ASK ISLAM BANGLA
  • Home
  • রচনাবলী
  • সাধারণ প্রশ্ন-উত্তর
  • ইসলামি সাধারণ জ্ঞান
  • ইসলাম বিরোধী প্রশ্নের জবাব
  • ইসলামের সেই কাহিনীগুলো
  • সাহাবীদের কাহিনী
  • গল্পে গল্পে শিখী
  • ROAD TO PEACE
  • Forum

লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ এর অর্থ ও উহার শর্তসমূহ

সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্য . আমরা তাঁরই নিকট ক্ষমা প্রার্থনা করি এবং তারই নিকট তওবা করি . আমাদেরকে সমস্ত বিপর্যয় ও কুকীর্তি হতে রক্ষা করার জন্য তারই সাহায্য প্রার্থনা করি . আল্লাহ যাকে হিদায়েত দান করেন তার কোন প্রথ্ভ্রষ্টকারী নেই . আর যাকে প্রথ্ভ্রষ্ট করেন তাঁর কোন পথ প্রদর্শনকারী নেই . 
আল্লাহ বলেন : 
يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا اذْكُرُوا اللَّهَ ذِكْرًا كَثِيرًا 41 

মুমিনগণ তোমরা আল্লাহকে অধিক পরিমাণে স্মরণ কর। 

وَسَبِّحُوهُ بُكْرَةً وَأَصِيلًا 42 

এবং সকাল বিকাল আল্লাহর পবিত্রতা বর্ণনা কর। আহযাব ৪১-৪২ / 

এখানে বলে রাখা প্রয়োজন যে ,সব চেয়ে উত্তম যিকর হল (لا إله إلا الله و حده لا شر يك له) অর্থাৎ আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্য মাবুদ নেই , তিনি একক তাঁর কোন শরীক নেই . 

রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়াসাল্লাম বলেনঃ সবচেয়ে উত্তম দো'যা আরাফাত দিবসের দো'যা এবং সবচেয়ে উত্তম কথা যা আমি এবং আমার পূর্ববর্তী নবীগন বলেছেন ,তা হলো (لا إله إلا الله و حده لا شر يك له ' له الملك و له الحمد و هو على كل شيء قد ير 

উচ্চারণ : লা ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াহদাহু লা-শারীকালাহু , লাহুল মুলকু ওয়া লাহুল হামদ ওয়া হুয়া আলা কুল্লি শাইয়িন ক্বাদীর . 

অর্থাৎ , আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্য মাবুদ নেই , তিনি একক তাঁর কোন শরীক নেই . রাজত্ব একমাত্র তাঁরই জন্য এবং প্রশংসা একমাত্র তাঁরই জন্য তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান '' . 

* আল্লাহর যিকিরসমূহের মধ্যে- لا إله إلا الله এই মহামূল্যবান বানীর রয়েছে বিশেষ মর্যাদা এবং এর সাথে সম্পর্ক রয়েছে বিভিন্ন হুকুম আহকামের . আর এই কালিমার রয়েছে এক বিশেষ অর্থ ও উদ্দেশ্য এবং কয়েকটি শর্ত , ফলে এ কালিমাকে গতানুগতিক মুখে উচ্চারণ করাই ঈমানের জন্য যথেষ্ট নয় . এ জন্যই আমি আমার লেখায় এই বিষয়টিকে তুলে ধরবো . আল্লাহর নিকট প্রার্থনা করি তিনি যেন আমাকে ঐ সমস্ত লোকদের অর্ন্তভূক্ত করেন যারা এই কালিমাকে সঠিক অর্থে বুঝেতে পেরেছেন . 

প্রিয় পাঠক , এ কালিমা ব্যাখ্যা দানকালে নিন্মবর্তী বিষয়গুলোর উপর আলোকপাত করব : 

* মানুষের জীবনে এ কালিমার মর্যাদা 

* এর ফযিলত 

* এর ব্যাকারণি ব্যাখ্যা 

* এর স্তম্ভ বা রোকন সমূহ 

* এর শর্তাবলী 

* এর অর্থ এবং দাবী 

* কখন মানুষ এই কালিমা পথে উপকৃত হবে আর কখন হবেনা 

* আমাদের সার্বিক জীবনে আর প্রভাব কি ? 

আবার আল্লাহর সাহায্য কামনা করে কালিমা " لا إله إلا الله " এর গুরুত্ব ও মর্যাদা সম্পর্কে আলোচনা হবে। 

১/ ব্যক্তি জীবন কালিমা " لا إله إلا الله " এর গুরুত্ব ও মর্যাদা : 
এটি এমন একটি ণ্ডুরুত্বপূর্ণ বাণী যা মুসলমানগণ তাদের আযান, ইকামাত, বক্তৃতা-বিবৃতিতে বলিষ্ঠ কন্ঠে ঘোষণা করে থাকে , এটি এমান এক কালিমা যার জন্য প্রতিষ্ঠিত যাছে আসমান জমিন, সৃষ্টি হয়েছে সমস্ত মাখলুকাত । এবং এর প্রচারের জন্য আল্লাহ যুগে যুগে পাঠিয়েছেন অসংখ্য রাসূল এবং নাযিল করেছেন আসমানি কিতাবসমূহ, প্রনয়ণ করেছেন অসংখ্য বিধান। প্রতিষ্ঠিত করেছেন তুলাদন্ড (মিজান) এবং তৈরী করেছেন জান্নাত এবং জাহান্নাম। এই কালিমাকে স্বীকার করা এবং অস্বীকার করার মাধ্যমে মানব সম্প্রদায় ঈমানদর এবং কাফির এই দুই ভাগে বিভক্ত হয়েছে । অতএব সৃষ্টি জগতে মানুষের কর্ম,কর্মের ফলাফল,পুরুস্কার অথবা শাস্তি সব কিছুরই উত্স হচ্ছে এই কালিমা । এরই জন্য উত্পত্তি হয়েছে সৃষ্টি কুলের, এ সত্যের ভিত্তিতেই পরকালিন জিজ্ঞাসাবাদ এবং এর ভিত্তিতেই প্রতিষ্ঠিত হবে সওয়াব ও শাস্তি । 
এই কালিমার উপর ভিত্তি করে প্রতিষ্টিত হয়েছে মুসলমানদের কিবলা এবং এ হলো মুসলমানদের জাতি সত্তার ভিত্তি-প্রস্তর এবং এবং এর প্রতিষ্ঠার জন্য খাপ থেকে খোলা হয়েছে জিহাদের তরবারী । বান্দার উপর এটাই হচ্ছে আল্লাহর অধিকার এটাই ইসলামের মূল বক্তব্য ও শান্তিই আবাসের (জান্নাতের) চাবিকাঠি এবং পূর্বা-পর সকলই জিজ্ঞাসিত হবে এই কালিমা সম্পর্কে । 

আল্লাহ কিয়ামতের দিন প্রত্যেক ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসা করবেন তুমি কার ইবাদত করেছ?নবীদের ডাকে কতটুকু সাড়া দিয়েছ? এই দুই প্রশ্নের উত্তর দেয়া ব্যতীত কোন ব্যক্তি তার দুই পা সামান্যতম নারাতে পারবেনা। এর প্রথম প্রশ্নের সঠিক উত্তর হবে (" لا إله إلا الله ") আর দ্বিতীয় প্রশ্নের উত্তর সঠিক হবে মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লামকে রাসূল হিসাবে মেনে তার নির্দেশের আনুগত্যের মাধ্যমে । আর এ কালিমা হচ্ছে কুফুর ও ইসলামের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টিকারী . এ হচ্ছে আল্লাহ ভীতির কালিমা ও মজবুত অবলম্বন । 

এবং এ কালিমা হযরত ইব্রাহীম আলাইহিসসালাম ' অক্ষয় বানিরূপে রেখে গেলেন তার পরবর্তিতে তার সন্তানদের জন্য যেন তারা ফিরে আসে এপথে '' (যুখরুফ ২৮) 

এই সেই কালিমা যার সাক্ষ্য আল্লাহ তা'য়ালা স্বয়ং নিজেই নিজের জন্য দিয়েছে, আরো দিয়েছেন ফিরিশতাগন ও জ্ঞানী ব্যক্তিগণ । আল্লাহ তা'য়ালা বলেন . شَهِدَ اللَّهُ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ وَالْمَلَائِكَةُ وَأُولُو الْعِلْمِ قَائِمًا بِالْقِسْطِ ۚ لَا إِلَٰهَ إِلَّا هُوَ الْعَزِيزُ الْحَكِيمُ (আলে ইমরান ১৮) আল্লাহ নিজেই সাক্ষ দিয়েছেন , তিনি ছাড়া আর কোন ইলাই নেই৷ আর ফেরেশতা ও সকল জ্ঞানবান লোকই সততা ও ন্যায়পরায়ণতার সাথে এ সাক্ষ্য দিচ্ছে যে, সেই প্রবল পরাক্রান্ত ও জ্ঞানবান সত্তা ছাড়া আর কোন ইলাহ নেই৷ 

