ঐশী কথন ২
১ম পর্ব
অনুবাদ কি? এটা হল সৃষ্টির কথা। আর এটা কখনো আল্লাহর বাণীর প্রতিস্থাপক হতে পারে না; কখনোই পারে না। এইখানে আমরা বক্তব্যে কি হারিয়ে যায় তা নিয়ে আলোচনা করছি না। যদি ও এটা নিয়ে আলোচনার অনেক সুযোগ আছে। আর বক্তব্যে যে ঘাটতি হয় তাও কম নয়। কিন্তু, আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু কুর’আনের বর্ণনার সৌন্দর্যে আর ধরনে আমরা যা হারাচ্ছি তা নিয়ে। তাছাড়া, অনারব ভাষা-ভাষী শ্রোতা হিসেবে আমরা কিভাবে কুর’আনকে ভালবেসে আমাদের যাত্রা শুরু করতে পারি। যে বিষয়টি মুসলিমরা তাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ধরে রেখেছিলো অথচ আমাদের প্রজন্মে আমরা প্রায় তা হারাতে বসেছি।
একটু খেয়াল করুন, আমরা শুনি কুরআন অলৌকিক; যে আলোচনার বিষয়বস্তু দিয়ে আমরা শুরু করেছিলাম। কিন্তু কথা হল, কুর’আনের এই অলৌকিকত্ব কিভাবে তুলে ধরা হয়। আপনি যদি গুগলে অনুসন্ধান করেন; তবে প্রথমেই আপনি পাবেন কুর’আনের বিজ্ঞানময়তা কিংবা তথাকথিত ১৯ এর তত্ত্ব, কিছু পরিসংখ্যান কিংবা কুর’আনের ভবিষ্যৎ বাণী ইত্যাদি। কিন্তু আমরা কি বিশ্ব্বাস করি যে, কুর’আনের প্রতিটি আয়াতই অলৌকিক? আমরা কি বিশ্বাস করি, এটি যখন থেকে নাযিল হয়েছে তখন থেকে আজ অব্দি অলৌকিক? নাযিলের প্রারম্ভ থেকে, প্রথম যখন মানুষ কুর’আনের সংস্পর্শে এসেছে সেই থেকে শুরু করে এর শেষ আয়াত পর্যন্ত অলৌকিক। আমরা এটাই বিশ্বাস করি। কুরআনের কয়টি আয়াতে ভবিষ্যৎ বাণী করা হয়েছে? খুবই অল্প। কুরআনের কয়টি আয়াতে বিজ্ঞানের কথা বলা হয়েছে? খুবই অল্প। আর এসব বিষয়ের কিই বা তখনকার আরবরা জানত? অতএব, তা কি যা ঐ সকল লোকদের মন্ত্রমুগ্ধ আর বিমোহিত করে রেখেছিল? তা কি ছিল যার প্রভাবে যখনই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম মুখ খুলতেন তারা বোকা বনে যেতো/ হতভম্ব হয়ে যেতো?
এই সংক্রান্ত তিনটি ঘটনা বলি, এর পরবর্তীতে আমরা এই সকল প্রশ্নের উত্তর খুঁজবো।
প্রথম গল্পটি খুবই মজার; আর তা হচ্ছে তুফাইল ইবন আমর আদ-দাওসীর। তিনি ছিলেন তার গোত্রের প্রধান; কৌতূহল উদ্দীপক একজন ব্যক্তি। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ কবি। তিনি একবার সিদ্ধান্ত নিলেন সম্মান প্রদর্শনার্থে মক্কায় যাবেন আর কাবাঘর তাওয়াফ করবেন। সকল আরবদেরই ছিল মক্কার প্রতি আলাদা আকর্ষন। তিনি তার গোত্রের পক্ষ থেকে নেতা হিসেবে সম্মান প্রদর্শন করতে এলেন। অন্যদিকে, মক্কার কুরাইশ নেতারা ভাবছিল, সে যদি আসে আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে কুরআন তিলাওয়াত করতে শুনে; তবে বিমোহিত হয়ে যেতে পারে। তাই, যে কোন ভাবে তা ঠেকাতে হবে। তা না হলে আরো একটি গোত্র মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের হস্তগত হবে। কেননা, যখনি কোন গোত্রের নেতা ইসলাম গ্রহন করে, সাথে সাথে ঐ গোত্রের বাকিরাও তার অনুসরন করে। সুতরাং, যে কোন মুল্যে তাকে ঠেকাতে হবে। তাই, তারা আগেভাগে মক্কার বাইরে তার সাথে মিলিত হতে গেল। তারা তাকে বললঃ শুন! আমরা শহরে একটা সমস্যার সন্মুখীণ হচ্ছি; সেখানে এই ব্যক্তি [অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম] লোকজনকে কিছু কথা বলে জাদুগ্রস্থ করছে। এর ফলে পিতা সন্তানের, স্বামী স্ত্রীর, ভাই ভাইয়ের বিরোধিতা করছে। আর এত আমাদের গোত্রে অনৈক্যের সৃষ্টি করছে। আর সে যখন কথা বলে, এই লোকগুলোকে অশুভ কিছু ভর করে। আর আমরা মনে করি তুমি তোমার গোত্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। আমাদের মনে হয় তুমি তোমার শুদ্ধতা হারিয়ে বসবে যদি সে তোমার উপর জাদু করতে সমর্থ হয়। আমরা তোমাকে উপদেশ দেই তুমি ফিরে যাও; মক্কায় এস না। সে ইতস্ততঃ বোধ করলো এবং বললঃ আমি এতদুর এসেছি, অন্ততপক্ষে কাবা তাওযাফ আর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে যাই। তারা বললঃ ‘বেশ! তবে এই চিপিগুলো রাখ’। তারা তাকে কিছু কানবন্ধ দিলো। কেন? “তুমি যখনই তাকে দেখবে, তার কথাগুলো তুমি চিনতে পারবে। আর যখনই এই কথাগুলো শুনবে কানে এইটা গুঁজে পালাবে।” তারা তাকে এই উপদেশই দিয়েছিলো। তিনি কাবার ভিতরে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে গেলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম সেখানে সালাত পরছিলেন আর কুরআন তিলাওয়াত করছিলেন। তিনি কথাগুলোর শ্রুতিমধুরতা শুনতে পেলেন আর সাথে সাথে চিনতে পারলেনঃ ‘এই নিশ্চয় সে যার সম্পর্কে তারা বলছিল।’ তিনি কানবন্ধ করে নিলেন আর সেখান থেকে সটকে পড়তে লাগলেন। পতিমধ্যে ভাবলেন আর থমকে দাঁড়ালেন। আর নিজেকে বলতে লাগলেনঃ ‘আমি আমার গোত্রের নেতা, আমার লোকদের অহংকার, আমি আরবের দক্ষতম কবিদের একজন; আর কিছু কথা আমাকে কাবু করে ফেলবে, না তা হয় না! আমি তা মোকাবিলা করতে পারব।’ তিনি তার কান খুললেন; নবীজির দিকে গেলেন; কুরআন শুনলেন অতঃপর ইসলাম গ্রহন করলেন আর সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন। সুবহান’আল্লাহ!
