পথ ও পথিক
বাইবেল এর ওল্ড টেস্টামেন্টকে ধরা হয় ইহুদীদের প্রধান ধর্মগ্রন্থ । হযরত মুসা (আ) এবং তাঁর পর আগমনকারী নবীগণ ও তাদের শিক্ষা দীক্ষা সম্পর্কে ওল্ড টেস্টামেন্টে বিস্তারিত বলা আছে, এমনটাই মনে করা হয় । কিন্তু যদি ইতিহাস পর্যালোচনা করে দেখা হয় খৃষ্টপূর্ব ষষ্ঠ শতাব্দীতে বায়তুল মাকদিসের ধ্বংসের সময় তা বিলুপ্ত হয়ে যায় ।
যবুর (psalms) হযরত দাউদ (আ) এর ইন্তেকালের পাঁচ শ বছর পরে লেখা হয় এবং তার মধ্যে হযরত দাউদ (আ) ছাড়াও প্রায় একশ কবিদের কবিতা সন্নিবেশিত করা হয় । কোন সুত্র ধরে যবুর প্রণয়নকারীদের কাছে এই সকল তথ্য পৌঁছে সেটা এখনো অজ্ঞাত । হযরত সুলাইমান (আ) মৃত্যুবরণ করেন হযরত মুসা (আ) এর ৯৩৩ বছর আগে এবং হযরত সুলাইমান (আ) এর প্রবাদগুলো লিখিত হয় মুসা (আ) এর আড়াই’শ বছর আগে ।
মোট কথা বাইবেলের কোন পুস্তকের সনদই ঐসব নবী পর্যন্ত পৌঁছে না যাদের প্রতি তা আরোপ করা হয় ।
হযরত ঈসা (আ) এর সিরাত ও শিক্ষার অবস্থাও প্রায় অভিন্ন । আল্লাহ্র পক্ষ থেকে যে মূল ইঞ্জিল অহির মাধ্যমে নাজিল হয়েছিল তা হযরত ঈসা (আ) লোকদেরকে মৌখিক শুনিয়ে দিতেন । তাঁর শিষ্যগণও সেসব অন্যদের কাছে মুখে মুখে এমনভাবে পৌঁছে দিতেন যে, নবীর অবস্থা ও ইঞ্জিলের কথাগুলো একত্রিত হয়ে যেত । সে সবের কোন কিছুই ঈসা (আ) এর জীবদ্দশা বা তাঁর পরে লিখিত হয় নি ।
লেখার কাজ ওই খৃষ্টানগণ করেন যাদের ভাষা ছিল গ্রিক । অথচ ঈসা (আ) এর ভাষা ছিল সুরিয়ানি(Syriac) অথবা আরামি(Aramaic) । বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্ট এর কোন গ্রন্থই ৭০ খৃষ্টাব্দের আগে লিখিত হয় নি । তারপর তাদের লিখিত গ্রন্থগুলোও সংরক্ষিত নেই । এভাবে অনেক বার অনেক সংকলনের পর শেষমেশ সত্তরটি ইঞ্জিল গ্রন্থ লেখা হয় কিন্তু তার মধ্যে মাত্র চারটিকে খৃষ্টধর্মীয় নেতাগণ অনুমোদন দিয়েছেন এবং বাকিগুলোকে নাকচ করেছেন । অনুমোদন কিংবা নাকচ কোনটির সুস্পষ্ট কারন এখনো জানা যায় নি ।
এই হল পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের অনুসরনীয় ধর্মের অবস্থা । যার কোন ঐশী ভিত্তি নেই । তবে সেই ধর্মগুলো বা কিতাবগুলো কাদের উপর নাজিল হয়েছিল সেটার ভিত্তি আছে । কুরআনে এই বিষয়ে বলে দেওয়া আছে বলেই কেবল এটা সত্য হিসেবে অনুমোদিত । কুরআন অন্যান্য ধর্ম কিংবা নবীদের সম্বন্ধে যতটুকু বলেছে এবং রাসুল (স) এর কাছ থেকে যতটুকু জেনেছি সেটা ব্যাতিত কোন তথ্য সংশ্লিষ্ট ধর্মগ্রন্থ(বাইবেল) থেকে জানলেও সেটা সঠিক হবার সম্ভাবনা খুবই কম ।