এ কালিমা ইখলাছের বা সত্যনিষ্ঠার বাণী, এটাই সত্যের সাক্ষ্য ও তার দাওয়াত এবং শিরক আর সাথে সম্পর্ক ছিন্ন আরার বাণী এবং এ জন্যই সমস্ত জগতের সৃষ্টি। আল্লাহ তালা বলেন : 
আমি জ্বীন ও ইনসানকে শুধূ মাত্র আমার ইবাদতের জন্য সৃষ্টি করেছি (আয' যারিয়াত-৫৬ ) 
এই কালিমা প্রচারের জন্য আল্লাহ সমস্ত রাসূল এবং আসমানি কিতাব সমূহ প্রেরণ করেছেন, তিনি বলেন : 
﴿وَمَا أَرْسَلْنَا مِن قَبْلِكَ مِن رَّسُولٍ إِلَّا نُوحِي إِلَيْهِ أَنَّهُ لَا إِلَٰهَ إِلَّا أَنَا فَاعْبُدُونِ 
(আল আম্বিয়া ২৫) আমি তোমার পূর্বে যে রসূলই পাঠিয়েছি তার প্রতি এ অহী করেছি যে, আমি ছাড়া আর কোনো ইলাহ নেই কাজেই তোমরা আমারই বন্দেগী করো৷ 

ইবনে উইয়াইনা বলেনঃ '' বান্দার উপর আল্লাহর তা'য়ালার সবচেয়ে বড় নিয়ামত হলো তিনি তাদেরকে "لا إله إلا الله " তার এই একত্ববাদের সাথে পরিচয় করে দিয়েছেন . দুনিয়ার পিপাসা কাতর তৃষ্ণার্ত একজন মানুষের নিকট ঠান্ডা পানির যে মূল্য আখেরাতে জান্নাতবাসিদের জন্য এ কালিমা তদ্রুপ " এবং যে ব্যক্তি এই কালিমার স্বীকৃতি দান করল সে তার সম্পদ এবং জীবনের নিরাপত্তা গ্রহন করল . আর যে ব্যক্তি তা অস্বীকার করল সে তার জীবন ও সম্পদ নিরাপদ করল না .( দেখুন কালিমাতুল ইখলাছ ৫২-৫৩) 

রাসূল (সাঃ ) বলেন যে ব্যক্তি "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ " আর স্বীকৃতি দান করল এবং আল্লাহ ছাড়া অন্য সব উপাস্যকে অস্বীকার করল তার ধন- সম্পদ ও জীবন নিরাপদ হল এবং তার কৃতকর্মের হিসাব আল্লাহর উপর বর্তাল (সহীহ মুসলিম) 

একজন কাফেরকে ইসলামের প্রতি আহবানের জন্য প্রথম এই কালিমা স্বীকৃতি চাওয়া হয় . নবী (সাঃ) যখন মোয়াজ (রাঃ ) কে ইয়ামানে ইসলামের দাওয়াতের জন্য পাঠান তখন তাঁকে বলেন : তুমি আহলে কিতাবের নিকট যাচ্ছ, অতএব সর্ব প্রথম তাদেরকে "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ " আর সাক্ষ্য দান করার জন্য আহবান করবে .(সহীহ মুসলিম) 

প্রিয় পাঠকগন এবার চিন্তা করুন , দ্বীনের দৃষ্টিতে কোন পর্যায়ে এ কালিমার স্থান এবং এর গুরুত্ব কতটুক . এজন্যই বান্দার প্রথম কাজ হলো এ কালিমার স্বীকৃতি দান করা ; কেননা এ হল সমস্ত কর্মের মূল ভিত্তি . 

২/ "لا إله إلا الله "এর ফজিলত । 
এ কালিমার অনেক ফজিলত বর্ণিত হয়েছে এবং আল্লাহর নিকট এর বিশেষ মর্যাদা রয়েছে । 
তন্মধ্যে বিশেষ ভাবে উল্লেখযোগ্য : 
* যে ব্যক্তি সত্য -সত্যিই কায়মনোবাক্যে অ কালিমা পাঠ করবে আল্লাহ তাকে জান্নাতে প্রবেশ করবেন । 
আর যে ব্যক্তি মিছে -মিছে এই কালিমা পাঠ করবে তা দুনিয়াতে তার জীবন ও সম্পদ হেফাজত করবে বটে , তবে তাকে এর হিসাব আল্লাহর নিকট দিতে হবে । 
* এটি একটি সংক্ষিপ্ত বাক্য, হাতেগোনা কয়েকটি বর্ণ এবং শব্দের সমারোহ মাত্র , উচ্চারণেও অতি সহজ কিন্তু কিয়ামতের দিন পাল্লায় হবে অনেক ভারী । 
* ইবনে হেব্বান এবং আল হাকেম আবু সাইদ খুদরী রাঃ হতে বর্ণনা করেন , রাসূল সাঃ বলেন মূসা আঃ একদা আল্লাহ তা'য়ালাকে বললেন হে রব আমাকে এমন একটি বিষয় শিক্ষা দান ক্রিন যা দ্বারা আমি আপনাকে স্বরণ করব এবং আপনাকে আহবান করব । আল্লাহ বললেন হে মূসা বলো, لا إله إلا الله মূসা আঃ এলেন এত আপনার অকল বান্দাই বলে থাকে । আল্লাহ বললে হে মূসা আমি ব্যতীত সপ্তাকাশ ও এর মাঝে অবস্থানকারী সকল কিছু এবং সপ্ত জমীন যদি এক পাল্লায় রাখা হয় " لا إله إلا الله" এর পাল্লা ভারী হবে ।( হাকেম বলেন , হাদিসটি সহীহ ) 
* আব্দুল্লা বিন অমর হতে বর্ণিত রাসূল সাঃ বলেনঃ সব চেয়ে উত্তম দো'য়া আরাফাত দিবসের দো'য়া এবং সবচেয়ে উত্তম কথা যা আমি এবং আমার পূর্ববতী নবীগন বলেছেন তাহলঃ لا إله إلا الله و حده لا شر يك له ' له الملك و له الحمد و هو على كل شيء قد ير অর্থাৎ , আল্লাহ ছাড়া আর কোন সত্য মাবুদ নেই , তিনি একক তাঁর কোন শরীক নেই . রাজত্ব একমাত্র তাঁরই জন্য এবং প্রশংসা একমাত্র তাঁরই জন্য তিনি সকল কিছুর উপর ক্ষমতাবান '' (তিরমিযি , কিতাবুদ দাওয়া , হাদিস নং ২৩২৪) 
* এ কালিমা যে সমস্ত কিছু হতে গুরুত্বপূর্ণ ও ভারী তার আরেকটি প্রমান হল , হযরত আব্দুল্লাহ বিন আমর হতে অপর একটি হাদিসের বর্ণিত হয়েছে রাসূল সাঃ বলেনঃ কিয়ামতের দিন আমার উম্মতের এক ব্যক্তিকে সকল মানুষের সামনে ডাকা হবে তার সামনে নিরাব্বইটি (পাপের) নিবন্ধ পুস্তুক রাখা হবে এবং একেকটি পুস্তকের পরিধি হবে চক্ষুদৃষ্টির সীমারেখার সমান । এর পর তাকে বলা হবে , এই নিবন্ধ পুস্ততে যা কিছু আছে তাকি তুমি অস্বীকার কর ? উত্তরে ঐ ব্যক্তি বলবে , হে রব আমি তা অস্বীকার করিনা । তার পর বলা হবে , এর জন্য তোমার কোন আপত্তি আছে কিনা ? অথবা এর পরিবর্তে তোমার কোন নেক কাজ আছে কিনা ? তখন সে ভীত -সন্ত্রস্ত অবস্থায় বলবে , না তাও নেই । অতপর বলা হবে আমার নিকট তোমার কিছু পূন্যের কাজ আছে এবং তোমার উপর কোন প্রকার অত্যাচার করা হবে না । অতঃপর তার জন্য একখান কার্ড বের করা হবে তাতে লেখা থাকবে أشهد أن لا إله إلا الله و أشهد أن محمدا عبده و ر سوله 
অর্থাৎ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে , আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন সত্য মা'বুদ নেই এবং আমি আরো সাক্ষ্য দিচ্ছি যে মুহাম্মদ সাঃ আল্লাহর বান্দা ও তার রাসুল । 
এখন ঐ ব্যক্তি বিস্ময়ে সাথে বলবে, হে আমার রব এই কার্ড খানা কি নিরানব্বইটি নিবন্ধ পুস্তকের সমতুল্য হবে ? তখন ব্লাহ্বে , তোমার উপর কোন প্রকার অত্যাচার করা হবেনা । আর পর ঐ কার্ড খানা এক পাল্লায় রাখা হবে তখন ঐ পুস্তক গুলোর ওজন কার্ড খানার তুলনায় অত্যন্ত নগন্য হবে এবং কার্ডের পাল্লা ভারী হবে । (অত তিরমিযি, নং ২৬৪১.।আল হাকেম ২য় খন্ড পৃষ্ঠা ৫-৬ ) 