কুরআন আকর্ষন করেছিল আবু জাহেল, আবু সুফিয়ান, আখনাস বিন শুরাইখদের ও ; যারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে তীব্রভাবে ঘৃণা করতো। তারা ছিল কুরাইশদের নেতা – বয়োজেষ্ঠ; কুরাইশদের চিন্তাশক্তির আধার। আর তারাই রাত্রে চুপিসারে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর ঘরে কান পাততো; কুরআনের সুমধুর তিলাওয়াত শুনার জন্য। আর, সকাল হবার আগেই ফিরে যেতো। এমন চুপিসারে শুনার সময় তারা একে অপরকে খেয়াল করেনি; প্রথমদিন যখন দেখলো তারা একে অপরকে বলতে লাগলো, তুমি এখানে কি করছো? অপরজন ও বলল, তুমি এখানে কি করছো? তারা জানত তারা কি করছিলো; তারা শপথ করল আর আসবে না। পরের রাতে আবার এমন হল, তারা আবার শপথ করল আর আসবে না। অনুরুপভাবে, তৃতীয় রাতেও এমন হল; এবার তার তাদের ইলাহ, তাদের জীবন আর তাদের মায়ের নামে শপথ নিল; আর আসবে না। এরপর আসে নি। কিন্তু, আখনাস বিন শুরাইখ খুবই উৎসুক ছিল। সে আবু সুফিয়ানের কাছে গেল এবং তাকে বললঃ ‘আমরা তো তিন দিন যাবত শুনছিলাম, তোমার কি মত? এটা কি সত্য?’ আবু সুফিয়ান তাকে বললঃ ‘অবশ্যই এটা সত্য। সত্য বৈ আর কি?’ ঠিক আছে, ‘এবার আবু জাহেলের কাছে চল। সে ও তো শুনছিল।‘ অতঃপর তারা আবু জাহেলের কাছে গেল আর জিজ্ঞেস করল, ‘তোমার কি মত?’ সে বললঃ ‘অবশ্যই এটা সত্য।’ চিন্তা করুনঃ আবু জাহেল ও বলছে অবশ্যই এটা সত্য। কিন্তু, সে ব্যখ্যা করলঃ ‘তোমরা দেখ না, আমরা বনু আমীর আর সে বনু হাশিম’।
এখানে খেয়াল করুন, এখানে কোন বিষয়টিকে প্রত্যাখ্যান করেছে? বক্তব্য না বক্তাকে? যদিও সে জানত এই কথাগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী, ধ্রুব সত্য, নিখাদ তার গাঁথুনি, মোহনীয় তার বলার ধরন; কিন্তু তারপর ও গ্রহন করব না। এর কারন ঐ ব্যক্তি। কেননা, যখন বনু হাশিম দান করে আমরা তাদের ঠেক্কা দেই, তারা যখন যুদ্ধ করে আমরা তাদের সমকক্ষতা অর্জন করি, তারা যখন বীরত্ব প্রদর্শন করে আমরাও করি; কিন্তু তাদের একজন যখন এমন বাণী নিয়ে আসে আমরা কখনো তার জবাব দিতে সমর্থ নই। অর্থাৎ তার চিরতরে এর উপর বিজয়ী থাকবে। আর আমরা এটা হতে দিতে পারি না। আর এটাই ছিল তার প্রত্যাখ্যানের কারন। সুবহান’আল্লাহ। ইতিহাসই সাক্ষ্য দেয়, যারা কুরআনকে ঘৃণা করেছিল তারা ও কুরআন শুনে বিমোহিত হয়েছিল।
এবার শেষ ঘটনাঃ উতবা ইবন রবি’আ ছিলেন বাগ্মী প্রকৃতির। খুবই দক্ষ তার্কিক; যে তার প্রতিপক্ষকে অপদস্থ করে ছাড়তো। সে ছিল দ্বন্ধরত গোত্রগুলোর মধ্যস্থতাকারী। আর লোকজন তাকে এই জন্যই ডাকত। তারা একদিন উতবা ইবন রবি’আকে এজন্যই ডেকেছিল যাতে সে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের সাথে বাকবিতণ্ডা করে সমঝোতায় পৌছাতে পারে। তারা উতবাকে বলেছিল, তুমি যাও, তার সাথে কথা বল, সে কি চায় তা জান আর কিছু প্রস্তাবনা দাও। আর তাকে অপদস্থ করো। আমরা দূর থেকে দেখব।
উতবা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের নিকট গেলো আর খুবই অপমানজনক আর তাচ্ছিল্য করে কথা বলতে লাগলঃ হে মুহাম্মাদ! তুমি কি চাও? তুমি কি ধন-সম্পদ চাও? আমরা তোমাকে অর্থসম্পদ দিব। তুমি কি নারী চাও? আমরা তোমাকে নারী দিব। তুমি কি ক্ষমতা চাও? আমরা তোমাকে কিছু ক্ষমতা ও দেব। তুমি কি চাও? তোমার চাওয়া-পাওয়া কি বল?
