প্রশ্ন ৫ --> দাজ্জাল সম্পর্কে জানতে চাই। অনেকে মডার্ন সাইন্স বা প্রযুক্তিকে দাজ্জাল হিসেবে চিহ্নিত করেছে। আসলেই কি তা দাজ্জাল?
উত্তরঃ
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। আমরা আগে প্রথম অংশের উত্তর দেই।
কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে মিথ্যুক দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। দাজ্জালের আগমণ কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার সবচেয়ে বড় আলামত। মানব জাতির জন্যে দাজ্জালের চেয়ে অধিক বড় বিপদ আর নেই। বিশেষ করে সে সময় যে সমস্ত মুমিন জীবিত থাকবে তাদের জন্য ঈমান নিয়ে টিকে থাকা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে। সমস্ত নবীই আপন উম্মাতকে দাজ্জালের ভয় দেখিয়েছেন। মুহাম্মাদ (স)-ও দাজ্জালের ফিতনা থেকে সতর্ক করেছেন এবং তার অনিষ্ট থেকে বাঁচার উপায়ও বলে দিয়েছেন।
# ইবনে উমার (রাঃ) নবী (সা) হতে বর্ণনা করেনঃ “একবার রাসুল (স) দাড়িয়ে আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করলেন। অতঃপর দাজ্জালের আলোচনা করতে গিয়ে বললেনঃ আমি তোমাদেরকে তার ফিতনা থেকে সাবধান করছি। সকল নবীই তাদের উম্মাতকে দাজ্জালের ভয় দেখিয়েছেন। কিন্তু আমি তোমাদের কাছে দাজ্জালের একটি পরিচয়ের কথা বলব যা কোন নবীই তাঁর উম্মাতকে বলেন নাই। তা হলো দাজ্জাল অন্ধ হবে। আর আমাদের মহান আল্লাহ অন্ধ নন।"
# নাওয়াস বিন সামআন (রাঃ) বলেনঃ “একবার রাসূল (সা) সকাল বেলা আমাদের কাছে দাজ্জালের বর্ণনা করলেন। তিনি তার ফিতনাকে খুব বড় করে তুলে ধরলেন। বর্ণনা শুনে আমরা মনে করলাম নিকটস্থ খেজুরের বাগানের পাশেই সে হয়ত অবস্থান করছে। আমরা রাসূল (সা) এর নিকট থেকে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ পর আমরা আবার তাঁর কাছে গেলাম। এবার তিনি আমাদের অবস্থা বুঝে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদের কি হলো? আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যেভাবে দাজ্জালের আলোচনা করেছেন তা শুনে আমরা ভাবলাম হতে পারে সে খেজুরের বাগানের ভিতরেই রয়েছে। নবী (সা) বললেনঃ দাজ্জাল ছাড়া তোমাদের উপর আমার আরো ভয় রয়েছে। আমি তোমাদের মাঝে জীবিত থাকতেই যদি দাজ্জাল আগমন করে তাহলে তোমাদেরকে ছাড়া আমি একাই তার মোকাবেলা করবো। আর আমি চলে যাওয়ার পর যদি সে আগমন করে তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজেকে হেফাযত করবে। আর আমি চলে গেলে আল্লাহই প্রতিটি মুসলিমকে হেফাযতকারী হিসেবে যথেষ্ট।"
দাজ্জালের আগমনের সময় মুসলমানদের অবস্থা কী হবে?
দাজ্জালের আগমণের পূর্ব মুহূর্তে মুসলমানদের অবস্থা খুব ভাল থাকবে। তারা পৃথিবীতে শক্তিশালী এবং বিজয়ী থাকবে। সম্ভবতঃ এই শক্তির পতন ঘটানোর জন্যই দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে।
দাজ্জালের পরিচয়ঃ
দাজ্জাল মানব জাতিরই একজন হবে, তবে ব্যতিক্রমী। মুসলমানদের কাছে তার পরিচয় তুলে ধরার জন্যে এবং তার ফিতনা থেকে তাদেরকে সতর্ক করার জন্যে নবী (সা) তার পরিচয় বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। মুমিনগণ তাকে দেখে সহজেই চিনতে পারবে এবং তার ফিতনা থেকে নিরাপদে থাকবে। নবী (সা) তার যে সমস্ত পরিচয় উল্লেখ করেছেন মুমিনগণ তা পূর্ণ অবগত থাকবে। দাজ্জাল অন্যান্য মানুষের তুলনায় ব্যতিক্রমী বৈশিষ্টের অধিকারী হবে। মূর্খ ও হতভাগ্য ব্যতীত কেউ দাজ্জালের ধোঁকায় পড়বে না।
# নবী (সা) দাজ্জালকে স্বপ্নে দেখে তার শারীরিক গঠনের বর্ণনাও প্রদান করেছেন। তিনি বলেনঃ দাজ্জাল হবে বৃহদাকার একজন যুবক পুরুষ, শরীরের রং হবে লালচে, বেঁটে, মাথার চুল হবে কোঁকড়া, কপাল হবে উঁচু, বুক হবে প্রশস্ত, চক্ষু হবে টেরা এবং আঙ্গুর ফলের মত উঁচু। দাজ্জাল নির্বংশ হবে। তার কোন সন্তান থাকবেনা।
দাজ্জালের কোন্ চোখ অন্ধ থাকবে?
বিভিন্ন হাদীসে দাজ্জালের চোখ অন্ধ হওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। ডান চোখ অন্ধ হওয়ার হাদীছগুলো বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে।
দাজ্জালের দু’চোখের মাঝখানে কাফের লেখা থাকবেঃ
তাছাড়া দাজ্জালকে চেনার সবচেয়ে বড় আলামত হলো তার কপালে কাফের ( كافر) লেখা থাকবে। অপর বর্ণনায় আছে তার কপালে (ك ف ر) এই তিনটি বর্ণ লেখা থাকবে। প্রতিটি মুসলিম ব্যক্তিই তা পড়তে পারবে। অপর বর্ণনায় আছে শিক্ষিত-অশিক্ষত সকল মুসলিম ব্যক্তিই তা পড়তে পারবে। মোটকথা আল্লাহ মুমিনের জন্যে অন্তদৃষ্টি খোলে দিবেন। ফলে সে দাজ্জালকে দেখে সহজেই চিনতে পারবে। যদিও ইতিপূর্বে সে ছিল অশিক্ষিত। কাফির ও মুনাফিক লোক তা দেখেও পড়তে পারবেনা। যদিও সে ছিল শিক্ষিত ও পড়ালেখা জানা লোক। কারণ কাফের ও মুনাফেক আল্লাহর অসংখ্য সুস্পষ্ট দলীল-প্রমাণ দেখেও ঈমান আনয়ন করেনি।
দাজ্জালের ফিতনাগুলো ও তার অসারতাঃ
আদম সৃষ্টি থেকে কিয়ামত পর্যন্ত মানব জাতির জন্য দাজ্জালের চেয়ে বড় ফিতনা আর নেই। সে এমন অলৌকিক বিষয় দেখাবে যা দেখে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়বে। দাজ্জাল নিজেকে প্রভু ও আল্লাহ হিসেবে দাবী করবে। তার দাবীর পক্ষে এমন কিছু প্রমাণও উপস্থাপন করবে যে সম্পর্কে নবী (সা) আগেই সতর্ক করেছেন। মুমিন বান্দাগণ এগুলো দেখে মিথ্যুক দাজ্জালকে সহজেই চিনতে পারবে এবং আল্লাহর প্রতি তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু দুর্বল ঈমানদার লোকেরা বিভ্রান্তিতে পড়ে ঈমান হারা হবে।
দাজ্জাল নিজেকে রাব্ব বা প্রভু হিসেবেও দাবী করবে। ঈমানদারের কাছে এ দাবীটি সুস্পষ্ট দিবালোকের মত মিথ্যা বলে প্রকাশিত হবে। দাজ্জাল তার দাবীর পক্ষে যত বড় অলৌকিক ঘটনাই পেশ করুক না কেন মুমিন ব্যক্তির কাছে এটি সুস্পষ্ট হবে যে সে একজন অক্ষম মানুষ, পানাহার করে, নিদ্রা যায়, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়। তার চেয়েও বড় কথা, সে হবে এক চোখ অন্ধ। যার ভিতরে মানবীয় সব দোষ-গুণ বিদ্যমান সে কিভাবে রব্ব তথা আল্লাহ হতে পারে!! একজন সত্যিকার মুমিনের মুমিনের বিশ্বাস হলোঃ মহান আল্লাহ সর্বপ্রকার মানবীয় দোষ-ত্রুটি হতে সম্পূর্ণ মুক্ত। কোন সৃষ্টজীবই তার মত নয়। আল্লাহকে দুনিয়ার জগতে কোন মানুষের পক্ষে দেখাও সম্ভব নয়।
দাজ্জাল বর্তমানে কোথায় আছে?
হাদিস ইঙ্গিত করে যে, দাজ্জাল দীর্ঘজীবী মানুষ আর সে অনেক আগে থেকেই পৃথিবীতে আছে, তবে chained... আসুন আমরা একটা দীর্ঘ কাহিনী পড়ি। এটা একটি হাদিস।
# ফাতেমা বিনতে কায়স (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি মসজিদে গমন করে নবী (সা)এর সাথে নামায আদায় করলাম। আমি ছিলাম মহিলাদের কাতারে। তিনি নামায শেষে হাসতে হাসতে উঠে বসলেন। প্রথমেই তিনি বললেনঃ "প্রত্যেকেই যেন নিজ নিজ জায়গায় বসে থাকে।"
এরপর তিনি বললেনঃ "তোমরা কি জান আমি কেন তোমাদেরকে একত্রিত করেছি?"
তাঁরা বললেনঃ "আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন।"
অতঃপর তিনি কাহিনী বললেনঃ আমি তোমাদেরকে এ সংবাদ দেয়ার জন্যে একসাথে করেছি যে তামীম দারী ছিল একজন খৃষ্টান লোক। সে আমার কাছে আগমণ করে ইসলাম গ্রহণ করেছে। অতঃপর সে মিথ্যুক দাজ্জাল সম্পর্কে এমন ঘটনা বলেছে যা আমি তোমাদের কাছে বর্ণনা করতাম। লাখ্ম ও জুযাম গোত্রের ত্রিশ জন লোকের সাথে সে সাগর পথে ভ্রমণে গিয়েছিল। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার শিকার হয়ে এক মাস পর্যন্ত তারা সাগরেই ছিল। অবশেষে তারা সাগরের মাঝখানে একটি দ্বীপে অবতরণ করলো। দ্বীপের ভিতরে প্রবেশ করে তারা মোটা মোটা এবং প্রচুর চুল বিশিষ্ট একটি অদ্ভুত প্রাণীর সন্ধান পেল। চুল দ্বারা সমস্ত শরীর আবৃত থাকার কারণে প্রাণীটির অগ্রপশ্চাৎ নির্ধারণ করতে সক্ষম হলোনা। তারা বললঃ "অকল্যাণ হোক তোমার! কে তুমি?"
সে বললোঃ "আমি সংবাদ সংগ্রহকারী গোয়েন্দা।"
তারা বললোঃ "কিসের সংবাদ সংগ্রহকারী?"
অতঃপর প্রাণীটি দ্বীপের মধ্যে একটি ঘরের দিকে ইঙ্গিত করে বললোঃ "হে লোক সকল! তোমরা এই ঘরের ভিতরে অবস্থানরত লোকটির কাছে যাও। সে তোমাদের কাছ থেকে সংবাদ সংগ্রহ করার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।"
তামীম দারী বলেনঃ প্রাণীটি যখন একজন লোকের কথা বললোঃ তখন আমাদের ভয় হলো যে হতে পারে সে একটি শয়তান। তারপরেও আমরা ভীত হয়ে দ্রুত অগ্রসর হয়ে ঘরটির ভিতরে প্রবেশ করলাম। সেখানে প্রবেশ করে আমরা বৃহদাকার একটি মানুষ দেখতে পেলাম। এত বড় আকৃতির মানুষ আমরা ইতিপূর্বে আর কখনও দেখিনি। তার হাত দুটিকে ঘাড়ের সাথে একত্রিত করে হাঁটু এবং গোড়ালীর মধ্যবর্তী স্থানে লোহার শিকল দ্বারা বেঁধে রাখা হয়েছে। আমরা বললামঃ "মরণ হোক তোমার! কে তুমি?"