এই মহামূল্যবান কালিমার আরো ফযিলত সম্পর্কে হাফেজ ইবনে রজব তার "কালিমাতুল ইখলাছ " নামক গ্রন্থে দলিল প্রমান সহকারে বলেন , এই কালিকা হবে জান্নাতের মূল্য, কোন ব্যক্তি জীবনের শেষ মুহুর্তে ও এ কালিমা পাঠ করে ইন্তেকাল করলে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে , এটাই জাহান্নাম থেকে মুক্তির এক মাত্র পথ , এবং আল্লাহর কাছথেকে ক্ষমা পাওয়ার একমাত্র সম্বল , সমস্ত পূর্ন্য কাজগুলোর মধ্যে এ কালিমাই শ্রেষ্ঠ , এটি পাপ পঙ্কিলতাকে দূর করে , রিদয়" মানে ঈমানের বিষয়গুলোকে সজীব করে, পাপ রাশির উপর এ কালিমা ভারী হবে । আল্লাহকে পাওয়ার পথে যতসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে সব কিছুকে এ কালিমা ছিন্ন- ভিন্ন করে আল্লাহর নিকট পৌছে দিবে ।এ আকলিমা স্বীকৃতি দান কারীকে আল্লাহ সত্যায়িত করবেন । নবীদের কথার মধ্যে উত্তম কথা হলো এটাই , সবচেয়ে উত্তম যিকির এটাই , এটি যেমনি উত্তম কথা তেমনি এর ফলাফল হবে অনেক বেশি । এটা গোলাম আজাদ করার সমতুল্য । শয়তান থেকে রক্ষা কবজ , কবর ও হাশরের বিভিষিখাময় অবস্থার নিরাপত্যা দান করি । কবর থেকে দন্ডায়মান হওয়ার পর একলিমার মাধ্যমেই মুমিনরা চিহ্নিত হবে । 
এই কালিমার সাক্ষ্য দানকারী এর দাবি অনুযায়ী পূর্ণভাবে কাজ না করার ফলে এবং বিভিন্ন অপরাদের ফল স্বরূপ জাহান্নামে প্রবেশ করলেও অবশ্যই কোন এক সময় জাহান্নাম থেকে মুক্তি লাভ করবে । 

ইবনে রজব (রাঃ) তার বইতে এই কালিমার এইসব ফজিলতের বিস্তারিত বর্ণনা দিয়েছেন এবং এর দলিল প্রমানাদি পেশ করেছেন ।( দেখুন কালিমাতুল ইখলাস , ৬৪-৬৫ ) 

৩/ কালিমার ব্যাকরনগত আলোচনা : 
অনেক সময় অনেক বাক্যের অর্থ বুঝা নির্ভর করে তার ব্যকারনগত আলোচনার উপর . এ জন্য ওলামায়ে কেরাম "لا إله إلا الله " এই বাক্যের ব্যাকরনগত আলোচনার প্রতি তাঁদের দৃষ্টি নিবন্ধ করেছেন এবং তারা বলেছেন যে ,এই বাক্যে "لا" শব্দটি নাফিয়া লিল জেনস এবং "إله" (ইলাহ)এর ইসম,মাবনি আলাল ফাতহ। আর "حق"এর খবরটি এখানে উহ্য , অর্থাৎ কোন হক বা সত্য ইলাহ নেই "إلا الله"ইসতেসনা খবরে মারফু "حق" হতে অর্থাৎ আল্লাহ ব্যতীত হক বা সত্য ইলাহ বলতে কেউ নেই । "إله" 
অর্থ "মাবুদ আর তিনি হচ্ছেন ঐ সত্তা যে সত্তার প্রতি কল্যাণের আশায় এবং অকল্যাণ থেকে বাঁচার জন্য হৃদয়ের আসক্তি সৃষ্টি হয় এবং মন তার উপাসনা করে । এখানে কেউ যদি মনে করে যে , উক্ত খবরটি হচ্ছে "মাউজুদুন "বা "মা'বুদুন"অথবা এ ধরনের কোন শব্দ তা হলে এটা হবে অত্যন্ত ভুল । কারন আল্লাহ ব্যতীত অনেক মা'বুদ রয়েছেন যেমন মূর্তি মাজার ইত্যাদি । তবে আল্লাহ হচ্ছেন সত্য মাবুদ,আর তিনি ব্যতীত অন্য যত মাবুদ রয়েছে বা অন্যদের যে ইবাদত করা হয় তা হচ্ছে অসত্য ও ভ্রান্ত । আর এটাই হচ্ছে "لا إله إلا الله" এর না সূচক এবং হাঁ সূচক এই দুই স্তম্ভের মূল দাবী । 

৪/"لا إله إلا الله " এই কালিমার দুটি স্তম্ভ বা রুকুন । একটি হলো না বাচক আর অপরটি হলো হাঁ বাচক । 
না বাচক কথাটির অর্থ হচ্ছে ,আল্লাহ ব্যতীত সমস্ত কিছুর ইবাদতকে অস্বীকার করা আর হাঁ বাচক কথাটির অর্থ হচ্ছে একমাত্র আল্লাহই সত্য মাবুদ । আর মুশরিকগণ আল্লাহ ব্যতীত যে সব মাবুদের উপাসনা করে সব গুলো মিথ্যা এবং বানোয়াট মাবুদ । আল্লাহ তা'য়ালা বলেন ﴿ذَٰلِكَ بِأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْحَقُّ وَأَنَّ مَا يَدْعُونَ مِن دُونِهِ هُوَ الْبَاطِلُ وَأَنَّ اللَّهَ هُوَ الْعَلِيُّ الْكَبِيرُ আল হ্জ্ব ৬২) এসব এজন্য যে, আল্লাহই সত্য এবং আল্লাহকে বাদ দিয়ে এরা যাদেরকে ডাকে তারা সবাই মিথ্যা৷ আর আল্লাহই পরাক্রমশালী ও মহান৷ 

ইমাম ইবনুল কাইয়েম বলেন, "আল্লাহ তা'য়ালা ইলাহ বা মাবুদ" এ কথার চেয়ে "আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন সত্য মাবুদ নেই" এই বাক্যটি আল্লাহর উলুহিয়্যাত প্রতিষ্ঠার জন্য অধিকতর মজবুত দলিল কেননা ; "আল্লাহ ইলাহ " একথা দ্ধারা অন্যসব যত ভ্রান্ত ইলাহ রয়েছে তাদের উলুহিয়্যাতকে অস্বীকার করা হয় না । আর "আল্লাহ ব্যতীত অন্য কোন অত্যা ইলাহ নেই" এ কথাটি উলুহিয়্যাতকে একমাত্র আল্লাহর জন্য সীমাবদ্ধ করে দেয় এবং অন্য সকল বাতিল ইলাহ্ক্র অস্বীকার করে । কিছু লোক চরম ভুল বশত: বলে থাকে যে, "ইলাহ"অর্থ সৃষ্টির ক্ষেত্রে তিনি ক্ষমতাবান । 

আশশেখ সুলায়মান বিন আব্দুল্লাহ তাঁর কিতাব তাওহীদের এর ব্যাখায় বলেছেন, কেউ যদি মনে করে "ইলাহ এবং উলুয়্যাতের " অর্থ হলো, নব সৃষ্টিতে পূর্ণ মাত্রায় ক্ষমতাশালী অথবা এ ধরনের অন্য কোন অর্থ , তখন উত্তরে এ ব্যক্তিকে কি বলা হবে ? 
মূলত এই প্রশ্নের উত্তরের দুটি পর্যায় রয়েছে , প্রথমতঃ এটা একটা উদ্ভট,অজ্ঞতা প্রসূত কথা । এ ধরনের কথা বিদ'আতী ব্যক্তিরাই বলে থাকে,কোন বিজ্ঞ আলেম বা আরবী ভাষাবিদগন "ইলাহ" শব্দের এ ধরনের অর্থ করেছেন বলে কেউ বলতে পারবে না বরং তাঁর এ শব্দের ঐ অর্থই করেছেন যা আমরা পূর্বে আলোচনা করেছি । অতএব,এখানেই এ ধরনের ব্যাখা ভুল বলে প্রমাণিত হলো । 

দ্বিতীয়ঃ ক্ষনিকের জন্য এ অর্থকে মেনে নিলেও এমনিতেই "সত্য ইলাহ "যিনি হবেন তাঁর জন্য সৃষ্টি করার গুনাবলি একান্তই অপরিহার্য্য , অতএব "ইলাহ"হওয়ার জন্য সৃষ্টি করার সার্বিক যোগ্যতা থাকা তো আঙ্গা-আঙ্গি ভাবেই তার সাথে জরিত, এর যে কোন কিছু সৃষ্টি করতে অক্ষম সে তো "ইলাহ"হতে পারেনা, যদিও তাকে ইলাহ রূপে কেউ অভিহিত করে থাকেনা কেন । এ জন্য "আল্লাহ নব সৃষ্টিতে ক্ষমতাশালী" এ টুকু বিশ্বাসের মাধ্যমে কোন ব্যক্তির ইসলামের গন্ডিতে প্রবেশের জন্য যথেষ্ট নয় এবং এতটুকু কথা জান্নাত লাভের জন্য যথেষ্ট নয় । 
আর যদি এতটুকু বিশ্বাসই যথেষ্ট হত তাহলে আরবের কাফিররাও মুসলমান বলে বিবেচিত হতো । তাই এ যুগের কোন লোক যদি "ইলাহ"শব্দের এ অর্থই করে থাকেন তা হলে তাকে ভ্রান্ত বলতে হবে এবং কুরআন হাদীসের জ্ঞানগর্ভ দলিল দ্বারা এবং প্রতিবাদ করা একান্ত প্রয়োজন । 

