প্রশ্ন ৩৫ --> জিহাদ কি ? বড় জিহাদ কোনটি?
উত্তর :
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
জিহাদের সংজ্ঞা:
জিহাদ আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হল-
জিহাদের পারিভাষিক অর্থঃ
বুখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাতা আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন: কাফেরদের সাথে সংগ্রাম করতে গিয়ে শক্তি ক্ষয় করা। এর (জিহাদ শব্দ) দ্বারা নিজের প্রবৃত্তি, শয়তান এবং দুরাচার সকলের সাথে সংগ্রাম করাকেও বুঝায়।
এখানে প্রবৃত্তির সাথে জিহাদ বলতে দ্বীন শিক্ষাগ্রহণ করা, শিক্ষাদান করা ও নিজের জীবনে তা বাস্তবায়ন করা, শয়তানের সাথে সংগ্রাম বলতে তার আনীত সংশয় ও অযাচিত লোভ লালসা প্রতিরোধ করাকে বুঝায়। আর কাফেরের সাথে জিহাদ হাত (শক্তি প্রয়োগ), সম্পদ, কথা কিংবা অন্তর যে কোনটার মাধ্যমেই হতে পারে। এছাড়া দুরাচারীদের সাথে জিহাদ হাত দ্বারা(শক্তি প্রয়োগ) অতঃপর জবান তারপর অন্তর দ্বারা হতে পারে। (ফাতহুল বারী: জিহাদ ও সিয়ার অধ্যায়)
ইমাম জুরজানী (রহঃ) বলেন: জিহাদ হল-সত্য দ্বীন তথা ইসলামের দিকে মানুষকে আহবান করা। (আত-তা’রীফাত)
আল্লামা কাসানী (রহঃ) বলেন: আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের অর্থ হল- প্রচেষ্টা ও শক্তি ব্যয় করা কিংবা কোন কাজে সফল হওয়ার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় মুখের কথা, সম্পদ ও জীবন ইত্যাদি ক্ষয় করে সফলতার মানদন্ডে পৌছার জন্য প্রাণান্তকর প্রচেষ্টার নামই জিহাদ। (আল বাদায়েউস সানায়ে)
জিহাদের স্তর:
জিহাদের বেশ কিছু স্তর রয়েছে। জিহাদ বললেই অস্ত্র ব্যবহার করা বুঝায় না। জিহাদের স্তর সম্বন্ধে ইমাম ইবনুল কায়্যেম (রহঃ) বলেছেন:
>> প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদের স্তর চারটি। সেগুলো হল-
>> শয়তানের বিরুদ্ধে জিহাদের রয়েছে দু’টি স্তর:
>> কাফের ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদের স্তর চারটি।
>> অত্যাচারী যালিম ও অবাধ্যদের বিরুদ্ধে জিহাদের স্তর তিনটি।
এই হল জিহাদের ১৩ টি স্তর। কেউ যদি জিহাদ না করে কিংবা অন্ততঃপক্ষে জিহাদের কল্পনা মনের ভিতর না রেখে মারা যায় তাহলে, যেন সে মুনাফিকের একটা গুণাবলী নিয়েই মৃত্যুবরণ করল। (যাদুল মাআদ দ্রষ্টব্য)
জিহাদের স্তরগুলো নিয়ে কেউ গবেষণা করলে সে দেখতে পাবে, যে সমস্ত নবীদেরকে যুদ্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাদেরকে প্রথমে ইসলামের দাওয়াত (ইসলামের দিকে আহবান) দিতে বলা হয়েছে। তাদের অবর্তমানে তাদের উম্মতের মধ্যকার যোগ্য ব্যক্তিদেরকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা যদি তাদের বাণীকে গ্রহণ না করে এবং এতে বাধা দেয় তবেই যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হয়েছে। প্রথমেই যুদ্ধের নির্দেশ বা অনুমতি দেয়া হয়নি।
বড় জিহাদ কোনটি?
