প্রশ্ন ৪২ --> গ্রহণযোগ্য হাদীস গ্রন্থ কোন গুলো?
উত্তর :
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
দ্বাদশ হিজরী শতকের অন্যতম আলিম শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী (১১৭৬হি/ ১৭৬২খৃ) হাদীসের গ্রন্থগুলিকে পাঁচটি পর্যায়ে ভাগ করেছেন।
প্রথম পর্যায়ে রয়েছে তিনখানা গ্রন্থ: সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম ও মুয়াত্তা ইমাম মালিক। এ গ্রন্থগুলির সকল সনদসহ বর্ণিত হাদীস গ্রহণযোগ্য বলে প্রমাণিত।
দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে সে সকল গ্রন্থ যেগুলির হাদীস মোটামুটি গ্রহণযোগ্য বলে প্রমাণিত হলেও সেগুলিতে কিছু অনির্ভরযোগ্য হাদীসও রয়েছে। মোটামুটিভাবে মুসলিম উম্মাহ এসকল গ্রন্থকে গ্রহণ করেছেন ও তাদের মধ্যে এগুলি প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। এই পর্যায়ে রয়েছে তিনখানা গ্রন্থ: সুনানে আবী দাউদ, সুনানে নাসাঈ, সুনানে তিরমিযী। ইমাম আহমদের মুসনাদও প্রায় এই পর্যায়ের।
তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে ঐ সকল গ্রন্থ যা ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম প্রমুখ মুহাদ্দিসের আগের বা পরের যুগে সংকলিত হয়েছে, কিন্তু তার মধ্যে বিশুদ্ধ, দুর্বল, মিথ্যা, ভুল সব ধরনের হাদীসই রয়েছে, যার ফলে বিশেষজ্ঞ মুহাদ্দিস ভিনড়ব এসকল গ্রন্থ থেকে উপকৃত হওয়া সম্ভব নয়। এ সকল গ্রন্থ মুহাদ্দিসদের মধ্যে তেমন প্রসিদ্ধি লাভ করেনি। এই পর্যায়ে রয়েছে : মুসনাদে আবী ইয়ালা, মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, মুসনাদে আবদ ইবনে হুমাইদ, মুসনাদে তায়ালিসী, ইমাম বাইহাকীর সংকলিত হাদীসগ্রন্থসমূহ (সুনানে কুবরা, দালাইলুন নুবুওয়াত, শুয়াবুল ঈমান,... ইত্যাদি), ইমাম তাহাবীর সংকলিত হাদীসগ্রন্থসমূহ (শারহ মায়ানীল আসার, শারহ মুশকিলিল আসার,... ইত্যাদি), তাবারানীর সংকলিত হাদীস গ্রন্থসমূহ (আল-মু’জামুল কবীর, আল-মু’জামুল আওসাত, আল-মু’জামুস সাগীর,... ইত্যাদি) এ সকল গ্রন্থের সংকলকগণের উদ্দেশ্য ছিল যা পেয়েছেন তাই সংকলন করা। তাঁরা নিরীক্ষা ও যাচাইয়ের দিকে মন দেননি।
চতুর্থ পর্যায়ের গ্রন্থগুলি হলো ঐ সকল গ্রন্থ যা কয়েক যুগ পরে সংকলিত হয়। এ সকল গ্রন্থের সংকলকরা মূলত নিম্ন প্রকারের হাদীস সংকলন করেছেন :
(১). যে সকল ‘হাদীস’ পূর্ব যুগে অপরিচিত বা অজানা থাকার কারণে পূর্ববতী গ্রন্থসমূহে সংকলিত হয়নি,
(২). যে সকল হাদীস কোনো অপরিচিত গ্রন্থে সংকলিত ছিল,
(৩). লোকমুখে প্রচলিত বা ওয়ায়েযদের ওয়াযে প্রচারিত বিভিনড়ব কথা, যা
কোনো হাদীসের গ্রন্থে স্থান পায়নি,
(৪). বিভিন্ন দুর্বল ও বিভ্রান্ত সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত কথাবার্তা,