৫ / لا إله إلا الله এর শর্ত সমূহ : 
এই পবিত্র কালিমা মুখে বলাতে কোনই উপকার আসবেনা যে পর্যন্ত এর শর্ত পূর্ণ করা না হবে। ( কোন কোন আহলে ইলম এ কালিমার আটটি শর্তের কথা বলেছেন এবং তা হলো তাগূতের সাথে কুফরী করা ) 
প্রথম শর্তঃ এ কালিমার না বাচক এবং হাঁ বাচক দুটি অংশের অর্থ সম্পর্কে পরিপূর্ণ জ্ঞান থাকা প্রযোজন . অর্থ এবং উদ্দেশ্য না বুঝে শুধুমাত্র মুখে এ কালিমা উচ্চারণ করার মধ্যে কোন লাভ নেই । কেননা সে ক্ষেত্রে ঐ ব্যক্তি এ কালিমার মর্মের উপর ইমান আনতে পারবে না । তখন এ ব্যক্তির উদাহরণ হবে ঐ লোকের মত যে লোক এমন এক অপরিচিত ভাষায় কথা বলা শূরু করল যে ভাষা সম্পর্কে তার সামান্যতম জ্ঞান নেই । 

দ্বিতীয় শর্তঃ ইয়াকীন বা দৃড় প্রত্যয় । অর্থাৎ এ কলমার মাধ্যমে যে কথার স্বীকৃতি দান করা হল তাতে সামান্যতম সন্ধেহ পোষণ করা চলবে না । 

তৃতীয় শর্তঃ এই ইখলাছ যা " لا إله إلا الله " এর দাবী অনুযায়ী ঐ ব্যক্তিকে শিরক থেকে মিক্ত রাখেবে । 

চতুর্থ শর্তঃ এই কালিমা পাঠকারীকে সত্যের পরাকাষ্ঠা হতে হবে , যে সত্য তাকে মুনাফেকী আচরণ থেকে বিরত রাখবে। মুনাফিকরাও " لا إله إلا الله " এ কালিমা মুখে মুখে উচারন করে থাকে,কিন্তু এর নিগুড় তত্ব সম্পর্কে তারা পূর্ণ বিশ্বাসী নয় । 

পঞ্চম শর্তঃ ভালবাসা । অর্থাৎ মোনাফেকী আচরণ বাদ দিয়ে এই কালিমাকে স্বানন্দ চিত্তে গ্রহন করতে হবে ও ভালবাসতে হবে । 

ষষ্ট শর্তঃ এই কালিমার দাবী অনুযাযী নিজকে পরিচালনা করা । অর্থাৎ আল্লাহর সন্ত্তষ্টি লাভের জন্য সমস্ত ফরজ ওয়াজিব কাজগুলো আঞ্জাম দেয়া । 

সপ্তম শর্তঃ আন্তরিক ভাবে এ কালিমাকে গ্রহন করা এবং এর পর দ্বীনের কোন কাজকে প্রত্যাখান করা থেকে নিজেকে বিরত রাখা । অর্থাৎ, আল্লাহর যাবতীয় আদেশ পালন করতে হবে এবং তাঁর নিষিদ্ধ সব কাজ পরিহার করতেহবে (দেখুন ফাতহুল মজিদ -৯১ ) 
এই শর্তগুলো ওলামায়েকেরাম চয়ন করেছেন কুরআন হাদীসের আলোকেই, অতএব এ কালিমাকে শুধুমাত্র মুখে উচারন করলেই যথেষ্ট এমন ধারনা ঠিক নয় । 

৬ / " لا إله إلا الله " এর দাবী । 
পূর্ববতী আলোচনা হতে এ কালিমার অর্থ ও এর উদ্দেশ্য সম্পর্কে এ কথা স্পষ্ট হলো যে لا إله إلا الله " এর অর্থ হচ্ছেঃ সত্য এবং হক মাবুদ বলতে যে ইলাহকে বুঝায় তিনি হলেন একমাত্র আল্লাহ যার কোন শরিক নেই এবং তিনিই একমাত্র ইবাদতের অধিকারী । তিনি ব্যতীত যত মাবুদ আছে সব অসত্য এবং বাতিল, তাই তারা ইবাদত পাওয়ার অযোগ্য । এজন্য অধিকাংশ সময় আল্লাহ তা'য়ালার ইবাদতের আদেশের সাথে সাথে তিনি ব্যতীত অন্য কারো ইবাদত করতে নিষেধ করা হয়েছে । কেননা আল্লাহর ইবাদতের সাথে অন্য কাউকে অংশীদার করা হলে ঐ ইবাদত গ্রহনযোগ্য হবেনা । আল্লাহ বলেনঃ وَاعْبُدُوا اللَّهَ وَلَا تُشْرِكُوا بِهِ شَيْئًا অর্থাৎ আর তোমরা সবাই আল্লাহর বন্দেগী করো৷ তাঁর সাথে কাউকে শরীক করো না৷ (আন নিসা -৩৬) 
আল্লাহ আরো বলেনঃ فَمَن يَكْفُرْ بِالطَّاغُوتِ وَيُؤْمِن بِاللَّهِ فَقَدِ اسْتَمْسَكَ بِالْعُرْوَةِ الْوُثْقَىٰ لَا انفِصَامَ لَهَا ۗ وَاللَّهُ سَمِيعٌ عَلِيمٌ অর্থাৎ যে কেউ তাগুতকে অস্বীকার করে আল্লাহর ওপর ঈমান আনে , সে এমন একটি মজবুত অবলম্বন আঁকড়ে ধরে , যা কখনো ছিন্ন হয় না ৷ আর আল্লাহ (যাকে সে অবলম্বন হিসেবে আঁকড়ে ধরেছে ) সবকিছু শোনেন ও জানেন ৷(আল বাকারাহ -২৫৬) 
আল্লাহ আরো বলেনঃ وَلَقَدْ بَعَثْنَا فِي كُلِّ أُمَّةٍ رَّسُولًا أَنِ اعْبُدُوا اللَّهَ وَاجْتَنِبُوا الطَّاغُوتَ অর্থাৎ প্রত্যেক জাতির মধ্যে আমি একজন রসূল পাঠিয়েছি এবং তার মাধ্যমে সবাইকে জানিয়ে দিয়েছি যে, “আল্লাহর বন্দেগী করো এবং তাগূতের বন্দেগী পরিহার করো৷(আন সাহল-৩৬) 
অর্থাৎ তোমরা নিজেদের শিরক এবং নিজেদের তৈরী হালাল- হারামের বিধানের পক্ষে আমার ইচ্ছাকে কেমন করে বৈধতার ছাড়পত্র দানকারী হিসেবে পেশ করতে পারো ? আমি তো প্রত্যেক জাতির মধ্যে নিজের রসূল পাঠিয়েছি এবং তাদের মাধ্যমে লোকদেরকে পরিস্কারভাবে জানিয়ে দিয়েছি যে, তোমাদের কাজ হচ্ছে শুধুমাত্র আমার বন্দেগী করা ....... রাসূল (সাঃ) বলেন, ব্যক্তি বলল, আল্লাহ ছাড়া অন্য কোন ইলাহ নেই এবং সে আল্লাহ ব্যতীত অন্য সব কিছু ইবাদতকে অস্বীকার করল ঐ ব্যক্তি আমার নিকট থেকে তার জীবন ও সম্পদ হেফাজত করল (সহীহ মুসলিম , কিতাবুল ঈমান হাদীস নং ২৩) 