স্বভাবতই প্রশ্ন আসতে পারে কোন জিহাদ বড়? নাফস তথা প্রবৃত্তির সাথে জিহাদ নাকি কাফেরদের সাথে জিহাদ? আসুন দেখি হাদীসে এ সম্বন্ধে কি বলা হয়েছে-
# রাসুল (সাঃ) বলেছেন:অর্থাৎ, (সত্যিকার) মুজাহিদ তথা জিহাদকারী ঐ ব্যক্তি যে তার নাফস তথা প্রবৃত্তির সাথে জিহাদ তথা সংগ্রাম করে। (মুসনাদে আহমাদ)
নিজের প্রবৃত্তির সাথে জিহাদ করার পরই ব্যক্তি শত্রুর সাথে জিহাদ করার যোগ্যতা লাভ করে। কেননা, আল্লাহ তায়ালার আদেশ নিষেধকে পালন না করে কেউ শত্রুর সাথে যুদ্ধ করতে সক্ষম হয় না। (যাদুল মাআ’দ)
অপর এক হাদীসে এসেছে-
# রাসুল (সাঃ) বলেছেন: অর্থাৎ, সর্বোত্তম জিহাদ হচ্ছে অত্যাচারী শাসকের সামনে হক কথা বলা। (তিরমীজি, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ, দারেমী)
জিহাদের একটা অংশ হল যুদ্ধ। জিহাদ বলতে প্রথমেই যুদ্ধকে বুঝানো হয়না। বরং, যুদ্ধ হচ্ছে এর চুড়ান্ত স্তর।
# আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত,এক হাদীসে এসেছে- হযরত আয়েশা (রাঃ)হতে বর্ণিত,তিনি বলেন:হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)!মহিলাদের কি কোন জিহাদ আছে?রাসুল (সাঃ)বললেন:মহিলাদের জন্য জিহাদ আছে কিন্তু,তাতে কোন যুদ্ধ নেই। আর তা হল- হজ্জ ও ওমরাহ আদায় করা। (ইবনে মাজাহ,দারে কুতনী,মুসনাদে আহমাদ)
সূত্র: ইসমাইল জাবীহুল্লাহর বই হতে
আরো পড়ুন:
জিহাদ কি ফরজ ? জিহাদের উদ্দেশ্য কি ? কাদের বিরুদ্ধে করতে হয় ?
জিহাদ কে শুরু করতে পারবে ?
STA-26.50
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
জিহাদের সংজ্ঞা:
জিহাদ আরবী শব্দ। এর আভিধানিক অর্থ হল-
- কোন বিষয়ের চুড়ান্ত সাফল্যে পৌছানোর লক্ষ্যে কথা ও কাজ দ্বারা প্রাণান্তকর প্রচেষ্টা চালানো।
- কষ্ট স্বীকার করা।
- শত্রুকে প্রতিরোধ করতে সাধ্যমত চেষ্টা করা। (তাজুল উরুস,কামুসুল ফিকহী)
জিহাদের পারিভাষিক অর্থঃ
বুখারী শরীফের বিখ্যাত ব্যাখ্যাতা আল্লামা ইবনে হাজার আসকালানী (রহঃ) বলেন: কাফেরদের সাথে সংগ্রাম করতে গিয়ে শক্তি ক্ষয় করা। এর (জিহাদ শব্দ) দ্বারা নিজের প্রবৃত্তি, শয়তান এবং দুরাচার সকলের সাথে সংগ্রাম করাকেও বুঝায়।
