প্রশ্ন ৫৭ --> ইয়াজুয-মা’জুয সম্পর্কে জানতে চাই
উত্তর :
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
ইয়াজুয-মা’জুযের দল বের হওয়া কিয়ামতের একটি অন্যতম বড় আলামত। এরা বের হয়ে পৃথিবীতে বিপর্যয় ও মহা ফিতনার সৃষ্টি করবে। এরা বর্তমানে যুল-কারনাইন বাদশা কতৃক নির্মিত প্রাচীরের ভিতরে অবস্থান করছে। কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্তে তারা দলে দলে মানব সমাজের ভিতরে চলে এসে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালাবে। তাদের মোকাবেলা করার মত তখন কারো কোন শক্তি থাকবেনা।
তাদের পরিচয় সম্পর্কে বিভিন্ন কথা বর্ণিত হয়েছে। কোন কোন আলেম বলেনঃ তারা শুধু মাত্র আদমের বংশধর। আদম ও হাওয়ার বংশধর নয়। কারণ হিসেবে বলেনঃ আদম (আঃ)এর একবার স্বপ্নদোষ হয়েছিল। এর মাধ্যমে বীর্যপাত হয়ে মাটির সাথে মিশে গেলে তা থেকে আল্লাহ তায়ালা ইয়াজুয-মা’জুয জাতি সৃষ্টি করেন। ইবনে হাজার (রঃ) বলেনঃ কথাটি পূর্ব যুগের কোন গ্রহণযোগ্য আলেম কর্তৃক বর্ণিত হয়নি। শুধুমাত্র কা’ব আল-আহবার থেকে বর্ণিত হয়েছে। কথাটি সুস্পষ্ট মারফূ হাদীছের বিরোধী হওয়ায় তা গ্রহণযোগ্য নয়। মোটকথা তারা তুর্কীদের পূর্ব পুরুষ ইয়াফিছের বংশধর। আর ইয়াফিছ হলো নূহ (আঃ)এর সন্তান। কাজেই তারা আদম-হাওয়ারই সন্তান। প্রমাণে বুখারী শরীফের হাদীছটি উল্লেখযোগ্য। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
অর্থঃ “রোজ হাশরে আল্লাহ তা’আলা আদমকে বলবেনঃ হে আদম! আদম বলবেনঃ আমি আপনার দরবারে উপস্থিত আছি। সমস্ত কল্যাণ আপনার হাতে। আল্লাহ বলবেনঃ জাহান্নামের বাহিনীকে আলাদা করো। আদম বলবেনঃ কারা জাহান্নামের অধিবাসী। আল্লাহ বলবেনঃ প্রতি হাজারের মধ্যে নয়শত নিরানব্বই জন। এ সময় শিশু সন্তান বৃদ্ধ হয়ে যাবে, গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভের সন্তান পড়ে যাবে এবং মানুষদেরকে আপনি মাতাল অবস্থায় দেখতে পাবেন। অথচ তারা মাতাল নয়। আল্লাহর আযাবের ভয়াবহতা অবলোকন করার কারণেই তাদেরকে মাতালের মত দেখা যাবে। সাহবীগণ বললেনঃ আমাদের মধ্য থেকে কি হবে সেই বাকী একজন? উত্তরে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো। তোমাদের মধ্যে থেকে হবে একজন। আর ইয়াজুয-মা’জুযের মধ্যে থেকে হবে নয়শত নিরানব্বই জন। আল্লাহর শপথ! আমি আশা করি তোমরা জান্নাতীদের চারভাগের একভাগ হবে। আমরা এটা শুনে তাকবীর পাঠ করলাম। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি আশা করি তোমরা জান্নাতীদের তিনভাগের একভাগ হবে। আমরা এটা শুনেও তাকবীর পাঠ করলাম। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি আশা করি তোমরা জান্নাতীদের দু’ভাগের একভাগ হবে। আমরা এটা শুনেও তাকবীর পাঠ করলাম। পরিশেষে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা সমগ্র মানব জাতির মধ্যে একটি সাদা গরুর চামড়ায় একটি কালো লোমের মত। (সহিহ বুখারী :: খন্ড ৪ :: অধ্যায় ৫৫ :: হাদিস ৫৬৭)
কুরআন ও হাদীছ থেকে ইয়াজুয-মাজুয সম্পর্কে যা জানা যায়ঃ
আল্লাহর দু’জন সৎ বান্দা সমগ্র পৃথিবীর বাদশা হয়েছিলেন। একজন হলেন আল্লাহর নবী সুলায়মান ইবনে দাউদ (আঃ) আর অন্যজন যুল-কারনাইন বাদশা। যুলকারনাইন বাদশা পূর্ব-পশ্চিম প্রান্তসহ সমগ্র পৃথিবী পরিভ্রমণ করেছিলেন। কুরআন মাজীদের সূরা কাহাফে তাঁর ভ্রমণ কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। তাঁর ভ্রমণের কাহিনীর এক পর্যায়ে ইয়াজুয-মা’জুযের বিবরণ এসেছে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
