গল্প ২২ --> লাজরাঙা হাসি ও অনন্ত প্রেম
আবুল আস। মনে মনে আশা খালাতো বোনকে বিয়ে করবেন। খালা তো রাজি। একদিন সাহস করে খালুজির কাছেও প্রস্তাবটা পাড়লেন:
-খালুজি! আমি যয়নবকে বিয়ে করতে চাই!
-তাই! ঠিক আছে, আমি একটু তোমার বোন আর খালার মতামতটা জেনে নিই।
-মামণি যয়নব! তুমি কি এ প্রস্তাবে রাজি?
লজ্জায় মেয়ের মুখ রাঙা হয়ে উঠলো। মুখে হালকা হাসির রেখা ফুটে উঠেই মিলিয়ে গেল। মেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে পায়ের আঙুল দিয়ে মাটি খুঁড়ছে। খাদীজা মেয়েকে সস্নেহে কোলে টেনে নিলেন।
ভালোবাসার সূচনা!
বিয়ে হয়ে গেল। জন্ম হলো ফুটফুটে দুটি সন্তানের। আলি ও উমামা। আবুল আস ব্যবসায়ী মানুষ। দেশে-বিদেশে ঘুরতে হয়। এবারও গেলেন। সফরশেষে ফিরে এলেন। একটুখানি জিরোবার পর, যয়নব বললেন:
-আব্বু নবী হয়েছেন। আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি।
-তুমি আগে আমাকে একটু জানালেই পারতে!
আবুল আস বেজার মুখে উঠে গেলেন। যায়নাব পিছু পিছু গিয়ে বললেন:
-কেন, আব্বু তো মিথ্যা বলেন না। সব সময় সত্য বলেন। আর আম্মু ও বোনেরাও ইসলামগ্রহণ করেছে। চাচাত ভাই আলি ইসলাম গ্রহণ করেছে। আপনার ফুফাত ভাই উসমানও ইসলাম গ্রহণ করেছে। আপনার বন্ধু আবু বাকরও ইসলাম গ্রহণ করেছে। আপনিও চলুন না আব্বুর কাছে!
-তুমি যাই বলে যায়নাব! লোকেরা বলবে: আবুল আস তার কওমকে ছেড়ে গেছে, স্ত্রীকে খুশি করতে গিয়ে বাবার ধর্মত্যাগ করেছে। আমি মানুষের এ-কটুক্তি অপবাদ সহ্য করতে পারবো না। আচ্ছা যয়নব, তুমি কি তোমার অবস্থানটা একটু পুনর্বিবেচনা করতে পারো না?
-না এ অসম্ভব! তবে আমি আপনার স্ত্রী। আপনি যাতে সত্যের সন্ধান পান, সেজন্য দু‘আ-চেষ্টা করে যাবো। আমি সুদিনের প্রতীক্ষা করবো।
যয়নব কথা রেখেছিলেন। তিনি তার ভালোবাসাকে হারিয়ে যেতে দেননি। বিশটা বছর তিনি পরম ধৈর্যের সাথে কাটিয়ে দিয়েছিলেন। তবুও অন্য কারও কথা ভাবেন নি।
বিচ্ছেদের ঘনঘটা!
হিজরতের মুহূর্ত ঘনিয়ে এল। যয়নব এসে বললেন:
-আব্বু! আমি কি আলি-উমামার বাবার সাথে মক্কায় থেকে যেতে পারবো?
-কেন পারবে না মা! অবশ্যই পারবে।
বদর যুদ্ধ দামামা বেজে উঠলো। সবার সাথে আবুল আসও কুরাইশদের সাথে এলেন। যোদ্ধাবেশে। শ্বশুরের বিরুদ্ধে। ভাই-বেরাদরদের বিরুদ্ধে।
যয়নব এমন কিছুরই আশংকা করে আসছিলেন এতদিন ধরে। তিনি আল্লাহর কাছে দু‘আ করলেন:
-আল্লাহ গো! আমি নিজে ইয়াতীম হওয়া বা আমার সন্তান ইয়াতীম হওয়া, দুটোকেই ভয় করি। আপনি হেফাযত করুন।
যুদ্ধ শেষ হলো। আল্লাহ যয়নবের দু‘আ কবুল করলেন। কেউ ইয়াতীম হলো না। আবুল আস বন্দী হলেন। সবাই মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পাচ্ছে। যায়নাব ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তার কাছে মুক্তিপণ দেয়ার মতো কিছুই নেই। সম্বল বলতে মায়ের দেয়া একটা হার আছে। মায়ের স্মৃতিমাখা হারটা দিয়ে দিতে বুকটা হু হু করে উঠলো। তবুও উপায় নেই।
আবুল আসের ভাই হারটা নিয়ে মদীনায় এলো। নবিজী সা. মসজিদে বসে আছেন। মুক্তিপণ নিয়ে একে একে বন্দীদের ছেড়ে দিচ্ছেন। এক সাহাবী তার হাতে মুক্তিপন তুলে দিচ্ছিলেন। এবার দিলেন একটা হার। নবিজী সাথে সাথে বললেন:
-এটা কার মুক্তিপণ?