(৫). যে সকল ‘হাদীস’ মূলত সাহাবী বা তাবেয়ীদের কথা, ইহুদিদের গল্প বা পূর্ববতী যামানার জ্ঞানী ব্যক্তিদের কথা, যেগুলিকে ভুলক্রমে বা ইচ্ছাপূর্বক কোনো বর্ণনাকারী হাদীস বলে বর্ণনা করেছেন,
(৬). কুরআন বা হাদীসের ব্যাখ্যা জাতীয় কথা যা ভুলক্রমে কোনো সৎ বা দরবেশ মানুষ হাদীস বলে বর্ণনা করেছেন,
(৭). হাদীস থেকে উপলব্ধিকৃত অর্থকে কেউ কেউ ইচ্ছাপূবক হাদীস বলে চালিয়ে দিয়েছেন, অথবা
(৮). বিভিন্ন সনদে বর্ণিত বিভিন্ন হাদীসের বাক্যকে একটি হাদীস বলে বর্ণনা করেছেন। এধরনের হাদীসের সংকলন গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ইবনে হিব্বানের আদ-দুয়াফা, ইবনে আদীর আল-কামিল, খতীব বাগদাদী, আবু নুয়াইম আল-আসফাহানী, ইবনে আসাকের, ইবনুন নাজ্জার ও দাইলামী কর্তৃক সংকলিত গ্রন্থসমূহ। খাওয়ারিজমী কর্তৃক সংকলিত মুসনাদ ইমাম আবু হানীফাও প্রায় এই পর্যায়ে পড়ে। এ পর্যায়ের গ্রন্থসমূহের হাদীস হয় দুর্বল অথবা বানোয়াট।
পঞ্চম পর্যায়ের গ্রন্থসমূহে ঐসকল হাদীস রয়েছে যা ফকীহগণ, সূফীগণ বা ঐতিহাসিকগণের মধ্যে প্রচলিত ও তাঁদের লেখা বইয়ে পাওয়া যায়। যে সকল হাদীসের কোনো অস্তিত্ব পূর্বের চার পর্যায়ের গন্থে পাওয়া যায় না। এসব হাদীসের মধ্যে এমন হাদীসও রয়েছে যা কোনো ধর্মচ্যুত ভাষাজ্ঞানী পণ্ডিত পাপাচারী মানুষ তৈরি করেছেন। তিনি তার বানোয়াট হাদীসের জন্য এমন সনদ তৈরি করেছেন যার ত্রুটি ধরা দুঃসাধ্য, আর তার বানোয়াট হাদীসের ভাষাও এরূপ সুন্দর যে রাসূলে আকরাম সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা বলে সহজেই বিশ্বাস হবে। এ সকল বানোয়াট হাদীস ইসলামের মধ্যে সুদূর প্রসারী বিপদ ও ফিতনা সৃষ্টি করেছে। তবে হাদীস শাস্ত্রে সুগভীর পাণ্ডিত্যের অধিকারী বিশেষজ্ঞ মুহাদ্দিসগণ হাদীসের ভাষা ও সূত্রের (সনদের) তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে তার ত্রুটি খুঁজে বের করতে সক্ষম হন।
শাহ ওয়ালিউল্লাহ বলেন: প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের গ্রন্থের উপরেই মুহাদ্দিসগণ নির্ভর করেছেন। তৃতীয় পর্যায়ের গ্রন্থসমহূ থেকে হাদীস শাস্ত্রে পাণ্ডিত্যের অধিকারী রিজাল ও ইলাল শাস্ত্রে পণ্ডিত বিশেষজ্ঞ মুহাদ্দিসগণ ছাড়া কেউ উপকৃত হতে পারেন না, কারণ এ সকল গ্রন্থে সংকলিত হাদীসসমূহের মধ্য থেকে মিথ্যা হাদীস ও নির্ভরযোগ্য হাদীসের পার্থক্য শুধু তাঁরাই করতে পারেন। আর চতুর্থ পর্যায়ের হাদীসগ্রন্থসমূহ সংকলন করা বা পাঠ করা এক ধরনের জ্ঞান বিলাসিতা ছাড়া কিছুই নয়। সত্য বলতে, রাফেযী, মুতাযিলী ও অন্যান্য সকল বিদ‘আতী ও বাতিল মতের মানুষেরা খুব সহজেই এসকল গ্রন্থ থেকে তাদের মতের পক্ষে বিভিনড়ব হাদীস বের করে নিতে পারবেন। কাজেই, এ সকল গ্রন্থের হাদীস দিয়ে কোনো মত প্রতিষ্ঠা করা বা কোনো মতের পক্ষে দলিল দেওয়া আলেমদের নিকট বাতুলতা ও অগ্রহণযোগ্য।