“অতঃপর তিনি পথ অবলম্বন করলেন। চলতে চলতে তিনি যখন দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছলেন তখন তথায় এমন এক জাতির সন্ধান পেলেন যারা তাঁর কথা একেবারেই বুঝতে পারছিলনা। তারা বললঃ হে যুল-কারনাইন! ইয়াজুয ও মা’জুয পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করছে। আমরা কি আপনাকে বিনিময় স্বরূপ কর প্রদান করবো এই শর্তে যে, আপনি আমাদের ও তাদের মাঝখানে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দিবেন? যুল-কারনাইন বললেনঃ আমার প্রভু আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছেন তাই যথেষ্ট। তোমরা আমাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য কর। আমি তোমাদের ও তাদের মাঝখানে একটি মজবুত প্রাচীর তৈরী করে দিবো। তোমরা লোহার পাত নিয়ে আসো। অতঃপর যখন দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী ফাঁকাস্থান পূর্ণ হয়ে লৌহ স্তুপ দুই পর্বতের সমান হলো তখন যুল-কারনাইন বললেনঃ তোমরা ফুঁক দিয়ে আগুন জ্বালাও। যখন ওটা আগুনে পরিণত হলো তখন তিনি বললেনঃ তোমরা গলিত তামা আনয়ন করো, ওটা আগুনের উপরে ঢেলে দেই। এভাবে প্রাচীর নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর ইয়াজুয ও মা’জুয তা অতিক্রম করতে পারলোনা এবং তা ছিদ্র করতেও সক্ষম হলোনা। যুল-কারনাইন বললেনঃ এটা আমার প্রভুর অনুগ্রহ। যখন আমার প্রভুর ওয়াদা পূরণের সময় (কিয়ামত) নিকটবর্তী হবে তখন তিনি প্রাচীরকে ভেঙ্গে চুরমার করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিবেন। আমার প্রতিপালকের ওয়াদা অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে। সেদিন আমি তাদেরকে ছেড়ে দেবো দলের পর দলে সাগরের ঢেউয়ের আকারে। এবং শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে। অতঃপর আমি তাদের সকলকেই একত্রিত করবো। (সূরা কাহাফঃ ৯২-৯৯)
আখেরী যামানায় কিয়ামতের পূর্বে পাহাড় ভেদ করে ইয়াজুয ও মা’জুযের আগমণ সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা অন্যত্র বলেনঃ
“এমন কি যখন ইয়াজুয ও মা’জুযকে মুক্ত করা করা হবে তখন তারা প্রত্যেক উঁচু ভূমি থেকে দলে দলে ছুটে আসবে। যখন সত্য প্রতিশ্রুতি নিকটবর্তী হবে তখন কাফেরদের চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। তারা বলবেঃ হায় দুর্ভোগ আমাদের! আমরা তো ছিলাম এবিষয়ে উদাসীন; বরং আমরা ছিলাম জালেম। (সূরা আম্বিয়াঃ ৯৬-৯৭)
এই আয়াতগুলো প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তা’আলা ন্যায় পরায়ন বাদশা যুল-কারনাইনকে ইয়াজুয-মা’জুযের বিশাল প্রাচীর নির্মাণের ক্ষমতা দিয়েছিলেন। যাতে তারা মানুষের মাঝে এবং পৃথিবীতে অশান্তি ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে না পারে। যখন নির্দিষ্ট সময় এসে যাবে এবং কিয়ামত নিকটবর্তী হবে তখন উক্ত প্রাচীর ভেঙ্গে যাবে। প্রচন্ড বেগে তারা দলে দলে বের হয়ে আসবে। কোন শক্তিই তাদের সামনে দাঁড়াতে পারবেনা। পৃথিবীতে তারা অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। আর এটি হবে শিংগায় ফুঁক দেয়া, দুনিয়া ধ্বংস ও কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার অতি নিকটবর্তী সময়ে।
বুখারী ও মুসলিম শরীফে যায়নাব বিনতে জাহ্শ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে,
“একদা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নিকটে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে প্রবেশ করলেন। তিনি বলছিলেনঃ (لَا إلَهَ إلَا اللَّهُ)| আরবদের জন্য ধ্বংস! একটি অকল্যাণ তাদের অতি নিকটবর্তী হয়ে গেছে। আজ ইয়াজুয-মা’জুযের প্রাচীর এই পরিমাণ খুলে দেয়া হয়েছে। এ কথা বলে তিনি হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলী ও তার পার্শ্বের আঙ্গুল দিয়ে বৃত্ত তৈরী করে দেখালেন। যায়নাব বিনতে জাহ্শ (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মাঝে সৎ লোক থাকতেও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো? নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ, যখন পাপ কাজ বেড়ে যাবে। (সহিহ বুখারী :: খন্ড ৪ :: অধ্যায় ৫৫ :: হাদিস ৫৬৫)
ইয়াজুয-মা’জুয কখন বের হবে?
