এরেঞ্জ মেরেজ নাকি লাভ মেরেজ
যারা প্রেম করে বিয়ে করে তারা ইনিয়ে বিনিয়ে বলে যে এরেঞ্জ মেরেজের থেকে লাভ মেরেজ ভাল ।এটা প্রমাণের জন্য তারা কিছু খোঁড়া যুক্তি দেয়। যুক্তিগুলা সহজেই খন্ডন করা যায়। তবে আমি এই লেখায় সেটা করব না , আমি এরেঞ্জ মেরেজ ও লাভ মেরেজ নিয়ে কয়েকটা কথা লিখব ।
বিপরীত লিঙ্গের সাথে সম্পর্ক হল এক ধরনের বায়োকেমিক্যাল রিঅ্যাকশন, অনেক সাইকোলজিক্যাল ফ্যাক্টরও এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বায়োকেমিক্যাল ও সাইকোলজিক্যাল কন্ডিশন যত ভাল থাকবে সম্পর্কও তত ভাল হবে ।
বায়োকেমিক্যাল রিঅ্যাকশন ও সাইকোলজিক্যাল ফ্যাক্টরের উপর ভিত্তি করে বিপরীত লিঙ্গের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টির প্রকিয়াকে আমরা দুইটা স্টেজে ভাগ করতে পারি---
১) ডেভলপমেন্ট স্টেজ (Developement Stage)
২) সেপিং স্টেজ (Shaping Stage)
ডেভলপমেন্ট স্টেজে নারী-পুরুষের সম্পর্কের মূল ভিত্তি স্থাপিত হয় এবং সেপিং স্টেজে সম্পর্কটাকে কিরকম আকার দেয়া হবে সেটা দেখা হয়। ডেভলপমেন্ট স্টেজের উপর সেপিং স্টেজ নির্ভর করে। যদি ডেভলপমেন্ট স্টেজ ভাল হয় তাহলে এর পরের স্টেজ ভাল হবে। কারণ ডেভলপমেন্ট স্টেজ নারী-পুরুষের সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করে। ভিত্তি যত শক্তিশালী হবে সম্পর্কও তত ভাল হবে।
যারা বিয়ের আগে প্রেম করে তারা মূলত ধরা খায় ডেভলপমেন্ট স্টেজে।কারণ বিয়ের আগের প্রেমের সম্পর্কে নানারকম বাধার সৃষ্টি হয়। প্রেমিক-প্রেমিকা বেশিক্ষণ একসাথে থাকতে পারে না, সামনাসামনি বেশিক্ষণ কথা বলতে পারে না, প্রেমিক/প্রেমিকার পরিবারের সাথে ভাল সম্পর্ক থাকে না ইত্যাদি। অর্থাৎ সাইকোলজিক্যাল পজিশন একেবারে উইক থাকে। অপরদিকে বায়োকেমিক্যাল পজিশনও উইক থাকে । যেমন-Stress হরমোন Cortisol এর বৃদ্ধি ।
সাইকোলজিক্যাল ও বায়োলজিক্যাল পজিশন দুর্বল থাকায় স্বাভাবিকভাবেই তাদের ডেভলপমেন্ট স্টেজ খুব দুর্বল হয় ,আর এর ফলে বিয়ের পরে তাদেরকে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খেতে হয় আর অনেক সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় কিংবা সময়ের সাথে সাথে প্রেম-ভালবাসা আর বৃদ্ধি পায় না।
অপরদিকে এরেঞ্জ মেরেজের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা পুরো উল্টো। এখানে নারী-পুরুষ একসাথে অনেকক্ষণ থাকতে পারে , নারী স্থায়ীভাবে পুরুষের পরিবারের সাথে থাকে , নারী-পুরুষ একে-অপরকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারে ফলে ব্রেন পর্যাপ্ত পরিমাণ তথ্য পায় এনালাইজ করার জন্য। আর হরমোনের নিঃসরণও ব্যালেন্সড থাকে। তাই বায়োকেমিক্যাল পজিশনও দারুণ হয়। আর এই কারণে তাদের ডেভলপমেন্ট স্টেজও খুব পাওয়ারফুল হয়।
প্রেম আর বিয়ে নিয়ে