আমাদের সমাজে ‘সিহাহ সিত্তাহ’ নামে প্রসিদ্ধ ৬ টি প্রসিদ্ধ গ্রন্থ পরিচিত রয়েছে । ‘সিহাহ সিত্তা’ পরিভাষাটি ভারতীয় ব্যবহার। এই ৬ টি গ্রন্থের গ্রহণযোগ্যতা সুপরিচিত। তবে গ্রন্থগুলি ‘সহীহ’ নয়। বরং ২টি গ্রন্থ সহীহ ও বাকিগুলি সুনান। এজন্য মুহাদ্দিসগণের মধ্যে সুপরিচিত পরিভাষা হলো ‘আল-কুতুবুস সিত্তা’ ‘পুস্তক ছয়টি’। ভারতীয় উপমহাদেশ ছাড়া অন্য কোথাও ‘সিহাহ সিত্তা’ পরিভাষাটি প্রচলিত নয়।
গ্রন্থগুলোর মধ্যে ২টি সহীহ গ্রন্থ: “সহীহ বুখারী” ও “সহীহ মুসলিম” ছাড়া বাকি ৪টির সংকলকও শুধুমাত্র সহীহ হাদীস বর্ণনা করবেন বলে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। তাঁরা তাঁদের গ্রন্থগুলিতে সহীহ হাদীসের পাশাপাশি অনেক দুর্বল বা বানোয়াট হাদীসও সংকলন করেছেন। তবে তাঁদের গ্রন্থগুলির অধিকাংশ হাদীস নির্ভরযোগ্য হওয়ার কারণে পরবর্তী মুহাদ্দিসগণ সাধারণভাবে তাঁদের গ্রন্থগুলির উপর নির্ভর করেছেন, সাথে সাথে তাঁরা এসকল গ্রন্থে সংকলিত দুর্বল ও বানোয়াট হাদীস সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে বিধান প্রদান করেছেন। আল্লামা আব্দুল হাই লাখনবী (১৩০৪ হি.) এক প্রশ্নের উত্তরে লিখেছেন : “এই চার গ্রন্থে সংকলিত সকল হাদীস সহীহ নয়। বরং এসকল গ্রন্থে সহীহ, হাসান, যয়ীফ ও বানোয়াট সকল প্রকারের হাদীস রয়েছে।”
ইতোপূর্বে আমরা এ বিষয়ে শাহ ওয়ালিউল্লাহর বিবরণ দেখেছি। তিনি সুনানে আবী দাউদ, সুনানে নাসাঈ, সুনানে তিরমিযী: এ তিনটি গ্রন্থকে দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত করেছেন, যে সকল গ্রন্থের হাদীসসমূহ মোটামুটি গ্রহণযোগ্য বলে প্রমাণিত হলেও সেগুলিতে কিছু অনির্ভরযোগ্য হাদীসও রয়েছে। কিন্তু তিনি ‘সুনান ইবনি মাজাহ’-কে এই পর্যায়ে উল্লেখ করেন নি। এর কারণ হলো, ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াযিদ ইবনু মাজাহ আল-কাযবীনী (২৭৫ হি) সংকলিত ‘সুনান’ গ্রন্থটিকে অধিকাংশ মুহাদ্দিস গ্রহণযোগ্য গ্রন্থাবলির অন্তর্ভুক্ত করেন নি। হিজরী ৭ম শতক পর্যন্ত মুহাদ্দিসগণ সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের অতিরিক্ত এ তিনটি সুনানগ্রন্থকেই মোটামুটি নির্ভরযোগ্য এবং হাদীস শিক্ষা ও শিক্ষাদানের ভিত্তি হিসাবে গ্রহণ করতেন। ৫ম-৬ষ্ঠ হিজরী শতকের মুহাদ্দিস মুহাম্মাদ ইবনু তাহির মাকদিসী, আবুল ফাদল ইবনুল কাইসুরানী (৫০৭ হি) এগুলির সাথে সুনান ইবন মাজাহ যোগ করেন।