কুরআনের বর্ণনা থেকে যা জানা যায়, তাহলো কিয়ামতের পূর্বমুহূর্তে তারা মানব সমাজে চলে এসে ব্যাপক অশান্তি ও বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।
“ইয়াজুয-মা’জুয প্রাচীরের ভিতর থেকে বের হওয়ার জন্য প্রতিদিন খনন কাজে লিপ্ত রয়েছে। খনন করতে করতে যখন তারা বের হওয়ার কাছাকাছি এসে যায় এবং সূর্যের আলো দেখতে পায় তখন তাদের নেতা বলেঃ ফিরে চলে যাও, আগামীকাল এসে খনন কাজ শেষ করে সকাল সকাল বের হয়ে যাব। আল্লাহ তা’আলা রাত্রিতে প্রাচীরকে আগের চেয়ে আরো শক্তভাবে বন্ধ করে দেন। প্রতিদিন এভাবেই তাদের কাজ চলতে থাকে। অতঃপর আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত মেয়াদ যখন শেষ হবে এবং তিনি তাদেরকে বের করতে চাইবেন তখন তারা খনন করবে এবং খনন করতে করতে যখন সূর্যের আলো দেখতে পাবে তখন তাদের নেতা বলবেঃ ফিরে চলে যাও। ইনশা-আল্লাহ আগামীকাল এসে খনন কাজ শেষ করে সকাল সকাল বের হয়ে যাবো। এবার তারা ইনশা-আল্লাহ বলবে। অথচ এর আগে কখনও তা বলেনি। তাই পরের দিনি এসে দেখবে যেভাবে রেখে গিয়েছিল সেভাবেই রয়ে গেছে। অতি সহজেই তা খনন করে মানব সমাজে বের হয়ে আসবে। তারা পৃথিবীর নদী-নালার সমস্ত পানি পান করে ফেলবে। এমনকি তাদের প্রথম দল কোন একটি নদীর পাশে গিয়ে নদীর সমস্ত পানি পান করে শুকিয়ে ফেলবে। পরবর্তী দলটি সেখানে এসে কোন পানি দেখতে না পেয়ে বলবেঃ এখানে তো এক সময় পানি ছিল। তাদের ভয়ে লোকেরা নিজ নিজ সহায়-সম্পদ নিয়ে অবরুদ্ধ শহর অথবা দুর্গের মধ্যে প্রবেশ করবে। ইয়াজুয-মা’জুযের দল যখন পৃথিবীতে কোন মানুষ দেখতে পাবেনা তখন তাদের একজন বলবে যমিনের সকল অধিবাসীকে খতম করেছি। আকাশের অধিবাসীরা বাকী রয়েছে। এই বলে তারা আকাশের দিকে তীর নিক্ষেপ করবে। রক্ত মিশ্রিত হয়ে তীর ফেরত আসবে। তখন তারা বলবে যমিনের অধিবাসীকে পরাজিত করেছি এবং আকাশের অধিবাসী পর্যন্ত পৌঁছে গেছি। অতঃপর আল্লাহ তাদের ঘাড়ে নাগাফ নামক এক শ্রেণীর পোঁকা প্রেরণ করবেন। এতে এক সময়ে একটি প্রাণী মৃত্যু বরণ করার মতই তারা সকলেই হালাক হয়ে যাবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “আল্লাহর শপথ! তাদের মরা দেহ এবং চর্বি ভক্ষণ করে যমিনের জীব-জন্তু ও কীটপতঙ্গ মোটা হয়ে যাবে এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবে।" (সুনানু ইবনে মাজাহ্ :: হাদিস ৪০৮০)
তবে নির্দিষ্টভাবে তাদের আগমণ হবে ঈসা (আঃ)এর আগমণ এবং দাজ্জালকে পরাজিত করার পর। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