বাইবেল এর ওল্ড কিংবা নিউ টেস্টামেন্ট এর বিষয়াদি ইহুদি খৃষ্টানদের কাছেও অজানা নেই । ইহুদীদের চূড়ান্ত অহঙ্কার হল তাদের কাছে সবচেয়ে বেশি নবী-রাসুল ও ধর্মগ্রন্থ প্রেরণ করা হয়েছে । অথচ এমনটি করা হয়েছে কেবল তাদেরকে হেদায়েত করার জন্য । তারা অনেক নবী রাসুলকে হত্যা করেছে যেটা আর কোন জাতির ক্ষেত্রে ঘটে নি । তাদের সবচেয়ে বড় ক্ষোভ, শেষ নবী কেন তাদের গোত্র থেকে এল না ! একারনেই তারা ইসলামের পিছনে শকুনের মত লেগে আছে । ইহুদীদের পথ ধরে হেদায়েত থেকে ডেভিয়েট হয়েছে খৃষ্টানরাও ।
তাহলে এইবার নির্দ্বিধায় আমরা মুসলিমরা বলতে পারি, আমরা অন্য যেকোনো জাতি থেকে মর্যাদাবান । কেননা আমাদের উপর যেই কিতাব নাজিল হয়েছে সেটা এবং আমাদের নবীর আদর্শ পৃথিবী ধ্বংসের আগ পর্যন্ত থাকবে । কিন্তু চিন্তার বিষয় হল আমরা মুসলিমদের মধ্যে কয়জন সেই কিতাব এবং নবীর আদর্শের উপর থেকে জীবন শেষ করতে পারব ! কুরআন বা ইসলাম কোনটাই জান্নাতে যাবার জন্য আসে নি । এগুলো হল অপারেটর, এসেছে মানবজাতিকে জান্নাতের দিকে অপারেট করতে ।
ইহুদি খৃষ্টানদের কৃতকর্মের ফল স্বরূপ আল্লাহ্ প্রথমে তাদের কাছ থেকে নিজেদের ধর্মীয় জ্ঞান সংরক্ষণের উপায় কেড়ে নেন এবং একসময় ধর্মগ্রন্থের সাথে তাদের আত্মিক অবস্থানকে দূরে সরিয়ে দেন । কার্যতই তাদেরকে ‘পথভ্রষ্ট’ বলাটা হয়ে যায় যৌক্তিক ।
আমাদের মুসলিমদের অবস্থা যদি সেই একই রাস্তা ধরে চিন্তা করতে থাকি তাহলে বিষয়টা কি দাঁড়ায় ? বলা বাহুল্য, আমাদের সাথে ইহুদি খৃষ্টানদের মিল এসে যাচ্ছে ধীরে ধীরে । ইহুদি নাসারাগণ তাদের ধর্মীয় বিধানকে নস্যাৎ করার জন্য প্রথমে একটি পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল । অজ্ঞাতসারে আমরাও সেই একই কাজ করছি । আমরা আমাদের ধর্মীয় বিধানকে শিথিল করার চেষ্টা করছি ‘সমাজ-সংস্কৃতি’ নামক পরিবেশ দিয়ে ।
কেবল একটা জিনিসই ব্যাবধান, কুরআনকে সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহ্ নিজে নিয়ে নিয়েছেন বলে ইসলাম এখনো অবিকৃত আছে । তাওরাত, যবুর ও ইঞ্জিল হয়ে গেছে বিকৃত ।
নিজেদের ধর্ম ও নৈতিকতাকে ছাড়িয়ে পথভ্রষ্ট জাতিরা সমৃদ্ধ করেছে নিজস্ব মিডিয়া এবং তাতে বিন্যস্ত করছে চরিত্র ধ্বংসের সকল উপাদান । এই রেশ বিশ্ব থেকে দেশ, দেশ থেকে সম্প্রদায়, সম্প্রদায় থেকে পরিবার এই পদ্ধতিতে আইসোলেট হয়ে নেমে এসেছে ব্যাক্তিসত্তায় । সামান্য একটি কার্টুন থেকে শুরু করে ক্রিকেট খেলার কমেন্ট্রি বিনোদনের সব জায়গাতেই ছড়িয়ে আছে মুসলিমবধ এর ফর্মুলা । দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটার হাশিম আমলা শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে একটি ক্যাচ ধরার সাথে সাথে কমেন্টেটর চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে ‘ the terrorist has taken a catch !’