এখানে প্রবৃত্তির সাথে জিহাদ বলতে দ্বীন শিক্ষাগ্রহণ করা, শিক্ষাদান করা ও নিজের জীবনে তা বাস্তবায়ন করা, শয়তানের সাথে সংগ্রাম বলতে তার আনীত সংশয় ও অযাচিত লোভ লালসা প্রতিরোধ করাকে বুঝায়। আর কাফেরের সাথে জিহাদ হাত (শক্তি প্রয়োগ), সম্পদ, কথা কিংবা অন্তর যে কোনটার মাধ্যমেই হতে পারে। এছাড়া দুরাচারীদের সাথে জিহাদ হাত দ্বারা(শক্তি প্রয়োগ) অতঃপর জবান তারপর অন্তর দ্বারা হতে পারে। (ফাতহুল বারী: জিহাদ ও সিয়ার অধ্যায়)
ইমাম জুরজানী (রহঃ) বলেন: জিহাদ হল-সত্য দ্বীন তথা ইসলামের দিকে মানুষকে আহবান করা। (আত-তা’রীফাত)
আল্লামা কাসানী (রহঃ) বলেন: আল্লাহর রাস্তায় জিহাদের অর্থ হল- প্রচেষ্টা ও শক্তি ব্যয় করা কিংবা কোন কাজে সফল হওয়ার জন্য প্রাণান্তকর চেষ্টা করা। ইসলামী শরীয়তের পরিভাষায় মুখের কথা, সম্পদ ও জীবন ইত্যাদি ক্ষয় করে সফলতার মানদন্ডে পৌছার জন্য প্রাণান্তকর প্রচেষ্টার নামই জিহাদ। (আল বাদায়েউস সানায়ে)
জিহাদের স্তর:
জিহাদের বেশ কিছু স্তর রয়েছে। জিহাদ বললেই অস্ত্র ব্যবহার করা বুঝায় না। জিহাদের স্তর সম্বন্ধে ইমাম ইবনুল কায়্যেম (রহঃ) বলেছেন:
>> প্রবৃত্তির বিরুদ্ধে জিহাদের স্তর চারটি। সেগুলো হল-
- সত্য দ্বীন (ইসলাম) শিক্ষাগ্রহণ করা। কেননা, সত্য দ্বীন তথা ইসলাম ছাড়া অন্যত্র কোন কল্যাণ নেই।
- দ্বীন শিক্ষাগ্রহণের পর তা নিজের জীবনে বাস্তবায়ন করা। কেননা, বাস্তবায়ন ছাড়া শুধুমাত্র শিক্ষাগ্রহণ করলে তাতে ক্ষতি না হলেও কোন লাভ হয় না।
- যা শিক্ষাগ্রহণ করেছে তা অপরকে শিক্ষাদান করা। কেননা, দ্বীনের কোন কিছুকে গোপণ করলে আল্লাহ তায়ালার আযাব থেকে সে নিজেকে বাঁচাতে পারবেনা।
- ইসলামের বিধানকে তুলে ধরতে গিয়ে কোন বিপদ আসলে ধৈর্যধারণ করা ও কষ্ট স্বীকার করা।
>> শয়তানের বিরুদ্ধে জিহাদের রয়েছে দু’টি স্তর:
- সংশয় দূর করা।
- কু-প্রবৃত্তিকে প্রতিরোধ করা।
>> কাফের ও মুনাফিকদের বিরুদ্ধে জিহাদের স্তর চারটি।
- অন্তর দিয়ে কাজটাকে ঘৃণা করা,
- মুখের কথা দ্বারা তা প্রতিরোধ করা,
- এ পথে সম্পদ ব্যয় করা ও
- নিজের জীবন আল্লাহর রাস্তায় উৎসর্গ করা।
>> অত্যাচারী যালিম ও অবাধ্যদের বিরুদ্ধে জিহাদের স্তর তিনটি।
- সক্ষম হলে(ক্ষমতাবান) শক্তি প্রয়োগ করে তা রুখে দেয়া।
- শক্তি প্রয়োগে অক্ষম হলে মুখের কথা দিয়ে তা রুখবে।