সে বললোঃ "তোমরা আমার কাছে আসতে সক্ষম হয়েছ। তাই আগে তোমাদের পরিচয় দাও।"
আমরা বললামঃ "আমরা একদল আরব মানুষ নৌকায় আরোহন করলাম। সাগরের প্রচন্ড ঢেউ আমাদেরকে নিয়ে একমাস পর্যন্ত খেলা করলো। অবশেষে তোমার দ্বীপে উঠতে বাধ্য হলাম। দ্বীপে প্রবেশ করেই প্রচুর পশম বিশিষ্ট এমন একটি জন্তুর সাক্ষাৎ পেলাম, প্রচুর পশমের কারণে যার অগ্রপশ্চাৎ চেনা যাচ্ছিল না। আমরা বললামঃ অকল্যাণ হোক তোমার! কে তুমি? সে বললোঃ আমি সংবাদ সংগ্রহকারী গোয়েন্দা। আমরা বললামঃ কিসের সংবাদ সংগ্রহকারী? অতঃপর প্রাণীটি দ্বীপের মধ্যে এই ঘরের দিকে ইঙ্গিত করে বললোঃ হে লোক সকল! তোমরা এই ঘরের ভিতরে অবস্থানরত লোকটির কাছে যাও। সে তোমাদের নিকট থেকে সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তাই আমরা তার ভয়ে তোমার কাছে দ্রুত আগমন করলাম। হতে পার তুমি একজন শয়তান- এ ভয় থেকেও আমরা নিরাপদ নই।"
সে বললোঃ "আমাকে তোমরা ‘বাইসান’ (একটা জায়গা) সম্পর্কে সংবাদ দাও।"
আমরা তাকে বললামঃ "বাইসানের কি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছো?"
সে বললোঃ "আমি সেখানকার খেজুরের বাগান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছি। সেখানের গাছগুলো এখনও ফল দেয়?"
আমরা বললামঃ "হ্যাঁ।"
সে বললোঃ "সে দিন বেশী দূরে নয় যে দিন গাছগুলোতে কোন ফল ধরবেনা।"
অতঃপর সে বললোঃ "আমাকে তাবারিয়া হ্রদ সম্পর্কে সংবাদ দাও।"
আমরা তাকে বললামঃ "তাবারিয়া হ্রদ সম্পর্কে কী জিজ্ঞেস করছো?"
সে বললোঃ "আমি জানতে চাই সেখানে কি এখনও পানি আছে?"
আমরা বললামঃ "প্রচুর পানি আছে।"
সে বললোঃ "অচিরেই সেখানকার পানি শেষ হয়ে যাবে।"
সে পুনরায় বললোঃ "আমাকে যুগার ঝর্ণা সম্পর্কে সংবাদ দাও।"
আমরা তাকে বললামঃ "সেখানকার কী সম্পর্কে তুমি জানতে চাও?"
সে বললোঃ "আমি জানতে চাই সেখানে কি এখনও পানি আছে? লোকেরা কি এখনও সে পানি দিয়ে চাষাবাদ করছে?"
আমরা বললামঃ "প্রচুর পানি রয়েছে। লোকেরা সে পানি দিয়ে চাষাবাদ করছে।"
সে আবার বললোঃ "আমাকে উম্মীদের (অ-ইহুদীদের) নবী সম্পর্কে জানাও।"
আমরা বললামঃ "সে মক্কায় আগমন করে বর্তমানে মদীনায় হিজরত করেছে।"
সে বললোঃ "আরবরা কি তার সাথে যুদ্ধ করেছে?"
বললামঃ "হ্যাঁ।"
সে বললোঃ "ফলাফল কি হয়েছে?"
আমরা তাকে সংবাদ দিলাম যে, "পার্শ্ববর্তী আরবদের উপর তিনি জয়লাভ করেছেন। ফলে তারা তাঁর আনুগত্য বরণ করে নিয়েছে।"
সে বললঃ "তাই না কি?"
আমরা বললামঃ "তাই।"
সে বললোঃ "তার আনুগত্য করাই তাদের জন্য ভাল। এখন আমার কথা শুন। আমি হলাম দাজ্জাল। অচিরেই আমাকে বের হওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। আমি বের হয়ে চল্লিশ দিনের ভিতরে পৃথিবীর সমস্ত দেশ ভ্রমণ করবো। তবে মক্কা-মদীনায় প্রবেশ করা আমার জন্য নিষিদ্ধ থাকবে। যখনই আমি মক্কা বা মদীনায় প্রবেশ করতে চাইবো তখনই ফেরেশতাগণ কোষমুক্ত তলোয়ার হাতে নিয়ে আমাকে তাড়া করবে। মক্কা-মদীনার প্রতিটি প্রবেশ পথে ফেরেশতাগণ পাহারা দিবে।"
হাদীসের বর্ণনাকারী ফাতেমা বিনতে কায়েস বলেনঃ নবী (সা) হাতের লাঠি দিয়ে মিম্বারে আঘাত করতে করতে বললেনঃ "এটাই মদীনা, এটাই মদীনা, এটাই মদীনা।" অর্থাৎ এখানে দাজ্জাল আসতে পারবেনা। অতঃপর নবী (সা) মানুষকে লক্ষ করে বললেনঃ "তামীম দারীর কথাটি আমার কাছে খুবই ভাল লেগেছে। তার বর্ণনা আমার বর্ণনার অনুরূপ হয়েছে। বিশেষ করে মক্কা ও মদীনা সম্পর্কে। শুনে রাখো! সে আছে সাম দেশের সাগরে (ভূমধ্য সাগরে) অথবা আরব সাগরে। তা নয় সে আছে পূর্ব দিকে। সে আছে পূর্ব দিকে। সে আছে পূর্ব দিকে।" এই বলে তিনি পূর্ব দিকে ইঙ্গিত করে দেখালেন।
ফাতেমা বিনতে কায়েস বলেনঃ “আমি এই হাদীছটি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নিকট থেকে মুখস্থ করে রেখেছি।"
সে দ্বীপ কোনটা? মানুষ জানে না।
দাজ্জালের যে সমস্ত ক্ষমতা দেখে মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়বেঃ
১) একস্থান হতে অন্য স্থানে দ্রুত পরিভ্রমণঃ নাওয়াস বিন সামআন থেকে বর্ণিত, নবী (সা)কে দাজ্জালের চলার গতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ “দ্রুতগামী বাতাস বৃষ্টিকে যেভাবে চালিয়ে নেয় দাজ্জালের চলার গতিও সে রকম হবে। মক্কা ও মদীনা ব্যতীত পৃথিবীর সমস্ত অঞ্চল সে পরিভ্রমণ করবে। মক্কা ও মদীনার সমস্ত প্রবেশ পথে ফেরেশতাগণ তলোওয়ার হাতে নিয়ে পাহারা দিবে।"
২) দাজ্জালের সাথে থাকবে জান্নাত-জাহান্নামঃ দাজ্জালের সাথে জান্নাত এবং জাহান্নাম থাকবে। প্রকৃত অবস্থা হবে সম্পূর্ণ বিপরীত। দাজ্জালের জাহান্নামের আগুন প্রকৃতপক্ষে সুমিষ্ট পানি এবং জান্নাত হবে জাহান্নামের আগুন। নবী (সা) বলেনঃ
“দাজ্জালের সাথে যা থাকবে তা আমি অবগত আছি। তার সাথে দুটি নদী প্রবাহিত থাকবে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে একটিতে সুন্দর পরিস্কার পানি দেখা যাবে। অন্যটিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যাবে। যার সাথে দাজ্জালের সাক্ষাৎ হবে সে যেন দাজ্জালের আগুনে ঝাপ দিয়ে পড়ে এবং সেখান থেকে পান করে। কারণ উহা সুমিষ্ট পানি। তার চোখের উপরে মোটা আবরণ থাকবে। কপালে কাফের লেখা থাকবে। মূর্খ ও শিক্ষিত সকল ঈমানদার লোকই তা পড়তে সক্ষম হবেমুমিন।
৩) দাজ্জাল মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করবেঃ দাজ্জাল তার কর্মকান্ডে শয়তানের সহযোগিতা নিবে। শয়তান কেবল মিথ্যা এবং কুফরী কাজেই সাহায্য করে থাকে। নবী (সা) বলেনঃ দাজ্জাল মানুষের কাছে গিয়ে বলবেঃ "আমি যদি তোমার মৃত পিতা-মাতাকে জীবিত করে দেখাই তাহলে কি তুমি আমাকে প্রভু হিসেবে মানবে?" সে বলবে "অবশ্যই মানব।" এ সুযোগে শয়তান তার পিতা-মাতার আকৃতি ধরে সন্তানকে বলবেঃ "হে সন্তান! তুমি তার অনুসরণ কর। সে তোমার প্রতিপালক।"
৪) জড় পদার্থ ও পশুরাও দাজ্জালের ডাকে সাড়া দেবেঃ দাজ্জালের ফিতনার মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে পরীক্ষা করবেন। দাজ্জাল আকাশকে আদেশ দিবে বৃষ্টি বর্ষণ করার জন্যে। আকাশ তার আদেশে বৃষ্টি বর্ষণ করবে। যমিনকে ফসল উৎপন্ন করতে বলবে। যমিন ফসল উৎপন্ন করবে। চতুষ্পদ জন্তুকে ডাক দিলে তারা দাজ্জালের ডাকে সাড়া দিবে। ধ্বংস প্রাপ্ত ঘরবাড়িকে তার নিচে লুকায়িত গুপ্তধন বের করতে বলবে। নবী (সা) বলেনঃ “দাজ্জাল এক জনসমাজে গিয়ে মানুষকে তার প্রতি ঈমান আনয়নের আহবান জানাবে। এতে তারা ঈমান আনবে। দাজ্জাল তাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করার জন্য আকাশকে আদেশ দিবে। আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করবে, যমিন ফসল উৎপন্ন করবে এবং তাদের পশুপাল ও চতুষ্পদ জন্তুগুলো অধিক মোটা-তাজা হবে এবং পূর্বের তুলনায় বেশী দুধ প্রদান করবে। অতঃপর অন্য একটি জনসমাজে গিয়ে মানুষকে তার প্রতি ঈমান আনয়নের আহবান জানাবে। লোকেরা তার কথা প্রত্যাখ্যান করবে। দাজ্জাল তাদের নিকট থেকে ব্যর্থ হয়ে ফেরত আসবে। এতে তারা চরম অভাবে পড়বে। তাদের ক্ষেত-খামারে চরম ফসলহানি দেখা দিবে। দাজ্জাল পরিত্যক্ত ভূমিকে তার নিচে লুকায়িত গুপ্তধন বের করতে বলবে। গুপ্তধনগুলো বের হয়ে মৌমাছির দলের ন্যায় তার পিছে পিছে চলতে থাকবে।"
৫) দাজ্জাল একজন মুমিন যুবককে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করবেঃ
# নবী (সা) বলেনঃ দাজ্জাল বের হয়ে মদীনার দিকে অগ্রসর হবে। যেহেতু মদীনায় দাজ্জালের প্রবেশ নিষেধ তাই সে মদীনার নিকটবর্র্তী একটি স্থানে অবস্থান করবে। তার কাছে একজন মুমিন লোক গমন করবেন। (কেউ কেউ বলেন এটা নাকি হবেন খিজির আ) তিনি হবেন ঐ যামানার সর্বোত্তম মুমিন। দাজ্জালকে দেখে তিনি বলবেনঃ "আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি সেই দাজ্জাল যার সম্পর্কে রাসূল (সা) আমাদেরকে সাবধান করেছেন।" তখন দাজ্জাল উপস্থিত মানুষকে লক্ষ্য করে বলবেঃ "আমি যদি একে হত্যা করে জীবিত করতে পারি তাহলে কি তোমরা আমার ব্যাপারে কোন সন্দেহ পোষণ করবে?" লোকেরা বলবেঃ "না।" অতঃপর সে উক্ত মুমিনকে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করবে। এ পর্যায়ে যুবকটি বলবেঃ "আল্লাহর শপথ! তুমি যে মিথ্যুক দাজ্জাল- এ সম্পর্কে আমার বিশ্বাস আগের তুলনায় আরো মজবুত হলো।" দাজ্জাল তাকে দ্বিতীয়বার হত্যা করার চেষ্টা করবে। কিন্তু তাঁকে হত্যা করতে সক্ষম হবেনা।
মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এসেছে উক্ত যুবক দাজ্জালকে দেখে বলবেঃ "হে লোক সকল! এটি সেই দাজ্জাল যা থেকে নবী (সা) আমাদেরকে সাবধান করেছেন।" এরপর দাজ্জাল তার অনুসারীদেরকে বলবেঃ "একে ধর এবং মারো।" তাকে মেরে-পিটে যখম করা হবে। অতঃপর দাজ্জাল তাকে জিজ্ঞেস করবেঃ "এখনও কি আমার প্রতি ঈমান আনবেনা?" সেই যুবক বলবেনঃ "তুমি মিথ্যাবাদী দাজ্জাল।" তারপর দাজ্জালের আদেশে তার মাথায় করাত লাগিয়ে দ্বিখন্ডিত করে ফেলবে। দাজ্জাল দু’খন্ডের মাঝ দিয়ে হাঁটাহাঁটি করবে। অতঃপর বলবেঃ "উঠে দাড়াও।" তিনি উঠে দাড়াবেন। দাজ্জাল বলবেঃ "এখনও ঈমান আনবেনা?" তিনি বলবেনঃ "তুমি মিথ্যুক দাজ্জাল হওয়ার ব্যাপারে এখন আমার বিশ্বাস আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।" অতঃপর তিনি বলবেনঃ "হে লোক সকল! আমার পরে আর কারো সাথে এরূপ করতে পারবেনা।" অতঃপর দাজ্জাল তাকে পাকড়াও করে আবার যবেহ করার চেষ্টা করবে। কিন্তু তার গলায় যবেহ করার স্থানটি তামায় পরিণত হয়ে যাবে। কাজেই সে যবেহ করতে ব্যর্থ হবে। অতঃপর তাঁর হাতে-পায়ে ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। লোকেরা মনে করবে তাকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছে। অথচ সে জান্নাতে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। নবী (সাঃ) বলেনঃ “এই ব্যক্তি হবে পৃথিবীতে সেদিন সবচেয়ে মহা সত্যের সাক্ষ্য দানকারী।"
দাজ্জাল কোথা থেকে বের হবে?