আর এইসব বলার সময় সে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের বাণীর বিচার করে নি। কেননা তিনি কখনো ধন-সম্পদ কিংবা অন্য কিছুর দাবী করেন নি। সে এখানে ব্যক্তির উদ্দেশ্য জানতে চেয়েছিল আর এটাকে বলা হয় চারিত্রিক কালিমালেপন/ হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য ব্যক্তিগত আক্রমন। কারো গ্রহনযোগ্যতা ধুলিস্যাৎ করার সহজতম উপায়; কারো উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। অর্থাৎ কেন তুমি এই বাণী প্রচার করছ? নিশ্চয় তোমার এর পেছনে কোন গোপন ষড়যন্ত্র আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। সে আচ্ছামত বকে গেলো। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম খুবই সতর্কতার সাথে মনোযোগ আর ধৈর্য সহকারে শুনলেন। আর যখন উতবার বলা শেষ হল, খুবই নম্রসুরে রাসুলুল্লাহ বললেন, ‘তোমার কি শেষ? তোমার কি বলা শেষ।’ সে বললঃ ‘বেশ, এবার তোমার পালা।’
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম কিছুই করলেন না কেবল কুরআনের সুরা ফুসসিলাত থেকে তিলাওয়াত শুরু করলেনঃ
“শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু। হা-মীম। এটা অবতীর্ণ পরম করুণাময়,দয়ালুর পক্ষ থেকে। এটা কিতাব, এর আয়াতসমূহ বিশদভাবে বিবৃত আরবী কোরআনরূপে জ্ঞানী লোকদের জন্য। সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে, অতঃপর তাদের অধিকাংশই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে,তারা শুনে না। তারা বলে আপনি যে বিষয়ের দিকে আমাদের কে দাওয়াত দেন, সে বিষয়ে আমাদের অন্তর আবরণে আবৃত, আমাদের কর্ণে আছে বোঝা এবং আমাদের ও আপনার মাঝখানে আছেঅন্তরাল। অতএব, আপনি আপনার কাজ করুন এবং আমরা আমাদের কাজ করি। বলুন, আমিও তোমাদের মতই মানুষ, আমার প্রতি ওহী আসে যে, তোমাদের মাবুদ একমাত্র মাবুদ, অতএব তাঁর দিকেই সোজা হয়ে থাক এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। আর মুশরিকদের জন্যে রয়েছে দুর্ভোগ,যারা যাকাত দেয় না এবং পরকালকে অস্বীকার করে। নিশ্চয় যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে,তাদের জন্যে রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার। বলুন, তোমরা কি সে সত্তাকে অস্বীকার কর যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন দু’দিনে এবং তোমরা কি তাঁর সমকক্ষ স্থীর কর? তিনি তো সমগ্র বিশ্বের পালনকর্তা। তিনিপৃথিবীতে উপরিভাগে অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন, তাতে কল্যাণ নিহিত রেখেছেন এবং চার দিনের মধ্যে তাতে তার খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন-পূর্ণ হল জিজ্ঞাসুদের জন্যে। অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম।অতঃপর তিনি আকাশমন্ডলীকে দু’দিনে সপ্ত আকাশ করে দিলেন এবং প্রত্যেক আকাশে তার আদেশ প্রেরণ করলেন। আমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুশোভিত ও সংরক্ষিত করেছি। এটা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা।অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে বলুন, আমি তোমাদেরকে সতর্ক করলাম এক কঠোর আযাব সম্পর্কে আদ ও সামুদের আযাবের মত।“ [সুরা ফুসসিলাতঃ১-১৩]
এখানে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম প্রথম যে আয়াত তিলাওয়াত করেন, তার অর্থ অনেকটা এমনঃ
“এটা অবতীর্ণ পরম করুণাময়, দয়ালুর পক্ষ থেকে।“ উতবা যখন রাসুলুল্লাহকে আক্রমন করা শুরু করেছিল, তখন তার ভাব ছিল এমনঃ ‘এইসব তোমার কথা আর এর দ্বারা তুমি স্বার্থ হাসিল করতে চাচ্ছো।’
এর প্রত্যত্তুরে কুরআন বলছে, এসব তার কথা নয় বরং তা পরম করুনাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। অর্থাৎ উতবার এই তর্ক রাসুলুল্লাহর সাথে নয় বরং আল্লাহর বাণীর সাথে।
এরপরে বলা হয়েছে, ‘এই কিতাব’; যদি ও তখন তা নাযিল হচ্ছিল । যার ‘আয়াতসমূহ বিশদভাবে বিবৃত’। যদি খেয়াল করে থাকেন, উতবা বলছিল, তুমি কি চাও। আর কুরআন বলছে, এর দাবিসমুহ বিশদভাবে বিবৃত। এবার সে দাবিগুলো কি? তা কি সুস্পষ্ট ভাষায় বর্ণিত?
“আরবী কোরআনরূপে জ্ঞানী লোকদের জন্য।“ – আরবী কুরআন সে সকল লোকদের জন্য; যারা জানতে চায়। অর্থাৎ তোমরা জানতে চাও, আমাদের দাবী কি?তবে জেনে নাওঃ
“সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে,”। এই কুরআন এসেছে মুলতঃ দুটি উদ্যেশ্য নিয়েঃ সুসংবাদ প্রদান করা আর সতর্ককারী হিসেবে।