Scienticfic American Mind এর একটা আর্টিকেল পড়েছিলাম। সেখানে এই বিষয়ে কয়েকটা রিসার্চের কথা তারা বলেছেন।১৯৮২ সালে সাইকোলজিস্ট উষা গুপ্তা ও পুষ্পা সিং লাভ মেরেজে প্রেম কিরূপ নেয় সেটা পরীক্ষা করার জন্য Rubin Love Scale ব্যবহার করেছিলেন। Rubin Love Scale দিয়ে ভালবাসার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। রিসার্চে তারা দেখলেন যে , লাভ মেরেজে ভালবাসা প্রথমে বৃদ্ধি পায় কিন্তু পরবর্তীতে খুব দ্রুত তা কমতে থাকে।আমেরিকায় Rubin Love Scale ইউজ করে ঠিক এইরকম রেজাল্টই পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু এরেঞ্জ মেরেজের ক্ষেত্রে ভালবাসা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং পাঁচ বছরের মধ্যে তা লাভ মেরেজের ভালবাসাকে ছাড়িয়ে যায় ! আর ১০ বছরের মধ্যে ভালবাসা দ্বিগুণ হয়ে যায়।
National Council on Family Relations ১০ পয়েন্টের লাভ স্কেল দিয়ে ৩০ জন এরেঞ্জ মেরেজ করা কাপলকে নিয়ে গবেষণা করে দেখতে পান যে তাদের ভালবাসার পয়েন্ট 3.9 থেকে 8.5 এ বৃদ্ধি পায়। এই বিষয়ে Scienticfic American Mind-কে একজন বাংলাদেশী আমেরিকান প্রবাসীর এরেঞ্জ ম্যারেজের উদাহরণ দিতে দেখে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে কায়সার ও শেলি হক নামের এক কাপলের কথা বলা হয়েছিল যারা কিনা এক নজর দেখেই বিয়ে করেছিলেন। কায়সার Scienticfic American Mind কে তাদের বিয়ে সম্পর্কে বলেছিল--
“We’ve grown to love each other and to get to know each other over time,” [1]
আরো বহু রিসার্চ দিয়ে প্রমাণ করা যায় যে বিয়ের আগে প্রেম, মূলত দাম্পত্য জীবনকে জটিলতার দিকেই ঠেলে দেয়।
আল্লাহ্ তাআলার বিধান না মানলে এইরকমই হয়।
একটা হাদীস দিয়ে লেখাটা শেষ করছি--
" দু'জনের পারস্পারিক ভালবাসার জন্য বিবাহের মত আর কিছু নেই। " [সিলসিলাহ সহীহাহ -৬২৪]
তথ্যসূত্র:-
[1] Scientific American Mind, January/February 2010
বিপরীত লিঙ্গের সাথে সম্পর্ক হল এক ধরনের বায়োকেমিক্যাল রিঅ্যাকশন, অনেক সাইকোলজিক্যাল ফ্যাক্টরও এতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বায়োকেমিক্যাল ও সাইকোলজিক্যাল কন্ডিশন যত ভাল থাকবে সম্পর্কও তত ভাল হবে ।
বায়োকেমিক্যাল রিঅ্যাকশন ও সাইকোলজিক্যাল ফ্যাক্টরের উপর ভিত্তি করে বিপরীত লিঙ্গের সাথে সম্পর্ক সৃষ্টির প্রকিয়াকে আমরা দুইটা স্টেজে ভাগ করতে পারি---
১) ডেভলপমেন্ট স্টেজ (Developement Stage)
২) সেপিং স্টেজ (Shaping Stage)
ডেভলপমেন্ট স্টেজে নারী-পুরুষের সম্পর্কের মূল ভিত্তি স্থাপিত হয় এবং সেপিং স্টেজে সম্পর্কটাকে কিরকম আকার দেয়া হবে সেটা দেখা হয়। ডেভলপমেন্ট স্টেজের উপর সেপিং স্টেজ নির্ভর করে। যদি ডেভলপমেন্ট স্টেজ ভাল হয় তাহলে এর পরের স্টেজ ভাল হবে। কারণ ডেভলপমেন্ট স্টেজ নারী-পুরুষের সম্পর্কের ভিত্তি স্থাপন করে। ভিত্তি যত শক্তিশালী হবে সম্পর্কও তত ভাল হবে।
যারা বিয়ের আগে প্রেম করে তারা মূলত ধরা খায় ডেভলপমেন্ট স্টেজে।কারণ বিয়ের আগের প্রেমের সম্পর্কে নানারকম বাধার সৃষ্টি হয়। প্রেমিক-প্রেমিকা বেশিক্ষণ একসাথে থাকতে পারে না, সামনাসামনি বেশিক্ষণ কথা বলতে পারে না, প্রেমিক/প্রেমিকার পরিবারের সাথে ভাল সম্পর্ক থাকে না ইত্যাদি। অর্থাৎ সাইকোলজিক্যাল পজিশন একেবারে উইক থাকে। অপরদিকে বায়োকেমিক্যাল পজিশনও উইক থাকে । যেমন-Stress হরমোন Cortisol এর বৃদ্ধি ।