প্রত্যেক রাসূলই তাঁর জাতিকে বলেছেনঃ فَقَالَ يَا قَوْمِ اعْبُدُوا اللَّهَ مَا لَكُم مِّنْ إِلَٰهٍ غَيْرُهُ অর্থাৎ হে আমার স্বগোত্রীয় ভাইয়েরা! আল্লাহর ইবাদত করো, তিনি ছাড়া তোমাদের আর কোন ইলাহ নেই৷ (আল আরাফ -৫৯) 
ইবনে রজব বলেন, কালিমার এই অর্থ বাস্তবায়িত হবে তখন যখন বান্দাহ " لا إله إلا الله " এর স্বীকৃতি দান করার পর এটা প্রমান করবে যে , আল্লাহ ছাড়া আর কোন অত্য ইলাহ নেই এবং মাবুদ হওযার একমাত্র যোগ্য ঐ সত্তা যাকে ভয় ভীতি, বিনয় ভালবাসা, আশা-ভরসা সহকারে আনুগত্য করা হয় এবং অবাধ্যতা থেকে বিরত থাকা হয় এবং এ সমস্ত কাজ আল্লাহ ছাড়া আর কারো জন্য প্রযোজ্য নয় .এ জন্য রাসূল (সাঃ ) যখন মক্কার কাফেরদেরকে বললেন তোমরা বলো " لا إله إلا الله " উত্তরে তারা বললো 
الْآلِهَةَ إِلَٰهًا وَاحِدًا ۖ إِنَّ هَٰذَا لَشَيْءٌ عُجَابٌ অর্থাৎ সকল খোদার বদলে সেকি মাত্র একজনকেই খোদা বানিয়ে নিয়েছে ? এতো বড় বিস্ময়কর কথা!(সাদ -৫) অর্থ হলো তারা বুঝতে পারল যে , এ কালিমা স্বকৃতি মানেই এখন হতে মূর্তি পূজা বাতিল করা হলো এবং ইবাদত একমার্ত আল্লাহর জন্য নির্ধারন করা হলো . তাই এখানেই প্রমাণিত হলো যে " لا إله إلا الله " এর অর্থ দাবী হচ্ছে ইবাদতকে একমাত্রি আল্লাহর জন্য নিদুষ্টি করা এবং আল্লাহ ব্যতীত অন্য সব কিছুর ইবাদত পরিহার করা । এজন্য কোন ব্যক্তি যখন বলে " لا إله إلا الله " তখন সে এ ঘোষনাই প্রধান করে যে , ইবাদতের একমাত্র অধিকারী আল্লাহ তা'যালাই এবং তিনি ব্যতীত অন্য কিছুর ইবাদত যেমন কবর পূজা , পীর পূজা, ইত্যাদি । সেজন্যই মক্কার মুশরিকরা বলত- الْآلِهَةَ إِلَٰهًا وَاحِدًا ۖ إِنَّ هَٰذَا لَشَيْءٌ عُجَابٌ অর্থাৎ সকল খোদার বদলে সেকি মাত্র একজনকেই খোদা বানিয়ে নিয়েছে ? তাদের সম্পর্কে আল্লাহ আরো বলেন إِنَّهُمْ كَانُوا إِذَا قِيلَ لَهُمْ لَا إِلَٰهَ إِلَّا اللَّهُ يَسْتَكْبِرُونَ অর্থাৎ এরা ছিল এমন সব লোক যখন এদেরকে বলা হতো, “আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ নেই” তখন এরা অহংকার করতো৷ وَيَقُولُونَ أَئِنَّا لَتَارِكُو آلِهَتِنَا لِشَاعِرٍ مَّجْنُونٍ এবং বলতো, “আমরা কি একজন উন্মাদ কবির জন্য আমাদের মাবুদদেরকে ত্যাগ করবো? (আস সফফাত ৩৫-৩৬) 
অতএব তারা বুঝল যে " لا إله إلا الله " আর মানেই হচ্ছে এক আল্লাহর ইবাদত করা কোন দেব -দেবীর ইবাদত নয় । সংখিপ্ত কথা হল এই যে, যে ব্যক্তি কালিমার অর্থ জেনে বুঝে কালিমার দাবী অনুযায়ী আমল করার মাধ্যমে এর স্বীকৃতি দান করল এবং প্রকাশ্য অপ্রকাশ্য সর্বাবস্থায় নিজেকে শিরক থেকে বিরত রেখে দৃড় প্রত্যয়ের সাথে এক মাত্র আল্লাহর ইবাদতকে নির্ধারন করল, সে ব্যাক্তি প্রকৃত মুসলমান । আর যে এই কালিমার মর্মার্থকে বিশ্বাস না করে এমনিতে প্রকাশ্যভাবে এর স্বীকৃতি দান করল এবং এর দাবী অনুযায়ী গতানুগতিক ভাবে কাজ করল সে ব্যক্তি মূলত মুনাফেক । আর যে মুখে এ কালিমা বলল এবং শিরক এর মাধ্যমে এর বিপরীত কাজ করল সে প্রকৃত অর্থে স্ববিরধী মোশরেক । এ জন্যই এ কালিমা উচ্চারণের সাথে সাথে অবশ্যই এর অর্থ জানতে হবে আর তখই এর দাবী অনুযায়ী কাজ করা সম্ভব হবে আল্লাহ বলেন, إِلَّا مَن شَهِدَ بِالْحَقِّ وَهُمْ يَعْلَمُونَ অর্থাৎ তবে যদি কেউ জ্ঞানের ভিত্তিতে ন্যায় ও সত্যের সাক্ষ্য দান করে৷(আয যুখরুফ -৮৬) 

অর্থ -এ থেকে জানা যায়, ন্যায় ও সত্যের পক্ষে জ্ঞানবিহীন সাক্ষ্য দুনিয়াতে গ্রহণযোগ্য হলেও আল্লাহর কাছে গ্রহণ যোগ্য নয়৷ দুনিয়াতে যে ব্যক্তিই মুখে কালেমা শাহাদাত উচ্চারণ করবে আমরা তাকে মুসলমান হিসেবে মেনে নেবো এবং যতক্ষণ না সে প্রকাশ্যে সুস্পষ্ট কুফরী করবে ততক্ষণ আমরা তার সাথে মুসলমানদের মতই আচরণ করতে থাকবো৷ কিন্তু আল্লাহর কাছে শুধু সেই ব্যক্তিই ঈমানদার হিসেবে গণ্য হবে যে তার জ্ঞান ও বুদ্ধির সীমা অনুসারে জেনে বুঝে বলেছে এবং সে একথা বুঝে যে এভাবে সে কি কি বিষয় অস্বীকার করেছে এবং কি কি বিষয় স্বীকার করে নিচ্ছে৷ 

এ থেকে সাক্ষ আইনের এই সূত্রটিও পাওয়া যায় যে, সাক্ষ্যের জন্য জ্ঞান থাকা শর্ত৷ সাক্ষী যে ঘটনার সাক্ষ দান করছে তার যদি সে সম্পর্কে জ্ঞান না তাকে তাহলে তার সাক্ষ্য অর্থহীন৷ নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি সাল্লামের একটি ফায়সালা থেকেও এ বিষয়টি জানা যায়৷ তিনি একজন সাক্ষীকে বলেছিলেন : "যদি তুমি নিজ চোখে ঘটনা এমনভাবে দেখে থাকো যেমন সূর্যকে দেখছো তা হলে সাক্ষ দাও৷ তা না হলে দিও না৷ 

৭ / * কখন মানুষ এই কালিমা পাঠে উপকৃত হবে আর কখন হবেনা.
আমরা পূর্বেই বলেছি যে," لا إله إلا الله " এর স্বীকৃতির সাথে এর অর্থ বুঝা এবং এর দাবী অনুযায়ী কাজ করাটা ওতপ্রোতভাবে জড়িত কিন্তু কুরআনে হাদিসে এমন কিছু উদ্ধৃতি আছে যা থেকে সন্দেহের উদ্ভব হয় যে, শুধুমাত্র " লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ " মুখে উচ্চারন করলেই যথেষ্ট . মূলত : কিছু লোক এ ধারণাই পোষণ করে . অতএব সত্য সন্ধানীদের জন্য এ সন্দেহের নিরসন করে দেয়া একান্তই প্রয়োজন মনে করি

ইতবান (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসে বলা হয়েছে, যে ব্যক্তি আল্লাহর সন্তষ্টি অর্জনের লক্ষ্যে বলবে, " লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ " আল্লাহ তার উপর জাহান্নামের আগুনকে হারান করেদিবেন (বুখারী ১১ - ২০৬ পৃঃ মুসলিম ৩৩ নং ) এই হাদিসের আলোচনায় শেখ সুলেমান বিন আব্দুল্লাহ বলেন, মনে রাখবেন অনেক হাদীসের বাহ্যিক অর্থ দেখলে মনে হবে যে, কোন ব্যক্তি তাওহীদ এবং রিসালাতের শুধুমাত্র সাক্ষ্য দান করলেই জাহান্নামের জন্য সে হারাম হয়ে যাবে যেমনটি উপরোল্লেখিত হাদীসে বলা হয়েছে . এমনিভাবে আনাছ (রাঃ) থেকে বর্ণিত হাদীসেও এসেছে তিনি বলেছেন, রাসুল (সাঃ) এবং ময়াজ রাঃ একবার সওয়ারীর পিঠে আরোহন করে কোথাও যাচ্ছেন এমন সময় নবী সাঃ মোয়াজকে ডাকলেন . তিনি বললেন, লাব্বাইকা ওয় সায়াদাইকা ইয়া রাসুলুল্লাহ , হে মোয়াজ, যে বান্দাই এ সাক্ষ্য প্রধান করবে যে , আল্লাহ ব্যতীত কোনো সত্য মাবুদ নেই এবং মোহাম্মদ (সাঃ ) আল্লাহর রাসুল " আল্লাহ তাকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিবেন (বুখারী ১ম খন্ড পৃষ্ঠা১৯৯)