“অতঃপর তাদের অধিকাংশই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে; তারা শুনে না।“ অধিকাংশ মানুষই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে/ পরিত্যাগ করেছে। এখানে বলা হয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এমনকি তারা শুনে ও না; এখানে মক্কার লোকদের কথা বলা হয়েছে। আর আল্লাহ্ তা’আলা এভাবেই প্রত্যত্তুর দিচ্ছিলেন; তাদের প্রস্তাবনার। এভাবে, আয়াত নাযিল হচ্ছিলো আর দূর থেকে কুরাইশ নেতারা দেখছিল। তারা কি কথা হচ্ছিলো শুনছিলো না। তারা দেখল উতবার চেহেরা পরিবর্তন হয়ে গেলো। এরপর তারা খেয়াল করল, উতবা কাঁদছে। উতবার মত নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের অপমানকারী, ইসলামকে হেয় প্রতিপন্নকারী, বাগ্মী ব্যক্তি কাঁদছে।
সে কুরআন শুনলো আর কান্না করলো। নাযিলকৃত কুরআনের আয়াতগুলো ক্রমাগতভাবে শক্তিশালী হচ্ছে আর তার কান্না বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরপর সে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের মুখে হাত দিয়ে বললঃ ‘অনুগ্রহ করে থামুন; আমি আর সহ্য করতে পারছি না।’ রাসুলুল্লাহ তিলাওয়াত অব্যাহত রাখলেন; যতক্ষণ না সিজদার আয়াতে পৌঁছলেন। এরপর তিনি সিজদা করলেন। উতবা ফিরে গেলো। কুরাইশ নেতারা বলাবলি করতে লাগলোঃ “তুমি যে চেহেরা নিয়ে গিয়েছিলে, সে চেহেরা নিয়ে ফিরে আসনি”। সে বললঃ “এই লোক যাই বলে, তাতে ভবিষ্যতে বিশাল ঘটনার অবতারণা হবে।”
এখানে একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ; যদি ও বা এখানে যে আয়াতসমুহ নাযিল হয়েছে তার পূর্ণাঙ্গ ব্যখ্যা দেয়া সম্ভবপর নয়। তবে, শেষদিকের একটি আয়াত উল্লেখ না করলেই নয়ঃ
“অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে বলুন, আমি তোমাদেরকে সতর্ক করলাম এক কঠোর আযাব সম্পর্কে আদ ও সামুদের আযাবের মত।”
অতঃপর তারা যদি স্বেচ্ছায় মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে আপনি তাদেরকে বলুন। এখানে ‘আপনি’ কে? মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম। উতবা বুঝতে পারল সে মুহাম্মাদের সাথে কথা বলছে না বরং আল্লাহর সাথে কথা বলছে। আর এখানে সরাসরি উতবাকে না বলে আল্লাহ্ তার নবীকে দিয়ে বলাচ্ছেন অথচ আল্লাহ্ তাআলা চাইলে এখানে সরাসরি বলতে পারতেন। এরপর বললেনঃ ‘এক কঠোর আযাব সম্পর্কে আদ ও সামুদের আযাবের মত।”
আর আরবের লোকেরা এই আযাব সম্পর্কে জানত। তারা জানত এটা অতীতে ঘটেছিল। আর উতবা এবার বুঝতে পারলেন, আল্লাহ্ তাআলা সরাসরি শাস্তির সতর্কতাই দিচ্ছেন। উতবা হীনবল হয়ে পড়ল।
সে ফিরে এসে বললঃ ‘এই লোক যা বলে তোমরা তা গ্রাহ্য কর; আর এটা শীঘ্রই বড় ঘটনাপ্রবাহের অবতারণা করবে।’ তখন কুরাইশ নেতার বললঃ ‘সে তোমাকে ও জাদুগ্রস্থ করেছে।’ সে বললঃ ‘তোমাদের যা খুশি বল; কিন্তু এটা জাদু না। আর আমি তার সাথে তর্ক করছি না’।
আপনাদেরকে এই সকল ঘটনা বলার একটা কারন আছে – আর তা হল এক মর্মান্তিক অবস্থার চিত্র ফুটিয়ে তোলা। রাসুলুল্লাহর সময় বিশ্বাসী আর অবিশ্বাসীদের মাঝে একটা বিষয়ে মিল ছিলঃ আর তা হল তাদের উভয়েই কুরআন দ্বারা অভিভুত হত। অথচ, আমাদের সময়ে অবিশ্বাসীরা দূরে থাক, বিশ্বাসীরা পর্যন্ত কুরআনের এই সন্মোহনী শক্তির উপলব্ধি হারিয়ে বসেছি। এমন কি যেভাবে তখনকার সময়ের অবিশ্বাসীরা হত; সেভাবেও তারা কুরআন দ্বারা বিমোহিত, আচ্ছন্ন কিংবা অভিভুত হয়না; আর নিঃসন্দেহে এটা মর্মান্তিক। কুরআনের এই প্রভাবটাই বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায়। আর, এই প্রভাব হারিয়ে যাওয়ার কারনেই আমরা এখন কুরআনের বিভিন্ন বিধান নিয়ে এমন প্রশ্ন করি যা হাস্যকর! অর্থাৎ কুরআনের প্রভাব আমাদের উপর এতোটাই ম্রিয়মান।
আরেকটি উদাহরণ দেই। ধরুন, আমার আর আপনার মুসা আলায়হি ওয়া সাল্লামের সময়ে থাকার সৌভাগ্য হল। আর, আমরা তার সাথে ঠিক সেই সময় অবস্থান করছি যখন আল্লাহ্ তাআলা তাকে লাঠি দিয়ে সমুদ্রে আঘাত করতে বললেন। এরপর কি, আপনি মুসা আলায়হি ওয়া সাল্লামকে আর প্রশ্ন করবেন? আপনি কি সন্দেহ পোষণ করবেন? আপনার কি বিশ্বাসে ঘাটতি হবে? অবশ্যই না। কেননা, এটা অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা।
মুসলিম হিসেবে আমাদের বিশ্বাস, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের উম্মাত হিসেবে আমাদের বিশ্বাস- আল্লাহ্ তাআলা তাকে সর্বশেষ, চূড়ান্ত আর অলৌকিক মু’জিজার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী মু’জিজা দান করেছেন। আর সেটা কি? আল-কুর’আন। আমরা কুরআনকে ধর্মীয় গ্রন্থ , পথপ্রদর্শনকারী কিংবা জ্ঞানময় কিতাব হিসেবে জানি। কিন্তু, আমরা যদি একে আল্লাহর দেয়া অলৌকিক মু’জিজা হিসেবে উপলব্ধি করতে পারতাম, তবে আমাদের ঈমানের স্বাদ হত সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই অলৌকিকত্ব বুঝার আগের ঈমান আর বুঝার পরের ঈমান সম্পূর্ণ ভিন্ন। আপনি যদি সাহাবাদের কথা চিন্তা করেন, তারা যখন কুরআন শুনত তারা দু’টি জিনিস একসাথে পেতেনঃ উপদেশ-সরলপথের দিশা আর সেই সাথে আল্লাহর মু’জিজা। আর আজ যখন আমরা কুরআন শুনি তখন আমরা বড়জোর কি শুনতে পাই? কেবলই, সতর্কতা। কি হারাচ্ছি? অলৌকিকত্ব!