“অতঃপর ঈসা (আঃ)এর নিকট এমন কিছু লোক আসবেন, যাদেরকে আল্লাহ তা’আলা দাজ্জালের ফিতনা হতে হেফাযত করেছেন। তিনি তাদের চেহারায় হাত বুলাবেন এবং বেহেশতের মধ্যে তাদের উচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে সংবাদ দিবেন। ঈসা (আঃ) যখন এ অবস্থায় থাকবেন তখন আল্লাহ তা’আলা তাকে জানাবেন যে, আমি এমন একটি জাতি বের করেছি, যাদের সাথে মোকাবেলা করার ক্ষমতা কারো নেই। কাজেই আপনি আমার বান্দাদেরকে নিয়ে তুর পাহাড়ে উঠে যান। এ সময় আল্লাহ তাআলা ইয়াজুয-মাজুযের বাহিনী প্রেরণ করবেন। তারা প্রত্যেক উঁচু ভূমি থেকে বের হয়ে আসবে। তাদের প্রথম দলটি ফিলিস্তীনের তাবারীয়া জলাশয়ের সমস্ত পানি পান করে ফেলবে। তাদের শেষ দলটি সেখানে এসে কোন পানি না পেয়ে বলবেঃ এক সময় এখানে পানি ছিল। তারা আল্লাহর নবী ও তার সাথীদেরকে অবরোধ করে রাখবে। ঈসা (আঃ) ও তার সাথীগণ প্রচন্ড খাদ্যাভাবে পড়বেন। এমনকি বর্তমানে তোমাদের কাছে একশত স্বর্ণ মুদ্রার চেয়ে তাদের কাছে একটি গরুর মাথা তখন বেশী প্রিয় হবে। আল্লাহর নবী ঈসা ও তাঁর সাথীগণ এই ফিতনা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করবেন। আল্লাহ তাদের দু’আ কবূল করে ইয়াজুয-মা’জুযের ঘাড়ে ‘নাগাফ’ নামক একশ্রেণীর পোঁকা প্রেরণ করবেন। এতে এক সময়ে একটি প্রাণী মৃত্যু বরণ করার মত তারা সকলেই হালাক হয়ে যাবে। অতঃপর আল্লাহর নবী ঈসা ও তার সাহাবীগণ যমিনে নেমে এসে দেখবেন ইয়াজুয-মাজুযের মরা-পচা লাশ ও তাদের শরীরের চর্বিতে সমগ্র যমিন ভরপূর হয়ে গেছে। কোথাও অর্ধহাত জায়গাও খালি নেই। আল্লাহর নবী ঈসা ও তাঁর সাথীগণ আল্লাহর কাছে আবার দু’আ করবেন। আল্লাহ তাদের দু’আ কবূল করে উটের গর্দানের মত লম্বা লম্বা একদল পাখি পাঠাবেন। আল্লাহর আদেশে পাখিগুলো তাদেরকে অন্যত্র নিক্ষেপ করে পৃথিবীকে পরিস্কার করবে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। এতে পৃথিবী একেবারে আয়নার মত পরিস্কার হয়ে যাবে। (সুনানু ইবনে মাজাহ্ :: হাদিস ৪০৭৫)
ইয়াজুয-মা’জুয ধ্বংসের পর পৃথিবীর সুখ স্বাচ্ছন্দ্যঃ
......... এতে পৃথিবী একেবারে আয়নার মত পরিস্কার হয়ে যাবে। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা যমিনকে ফসল-ফলাদি উৎপন্ন করার আদেশ দিবেন। যমিন সকল প্রকার ফল ও ফসল উৎপন্ন করবে। ফলগুলো এত বড় হবে যে, একটি ডালিম এক দল মানুষের জন্য যথেষ্ট হবে। লোকেরা ডালিমের খোসার নিচে ছাঁয়া গ্রহণ করতে পারবে। দুধে বরকত দেয়া হবে। একটি উটের দুধ সেদিন কয়েকটি গোত্রের জন্য যথেষ্ট হবে, একটি গাভীর দুধ একটি গোত্রের লোকের জন্য যথেষ্ট হবে এবং একটি ছাগলের দুধ এক পরিবারের সকলের জন্য যথেষ্ট হবে। (সুনানু ইবনে মাজাহ্ :: হাদিস ৪০৭৫)
মোটকথা মানুষের মাঝে তখন চরম সুখ-শান্তি বিরাজ করবে। কোন প্রকার অভাব-অনটন থাকবেনা। সকল বস্তুতে আল্লাহর তরফ থেকে বরকত নাযিল হবে। আল্লাহর ইচ্ছায় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এ অবস্থা বিরাজ করবে। কতই না সুন্দর হবে তখনকার মানুষের জীবন ব্যবস্থা!