তাঁর এ মত পরবর্তী ২ শতাব্দী পর্যন্ত মুহাদ্দিসগণ গ্রহণ করেন নি। ৭ম শতকের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইবনুস সালাহ আবু আমর উসমান ইবনু আব্দুর রাহমান (৬৪৩ হি), আল্লামা আবু যাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবনু শারাফ আন-নাবাবী (৬৭৬ হি) প্রমুখ মুহাদ্দিস হাদীসের মূল উৎস হিসাবে উপরের ৫টি গ্রন্থের নাম উল্লেখ করেছেন। সুনানে ইবনি মাজাহ-কে তাঁরা এগুলির মধ্যে গণ্য করেন নি। পরবর্তী যুগের অনেক মুহাক্কিক আলিম এদের অনুসরণ করেছেন। অপরদিকে ইমাম ইবনুল আসীর মুবারাক ইবনু মুহাম্মাদ (৬০৬ হি) ও অন্য কতিপয় মুহাদ্দিস ৬ষ্ঠ গ্রন্থ হিসাবে ইমাম মালিকের মুআত্তাকে গণ্য করেছেন।
সুনান ইবন মাজাহকে উপরের ৩টি সুনানের পর্যায়ভক্তু করতে আপত্তির কারণ হলো ইমাম ইবনু মাজাহর সংকলন পদ্ধতি এ তিন
গ্রন্থের মত নয়। উপরের তিন গ্রন্থের সংকলক মোটামুটি গ্রহণযোগ্য হাদীস সংকলনের উদ্দেশ্যে গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন। বিষয়বস্তের
প্রয়োজনে কিছু যয়ীফ হাদীস গ্রহণ করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেগুলির দুর্বলতার কথা উল্লেখ করেছেন। পক্ষান্তরে ইবনু মাজাহ তৎকালীন সাধারণ সংকলন পদ্ধতির অনুসরণ করেছেন। আমরা দেখেছি যে, এসকল যুগের অধিকাংশ সংকলক সনদসহ প্রচলিত সকল হাদীস সংকলন করতেন। এতে সহীহ, যয়ীফ, মাউদূ সব প্রকারের হাদীসই তাঁদের গ্রন্থে স্থান পেত। সনদ বিচার ছাড়া হাদীসের নির্ভরতা যাচাইকরা সম্ভব হতো না। ইবনু মাজাহও এ পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। তিনি সহীহ বা হাসান হাদীস সংকলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেন নি। তিনি সহীহ ও হাসান হাদীসের পাশাপাশি অনেক যয়ীফ ও কিছু মাউযূ হাদীসও সংকলন করেছেন। তিনি এসকল যয়ীফ ও বানোয়াট হাদীসের ক্ষেত্রে কোনো মন্তব্য করেন নি।
৮ম হিজরী শতক থেকে অধিকাংশ মুহাদ্দিস সুনান ইবনি মাজাহকে ৪র্থ সুনানগ্রন্থ হিসাবে গণ্য করতে থাকেন। মুআত্তা ও সুনান ইবনি মাজাহর মধ্যে পার্থক্য হলো, মুআত্তা গ্রন্থের হাদীস সংখ্য কম এবং এ গন্থের সকল সহীহ হাদীস উপরের ৫ গ্রন্থের মধ্যে সংকলিত। ফলে এ গ্রন্থটিকে পৃথকভাবে অধ্যয়ন করলে অতিরিক্ত হাদীস জানা যাচ্ছে না। পক্ষান্তরে সুনান ইবন মাজাহর মধ্যে উপরের ৫ টি গ্রন্থের অতিরিক্ত সহস্রাধিক হাদীস রয়েছে। এজন্য পরবর্তী যুগের মুহাদ্দিসগণ এই গ্রন্থটিকে ৪র্থ সুনান হিসাবে গ্রহণ করেছেন।
ইমাম ইবনু মাজাহ-এর সুনান গ্রন্থে মোট ৪৩৪১ টি হাদীস সংকলিত হয়েছে। তন্মধ্যে প্রায় তিন হাজার হাদীস উপরের পাঁচটি গ্রন্থে সংকলিত। বাকী প্রায় দেড় হাজার হাদীস অতিরিক্ত। ৯ম হিজরী শতকের মুহাদ্দিস আল্লামা আহমদ ইবনু আবী বাকর আল-বূসীরী (৮৪০ হি) ইবনু মাজাহর এসকল অতিরিক্ত হাদীসের সনদ আলোচনা করেছেন। আল্লামা বূসীরী ১৪৭৬টি হাদীসের সনদ আলোচনা করেছেন, যেগুলি উপরের ৫টি গ্রন্থে সংকলিত হয়নি, শুধুমাত্র ইবনু মাজাহ সংকলন করেছেন। এগুলির মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সহীহ বা হাসান হাদীস এবং প্রায় একতৃতীয়াংশ হাদীস যয়ীফ। এগুলির মধ্যে প্রায় অর্ধশত হাদীস মাউযূ বা বানোয়াট বলে উল্লেখ করেছেন মুহাদ্দিসগণ।