দাজ্জাল বের হওয়ার স্থান সম্পর্কেও রাসূল (সা) বর্ণনা দিয়েছেন। সে পূর্ব দিকের পারস্য দেশ থেকে বের হবে। সে স্থানটির নাম হবে খোরাসান। সেখান থেকে বের হয়ে সমগ্র দুনিয়া ভ্রমণ করবে। তবে মক্কা এবং মদীনায় প্রবেশ করতে পারবেনা। ফেরেশতাগণ সেদিন মক্কা-মদীনার প্রবেশ পথসমূহে তরবারি নিয়ে পাহারা দিবে। নবী (সা) বলেনঃ “পূর্বের কোন একটি দেশ থেকে দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে যার বর্তমান নাম খোরাসান।"
দাজ্জাল পৃথিবীতে কত দিন থাকবে?
সাহাবীগণ রাসূল (সা)কে জিজ্ঞেস করেছেন দাজ্জাল পৃথিবীতে কত দিন অবস্থান করবে? উত্তরে তিনি বলেছেনঃ "সে চল্লিশ দিন অবস্থান করবে। প্রথম দিনটি হবে এক বছরের মত ; দ্বিতীয় দিনটি হবে এক মাসের মত। তৃতীয় দিনটি হবে এক সপ্তাহের মত। আর বাকী দিনগুলো দুনিয়ার সাধারণ দিনের মতই হবে।"
এর ব্যাখ্যা আমাদের বোঝার অতীত।
কারা দাজ্জালের অনুসরণ করবে?
দাজ্জালের অধিকাংশ অনুসারী হবে ইহুদী, তুর্কী এবং অনারব লোক। ইহুদীরা মিথ্যুক দাজ্জালের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী দাজ্জাল হবে তাদের বাদশা। তার নেতৃত্বে তারা বিশ্ব পরিচালনা করবে। নবী (সা) বলেনঃ দাজ্জালের অধিকাংশ অনুসারী হবে ইহুদী এবং মহিলা। তিনি আরো বলেনঃ “ইস্পাহানের ৭০ হাজার ইহুদী দাজ্জালের অনুসরণ করবে। তাদের সবার পরনে থাকবে সেলাই বিহীন চাদর।"
দাজ্জালের শেষ পরিণতিঃ
সহীহ হাদীসের বিবরণ অনুযায়ী ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ)এর হাতে দাজ্জাল নিহত হবে।
# মক্কা-মদীনা ব্যতীত পৃথিবীর সকল দেশেই দাজ্জাল প্রবেশ করবে। তার অনুসারীর সংখ্যা হবে প্রচুর। সমগ্র দুনিয়ায় তার ফিতনা ছড়িয়ে পড়বে। সামান্য সংখ্যক মুমিনই তার ফিতনা থেকে রেহাই পাবে। ঠিক সে সময় দামেস্ক শহরের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত এক মসজিদের সাদা মিনারের উপর ঈসা (আঃ) আকাশ থেকে অবতরণ করবেন। মুসলমানগণ তার পার্শ্বে একত্রিত হবে। তাদেরকে সাথে নিয়ে তিনি দাজ্জালের দিকে রওনা দিবেন। দাজ্জাল সে সময় জেরুজালেমের বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে অগ্রসর হতে থাকবে। অতঃপর ঈসা (আঃ) ফিলিস্তীনের লুদ্দ শহরের গেইটে দাজ্জালকে পাকড়াও করবেন। ঈসা (আঃ)কে দেখে সে পানিতে লবন গলার ন্যায় গলতে শুরু করবে। ঈসা (আঃ) তাকে লক্ষ্য করে বলবেনঃ “তোমাকে আমি একটি আঘাত করবো যা থেকে তুমি কখনও রেহাই পাবেনা।" ঈসা (আঃ) তাকে বর্শা দিয়ে আঘাত করবেন। অতঃপর মুসলমানেরা তাঁর নেতৃত্বে ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। মুসলমানদের হাতে দাজ্জালের বাহিনী ইহুদীর দল পরাজিত হবে। তারা কোথাও পালাবার স্থান পাবেনা। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবেঃ হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবেঃ হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদীদেরকে গোপন করার চেষ্টা করবে। কেননা সেটি ইহুদীদের বৃক্ষ বলে পরিচিত।
# সহীহ মুসলিম শরীফে আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (স) বলেন
“ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত হবেনা যতক্ষণ না মুসলমানেরা ইহুদীদের সাথে যুদ্ধ করবে। অতঃপর মুসলমানগণ ইহুদীরকে হত্যা করবে। ইহুদীরা গাছ ও পাথরের আড়ালে পালাতে চেষ্টা করবে। কিন্তু কেউ তাদেরকে আশ্রয় দিবেনা। গাছ বা পাথর বলবেঃ হে মুসলমান! হে আল্লাহর বান্দা! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা করো। তবে ‘গারকাদ’ নামক গাছের পিছনে লুকালে গারকাদ গাছ কোন কথা বলবেনা। এটি ইহুদীদের গাছ বলে পরিচিতমুমিন।
এই হল হাদিসসমূহ মতে দাজ্জাল এর পরিচিতি।
এবার আসা যাক আপনার প্রশ্নের দ্বিতীয় অংশে। আসলে কি দাজ্জাল মডার্ন technology?
এত বর্ণনার পরে আসলে এই রুপক টেকে না। খুব বেশি স্পষ্ট করে রাসুল (স) চিহ্নিত করেছেন যে দাজ্জাল একজন মানুষ। রুপক কিছু নয়। তারপরও যারা এই প্রচারণা করছে তারা ভুল করছে। আশা করি বুঝতে পারলেন।
কিছুদিন আগে আমি দেখেছিলাম, একটা অনুবাদ বই (পুস্তিকা) বিক্রি হচ্ছে, যেটার নাম “দাজ্জালঃ ইহুদী খ্রিস্টান সভ্যতা?” বইটাতে যেটা প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে, তা হল, দাজ্জাল বলে কোন ব্যক্তি আসবে না। দাজ্জাল একটা abstract idea. যার কোন ফিজিক্যাল এক্সিস্টেন্স নেই। বইটিতে যে থিওরি তুলে ধরেছে, তাহল, দাজ্জাল মূলত বর্তমান ইহুদি-খ্রিস্টান চালিত করাপ্টেড সভ্যতা। যার দ্বারা মুসলিম জাতি পরীক্ষিত হচ্ছে। (এটি কাদিয়ানী বিশ্বাস) অবশ্যই অবশ্যই এ থিওরি মিথ্যা, এবং আমাদেরকে ভুল ধারণা দিয়ে সত্য থেকে দূরে সরানোর একটি ষড়যন্ত্র মনে হয়।
দাজ্জালকে মসিহ আল দাজ্জাল বলা হয়। দাজ্জাল অর্থ “ভণ্ড” আর, মসিহ মানে “ত্রাণকর্তা”। এমন নয় যে, দাজ্জাল কেবল আমাদের ধর্মেই উল্লেখ আছে। ইহুদী আর খ্রিস্টানরাও তাঁকে বিশ্বাস করে। মসিহ মানে Christ অর্থাৎ খ্রিস্ট, যীশু খ্রিস্ট। যীশু (আ) দাজ্জালের বিরুদ্ধে লড়বেন বলে দাজ্জালকে ইংরেজিতে বলা হয় AntiChrist. ইসলাম দাজ্জাল সম্পর্কে কী বলে সেটা বিস্তারিত তো জানালামই, খ্রিস্টানরা কী বলে দেখা যাকঃ
বাইবেল বলেছে,
# AntiChrist আসবে। তাঁকে BEAST উপাধি দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে তার callsign 666. {Book of Revelations, 13:18}
# তাকে হত্যা করবেন খ্রিস্ট নিজে। (Book of Daniel, 8:25}
# তার এক চোখ হবে অন্ধ। (Book Of Zachariah, 11:17)
আসলে, ইঞ্জিলের আগের সব কিতাবে ভবিষৎবাণী করা হয়েছিল, ২ জন মানুষের ব্যাপারে। কারা জানেন?
১/ মসিহ বা Christ বা খ্রিস্ট
২/ শেষ নবী
ইহুদীরা তা জানত। তাই তারা সব নবীকে জিজ্ঞেস করত। যেমন ইয়াহিয়া (আ) কে তারা বলেঃ
“আপনি কি মসিহ? নাকি, আপনি সেই নবী?” (Gospel Of John, 1:19-25)
ইহুদীরা ছিল খুবই দুর্নীতিপরায়ণ। ইহুদী সিনাগগ (ইহুদিদের উপাসনালয় এর নাম সিনাগগ। Synagogue) এর রাব্বিরা (আমাদের ধর্মীয় পণ্ডিতদের আমরা মাওলানা বলি, তারা বলে রাব্বি) জনগনের কাছ থেকে টাকা নিত আল্লাহ্র নামে, কিন্তু খরচ করত তারা নিজেরাই। এটা ওহীর মাধ্যমে জানেন ঈসা (আ)। তিনি এর বিরোধিতা করেন। আর সাথে সাথে রাব্বিদের চক্ষুশূল হন ঈসা (আ; তাকে মারার ষড়যন্ত্র করতে থাকে তারা। প্রধান রাব্বি কায়াফা এর ষড়যন্ত্রে ঈসা (আ) কে তথাকথিত ক্রুশে চরায়। হত্যা করে। এবং, বলে, দেখ! এ কীভাবে খ্রিস্ট হয়? এ তো নিজের পরিত্রাণই করতে পারল না। আমাদের পরিত্রাণ তো পরের কথা। ফলে, তারা অপেক্ষা করতে লাগল “আসল” খ্রিস্ট আসার।
কিন্তু আল্লাহ্ তার ভবিষ্যৎবাণী ঠিকই রক্ষা করেন। খ্রিস্ট (আ) মারা যাননি। তিনি তাকে রক্ষা করেছেন। তিনি ঠিকই আমাদের পরিত্রান করবেন। কারণ, তিনি দাজ্জালকে হত্যা করে মুসলিম বাহিনীর বিজয় নিশ্চিত করবেন। এরপর, জেরুজালেম থেকে ইসলামিক শাসন করবেন বিশ্বজুড়ে, এটাও আরেকটি ভবিষ্যৎবাণী। যে, খ্রিস্ট জেরুজালেমে দাউদের সিংহাসনে বসে রাজত্ব করবেন, যেটি যীশু করে যাননি, করবেন।
কিন্তু, ইহুদীরা বিশ্বাস করে, যীশু ভণ্ড নবী ছিলেন। যীশু ভারত থেকে কালো জাদু শিখে এসেছিলেন, যা দিয়ে মানুষকে ধোঁকা দিতেন। তারা শুধু এটাই নয়, আরও খারাপ ধারণা পোষণ করে যীশু সম্পর্কে। {লিখতে খুব খারাপ লাগছে, খ্রিস্টানরা আর আমরা মুসলিমরা বিশ্বাস করি, ঈসা (আ) বিনা পিতায় জন্ম লাভ করেছেন। কিন্তু, ইহুদীরা বলে, একবার বেথেলহেম raid করে রোমান সৈন্যরা। তখন তারা নির্বিচারে ধর্ষণ করে নারীদের। পরে বেথেলহেমের মেরির গর্ভে যীশুর জন্ম হয়। আমরা বলি, ঈসা বিন মারিয়াম। ইহুদীরা বলে, ঈসা বিন পান্ডেরা। পান্ডেরা ছিল এক রোমান সৈন্যর নাম। নাউযুবিল্লাহ।}
ইহুদীরা এখন অপেক্ষা করছে, মসিহের আগমনের। তাঁদের মতে, মসিহের আগমন সুগম করতে সম্পূর্ণ “প্রতিশ্রুত পবিত্র ভুমি” বা হলি ল্যান্ড ইহুদিদের কবলে আনতে হবে। এ জন্যই মধ্যপ্রাচ্য দখলের জন্য তারা এত যুদ্ধ বাধাল। বাধাচ্ছে। তারা প্রতিষ্ঠা করতে চায় New World Order. একটি ইহুদী শাসিত পৃথিবী। যাদের নেতা হবে মসিহ। আল্লাহ্ আমাদের এসবই জানিয়ে দিয়েছেন। এখন তিনি আমাদের পরীক্ষা করবেন, আমরা তার কথা বিশ্বাস করি, নাকি, ইহুদিদের কথা, দাজ্জালের কথা। এটা হবে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা। আল্লাহ্ ঠিকই ইহুদিদের জন্য পাঠাবেন এক মসিহ, তবে ভণ্ড মসিহ। ভণ্ড এর আরবি দাজ্জাল। আমরা কি দাজ্জাল এর মধুর বাণী বিশ্বাস করব?