LTA-46.185
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
ইয়াজুয-মা’জুযের দল বের হওয়া কিয়ামতের একটি অন্যতম বড় আলামত। এরা বের হয়ে পৃথিবীতে বিপর্যয় ও মহা ফিতনার সৃষ্টি করবে। এরা বর্তমানে যুল-কারনাইন বাদশা কতৃক নির্মিত প্রাচীরের ভিতরে অবস্থান করছে। কিয়ামতের পূর্ব মুহূর্তে তারা দলে দলে মানব সমাজের ভিতরে চলে এসে ব্যাপক হত্যাযজ্ঞ চালাবে। তাদের মোকাবেলা করার মত তখন কারো কোন শক্তি থাকবেনা।
তাদের পরিচয় সম্পর্কে বিভিন্ন কথা বর্ণিত হয়েছে। কোন কোন আলেম বলেনঃ তারা শুধু মাত্র আদমের বংশধর। আদম ও হাওয়ার বংশধর নয়। কারণ হিসেবে বলেনঃ আদম (আঃ)এর একবার স্বপ্নদোষ হয়েছিল। এর মাধ্যমে বীর্যপাত হয়ে মাটির সাথে মিশে গেলে তা থেকে আল্লাহ তায়ালা ইয়াজুয-মা’জুয জাতি সৃষ্টি করেন। ইবনে হাজার (রঃ) বলেনঃ কথাটি পূর্ব যুগের কোন গ্রহণযোগ্য আলেম কর্তৃক বর্ণিত হয়নি। শুধুমাত্র কা’ব আল-আহবার থেকে বর্ণিত হয়েছে। কথাটি সুস্পষ্ট মারফূ হাদীছের বিরোধী হওয়ায় তা গ্রহণযোগ্য নয়। মোটকথা তারা তুর্কীদের পূর্ব পুরুষ ইয়াফিছের বংশধর। আর ইয়াফিছ হলো নূহ (আঃ)এর সন্তান। কাজেই তারা আদম-হাওয়ারই সন্তান। প্রমাণে বুখারী শরীফের হাদীছটি উল্লেখযোগ্য। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
অর্থঃ “রোজ হাশরে আল্লাহ তা’আলা আদমকে বলবেনঃ হে আদম! আদম বলবেনঃ আমি আপনার দরবারে উপস্থিত আছি। সমস্ত কল্যাণ আপনার হাতে। আল্লাহ বলবেনঃ জাহান্নামের বাহিনীকে আলাদা করো। আদম বলবেনঃ কারা জাহান্নামের অধিবাসী। আল্লাহ বলবেনঃ প্রতি হাজারের মধ্যে নয়শত নিরানব্বই জন। এ সময় শিশু সন্তান বৃদ্ধ হয়ে যাবে, গর্ভবতী মহিলাদের গর্ভের সন্তান পড়ে যাবে এবং মানুষদেরকে আপনি মাতাল অবস্থায় দেখতে পাবেন। অথচ তারা মাতাল নয়। আল্লাহর আযাবের ভয়াবহতা অবলোকন করার কারণেই তাদেরকে মাতালের মত দেখা যাবে। সাহবীগণ বললেনঃ আমাদের মধ্য থেকে কি হবে সেই বাকী একজন? উত্তরে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা সুসংবাদ গ্রহণ করো। তোমাদের মধ্যে থেকে হবে একজন। আর ইয়াজুয-মা’জুযের মধ্যে থেকে হবে নয়শত নিরানব্বই জন। আল্লাহর শপথ! আমি আশা করি তোমরা জান্নাতীদের চারভাগের একভাগ হবে। আমরা এটা শুনে তাকবীর পাঠ করলাম। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি আশা করি তোমরা জান্নাতীদের তিনভাগের একভাগ হবে। আমরা এটা শুনেও তাকবীর পাঠ করলাম। তারপর নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ আমি আশা করি তোমরা জান্নাতীদের দু’ভাগের একভাগ হবে। আমরা এটা শুনেও তাকবীর পাঠ করলাম। পরিশেষে নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ তোমরা সমগ্র মানব জাতির মধ্যে একটি সাদা গরুর চামড়ায় একটি কালো লোমের মত। (সহিহ বুখারী :: খন্ড ৪ :: অধ্যায় ৫৫ :: হাদিস ৫৬৭)
কুরআন ও হাদীছ থেকে ইয়াজুয-মাজুয সম্পর্কে যা জানা যায়ঃ
আল্লাহর দু’জন সৎ বান্দা সমগ্র পৃথিবীর বাদশা হয়েছিলেন। একজন হলেন আল্লাহর নবী সুলায়মান ইবনে দাউদ (আঃ) আর অন্যজন যুল-কারনাইন বাদশা। যুলকারনাইন বাদশা পূর্ব-পশ্চিম প্রান্তসহ সমগ্র পৃথিবী পরিভ্রমণ করেছিলেন। কুরআন মাজীদের সূরা কাহাফে তাঁর ভ্রমণ কাহিনী বর্ণিত হয়েছে। তাঁর ভ্রমণের কাহিনীর এক পর্যায়ে ইয়াজুয-মা’জুযের বিবরণ এসেছে। আল্লাহ তা’আলা বলেনঃ