আশা করি লেখাটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন।
STA-31.123
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
দ্বাদশ হিজরী শতকের অন্যতম আলিম শাহ ওয়ালিউল্লাহ দেহলভী (১১৭৬হি/ ১৭৬২খৃ) হাদীসের গ্রন্থগুলিকে পাঁচটি পর্যায়ে ভাগ করেছেন।
প্রথম পর্যায়ে রয়েছে তিনখানা গ্রন্থ: সহীহ বুখারী, সহীহ মুসলিম ও মুয়াত্তা ইমাম মালিক। এ গ্রন্থগুলির সকল সনদসহ বর্ণিত হাদীস গ্রহণযোগ্য বলে প্রমাণিত।
দ্বিতীয় পর্যায়ে রয়েছে সে সকল গ্রন্থ যেগুলির হাদীস মোটামুটি গ্রহণযোগ্য বলে প্রমাণিত হলেও সেগুলিতে কিছু অনির্ভরযোগ্য হাদীসও রয়েছে। মোটামুটিভাবে মুসলিম উম্মাহ এসকল গ্রন্থকে গ্রহণ করেছেন ও তাদের মধ্যে এগুলি প্রসিদ্ধি লাভ করেছে। এই পর্যায়ে রয়েছে তিনখানা গ্রন্থ: সুনানে আবী দাউদ, সুনানে নাসাঈ, সুনানে তিরমিযী। ইমাম আহমদের মুসনাদও প্রায় এই পর্যায়ের।
তৃতীয় পর্যায়ে রয়েছে ঐ সকল গ্রন্থ যা ইমাম বুখারী, ইমাম মুসলিম প্রমুখ মুহাদ্দিসের আগের বা পরের যুগে সংকলিত হয়েছে, কিন্তু তার মধ্যে বিশুদ্ধ, দুর্বল, মিথ্যা, ভুল সব ধরনের হাদীসই রয়েছে, যার ফলে বিশেষজ্ঞ মুহাদ্দিস ভিনড়ব এসকল গ্রন্থ থেকে উপকৃত হওয়া সম্ভব নয়। এ সকল গ্রন্থ মুহাদ্দিসদের মধ্যে তেমন প্রসিদ্ধি লাভ করেনি। এই পর্যায়ে রয়েছে : মুসনাদে আবী ইয়ালা, মুসান্নাফে আব্দুর রায্যাক, মুসান্নাফে ইবনে আবী শাইবা, মুসনাদে আবদ ইবনে হুমাইদ, মুসনাদে তায়ালিসী, ইমাম বাইহাকীর সংকলিত হাদীসগ্রন্থসমূহ (সুনানে কুবরা, দালাইলুন নুবুওয়াত, শুয়াবুল ঈমান,... ইত্যাদি), ইমাম তাহাবীর সংকলিত হাদীসগ্রন্থসমূহ (শারহ মায়ানীল আসার, শারহ মুশকিলিল আসার,... ইত্যাদি), তাবারানীর সংকলিত হাদীস গ্রন্থসমূহ (আল-মু’জামুল কবীর, আল-মু’জামুল আওসাত, আল-মু’জামুস সাগীর,... ইত্যাদি) এ সকল গ্রন্থের সংকলকগণের উদ্দেশ্য ছিল যা পেয়েছেন তাই সংকলন করা। তাঁরা নিরীক্ষা ও যাচাইয়ের দিকে মন দেননি।
চতুর্থ পর্যায়ের গ্রন্থগুলি হলো ঐ সকল গ্রন্থ যা কয়েক যুগ পরে সংকলিত হয়। এ সকল গ্রন্থের সংকলকরা মূলত নিম্ন প্রকারের হাদীস সংকলন করেছেন :
(১). যে সকল ‘হাদীস’ পূর্ব যুগে অপরিচিত বা অজানা থাকার কারণে পূর্ববতী গ্রন্থসমূহে সংকলিত হয়নি,
(২). যে সকল হাদীস কোনো অপরিচিত গ্রন্থে সংকলিত ছিল,
(৩). লোকমুখে প্রচলিত বা ওয়ায়েযদের ওয়াযে প্রচারিত বিভিনড়ব কথা, যা
কোনো হাদীসের গ্রন্থে স্থান পায়নি,
(৪). বিভিন্ন দুর্বল ও বিভ্রান্ত সম্প্রদায়ের মধ্যে প্রচলিত কথাবার্তা,