- তাতেও সক্ষম না হলে অন্তর দিয়ে তাকে (কাজকে) ঘৃণা করবে এবং তা প্রতিহত করার চিন্তায় ব্যাপৃত থাকবে।
এই হল জিহাদের ১৩ টি স্তর। কেউ যদি জিহাদ না করে কিংবা অন্ততঃপক্ষে জিহাদের কল্পনা মনের ভিতর না রেখে মারা যায় তাহলে, যেন সে মুনাফিকের একটা গুণাবলী নিয়েই মৃত্যুবরণ করল। (যাদুল মাআদ দ্রষ্টব্য)
জিহাদের স্তরগুলো নিয়ে কেউ গবেষণা করলে সে দেখতে পাবে, যে সমস্ত নবীদেরকে যুদ্ধের নির্দেশ দেয়া হয়েছে তাদেরকে প্রথমে ইসলামের দাওয়াত (ইসলামের দিকে আহবান) দিতে বলা হয়েছে। তাদের অবর্তমানে তাদের উম্মতের মধ্যকার যোগ্য ব্যক্তিদেরকে এই দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। তারা যদি তাদের বাণীকে গ্রহণ না করে এবং এতে বাধা দেয় তবেই যুদ্ধের অনুমতি দেয়া হয়েছে। প্রথমেই যুদ্ধের নির্দেশ বা অনুমতি দেয়া হয়নি।
বড় জিহাদ কোনটি?
স্বভাবতই প্রশ্ন আসতে পারে কোন জিহাদ বড়? নাফস তথা প্রবৃত্তির সাথে জিহাদ নাকি কাফেরদের সাথে জিহাদ? আসুন দেখি হাদীসে এ সম্বন্ধে কি বলা হয়েছে-
# রাসুল (সাঃ) বলেছেন:অর্থাৎ, (সত্যিকার) মুজাহিদ তথা জিহাদকারী ঐ ব্যক্তি যে তার নাফস তথা প্রবৃত্তির সাথে জিহাদ তথা সংগ্রাম করে। (মুসনাদে আহমাদ)
নিজের প্রবৃত্তির সাথে জিহাদ করার পরই ব্যক্তি শত্রুর সাথে জিহাদ করার যোগ্যতা লাভ করে। কেননা, আল্লাহ তায়ালার আদেশ নিষেধকে পালন না করে কেউ শত্রুর সাথে যুদ্ধ করতে সক্ষম হয় না। (যাদুল মাআ’দ)
অপর এক হাদীসে এসেছে-
# রাসুল (সাঃ) বলেছেন: অর্থাৎ, সর্বোত্তম জিহাদ হচ্ছে অত্যাচারী শাসকের সামনে হক কথা বলা। (তিরমীজি, নাসায়ী, ইবনে মাজাহ, আবু দাউদ, মুসনাদে আহমাদ, দারেমী)
জিহাদের একটা অংশ হল যুদ্ধ। জিহাদ বলতে প্রথমেই যুদ্ধকে বুঝানো হয়না। বরং, যুদ্ধ হচ্ছে এর চুড়ান্ত স্তর।
# আয়েশা (রাঃ) বর্ণিত,এক হাদীসে এসেছে- হযরত আয়েশা (রাঃ)হতে বর্ণিত,তিনি বলেন:হে আল্লাহর রাসুল (সাঃ)!মহিলাদের কি কোন জিহাদ আছে?রাসুল (সাঃ)বললেন:মহিলাদের জন্য জিহাদ আছে কিন্তু,তাতে কোন যুদ্ধ নেই। আর তা হল- হজ্জ ও ওমরাহ আদায় করা। (ইবনে মাজাহ,দারে কুতনী,মুসনাদে আহমাদ)
সূত্র: ইসমাইল জাবীহুল্লাহর বই হতে
আরো পড়ুন:
জিহাদ কি ফরজ ? জিহাদের উদ্দেশ্য কি ? কাদের বিরুদ্ধে করতে হয় ?
জিহাদ কে শুরু করতে পারবে ?
STA-26.50
© 2013 by Ask Islam Bangla.