-আবুল আসের।
নবিজী ডুকরে কেঁদে দিলেন। দু’চোখ বেয়ে অঝোরে অশ্রু ঝরতে শুরু করলো। মনে পড়ে গেল অনেক স্মৃতি। অনেক কথা। দাম্পত্য জীবনের সেরা সময়টা। খাদীজা যে কার প্রথম প্রেম! তিনি অকুল স্বরে বললেন:
-এ হে খাদীজার হার!
নবিজী মিনতি করে বললেন:
-সাহাবীরা! তোমাদের অনুমতি হলে, আবুল আসকে এমনি এমনি মুক্তি দেই? হারটা যে বড়ই স্মৃতিমাখা! মেয়েটা আমার হারটা হারিয়ে নিশ্চয় খুবই মনোকষ্টে আছে! আমার মা-মরা মেয়েটার জন্যে কি তোমরা সম্মতি দিবে!
-অবশ্যই ইয়া রাসূলাল্লাহ!
নবিজী হারটা আবুল আসের হাতে দিয়ে বললেন:
-যয়নবকে বলো, সে যেন মায়ের হারকে আর অবহেলা না করে।
এবার নবিজী আবুল আসকে নিয়ে এক কোনে গিয়ে কানে কানে বললেন:
-আবুল আস! আল্লাহ আমাকে আদেশ করেছেন, মুসলিম আর কাফিরের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে ফেলি। তুমি কি আমার মেয়েটাকে ফিরিয়ে দিবে?
-জ্বি পারবো।
আবুল আস মক্কায় গিয়ে যয়নাবকে মদীনায় পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন। বিদায়ের সময় যয়নব বললেন:
-আপনিও আমার সাথে চলুন না। মুসলিম হয়ে?
-না।
ভালোবাসার পরীক্ষা!
একের পর এক প্রস্তাব আসতে শুরু করলো। লোভনীয় সব পাত্র। যয়নব দৃঢ়চিত্তে সব প্রস্তাব এড়িয়ে গেলেন। আশায় আশায় কেটে গেলো ছয়টা বছর। প্রাণের মানুষটা বুঝি এই এলো! কিন্তু আর আসে না! এতদিনের সংসার, মানুষটার কি একটুও মনে পড়ে না! বাচ্চাগুলোর কথাও বুঝি ভাবে না!
আবুল আস ব্যবসার কাজে শামে গেলেন। সেখানে কিছু সাহাবীর সাথে দেখা হলো। তাদের কাছে যয়নবের খোঁজ-খবর নিলেন। ফেরার পথে মুসলমানদের হাতে বন্দী হলেন। আবুল আস ছুটে এসে, চুপি চুপি, ঠিক ফজরের আযানের আগমুহূর্তে যয়নবের দরজায় টোকা দিলেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটল বুঝি? যয়নব প্রথমেই প্রশ্ন করলেন:
-মুসলিম হয়ে এসেছেন?
-না লুকিয়ে এসেছি।
-মুসলমান হবেন?
-না।
-ঠিক আছে কোনও ভয় নেই। আমরা এখন স্বামী-স্ত্রী নেই। তবে খালাতো ভাইবোন তো আছি। আলি-উমামার পিতাকে স্বাগতম!
নবিজী ফজরের সালাম ফেরালেন। পেছন থেকে আওয়াজ এলো:
-আমি আবুল আসকে আশ্রয় দিয়েছি।
নবিজী বললেন:
-আমি যা শুনেছি, তোমরা কি তা শুনতে পেয়েছ?
-জ্বি ইয়া রাসূলাল্লাহ।
নবিজী আদরের বড় কন্যাকে বললেন:
-মা ভাইকে নিয়ে যাও। তবে মনে রেখো, সে তোমার জন্যে হালাল নয়। তার কাছে যেও না।
-জ্বি,ইয়া রাসুলাল্লাহ!
