাদেরকে বললেন। যখন তাদের ভাই সালিহ ,হুদ, নূহ এবং লুত (আলাইহিমুস সালাম); চারজনের ক্ষেত্রেই খেয়াল করুন: তাদের ভাই, তাদের ভাই, তাদের ভাই, তাদের ভাই। আর পঞ্চমজনের নাম বর্ণনা করা হলো শোয়াইব আলাইহিস সালামের। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন যখন শোয়াইব তাদের বলেন। তিনি কেবলই বলেছেন: “যখন শো’আয়ব তাদের কে বললেন,” । অন্য সকল নবীদের ক্ষেত্রে এই সুরায় তিনি কি বলেছেন? তাদের ভাই নূহ, তাদের ভাই সালিহ, তাদের ভাই লুত, তাদের ভাই হুদ। কিন্তু যখন শোয়াইবের নাম এলো, তিনি বললেন শোয়াইব – ‘তাদের ভাই’ কথাটি নেই। এখানে যে বিষয়টি কৌতুহলোদ্দীপক কুরআনের অন্যত্র আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: “আমি মাদইয়ানের প্রতি তাদের ভাই শোয়ায়েবকে প্রেরণ করেছি।“ অথচ এই সুরায় যেখানে অন্যান্য নবীকে তাদের জাতির ভাই হিসেবে উল্লেখ করেছেন, সেখানে শোয়াইব আলাইহিস সালামের নাম আসার পর আপনি ধারনা করছিলেন কি দেখবেন? তাদের ভাই। কিন্তু ভাই শব্দটি উঠিয়ে নেয়া হলো। আর এটাই একমাত্র নাম যার থেকে উঠিয়ে নেয়া হলো। আর অন্যদের ক্ষেত্রে উঠিয়ে নেয়া হয়নি এবং যে বিষয়টি কৌতুহলোদ্দীপক তার পূর্বেই আমরা উল্লেখ করেছি – তিনি যে জাতির প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন তার নাম কি? মাদইয়ান। তাদের আরেকটি নাম রয়েছে “আসহাবুল আইকা”। আইকা ছিলো একটা বিশাল বৃক্ষ যার উপাসণা তারা করতো। বৃক্ষটির নাম আইকা। এটা তাদের ধর্মীয় পরিচয়। তাদের ধর্মীয় পরিচিতি ছিলো আসহাবুল আইকা। প্রকৃতপক্ষে তিনি মাদইয়ানেই জন্মগ্রহণ করেন, তিনি মাদইয়ানের অধিবাসী আর তার জাতিও মাদইয়ান। আরবের একটি জাতি। আর সেই জাতি আর স্থানের কারনে তিনি তাদের ভাই। তাই আল্লাহ্ তাআলা বলেন মাদইয়ানের প্রতি তাদের ভাই শোয়ায়েবকে প্রেরণ করেছি। কিন্তু আল্লাহ্ তাআলা যখন মাদইয়ানের পরিবর্তে আসহাবুল আইকার কথা বললেন; আল-আইকা – সেই বৃক্ষটি। আল্লাহ্ তাদের ধর্মীয় পরিচিতি নিয়ে বলছেন। আর যখন ধর্মীয় পরিচিতি আসে তখন কি তিনি তাদের ভাই? না। অতএব, যখন আল্লাহ্ যখন ধর্মীয় পরিচয় দিলেন তখন তিনি শোয়াইবের সাথে ভাই শব্দটি ব্যবহার করেন নি। ভাই শব্দটি সরিয়ে নেয়ার মাধ্যমে, এখানে কোন বিষয়টি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে? দ্বীনের ক্ষেত্রে বিরোধিতায় কোন ভ্রাতৃত্ববোধ নেই। এরা এটা খুবই নিগূঢ় আর সুক্ষ্নাতিসূক্ষ্ন ব্যবহার। কেননা এই সুরায় অন্যান্য ক্ষেত্রে আমরা দেখে আসছি, তাদের ভাই, তাদের ভাই… এবং হঠাৎ করেই তাতে বিচ্যুতি। নির্ভূলতা এবং সেই নির্ভূলতা কতখানি? এটি তার প্রথম ছোট্ট উদাহরণ।
পরবর্তী পর্ব
২য় পর্ব
৩য় পর্ব
বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম
বিভিন্ন দিক থেকে কুরআনের সাহিত্যমান নিঃসন্দেহেই অসাধারণ! আর যে কেউ চাইলে এই বিষয়ের উপর বিভিন্ন দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে পড়াশুনা চালিয়ে নিতে পারে। কুরআনের অনন্য এরূপ অনেকগুলো মাত্রার তিনটি এখানে তুলে ধরা হলো।
আর প্রথম মাত্রাটি হলো শব্দচয়নে নির্ভূলতা কিংবা নিখুঁত শব্দচয়ন। যখন আমি কিংবা আপনি কথা বলি তখন আমরা একসাথে অনেক শব্দ বলি কিন্তু আমরা প্রতিটি শব্দের দিকে আলাদাভাবে মনোযোগ দেই না। আমাদের যোগাযোগের মূল লক্ষ্য থাকে মূলভাবের প্রকাশ ঘটানো বরং শব্দে নয়। যখন আপনি লিখতে বসেন তখন আপনি কি করেন? আপনি কিছু লিখেন, অতঃপর তা সম্পাদন করতে চাইবেন, তা আরো ভালভাবে বলতে চাইবেন। এবং আপনি পুনরায় কিছু শব্দের পুনঃবিন্যাস ঘটাবেন এবং এভাবে বাক্যকে পুনরায় সাজাবেন। সুতরাং দেখা যাচ্ছে লিখা অপেক্ষাকৃত নিরাপদ পদ্ধতি কি হতে? বলা হতে! বলার ব্যাপারটি স্বতঃস্ফুর্ত। আর তা মুহূর্তেই করতে হয়। সেখানে আপনার শব্দ সম্পাদনের কোন সুযোগ নেই। এটা এমনিতেই বেরিয়ে আসে। কিন্তু লিখার ব্যাপারটি অনেক সুচিন্তিত কেননা সেখানে সম্পাদনার একটি প্রক্রিয়া থাকে। এখন, আমরা আগেই বলেছি অবিশ্বাসীরা বলতো কুরআন মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের বাণী কিন্তু বিশ্বাসীরা জানতো এটা আল্লাহ্ সুবহানুহ্ তা’আলার বাণী। একজন মানুষের বাণী অকাট্যরূপে শব্দসহকারে গণনা করা হয় না, আর তা স্বভাতঃই হয় না। কিন্তু আল্লাহর বাণী নিখুঁত কারন তা যে উৎস হতে আসছে তা নিখুঁত। আর তা বিধৃত হয়েছে কুরআনের হাজারো উদাহরণে। আর এটা নিজেই একটা স্বকীয় বিষয়: কুরআনের নিখুঁত শব্দচয়ণ। আর এর কিছু সংক্ষিপ্ত উদাহরণই তুলে ধরবো।
শোয়াইব আলাইহিস সালাম, আমরা জানি তিনি আল্লাহর প্রেরিত একজন নবী। আর একজন নবী হিসেবে কুরআনে অসংখ্যবার তার নাম উল্লেখ করা হয়েছে। আল্লাহ আজ্জা ওয়া জাল বলেন, “আমি মাদইয়ানের প্রতি তাদের ভাই শোয়ায়েবকে প্রেরণ করেছি।“ [সুরা আরাফঃ ৮৫]
এখানে আপনাদের সেই জাতির নাম বলতে চেয়েছি যার তিনি অধিবাসী। মাদইয়ান। মাদইয়ান একইসাথে দুটি বিষয়ের নাম, এই ব্যাপারটি খেয়াল রাখতে হবে। মাদইয়ান দুটি বিষয়ঃ মাদইয়ান জায়গার নাম এবং ঐ জাতির নাম। এবং আল্লাহ্ তাআলা বলেন, মাদইয়ানের প্রতি তাদের ভাই শোয়ায়েবকে প্রেরণ করেছি। সুরা শোয়ারায় (সুরা নং ২৬), আল্লাহ্ সুবহানুহ্ তা’আলা বিভিন্ন নবীদের কথা বলেছেন। তিনি বলেন: “যখন তাদের ভাই লূত তাদেরকে বললেন, যখন তাদের ভাই সালেহ, তাদেরকে বললেন, তখন তাদের ভাই হুদ তাদেরকে বললেন, যখন তাদের ভ্রাতা নূহ তাদেরকে বললেন,”।
