ASK ISLAM BANGLA
  • Home
  • রচনাবলী
  • সাধারণ প্রশ্ন-উত্তর
  • ইসলামি সাধারণ জ্ঞান
  • ইসলাম বিরোধী প্রশ্নের জবাব
  • ইসলামের সেই কাহিনীগুলো
  • সাহাবীদের কাহিনী
  • গল্পে গল্পে শিখী
  • ROAD TO PEACE
  • Forum

ঐশী কথন ৩

১ম পর্ব
২য় পর্ব

আপনি একটু চিন্তা করুনঃ হাজার বছর আগে কোন এক সমাজে আপনি বসবাস করছেন। স্বাভাবিকভাবেই, ঐ সমাজে আপনার কিছু প্রতিবেশী থাকবে। একদিন আপনারই এক প্রতিবেশী এসে আপনার দরজায় কড়া নাড়ল। আর সে বললঃ ‘শোন! একজন ফেরেশতা আমার নিকট এসছিল। সে বলল, আমি আল্লাহর প্রেরিত নবী। আর আমাকে এই বার্তা সমগ্র মানবজাতির নিকট পৌছাতে হবে। আমি এই বার্তা আমার পরিবারকে দিয়েছি; তারা তা বর্জন করেছে। আর তুমি যেহেতু আমার প্রতিবেশী তাই তোমার অধিকার বেশী; তাই তোমাকে বলছি। আর জেনে রেখ, আমি আল্লাহর প্রেরিত নবী। আর আমি যা বলি তা আমার কথা নয় বরং তা ঐশী বাণী। আমরা ধরে নেই, তা আল্লাহর পক্ষ থেকে। আর আমার অনুসরন কর; তুমি আমার অনুসরন করছ না বরং আল্লাহর অনুসরন করছ।’

এমতবস্থায়, দুটি সমস্যা দেখা দেবেঃ যে প্রতিবেশী দরজা খুলল আর এসব কথা শুনল সে বলবে, তুমি আমাকে বিশ্বাস করতে বলছ তোমার নিকট ফেরেশতা এসে কথা বলেছে? তুমি এতদিন ধরে আমার প্রতিবেশী যাকে আমি দীর্ঘদিন ধরে চিনি, দেখ প্রথমতঃ তোমার কথা বিশ্বাস করতে হবে তার উপর তোমার কথামত আমার জীবনের সবকিছু বদলে ফেলতে হবে? যে দুটি জিনিস করা সবচেয়ে কঠিন; যখন একজনের নিজের পরিবারের সদস্যরাই বলছে, তাকে উন্মাদ। তোমার নিজের পরিবারই তোমাকে যেখানে বলছে উন্মাদ, সেখানে তুমি আমাকে বলছ তোমার কথা বিশ্বাস করতে? সবকিছুতে তোমার অনুসরন করতে? আর তোমার অনুসরন যত করব, লোকজন আমাকে ততই পাগল বলবে? সে লোক হয়ত বলবে, ‘আমি এটা নিয়ে ভেবে দেখব, ধন্যবাদ।’ আর তার মুখের উপর দরজা বন্ধ করে দিবে।