ইমাম মোসলেম ওবাদাহ রাঃ থেকে বর্ননা করেন যে , রাসূল সাঃ বলেন "যে ব্যক্তি সাক্ষ্য দিবে যে,আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য ইলাহ নেই এবং মোহাম্মদ সাঃ আল্লাহর বান্দাহ এবং তাঁর রাসূল , আল্লাহ তাকে জাহান্নামের জন্য হারাম করে দিবেন " (সহীহ মোসলেম ১ম খন্ড পৃষ্ঠা ২২৮-২২৯)
আরো অনেকগুলো হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, যে ব্যক্তি তাওহীদ ও রিসালাতের স্বীকৃতি দান করবে তাকে জান্নাতে প্রবেশ করানো হবে , তবে জাহান্নাম তার জন্য হারাম করা হবে এমন কোন উল্লেখ তাতে নেই । তাবুক যুদ্ধ চলাকালিন একটি ঘটনা , আবু হুরাইরা (রাঃ) থেকে বর্ণিত একটি হাদীসে এসেছে যে, রাসূল সাঃ তাদেরকে বললেন, আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে আল্লাহ ব্যতীত কোন সত্য মাবুদ নেই এবং আমি আল্লাহর রাসূল । আর সংশয়হীন ভাবে এই কালিমা পাঠকারী আল্লাহর সাথে এমন অবস্থায় মিলিত হবে যে, জান্নাতের মধ্যে এবং তার মধ্যে কোন প্রতিবন্ধকতা থাকবে না ।
লেখক আরো বলেন, শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়া এবং অন্যান্য প্রমুখ ওলামায়ে কেরাম এবিষয়ে যে ব্যাখ্যা প্রধান করেছেন তা অত্যন্ত চমত্কার ।
ইবনে তাইমিয়া রা বলেন, এ সমস্ত হাদীসের অর্থ হচ্ছে, যে ব্যক্তি এ কালিমা পাঠ করে এর উপর মৃত্যুবরণ করবে -যে ভাবে নির্দিষ্ট সীমা রেখায় বর্ণিত হয়েছে -এবং এই কালিমাকে সংশয়হীনভাবে একেবারে নিরেট আল্লাহর ভালোবাসায় হৃদয় মন থেকে এর স্বীকৃতি দিবে কেন না প্রকৃত তাওহীদ হচ্ছে সার্বিক ভাবে আল্লাহর দিকে মনোনিবেশ করা এবং আকৃষ্ট হওয়া । অতএব যে ব্যক্তি খালেস দিলে "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" এর সাক্ষ্য দান করবে সেই জান্নাতে প্রবেশ করবে । আর ইখলাছ হচ্ছে আল্লাহর প্রতি ঐ আকর্ষণের নাম যে আকর্ষণ আবেগের ফলে আল্লাহর নিকট বান্দার সমস্ত পাপের জন্য খালেস তওবা করবে এবং যদি এ অবস্থায় সে মৃত্যুবরণ করে তবেই জান্নাত লাভ করতে পারে । কারন অসংখ্যা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে,যে ব্যক্তি বলবে "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" সে ব্যাক্তি জাহান্নাম থেকে বেরিয়ে আসবে যদি তার মধ্যে অণু পরিমানও ইমান বিদ্যমান থাকে । এছাড়া অসংখ্যা হাদীসে বর্ণিত হয়েছে যে, অনেক লোক "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" বলার পরেও জাহান্নামে প্রবেশ করবে এবং কৃতকর্মের শাস্তি ভোগ করার পর সেখান থেকে বেরিয়ে আসবে । অনেকগুলো হাদীসে বর্ণিত হয়েছে , বনি আদম সিজদা করার ফলে যে চিহ্ন পড়ে ঐ চিহ্নকে জাহান্নাম কখনো স্পর্শ করতে পারবেনা এতে বুঝা গেল ঐ ব্যক্তি নামাজ পড়ত এবং আল্লাহর জন্য সিজদা করত । আর অনেকগুলো হাদীসে এভাবে বর্ণিত হয়েছে ,যে ব্যক্তি বলবে "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" এবং এই সাক্ষ্য দান করবে যে আল্লাহ ছাড়া কোন সত্য মাবুদ নেই এবং মোহাম্মদ আল্লাহর রাসূল ,তার উপর জাহান্নামকে হারাম করা হবে . তবে একথা এমনিতে মুখে উচ্চারণ করলে চলবেনা এর সাথে সম্পর্ক রয়েছে গুরুত্বপূর্ণ এমন কিছু নির্দিষ্টি কাজ যা অবশ্যই করনীয় . অধিকাংশ লোক মুখে "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" উচ্চারণ করলেও তারা জানেনা ইখলাছ এবং ইয়াকীন বা দৃঢ় প্রত্যয় বলতে কি বুঝায় . আর যে ব্যক্তি এ বিষয়গুলোর সম্পর্কে অবহিত থাকবে না মৃত্যুর সময় এ কারনে ফিতনার সম্মুখী হওয়াটাই স্বাভাবিক এবং ঐ সময় হয়ত তার মাঝে এবং কালিমার মাঝে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হতে পারে .

অনেক লোক এ কালিমা অনুকরণমূলক বা সামাজিক প্রথা অনুযায়ী পাঠ করে থাকে অথচ তাদের সাথে ঐকান্তিক ভাবে ঈমানের কোন সম্পর্কই থাকেনা . আর মৃত্যুর সময়ও কবরের ফিতনার আম্মুখীন যারা হবে তাদের অধিকাংশই এই শ্রেণীর মানুষ . হাদীসে বর্ণিত হয়েছে, এ ধরনের লোকদের কবরে প্রশ্ন করার পর উত্তরে বলবে, " মানুষকে এভাবে একটা কিছু বলতে শুনেছি এবং আমিও তাদের মত বুলি আওড়িয়েছি মাত্র " .
তাদের অধিকাংশ কাজ কর্ম এবং আমল তাদের পূর্বসুরীদের অনুকরনেই হয়ে থাকে . আর এ কারণে তাদের জন্য আল্লাহর এ বাণীই শোভা পায় . إِنَّا وَجَدْنَا آبَاءَنَا عَلَىٰ أُمَّةٍ وَإِنَّا عَلَىٰ آثَارِهِم مُّقْتَدُونَ আমরা আমাদের বাপ দাদাদেরকে একটি পন্থার করতে দেখেছি৷ আমরাও তাদেরই পদাঙ্ক অনুসরন করছি৷(আয যুখরুফ-২৩) এই দীর্ঘ আলোচনার পর বলা যায় যে, এ প্রসঙ্গে বর্ণিত হাদীসগুলোর মধ্যে কোন প্রকার বিরোধিতা নেই . অতএব কোন ব্যক্তি যদি পূর্ণ ইখলাছ এবং ইয়াকীনের সাথে এ কালিমা পাঠ করে থাকে তাহলে কোন মতেই সে কোন পাপ কাজের উপর অবিচলিত থাকতে পারেনা . কারন তার বিশুদ্ধ ইসলাম বা সততার কারণে আল্লাহর ভালোবাসা তার নিকট সকল কিছুর উর্ধ্বে স্থান পাবে . অতএব এ কালিমা পাঠ করার পর আল্লাহর হারামকৃত বস্ত্তর প্রতি তার হৃদয়ের মধ্যে কোন প্রকার আগ্রহ বা ইচ্ছা থাকবে না এবং আল্লাহর যা আদেশ করেছেন সে সম্পর্কে তার মনের মাঝে কোন প্রকার দ্ধিধা -সংকোচ বা ঘৃনা থাকবে না . আর এ ধরনের ব্যক্তির জন্যই জাহান্নাম হারাম হবে, যদিও তার নিকট হতে এর পূর্বে কিছু গুনা হয়ে থাকে . কারণ তার এ ঈমান, ইখলাছ, ভালোবাসা এবং ইয়াকিনই তার সমস্ত পাপকে এভাবে মুছে দিবে যেভাবে দিনের আলো রাতের অন্ধকারকে দূরীভূত করে দেয় .

শেখ মোহাম্মদ বিন আব্দুল ওয়াহাব বলেন, এই প্রসঙ্গে তাদের আরেকটি সংশয় এই যে তারা বলে , উসামা (রাঃ) এক ব্যক্তিকে "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" বলার পরেও হত্যা করার কারণে রাসূল (সাঃ) তাঁর এ কাজকে নিন্দা করেছেন এবং উসামা (রাঃ) কে জিজ্ঞাসা করেছেন , তুমি কি তাকে "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" বলার পরও হত্যা করেছ ? . এ থেকে এ সকল মুর্খরা বলতে চায় যে, কোন ব্যক্তি এ কালিমা পড়ার পর যা ইচ্ছা করতে পারে কিন্তু এ কারণে আর কখনো কাফের হয়ে যাবেনা এবং তার জীবনের নিরাপত্তার জন্য এটাই যথেষ্ট . এ সমাপ্ত অজ্ঞদের বলতে হয় যে , রাসূল (সাঃ) ইয়াহুদীদের সাথে জিহাদ করেছেন এবং তাদের বন্দী করেছেন অথচ তারা "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" এ কথাকে স্বীকার করত . আর রাসূল (সাঃ) সাল্লামের সাহাবাগন হানিফা গোত্রের সাথে জিহাদ করেছেন অথচ তারা স্বীকার করত যে , আল্লাহর এক এবং মোহাম্মদ- সাঃ আল্লাহর রাসূল আল্লাহর প্রেরিত পুরুষ এবং তারা নামাজ পড়ত ও ইসলামের দাবীদার ছিল .