ষড়যন্ত্রে কান না দেই। দাজ্জাল একজন মানুষই।
এবার আমরা সামারিতে আসি। যেসব পয়েন্ট আমরা জানতে পারিঃ
# দাজ্জাল মানুষ। তবে, আল্লাহ্ তাকে স্পেশাল কিছু অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা দেবেন।
# তার বাবা মা ইহুদী হবে। তার বাবা হবে দীর্ঘকায়, যার নাক লম্বা। তার মাও হবে বিশালদেহি।
# ৩০ বছর তারা নিঃসন্তান থাকবে। এরপর তাঁদের বাচ্চা হবে। কিন্তু, তার বাম চোখ অন্ধ। সেই দাজ্জাল।
# তার প্রকাশ হবে এক লোকের সাথে ঝগড়া করার মাধ্যমে।
# তার প্রকাশের সময়কাল এমনঃ তখন বিশাল যুদ্ধ চলবে। (হয়ত ৩য় বিশ্বযুদ্ধ, তবে ধর্মযুদ্ধ) মুসলিম বাহিনী খ্রিস্টান শহর জয় করছে। তার আগমন হবে ইস্পাহানে মতান্তরে খোরাসানে ইরাক-ইরানের মাঝামাঝি থেকে। সমস্ত ইসরাইল হবে তার অনুগত। আর্মড। আরও অনেকে তার পক্ষে যোগ দিবে।
# প্রথম সে হবে তাঁদের নেতা, এরপর বলবে সে নবী। এরপর বলবে সে ঈশ্বর।
# সে সব অঞ্চল, দেশ একে একে জয় করবে। একমাত্র মক্কা আর মদিনা বাদে। এ ২ টি শহর এর পেরিমিটার পাহারা দেবে আল্লাহ্র ফেরেস্তারা। তবে, মদিনার বাহিরে সে আসার পর মদিনায় ভুমিকম্প হবে। ফলে, অনেকে ভয়ে বের হয়ে যাবে, আর দাজ্জাল তাঁদের কব্জা করবে।
# সে কী অলৌকিক জিনিস দেখাবে? সে যেখানে যাবে, বিরান মরুভুমি হলেও বৃষ্টি হবে, শস্যতে ভরে উঠবে। যেন মানুষ তাকে মানে।
# তাকে প্রত্যাখ্যান করলে সে এলাকা হবে বিরান, আসবে দুর্ভিক্ষ।
# সে তার কাছে থাকা কোন একটা কিছু দিয়ে বেহেশত আর দোজখ এর “ইমেজ” দেখাবে।
# তার কপালে কাফ, ফা, রা লিখা থাকবে... (কাফির)
# সে মৃতকে জীবিত করতে পারবে না। তবে, মানুষের মনে হবে সে তা করছে। কেন? কারণ, সে যখন কাউকে বলবে আমি যদি তোমার বাবা মা কে জীবিত করে দেখাই, তবে কি তুমি বিশ্বাস করবে, আমি ঈশ্বর? পরে সে তাই করবে। তবে, তার বাবা মা সত্যি আসবে না, যারা আসবে তারা হল শয়তানের সহচররা যারা রূপ ধরবে। ফলে মানুষ বিভ্রান্ত হবে।
# সে কাউকে মারতে চাইলে মারবে, এরপর সে আবার তাকে জীবিত করতে চাবে। আল্লাহ্ আবার জীবিত করে দিবেন। এরপর জিজ্ঞেস করবে, এবার আমাকে মান? যদি বলে হ্যাঁ, তবে সে চির জাহান্নাম পাবে, যদি বলে না, তবে দাজ্জাল তাকে তার শো করা জাহান্নাম এর দিকে তাকে ফেলে দিবে। আর এরপর সে নিজেকে আবিষ্কার করবে, জান্নাতে। তার বিচার হবে না।
# দাজ্জাল অনেক কম সময়ে সারা দুনিয়া ‘ঘুরবে’।
# দাজ্জাল এর প্রতিপক্ষ মুসলিম বাহিনীর নেতা ইমাম মাহদি। তাকে সাহায্য করতে একদিন ফযরের আজান এর সময় দামেস্কের যে মসজিদ এ সুলতান সালাহউদ্দিন সমাহিত, সে মসজিদের মিনারে ফেরেস্তারা ঈসা (আ) কে নামিয়ে দিয়ে যাবেন। (এ জায়গাটাই ধারণা করা হয়)
# ঈসা (আ) এসেছেন শুনেই দাজ্জাল বাহিনীর মনবল ভেঙ্গে যাবে। দাজ্জাল একটা নির্দিষ্ট দিকে পালাবে। ঈসা (আ) তাকে তাড়া করবেন, তার হাতে থাকবে ‘তরবারি’; লুদ নামের জায়গায় দাজ্জালকে হত্যা করবেন ঈসা (আ)।
এবার এ হাদিসগুলো থেকে আমরা কিছু speculate করতে পারি।
এ হাদিসগুলো যদি আমরা আধুনিক বিজ্ঞান দিয়ে পর্যবেক্ষণ করি তাহলে অবাক হতে হয় বটে।
আসুন দেখি। এখন যা পড়বেন অনেকের আসলে ব্যাখ্যা এরকমই।
যেগুলো বলা হয়েছে, অনেক কিছুই ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছিল ১৫০০ বছর আগের মানুষের উপযোগী করে। তাই অনেকে যেমন বলেন, শেষ যুদ্ধ ঢাল তলোয়ার দিয়ে হবে, কারণ হয়ত মানুষ পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করে আগেই সভ্যতা ধ্বংস করে ফেলবে, এটা হওয়া necessary না। কারণ, “তলোয়ার” বলতে রুপক “অস্ত্র” বুঝান হয়েছে। অন্য কিছু বললে আগের মানুষ কী ভাবত? আর, এ শেষ যুদ্ধকে বলা হয় Armageddon. এটা হিব্রু শব্দ।
যাই হোক, রুপক কিছু উদাহরণ দেই। রাসুল (স) কে সাহাবিরা আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করত, “এত তাড়াতাড়ি কীভাবে দাজ্জাল এত জায়গা যাবে?” আমরা কি কখনো এ প্রশ্ন করব? কীভাবে যাবে? না, দাজ্জাল উড়তে জানে না। দাজ্জালের বাহন থাকবে। আসুন দেখি, রাসুল (স) কী বললেনঃ
“তার বাহন হবে একটি সাদা গাধা। যার ২ কানের দৈর্ঘ্য ১৭৫ গজ।”
সাহাবিরা অবশ্যই আশ্চর্য হলেন। বললেন,“দাজ্জাল কীভাবে ভ্রমন করবে?”
রাসুলের উত্তরঃ “মেঘ যেভাবে আকাশে ভেসে বেড়ায়।”
রাসুল (স) আর কত স্পষ্ট করে উত্তর দিতে পারতেন, সাহাবীদের অবিশ্বাস না জাগিয়ে? আমাদের কি সন্দেহ আছে, বাহনটি কী? গাধা বলতে তিনি বাহনটিকে অপমান করেছেন। কিন্তু বাহনটি কী? যার ২ কান মিলে ১৭৫গজ=১৬০ মিটার। ২টি পাখা! প্লেন! যেটা আকাশে মেঘের মত ভেসে বেড়াতে পারে।
দাজ্জাল কেন লুদ এ যাচ্ছিলেন পালানোর সময়? তিনি কোন জায়গায় মারা যাবেন জানেন? সে জায়গাটাতে এখন কী আছে জানেন? সেই জায়গাটা এখন ইসরায়েল এর বৃহত্তম এয়ারপোর্ট Lydda Airport এর মেইনগেট। এত জায়গা থাকতে দাজ্জাল কেন একটা এয়ারপোর্ট এর দিকে পালাবে, আর এয়ারপোর্ট এ ঢুকতে গিয়ে মারা গেল? কেন? কারণ... মে বি, তার সেখান থেকে পালানোর প্রয়োজন হবে, আর তার জন্য দরকার তার প্লেন..?
দাজ্জালের আগমনের আভাসঃ
১/ মুসলিম হয়েও নিয়মিত নামায আদায় করবে না।
২/ মানুষ সহজেই মিথ্যা বলবে।
৩/ দুনিয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে।
৪/ মানুষ সহজেই সুদ নিবে/দিবে।
৫/ ঘুষ হবে খুবই স্বাভাবিক।
৬/ শাসক সম্প্রদায় হবে দুর্নীতিপরায়ণ।
৭/ বিশ্বব্যাপী ব্যভিচার বৃদ্ধি পাবে।
৮/ নারীরা স্বল্প বসন পড়তে লজ্জিত হবে না।
৯/ বৃদ্ধদের উপর শ্রদ্ধা কমবে।
১০/ অনেকেই শয়তানের পুজা করবে।
১১/ অনেক বড় দুর্ভিক্ষ হবে পৃথিবীতে।
১২/ বেড়ে যাবে incest.
১৩/ গালিলি সাগরের (Galilee Sea) পানি শুকিয়ে যাবে। {এখন অনেক নেমে গেছে/ যাচ্ছে পানির লেভেল}
১৪/ একই রমযান মাসে একটি সূর্য আর একটি চন্দ্র গ্রহণ হবে।
যাই হোক, দাজ্জাল নিয়ে অনেক কিছুই লিখলাম। বিশাল বড় হয়ে গিয়েছে পোস্টটা। সব তথ্য দিতে চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন। সাথেই থাকুন। দাজ্জালের পর এরপর ইনশাল্লাহ আসবে ইয়াজুজ মাজুজ, ঈসা (আ) এর আগমন নিয়ে বিস্তারিত, ইমাম মাহদি ইত্যাদি।
ইসলামিক নলেজ হিসেবে শেয়ার করবেন প্লিজ।
AIM-4.5
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি। আমরা আগে প্রথম অংশের উত্তর দেই।
কিয়ামতের নিকটবর্তী সময়ে মিথ্যুক দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে। দাজ্জালের আগমণ কিয়ামত নিকটবর্তী হওয়ার সবচেয়ে বড় আলামত। মানব জাতির জন্যে দাজ্জালের চেয়ে অধিক বড় বিপদ আর নেই। বিশেষ করে সে সময় যে সমস্ত মুমিন জীবিত থাকবে তাদের জন্য ঈমান নিয়ে টিকে থাকা অত্যন্ত কঠিন হয়ে পড়বে। সমস্ত নবীই আপন উম্মাতকে দাজ্জালের ভয় দেখিয়েছেন। মুহাম্মাদ (স)-ও দাজ্জালের ফিতনা থেকে সতর্ক করেছেন এবং তার অনিষ্ট থেকে বাঁচার উপায়ও বলে দিয়েছেন।
# ইবনে উমার (রাঃ) নবী (সা) হতে বর্ণনা করেনঃ “একবার রাসুল (স) দাড়িয়ে আল্লাহর যথাযোগ্য প্রশংসা করলেন। অতঃপর দাজ্জালের আলোচনা করতে গিয়ে বললেনঃ আমি তোমাদেরকে তার ফিতনা থেকে সাবধান করছি। সকল নবীই তাদের উম্মাতকে দাজ্জালের ভয় দেখিয়েছেন। কিন্তু আমি তোমাদের কাছে দাজ্জালের একটি পরিচয়ের কথা বলব যা কোন নবীই তাঁর উম্মাতকে বলেন নাই। তা হলো দাজ্জাল অন্ধ হবে। আর আমাদের মহান আল্লাহ অন্ধ নন।"
# নাওয়াস বিন সামআন (রাঃ) বলেনঃ “একবার রাসূল (সা) সকাল বেলা আমাদের কাছে দাজ্জালের বর্ণনা করলেন। তিনি তার ফিতনাকে খুব বড় করে তুলে ধরলেন। বর্ণনা শুনে আমরা মনে করলাম নিকটস্থ খেজুরের বাগানের পাশেই সে হয়ত অবস্থান করছে। আমরা রাসূল (সা) এর নিকট থেকে চলে গেলাম। কিছুক্ষণ পর আমরা আবার তাঁর কাছে গেলাম। এবার তিনি আমাদের অবস্থা বুঝে জিজ্ঞেস করলেনঃ তোমাদের কি হলো? আমরা বললামঃ হে আল্লাহর রাসূল! আপনি যেভাবে দাজ্জালের আলোচনা করেছেন তা শুনে আমরা ভাবলাম হতে পারে সে খেজুরের বাগানের ভিতরেই রয়েছে। নবী (সা) বললেনঃ দাজ্জাল ছাড়া তোমাদের উপর আমার আরো ভয় রয়েছে। আমি তোমাদের মাঝে জীবিত থাকতেই যদি দাজ্জাল আগমন করে তাহলে তোমাদেরকে ছাড়া আমি একাই তার মোকাবেলা করবো। আর আমি চলে যাওয়ার পর যদি সে আগমন করে তাহলে প্রত্যেক ব্যক্তিই নিজেকে হেফাযত করবে। আর আমি চলে গেলে আল্লাহই প্রতিটি মুসলিমকে হেফাযতকারী হিসেবে যথেষ্ট।"
দাজ্জালের আগমনের সময় মুসলমানদের অবস্থা কী হবে?