 আর এই উদাহরণ দেয়ার কারন একটাই, আল্লাহর বার্তাবাহকরা, দূতরা অর্থাৎ আন্বিয়ারা; যাদেরকে বিভিন্ন জাতির কাছে পাঠানো হয়েছে। আমরা জানি, তারা তাদের কওমের লোকদের দাওয়াত দিয়েছিলেন; আর তাদের দাওয়াত আমাদের দাওয়াতের মত ছিল না। আমাদের দাওয়াত তো আরামপ্রদ আর সহজ; আমরা লক্ষ লক্ষের মাঝে একজন মুসলিম হিসেবে দাওয়াত দিচ্ছি। আর আপনি যদি পুরো শহরের মধ্যে একমাত্র লোক হন যে বিশ্বাস করে, তবে আপনি কি হিসেবে পরিচিতি পাবেন? আপনি পাগল/উন্মাদ হিসেবে বিবেচিত হবেন। লোকেরা আন্বিয়াদের কি বলতো? আপনি হয়তো পড়ে থাকবেন। তারা তাদের কি বলতো? উন্মাদ! আপনি হয়তো বলবেন, ঐ সমস্ত লোকেরা মন্দ ছিল তাই তারা পাগল বলেছিল। আপনি ওইসব লোকের জায়গায় নিজেকে ভাবুন! কতটা সহজ এমন বিষয়ের উপর বিশ্বাস স্থাপন করা যখন আপনার আশেপাশে আর কেউ বিশ্বাস করে না? আপনার আশেপাশে কেউ নেই আর সবাই আপনার ব্যপারে সন্দিহান। কেউ যখন বিশ্বাস করে না ঐ অবস্থায় বিশ্বাস করা খুবই দুরূহ ব্যপার; মোটেও সহজসাধ্য নয় তা। সাহাবারা সর্বত্তোম প্রজন্ম এ কারনেই। তাদের ঈমানের জন্য দিতে হয়েছে অগ্নিপরীক্ষা। অথচ আজ যখন কেউ শাহাদাহ দেয়, তখন তার জন্য ব্যপারটা সহজ কিন্তু তাদেরকে অতিক্রম করতে হয়েছে দুরুহতম পথ। আর, এসবের মধ্যে সবচেয়ে কঠিনতম দায়িত্ব আরোপিত হয়েছিল নবী মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের  উপর। কেননা, আল্লাহ্‌ তা’আলা নবুওয়াতের দায়িত্বের জন্য দুনিয়ার বুকে সবচেয়ে বুদ্ধিদীপ্ত লোকদেরই মনোনীত করেছেন। তারা এতটা বুদ্ধিদীপ্ত আর অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন ছিল যে, তারা জানত আল্লাহর পক্ষ থেকে ওয়াহি লাভের পর, মানুষের দরজায় ধরনা দিলে আর তাদেরকে বললে যে, তিনি আল্লাহর পক্ষ  থেকে ওয়াহিপ্রাপ্ত তবে তারা কেমন ব্যবহার করবে?  তাদের এই পূর্বজ্ঞান ছিল যে, লোকজন তাদের উন্মাদ বলবে। তারা সমাজে তাদের গ্রহণযোগ্যতা হারিয়ে ফেলবেন,  লোকজন তাদের নিয়ে হাসাহাসি করবে, তাদের সাথে বিরক্ত হবে, এমনকি তাদেরকে আঘাত করবে। তারা তাদের পরিবারে সংস্পর্শ হারিয়ে ফেলবেন। আর এর সবকিছুই ঘটবে। তারা জানে এই বার্তার সাথে এমনই হবে কিন্তু এটা তাদের নিজেদের পছন্দ ছিল না আর এটা কোন শখের বিষয় ও নয়। এটা ছিল তাদের উপর আরোপিত দায়িত্ব। এই ব্যপারে তাদের কোন স্বাধীন ইচ্ছা নেই। এই অসম্ভব পরিস্থিতির কথা চিন্তা করুন; যার মধ্য দিয়ে আন্বিয়া আলাইহিমুস সালামদের যেতে হয়েছে। আর, তাদেরকে তাদের এই বার্তা লোকজনের কাছে বিশ্বাসযোগ্যভাবে তুলে ধরার জন্য কি দেয়া হয়েছিলো? মু’জিজা [অলৌকিক বস্তু]। আল্লাহ্‌ তা’আলা তার বার্তাবাহকদের দিয়েছেন অলৌকিক বস্তু। যাতে সন্দেহপোষণকারীদের সন্দেহ দুরীভুত হয়। এরপর, তার উপর বিশ্বাস স্থাপন না করার অন্য কোন কারন বাকী থাকে না; অহংবোধ ব্যতীত। আর এই একটা কারণই তখন অবশিষ্ট থাকে।

আর, এই ব্যপারটা তখন আর বুদ্ধিবৃত্তিক থাকে না। কিভাবে তা দূর করা হয়? এমন বিষয় দিয়ে তা দূর করতে হবে, যা কেবলই আল্লাহ্‌ই করতে পারেন। অর্থাৎ, তা মানুষের কোন কাজ নয়; কিংবা মানবমস্তিষ্কপ্রসূত ও নয়। এটা স্বাভাবিক কোন প্রক্রিয়া নয় যা আমরা সচরাচর দেখি; বরং তা এই গণ্ডির অনেক বাইরে। এই কারনেই আমরা যখন বিভিন্ন নবীদের মু’জিজা [অলৌকিক বিষয়বস্তু] দেখি, আমরা দেখতে পাবঃ অন্ধ পুনরায় দেখতে সমর্থ হচ্ছে, মৃতকে জীবিত করা হচ্ছে, মাটির পাখি পুনরায় জীবিত হচ্ছে। আর এই সকল সুস্পষ্ট নিদর্শন প্রমান বহন করে তিনি নিজের পক্ষ থেকে কিছু বলছেন না বরং তিনি আল্লাহ্‌ সুবহানুহ তা’আলার পক্ষ থেকে বলছেন।    