পর্ব ৩
অনুবাদ কি? এটা হল সৃষ্টির কথা। আর এটা কখনো আল্লাহর বাণীর প্রতিস্থাপক হতে পারে না; কখনোই পারে না। এইখানে আমরা বক্তব্যে কি হারিয়ে যায় তা নিয়ে আলোচনা করছি না। যদি ও এটা নিয়ে আলোচনার অনেক সুযোগ আছে। আর বক্তব্যে যে ঘাটতি হয় তাও কম নয়। কিন্তু, আমাদের আলোচনার বিষয়বস্তু কুর’আনের বর্ণনার সৌন্দর্যে আর ধরনে আমরা যা হারাচ্ছি তা নিয়ে। তাছাড়া, অনারব ভাষা-ভাষী শ্রোতা হিসেবে আমরা কিভাবে কুর’আনকে ভালবেসে আমাদের যাত্রা শুরু করতে পারি। যে বিষয়টি মুসলিমরা তাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হিসেবে ধরে রেখেছিলো অথচ আমাদের প্রজন্মে আমরা প্রায় তা হারাতে বসেছি।
একটু খেয়াল করুন, আমরা শুনি কুরআন অলৌকিক; যে আলোচনার বিষয়বস্তু দিয়ে আমরা শুরু করেছিলাম। কিন্তু কথা হল, কুর’আনের এই অলৌকিকত্ব কিভাবে তুলে ধরা হয়। আপনি যদি গুগলে অনুসন্ধান করেন; তবে প্রথমেই আপনি পাবেন কুর’আনের বিজ্ঞানময়তা কিংবা তথাকথিত ১৯ এর তত্ত্ব, কিছু পরিসংখ্যান কিংবা কুর’আনের ভবিষ্যৎ বাণী ইত্যাদি। কিন্তু আমরা কি বিশ্ব্বাস করি যে, কুর’আনের প্রতিটি আয়াতই অলৌকিক? আমরা কি বিশ্বাস করি, এটি যখন থেকে নাযিল হয়েছে তখন থেকে আজ অব্দি অলৌকিক? নাযিলের প্রারম্ভ থেকে, প্রথম যখন মানুষ কুর’আনের সংস্পর্শে এসেছে সেই থেকে শুরু করে এর শেষ আয়াত পর্যন্ত অলৌকিক। আমরা এটাই বিশ্বাস করি। কুরআনের কয়টি আয়াতে ভবিষ্যৎ বাণী করা হয়েছে? খুবই অল্প। কুরআনের কয়টি আয়াতে বিজ্ঞানের কথা বলা হয়েছে? খুবই অল্প। আর এসব বিষয়ের কিই বা তখনকার আরবরা জানত? অতএব, তা কি যা ঐ সকল লোকদের মন্ত্রমুগ্ধ আর বিমোহিত করে রেখেছিল? তা কি ছিল যার প্রভাবে যখনই মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম মুখ খুলতেন তারা বোকা বনে যেতো/ হতভম্ব হয়ে যেতো?
এই সংক্রান্ত তিনটি ঘটনা বলি, এর পরবর্তীতে আমরা এই সকল প্রশ্নের উত্তর খুঁজবো।
প্রথম গল্পটি খুবই মজার; আর তা হচ্ছে তুফাইল ইবন আমর আদ-দাওসীর। তিনি ছিলেন তার গোত্রের প্রধান; কৌতূহল উদ্দীপক একজন ব্যক্তি। তিনি ছিলেন একজন দক্ষ কবি। তিনি একবার সিদ্ধান্ত নিলেন সম্মান প্রদর্শনার্থে মক্কায় যাবেন আর কাবাঘর তাওয়াফ করবেন। সকল আরবদেরই ছিল মক্কার প্রতি আলাদা আকর্ষন। তিনি তার গোত্রের পক্ষ থেকে নেতা হিসেবে সম্মান প্রদর্শন করতে এলেন। অন্যদিকে, মক্কার কুরাইশ নেতারা ভাবছিল, সে যদি আসে আর মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে কুরআন তিলাওয়াত করতে শুনে; তবে বিমোহিত হয়ে যেতে পারে। তাই, যে কোন ভাবে তা ঠেকাতে হবে। তা না হলে আরো একটি গোত্র মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের হস্তগত হবে। কেননা, যখনি কোন গোত্রের নেতা ইসলাম গ্রহন করে, সাথে সাথে ঐ গোত্রের বাকিরাও তার অনুসরন করে। সুতরাং, যে কোন মুল্যে তাকে ঠেকাতে হবে। তাই, তারা আগেভাগে মক্কার বাইরে তার সাথে মিলিত হতে গেল। তারা তাকে বললঃ শুন! আমরা শহরে একটা সমস্যার সন্মুখীণ হচ্ছি; সেখানে এই ব্যক্তি [অর্থাৎ মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম] লোকজনকে কিছু কথা বলে জাদুগ্রস্থ করছে। এর ফলে পিতা সন্তানের, স্বামী স্ত্রীর, ভাই ভাইয়ের বিরোধিতা করছে। আর এত আমাদের গোত্রে অনৈক্যের সৃষ্টি করছে। আর সে যখন কথা বলে, এই লোকগুলোকে অশুভ কিছু ভর করে। আর আমরা মনে করি তুমি তোমার গোত্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিত্ব। আমাদের মনে হয় তুমি তোমার শুদ্ধতা হারিয়ে বসবে যদি সে তোমার উপর জাদু করতে সমর্থ হয়। আমরা তোমাকে উপদেশ দেই তুমি ফিরে যাও; মক্কায় এস না। সে ইতস্ততঃ বোধ করলো এবং বললঃ আমি এতদুর এসেছি, অন্ততপক্ষে কাবা তাওযাফ আর শ্রদ্ধা প্রদর্শন করে যাই। তারা বললঃ ‘বেশ! তবে এই চিপিগুলো রাখ’। তারা তাকে কিছু কানবন্ধ দিলো। কেন? “তুমি যখনই তাকে দেখবে, তার কথাগুলো তুমি চিনতে পারবে। আর যখনই এই কথাগুলো শুনবে কানে এইটা গুঁজে পালাবে।” তারা তাকে এই উপদেশই দিয়েছিলো। তিনি কাবার ভিতরে শ্রদ্ধা প্রদর্শন করতে গেলেন। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম সেখানে সালাত পরছিলেন আর কুরআন তিলাওয়াত করছিলেন। তিনি কথাগুলোর শ্রুতিমধুরতা শুনতে পেলেন আর সাথে সাথে চিনতে পারলেনঃ ‘এই নিশ্চয় সে যার সম্পর্কে তারা বলছিল।’ তিনি কানবন্ধ করে নিলেন আর সেখান থেকে সটকে পড়তে লাগলেন। পতিমধ্যে ভাবলেন আর থমকে দাঁড়ালেন। আর নিজেকে বলতে লাগলেনঃ ‘আমি আমার গোত্রের নেতা, আমার লোকদের অহংকার, আমি আরবের দক্ষতম কবিদের একজন; আর কিছু কথা আমাকে কাবু করে ফেলবে, না তা হয় না! আমি তা মোকাবিলা করতে পারব।’ তিনি তার কান খুললেন; নবীজির দিকে গেলেন; কুরআন শুনলেন অতঃপর ইসলাম গ্রহন করলেন আর সমস্ত ঘটনা খুলে বললেন। সুবহান’আল্লাহ!