এভাবে আলী রাঃ যাদেরকে জ্বালিয়ে মেরেছিলেন তাদের কথাও উল্লেখ করা যায় . আবার এ সমস্ত অজ্ঞরাই এ বিষয়ে স্বীকৃতি দান করে যে, যে ব্যক্তি "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" বলার পর পুনরুথানকে অবিশ্বাস করবে সে কাফের ও মোরতাদ হয়ে যাবে এবং মোরতাদ হবার কারণে তাকে হত্যা করা হবে . এছাড়া যে ব্যক্তি ইসলামের স্তম্বগুলোর কোন একটিকে অস্বীকার করবে তাকে কাফের বলা হবে এবং মোরতাদ হওয়ার কারণে তাকে হত্যা করা হবে যদিও সে মুখে " لا إله إلا الله " এ কালিমা উচ্চারন করুক . তা হলে বিষয়টা কেমন হলো? আংশিক দ্বীন থেকে মুখ ফিরিয়ে নিয়ে বক্রতার পথ গ্রহন করলে যদি "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" বলার কোন উপকার না আসে তা হলে রাসূল সাঃ দিনের মূল বিষয় তাওহীদের সাথে কুফরী করার পর কিভাবে "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" শুধুমাত্র মুখে উচ্চারন করাটা তার উপকার সাধন করতে পারে ? মূলত আল্লাহদ্রোহিরা এই সমস্ত হাদীসের অর্থ বুঝতে পারেনি . উসামা রাঃ এর হাদীসের ব্যাখ্যায় তিনি আরো বলেন, উসামা রাঃ ঐ ব্যক্তিকে হত্যা করেছেন এই মনে করে যে, ঐ ব্যক্তি মুসলমান হওয়ার দাবি করেছেন শুধুমাত্র তার জীবন ও সম্পদ রক্ষার ভয়ে . আর ইসলামে নীতি হচ্ছে কেউ ইসলাম গ্রহন করলে ঐ পর্যন্ত তার ধন -সম্পদ ও জীবনের নিরাপত্তা প্রদান করা হবে যে পর্যন্ত ইসলামের পরিপন্থী কোন কাজ না করে . আল্লাহ বলেনঃ يَا أَيُّهَا الَّذِينَ آمَنُوا إِذَا ضَرَبْتُمْ فِي سَبِيلِ اللَّهِ فَتَبَيَّنُوا হে ঈমানদারগণ ! যখন তোমরা আল্লাহর পথে জিহাদ করার জন্য বের হও তখন বন্ধু ও শত্রুর মধ্যে পার্থক্য করো (আন নিসা ৯৪) এই আয়াতের অর্থ হলো এই যে , কোন ব্যক্তির ইসলাম গ্রহণের পর ঐ পর্যন্ত তার জীবনের নিরাপত্তা বিধান করতে হবে যে পর্যন্ত ইসলামের পরিপন্থী কোন কাজ তার থেকে প্রকাশ না পায় . আর যদি এর বিপরীত কোন কাজ করা হয় তাহলে তাকে হত্যা করা যাবে কেননা আয়াতে বলা হয়েছে, তোমরা অনুসদ্ধানের মাধ্যমে নিরুপণ কর . আর হদি তাই না হত তাহলে এখানে { فَتَبَيَّنُوا } অর্থাৎ যাচাই কর এ শব্দের কোন মূল্যই থাকে না . অভাবে অন্যান্য হাদীসসমূহ ,যার আলোচনা পূর্বে বর্ননা করেছি অর্থাৎ যে ব্যক্তি ইসলাম এবং তাওহীদের স্বীকৃতি দান করল এবং এর পর ইসলাম পরিপন্থী কাজ থেকে বিরত থাকল তার জীবনের নিরাপত্তা বিধান করা ওয়াজিব , আর একথার দলিল হল রাসূল (সাঃ) হজরত উসমানকে বললেন তুমিকি তাকে " لا إله إلا الله " বলার পরও হত্যা করেছ ? রাসূল (সাঃ) বলেন , আমি মানুষের সাথে জিহাদ করার জন্যই আদিষ্ট হয়েছি যে পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য আর কোন মাবুদ নেই . আবার তিনিই খারেজিদের সম্পর্কে বলেনঃ

" তোমরা যেখানেই তাদের দেখা পাও সেখানেই তাদেরকে হত্যা কর,আমি যদি তাদেরকে পেতাম তাহলে ''আদ জাতির হত্যার মত তাদেরকে হত্যা করতাম " অথচ এরাই ছিল তখনকার সময় সব চেয়ে বেশী আল্লাহর মহত্ব বর্ণনাকারী . এমন কি সাহাবায়ে কেরাম এ দিক থেকে এ সমস্ত লোদের তুলনায় নিজেদেরকে খুব খাট মনে করতেন , যদিও তারা সাহাবায়ে কেরামদের নিকট শিক্ষা গ্রহন করত . এদের নিকট থেকে ইসলাম বহিরর্ভূত কাজ প্রকাশ পাওয়ায় এদের "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" বলার বা এর প্রচার করা এবং ইবাদত করা ও মুখে ইসলামের দাবি করা কোন কিছুই তাদের কাজে আসলো না . এভাবে ইয়াহুদীদের সাথে যুদ্ধ করা এবং সাহাবাদের "বনু হানিফা" গোত্রের সাথে যুদ্ধ করার বিষয়গুলোও এখানে উল্লেখ যোগ্য .

এ প্রসঙ্গে হাফেজ ইবনে রজব তাঁর "কালিমাতুল ইখলাছ " নামক গ্রন্থে রাসূল (সাঃ) এর হাদীস আমি মানুষের সাথে জিহাদ করার জন্যই আদিষ্ট হয়েছি যে পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য আর কোন মাবুদ নেই এবং মোহাম্মদ সাঃ আল্লাহর রাসূল . এর ব্যাখ্যায় বলেন হজরত ওমর এবং একদল সাহাবা বুঝে ছিলেন যে , যে ব্যক্তি শুধুমাত্র তাওহীদ ও রিসালাতের সাক্ষ্য দান করবে একমাত্র এর উপর নির্ভর করে তাদের দুনিয়াবী শাস্তি থেকে অব্যাহতি দেয়া হবে এ জন্যই তাঁরা যাকাত প্রদান করতে যারা অস্বীকার করছে তাদের সাথে যুদ্ধের ব্যাপারে দ্বিধান্বিত হয়ে পরেছেন এবং আবুবকর (রাঃ) বলেছিলেন যে, ঐ প্রর্যন্ত তাদের যুদ্ধ থেকে অব্যাহতি দেয়া যাবেনা যে পর্যন্ত তারা যাকাত প্রদানে স্বীকৃতি না দিবে . কেননা রাসূল (সাঃ) বলেছেন, যারা "তাওহীদ ও রিসালাতের " সাক্ষ্য দিবে তারা আমার নিকট থেকে তাদের জীবনকে হেফাজত করবে তবে ইসলামি দন্ডে মৃত্যুদন্ডের উপযুক্ত হলে তা প্রয়োগ করা হবে এবং তাদের হিসাবের দযিত্ব আল্লাহর উপর বর্তাবে" লেখক আরো বলেছেন যাকাত হচ্ছে সম্পদের হক এবং আবুবকর (রাঃ) এটাই বুঝে ছিলেন .

রাসূল (সাঃ) হতে ইবনে ওমর, আনাছ ও অন্যান্য অনেক সাহাবা রাঃ বর্ননা করেন যে , তিনি বলেন . আমি মানুষের সাথে জিহাদ করার জন্যই আদিষ্ট হয়েছি যে পর্যন্ত না তারা সাক্ষ্য দেয় যে, আল্লাহ ছাড়া সত্য আর কোন মাবুদ নেই এবং মোহাম্মদ সাঃ আল্লাহর রাসূল এবং নামাজ প্রতিষ্ঠিত করবে ও যাকাত প্রদান করবে . আল্লাহ তা'য়ালার বানীগুলোও এ অর্থই বহন করে তিনি বলেনঃ فَإِن تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَخَلُّوا سَبِيلَهُمْ তারপর যদি তারা তাওবা করে, নামায কায়েম করে ও যাকাত দেয়, তাহলে তাদের ছেড়ে দাও৷(আত তাওবা -৫) আল্লাহ আরো বলেনঃ فَإِن تَابُوا وَأَقَامُوا الصَّلَاةَ وَآتَوُا الزَّكَاةَ فَإِخْوَانُكُمْ فِي الدِّينِ যদি তারা তাওবা করে নেয় এবং নামায কয়েম করে এবং যাকাত দেয় তাহলে তারা তোমাদের দীনী ভাই৷(আত তাওবা -১১) এ থেকে প্রমাণিত হয় যে , কোন ব্যক্তি সাথে দ্বীনি ভ্রাতৃত্ব ঐ পর্যন্ত প্রতিষ্ঠিত হবে না যে পর্যন্ত হে তাওহীদের স্বীকৃতির সাথে সাথে সমস্ত ফরজ ওয়াজিব আদায় না করবে . আর শিরক থেকে তাওবা করা ঐ পর্যন্ত প্রমাণিত হবে না যে পর্যন্ত তাওহীদের উপর অবিচল না থাকবে .