 কিন্তু, আল্লাহ্‌ সুবহানুহ তা’আলা এই উম্মাহকে দান করেছেন সকল মুজিজার চূড়ান্ত মুজিজা। আর তিনি এই উম্মাহ তথা সমগ্র মানবজাতির জন্য দান করেছেনঃ আল-কুরআন। অন্যান্য নবী-রাসুলদের সাথে কুরআনের মুজিজার পার্থক্য কোথায়? অন্যান্য সকল মুজিজা ছিল দেখার জন্য অর্থাৎ তা দৃশ্যমান ছিল। কিন্তু কুরআন কেবল দেখার জন্য নয়। অন্যান্য নবীদের ক্ষেত্রে, লোকজন তাদের মুজিজা দেখেছে আর তা তাদের অন্তরে প্রবেশ করেছে। কিন্তু, কুরআনে আল্লাহ্‌ তাআলা বলছেনঃ

 يَا أَيُّهَا النَّاسُ ضُرِبَ مَثَلٌ فَاسْتَمِعُوا لَهُ“

হে লোক সকল! একটি উপমা বর্ণনা করা হলো, অতএব তোমরা তা মনোযোগ দিয়ে শোন;” [সুরা হাজ্জঃ ৭৩]

অর্থাৎ, এটা শ্রবনের জন্য। আর এটাই মূল পার্থক্য। অনেকেই, হয়তো বলতে পারে অন্যান্য নবীদের এতো সুন্দর সুন্দর মুজিজা দান করা হয়েছে অথচ আমাদের দেয়া হয়েছে কেবল একটা কিতাব। আমরা যখন আমাদের ঘরের বইয়ের তাকে সাজিয়ে রাখা কুরআনের মুসহাফ দেখিয়ে বলি, এটাই আল্লাহর চূড়ান্ত মুজিজা। সুতরাং, এর একটি ভিত্তি থাকতে হবে যাতে তা আমরা উদ্ভাবনে সমর্থ হই। আমরা কিসের ভিত্তিতে একে অলৌকিক বলছি? আর কেনই বা আল্লাহ্‌ সুবহানুহ তাআলা মুজিজার ধরন পরিবর্তন করে দিলেন? তিনি এটাকে কেবল দেখার বস্তু হিসেবে পাঠান নি। একটু চিন্তা করুন, যখন সেই লোকজন যারা মুসা আলাইহিস সালামের সাথে নীলনদকে খণ্ডিত হতে দেখেছে, তারা যখন তাদের সন্তানদের এই ঘটনার কথা বলবে, ‘আমি এটা নিজ চোখে দেখেছি!’ তার সন্তানরা এটা শুনল। এরপর তারা তাদের সন্তানদের, এরপর তারা তাদের সন্তানদের শুনাল। এভাবে, আর যখন তা আমরা আমাদের সন্তানদের শুনাই কিংবা জিজ্ঞেস করি, ‘মুসা আলাইহিস সালাম কি করেছিল?’ তারা গৎবাঁধাভাবে বলবে, ‘তিনি তার সাথীদের নিয়ে নীলনদ অতিক্রম করেছিলেন’। আর, আমরা কেবল তা গল্পাকারেই জানি এর বেশী কিছু না। কিন্তু যারা মুসা আলাইহিস সালামের সাথে ছিল, তাদের কাছে কি এটা কেবলই গল্প ছিল? না, এটা তাদের কাছে ছিল মুজিজা [অলৌকিক]। আর, পরবর্তীদের জন্য এটা কেবল বিশ্বাসের অনুষঙ্গ হয়েই আছে। এটা তাদের বিশ্বাসের অংশ কিন্তু মুজিজার নয়। কেননা, অলৌকিক বিষয় হল তা যা সে দেখে, যার অভিজ্ঞতা সে নিতে সমর্থ হয় আর যার আস্বাদ নেয়া যায়।

সুতরাং, যখনই কোন নাস্তিক কিংবা অবিশ্বাসী একজন ইহুদি কিংবা ক্রিস্টানের নিকট গিয়ে জিজ্ঞেস করে, ‘তুমি বিশ্বাস কর, জিসাস মৃতকে জীবিত করেছেন, মৃত পাখিকে রুহ ফুঁকে দিয়েছে ইত্যাদি ’? সে বলবে, ‘হ্যাঁ, আমি বিশ্বাস করি।’ তাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, কেন? সে বলবে, ‘বাইবেল বলেছে তাই।’ তুমি কি সেখানে উপস্থিত ছিলে? কেউ কি তা ধারন করেছে? তুমি কেন বিশ্বাস কর? এই ধরনের আরও প্রশ্নের জবাবে ঐ ক্রিস্টান বলবে, ‘এটা আমার অন্তরের বিশ্বাস।’