হলিউডে একটি মুভি বানানো হল নাম ‘ডিক্টেটর’ । একজন দাড়িওয়ালা লোকের মাঝে যাবতীয় সকল খারাপ গুণের বিন্যাস করিয়ে দেখান হল এই লোকটিই হল ডিক্টেটর বা স্বৈরাচারী । এর ফলাফল একেবারে হাতে নাতে । দাড়িওয়ালা লোক দেখলেই অনেকে ঠাট্টা করে বলে ‘তোমাকে দেখতে ডিক্টেটর এর মত লাগছে ।’
বলিউডের ব্লকবাস্টার মুভিগুলো শুরু হয় এভাবে- প্রথমে দেখান হয় একদল সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে একটি রাজ্যে মাফিয়ার বান বইয়ে দিচ্ছে । তারপর একে একে তাদের নাম খুঁজে বের করা হয় । দেখা যায় সবগুলোই উচ্চমানের মুসলিম নাম । ‘Game of Thrones’ নামে একটি ধারাবাহিক এপিসোড চলছে অনেকদিন ধরে । নগ্নতার শেষ সীমানায় গিয়ে জাহেলিয়াতের সাথে একটি সামঞ্জস্য তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে । বাছাই করা কিছু ব্যাক্তিকে নিকৃষ্ট চরিত্র দিয়ে তাদের উপর আরোপ করা হচ্ছে মুসলিম নাম । এতে করে অমুসলিমরা নিচ্ছে মুসলিমদের সম্পর্কে ভুল ধারণা । আর মুসলিম পিতামাতাও কোন এক সিনেমায় ভিলেনের চরিত্রে একটি সুন্দর নাম দেখে সেই ইসলামিক নাম আর ছেলের জন্য বাছাই করেন না । উক্ত সিনেমার হিরোর নামে নিজ সন্তানের নাম রাখেন ‘ বুলেট’ ! বাংলা নাটক বা সিনেমায় ‘মফিজ’ নামের একটি কমেডি চরিত্র আনা হয় এবং তাকে দিয়ে করানো হয় উদ্ভট উদ্ভট কাজ । এইবার যেই ছেলেটির নাম মফিজ তাকে নিয়ে বন্ধু মহলে চলতে থাকে ঠাট্টার জোয়ার ।
কয়েক যুগ আগে এই বিষয়গুলো ছিল কল্পনার বাইরে, আজ এগুলো ক্রুড বাস্তবতা, আর কিছুদিন পর এগুলোই হয়ে যাবে যুগ পরিবর্তনের নিয়ামক ।
কয়েক চাল জুয়া খেলে কেউ যখন জুয়াড়িদের বাহবা লাভ করে তখন অন্য একজন এসে যখন তাকে জুয়া খেলার জন্য ধিক্কার জানাবে তখন সে সেটা গ্রহণ করবেই বা কোন যুক্তিতে ! সে তো বাহবা পেয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে জুয়া খেলা শুরু করেছে । একইভাবে ছোটবেলা থেকে বাবা মায়ের অকৃত্রিম ভালোবাসা আর তত্ত্বাবধানে যে শিশুটি গান বা নাচ শিখেছে সে বড় হয়ে যখন জানবে নাচলে জাহান্নামে যেতে হবে, সে কোন গরজে এই কথা মেনে নেবে !
আল্লাহ্ কুরআনকে পাঠিয়েছেন অপরিমেয় শক্তি দিয়ে যার মধ্যে রয়েছে মুসলিমদেরকে একত্রিত করার মহৌষধ । আর সেই একত্রিতকরণই হতে পারত পৃথিবী শাসনের গ্র্যান্ড ডিজাইন । কিন্তু সেটা হচ্ছে না কেবলমাত্র আগে থেকেই জীবন ও সমাজের একটি রেপ্লিকা তৈরি করে নেওয়ার প্রবণতার কারনে ।
সঠিক গাইডলাইনের অভাবে ইহুদী নাসারাগণ হয়ে গেছে পথভ্রষ্ট । আর সেই গাইড থাকার পরও আমরা হয়ে যাচ্ছি পথভ্রষ্ট ।
আমাদের অনার্স লেভেলের পরীক্ষাগুলো যদি এমন হত যে-সেখানে কোন সিলেবাস থাকবে না, অতীতের প্রশ্নের কোন নমুনা থাকবে না, স্যাররা প্রশ্ন সম্বন্ধে কোন ধারণা দেবেন না এমনকি কোথা থেকে প্রশ্ন করা হবে সেটাও বলবেন না তাহলে কারো পক্ষেই পরীক্ষায় পাশ করা সম্ভব হত না । হাজারে দুই একজন হয়তো নিজেদের এক্সট্রা অর্ডিনারি যোগ্যতা বলে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হতেন কিন্তু অধিকাংশ ছাত্রই ফেল করত ।
ঠিক একই দৃষ্টান্ত আল্লাহ্ প্রতিনিয়ত আমাদেরকে দিয়ে থাকেন । আল্লাহ্ যদি কোন বিধান নাজিল না করে আমাদের উপর ভালোমন্দ বিচারের ভার অর্পণ করে দিতেন তাহলে দুই একজন ছাড়া সকলেই গোমরাহিতে ডুবে মরতাম । কিন্তু আল্লাহ্ সেটা করেন নি । তিনি একটি সিলেবাস দিয়ে দিয়েছেন যেটার পুরাতন নতুন বলে কোন সংস্করণ নেই । একটাই সংস্করণ । পরীক্ষার নিয়ম সকলের জন্য এক, এমনকি পরীক্ষার পদ্ধতিও ‘ওপেন বুক এক্সাম’ । ছাত্রদের কেবল একটাই কাজ-সময়ের দিকে খেয়াল রেখে লিখে যাওয়া । একজন অপর জনের কাছ থেকে দেখে লেখারও সুযোগ আছে, কোন এক্সফেলের ভয় নেই । এত কিছুর পরও যেই ছাত্রটি পাশ করতে ব্যার্থ হল তার চেয়ে দুর্ভাগা আর কে হতে পারে !
আমার শরীরটা এবং যেই মস্তিষ্ক দিয়ে চিন্তা করি সেটার সকল উপাদান, প্রতিটি পরমাণু আল্লাহ্র কথাকেই সত্য বলে মেনে তার হুকুম পালনে রত । কিন্তু আল্লাহ্র দেওয়া সেই জিনিসকেও আমি আল্লাহ্র দেওয়া হুকুমের বিরুদ্ধে চালিয়ে দেই । এর চেয়ে নিকৃষ্ট বিদ্রোহীতা আর কি থাকতে পারে !