কুরআন আকর্ষন করেছিল আবু জাহেল, আবু সুফিয়ান, আখনাস বিন শুরাইখদের ও ; যারা রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামকে তীব্রভাবে ঘৃণা করতো। তারা ছিল কুরাইশদের নেতা – বয়োজেষ্ঠ; কুরাইশদের চিন্তাশক্তির আধার। আর তারাই রাত্রে চুপিসারে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম এর ঘরে কান পাততো; কুরআনের সুমধুর তিলাওয়াত শুনার জন্য। আর, সকাল হবার আগেই ফিরে যেতো। এমন চুপিসারে শুনার সময় তারা একে অপরকে খেয়াল করেনি; প্রথমদিন যখন দেখলো তারা একে অপরকে বলতে লাগলো, তুমি এখানে কি করছো? অপরজন ও বলল, তুমি এখানে কি করছো? তারা জানত তারা কি করছিলো; তারা শপথ করল আর আসবে না। পরের রাতে আবার এমন হল, তারা আবার শপথ করল আর আসবে না। অনুরুপভাবে, তৃতীয় রাতেও এমন হল; এবার তার তাদের ইলাহ, তাদের জীবন আর তাদের মায়ের নামে শপথ নিল; আর আসবে না। এরপর আসে নি। কিন্তু, আখনাস বিন শুরাইখ খুবই উৎসুক ছিল। সে আবু সুফিয়ানের কাছে গেল এবং তাকে বললঃ ‘আমরা তো তিন দিন যাবত শুনছিলাম, তোমার কি মত? এটা কি সত্য?’ আবু সুফিয়ান তাকে বললঃ ‘অবশ্যই এটা সত্য। সত্য বৈ আর কি?’ ঠিক আছে, ‘এবার আবু জাহেলের কাছে চল। সে ও তো শুনছিল।‘ অতঃপর তারা আবু জাহেলের কাছে গেল আর জিজ্ঞেস করল, ‘তোমার কি মত?’ সে বললঃ ‘অবশ্যই এটা সত্য।’ চিন্তা করুনঃ আবু জাহেল ও বলছে অবশ্যই এটা সত্য। কিন্তু, সে ব্যখ্যা করলঃ ‘তোমরা দেখ না, আমরা বনু আমীর আর সে বনু হাশিম’।
এখানে খেয়াল করুন, এখানে কোন বিষয়টিকে প্রত্যাখ্যান করেছে? বক্তব্য না বক্তাকে? যদিও সে জানত এই কথাগুলো যথেষ্ট শক্তিশালী, ধ্রুব সত্য, নিখাদ তার গাঁথুনি, মোহনীয় তার বলার ধরন; কিন্তু তারপর ও গ্রহন করব না। এর কারন ঐ ব্যক্তি। কেননা, যখন বনু হাশিম দান করে আমরা তাদের ঠেক্কা দেই, তারা যখন যুদ্ধ করে আমরা তাদের সমকক্ষতা অর্জন করি, তারা যখন বীরত্ব প্রদর্শন করে আমরাও করি; কিন্তু তাদের একজন যখন এমন বাণী নিয়ে আসে আমরা কখনো তার জবাব দিতে সমর্থ নই। অর্থাৎ তার চিরতরে এর উপর বিজয়ী থাকবে। আর আমরা এটা হতে দিতে পারি না। আর এটাই ছিল তার প্রত্যাখ্যানের কারন। সুবহান’আল্লাহ। ইতিহাসই সাক্ষ্য দেয়, যারা কুরআনকে ঘৃণা করেছিল তারা ও কুরআন শুনে বিমোহিত হয়েছিল।
এবার শেষ ঘটনাঃ উতবা ইবন রবি’আ ছিলেন বাগ্মী প্রকৃতির। খুবই দক্ষ তার্কিক; যে তার প্রতিপক্ষকে অপদস্থ করে ছাড়তো। সে ছিল দ্বন্ধরত গোত্রগুলোর মধ্যস্থতাকারী। আর লোকজন তাকে এই জন্যই ডাকত। তারা একদিন উতবা ইবন রবি’আকে এজন্যই ডেকেছিল যাতে সে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের সাথে বাকবিতণ্ডা করে সমঝোতায় পৌছাতে পারে। তারা উতবাকে বলেছিল, তুমি যাও, তার সাথে কথা বল, সে কি চায় তা জান আর কিছু প্রস্তাবনা দাও। আর তাকে অপদস্থ করো। আমরা দূর থেকে দেখব।
উতবা মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের নিকট গেলো আর খুবই অপমানজনক আর তাচ্ছিল্য করে কথা বলতে লাগলঃ হে মুহাম্মাদ! তুমি কি চাও? তুমি কি ধন-সম্পদ চাও? আমরা তোমাকে অর্থসম্পদ দিব। তুমি কি নারী চাও? আমরা তোমাকে নারী দিব। তুমি কি ক্ষমতা চাও? আমরা তোমাকে কিছু ক্ষমতা ও দেব। তুমি কি চাও? তোমার চাওয়া-পাওয়া কি বল?