যখন তাদের ভাই নূহ তাদেরকে বললেন; যখন তাদের ভাই নূহ তার জাতিকে বলছেন। এভাবে, পরবর্তী গল্প অন্য একজন নবীর। যখন তাদের ভাই সালিহ তাদেরকে বললেন, তার নিজের জাতির প্রতি। এরপর হুদ আলাইহিস সালামের বর্ণনা। যখন তাদের ভাই হুদ তাদেরকে বললেন। যখন তাদের ভাই সালিহ ,হুদ, নূহ এবং লুত (আলাইহিমুস সালাম); চারজনের ক্ষেত্রেই খেয়াল করুন: তাদের ভাই, তাদের ভাই, তাদের ভাই, তাদের ভাই। আর পঞ্চমজনের নাম বর্ণনা করা হলো শোয়াইব আলাইহিস সালামের। আল্লাহ্ তা’আলা বলেন যখন শোয়াইব তাদের বলেন। তিনি কেবলই বলেছেন: “যখন শো’আয়ব তাদের কে বললেন,” । অন্য সকল নবীদের ক্ষেত্রে এই সুরায় তিনি কি বলেছেন? তাদের ভাই নূহ, তাদের ভাই সালিহ, তাদের ভাই লুত, তাদের ভাই হুদ। কিন্তু যখন শোয়াইবের নাম এলো, তিনি বললেন শোয়াইব – ‘তাদের ভাই’ কথাটি নেই। এখানে যে বিষয়টি কৌতুহলোদ্দীপক কুরআনের অন্যত্র আল্লাহ্ তা’আলা বলেন: “আমি মাদইয়ানের প্রতি তাদের ভাই শোয়ায়েবকে প্রেরণ করেছি।“ অথচ এই সুরায় যেখানে অন্যান্য নবীকে তাদের জাতির ভাই হিসেবে উল্লেখ করেছেন, সেখানে শোয়াইব আলাইহিস সালামের নাম আসার পর আপনি ধারনা করছিলেন কি দেখবেন? তাদের ভাই। কিন্তু ভাই শব্দটি উঠিয়ে নেয়া হলো। আর এটাই একমাত্র নাম যার থেকে উঠিয়ে নেয়া হলো। আর অন্যদের ক্ষেত্রে উঠিয়ে নেয়া হয়নি এবং যে বিষয়টি কৌতুহলোদ্দীপক তার পূর্বেই আমরা উল্লেখ করেছি – তিনি যে জাতির প্রতি প্রেরিত হয়েছিলেন তার নাম কি? মাদইয়ান। তাদের আরেকটি নাম রয়েছে “আসহাবুল আইকা”। আইকা ছিলো একটা বিশাল বৃক্ষ যার উপাসণা তারা করতো। বৃক্ষটির নাম আইকা। এটা তাদের ধর্মীয় পরিচয়। তাদের ধর্মীয় পরিচিতি ছিলো আসহাবুল আইকা। প্রকৃতপক্ষে তিনি মাদইয়ানেই জন্মগ্রহণ করেন, তিনি মাদইয়ানের অধিবাসী আর তার জাতিও মাদইয়ান। আরবের একটি জাতি। আর সেই জাতি আর স্থানের কারনে তিনি তাদের ভাই। তাই আল্লাহ্ তাআলা বলেন মাদইয়ানের প্রতি তাদের ভাই শোয়ায়েবকে প্রেরণ করেছি। কিন্তু আল্লাহ্ তাআলা যখন মাদইয়ানের পরিবর্তে আসহাবুল আইকার কথা বললেন; আল-আইকা – সেই বৃক্ষটি। আল্লাহ্ তাদের ধর্মীয় পরিচিতি নিয়ে বলছেন। আর যখন ধর্মীয় পরিচিতি আসে তখন কি তিনি তাদের ভাই? না। অতএব, যখন আল্লাহ্ যখন ধর্মীয় পরিচয় দিলেন তখন তিনি শোয়াইবের সাথে ভাই শব্দটি ব্যবহার করেন নি। ভাই শব্দটি সরিয়ে নেয়ার মাধ্যমে, এখানে কোন বিষয়টি প্রাধান্য দেয়া হয়েছে? দ্বীনের ক্ষেত্রে বিরোধিতায় কোন ভ্রাতৃত্ববোধ নেই। এরা এটা খুবই নিগূঢ় আর সুক্ষ্নাতিসূক্ষ্ন ব্যবহার। কেননা এই সুরায় অন্যান্য ক্ষেত্রে আমরা দেখে আসছি, তাদের ভাই, তাদের ভাই… এবং হঠাৎ করেই তাতে বিচ্যুতি। নির্ভূলতা এবং সেই নির্ভূলতা কতখানি? এটি তার প্রথম ছোট্ট উদাহরণ।
পরবর্তী পর্ব
লেখককে ফলো করুন
|
© 2014 by Ask Islam Bangla.