আল্লাহ্ ইচ্ছে করলে আমাদের শরীরের উপর থেকে মনের আধিপত্য কেড়ে নিতে পারতেন । এতে করে আমি যেটা চিন্তা করতাম সেটা কোনদিনও কাজে পরিণত হত না । কিন্তু আল্লাহ্ সেটাও করেন নি । কারন পরীক্ষার প্রশ্ন দিয়ে কোন নির্দিষ্ট উত্তর লেখার জন্য ছাত্রের উপর চাপ সৃষ্টি করা পরীক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের পরিপন্থী । আমাদেরকে আল্লাহ্ একেবারে মুক্ত করে দিয়েছেন যাতে করে আমরা পরীক্ষার ফল লাভের পর খাতা রিভিউ করার সাহস না পাই ।
রাস্তা পথিককেই ঠিক করে নিতে হয় । বিকৃত খৃষ্ট ধর্মে বলা হয়েছে ‘কেবল দৈহিক আকাঙ্ক্ষা দমন করেই এবং ইন্দ্রিয় নিগ্রহের মাধ্যমেই ব্যাক্তি পরিপূর্ণতা অর্জনে সক্ষম ।’ হিন্দুধর্মে বিধান হল ‘নিচুস্তর থেকে ক্রমাগত পুনর্জন্মের ধারাবাহিক আবর্তনের মধ্য দিয়ে উচ্চতর পর্যায়ে উন্নিত হয়েই ব্যাক্তি লাভ করে ব্যাক্তিগত উৎকর্ষ এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে মোক্ষ ।’ বৌদ্ধ ধর্ম মতে ‘ব্যাক্তিসত্তা চূর্ণ বিচূর্ণ করে সমগ্র বিশ্বের সাথে সম্মিলিত হবার আকুতি হল নির্বাণ লাভের মাধ্যম ।’
ইসলাম এই সকল মতাদর্শ থেকে আলাদা । পৃথিবীতে যত ধর্ম আছে তার মধ্যে একমাত্র ইসলামই বলে ‘ পার্থিব জীবন ব্যাবস্থার মধ্য দিয়েই ব্যাক্তিগত উৎকর্ষ লাভ করা সম্ভব ।’ ইসলাম তার অনুসারীদেরকে একটি সীমার মাঝে থেকেই অসীম হবার সুযোগ করে দেয় ।
লিওপোল্ড উইস অষ্ট্রিয়ার একটি ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । পাশ্চাত্যের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে লালিত হয়েও ইসলামের মৌলিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তিনি ১৯২৬ সালে হন মুহাম্মদ আসাদ । তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় ‘ আপনাকে ইসলামের কোন ব্যাপারটা সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছে ?’
উত্তরে তিনি বলেন,‘ আমি এখনো জানি না ইসলামের কোন বিষয়টা আমার কাছে সবচেয়ে বেশি আবেদনপূর্ণ ছিল । আমার মনে হয়েছে ইসলাম এক পরিপূর্ণ স্থাপত্য শিল্পের মত । এর এক অংশ অন্য অংশের সাথে পারস্পারিক সহযোগিতার সুত্রে এমন দৃঢ়ভাবে সুবিন্যস্ত যে, এর কোন একটি প্রয়োজনতিরিক্ত নয় আবার কোনটিতে স্বল্পতাও নেই ।’
আমরা বেশিরভাগ মুসলিমই ধর্মগ্রন্থ থেকে ধর্ম না শিখে আগে অন্যত্র জ্ঞান আহরণ করে ধর্মগ্রন্থের দিকে যাই । আমরা মনে করি এখন যদি নিজে নিজে ধর্মগ্রন্থ পাঠ করতে যাই তাহলে ভুল বুঝে যেতে পারি, তাই আগে ধর্ম বোঝার মত যোগ্য হই, তারপর ধর্মগ্রন্থ পাঠ করব । অনেকটা ফল পাবার উদ্দেশ্যে গাছের পরিচর্যা না করে ফল পেলে তারপর পরিচর্যা করার চিন্তা ভাবনার অনুরূপ । এই ক্ষেত্রে যেই সমস্যাটা সৃষ্টি হয় সেটা হল ইসলামের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর বদলে নিজের জীবন ও সমাজের সাথে ইসলামকে খাপ খাওয়ানো ।
কাজেই জীবনের ভ্রুনাবস্থায় যদি একটি মানুষ ইসলাম বুঝতে শুরু না করে তাহলে পদে পদে তাকে অপদস্থ হতে হয় । জীবনের অর্ধেকটা সময় সমাজ বুঝতে বুঝতে এক পর্যায়ে অবস্থাটা এমন হয়ে দাঁড়ায় যে, একটি ছেলে যখন বলে আমি কোন মেয়ে টিউশনি করব না তখন সেটাও মেনে নিতে কষ্ট হয় । কেননা ইসলামকে ক্রস করে আগেই মাথায় ঢুকে গেছে- নারী পুরুষের সমান অধিকার ।