ঐ একই প্রশ্ন যদি কোন মুসলিমকে করা হয় যে, তুমি কি বিশ্বাস কর যে, ‘কুরআন কি আল্লাহর বাণী?’ তুমি কি কোন ফেরশতাকে দেখেছ? তুমি কিভাবে জান তা আল্লাহর পক্ষ থেকে এসেছে? তখন সে বলবে, ‘চল, কুরআন পড়ি আর দেখাই কেন তা মানবসৃষ্ট হতে পারে না।’ আর কিভাবে তা দেখাতে হয়, তাই আমাদের শিখতে হবে। আর তা আমাদের নিজেদের, সর্বোপরি অন্যদের মঙ্গলের জন্য শিখতে হবে। এটা, আমাদের এজন্যই প্রয়োজন যাতে তা আমাদের ঈমানের বুনিয়াদকে মজবুত করে, আর আল্লাহর মুজিজার চেয়ে তা আর বেশী কিসে করতে পারে? আর, এটার সমকক্ষ কিছুই হতে পারে না। আর, আমাদের তা অন্যের সামনে তুলে ধরতে ও জানতে হবে; যাতে তারা সত্যিকার অর্থেই চিন্তার খোরাক খুঁজে পায় আর গভীরভাবে চিন্তা করতে বাধ্য হয়।  

আর, এই ধরনের ঘটনা ভুরি ভুরি আছে যে, যারা কুরআনকে চ্যালেঞ্জ জানাতে গিয়ে চিন্তা-গবেষনা করে ইসলামের ছায়াতলে আশ্রয় নিয়েছেন। আর এই বিষয়টিই আমাদের পুনরুদ্ধারের চেষ্টা চালাতে হবে। এই বিষয়টি অনুধাবন করতে হবে।