(৫). যে সকল ‘হাদীস’ মূলত সাহাবী বা তাবেয়ীদের কথা, ইহুদিদের গল্প বা পূর্ববতী যামানার জ্ঞানী ব্যক্তিদের কথা, যেগুলিকে ভুলক্রমে বা ইচ্ছাপূর্বক কোনো বর্ণনাকারী হাদীস বলে বর্ণনা করেছেন,
(৬). কুরআন বা হাদীসের ব্যাখ্যা জাতীয় কথা যা ভুলক্রমে কোনো সৎ বা দরবেশ মানুষ হাদীস বলে বর্ণনা করেছেন,
(৭). হাদীস থেকে উপলব্ধিকৃত অর্থকে কেউ কেউ ইচ্ছাপূবক হাদীস বলে চালিয়ে দিয়েছেন, অথবা
(৮). বিভিন্ন সনদে বর্ণিত বিভিন্ন হাদীসের বাক্যকে একটি হাদীস বলে বর্ণনা করেছেন। এধরনের হাদীসের সংকলন গ্রন্থের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: ইবনে হিব্বানের আদ-দুয়াফা, ইবনে আদীর আল-কামিল, খতীব বাগদাদী, আবু নুয়াইম আল-আসফাহানী, ইবনে আসাকের, ইবনুন নাজ্জার ও দাইলামী কর্তৃক সংকলিত গ্রন্থসমূহ। খাওয়ারিজমী কর্তৃক সংকলিত মুসনাদ ইমাম আবু হানীফাও প্রায় এই পর্যায়ে পড়ে। এ পর্যায়ের গ্রন্থসমূহের হাদীস হয় দুর্বল অথবা বানোয়াট।
পঞ্চম পর্যায়ের গ্রন্থসমূহে ঐসকল হাদীস রয়েছে যা ফকীহগণ, সূফীগণ বা ঐতিহাসিকগণের মধ্যে প্রচলিত ও তাঁদের লেখা বইয়ে পাওয়া যায়। যে সকল হাদীসের কোনো অস্তিত্ব পূর্বের চার পর্যায়ের গন্থে পাওয়া যায় না। এসব হাদীসের মধ্যে এমন হাদীসও রয়েছে যা কোনো ধর্মচ্যুত ভাষাজ্ঞানী পণ্ডিত পাপাচারী মানুষ তৈরি করেছেন। তিনি তার বানোয়াট হাদীসের জন্য এমন সনদ তৈরি করেছেন যার ত্রুটি ধরা দুঃসাধ্য, আর তার বানোয়াট হাদীসের ভাষাও এরূপ সুন্দর যে রাসূলে আকরাম সালাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কথা বলে সহজেই বিশ্বাস হবে। এ সকল বানোয়াট হাদীস ইসলামের মধ্যে সুদূর প্রসারী বিপদ ও ফিতনা সৃষ্টি করেছে। তবে হাদীস শাস্ত্রে সুগভীর পাণ্ডিত্যের অধিকারী বিশেষজ্ঞ মুহাদ্দিসগণ হাদীসের ভাষা ও সূত্রের (সনদের) তুলনামূলক আলোচনার মাধ্যমে তার ত্রুটি খুঁজে বের করতে সক্ষম হন।
শাহ ওয়ালিউল্লাহ বলেন: প্রথম ও দ্বিতীয় পর্যায়ের গ্রন্থের উপরেই মুহাদ্দিসগণ নির্ভর করেছেন। তৃতীয় পর্যায়ের গ্রন্থসমহূ থেকে হাদীস শাস্ত্রে পাণ্ডিত্যের অধিকারী রিজাল ও ইলাল শাস্ত্রে পণ্ডিত বিশেষজ্ঞ মুহাদ্দিসগণ ছাড়া কেউ উপকৃত হতে পারেন না, কারণ এ সকল গ্রন্থে সংকলিত হাদীসসমূহের মধ্য থেকে মিথ্যা হাদীস ও নির্ভরযোগ্য হাদীসের পার্থক্য শুধু তাঁরাই করতে পারেন। আর চতুর্থ পর্যায়ের হাদীসগ্রন্থসমূহ সংকলন করা বা পাঠ করা এক ধরনের জ্ঞান বিলাসিতা ছাড়া কিছুই নয়। সত্য বলতে, রাফেযী, মুতাযিলী ও অন্যান্য সকল বিদ‘আতী ও বাতিল মতের মানুষেরা খুব সহজেই এসকল গ্রন্থ থেকে তাদের মতের পক্ষে বিভিনড়ব হাদীস বের করে নিতে পারবেন। কাজেই, এ সকল গ্রন্থের হাদীস দিয়ে কোনো মত প্রতিষ্ঠা করা বা কোনো মতের পক্ষে দলিল দেওয়া আলেমদের নিকট বাতুলতা ও অগ্রহণযোগ্য।