দাজ্জালের আগমণের পূর্ব মুহূর্তে মুসলমানদের অবস্থা খুব ভাল থাকবে। তারা পৃথিবীতে শক্তিশালী এবং বিজয়ী থাকবে। সম্ভবতঃ এই শক্তির পতন ঘটানোর জন্যই দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে।
দাজ্জালের পরিচয়ঃ
দাজ্জাল মানব জাতিরই একজন হবে, তবে ব্যতিক্রমী। মুসলমানদের কাছে তার পরিচয় তুলে ধরার জন্যে এবং তার ফিতনা থেকে তাদেরকে সতর্ক করার জন্যে নবী (সা) তার পরিচয় বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করেছেন। মুমিনগণ তাকে দেখে সহজেই চিনতে পারবে এবং তার ফিতনা থেকে নিরাপদে থাকবে। নবী (সা) তার যে সমস্ত পরিচয় উল্লেখ করেছেন মুমিনগণ তা পূর্ণ অবগত থাকবে। দাজ্জাল অন্যান্য মানুষের তুলনায় ব্যতিক্রমী বৈশিষ্টের অধিকারী হবে। মূর্খ ও হতভাগ্য ব্যতীত কেউ দাজ্জালের ধোঁকায় পড়বে না।
# নবী (সা) দাজ্জালকে স্বপ্নে দেখে তার শারীরিক গঠনের বর্ণনাও প্রদান করেছেন। তিনি বলেনঃ দাজ্জাল হবে বৃহদাকার একজন যুবক পুরুষ, শরীরের রং হবে লালচে, বেঁটে, মাথার চুল হবে কোঁকড়া, কপাল হবে উঁচু, বুক হবে প্রশস্ত, চক্ষু হবে টেরা এবং আঙ্গুর ফলের মত উঁচু। দাজ্জাল নির্বংশ হবে। তার কোন সন্তান থাকবেনা।
দাজ্জালের কোন্ চোখ অন্ধ থাকবে?
বিভিন্ন হাদীসে দাজ্জালের চোখ অন্ধ হওয়ার কথা বর্ণিত হয়েছে। ডান চোখ অন্ধ হওয়ার হাদীছগুলো বুখারী ও মুসলিম শরীফে বর্ণিত হয়েছে।
দাজ্জালের দু’চোখের মাঝখানে কাফের লেখা থাকবেঃ
তাছাড়া দাজ্জালকে চেনার সবচেয়ে বড় আলামত হলো তার কপালে কাফের ( كافر) লেখা থাকবে। অপর বর্ণনায় আছে তার কপালে (ك ف ر) এই তিনটি বর্ণ লেখা থাকবে। প্রতিটি মুসলিম ব্যক্তিই তা পড়তে পারবে। অপর বর্ণনায় আছে শিক্ষিত-অশিক্ষত সকল মুসলিম ব্যক্তিই তা পড়তে পারবে। মোটকথা আল্লাহ মুমিনের জন্যে অন্তদৃষ্টি খোলে দিবেন। ফলে সে দাজ্জালকে দেখে সহজেই চিনতে পারবে। যদিও ইতিপূর্বে সে ছিল অশিক্ষিত। কাফির ও মুনাফিক লোক তা দেখেও পড়তে পারবেনা। যদিও সে ছিল শিক্ষিত ও পড়ালেখা জানা লোক। কারণ কাফের ও মুনাফেক আল্লাহর অসংখ্য সুস্পষ্ট দলীল-প্রমাণ দেখেও ঈমান আনয়ন করেনি।
দাজ্জালের ফিতনাগুলো ও তার অসারতাঃ
আদম সৃষ্টি থেকে কিয়ামত পর্যন্ত মানব জাতির জন্য দাজ্জালের চেয়ে বড় ফিতনা আর নেই। সে এমন অলৌকিক বিষয় দেখাবে যা দেখে মানুষ দিশেহারা হয়ে পড়বে। দাজ্জাল নিজেকে প্রভু ও আল্লাহ হিসেবে দাবী করবে। তার দাবীর পক্ষে এমন কিছু প্রমাণও উপস্থাপন করবে যে সম্পর্কে নবী (সা) আগেই সতর্ক করেছেন। মুমিন বান্দাগণ এগুলো দেখে মিথ্যুক দাজ্জালকে সহজেই চিনতে পারবে এবং আল্লাহর প্রতি তাদের ঈমান আরো বৃদ্ধি পাবে। কিন্তু দুর্বল ঈমানদার লোকেরা বিভ্রান্তিতে পড়ে ঈমান হারা হবে।
দাজ্জাল নিজেকে রাব্ব বা প্রভু হিসেবেও দাবী করবে। ঈমানদারের কাছে এ দাবীটি সুস্পষ্ট দিবালোকের মত মিথ্যা বলে প্রকাশিত হবে। দাজ্জাল তার দাবীর পক্ষে যত বড় অলৌকিক ঘটনাই পেশ করুক না কেন মুমিন ব্যক্তির কাছে এটি সুস্পষ্ট হবে যে সে একজন অক্ষম মানুষ, পানাহার করে, নিদ্রা যায়, প্রকৃতির ডাকে সাড়া দেয়। তার চেয়েও বড় কথা, সে হবে এক চোখ অন্ধ। যার ভিতরে মানবীয় সব দোষ-গুণ বিদ্যমান সে কিভাবে রব্ব তথা আল্লাহ হতে পারে!! একজন সত্যিকার মুমিনের মুমিনের বিশ্বাস হলোঃ মহান আল্লাহ সর্বপ্রকার মানবীয় দোষ-ত্রুটি হতে সম্পূর্ণ মুক্ত। কোন সৃষ্টজীবই তার মত নয়। আল্লাহকে দুনিয়ার জগতে কোন মানুষের পক্ষে দেখাও সম্ভব নয়।
দাজ্জাল বর্তমানে কোথায় আছে?
হাদিস ইঙ্গিত করে যে, দাজ্জাল দীর্ঘজীবী মানুষ আর সে অনেক আগে থেকেই পৃথিবীতে আছে, তবে chained... আসুন আমরা একটা দীর্ঘ কাহিনী পড়ি। এটা একটি হাদিস।
# ফাতেমা বিনতে কায়স (রাঃ) হতে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ আমি মসজিদে গমন করে নবী (সা)এর সাথে নামায আদায় করলাম। আমি ছিলাম মহিলাদের কাতারে। তিনি নামায শেষে হাসতে হাসতে উঠে বসলেন। প্রথমেই তিনি বললেনঃ "প্রত্যেকেই যেন নিজ নিজ জায়গায় বসে থাকে।"
এরপর তিনি বললেনঃ "তোমরা কি জান আমি কেন তোমাদেরকে একত্রিত করেছি?"
তাঁরা বললেনঃ "আল্লাহ এবং তাঁর রাসূলই ভাল জানেন।"
অতঃপর তিনি কাহিনী বললেনঃ আমি তোমাদেরকে এ সংবাদ দেয়ার জন্যে একসাথে করেছি যে তামীম দারী ছিল একজন খৃষ্টান লোক। সে আমার কাছে আগমণ করে ইসলাম গ্রহণ করেছে। অতঃপর সে মিথ্যুক দাজ্জাল সম্পর্কে এমন ঘটনা বলেছে যা আমি তোমাদের কাছে বর্ণনা করতাম। লাখ্ম ও জুযাম গোত্রের ত্রিশ জন লোকের সাথে সে সাগর পথে ভ্রমণে গিয়েছিল। দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার শিকার হয়ে এক মাস পর্যন্ত তারা সাগরেই ছিল। অবশেষে তারা সাগরের মাঝখানে একটি দ্বীপে অবতরণ করলো। দ্বীপের ভিতরে প্রবেশ করে তারা মোটা মোটা এবং প্রচুর চুল বিশিষ্ট একটি অদ্ভুত প্রাণীর সন্ধান পেল। চুল দ্বারা সমস্ত শরীর আবৃত থাকার কারণে প্রাণীটির অগ্রপশ্চাৎ নির্ধারণ করতে সক্ষম হলোনা। তারা বললঃ "অকল্যাণ হোক তোমার! কে তুমি?"
সে বললোঃ "আমি সংবাদ সংগ্রহকারী গোয়েন্দা।"
তারা বললোঃ "কিসের সংবাদ সংগ্রহকারী?"
অতঃপর প্রাণীটি দ্বীপের মধ্যে একটি ঘরের দিকে ইঙ্গিত করে বললোঃ "হে লোক সকল! তোমরা এই ঘরের ভিতরে অবস্থানরত লোকটির কাছে যাও। সে তোমাদের কাছ থেকে সংবাদ সংগ্রহ করার জন্যে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে।"
তামীম দারী বলেনঃ প্রাণীটি যখন একজন লোকের কথা বললোঃ তখন আমাদের ভয় হলো যে হতে পারে সে একটি শয়তান। তারপরেও আমরা ভীত হয়ে দ্রুত অগ্রসর হয়ে ঘরটির ভিতরে প্রবেশ করলাম। সেখানে প্রবেশ করে আমরা বৃহদাকার একটি মানুষ দেখতে পেলাম। এত বড় আকৃতির মানুষ আমরা ইতিপূর্বে আর কখনও দেখিনি। তার হাত দুটিকে ঘাড়ের সাথে একত্রিত করে হাঁটু এবং গোড়ালীর মধ্যবর্তী স্থানে লোহার শিকল দ্বারা বেঁধে রাখা হয়েছে। আমরা বললামঃ "মরণ হোক তোমার! কে তুমি?"
সে বললোঃ "তোমরা আমার কাছে আসতে সক্ষম হয়েছ। তাই আগে তোমাদের পরিচয় দাও।"
আমরা বললামঃ "আমরা একদল আরব মানুষ নৌকায় আরোহন করলাম। সাগরের প্রচন্ড ঢেউ আমাদেরকে নিয়ে একমাস পর্যন্ত খেলা করলো। অবশেষে তোমার দ্বীপে উঠতে বাধ্য হলাম। দ্বীপে প্রবেশ করেই প্রচুর পশম বিশিষ্ট এমন একটি জন্তুর সাক্ষাৎ পেলাম, প্রচুর পশমের কারণে যার অগ্রপশ্চাৎ চেনা যাচ্ছিল না। আমরা বললামঃ অকল্যাণ হোক তোমার! কে তুমি? সে বললোঃ আমি সংবাদ সংগ্রহকারী গোয়েন্দা। আমরা বললামঃ কিসের সংবাদ সংগ্রহকারী? অতঃপর প্রাণীটি দ্বীপের মধ্যে এই ঘরের দিকে ইঙ্গিত করে বললোঃ হে লোক সকল! তোমরা এই ঘরের ভিতরে অবস্থানরত লোকটির কাছে যাও। সে তোমাদের নিকট থেকে সংবাদ সংগ্রহ করার জন্য অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। তাই আমরা তার ভয়ে তোমার কাছে দ্রুত আগমন করলাম। হতে পার তুমি একজন শয়তান- এ ভয় থেকেও আমরা নিরাপদ নই।"
সে বললোঃ "আমাকে তোমরা ‘বাইসান’ (একটা জায়গা) সম্পর্কে সংবাদ দাও।"
আমরা তাকে বললামঃ "বাইসানের কি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করছো?"