“অতঃপর তিনি পথ অবলম্বন করলেন। চলতে চলতে তিনি যখন দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী স্থানে পৌঁছলেন তখন তথায় এমন এক জাতির সন্ধান পেলেন যারা তাঁর কথা একেবারেই বুঝতে পারছিলনা। তারা বললঃ হে যুল-কারনাইন! ইয়াজুয ও মা’জুয পৃথিবীতে অশান্তি সৃষ্টি করছে। আমরা কি আপনাকে বিনিময় স্বরূপ কর প্রদান করবো এই শর্তে যে, আপনি আমাদের ও তাদের মাঝখানে একটি প্রাচীর নির্মাণ করে দিবেন? যুল-কারনাইন বললেনঃ আমার প্রভু আমাকে যে ক্ষমতা দিয়েছেন তাই যথেষ্ট। তোমরা আমাকে শ্রম দিয়ে সাহায্য কর। আমি তোমাদের ও তাদের মাঝখানে একটি মজবুত প্রাচীর তৈরী করে দিবো। তোমরা লোহার পাত নিয়ে আসো। অতঃপর যখন দুই পাহাড়ের মধ্যবর্তী ফাঁকাস্থান পূর্ণ হয়ে লৌহ স্তুপ দুই পর্বতের সমান হলো তখন যুল-কারনাইন বললেনঃ তোমরা ফুঁক দিয়ে আগুন জ্বালাও। যখন ওটা আগুনে পরিণত হলো তখন তিনি বললেনঃ তোমরা গলিত তামা আনয়ন করো, ওটা আগুনের উপরে ঢেলে দেই। এভাবে প্রাচীর নির্মাণ সম্পন্ন হওয়ার পর ইয়াজুয ও মা’জুয তা অতিক্রম করতে পারলোনা এবং তা ছিদ্র করতেও সক্ষম হলোনা। যুল-কারনাইন বললেনঃ এটা আমার প্রভুর অনুগ্রহ। যখন আমার প্রভুর ওয়াদা পূরণের সময় (কিয়ামত) নিকটবর্তী হবে তখন তিনি প্রাচীরকে ভেঙ্গে চুরমার করে মাটির সাথে মিশিয়ে দিবেন। আমার প্রতিপালকের ওয়াদা অবশ্যই বাস্তবায়িত হবে। সেদিন আমি তাদেরকে ছেড়ে দেবো দলের পর দলে সাগরের ঢেউয়ের আকারে। এবং শিংগায় ফুৎকার দেয়া হবে। অতঃপর আমি তাদের সকলকেই একত্রিত করবো। (সূরা কাহাফঃ ৯২-৯৯)
আখেরী যামানায় কিয়ামতের পূর্বে পাহাড় ভেদ করে ইয়াজুয ও মা’জুযের আগমণ সম্পর্কে আল্লাহ তা’আলা অন্যত্র বলেনঃ
“এমন কি যখন ইয়াজুয ও মা’জুযকে মুক্ত করা করা হবে তখন তারা প্রত্যেক উঁচু ভূমি থেকে দলে দলে ছুটে আসবে। যখন সত্য প্রতিশ্রুতি নিকটবর্তী হবে তখন কাফেরদের চক্ষু স্থির হয়ে যাবে। তারা বলবেঃ হায় দুর্ভোগ আমাদের! আমরা তো ছিলাম এবিষয়ে উদাসীন; বরং আমরা ছিলাম জালেম। (সূরা আম্বিয়াঃ ৯৬-৯৭)
এই আয়াতগুলো প্রমাণ করে যে, আল্লাহ তা’আলা ন্যায় পরায়ন বাদশা যুল-কারনাইনকে ইয়াজুয-মা’জুযের বিশাল প্রাচীর নির্মাণের ক্ষমতা দিয়েছিলেন। যাতে তারা মানুষের মাঝে এবং পৃথিবীতে অশান্তি ও বিপর্যয় সৃষ্টি করতে না পারে। যখন নির্দিষ্ট সময় এসে যাবে এবং কিয়ামত নিকটবর্তী হবে তখন উক্ত প্রাচীর ভেঙ্গে যাবে। প্রচন্ড বেগে তারা দলে দলে বের হয়ে আসবে। কোন শক্তিই তাদের সামনে দাঁড়াতে পারবেনা। পৃথিবীতে তারা অশান্তি ও বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করবে। আর এটি হবে শিংগায় ফুঁক দেয়া, দুনিয়া ধ্বংস ও কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার অতি নিকটবর্তী সময়ে।
বুখারী ও মুসলিম শরীফে যায়নাব বিনতে জাহ্শ (রাঃ) হতে বর্ণিত আছে,
“একদা নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) তাঁর নিকটে ভীত-সন্ত্রস্ত হয়ে প্রবেশ করলেন। তিনি বলছিলেনঃ (لَا إلَهَ إلَا اللَّهُ)| আরবদের জন্য ধ্বংস! একটি অকল্যাণ তাদের অতি নিকটবর্তী হয়ে গেছে। আজ ইয়াজুয-মা’জুযের প্রাচীর এই পরিমাণ খুলে দেয়া হয়েছে। এ কথা বলে তিনি হাতের বৃদ্ধাঙ্গুলী ও তার পার্শ্বের আঙ্গুল দিয়ে বৃত্ত তৈরী করে দেখালেন। যায়নাব বিনতে জাহ্শ (রাঃ) বলেনঃ আমি রাসূল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)কে বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আমাদের মাঝে সৎ লোক থাকতেও কি আমরা ধ্বংস হয়ে যাবো? নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বললেনঃ হ্যাঁ, যখন পাপ কাজ বেড়ে যাবে। (সহিহ বুখারী :: খন্ড ৪ :: অধ্যায় ৫৫ :: হাদিস ৫৬৫)
ইয়াজুয-মা’জুয কখন বের হবে?