 এবার একটা উদাহরণ দেই, যাতে আপনারা বুঝতে সমর্থ হন কুরআনের সাহিত্যের বিচারেও কত টা অলৌকিক। আপনাদের অনেকেই হয়তো শেক্সপিয়ার, প্লেটো ইত্যাদি সাহিত্য পড়ে থাকবেন। এর সবকিছুই আমি মন্দ বলছি না। এর মধ্যে কিছু ভালো থাকার অবকাশ আছে। আর এই সাহিত্যগুলোকেই মানবসৃষ্ট চূড়ান্ত সাহিত্য হিসেবে ধরা হয়। আমরা কুরআনকে চূড়ান্ত সাহিত্য বলে জানি’ অন্য যে কোন ভাষার সাহিত্যের চেয়ে। কিন্তু, এটা মনোগত বিষয়। কেউ যদি সাহিত্যের ছাত্র হয়ে থাকে তবে সে এও জেনে থাকবে, সাহিত্য বস্তুনিষ্ট-নিরপেক্ষ নয় বরং তা মনোগত। তাই, একজনের কাছে যা সুন্দর, অপরের কাছে তা কুৎসিত,  একজন যা পছন্দ করে অন্যজন তা অপছন্দ করে, একজন যে চিত্র পছন্দ করে অপরজন তাই অপছন্দ করে।  অর্থাৎ সাহিত্যের পুরো বিষয়টাই আপেক্ষিক। কিন্তু, আমরা শুরুতে যে আয়াত দিয়ে শুরু করেছিলাম, আল্লাহ্‌ কুরআনকে কি বলেছেন? ‘বালাগ’- যার অর্থ বার্তা! আর বার্তার উদ্দেশ্যে হচ্ছে শ্রোতাকে প্রভাবান্বিত করা। সুতরাং, আমরা সাহিত্যকে কি দিয়ে বিচার করব? কি তার পরিমাপক? তা হবে- এর প্রভাব কতটুকু? বিশ্বকে তা কতটা প্রভাবান্বিত করতে সমর্থ হয়েছে? এটা কি পরিবর্তন নিয়ে এসেছে? লোকজনকে তা কিভাবে বদলে দিয়েছে? তাদের আচার-আচরণে তা কতটুকু প্রভাব ফেলেছে? কিংবা এটা কিভাবে লোকজনকে আদেশ করে? – এর সবকিছুই বিচার্য। আর এভাবেই কোন সাহিত্য কিংবা বক্তব্যের বাস্তবভিত্তিক বিচার করা যায়। আপনি হয়তো বলবেন, এটা অসাধারন, আমি বলব এটা রহস্যগল্প। অথবা, আপনি হয়তো বলবেন অমুক লিখা আমার জীবন বদলে দিয়েছে। আর, আপনি যদি এইসব ইতিহাস নিয়ে গভীরভাবে পড়াশুনা করেন তবে আপনি বুঝতে সমর্থ হবেন, ইতিহাসে এমন কোন নজির খুঁজে পাওয়া যাবে না কেবল একটি কিতাবের/ বইয়ের উপর ভিত্তি করে পুরো একটি জাতির পরিবর্তনের; যেভাবে মুসলিমরা হয়েছে কুরআন দ্বারা। মানব সভ্যতার ইতিহাসে এমন কোন নজির দ্বিতীয়টি নেই। আর কত বছরে সেই পরিবর্তন সাধিত হয়েছিলো? মাত্র ২৩ বছরে!  এই বিষয়টাতে এমন কি ওরিয়েন্টালিস্টরাও একমত। তাদের ভাষ্যমতে, “কুরআনকে ঐশী বলে দাবী করা হয়েছে। আর, সে তা ৪০ বছর বয়সে দাবী করেছিল আর তা শেষ হয়েছিলো কত বছর বয়সে? ৬৩! অর্থাৎ ২৩ বছর।“ এই ২৩ বছরে একজন মাত্র ব্যক্তি; যার নিয়ে আসা বাণী, এই ব্যক্তি, এই বক্তব্য, এই বক্তা আর বলার ধরন কি প্রভাব ফেলেছিল? লোকজন যেভাবে খাওয়া-দাওয়া করতো – তা পরিবর্তন হয়েছে, কিভাবে ঘুমাতো- তা পরিবর্তন হয়েছে, কিভাবে তাদের পরিবারের সাথে ব্যবহার করতো – তা পরিবর্তন হয়েছে, লোকজন কিভাবে তাদের দৈনন্দিন কার্যক্রম সাজাতো- তা পরিবর্তন হয়েছে, লোকজন কিভাবে কথা বলতো- তা পরিবর্তন হয়েছে, লোকজন কিভাবে ব্যবসা-বানিজ্য করতো- তা পরিবর্তন হয়েছে, এমন কি লোকজন কিভাবে ইস্তিঞ্জায় [প্রাকৃতিক ডাকে সাড়া দেয়া] যাবে তাও পরিবর্তন হয়েছে, পরিবর্তন হয়েছে তারা কিভাবে পোশাক-পরিচ্ছদ পরবে তাও; প্রশ্নটা কি কি পরিবর্তন হয়েছে তা না। বরং প্রশ্নটা হবে কি পরিবর্তন হয় নি? সবকিছুই পরিবর্তিত হয়েছে; সবকিছুরই পরিবর্তন হয়েছে। যখনই আমরা কোন সমাজে পরিবর্তন কিংবা বিপ্লবের কথা শুনি। আমরা শুনি হয় রাজনৈতিক পরিবর্তন/বিপ্লব, কিংবা অর্থনৈতিক পরিবর্তন, কিংবা সামরিক পরিবর্তন কিন্তু তা কোন ব্যক্তির দৈনন্দিন জীবনে প্রভাব ফেলে না। কিংবা তা লোকজনের তার পরিবারের সাথে ব্যবহারের উপর কোন প্রভাব ফেলে না; যদি ও সরকার বা ব্যবস্থার পরিবর্তন ও হয়। সবকিছুই আগের মত থাকে। কিন্তু, কুরআন যে পরিবর্তন নিয়ে এসেছে তার সমকক্ষতা মানব ইতিহাসে নাই। এই পরিবর্তন কেবল সামাজিক ছিল না কিংবা ক্ষুদ্র স্বার্থে ছিল না; বরং তা লোকজনের চিন্তা-চেতনাই পাল্টে দিয়েছে। কুরআন পরিবর্তন নিয়ে এসেছে ব্যক্তিস্বার্থ থেকে শুরু করে সামষ্টিক স্বার্থ; আর এর মধ্যবর্তী সবকিছুরই। আর, এসবই কুরআনকে অতুলনীয়, অপ্রতিদ্বন্দ্বীতায় অধিষ্টিত করে।            


পরের পর্ব
লেখককে ফলো করুন
site search by freefind advanced

© 2014 by Ask Islam Bangla.
Powered by Create your own unique website with customizable templates.