প্রশ্ন ৫৩ --> মাহরাম বলতে কি বুঝায়? মাহরাম কারা?
উত্তর :
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
মাহরাম শব্দের শাব্দিক অর্থ: হারাম, যা হালাল এর বিপরিত।
আর পারিভাষিক অর্থে মাহরাম বলা হয় যাদেরকে আত্মীয়তা, বা দুধপান করানো, অথবা শাশুরালয়ের সম্পর্কের কারণে বিবাহ করা জায়েয নয়। (লিসানুল আরব খ:৩, পৃ:১৩৯, ফতোয়ায়ে শামী খ:২, পৃ:১৪৫)
১৪ জন ছাড়া বাকী সবাই “গায়রে মাহরাম” একথার অর্থ হল যে, তাদের বিবাহ করা জায়েয। এবং তাদের সাথে সর্বক্ষেত্রে শরয়ী পর্দার বিধান মেনে চলতে হয়।
তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা, তোমাদের কন্যা, তোমাদের বোন, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভ্রাতৃকণ্যা; ভগিনীকণ্যা তোমাদের সে মাতা, যারা তোমাদেরকে স্তন্যপান করিয়েছে, তোমাদের দুধ-বোন, তোমাদের স্ত্রীদের মাতা, তোমরা যাদের সাথে সহবাস করেছ সে স্ত্রীদের কন্যা যারা তোমাদের লালন-পালনে আছে। যদি তাদের সাথে সহবাস না করে থাক, তবে এ বিবাহে তোমাদের কোন গোনাহ নেই। তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রী এবং দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করা; কিন্তু যা অতীত হয়ে গেছে। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাকরী, দয়ালু। এবং নারীদের মধ্যে তাদের ছাড়া সকল সধবা স্ত্রীলোক তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ; তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক হয়ে যায়-এটা তোমাদের জন্য আল্লাহর হুকুম। এদেরকে ছাড়া তোমাদের জন্যে সব নারী হালাল করা হয়েছে, শর্ত এই যে, তোমরা তাদেরকে স্বীয় অর্থের বিনিময়ে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য-ব্যভিচারের জন্য নয়। অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা ভোগ করবে, তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর। তোমাদের কোন গোনাহ হবে না যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিজ্ঞ, রহস্যবিদ। (সূরা নিসা: ২৩-২৪)
সকল মাহরাম আত্মীয়-স্বজনদেরকে মোট তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
(ক) বংশগত মাহরাম।
বংশগত মাহরাম মোট সাত প্রকার। যথা-
১. নারীর পিতৃকূল : যেমন- পিতা, দাদা, নানা, পারদাদা, পরনানা এবং তদূর্ধ্ব পিতৃপুরুষেরা।
২. নারীর ছেলের সন্তান : যেমন- পুত্র, পুত্রের পুত্র, কন্যার পুত্র তদনিম্ন ছেলেরা।
৩. নারীর ভাই : আপন ভাই, বৈপিত্রেয় ভাই ও বৈমাত্রেয় ভাই।
৪. নারীর চাচা : আপন চাচা, বৈপিত্রেয় চাচা ও বৈমাত্রেয় চাচা, অথবা কোন নারীর মা-বাবার চাচা।
৫. নারীর মামা : আপন মামা, বৈপিত্রেয় মামা, বৈমাত্রেয় মামা এবং নারীর পিতা মাতার মামা।
৬. ভাইয়ের ছেলে, ভাইয়ের ছেলের ছেলে, ভাইয়ের ছেলের কন্যাদের ছেলে ও তদনিম্ন ছেলেরা।
৭. বোনের ছেলে, বোনের ছেলের ছেলে, বোনের ছেলের কন্যাদের ছেলে ও তদনিম্ন ছেলেরা।
(খ) দুগ্ধপানজনিত মাহরাম।
দুগ্ধপানজনিত মাহরামও বংশগত মাহরামের ন্যায় সাত প্রকার হতে পারে যার বিবরণ উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ বংশগত কারণে যারা হারাম দুগ্ধপানজনিত কারণেও তারা হারাম হবে। সুতরাং জন্মদাতা হিসেবে পিতা যেমন হারাম, কোন নারী কাউকে স্তন্যপান করালে তার স্বামী ঐ দুধপানকারী মেয়ের জন্য দুগ্ধপিতা হিসেবে হারাম। এভাবে উপরে বর্ণিত সকল আত্মীয়ই দুগ্ধপানজনিত কারণে হারাম হবে এবং নারী হলে পুরুষ আত্মীয়গণ মাহরাম হিসেবে ভূষিত হবে।
(গ) বৈবাহিক সম্পর্কজনিত মাহরাম।
এ প্রকার মাহরাম চার ধরনের হতে পারে।
১. স্বামীর পুত্র : তাদের পুত্রের পুত্র, কণ্যার পুত্র এবং তদনিম্ন পুত্রেরা।
২. স্বামীর পিতা : দাদা, নানা এবং তদূর্ধ্ব পুরুষেরা।
৩. কন্যার স্বামী : পুত্রসন্তানের মেয়ের স্বামী, কন্যা সন্তানের মেয়ের স্বামী এবং তদনিম্ন মেয়েদের স্বামীগণ।
৪. মায়ের স্বামী এবং দাদী বা নানীর স্বামী।
এরা সকলেই মাহরাম, এদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া চিরকালের জন্য হারাম। তাই এদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ, মুখোমুখি কাথা-বার্তা এবং এদেরকে সাথে নিয়ে সফরে বের হওয়া সম্পূর্ণই বৈধ।
এই ব্যক্তিদের সামনে কতটুকু শোভা প্রকাশ করা যাবে?