সে বললোঃ "আমি সেখানকার খেজুরের বাগান সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করছি। সেখানের গাছগুলো এখনও ফল দেয়?"
আমরা বললামঃ "হ্যাঁ।"
সে বললোঃ "সে দিন বেশী দূরে নয় যে দিন গাছগুলোতে কোন ফল ধরবেনা।"
অতঃপর সে বললোঃ "আমাকে তাবারিয়া হ্রদ সম্পর্কে সংবাদ দাও।"
আমরা তাকে বললামঃ "তাবারিয়া হ্রদ সম্পর্কে কী জিজ্ঞেস করছো?"
সে বললোঃ "আমি জানতে চাই সেখানে কি এখনও পানি আছে?"
আমরা বললামঃ "প্রচুর পানি আছে।"
সে বললোঃ "অচিরেই সেখানকার পানি শেষ হয়ে যাবে।"
সে পুনরায় বললোঃ "আমাকে যুগার ঝর্ণা সম্পর্কে সংবাদ দাও।"
আমরা তাকে বললামঃ "সেখানকার কী সম্পর্কে তুমি জানতে চাও?"
সে বললোঃ "আমি জানতে চাই সেখানে কি এখনও পানি আছে? লোকেরা কি এখনও সে পানি দিয়ে চাষাবাদ করছে?"
আমরা বললামঃ "প্রচুর পানি রয়েছে। লোকেরা সে পানি দিয়ে চাষাবাদ করছে।"
সে আবার বললোঃ "আমাকে উম্মীদের (অ-ইহুদীদের) নবী সম্পর্কে জানাও।"
আমরা বললামঃ "সে মক্কায় আগমন করে বর্তমানে মদীনায় হিজরত করেছে।"
সে বললোঃ "আরবরা কি তার সাথে যুদ্ধ করেছে?"
বললামঃ "হ্যাঁ।"
সে বললোঃ "ফলাফল কি হয়েছে?"
আমরা তাকে সংবাদ দিলাম যে, "পার্শ্ববর্তী আরবদের উপর তিনি জয়লাভ করেছেন। ফলে তারা তাঁর আনুগত্য বরণ করে নিয়েছে।"
সে বললঃ "তাই না কি?"
আমরা বললামঃ "তাই।"
সে বললোঃ "তার আনুগত্য করাই তাদের জন্য ভাল। এখন আমার কথা শুন। আমি হলাম দাজ্জাল। অচিরেই আমাকে বের হওয়ার অনুমতি দেয়া হবে। আমি বের হয়ে চল্লিশ দিনের ভিতরে পৃথিবীর সমস্ত দেশ ভ্রমণ করবো। তবে মক্কা-মদীনায় প্রবেশ করা আমার জন্য নিষিদ্ধ থাকবে। যখনই আমি মক্কা বা মদীনায় প্রবেশ করতে চাইবো তখনই ফেরেশতাগণ কোষমুক্ত তলোয়ার হাতে নিয়ে আমাকে তাড়া করবে। মক্কা-মদীনার প্রতিটি প্রবেশ পথে ফেরেশতাগণ পাহারা দিবে।"
হাদীসের বর্ণনাকারী ফাতেমা বিনতে কায়েস বলেনঃ নবী (সা) হাতের লাঠি দিয়ে মিম্বারে আঘাত করতে করতে বললেনঃ "এটাই মদীনা, এটাই মদীনা, এটাই মদীনা।" অর্থাৎ এখানে দাজ্জাল আসতে পারবেনা। অতঃপর নবী (সা) মানুষকে লক্ষ করে বললেনঃ "তামীম দারীর কথাটি আমার কাছে খুবই ভাল লেগেছে। তার বর্ণনা আমার বর্ণনার অনুরূপ হয়েছে। বিশেষ করে মক্কা ও মদীনা সম্পর্কে। শুনে রাখো! সে আছে সাম দেশের সাগরে (ভূমধ্য সাগরে) অথবা আরব সাগরে। তা নয় সে আছে পূর্ব দিকে। সে আছে পূর্ব দিকে। সে আছে পূর্ব দিকে।" এই বলে তিনি পূর্ব দিকে ইঙ্গিত করে দেখালেন।
ফাতেমা বিনতে কায়েস বলেনঃ “আমি এই হাদীছটি নবী (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম)এর নিকট থেকে মুখস্থ করে রেখেছি।"
সে দ্বীপ কোনটা? মানুষ জানে না।
দাজ্জালের যে সমস্ত ক্ষমতা দেখে মানুষ বিভ্রান্তিতে পড়বেঃ
১) একস্থান হতে অন্য স্থানে দ্রুত পরিভ্রমণঃ নাওয়াস বিন সামআন থেকে বর্ণিত, নবী (সা)কে দাজ্জালের চলার গতি সম্পর্কে জিজ্ঞেস করা হলে তিনি বলেনঃ “দ্রুতগামী বাতাস বৃষ্টিকে যেভাবে চালিয়ে নেয় দাজ্জালের চলার গতিও সে রকম হবে। মক্কা ও মদীনা ব্যতীত পৃথিবীর সমস্ত অঞ্চল সে পরিভ্রমণ করবে। মক্কা ও মদীনার সমস্ত প্রবেশ পথে ফেরেশতাগণ তলোওয়ার হাতে নিয়ে পাহারা দিবে।"
২) দাজ্জালের সাথে থাকবে জান্নাত-জাহান্নামঃ দাজ্জালের সাথে জান্নাত এবং জাহান্নাম থাকবে। প্রকৃত অবস্থা হবে সম্পূর্ণ বিপরীত। দাজ্জালের জাহান্নামের আগুন প্রকৃতপক্ষে সুমিষ্ট পানি এবং জান্নাত হবে জাহান্নামের আগুন। নবী (সা) বলেনঃ
“দাজ্জালের সাথে যা থাকবে তা আমি অবগত আছি। তার সাথে দুটি নদী প্রবাহিত থাকবে। বাহ্যিক দৃষ্টিতে একটিতে সুন্দর পরিস্কার পানি দেখা যাবে। অন্যটিতে দাউ দাউ করে আগুন জ্বলতে দেখা যাবে। যার সাথে দাজ্জালের সাক্ষাৎ হবে সে যেন দাজ্জালের আগুনে ঝাপ দিয়ে পড়ে এবং সেখান থেকে পান করে। কারণ উহা সুমিষ্ট পানি। তার চোখের উপরে মোটা আবরণ থাকবে। কপালে কাফের লেখা থাকবে। মূর্খ ও শিক্ষিত সকল ঈমানদার লোকই তা পড়তে সক্ষম হবেমুমিন।
৩) দাজ্জাল মৃত ব্যক্তিকে জীবিত করবেঃ দাজ্জাল তার কর্মকান্ডে শয়তানের সহযোগিতা নিবে। শয়তান কেবল মিথ্যা এবং কুফরী কাজেই সাহায্য করে থাকে। নবী (সা) বলেনঃ দাজ্জাল মানুষের কাছে গিয়ে বলবেঃ "আমি যদি তোমার মৃত পিতা-মাতাকে জীবিত করে দেখাই তাহলে কি তুমি আমাকে প্রভু হিসেবে মানবে?" সে বলবে "অবশ্যই মানব।" এ সুযোগে শয়তান তার পিতা-মাতার আকৃতি ধরে সন্তানকে বলবেঃ "হে সন্তান! তুমি তার অনুসরণ কর। সে তোমার প্রতিপালক।"
৪) জড় পদার্থ ও পশুরাও দাজ্জালের ডাকে সাড়া দেবেঃ দাজ্জালের ফিতনার মাধ্যমে আল্লাহ তাঁর বান্দাদেরকে পরীক্ষা করবেন। দাজ্জাল আকাশকে আদেশ দিবে বৃষ্টি বর্ষণ করার জন্যে। আকাশ তার আদেশে বৃষ্টি বর্ষণ করবে। যমিনকে ফসল উৎপন্ন করতে বলবে। যমিন ফসল উৎপন্ন করবে। চতুষ্পদ জন্তুকে ডাক দিলে তারা দাজ্জালের ডাকে সাড়া দিবে। ধ্বংস প্রাপ্ত ঘরবাড়িকে তার নিচে লুকায়িত গুপ্তধন বের করতে বলবে। নবী (সা) বলেনঃ “দাজ্জাল এক জনসমাজে গিয়ে মানুষকে তার প্রতি ঈমান আনয়নের আহবান জানাবে। এতে তারা ঈমান আনবে। দাজ্জাল তাদের উপর বৃষ্টি বর্ষণ করার জন্য আকাশকে আদেশ দিবে। আকাশ বৃষ্টি বর্ষণ করবে, যমিন ফসল উৎপন্ন করবে এবং তাদের পশুপাল ও চতুষ্পদ জন্তুগুলো অধিক মোটা-তাজা হবে এবং পূর্বের তুলনায় বেশী দুধ প্রদান করবে। অতঃপর অন্য একটি জনসমাজে গিয়ে মানুষকে তার প্রতি ঈমান আনয়নের আহবান জানাবে। লোকেরা তার কথা প্রত্যাখ্যান করবে। দাজ্জাল তাদের নিকট থেকে ব্যর্থ হয়ে ফেরত আসবে। এতে তারা চরম অভাবে পড়বে। তাদের ক্ষেত-খামারে চরম ফসলহানি দেখা দিবে। দাজ্জাল পরিত্যক্ত ভূমিকে তার নিচে লুকায়িত গুপ্তধন বের করতে বলবে। গুপ্তধনগুলো বের হয়ে মৌমাছির দলের ন্যায় তার পিছে পিছে চলতে থাকবে।"
৫) দাজ্জাল একজন মুমিন যুবককে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করবেঃ
# নবী (সা) বলেনঃ দাজ্জাল বের হয়ে মদীনার দিকে অগ্রসর হবে। যেহেতু মদীনায় দাজ্জালের প্রবেশ নিষেধ তাই সে মদীনার নিকটবর্র্তী একটি স্থানে অবস্থান করবে। তার কাছে একজন মুমিন লোক গমন করবেন। (কেউ কেউ বলেন এটা নাকি হবেন খিজির আ) তিনি হবেন ঐ যামানার সর্বোত্তম মুমিন। দাজ্জালকে দেখে তিনি বলবেনঃ "আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, তুমি সেই দাজ্জাল যার সম্পর্কে রাসূল (সা) আমাদেরকে সাবধান করেছেন।" তখন দাজ্জাল উপস্থিত মানুষকে লক্ষ্য করে বলবেঃ "আমি যদি একে হত্যা করে জীবিত করতে পারি তাহলে কি তোমরা আমার ব্যাপারে কোন সন্দেহ পোষণ করবে?" লোকেরা বলবেঃ "না।" অতঃপর সে উক্ত মুমিনকে হত্যা করে পুনরায় জীবিত করবে। এ পর্যায়ে যুবকটি বলবেঃ "আল্লাহর শপথ! তুমি যে মিথ্যুক দাজ্জাল- এ সম্পর্কে আমার বিশ্বাস আগের তুলনায় আরো মজবুত হলো।" দাজ্জাল তাকে দ্বিতীয়বার হত্যা করার চেষ্টা করবে। কিন্তু তাঁকে হত্যা করতে সক্ষম হবেনা।
মুসলিম শরীফের বর্ণনায় এসেছে উক্ত যুবক দাজ্জালকে দেখে বলবেঃ "হে লোক সকল! এটি সেই দাজ্জাল যা থেকে নবী (সা) আমাদেরকে সাবধান করেছেন।" এরপর দাজ্জাল তার অনুসারীদেরকে বলবেঃ "একে ধর এবং মারো।" তাকে মেরে-পিটে যখম করা হবে। অতঃপর দাজ্জাল তাকে জিজ্ঞেস করবেঃ "এখনও কি আমার প্রতি ঈমান আনবেনা?" সেই যুবক বলবেনঃ "তুমি মিথ্যাবাদী দাজ্জাল।" তারপর দাজ্জালের আদেশে তার মাথায় করাত লাগিয়ে দ্বিখন্ডিত করে ফেলবে। দাজ্জাল দু’খন্ডের মাঝ দিয়ে হাঁটাহাঁটি করবে। অতঃপর বলবেঃ "উঠে দাড়াও।" তিনি উঠে দাড়াবেন। দাজ্জাল বলবেঃ "এখনও ঈমান আনবেনা?" তিনি বলবেনঃ "তুমি মিথ্যুক দাজ্জাল হওয়ার ব্যাপারে এখন আমার বিশ্বাস আরো বৃদ্ধি পেয়েছে।" অতঃপর তিনি বলবেনঃ "হে লোক সকল! আমার পরে আর কারো সাথে এরূপ করতে পারবেনা।" অতঃপর দাজ্জাল তাকে পাকড়াও করে আবার যবেহ করার চেষ্টা করবে। কিন্তু তার গলায় যবেহ করার স্থানটি তামায় পরিণত হয়ে যাবে। কাজেই সে যবেহ করতে ব্যর্থ হবে। অতঃপর তাঁর হাতে-পায়ে ধরে জাহান্নামে নিক্ষেপ করবে। লোকেরা মনে করবে তাকে জাহান্নামের আগুনে নিক্ষেপ করা হয়েছে। অথচ সে জান্নাতে নিক্ষিপ্ত হয়েছে। নবী (সাঃ) বলেনঃ “এই ব্যক্তি হবে পৃথিবীতে সেদিন সবচেয়ে মহা সত্যের সাক্ষ্য দানকারী।"
দাজ্জাল কোথা থেকে বের হবে?