ঘরে এসে যয়নাব আবুল আসকে বললেন:
-আমাদের ছেড়ে যেতে কি আপনার একটুও কষ্ট হবে না? তার চেয়ে বরং ইসলাম গ্রহণ করে এখানেই থেকে যান না!
-না।
আবুল আস মক্কায় ফিরে গেলেন। প্রথমেই ব্যবসার শরীকদারদেরকে যার যার হিশেব বুঝিয়ে দিলেন।
আল্লাহ আসীম মহিমা। আবুল মদীনার পথ ধরলেন। আগের মতোই ফজরের সময়:
-ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি ইসলাম গ্রহণ করতে এসেছি। নবিজী ভীষণ খুশি হলেন।
-ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যায়নাবকে ফিরে পাব?
-চলো দেখি!
-কই গো মা যয়নব! দেখো কাকে নিয়ে এসেছি! তোমার খালাত ভাই তোমাকে পুনরায় বিয়ে করতে আগ্রহী তুমি কি সম্মত আছ?
মেয়ে আবার লজ্জায় রাঙা হলো। কিন্তু এবার তো স্নেহময়ী মা নেই। কার আঁচলে লুকোবেন?
এক বছর পর যয়নব মারা গেলেন। আবুল আস ভীষণ শোকাহত হলেন। মানুষ অবাক হয়ে দেখলো:
-নবিজী আবুল আসের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে সান্ত¦না দিচ্ছে। প্রবোধ দিচ্ছেন জামাইকে। নিজের চোখেও পানি।
আবুল আস নবিজীকে বললেন:
-আল্লাহর কসম! ইয়া রাসুলাল্লাহ! যয়নব ছাড়া পৃথিবীতে বেঁচে থাকা আমার জন্যে খুবই কষ্টকর হবে!
স্ত্রীর শোক সইতে না পেরে, এক বছর পর আবুল আসও মারা গেলেন।
রাদিয়াল্লাহু আনহুম।
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
---
লেখক - আতিক উল্লাহ আতিক
LTA-15.205
-খালুজি! আমি যয়নবকে বিয়ে করতে চাই!
-তাই! ঠিক আছে, আমি একটু তোমার বোন আর খালার মতামতটা জেনে নিই।
-মামণি যয়নব! তুমি কি এ প্রস্তাবে রাজি?
লজ্জায় মেয়ের মুখ রাঙা হয়ে উঠলো। মুখে হালকা হাসির রেখা ফুটে উঠেই মিলিয়ে গেল। মেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে পায়ের আঙুল দিয়ে মাটি খুঁড়ছে। খাদীজা মেয়েকে সস্নেহে কোলে টেনে নিলেন।
ভালোবাসার সূচনা!
বিয়ে হয়ে গেল। জন্ম হলো ফুটফুটে দুটি সন্তানের। আলি ও উমামা। আবুল আস ব্যবসায়ী মানুষ। দেশে-বিদেশে ঘুরতে হয়। এবারও গেলেন। সফরশেষে ফিরে এলেন। একটুখানি জিরোবার পর, যয়নব বললেন:
-আব্বু নবী হয়েছেন। আমি ইসলাম গ্রহণ করেছি।
-তুমি আগে আমাকে একটু জানালেই পারতে!
আবুল আস বেজার মুখে উঠে গেলেন। যায়নাব পিছু পিছু গিয়ে বললেন:
-কেন, আব্বু তো মিথ্যা বলেন না। সব সময় সত্য বলেন। আর আম্মু ও বোনেরাও ইসলামগ্রহণ করেছে। চাচাত ভাই আলি ইসলাম গ্রহণ করেছে। আপনার ফুফাত ভাই উসমানও ইসলাম গ্রহণ করেছে। আপনার বন্ধু আবু বাকরও ইসলাম গ্রহণ করেছে। আপনিও চলুন না আব্বুর কাছে!
-তুমি যাই বলে যায়নাব! লোকেরা বলবে: আবুল আস তার কওমকে ছেড়ে গেছে, স্ত্রীকে খুশি করতে গিয়ে বাবার ধর্মত্যাগ করেছে। আমি মানুষের এ-কটুক্তি অপবাদ সহ্য করতে পারবো না। আচ্ছা যয়নব, তুমি কি তোমার অবস্থানটা একটু পুনর্বিবেচনা করতে পারো না?