এই ব্যক্তিদের সামনে যেসব পোশাক পরে মেয়েরা যেতে পারবে তা হচ্ছে। গলা থেকে পা পর্যন্ত ঢিলা-ঢালা কাপড় (মেক্সি) পড়বে। ওড়না পড়বে যা মাথা থেকে বক্ষদেশ পর্যন্ত ঢেকে রাখবে। মুখ, হাত, পা খোলা রাখা বৈধ।
উপরের উল্লেক্ষিত ব্যক্তি ছাড়া সবার সামনে পর্দা করতে হবে, তা ঘরে হোক বা বাহিরে হোক। আমাদের দেশে মনে করা হয়, স্বামীর ভাইদের সামনে বা স্বামীর আত্মীয়দের সামনে বা নিজ আত্মীয়দের সামনে মুখ খোলা জায়েয। কিন্তু তা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং ইসলাম বহির্ভূত কাজ।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে বুঝার তাওফিক দিন। আমিন।
STA-42.156
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
মাহরাম শব্দের শাব্দিক অর্থ: হারাম, যা হালাল এর বিপরিত।
আর পারিভাষিক অর্থে মাহরাম বলা হয় যাদেরকে আত্মীয়তা, বা দুধপান করানো, অথবা শাশুরালয়ের সম্পর্কের কারণে বিবাহ করা জায়েয নয়। (লিসানুল আরব খ:৩, পৃ:১৩৯, ফতোয়ায়ে শামী খ:২, পৃ:১৪৫)
১৪ জন ছাড়া বাকী সবাই “গায়রে মাহরাম” একথার অর্থ হল যে, তাদের বিবাহ করা জায়েয। এবং তাদের সাথে সর্বক্ষেত্রে শরয়ী পর্দার বিধান মেনে চলতে হয়।
তোমাদের জন্যে হারাম করা হয়েছে তোমাদের মাতা, তোমাদের কন্যা, তোমাদের বোন, তোমাদের ফুফু, তোমাদের খালা, ভ্রাতৃকণ্যা; ভগিনীকণ্যা তোমাদের সে মাতা, যারা তোমাদেরকে স্তন্যপান করিয়েছে, তোমাদের দুধ-বোন, তোমাদের স্ত্রীদের মাতা, তোমরা যাদের সাথে সহবাস করেছ সে স্ত্রীদের কন্যা যারা তোমাদের লালন-পালনে আছে। যদি তাদের সাথে সহবাস না করে থাক, তবে এ বিবাহে তোমাদের কোন গোনাহ নেই। তোমাদের ঔরসজাত পুত্রদের স্ত্রী এবং দুই বোনকে একত্রে বিবাহ করা; কিন্তু যা অতীত হয়ে গেছে। নিশ্চয় আল্লাহ ক্ষমাকরী, দয়ালু। এবং নারীদের মধ্যে তাদের ছাড়া সকল সধবা স্ত্রীলোক তোমাদের জন্যে নিষিদ্ধ; তোমাদের দক্ষিণ হস্ত যাদের মালিক হয়ে যায়-এটা তোমাদের জন্য আল্লাহর হুকুম। এদেরকে ছাড়া তোমাদের জন্যে সব নারী হালাল করা হয়েছে, শর্ত এই যে, তোমরা তাদেরকে স্বীয় অর্থের বিনিময়ে তলব করবে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ করার জন্য-ব্যভিচারের জন্য নয়। অনন্তর তাদের মধ্যে যাকে তোমরা ভোগ করবে, তাকে তার নির্ধারিত হক দান কর। তোমাদের কোন গোনাহ হবে না যদি নির্ধারণের পর তোমরা পরস্পরে সম্মত হও। নিশ্চয় আল্লাহ সুবিজ্ঞ, রহস্যবিদ। (সূরা নিসা: ২৩-২৪)
সকল মাহরাম আত্মীয়-স্বজনদেরকে মোট তিন ভাগে ভাগ করা যায়।
(ক) বংশগত মাহরাম।
বংশগত মাহরাম মোট সাত প্রকার। যথা-