কুরআনের বর্ণনা থেকে যা জানা যায়, তাহলো কিয়ামতের পূর্বমুহূর্তে তারা মানব সমাজে চলে এসে ব্যাপক অশান্তি ও বিপর্যয় সৃষ্টি করবে।
“ইয়াজুয-মা’জুয প্রাচীরের ভিতর থেকে বের হওয়ার জন্য প্রতিদিন খনন কাজে লিপ্ত রয়েছে। খনন করতে করতে যখন তারা বের হওয়ার কাছাকাছি এসে যায় এবং সূর্যের আলো দেখতে পায় তখন তাদের নেতা বলেঃ ফিরে চলে যাও, আগামীকাল এসে খনন কাজ শেষ করে সকাল সকাল বের হয়ে যাব। আল্লাহ তা’আলা রাত্রিতে প্রাচীরকে আগের চেয়ে আরো শক্তভাবে বন্ধ করে দেন। প্রতিদিন এভাবেই তাদের কাজ চলতে থাকে। অতঃপর আল্লাহ কর্তৃক নির্ধারিত মেয়াদ যখন শেষ হবে এবং তিনি তাদেরকে বের করতে চাইবেন তখন তারা খনন করবে এবং খনন করতে করতে যখন সূর্যের আলো দেখতে পাবে তখন তাদের নেতা বলবেঃ ফিরে চলে যাও। ইনশা-আল্লাহ আগামীকাল এসে খনন কাজ শেষ করে সকাল সকাল বের হয়ে যাবো। এবার তারা ইনশা-আল্লাহ বলবে। অথচ এর আগে কখনও তা বলেনি। তাই পরের দিনি এসে দেখবে যেভাবে রেখে গিয়েছিল সেভাবেই রয়ে গেছে। অতি সহজেই তা খনন করে মানব সমাজে বের হয়ে আসবে। তারা পৃথিবীর নদী-নালার সমস্ত পানি পান করে ফেলবে। এমনকি তাদের প্রথম দল কোন একটি নদীর পাশে গিয়ে নদীর সমস্ত পানি পান করে শুকিয়ে ফেলবে। পরবর্তী দলটি সেখানে এসে কোন পানি দেখতে না পেয়ে বলবেঃ এখানে তো এক সময় পানি ছিল। তাদের ভয়ে লোকেরা নিজ নিজ সহায়-সম্পদ নিয়ে অবরুদ্ধ শহর অথবা দুর্গের মধ্যে প্রবেশ করবে। ইয়াজুয-মা’জুযের দল যখন পৃথিবীতে কোন মানুষ দেখতে পাবেনা তখন তাদের একজন বলবে যমিনের সকল অধিবাসীকে খতম করেছি। আকাশের অধিবাসীরা বাকী রয়েছে। এই বলে তারা আকাশের দিকে তীর নিক্ষেপ করবে। রক্ত মিশ্রিত হয়ে তীর ফেরত আসবে। তখন তারা বলবে যমিনের অধিবাসীকে পরাজিত করেছি এবং আকাশের অধিবাসী পর্যন্ত পৌঁছে গেছি। অতঃপর আল্লাহ তাদের ঘাড়ে নাগাফ নামক এক শ্রেণীর পোঁকা প্রেরণ করবেন। এতে এক সময়ে একটি প্রাণী মৃত্যু বরণ করার মতই তারা সকলেই হালাক হয়ে যাবে। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ “আল্লাহর শপথ! তাদের মরা দেহ এবং চর্বি ভক্ষণ করে যমিনের জীব-জন্তু ও কীটপতঙ্গ মোটা হয়ে যাবে এবং আল্লাহর শুকরিয়া আদায় করবে।" (সুনানু ইবনে মাজাহ্ :: হাদিস ৪০৮০)
তবে নির্দিষ্টভাবে তাদের আগমণ হবে ঈসা (আঃ)এর আগমণ এবং দাজ্জালকে পরাজিত করার পর। নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) বলেনঃ