যবুর (psalms) হযরত দাউদ (আ) এর ইন্তেকালের পাঁচ শ বছর পরে লেখা হয় এবং তার মধ্যে হযরত দাউদ (আ) ছাড়াও প্রায় একশ কবিদের কবিতা সন্নিবেশিত করা হয় । কোন সুত্র ধরে যবুর প্রণয়নকারীদের কাছে এই সকল তথ্য পৌঁছে সেটা এখনো অজ্ঞাত । হযরত সুলাইমান (আ) মৃত্যুবরণ করেন হযরত মুসা (আ) এর ৯৩৩ বছর আগে এবং হযরত সুলাইমান (আ) এর প্রবাদগুলো লিখিত হয় মুসা (আ) এর আড়াই’শ বছর আগে ।
মোট কথা বাইবেলের কোন পুস্তকের সনদই ঐসব নবী পর্যন্ত পৌঁছে না যাদের প্রতি তা আরোপ করা হয় ।
হযরত ঈসা (আ) এর সিরাত ও শিক্ষার অবস্থাও প্রায় অভিন্ন । আল্লাহ্র পক্ষ থেকে যে মূল ইঞ্জিল অহির মাধ্যমে নাজিল হয়েছিল তা হযরত ঈসা (আ) লোকদেরকে মৌখিক শুনিয়ে দিতেন । তাঁর শিষ্যগণও সেসব অন্যদের কাছে মুখে মুখে এমনভাবে পৌঁছে দিতেন যে, নবীর অবস্থা ও ইঞ্জিলের কথাগুলো একত্রিত হয়ে যেত । সে সবের কোন কিছুই ঈসা (আ) এর জীবদ্দশা বা তাঁর পরে লিখিত হয় নি ।
লেখার কাজ ওই খৃষ্টানগণ করেন যাদের ভাষা ছিল গ্রিক । অথচ ঈসা (আ) এর ভাষা ছিল সুরিয়ানি(Syriac) অথবা আরামি(Aramaic) । বাইবেলের নিউ টেস্টামেন্ট এর কোন গ্রন্থই ৭০ খৃষ্টাব্দের আগে লিখিত হয় নি । তারপর তাদের লিখিত গ্রন্থগুলোও সংরক্ষিত নেই । এভাবে অনেক বার অনেক সংকলনের পর শেষমেশ সত্তরটি ইঞ্জিল গ্রন্থ লেখা হয় কিন্তু তার মধ্যে মাত্র চারটিকে খৃষ্টধর্মীয় নেতাগণ অনুমোদন দিয়েছেন এবং বাকিগুলোকে নাকচ করেছেন । অনুমোদন কিংবা নাকচ কোনটির সুস্পষ্ট কারন এখনো জানা যায় নি ।
এই হল পৃথিবীর অধিকাংশ মানুষের অনুসরনীয় ধর্মের অবস্থা । যার কোন ঐশী ভিত্তি নেই । তবে সেই ধর্মগুলো বা কিতাবগুলো কাদের উপর নাজিল হয়েছিল সেটার ভিত্তি আছে । কুরআনে এই বিষয়ে বলে দেওয়া আছে বলেই কেবল এটা সত্য হিসেবে অনুমোদিত । কুরআন অন্যান্য ধর্ম কিংবা নবীদের সম্বন্ধে যতটুকু বলেছে এবং রাসুল (স) এর কাছ থেকে যতটুকু জেনেছি সেটা ব্যাতিত কোন তথ্য সংশ্লিষ্ট ধর্মগ্রন্থ(বাইবেল) থেকে জানলেও সেটা সঠিক হবার সম্ভাবনা খুবই কম ।
বাইবেল এর ওল্ড কিংবা নিউ টেস্টামেন্ট এর বিষয়াদি ইহুদি খৃষ্টানদের কাছেও অজানা নেই । ইহুদীদের চূড়ান্ত অহঙ্কার হল তাদের কাছে সবচেয়ে বেশি নবী-রাসুল ও ধর্মগ্রন্থ প্রেরণ করা হয়েছে । অথচ এমনটি করা হয়েছে কেবল তাদেরকে হেদায়েত করার জন্য । তারা অনেক নবী রাসুলকে হত্যা করেছে যেটা আর কোন জাতির ক্ষেত্রে ঘটে নি । তাদের সবচেয়ে বড় ক্ষোভ, শেষ নবী কেন তাদের গোত্র থেকে এল না ! একারনেই তারা ইসলামের পিছনে শকুনের মত লেগে আছে । ইহুদীদের পথ ধরে হেদায়েত থেকে ডেভিয়েট হয়েছে খৃষ্টানরাও ।
তাহলে এইবার নির্দ্বিধায় আমরা মুসলিমরা বলতে পারি, আমরা অন্য যেকোনো জাতি থেকে মর্যাদাবান । কেননা আমাদের উপর যেই কিতাব নাজিল হয়েছে সেটা এবং আমাদের নবীর আদর্শ পৃথিবী ধ্বংসের আগ পর্যন্ত থাকবে । কিন্তু চিন্তার বিষয় হল আমরা মুসলিমদের মধ্যে কয়জন সেই কিতাব এবং নবীর আদর্শের উপর থেকে জীবন শেষ করতে পারব ! কুরআন বা ইসলাম কোনটাই জান্নাতে যাবার জন্য আসে নি । এগুলো হল অপারেটর, এসেছে মানবজাতিকে জান্নাতের দিকে অপারেট করতে ।
ইহুদি খৃষ্টানদের কৃতকর্মের ফল স্বরূপ আল্লাহ্ প্রথমে তাদের কাছ থেকে নিজেদের ধর্মীয় জ্ঞান সংরক্ষণের উপায় কেড়ে নেন এবং একসময় ধর্মগ্রন্থের সাথে তাদের আত্মিক অবস্থানকে দূরে সরিয়ে দেন । কার্যতই তাদেরকে ‘পথভ্রষ্ট’ বলাটা হয়ে যায় যৌক্তিক ।