সাইকোলজিক্যাল ও বায়োলজিক্যাল পজিশন দুর্বল থাকায় স্বাভাবিকভাবেই তাদের ডেভলপমেন্ট স্টেজ খুব দুর্বল হয় ,আর এর ফলে বিয়ের পরে তাদেরকে সম্পর্ক টিকিয়ে রাখতে হিমশিম খেতে হয় আর অনেক সম্পর্ক নষ্ট হয়ে যায় কিংবা সময়ের সাথে সাথে প্রেম-ভালবাসা আর বৃদ্ধি পায় না।
অপরদিকে এরেঞ্জ মেরেজের ক্ষেত্রে ব্যাপারটা পুরো উল্টো। এখানে নারী-পুরুষ একসাথে অনেকক্ষণ থাকতে পারে , নারী স্থায়ীভাবে পুরুষের পরিবারের সাথে থাকে , নারী-পুরুষ একে-অপরকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করতে পারে ফলে ব্রেন পর্যাপ্ত পরিমাণ তথ্য পায় এনালাইজ করার জন্য। আর হরমোনের নিঃসরণও ব্যালেন্সড থাকে। তাই বায়োকেমিক্যাল পজিশনও দারুণ হয়। আর এই কারণে তাদের ডেভলপমেন্ট স্টেজও খুব পাওয়ারফুল হয়।
প্রেম আর বিয়ে নিয়ে
Scienticfic American Mind এর একটা আর্টিকেল পড়েছিলাম। সেখানে এই বিষয়ে কয়েকটা রিসার্চের কথা তারা বলেছেন।১৯৮২ সালে সাইকোলজিস্ট উষা গুপ্তা ও পুষ্পা সিং লাভ মেরেজে প্রেম কিরূপ নেয় সেটা পরীক্ষা করার জন্য Rubin Love Scale ব্যবহার করেছিলেন। Rubin Love Scale দিয়ে ভালবাসার পরিমাণ নির্ধারণ করা হয়। রিসার্চে তারা দেখলেন যে , লাভ মেরেজে ভালবাসা প্রথমে বৃদ্ধি পায় কিন্তু পরবর্তীতে খুব দ্রুত তা কমতে থাকে।আমেরিকায় Rubin Love Scale ইউজ করে ঠিক এইরকম রেজাল্টই পাওয়া গিয়েছিল। কিন্তু এরেঞ্জ মেরেজের ক্ষেত্রে ভালবাসা ধীরে ধীরে বৃদ্ধি পায় এবং পাঁচ বছরের মধ্যে তা লাভ মেরেজের ভালবাসাকে ছাড়িয়ে যায় ! আর ১০ বছরের মধ্যে ভালবাসা দ্বিগুণ হয়ে যায়।
National Council on Family Relations ১০ পয়েন্টের লাভ স্কেল দিয়ে ৩০ জন এরেঞ্জ মেরেজ করা কাপলকে নিয়ে গবেষণা করে দেখতে পান যে তাদের ভালবাসার পয়েন্ট 3.9 থেকে 8.5 এ বৃদ্ধি পায়। এই বিষয়ে Scienticfic American Mind-কে একজন বাংলাদেশী আমেরিকান প্রবাসীর এরেঞ্জ ম্যারেজের উদাহরণ দিতে দেখে আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। সেখানে কায়সার ও শেলি হক নামের এক কাপলের কথা বলা হয়েছিল যারা কিনা এক নজর দেখেই বিয়ে করেছিলেন। কায়সার Scienticfic American Mind কে তাদের বিয়ে সম্পর্কে বলেছিল--
“We’ve grown to love each other and to get to know each other over time,” [1]
আরো বহু রিসার্চ দিয়ে প্রমাণ করা যায় যে বিয়ের আগে প্রেম, মূলত দাম্পত্য জীবনকে জটিলতার দিকেই ঠেলে দেয়।
আল্লাহ্ তাআলার বিধান না মানলে এইরকমই হয়।
একটা হাদীস দিয়ে লেখাটা শেষ করছি--
" দু'জনের পারস্পারিক ভালবাসার জন্য বিবাহের মত আর কিছু নেই। " [সিলসিলাহ সহীহাহ -৬২৪]
তথ্যসূত্র:-
[1] Scientific American Mind, January/February 2010
লেখককে ফলো করুন
|
© 2014 by Ask Islam Bangla.