আর এইসব বলার সময় সে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের বাণীর বিচার করে নি। কেননা তিনি কখনো ধন-সম্পদ কিংবা অন্য কিছুর দাবী করেন নি। সে এখানে ব্যক্তির উদ্দেশ্য জানতে চেয়েছিল আর এটাকে বলা হয় চারিত্রিক কালিমালেপন/ হীন উদ্দেশ্য চরিতার্থ করার জন্য ব্যক্তিগত আক্রমন। কারো গ্রহনযোগ্যতা ধুলিস্যাৎ করার সহজতম উপায়; কারো উদ্দেশ্যকে প্রশ্নবিদ্ধ করে। অর্থাৎ কেন তুমি এই বাণী প্রচার করছ? নিশ্চয় তোমার এর পেছনে কোন গোপন ষড়যন্ত্র আছে ইত্যাদি ইত্যাদি। সে আচ্ছামত বকে গেলো। মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম খুবই সতর্কতার সাথে মনোযোগ আর ধৈর্য সহকারে শুনলেন। আর যখন উতবার বলা শেষ হল, খুবই নম্রসুরে রাসুলুল্লাহ বললেন, ‘তোমার কি শেষ? তোমার কি বলা শেষ।’ সে বললঃ ‘বেশ, এবার তোমার পালা।’
রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম কিছুই করলেন না কেবল কুরআনের সুরা ফুসসিলাত থেকে তিলাওয়াত শুরু করলেনঃ
“শুরু করছি আল্লাহর নামে যিনি পরম করুণাময়, অতি দয়ালু। হা-মীম। এটা অবতীর্ণ পরম করুণাময়,দয়ালুর পক্ষ থেকে। এটা কিতাব, এর আয়াতসমূহ বিশদভাবে বিবৃত আরবী কোরআনরূপে জ্ঞানী লোকদের জন্য। সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে, অতঃপর তাদের অধিকাংশই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে,তারা শুনে না। তারা বলে আপনি যে বিষয়ের দিকে আমাদের কে দাওয়াত দেন, সে বিষয়ে আমাদের অন্তর আবরণে আবৃত, আমাদের কর্ণে আছে বোঝা এবং আমাদের ও আপনার মাঝখানে আছেঅন্তরাল। অতএব, আপনি আপনার কাজ করুন এবং আমরা আমাদের কাজ করি। বলুন, আমিও তোমাদের মতই মানুষ, আমার প্রতি ওহী আসে যে, তোমাদের মাবুদ একমাত্র মাবুদ, অতএব তাঁর দিকেই সোজা হয়ে থাক এবং তাঁর কাছে ক্ষমা প্রার্থনা কর। আর মুশরিকদের জন্যে রয়েছে দুর্ভোগ,যারা যাকাত দেয় না এবং পরকালকে অস্বীকার করে। নিশ্চয় যারা বিশ্বাস স্থাপন করে ও সৎকর্ম করে,তাদের জন্যে রয়েছে অফুরন্ত পুরস্কার। বলুন, তোমরা কি সে সত্তাকে অস্বীকার কর যিনি পৃথিবী সৃষ্টি করেছেন দু’দিনে এবং তোমরা কি তাঁর সমকক্ষ স্থীর কর? তিনি তো সমগ্র বিশ্বের পালনকর্তা। তিনিপৃথিবীতে উপরিভাগে অটল পর্বতমালা স্থাপন করেছেন, তাতে কল্যাণ নিহিত রেখেছেন এবং চার দিনের মধ্যে তাতে তার খাদ্যের ব্যবস্থা করেছেন-পূর্ণ হল জিজ্ঞাসুদের জন্যে। অতঃপর তিনি আকাশের দিকে মনোযোগ দিলেন যা ছিল ধুম্রকুঞ্জ, অতঃপর তিনি তাকে ও পৃথিবীকে বললেন, তোমরা উভয়ে আস ইচ্ছায় অথবা অনিচ্ছায়। তারা বলল, আমরা স্বেচ্ছায় আসলাম।অতঃপর তিনি আকাশমন্ডলীকে দু’দিনে সপ্ত আকাশ করে দিলেন এবং প্রত্যেক আকাশে তার আদেশ প্রেরণ করলেন। আমি নিকটবর্তী আকাশকে প্রদীপমালা দ্বারা সুশোভিত ও সংরক্ষিত করেছি। এটা পরাক্রমশালী সর্বজ্ঞ আল্লাহর ব্যবস্থাপনা।অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে বলুন, আমি তোমাদেরকে সতর্ক করলাম এক কঠোর আযাব সম্পর্কে আদ ও সামুদের আযাবের মত।“ [সুরা ফুসসিলাতঃ১-১৩]
এখানে, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম প্রথম যে আয়াত তিলাওয়াত করেন, তার অর্থ অনেকটা এমনঃ
“এটা অবতীর্ণ পরম করুণাময়, দয়ালুর পক্ষ থেকে।“ উতবা যখন রাসুলুল্লাহকে আক্রমন করা শুরু করেছিল, তখন তার ভাব ছিল এমনঃ ‘এইসব তোমার কথা আর এর দ্বারা তুমি স্বার্থ হাসিল করতে চাচ্ছো।’
এর প্রত্যত্তুরে কুরআন বলছে, এসব তার কথা নয় বরং তা পরম করুনাময় আল্লাহর পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। অর্থাৎ উতবার এই তর্ক রাসুলুল্লাহর সাথে নয় বরং আল্লাহর বাণীর সাথে।
এরপরে বলা হয়েছে, ‘এই কিতাব’; যদি ও তখন তা নাযিল হচ্ছিল । যার ‘আয়াতসমূহ বিশদভাবে বিবৃত’। যদি খেয়াল করে থাকেন, উতবা বলছিল, তুমি কি চাও। আর কুরআন বলছে, এর দাবিসমুহ বিশদভাবে বিবৃত। এবার সে দাবিগুলো কি? তা কি সুস্পষ্ট ভাষায় বর্ণিত?
“আরবী কোরআনরূপে জ্ঞানী লোকদের জন্য।“ – আরবী কুরআন সে সকল লোকদের জন্য; যারা জানতে চায়। অর্থাৎ তোমরা জানতে চাও, আমাদের দাবী কি?তবে জেনে নাওঃ
“সুসংবাদদাতা ও সতর্ককারীরূপে,”। এই কুরআন এসেছে মুলতঃ দুটি উদ্যেশ্য নিয়েঃ সুসংবাদ প্রদান করা আর সতর্ককারী হিসেবে।
“অতঃপর তাদের অধিকাংশই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে; তারা শুনে না।“ অধিকাংশ মানুষই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে/ পরিত্যাগ করেছে। এখানে বলা হয়েছে ইচ্ছাকৃতভাবেই মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। এমনকি তারা শুনে ও না; এখানে মক্কার লোকদের কথা বলা হয়েছে। আর আল্লাহ্ তা’আলা এভাবেই প্রত্যত্তুর দিচ্ছিলেন; তাদের প্রস্তাবনার। এভাবে, আয়াত নাযিল হচ্ছিলো আর দূর থেকে কুরাইশ নেতারা দেখছিল। তারা কি কথা হচ্ছিলো শুনছিলো না। তারা দেখল উতবার চেহেরা পরিবর্তন হয়ে গেলো। এরপর তারা খেয়াল করল, উতবা কাঁদছে। উতবার মত নবী সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের অপমানকারী, ইসলামকে হেয় প্রতিপন্নকারী, বাগ্মী ব্যক্তি কাঁদছে।