-না এ অসম্ভব! তবে আমি আপনার স্ত্রী। আপনি যাতে সত্যের সন্ধান পান, সেজন্য দু‘আ-চেষ্টা করে যাবো। আমি সুদিনের প্রতীক্ষা করবো।
যয়নব কথা রেখেছিলেন। তিনি তার ভালোবাসাকে হারিয়ে যেতে দেননি। বিশটা বছর তিনি পরম ধৈর্যের সাথে কাটিয়ে দিয়েছিলেন। তবুও অন্য কারও কথা ভাবেন নি।
বিচ্ছেদের ঘনঘটা!
হিজরতের মুহূর্ত ঘনিয়ে এল। যয়নব এসে বললেন:
-আব্বু! আমি কি আলি-উমামার বাবার সাথে মক্কায় থেকে যেতে পারবো?
-কেন পারবে না মা! অবশ্যই পারবে।
বদর যুদ্ধ দামামা বেজে উঠলো। সবার সাথে আবুল আসও কুরাইশদের সাথে এলেন। যোদ্ধাবেশে। শ্বশুরের বিরুদ্ধে। ভাই-বেরাদরদের বিরুদ্ধে।
যয়নব এমন কিছুরই আশংকা করে আসছিলেন এতদিন ধরে। তিনি আল্লাহর কাছে দু‘আ করলেন:
-আল্লাহ গো! আমি নিজে ইয়াতীম হওয়া বা আমার সন্তান ইয়াতীম হওয়া, দুটোকেই ভয় করি। আপনি হেফাযত করুন।
যুদ্ধ শেষ হলো। আল্লাহ যয়নবের দু‘আ কবুল করলেন। কেউ ইয়াতীম হলো না। আবুল আস বন্দী হলেন। সবাই মুক্তিপণ দিয়ে ছাড়া পাচ্ছে। যায়নাব ভীষণ চিন্তিত হয়ে পড়লেন। তার কাছে মুক্তিপণ দেয়ার মতো কিছুই নেই। সম্বল বলতে মায়ের দেয়া একটা হার আছে। মায়ের স্মৃতিমাখা হারটা দিয়ে দিতে বুকটা হু হু করে উঠলো। তবুও উপায় নেই।
আবুল আসের ভাই হারটা নিয়ে মদীনায় এলো। নবিজী সা. মসজিদে বসে আছেন। মুক্তিপণ নিয়ে একে একে বন্দীদের ছেড়ে দিচ্ছেন। এক সাহাবী তার হাতে মুক্তিপন তুলে দিচ্ছিলেন। এবার দিলেন একটা হার। নবিজী সাথে সাথে বললেন:
-এটা কার মুক্তিপণ?
-আবুল আসের।
নবিজী ডুকরে কেঁদে দিলেন। দু’চোখ বেয়ে অঝোরে অশ্রু ঝরতে শুরু করলো। মনে পড়ে গেল অনেক স্মৃতি। অনেক কথা। দাম্পত্য জীবনের সেরা সময়টা। খাদীজা যে কার প্রথম প্রেম! তিনি অকুল স্বরে বললেন:
-এ হে খাদীজার হার!
নবিজী মিনতি করে বললেন:
-সাহাবীরা! তোমাদের অনুমতি হলে, আবুল আসকে এমনি এমনি মুক্তি দেই? হারটা যে বড়ই স্মৃতিমাখা! মেয়েটা আমার হারটা হারিয়ে নিশ্চয় খুবই মনোকষ্টে আছে! আমার মা-মরা মেয়েটার জন্যে কি তোমরা সম্মতি দিবে!
-অবশ্যই ইয়া রাসূলাল্লাহ!
নবিজী হারটা আবুল আসের হাতে দিয়ে বললেন:
-যয়নবকে বলো, সে যেন মায়ের হারকে আর অবহেলা না করে।
এবার নবিজী আবুল আসকে নিয়ে এক কোনে গিয়ে কানে কানে বললেন:
-আবুল আস! আল্লাহ আমাকে আদেশ করেছেন, মুসলিম আর কাফিরের মধ্যে বিবাহ বিচ্ছেদ ঘটিয়ে ফেলি। তুমি কি আমার মেয়েটাকে ফিরিয়ে দিবে?