আমাদের মুসলিমদের অবস্থা যদি সেই একই রাস্তা ধরে চিন্তা করতে থাকি তাহলে বিষয়টা কি দাঁড়ায় ? বলা বাহুল্য, আমাদের সাথে ইহুদি খৃষ্টানদের মিল এসে যাচ্ছে ধীরে ধীরে । ইহুদি নাসারাগণ তাদের ধর্মীয় বিধানকে নস্যাৎ করার জন্য প্রথমে একটি পরিবেশ সৃষ্টি করেছিল । অজ্ঞাতসারে আমরাও সেই একই কাজ করছি । আমরা আমাদের ধর্মীয় বিধানকে শিথিল করার চেষ্টা করছি ‘সমাজ-সংস্কৃতি’ নামক পরিবেশ দিয়ে ।
কেবল একটা জিনিসই ব্যাবধান, কুরআনকে সংরক্ষণের দায়িত্ব আল্লাহ্ নিজে নিয়ে নিয়েছেন বলে ইসলাম এখনো অবিকৃত আছে । তাওরাত, যবুর ও ইঞ্জিল হয়ে গেছে বিকৃত ।
নিজেদের ধর্ম ও নৈতিকতাকে ছাড়িয়ে পথভ্রষ্ট জাতিরা সমৃদ্ধ করেছে নিজস্ব মিডিয়া এবং তাতে বিন্যস্ত করছে চরিত্র ধ্বংসের সকল উপাদান । এই রেশ বিশ্ব থেকে দেশ, দেশ থেকে সম্প্রদায়, সম্প্রদায় থেকে পরিবার এই পদ্ধতিতে আইসোলেট হয়ে নেমে এসেছে ব্যাক্তিসত্তায় । সামান্য একটি কার্টুন থেকে শুরু করে ক্রিকেট খেলার কমেন্ট্রি বিনোদনের সব জায়গাতেই ছড়িয়ে আছে মুসলিমবধ এর ফর্মুলা । দক্ষিণ আফ্রিকার ক্রিকেটার হাশিম আমলা শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে একটি ক্যাচ ধরার সাথে সাথে কমেন্টেটর চিৎকার দিয়ে বলে ওঠে ‘ the terrorist has taken a catch !’
হলিউডে একটি মুভি বানানো হল নাম ‘ডিক্টেটর’ । একজন দাড়িওয়ালা লোকের মাঝে যাবতীয় সকল খারাপ গুণের বিন্যাস করিয়ে দেখান হল এই লোকটিই হল ডিক্টেটর বা স্বৈরাচারী । এর ফলাফল একেবারে হাতে নাতে । দাড়িওয়ালা লোক দেখলেই অনেকে ঠাট্টা করে বলে ‘তোমাকে দেখতে ডিক্টেটর এর মত লাগছে ।’
বলিউডের ব্লকবাস্টার মুভিগুলো শুরু হয় এভাবে- প্রথমে দেখান হয় একদল সন্ত্রাসী দীর্ঘদিন ধরে একটি রাজ্যে মাফিয়ার বান বইয়ে দিচ্ছে । তারপর একে একে তাদের নাম খুঁজে বের করা হয় । দেখা যায় সবগুলোই উচ্চমানের মুসলিম নাম । ‘Game of Thrones’ নামে একটি ধারাবাহিক এপিসোড চলছে অনেকদিন ধরে । নগ্নতার শেষ সীমানায় গিয়ে জাহেলিয়াতের সাথে একটি সামঞ্জস্য তৈরির চেষ্টা করা হচ্ছে । বাছাই করা কিছু ব্যাক্তিকে নিকৃষ্ট চরিত্র দিয়ে তাদের উপর আরোপ করা হচ্ছে মুসলিম নাম । এতে করে অমুসলিমরা নিচ্ছে মুসলিমদের সম্পর্কে ভুল ধারণা । আর মুসলিম পিতামাতাও কোন এক সিনেমায় ভিলেনের চরিত্রে একটি সুন্দর নাম দেখে সেই ইসলামিক নাম আর ছেলের জন্য বাছাই করেন না । উক্ত সিনেমার হিরোর নামে নিজ সন্তানের নাম রাখেন ‘ বুলেট’ ! বাংলা নাটক বা সিনেমায় ‘মফিজ’ নামের একটি কমেডি চরিত্র আনা হয় এবং তাকে দিয়ে করানো হয় উদ্ভট উদ্ভট কাজ । এইবার যেই ছেলেটির নাম মফিজ তাকে নিয়ে বন্ধু মহলে চলতে থাকে ঠাট্টার জোয়ার ।
কয়েক যুগ আগে এই বিষয়গুলো ছিল কল্পনার বাইরে, আজ এগুলো ক্রুড বাস্তবতা, আর কিছুদিন পর এগুলোই হয়ে যাবে যুগ পরিবর্তনের নিয়ামক ।
কয়েক চাল জুয়া খেলে কেউ যখন জুয়াড়িদের বাহবা লাভ করে তখন অন্য একজন এসে যখন তাকে জুয়া খেলার জন্য ধিক্কার জানাবে তখন সে সেটা গ্রহণ করবেই বা কোন যুক্তিতে ! সে তো বাহবা পেয়ে দ্বিগুণ উৎসাহে জুয়া খেলা শুরু করেছে । একইভাবে ছোটবেলা থেকে বাবা মায়ের অকৃত্রিম ভালোবাসা আর তত্ত্বাবধানে যে শিশুটি গান বা নাচ শিখেছে সে বড় হয়ে যখন জানবে নাচলে জাহান্নামে যেতে হবে, সে কোন গরজে এই কথা মেনে নেবে !