সে কুরআন শুনলো আর কান্না করলো। নাযিলকৃত কুরআনের আয়াতগুলো ক্রমাগতভাবে শক্তিশালী হচ্ছে আর তার কান্না বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরপর সে মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের মুখে হাত দিয়ে বললঃ ‘অনুগ্রহ করে থামুন; আমি আর সহ্য করতে পারছি না।’ রাসুলুল্লাহ তিলাওয়াত অব্যাহত রাখলেন; যতক্ষণ না সিজদার আয়াতে পৌঁছলেন। এরপর তিনি সিজদা করলেন। উতবা ফিরে গেলো। কুরাইশ নেতারা বলাবলি করতে লাগলোঃ “তুমি যে চেহেরা নিয়ে গিয়েছিলে, সে চেহেরা নিয়ে ফিরে আসনি”। সে বললঃ “এই লোক যাই বলে, তাতে ভবিষ্যতে বিশাল ঘটনার অবতারণা হবে।”
এখানে একটি বিষয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ; যদি ও বা এখানে যে আয়াতসমুহ নাযিল হয়েছে তার পূর্ণাঙ্গ ব্যখ্যা দেয়া সম্ভবপর নয়। তবে, শেষদিকের একটি আয়াত উল্লেখ না করলেই নয়ঃ
“অতঃপর যদি তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে বলুন, আমি তোমাদেরকে সতর্ক করলাম এক কঠোর আযাব সম্পর্কে আদ ও সামুদের আযাবের মত।”
অতঃপর তারা যদি স্বেচ্ছায় মুখ ফিরিয়ে নেয়, তবে আপনি তাদেরকে বলুন। এখানে ‘আপনি’ কে? মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লাম। উতবা বুঝতে পারল সে মুহাম্মাদের সাথে কথা বলছে না বরং আল্লাহর সাথে কথা বলছে। আর এখানে সরাসরি উতবাকে না বলে আল্লাহ্ তার নবীকে দিয়ে বলাচ্ছেন অথচ আল্লাহ্ তাআলা চাইলে এখানে সরাসরি বলতে পারতেন। এরপর বললেনঃ ‘এক কঠোর আযাব সম্পর্কে আদ ও সামুদের আযাবের মত।”
আর আরবের লোকেরা এই আযাব সম্পর্কে জানত। তারা জানত এটা অতীতে ঘটেছিল। আর উতবা এবার বুঝতে পারলেন, আল্লাহ্ তাআলা সরাসরি শাস্তির সতর্কতাই দিচ্ছেন। উতবা হীনবল হয়ে পড়ল।
সে ফিরে এসে বললঃ ‘এই লোক যা বলে তোমরা তা গ্রাহ্য কর; আর এটা শীঘ্রই বড় ঘটনাপ্রবাহের অবতারণা করবে।’ তখন কুরাইশ নেতার বললঃ ‘সে তোমাকে ও জাদুগ্রস্থ করেছে।’ সে বললঃ ‘তোমাদের যা খুশি বল; কিন্তু এটা জাদু না। আর আমি তার সাথে তর্ক করছি না’।
আপনাদেরকে এই সকল ঘটনা বলার একটা কারন আছে – আর তা হল এক মর্মান্তিক অবস্থার চিত্র ফুটিয়ে তোলা। রাসুলুল্লাহর সময় বিশ্বাসী আর অবিশ্বাসীদের মাঝে একটা বিষয়ে মিল ছিলঃ আর তা হল তাদের উভয়েই কুরআন দ্বারা অভিভুত হত। অথচ, আমাদের সময়ে অবিশ্বাসীরা দূরে থাক, বিশ্বাসীরা পর্যন্ত কুরআনের এই সন্মোহনী শক্তির উপলব্ধি হারিয়ে বসেছি। এমন কি যেভাবে তখনকার সময়ের অবিশ্বাসীরা হত; সেভাবেও তারা কুরআন দ্বারা বিমোহিত, আচ্ছন্ন কিংবা অভিভুত হয়না; আর নিঃসন্দেহে এটা মর্মান্তিক। কুরআনের এই প্রভাবটাই বর্তমানে বিলুপ্তপ্রায়। আর, এই প্রভাব হারিয়ে যাওয়ার কারনেই আমরা এখন কুরআনের বিভিন্ন বিধান নিয়ে এমন প্রশ্ন করি যা হাস্যকর! অর্থাৎ কুরআনের প্রভাব আমাদের উপর এতোটাই ম্রিয়মান।
আরেকটি উদাহরণ দেই। ধরুন, আমার আর আপনার মুসা আলায়হি ওয়া সাল্লামের সময়ে থাকার সৌভাগ্য হল। আর, আমরা তার সাথে ঠিক সেই সময় অবস্থান করছি যখন আল্লাহ্ তাআলা তাকে লাঠি দিয়ে সমুদ্রে আঘাত করতে বললেন। এরপর কি, আপনি মুসা আলায়হি ওয়া সাল্লামকে আর প্রশ্ন করবেন? আপনি কি সন্দেহ পোষণ করবেন? আপনার কি বিশ্বাসে ঘাটতি হবে? অবশ্যই না। কেননা, এটা অবিস্মরণীয় অভিজ্ঞতা।
মুসলিম হিসেবে আমাদের বিশ্বাস, মুহাম্মাদ সাল্লাল্লাহু আলায়হি ওয়া সাল্লামের উম্মাত হিসেবে আমাদের বিশ্বাস- আল্লাহ্ তাআলা তাকে সর্বশেষ, চূড়ান্ত আর অলৌকিক মু’জিজার মধ্যে সবচেয়ে শক্তিশালী মু’জিজা দান করেছেন। আর সেটা কি? আল-কুর’আন। আমরা কুরআনকে ধর্মীয় গ্রন্থ , পথপ্রদর্শনকারী কিংবা জ্ঞানময় কিতাব হিসেবে জানি। কিন্তু, আমরা যদি একে আল্লাহর দেয়া অলৌকিক মু’জিজা হিসেবে উপলব্ধি করতে পারতাম, তবে আমাদের ঈমানের স্বাদ হত সম্পূর্ণ ভিন্ন। এই অলৌকিকত্ব বুঝার আগের ঈমান আর বুঝার পরের ঈমান সম্পূর্ণ ভিন্ন। আপনি যদি সাহাবাদের কথা চিন্তা করেন, তারা যখন কুরআন শুনত তারা দু’টি জিনিস একসাথে পেতেনঃ উপদেশ-সরলপথের দিশা আর সেই সাথে আল্লাহর মু’জিজা। আর আজ যখন আমরা কুরআন শুনি তখন আমরা বড়জোর কি শুনতে পাই? কেবলই, সতর্কতা। কি হারাচ্ছি? অলৌকিকত্ব!
পর্ব ৩
লেখককে ফলো করুন
|
© 2014 by Ask Islam Bangla.