আমাদের সমাজে ‘সিহাহ সিত্তাহ’ নামে প্রসিদ্ধ ৬ টি প্রসিদ্ধ গ্রন্থ পরিচিত রয়েছে । ‘সিহাহ সিত্তা’ পরিভাষাটি ভারতীয় ব্যবহার। এই ৬ টি গ্রন্থের গ্রহণযোগ্যতা সুপরিচিত। তবে গ্রন্থগুলি ‘সহীহ’ নয়। বরং ২টি গ্রন্থ সহীহ ও বাকিগুলি সুনান। এজন্য মুহাদ্দিসগণের মধ্যে সুপরিচিত পরিভাষা হলো ‘আল-কুতুবুস সিত্তা’ ‘পুস্তক ছয়টি’। ভারতীয় উপমহাদেশ ছাড়া অন্য কোথাও ‘সিহাহ সিত্তা’ পরিভাষাটি প্রচলিত নয়।
গ্রন্থগুলোর মধ্যে ২টি সহীহ গ্রন্থ: “সহীহ বুখারী” ও “সহীহ মুসলিম” ছাড়া বাকি ৪টির সংকলকও শুধুমাত্র সহীহ হাদীস বর্ণনা করবেন বলে কোনো সিদ্ধান্ত নেননি। তাঁরা তাঁদের গ্রন্থগুলিতে সহীহ হাদীসের পাশাপাশি অনেক দুর্বল বা বানোয়াট হাদীসও সংকলন করেছেন। তবে তাঁদের গ্রন্থগুলির অধিকাংশ হাদীস নির্ভরযোগ্য হওয়ার কারণে পরবর্তী মুহাদ্দিসগণ সাধারণভাবে তাঁদের গ্রন্থগুলির উপর নির্ভর করেছেন, সাথে সাথে তাঁরা এসকল গ্রন্থে সংকলিত দুর্বল ও বানোয়াট হাদীস সম্পর্কে সুনির্দিষ্টভাবে বিধান প্রদান করেছেন। আল্লামা আব্দুল হাই লাখনবী (১৩০৪ হি.) এক প্রশ্নের উত্তরে লিখেছেন : “এই চার গ্রন্থে সংকলিত সকল হাদীস সহীহ নয়। বরং এসকল গ্রন্থে সহীহ, হাসান, যয়ীফ ও বানোয়াট সকল প্রকারের হাদীস রয়েছে।”
ইতোপূর্বে আমরা এ বিষয়ে শাহ ওয়ালিউল্লাহর বিবরণ দেখেছি। তিনি সুনানে আবী দাউদ, সুনানে নাসাঈ, সুনানে তিরমিযী: এ তিনটি গ্রন্থকে দ্বিতীয় পর্যায়ভুক্ত করেছেন, যে সকল গ্রন্থের হাদীসসমূহ মোটামুটি গ্রহণযোগ্য বলে প্রমাণিত হলেও সেগুলিতে কিছু অনির্ভরযোগ্য হাদীসও রয়েছে। কিন্তু তিনি ‘সুনান ইবনি মাজাহ’-কে এই পর্যায়ে উল্লেখ করেন নি। এর কারণ হলো, ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াযিদ ইবনু মাজাহ আল-কাযবীনী (২৭৫ হি) সংকলিত ‘সুনান’ গ্রন্থটিকে অধিকাংশ মুহাদ্দিস গ্রহণযোগ্য গ্রন্থাবলির অন্তর্ভুক্ত করেন নি। হিজরী ৭ম শতক পর্যন্ত মুহাদ্দিসগণ সহীহ বুখারী ও সহীহ মুসলিমের অতিরিক্ত এ তিনটি সুনানগ্রন্থকেই মোটামুটি নির্ভরযোগ্য এবং হাদীস শিক্ষা ও শিক্ষাদানের ভিত্তি হিসাবে গ্রহণ করতেন। ৫ম-৬ষ্ঠ হিজরী শতকের মুহাদ্দিস মুহাম্মাদ ইবনু তাহির মাকদিসী, আবুল ফাদল ইবনুল কাইসুরানী (৫০৭ হি) এগুলির সাথে সুনান ইবন মাজাহ যোগ করেন।
তাঁর এ মত পরবর্তী ২ শতাব্দী পর্যন্ত মুহাদ্দিসগণ গ্রহণ করেন নি। ৭ম শতকের প্রখ্যাত মুহাদ্দিস আল্লামা ইবনুস সালাহ আবু আমর উসমান ইবনু আব্দুর রাহমান (৬৪৩ হি), আল্লামা আবু যাকারিয়া ইয়াহইয়া ইবনু শারাফ আন-নাবাবী (৬৭৬ হি) প্রমুখ মুহাদ্দিস হাদীসের মূল উৎস হিসাবে উপরের ৫টি গ্রন্থের নাম উল্লেখ করেছেন। সুনানে ইবনি মাজাহ-কে তাঁরা এগুলির মধ্যে গণ্য করেন নি। পরবর্তী যুগের অনেক মুহাক্কিক আলিম এদের অনুসরণ করেছেন। অপরদিকে ইমাম ইবনুল আসীর মুবারাক ইবনু মুহাম্মাদ (৬০৬ হি) ও অন্য কতিপয় মুহাদ্দিস ৬ষ্ঠ গ্রন্থ হিসাবে ইমাম মালিকের মুআত্তাকে গণ্য করেছেন।