আল্লাহ্ কুরআনকে পাঠিয়েছেন অপরিমেয় শক্তি দিয়ে যার মধ্যে রয়েছে মুসলিমদেরকে একত্রিত করার মহৌষধ । আর সেই একত্রিতকরণই হতে পারত পৃথিবী শাসনের গ্র্যান্ড ডিজাইন । কিন্তু সেটা হচ্ছে না কেবলমাত্র আগে থেকেই জীবন ও সমাজের একটি রেপ্লিকা তৈরি করে নেওয়ার প্রবণতার কারনে ।
সঠিক গাইডলাইনের অভাবে ইহুদী নাসারাগণ হয়ে গেছে পথভ্রষ্ট । আর সেই গাইড থাকার পরও আমরা হয়ে যাচ্ছি পথভ্রষ্ট ।
আমাদের অনার্স লেভেলের পরীক্ষাগুলো যদি এমন হত যে-সেখানে কোন সিলেবাস থাকবে না, অতীতের প্রশ্নের কোন নমুনা থাকবে না, স্যাররা প্রশ্ন সম্বন্ধে কোন ধারণা দেবেন না এমনকি কোথা থেকে প্রশ্ন করা হবে সেটাও বলবেন না তাহলে কারো পক্ষেই পরীক্ষায় পাশ করা সম্ভব হত না । হাজারে দুই একজন হয়তো নিজেদের এক্সট্রা অর্ডিনারি যোগ্যতা বলে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার হতেন কিন্তু অধিকাংশ ছাত্রই ফেল করত ।
ঠিক একই দৃষ্টান্ত আল্লাহ্ প্রতিনিয়ত আমাদেরকে দিয়ে থাকেন । আল্লাহ্ যদি কোন বিধান নাজিল না করে আমাদের উপর ভালোমন্দ বিচারের ভার অর্পণ করে দিতেন তাহলে দুই একজন ছাড়া সকলেই গোমরাহিতে ডুবে মরতাম । কিন্তু আল্লাহ্ সেটা করেন নি । তিনি একটি সিলেবাস দিয়ে দিয়েছেন যেটার পুরাতন নতুন বলে কোন সংস্করণ নেই । একটাই সংস্করণ । পরীক্ষার নিয়ম সকলের জন্য এক, এমনকি পরীক্ষার পদ্ধতিও ‘ওপেন বুক এক্সাম’ । ছাত্রদের কেবল একটাই কাজ-সময়ের দিকে খেয়াল রেখে লিখে যাওয়া । একজন অপর জনের কাছ থেকে দেখে লেখারও সুযোগ আছে, কোন এক্সফেলের ভয় নেই । এত কিছুর পরও যেই ছাত্রটি পাশ করতে ব্যার্থ হল তার চেয়ে দুর্ভাগা আর কে হতে পারে !
আমার শরীরটা এবং যেই মস্তিষ্ক দিয়ে চিন্তা করি সেটার সকল উপাদান, প্রতিটি পরমাণু আল্লাহ্র কথাকেই সত্য বলে মেনে তার হুকুম পালনে রত । কিন্তু আল্লাহ্র দেওয়া সেই জিনিসকেও আমি আল্লাহ্র দেওয়া হুকুমের বিরুদ্ধে চালিয়ে দেই । এর চেয়ে নিকৃষ্ট বিদ্রোহীতা আর কি থাকতে পারে !