-জ্বি পারবো।
আবুল আস মক্কায় গিয়ে যয়নাবকে মদীনায় পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন। বিদায়ের সময় যয়নব বললেন:
-আপনিও আমার সাথে চলুন না। মুসলিম হয়ে?
-না।
ভালোবাসার পরীক্ষা!
একের পর এক প্রস্তাব আসতে শুরু করলো। লোভনীয় সব পাত্র। যয়নব দৃঢ়চিত্তে সব প্রস্তাব এড়িয়ে গেলেন। আশায় আশায় কেটে গেলো ছয়টা বছর। প্রাণের মানুষটা বুঝি এই এলো! কিন্তু আর আসে না! এতদিনের সংসার, মানুষটার কি একটুও মনে পড়ে না! বাচ্চাগুলোর কথাও বুঝি ভাবে না!
আবুল আস ব্যবসার কাজে শামে গেলেন। সেখানে কিছু সাহাবীর সাথে দেখা হলো। তাদের কাছে যয়নবের খোঁজ-খবর নিলেন। ফেরার পথে মুসলমানদের হাতে বন্দী হলেন। আবুল আস ছুটে এসে, চুপি চুপি, ঠিক ফজরের আযানের আগমুহূর্তে যয়নবের দরজায় টোকা দিলেন। দীর্ঘ প্রতীক্ষার অবসান ঘটল বুঝি? যয়নব প্রথমেই প্রশ্ন করলেন:
-মুসলিম হয়ে এসেছেন?
-না লুকিয়ে এসেছি।
-মুসলমান হবেন?
-না।
-ঠিক আছে কোনও ভয় নেই। আমরা এখন স্বামী-স্ত্রী নেই। তবে খালাতো ভাইবোন তো আছি। আলি-উমামার পিতাকে স্বাগতম!
নবিজী ফজরের সালাম ফেরালেন। পেছন থেকে আওয়াজ এলো:
-আমি আবুল আসকে আশ্রয় দিয়েছি।
নবিজী বললেন:
-আমি যা শুনেছি, তোমরা কি তা শুনতে পেয়েছ?
-জ্বি ইয়া রাসূলাল্লাহ।
নবিজী আদরের বড় কন্যাকে বললেন:
-মা ভাইকে নিয়ে যাও। তবে মনে রেখো, সে তোমার জন্যে হালাল নয়। তার কাছে যেও না।
-জ্বি,ইয়া রাসুলাল্লাহ!
ঘরে এসে যয়নাব আবুল আসকে বললেন:
-আমাদের ছেড়ে যেতে কি আপনার একটুও কষ্ট হবে না? তার চেয়ে বরং ইসলাম গ্রহণ করে এখানেই থেকে যান না!
-না।
আবুল আস মক্কায় ফিরে গেলেন। প্রথমেই ব্যবসার শরীকদারদেরকে যার যার হিশেব বুঝিয়ে দিলেন।
আল্লাহ আসীম মহিমা। আবুল মদীনার পথ ধরলেন। আগের মতোই ফজরের সময়:
-ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি ইসলাম গ্রহণ করতে এসেছি। নবিজী ভীষণ খুশি হলেন।
-ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমি যায়নাবকে ফিরে পাব?
-চলো দেখি!
-কই গো মা যয়নব! দেখো কাকে নিয়ে এসেছি! তোমার খালাত ভাই তোমাকে পুনরায় বিয়ে করতে আগ্রহী তুমি কি সম্মত আছ?
মেয়ে আবার লজ্জায় রাঙা হলো। কিন্তু এবার তো স্নেহময়ী মা নেই। কার আঁচলে লুকোবেন?
এক বছর পর যয়নব মারা গেলেন। আবুল আস ভীষণ শোকাহত হলেন। মানুষ অবাক হয়ে দেখলো:
-নবিজী আবুল আসের চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে সান্ত¦না দিচ্ছে। প্রবোধ দিচ্ছেন জামাইকে। নিজের চোখেও পানি।
আবুল আস নবিজীকে বললেন:
-আল্লাহর কসম! ইয়া রাসুলাল্লাহ! যয়নব ছাড়া পৃথিবীতে বেঁচে থাকা আমার জন্যে খুবই কষ্টকর হবে!
স্ত্রীর শোক সইতে না পেরে, এক বছর পর আবুল আসও মারা গেলেন।
রাদিয়াল্লাহু আনহুম।
সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম
---
লেখক - আতিক উল্লাহ আতিক
LTA-15.205
© 2015 by Ask Islam Bangla.