দাজ্জাল বের হওয়ার স্থান সম্পর্কেও রাসূল (সা) বর্ণনা দিয়েছেন। সে পূর্ব দিকের পারস্য দেশ থেকে বের হবে। সে স্থানটির নাম হবে খোরাসান। সেখান থেকে বের হয়ে সমগ্র দুনিয়া ভ্রমণ করবে। তবে মক্কা এবং মদীনায় প্রবেশ করতে পারবেনা। ফেরেশতাগণ সেদিন মক্কা-মদীনার প্রবেশ পথসমূহে তরবারি নিয়ে পাহারা দিবে। নবী (সা) বলেনঃ “পূর্বের কোন একটি দেশ থেকে দাজ্জালের আবির্ভাব ঘটবে যার বর্তমান নাম খোরাসান।"
দাজ্জাল পৃথিবীতে কত দিন থাকবে?
সাহাবীগণ রাসূল (সা)কে জিজ্ঞেস করেছেন দাজ্জাল পৃথিবীতে কত দিন অবস্থান করবে? উত্তরে তিনি বলেছেনঃ "সে চল্লিশ দিন অবস্থান করবে। প্রথম দিনটি হবে এক বছরের মত ; দ্বিতীয় দিনটি হবে এক মাসের মত। তৃতীয় দিনটি হবে এক সপ্তাহের মত। আর বাকী দিনগুলো দুনিয়ার সাধারণ দিনের মতই হবে।"
এর ব্যাখ্যা আমাদের বোঝার অতীত।
কারা দাজ্জালের অনুসরণ করবে?
দাজ্জালের অধিকাংশ অনুসারী হবে ইহুদী, তুর্কী এবং অনারব লোক। ইহুদীরা মিথ্যুক দাজ্জালের অপেক্ষায় রয়েছে। তাদের বিশ্বাস অনুযায়ী দাজ্জাল হবে তাদের বাদশা। তার নেতৃত্বে তারা বিশ্ব পরিচালনা করবে। নবী (সা) বলেনঃ দাজ্জালের অধিকাংশ অনুসারী হবে ইহুদী এবং মহিলা। তিনি আরো বলেনঃ “ইস্পাহানের ৭০ হাজার ইহুদী দাজ্জালের অনুসরণ করবে। তাদের সবার পরনে থাকবে সেলাই বিহীন চাদর।"
দাজ্জালের শেষ পরিণতিঃ
সহীহ হাদীসের বিবরণ অনুযায়ী ঈসা ইবনে মারইয়াম (আঃ)এর হাতে দাজ্জাল নিহত হবে।
# মক্কা-মদীনা ব্যতীত পৃথিবীর সকল দেশেই দাজ্জাল প্রবেশ করবে। তার অনুসারীর সংখ্যা হবে প্রচুর। সমগ্র দুনিয়ায় তার ফিতনা ছড়িয়ে পড়বে। সামান্য সংখ্যক মুমিনই তার ফিতনা থেকে রেহাই পাবে। ঠিক সে সময় দামেস্ক শহরের পূর্ব প্রান্তে অবস্থিত এক মসজিদের সাদা মিনারের উপর ঈসা (আঃ) আকাশ থেকে অবতরণ করবেন। মুসলমানগণ তার পার্শ্বে একত্রিত হবে। তাদেরকে সাথে নিয়ে তিনি দাজ্জালের দিকে রওনা দিবেন। দাজ্জাল সে সময় জেরুজালেমের বাইতুল মুকাদ্দাসের দিকে অগ্রসর হতে থাকবে। অতঃপর ঈসা (আঃ) ফিলিস্তীনের লুদ্দ শহরের গেইটে দাজ্জালকে পাকড়াও করবেন। ঈসা (আঃ)কে দেখে সে পানিতে লবন গলার ন্যায় গলতে শুরু করবে। ঈসা (আঃ) তাকে লক্ষ্য করে বলবেনঃ “তোমাকে আমি একটি আঘাত করবো যা থেকে তুমি কখনও রেহাই পাবেনা।" ঈসা (আঃ) তাকে বর্শা দিয়ে আঘাত করবেন। অতঃপর মুসলমানেরা তাঁর নেতৃত্বে ইহুদীদের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করবে। মুসলমানদের হাতে দাজ্জালের বাহিনী ইহুদীর দল পরাজিত হবে। তারা কোথাও পালাবার স্থান পাবেনা। গাছের আড়ালে পালানোর চেষ্টা করলে গাছ বলবেঃ হে মুসলিম! আসো, আমার পিছনে একজন ইহুদী লকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা কর। পাথর বা দেয়ালের পিছনে পলায়ন করলে পাথর বা দেয়াল বলবেঃ হে মুসলিম! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে, আসো! তাকে হত্যা কর। তবে গারকাদ নামক গাছ ইহুদীদেরকে গোপন করার চেষ্টা করবে। কেননা সেটি ইহুদীদের বৃক্ষ বলে পরিচিত।
# সহীহ মুসলিম শরীফে আবু হুরায়রা (রাঃ) হতে বর্ণিত, নবী (স) বলেন
“ততক্ষণ পর্যন্ত কিয়ামত হবেনা যতক্ষণ না মুসলমানেরা ইহুদীদের সাথে যুদ্ধ করবে। অতঃপর মুসলমানগণ ইহুদীরকে হত্যা করবে। ইহুদীরা গাছ ও পাথরের আড়ালে পালাতে চেষ্টা করবে। কিন্তু কেউ তাদেরকে আশ্রয় দিবেনা। গাছ বা পাথর বলবেঃ হে মুসলমান! হে আল্লাহর বান্দা! আমার পিছনে একজন ইহুদী লুকিয়ে আছে। আসো এবং তাকে হত্যা করো। তবে ‘গারকাদ’ নামক গাছের পিছনে লুকালে গারকাদ গাছ কোন কথা বলবেনা। এটি ইহুদীদের গাছ বলে পরিচিতমুমিন।
এই হল হাদিসসমূহ মতে দাজ্জাল এর পরিচিতি।
এবার আসা যাক আপনার প্রশ্নের দ্বিতীয় অংশে। আসলে কি দাজ্জাল মডার্ন technology?
এত বর্ণনার পরে আসলে এই রুপক টেকে না। খুব বেশি স্পষ্ট করে রাসুল (স) চিহ্নিত করেছেন যে দাজ্জাল একজন মানুষ। রুপক কিছু নয়। তারপরও যারা এই প্রচারণা করছে তারা ভুল করছে। আশা করি বুঝতে পারলেন।
কিছুদিন আগে আমি দেখেছিলাম, একটা অনুবাদ বই (পুস্তিকা) বিক্রি হচ্ছে, যেটার নাম “দাজ্জালঃ ইহুদী খ্রিস্টান সভ্যতা?” বইটাতে যেটা প্রমাণ করার চেষ্টা করা হয়েছে, তা হল, দাজ্জাল বলে কোন ব্যক্তি আসবে না। দাজ্জাল একটা abstract idea. যার কোন ফিজিক্যাল এক্সিস্টেন্স নেই। বইটিতে যে থিওরি তুলে ধরেছে, তাহল, দাজ্জাল মূলত বর্তমান ইহুদি-খ্রিস্টান চালিত করাপ্টেড সভ্যতা। যার দ্বারা মুসলিম জাতি পরীক্ষিত হচ্ছে। (এটি কাদিয়ানী বিশ্বাস) অবশ্যই অবশ্যই এ থিওরি মিথ্যা, এবং আমাদেরকে ভুল ধারণা দিয়ে সত্য থেকে দূরে সরানোর একটি ষড়যন্ত্র মনে হয়।
দাজ্জালকে মসিহ আল দাজ্জাল বলা হয়। দাজ্জাল অর্থ “ভণ্ড” আর, মসিহ মানে “ত্রাণকর্তা”। এমন নয় যে, দাজ্জাল কেবল আমাদের ধর্মেই উল্লেখ আছে। ইহুদী আর খ্রিস্টানরাও তাঁকে বিশ্বাস করে। মসিহ মানে Christ অর্থাৎ খ্রিস্ট, যীশু খ্রিস্ট। যীশু (আ) দাজ্জালের বিরুদ্ধে লড়বেন বলে দাজ্জালকে ইংরেজিতে বলা হয় AntiChrist. ইসলাম দাজ্জাল সম্পর্কে কী বলে সেটা বিস্তারিত তো জানালামই, খ্রিস্টানরা কী বলে দেখা যাকঃ
বাইবেল বলেছে,
# AntiChrist আসবে। তাঁকে BEAST উপাধি দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে তার callsign 666. {Book of Revelations, 13:18}
# তাকে হত্যা করবেন খ্রিস্ট নিজে। (Book of Daniel, 8:25}
# তার এক চোখ হবে অন্ধ। (Book Of Zachariah, 11:17)
আসলে, ইঞ্জিলের আগের সব কিতাবে ভবিষৎবাণী করা হয়েছিল, ২ জন মানুষের ব্যাপারে। কারা জানেন?