আল্লাহ্ ইচ্ছে করলে আমাদের শরীরের উপর থেকে মনের আধিপত্য কেড়ে নিতে পারতেন । এতে করে আমি যেটা চিন্তা করতাম সেটা কোনদিনও কাজে পরিণত হত না । কিন্তু আল্লাহ্ সেটাও করেন নি । কারন পরীক্ষার প্রশ্ন দিয়ে কোন নির্দিষ্ট উত্তর লেখার জন্য ছাত্রের উপর চাপ সৃষ্টি করা পরীক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশের পরিপন্থী । আমাদেরকে আল্লাহ্ একেবারে মুক্ত করে দিয়েছেন যাতে করে আমরা পরীক্ষার ফল লাভের পর খাতা রিভিউ করার সাহস না পাই ।
রাস্তা পথিককেই ঠিক করে নিতে হয় । বিকৃত খৃষ্ট ধর্মে বলা হয়েছে ‘কেবল দৈহিক আকাঙ্ক্ষা দমন করেই এবং ইন্দ্রিয় নিগ্রহের মাধ্যমেই ব্যাক্তি পরিপূর্ণতা অর্জনে সক্ষম ।’ হিন্দুধর্মে বিধান হল ‘নিচুস্তর থেকে ক্রমাগত পুনর্জন্মের ধারাবাহিক আবর্তনের মধ্য দিয়ে উচ্চতর পর্যায়ে উন্নিত হয়েই ব্যাক্তি লাভ করে ব্যাক্তিগত উৎকর্ষ এবং চূড়ান্ত পর্যায়ে মোক্ষ ।’ বৌদ্ধ ধর্ম মতে ‘ব্যাক্তিসত্তা চূর্ণ বিচূর্ণ করে সমগ্র বিশ্বের সাথে সম্মিলিত হবার আকুতি হল নির্বাণ লাভের মাধ্যম ।’
ইসলাম এই সকল মতাদর্শ থেকে আলাদা । পৃথিবীতে যত ধর্ম আছে তার মধ্যে একমাত্র ইসলামই বলে ‘ পার্থিব জীবন ব্যাবস্থার মধ্য দিয়েই ব্যাক্তিগত উৎকর্ষ লাভ করা সম্ভব ।’ ইসলাম তার অনুসারীদেরকে একটি সীমার মাঝে থেকেই অসীম হবার সুযোগ করে দেয় ।
লিওপোল্ড উইস অষ্ট্রিয়ার একটি ইহুদি পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন । পাশ্চাত্যের সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যে লালিত হয়েও ইসলামের মৌলিক সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে তিনি ১৯২৬ সালে হন মুহাম্মদ আসাদ । তাকে যখন জিজ্ঞেস করা হয় ‘ আপনাকে ইসলামের কোন ব্যাপারটা সবচেয়ে বেশি আকৃষ্ট করেছে ?’
উত্তরে তিনি বলেন,‘ আমি এখনো জানি না ইসলামের কোন বিষয়টা আমার কাছে সবচেয়ে বেশি আবেদনপূর্ণ ছিল । আমার মনে হয়েছে ইসলাম এক পরিপূর্ণ স্থাপত্য শিল্পের মত । এর এক অংশ অন্য অংশের সাথে পারস্পারিক সহযোগিতার সুত্রে এমন দৃঢ়ভাবে সুবিন্যস্ত যে, এর কোন একটি প্রয়োজনতিরিক্ত নয় আবার কোনটিতে স্বল্পতাও নেই ।’
আমরা বেশিরভাগ মুসলিমই ধর্মগ্রন্থ থেকে ধর্ম না শিখে আগে অন্যত্র জ্ঞান আহরণ করে ধর্মগ্রন্থের দিকে যাই । আমরা মনে করি এখন যদি নিজে নিজে ধর্মগ্রন্থ পাঠ করতে যাই তাহলে ভুল বুঝে যেতে পারি, তাই আগে ধর্ম বোঝার মত যোগ্য হই, তারপর ধর্মগ্রন্থ পাঠ করব । অনেকটা ফল পাবার উদ্দেশ্যে গাছের পরিচর্যা না করে ফল পেলে তারপর পরিচর্যা করার চিন্তা ভাবনার অনুরূপ । এই ক্ষেত্রে যেই সমস্যাটা সৃষ্টি হয় সেটা হল ইসলামের সাথে নিজেকে খাপ খাওয়ানোর বদলে নিজের জীবন ও সমাজের সাথে ইসলামকে খাপ খাওয়ানো ।
কাজেই জীবনের ভ্রুনাবস্থায় যদি একটি মানুষ ইসলাম বুঝতে শুরু না করে তাহলে পদে পদে তাকে অপদস্থ হতে হয় । জীবনের অর্ধেকটা সময় সমাজ বুঝতে বুঝতে এক পর্যায়ে অবস্থাটা এমন হয়ে দাঁড়ায় যে, একটি ছেলে যখন বলে আমি কোন মেয়ে টিউশনি করব না তখন সেটাও মেনে নিতে কষ্ট হয় । কেননা ইসলামকে ক্রস করে আগেই মাথায় ঢুকে গেছে- নারী পুরুষের সমান অধিকার ।
লেখককে ফলো করুন
|
© 2014 by Ask Islam Bangla.