আবু বকর (রাঃ) যখন সাহাবাদের জন্য এটাই নির্ধারণ করলেন তখন তাঁরা এ রায়ের প্রতি ফিরে আসলেন এবং তাঁর সিদ্ধান্তই ঠিক মনে করলেন . এতে বুঝা গেল যে, দুনিয়ার শাস্তি থেকে শুধুমাত্র এই কালিমা পাঠ করলেই রেহাই পাওয়া যাবে না বরং ইসলামের কোন বিধি বিধান লঙ্ঘন করলে দুনিয়াতে যেমন শাস্তি ভোগ করতে হবে , তেমনি আখেরাতেও শাস্তি ভোগ করতে হবে . লেখক আরো বলেন (কালেমাতুল ইখলাস-৯-১১) আলেমদের মধ্যে অন্য একটি দল বলেন এই সমস্ত হাদিসের অর্থ হচ্ছে " لا إله إلا الله " মুখে উচ্চারন করা জান্নাতে প্রবেশ এবং জাহান্নাম থেকে নিস্কৃতি পাওয়ার একটা প্রধান উপকরণ এবং এর দাবি মাত্র . আর এ দাবির ফলাফল সিদ্ধি হবে শুধুমাত্র তখনই যখন প্রয়োজনীয় শর্তগুলো আদায় করা হবে এবং এর প্রতিবন্ধকতাগুলো দূর করা হবে . আর ঐ লক্ষ্যে পৌঁছার শর্ত গুলো যদি অনুপস্থিত থাকে,অথবা এর পরিপন্থী কোন কাজ পাওয়া যায় তবে এ কালিমা পাঠ করা এবং এর লক্ষ্যে পৌঁছার মাঝে অনেক প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হবে .

হাসানুল বসির এবং ওয়াহাব বিন মোনাববিহও এই মতই ব্যক্ত করেছেন এবং এ মতই হল অধিক স্পষ্ট . হাসানুল বসরি রাঃ থেকে আরো বর্ণিত হয়েছে. ফারাজদা নামক কবি তার স্ত্রীকে দাফন করার সময় হাসানুল বসরি বলেন, এ দিনের -কিয়ামতের জন্য কি প্রস্তুতি গ্রহন করেছ? উত্তরে ফারাজদাক বলেন, সত্তর বত্সর যাবত কালিমা " لا إله إلا الله " এর যে স্বীকৃতি দিয়ে আসছি সেটাই আমার সম্বল . হাসানুল বসরি বলেন, বেশ উত্তম প্রস্তুতি কিন্তু এই কালিমার কতগুলো শর্ত রয়েছে, তুমি অবশ্যই সতী-সাধবী নারীদের প্রতি অপবাদ আরোপ করে কবিতা লেখা থেকে নিজেকে বিরত রাখবে . হজরত সাসানুল বসরিকে প্রশ্ন করা হলো, কিছু সংখ্যক মানুষ বলে থাকে যে, যে ব্যক্তি বলবে " لا إله إلا الله " সে জান্নাতে প্রবেশ করবে তখন তিনি বলেন, যে ব্যক্তি বলবে, " লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" এবং এর ফরজ ওয়াজিব আদায় করবে সে জান্নাতে প্রবেশ করবে . এক ব্যক্তি ওয়াহাব বিন মোনাববিহ কে বললেন "লা ইলাহা ইল্লাল্লাহা" কি বেহেস্তের কুঞ্জি?

তিনি বলেন হাঁ তবে প্রত্যেক চাবির মধ্যে দাঁত কাটা থাকে তুমি যে চাবি নিয়ে আসবে তাতে যদি দাঁত থাকে তবেই তোমার জন্য জান্নাতের দরজা খোলা হবে, নইলে না . যারা বলে " লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" পড়লেই জানাতে যাবে " লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" বললেই তাদেরকে কাফের বলা যাবেনা , চাই মাজার পূজা ও পীর পূজা মধ্যে যত বড় শিরকের চর্চাই করুক না কেন . এ সমস্ত শিরক মিশ্রিত কর্মকান্ড যে, " লা ইলাহা ইল্লাল্লাহ" এর একে বারেই পরিপন্থী এ সন্দেহের অবসান করার জন্য আমি আহলে ইলমদের কথা থেকে যতটুকু এখানে উপস্থাপন করেছি তাই যথেষ্ট বলে মনেকরি .
যারা কুরআন ও হাদিসের সংক্ষিপ্ত উদ্ধৃতি সমূহকে বিশদ ব্যাখ্যা দ্বারা না বুঝে ভাসা-ভাসা অর্থ গ্রহন করে এবং এর পর এটাকে তাদের পক্ষের দলিল হিসাবে প্রমান করে, আর বিস্তারিত ব্যাখ্যাকারীর উদ্ধৃতিসমূহকে উপেক্ষা করে এটাই হচ্ছে মূলতঃ পথ ভ্রষ্টকারীদের কাজ . এদের অবস্থা হলো ঐ সমস্ত লোকদের মত যারা কুরআনের কিছু অংশে বিশ্বাস করে আর কিছু অংশের সাথে কুফরি করে এদের সম্পর্কে আল্লাহ তা'য়ালা বলেনঃ هُوَ الَّذي أَنزَلَ عَلَيكَ الكِتابَ مِنهُ آياتٌ مُحكَماتٌ هُنَّ أُمُّ الكِتابِ وَأُخَرُ مُتَشابِهاتٌ ۖ فَأَمَّا الَّذينَ في قُلوبِهِم زَيغٌ فَيَتَّبِعونَ ما تَشابَهَ مِنهُ ابتِغاءَ الفِتنَةِ وَابتِغاءَ تَأويلِهِ ۗ وَما يَعلَمُ تَأويلَهُ إِلَّا اللَّـهُ ۗ وَالرّاسِخونَ فِي العِلمِ يَقولونَ آمَنّا بِهِ كُلٌّ مِن عِندِ رَبِّنا ۗ وَما يَذَّكَّرُ إِلّا أُولُو الأَلبابِ ﴿٧﴾ رَبَّنا لا تُزِغ قُلوبَنا بَعدَ إِذ هَدَيتَنا وَهَب لَنا مِن لَدُنكَ رَحمَةً ۚ إِنَّكَ أَنتَ الوَهّابُ ﴿٨﴾ رَبَّنا إِنَّكَ جامِعُ النّاسِ لِيَومٍ لا رَيبَ فيهِ ۚ إِنَّ اللَّـهَ لا يُخلِفُ الميعادَ ﴿٩
তিনিই আপনার প্রতি কিতাব নাযিল করেছেন। তাতে কিছু আয়াত রয়েছে সুস্পষ্ট, সেগুলোই কিতাবের আসল অংশ। আর অন্যগুলো রূপক। সুতরাং যাদের অন্তরে কুটিলতা রয়েছে, তারা অনুসরণ করে ফিৎনা বিস্তার এবং অপব্যাখ্যার উদ্দেশে তন্মধ্যেকার রূপকগুলোর। আর সেগুলোর ব্যাখ্যা আল্লাহ ব্যতীত কেউ জানে না। আর যারা জ্ঞানে সুগভীর, তারা বলেনঃ আমরা এর প্রতি ঈমান এনেছি। এই সবই আমাদের পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ হয়েছে। আর বোধশক্তি সম্পন্নেরা ছাড়া অপর কেউ শিক্ষা গ্রহণ করে না। (7) হে আমাদের পালনকর্তা! সরল পথ প্রদর্শনের পর তুমি আমাদের অন্তরকে সত্যলংঘনে প্রবৃত্ত করোনা এবং তোমার নিকট থেকে আমাদিগকে অনুগ্রহ দান কর। তুমিই সব কিছুর দাতা। (8) হে আমাদের পালনকর্তা! তুমি মানুষকে একদিন অবশ্যই একত্রিত করবেঃ এতে কোনই সন্দেহ নেই। নিশ্চয় আল্লাহ তাঁর ওয়াদার অন্যথা করেন না। (9)

হে আল্লাহ আমাদেরকে তাওফিক দান করুন, সত্যকে সত্য হিসাবে গ্রহন করতে এবং মিথ্যাকে পরিহার করতে . আমীন .   
site search by freefind advanced

© 2014 by Ask Islam Bangla.
Powered by Create your own unique website with customizable templates.