১. নারীর পিতৃকূল : যেমন- পিতা, দাদা, নানা, পারদাদা, পরনানা এবং তদূর্ধ্ব পিতৃপুরুষেরা।
২. নারীর ছেলের সন্তান : যেমন- পুত্র, পুত্রের পুত্র, কন্যার পুত্র তদনিম্ন ছেলেরা।
৩. নারীর ভাই : আপন ভাই, বৈপিত্রেয় ভাই ও বৈমাত্রেয় ভাই।
৪. নারীর চাচা : আপন চাচা, বৈপিত্রেয় চাচা ও বৈমাত্রেয় চাচা, অথবা কোন নারীর মা-বাবার চাচা।
৫. নারীর মামা : আপন মামা, বৈপিত্রেয় মামা, বৈমাত্রেয় মামা এবং নারীর পিতা মাতার মামা।
৬. ভাইয়ের ছেলে, ভাইয়ের ছেলের ছেলে, ভাইয়ের ছেলের কন্যাদের ছেলে ও তদনিম্ন ছেলেরা।
৭. বোনের ছেলে, বোনের ছেলের ছেলে, বোনের ছেলের কন্যাদের ছেলে ও তদনিম্ন ছেলেরা।
(খ) দুগ্ধপানজনিত মাহরাম।
দুগ্ধপানজনিত মাহরামও বংশগত মাহরামের ন্যায় সাত প্রকার হতে পারে যার বিবরণ উপরে উল্লেখ করা হয়েছে। অর্থাৎ বংশগত কারণে যারা হারাম দুগ্ধপানজনিত কারণেও তারা হারাম হবে। সুতরাং জন্মদাতা হিসেবে পিতা যেমন হারাম, কোন নারী কাউকে স্তন্যপান করালে তার স্বামী ঐ দুধপানকারী মেয়ের জন্য দুগ্ধপিতা হিসেবে হারাম। এভাবে উপরে বর্ণিত সকল আত্মীয়ই দুগ্ধপানজনিত কারণে হারাম হবে এবং নারী হলে পুরুষ আত্মীয়গণ মাহরাম হিসেবে ভূষিত হবে।
(গ) বৈবাহিক সম্পর্কজনিত মাহরাম।
এ প্রকার মাহরাম চার ধরনের হতে পারে।
১. স্বামীর পুত্র : তাদের পুত্রের পুত্র, কণ্যার পুত্র এবং তদনিম্ন পুত্রেরা।
২. স্বামীর পিতা : দাদা, নানা এবং তদূর্ধ্ব পুরুষেরা।
৩. কন্যার স্বামী : পুত্রসন্তানের মেয়ের স্বামী, কন্যা সন্তানের মেয়ের স্বামী এবং তদনিম্ন মেয়েদের স্বামীগণ।
৪. মায়ের স্বামী এবং দাদী বা নানীর স্বামী।
এরা সকলেই মাহরাম, এদের সাথে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হওয়া চিরকালের জন্য হারাম। তাই এদের সাথে দেখা সাক্ষাৎ, মুখোমুখি কাথা-বার্তা এবং এদেরকে সাথে নিয়ে সফরে বের হওয়া সম্পূর্ণই বৈধ।
এই ব্যক্তিদের সামনে কতটুকু শোভা প্রকাশ করা যাবে?
এই ব্যক্তিদের সামনে যেসব পোশাক পরে মেয়েরা যেতে পারবে তা হচ্ছে। গলা থেকে পা পর্যন্ত ঢিলা-ঢালা কাপড় (মেক্সি) পড়বে। ওড়না পড়বে যা মাথা থেকে বক্ষদেশ পর্যন্ত ঢেকে রাখবে। মুখ, হাত, পা খোলা রাখা বৈধ।
উপরের উল্লেক্ষিত ব্যক্তি ছাড়া সবার সামনে পর্দা করতে হবে, তা ঘরে হোক বা বাহিরে হোক। আমাদের দেশে মনে করা হয়, স্বামীর ভাইদের সামনে বা স্বামীর আত্মীয়দের সামনে বা নিজ আত্মীয়দের সামনে মুখ খোলা জায়েয। কিন্তু তা সম্পূর্ণ নিষিদ্ধ এবং ইসলাম বহির্ভূত কাজ।
আল্লাহ তাআলা আমাদের সকলকে বুঝার তাওফিক দিন। আমিন।
STA-42.156
© 2014 by Ask Islam Bangla.