“অতঃপর ঈসা (আঃ)এর নিকট এমন কিছু লোক আসবেন, যাদেরকে আল্লাহ তা’আলা দাজ্জালের ফিতনা হতে হেফাযত করেছেন। তিনি তাদের চেহারায় হাত বুলাবেন এবং বেহেশতের মধ্যে তাদের উচ্চ মর্যাদা সম্পর্কে সংবাদ দিবেন। ঈসা (আঃ) যখন এ অবস্থায় থাকবেন তখন আল্লাহ তা’আলা তাকে জানাবেন যে, আমি এমন একটি জাতি বের করেছি, যাদের সাথে মোকাবেলা করার ক্ষমতা কারো নেই। কাজেই আপনি আমার বান্দাদেরকে নিয়ে তুর পাহাড়ে উঠে যান। এ সময় আল্লাহ তাআলা ইয়াজুয-মাজুযের বাহিনী প্রেরণ করবেন। তারা প্রত্যেক উঁচু ভূমি থেকে বের হয়ে আসবে। তাদের প্রথম দলটি ফিলিস্তীনের তাবারীয়া জলাশয়ের সমস্ত পানি পান করে ফেলবে। তাদের শেষ দলটি সেখানে এসে কোন পানি না পেয়ে বলবেঃ এক সময় এখানে পানি ছিল। তারা আল্লাহর নবী ও তার সাথীদেরকে অবরোধ করে রাখবে। ঈসা (আঃ) ও তার সাথীগণ প্রচন্ড খাদ্যাভাবে পড়বেন। এমনকি বর্তমানে তোমাদের কাছে একশত স্বর্ণ মুদ্রার চেয়ে তাদের কাছে একটি গরুর মাথা তখন বেশী প্রিয় হবে। আল্লাহর নবী ঈসা ও তাঁর সাথীগণ এই ফিতনা থেকে মুক্তি পাওয়ার জন্য আল্লাহর কাছে দু’আ করবেন। আল্লাহ তাদের দু’আ কবূল করে ইয়াজুয-মা’জুযের ঘাড়ে ‘নাগাফ’ নামক একশ্রেণীর পোঁকা প্রেরণ করবেন। এতে এক সময়ে একটি প্রাণী মৃত্যু বরণ করার মত তারা সকলেই হালাক হয়ে যাবে। অতঃপর আল্লাহর নবী ঈসা ও তার সাহাবীগণ যমিনে নেমে এসে দেখবেন ইয়াজুয-মাজুযের মরা-পচা লাশ ও তাদের শরীরের চর্বিতে সমগ্র যমিন ভরপূর হয়ে গেছে। কোথাও অর্ধহাত জায়গাও খালি নেই। আল্লাহর নবী ঈসা ও তাঁর সাথীগণ আল্লাহর কাছে আবার দু’আ করবেন। আল্লাহ তাদের দু’আ কবূল করে উটের গর্দানের মত লম্বা লম্বা একদল পাখি পাঠাবেন। আল্লাহর আদেশে পাখিগুলো তাদেরকে অন্যত্র নিক্ষেপ করে পৃথিবীকে পরিস্কার করবে। অতঃপর আল্লাহ তাআলা প্রচুর বৃষ্টি বর্ষণ করবেন। এতে পৃথিবী একেবারে আয়নার মত পরিস্কার হয়ে যাবে। (সুনানু ইবনে মাজাহ্ :: হাদিস ৪০৭৫)
ইয়াজুয-মা’জুয ধ্বংসের পর পৃথিবীর সুখ স্বাচ্ছন্দ্যঃ
......... এতে পৃথিবী একেবারে আয়নার মত পরিস্কার হয়ে যাবে। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা যমিনকে ফসল-ফলাদি উৎপন্ন করার আদেশ দিবেন। যমিন সকল প্রকার ফল ও ফসল উৎপন্ন করবে। ফলগুলো এত বড় হবে যে, একটি ডালিম এক দল মানুষের জন্য যথেষ্ট হবে। লোকেরা ডালিমের খোসার নিচে ছাঁয়া গ্রহণ করতে পারবে। দুধে বরকত দেয়া হবে। একটি উটের দুধ সেদিন কয়েকটি গোত্রের জন্য যথেষ্ট হবে, একটি গাভীর দুধ একটি গোত্রের লোকের জন্য যথেষ্ট হবে এবং একটি ছাগলের দুধ এক পরিবারের সকলের জন্য যথেষ্ট হবে। (সুনানু ইবনে মাজাহ্ :: হাদিস ৪০৭৫)
মোটকথা মানুষের মাঝে তখন চরম সুখ-শান্তি বিরাজ করবে। কোন প্রকার অভাব-অনটন থাকবেনা। সকল বস্তুতে আল্লাহর তরফ থেকে বরকত নাযিল হবে। আল্লাহর ইচ্ছায় নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত এ অবস্থা বিরাজ করবে। কতই না সুন্দর হবে তখনকার মানুষের জীবন ব্যবস্থা!
LTA-46.185
© 2015 by Ask Islam Bangla.