১/ মসিহ বা Christ বা খ্রিস্ট
২/ শেষ নবী
ইহুদীরা তা জানত। তাই তারা সব নবীকে জিজ্ঞেস করত। যেমন ইয়াহিয়া (আ) কে তারা বলেঃ
“আপনি কি মসিহ? নাকি, আপনি সেই নবী?” (Gospel Of John, 1:19-25)
ইহুদীরা ছিল খুবই দুর্নীতিপরায়ণ। ইহুদী সিনাগগ (ইহুদিদের উপাসনালয় এর নাম সিনাগগ। Synagogue) এর রাব্বিরা (আমাদের ধর্মীয় পণ্ডিতদের আমরা মাওলানা বলি, তারা বলে রাব্বি) জনগনের কাছ থেকে টাকা নিত আল্লাহ্র নামে, কিন্তু খরচ করত তারা নিজেরাই। এটা ওহীর মাধ্যমে জানেন ঈসা (আ)। তিনি এর বিরোধিতা করেন। আর সাথে সাথে রাব্বিদের চক্ষুশূল হন ঈসা (আ; তাকে মারার ষড়যন্ত্র করতে থাকে তারা। প্রধান রাব্বি কায়াফা এর ষড়যন্ত্রে ঈসা (আ) কে তথাকথিত ক্রুশে চরায়। হত্যা করে। এবং, বলে, দেখ! এ কীভাবে খ্রিস্ট হয়? এ তো নিজের পরিত্রাণই করতে পারল না। আমাদের পরিত্রাণ তো পরের কথা। ফলে, তারা অপেক্ষা করতে লাগল “আসল” খ্রিস্ট আসার।
কিন্তু আল্লাহ্ তার ভবিষ্যৎবাণী ঠিকই রক্ষা করেন। খ্রিস্ট (আ) মারা যাননি। তিনি তাকে রক্ষা করেছেন। তিনি ঠিকই আমাদের পরিত্রান করবেন। কারণ, তিনি দাজ্জালকে হত্যা করে মুসলিম বাহিনীর বিজয় নিশ্চিত করবেন। এরপর, জেরুজালেম থেকে ইসলামিক শাসন করবেন বিশ্বজুড়ে, এটাও আরেকটি ভবিষ্যৎবাণী। যে, খ্রিস্ট জেরুজালেমে দাউদের সিংহাসনে বসে রাজত্ব করবেন, যেটি যীশু করে যাননি, করবেন।
কিন্তু, ইহুদীরা বিশ্বাস করে, যীশু ভণ্ড নবী ছিলেন। যীশু ভারত থেকে কালো জাদু শিখে এসেছিলেন, যা দিয়ে মানুষকে ধোঁকা দিতেন। তারা শুধু এটাই নয়, আরও খারাপ ধারণা পোষণ করে যীশু সম্পর্কে। {লিখতে খুব খারাপ লাগছে, খ্রিস্টানরা আর আমরা মুসলিমরা বিশ্বাস করি, ঈসা (আ) বিনা পিতায় জন্ম লাভ করেছেন। কিন্তু, ইহুদীরা বলে, একবার বেথেলহেম raid করে রোমান সৈন্যরা। তখন তারা নির্বিচারে ধর্ষণ করে নারীদের। পরে বেথেলহেমের মেরির গর্ভে যীশুর জন্ম হয়। আমরা বলি, ঈসা বিন মারিয়াম। ইহুদীরা বলে, ঈসা বিন পান্ডেরা। পান্ডেরা ছিল এক রোমান সৈন্যর নাম। নাউযুবিল্লাহ।}
ইহুদীরা এখন অপেক্ষা করছে, মসিহের আগমনের। তাঁদের মতে, মসিহের আগমন সুগম করতে সম্পূর্ণ “প্রতিশ্রুত পবিত্র ভুমি” বা হলি ল্যান্ড ইহুদিদের কবলে আনতে হবে। এ জন্যই মধ্যপ্রাচ্য দখলের জন্য তারা এত যুদ্ধ বাধাল। বাধাচ্ছে। তারা প্রতিষ্ঠা করতে চায় New World Order. একটি ইহুদী শাসিত পৃথিবী। যাদের নেতা হবে মসিহ। আল্লাহ্ আমাদের এসবই জানিয়ে দিয়েছেন। এখন তিনি আমাদের পরীক্ষা করবেন, আমরা তার কথা বিশ্বাস করি, নাকি, ইহুদিদের কথা, দাজ্জালের কথা। এটা হবে সবচেয়ে কঠিন পরীক্ষা। আল্লাহ্ ঠিকই ইহুদিদের জন্য পাঠাবেন এক মসিহ, তবে ভণ্ড মসিহ। ভণ্ড এর আরবি দাজ্জাল। আমরা কি দাজ্জাল এর মধুর বাণী বিশ্বাস করব?
ষড়যন্ত্রে কান না দেই। দাজ্জাল একজন মানুষই।
এবার আমরা সামারিতে আসি। যেসব পয়েন্ট আমরা জানতে পারিঃ
# দাজ্জাল মানুষ। তবে, আল্লাহ্ তাকে স্পেশাল কিছু অতিপ্রাকৃত ক্ষমতা দেবেন।
# তার বাবা মা ইহুদী হবে। তার বাবা হবে দীর্ঘকায়, যার নাক লম্বা। তার মাও হবে বিশালদেহি।
# ৩০ বছর তারা নিঃসন্তান থাকবে। এরপর তাঁদের বাচ্চা হবে। কিন্তু, তার বাম চোখ অন্ধ। সেই দাজ্জাল।
# তার প্রকাশ হবে এক লোকের সাথে ঝগড়া করার মাধ্যমে।
# তার প্রকাশের সময়কাল এমনঃ তখন বিশাল যুদ্ধ চলবে। (হয়ত ৩য় বিশ্বযুদ্ধ, তবে ধর্মযুদ্ধ) মুসলিম বাহিনী খ্রিস্টান শহর জয় করছে। তার আগমন হবে ইস্পাহানে মতান্তরে খোরাসানে ইরাক-ইরানের মাঝামাঝি থেকে। সমস্ত ইসরাইল হবে তার অনুগত। আর্মড। আরও অনেকে তার পক্ষে যোগ দিবে।
# প্রথম সে হবে তাঁদের নেতা, এরপর বলবে সে নবী। এরপর বলবে সে ঈশ্বর।
# সে সব অঞ্চল, দেশ একে একে জয় করবে। একমাত্র মক্কা আর মদিনা বাদে। এ ২ টি শহর এর পেরিমিটার পাহারা দেবে আল্লাহ্র ফেরেস্তারা। তবে, মদিনার বাহিরে সে আসার পর মদিনায় ভুমিকম্প হবে। ফলে, অনেকে ভয়ে বের হয়ে যাবে, আর দাজ্জাল তাঁদের কব্জা করবে।
# সে কী অলৌকিক জিনিস দেখাবে? সে যেখানে যাবে, বিরান মরুভুমি হলেও বৃষ্টি হবে, শস্যতে ভরে উঠবে। যেন মানুষ তাকে মানে।
# তাকে প্রত্যাখ্যান করলে সে এলাকা হবে বিরান, আসবে দুর্ভিক্ষ।
# সে তার কাছে থাকা কোন একটা কিছু দিয়ে বেহেশত আর দোজখ এর “ইমেজ” দেখাবে।
# তার কপালে কাফ, ফা, রা লিখা থাকবে... (কাফির)
# সে মৃতকে জীবিত করতে পারবে না। তবে, মানুষের মনে হবে সে তা করছে। কেন? কারণ, সে যখন কাউকে বলবে আমি যদি তোমার বাবা মা কে জীবিত করে দেখাই, তবে কি তুমি বিশ্বাস করবে, আমি ঈশ্বর? পরে সে তাই করবে। তবে, তার বাবা মা সত্যি আসবে না, যারা আসবে তারা হল শয়তানের সহচররা যারা রূপ ধরবে। ফলে মানুষ বিভ্রান্ত হবে।
# সে কাউকে মারতে চাইলে মারবে, এরপর সে আবার তাকে জীবিত করতে চাবে। আল্লাহ্ আবার জীবিত করে দিবেন। এরপর জিজ্ঞেস করবে, এবার আমাকে মান? যদি বলে হ্যাঁ, তবে সে চির জাহান্নাম পাবে, যদি বলে না, তবে দাজ্জাল তাকে তার শো করা জাহান্নাম এর দিকে তাকে ফেলে দিবে। আর এরপর সে নিজেকে আবিষ্কার করবে, জান্নাতে। তার বিচার হবে না।
# দাজ্জাল অনেক কম সময়ে সারা দুনিয়া ‘ঘুরবে’।
# দাজ্জাল এর প্রতিপক্ষ মুসলিম বাহিনীর নেতা ইমাম মাহদি। তাকে সাহায্য করতে একদিন ফযরের আজান এর সময় দামেস্কের যে মসজিদ এ সুলতান সালাহউদ্দিন সমাহিত, সে মসজিদের মিনারে ফেরেস্তারা ঈসা (আ) কে নামিয়ে দিয়ে যাবেন। (এ জায়গাটাই ধারণা করা হয়)
# ঈসা (আ) এসেছেন শুনেই দাজ্জাল বাহিনীর মনবল ভেঙ্গে যাবে। দাজ্জাল একটা নির্দিষ্ট দিকে পালাবে। ঈসা (আ) তাকে তাড়া করবেন, তার হাতে থাকবে ‘তরবারি’; লুদ নামের জায়গায় দাজ্জালকে হত্যা করবেন ঈসা (আ)।
এবার এ হাদিসগুলো থেকে আমরা কিছু speculate করতে পারি।
এ হাদিসগুলো যদি আমরা আধুনিক বিজ্ঞান দিয়ে পর্যবেক্ষণ করি তাহলে অবাক হতে হয় বটে।
আসুন দেখি। এখন যা পড়বেন অনেকের আসলে ব্যাখ্যা এরকমই।
যেগুলো বলা হয়েছে, অনেক কিছুই ভবিষ্যৎবাণী করা হয়েছিল ১৫০০ বছর আগের মানুষের উপযোগী করে। তাই অনেকে যেমন বলেন, শেষ যুদ্ধ ঢাল তলোয়ার দিয়ে হবে, কারণ হয়ত মানুষ পারমাণবিক বোমা ব্যবহার করে আগেই সভ্যতা ধ্বংস করে ফেলবে, এটা হওয়া necessary না। কারণ, “তলোয়ার” বলতে রুপক “অস্ত্র” বুঝান হয়েছে। অন্য কিছু বললে আগের মানুষ কী ভাবত? আর, এ শেষ যুদ্ধকে বলা হয় Armageddon. এটা হিব্রু শব্দ।
যাই হোক, রুপক কিছু উদাহরণ দেই। রাসুল (স) কে সাহাবিরা আশ্চর্য হয়ে জিজ্ঞেস করত, “এত তাড়াতাড়ি কীভাবে দাজ্জাল এত জায়গা যাবে?” আমরা কি কখনো এ প্রশ্ন করব? কীভাবে যাবে? না, দাজ্জাল উড়তে জানে না। দাজ্জালের বাহন থাকবে। আসুন দেখি, রাসুল (স) কী বললেনঃ
“তার বাহন হবে একটি সাদা গাধা। যার ২ কানের দৈর্ঘ্য ১৭৫ গজ।”
সাহাবিরা অবশ্যই আশ্চর্য হলেন। বললেন,“দাজ্জাল কীভাবে ভ্রমন করবে?”
রাসুলের উত্তরঃ “মেঘ যেভাবে আকাশে ভেসে বেড়ায়।”
রাসুল (স) আর কত স্পষ্ট করে উত্তর দিতে পারতেন, সাহাবীদের অবিশ্বাস না জাগিয়ে? আমাদের কি সন্দেহ আছে, বাহনটি কী? গাধা বলতে তিনি বাহনটিকে অপমান করেছেন। কিন্তু বাহনটি কী? যার ২ কান মিলে ১৭৫গজ=১৬০ মিটার। ২টি পাখা! প্লেন! যেটা আকাশে মেঘের মত ভেসে বেড়াতে পারে।
দাজ্জাল কেন লুদ এ যাচ্ছিলেন পালানোর সময়? তিনি কোন জায়গায় মারা যাবেন জানেন? সে জায়গাটাতে এখন কী আছে জানেন? সেই জায়গাটা এখন ইসরায়েল এর বৃহত্তম এয়ারপোর্ট Lydda Airport এর মেইনগেট। এত জায়গা থাকতে দাজ্জাল কেন একটা এয়ারপোর্ট এর দিকে পালাবে, আর এয়ারপোর্ট এ ঢুকতে গিয়ে মারা গেল? কেন? কারণ... মে বি, তার সেখান থেকে পালানোর প্রয়োজন হবে, আর তার জন্য দরকার তার প্লেন..?
দাজ্জালের আগমনের আভাসঃ
১/ মুসলিম হয়েও নিয়মিত নামায আদায় করবে না।
২/ মানুষ সহজেই মিথ্যা বলবে।
৩/ দুনিয়ে বেশি গুরুত্ব পাবে।
৪/ মানুষ সহজেই সুদ নিবে/দিবে।
৫/ ঘুষ হবে খুবই স্বাভাবিক।
৬/ শাসক সম্প্রদায় হবে দুর্নীতিপরায়ণ।
৭/ বিশ্বব্যাপী ব্যভিচার বৃদ্ধি পাবে।
৮/ নারীরা স্বল্প বসন পড়তে লজ্জিত হবে না।
৯/ বৃদ্ধদের উপর শ্রদ্ধা কমবে।
১০/ অনেকেই শয়তানের পুজা করবে।
১১/ অনেক বড় দুর্ভিক্ষ হবে পৃথিবীতে।
১২/ বেড়ে যাবে incest.
১৩/ গালিলি সাগরের (Galilee Sea) পানি শুকিয়ে যাবে। {এখন অনেক নেমে গেছে/ যাচ্ছে পানির লেভেল}
১৪/ একই রমযান মাসে একটি সূর্য আর একটি চন্দ্র গ্রহণ হবে।
যাই হোক, দাজ্জাল নিয়ে অনেক কিছুই লিখলাম। বিশাল বড় হয়ে গিয়েছে পোস্টটা। সব তথ্য দিতে চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনি আপনার প্রশ্নের উত্তর পেয়েছেন। সাথেই থাকুন। দাজ্জালের পর এরপর ইনশাল্লাহ আসবে ইয়াজুজ মাজুজ, ঈসা (আ) এর আগমন নিয়ে বিস্তারিত, ইমাম মাহদি ইত্যাদি।
ইসলামিক নলেজ হিসেবে শেয়ার করবেন প্লিজ।
AIM-4.5
© 2013 by Ask Islam Bangla.