সুনান ইবন মাজাহকে উপরের ৩টি সুনানের পর্যায়ভক্তু করতে আপত্তির কারণ হলো ইমাম ইবনু মাজাহর সংকলন পদ্ধতি এ তিন
গ্রন্থের মত নয়। উপরের তিন গ্রন্থের সংকলক মোটামুটি গ্রহণযোগ্য হাদীস সংকলনের উদ্দেশ্যে গ্রন্থ প্রণয়ন করেছেন। বিষয়বস্তের
প্রয়োজনে কিছু যয়ীফ হাদীস গ্রহণ করলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে সেগুলির দুর্বলতার কথা উল্লেখ করেছেন। পক্ষান্তরে ইবনু মাজাহ তৎকালীন সাধারণ সংকলন পদ্ধতির অনুসরণ করেছেন। আমরা দেখেছি যে, এসকল যুগের অধিকাংশ সংকলক সনদসহ প্রচলিত সকল হাদীস সংকলন করতেন। এতে সহীহ, যয়ীফ, মাউদূ সব প্রকারের হাদীসই তাঁদের গ্রন্থে স্থান পেত। সনদ বিচার ছাড়া হাদীসের নির্ভরতা যাচাইকরা সম্ভব হতো না। ইবনু মাজাহও এ পদ্ধতি অনুসরণ করেছেন। তিনি সহীহ বা হাসান হাদীস সংকলনের মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকেন নি। তিনি সহীহ ও হাসান হাদীসের পাশাপাশি অনেক যয়ীফ ও কিছু মাউযূ হাদীসও সংকলন করেছেন। তিনি এসকল যয়ীফ ও বানোয়াট হাদীসের ক্ষেত্রে কোনো মন্তব্য করেন নি।
৮ম হিজরী শতক থেকে অধিকাংশ মুহাদ্দিস সুনান ইবনি মাজাহকে ৪র্থ সুনানগ্রন্থ হিসাবে গণ্য করতে থাকেন। মুআত্তা ও সুনান ইবনি মাজাহর মধ্যে পার্থক্য হলো, মুআত্তা গ্রন্থের হাদীস সংখ্য কম এবং এ গন্থের সকল সহীহ হাদীস উপরের ৫ গ্রন্থের মধ্যে সংকলিত। ফলে এ গ্রন্থটিকে পৃথকভাবে অধ্যয়ন করলে অতিরিক্ত হাদীস জানা যাচ্ছে না। পক্ষান্তরে সুনান ইবন মাজাহর মধ্যে উপরের ৫ টি গ্রন্থের অতিরিক্ত সহস্রাধিক হাদীস রয়েছে। এজন্য পরবর্তী যুগের মুহাদ্দিসগণ এই গ্রন্থটিকে ৪র্থ সুনান হিসাবে গ্রহণ করেছেন।
ইমাম ইবনু মাজাহ-এর সুনান গ্রন্থে মোট ৪৩৪১ টি হাদীস সংকলিত হয়েছে। তন্মধ্যে প্রায় তিন হাজার হাদীস উপরের পাঁচটি গ্রন্থে সংকলিত। বাকী প্রায় দেড় হাজার হাদীস অতিরিক্ত। ৯ম হিজরী শতকের মুহাদ্দিস আল্লামা আহমদ ইবনু আবী বাকর আল-বূসীরী (৮৪০ হি) ইবনু মাজাহর এসকল অতিরিক্ত হাদীসের সনদ আলোচনা করেছেন। আল্লামা বূসীরী ১৪৭৬টি হাদীসের সনদ আলোচনা করেছেন, যেগুলি উপরের ৫টি গ্রন্থে সংকলিত হয়নি, শুধুমাত্র ইবনু মাজাহ সংকলন করেছেন। এগুলির মধ্যে প্রায় দুই-তৃতীয়াংশ সহীহ বা হাসান হাদীস এবং প্রায় একতৃতীয়াংশ হাদীস যয়ীফ। এগুলির মধ্যে প্রায় অর্ধশত হাদীস মাউযূ বা বানোয়াট বলে উল্লেখ করেছেন মুহাদ্দিসগণ।
আশা করি লেখাটি পড়ে আপনি উপকৃত হয়েছেন।
STA-31.123
© 2013 by Ask Islam Bangla.