প্রশ্ন ২১ --> ইসলামের দৃষ্টিতে জন্মনিয়ন্ত্রণের বিধান কি ?
উত্তর :
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
মহান আল্লাহ পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করার ইচ্ছা পোষণ করে আদি পিতা আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করেন। কিন্তু মাতা হাওয়া (আঃ)-কে সৃষ্টির কোন প্রয়োজন ছিল কি? যদি একটু চিন্তা করি, তবে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, মহান আল্লাহ আদম (আঃ)-এর একাকীত্ব দূর করতে জীবন সঙ্গিনী হিসাবে হাওয়া (আঃ)-কে শুধু সৃষ্টি করেননি। বরং আরও একটি বিশেষ কারণে তাঁকে সৃষ্টি করেছেন। তাহ’ল মহান আল্লাহ তাদের ঔরশজাত সন্তান দ্বারা সমগ্র পৃথিবী কানায় কানায় পরিপূর্ণ করে দিতে চেয়েছেন। আর সমস্ত মানব তাঁর (আল্লাহর) একত্ব ঘোষণা পূর্বক দাসত্ব করবে। এ হ’ল আদম ও হাওয়া (আঃ)-এর সৃষ্টির একান্ত উদ্দেশ্য। আমরা সেই অনাগত সন্তানদের নির্বিঘ্নে হত্যা করে চলেছি। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,
• ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের হত্যা কর না দারিদ্রের কারণে, আমিই তোমাদের রিযিক দান করি এবং তাদেরও আমিই রিযিক দান করব’ (সূরা আন‘আম ৬/১৫১)।
আলোচ্য আয়াতে খাবারের অভাবের আশংকায় অনাগত সন্তানকে হত্যা করতে মহান আল্লাহ স্পষ্ট নিষেধ করেছেন। আবার বললেন, ‘আমি তোমাদের রিযিক দান করি এবং তাদেরও আমিই দিব’। ‘আমিই দিব’ এই প্রতিশ্রুতির ব্যাখ্যা হ’ল অনাগত সন্তানদের রিযিকের মালিক আল্লাহ। তাঁর খাদ্য ভান্ডারে খাবারের হিসাব অকল্পনীয়। আবার তিনি বললেন,
• ‘নিশ্চয়ই তাদের হত্যা করা মারাত্মক ভুল’ (সূরা বনী ইসরাইল ১৭/৩১)।
তিনি যথার্থই বলেছেন, অনাগত সন্তান হত্যা করা বিরাট ভুল। ভূপৃষ্ঠে একচতুর্থাংশ স্থল, বাকী সব সাগর, মহাসাগর। কিন্তু বর্তমানে মহাসাগরে হাওয়াইন দ্বীপপুঞ্জের মত ছোট-বড় দ্বীপ জেগে উঠেছে এবং নদী ভরাট হয়ে চর জেগে উঠেছে। এভাবে আমাদের আবাদী জমি ও বাসস্থান বাড়ছে এতে কোন সন্দেহ নেই।
মহান আল্লাহ বলেন,
• ‘ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য ও সুখ-শান্তির উপাদান ও বাহন’ ( সূরা কাহাফ ১৮/৪৬)।
আল্লামা আলুসী এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, ধন-সম্পদ হচ্ছে প্রাণ বাঁচানোর উপায়। আর সন্তান হচ্ছে বংশ তথা মানব প্রজাতি রক্ষার মাধ্যম।
জনৈক রুশ লেখক তার Biological Tragedy of Woman গ্রন্থে বলেছেন, নারী জন্মের উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানববংশ রক্ষা করা। যৌন প্রেরণার অন্তর্নিহিত লক্ষ্য মানববংশ বৃদ্ধির সঙ্গে দেহের প্রতিটি অঙ্গ স্ব স্ব দায়িত্ব পালনে তৎপর। নারী দেহের বৃহত্তম অংশ গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মানোর উদ্দেশ্যেই সৃষ্ট। মা হাওয়াসহ পৃথিবীর সমস্ত নারী সৃষ্টির উদ্দেশ্য মানব বংশ রক্ষা ও সন্তান উৎপাদনের মাধ্যমে পারিবারিক কাঠামোতে সন্তানের সুষ্ঠু লালন-পালন।
জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি :
জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি দু’প্রকার :
১. স্থায়ী ব্যবস্থা :
২. সাময়িক ব্যবস্থা :
আযল-এর বিধান :
প্রাচীনকালে আরব সমাজে ‘আযল’ করার যে প্রচলন ছিল। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে কোন আলোচনা খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে হাদীছে স্পষ্ট আলোচনা আছে। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হ’ল-
# জাবির (রাঃ) বলেন, كُنَّا نَعْزِلُ وَالْقُرْآنُ يَنْزِلُ ‘আমরা রাসূলের জীবদ্দশায় ‘আযল’ করতাম অথচ তখনও কুরআন নাযিল হচ্ছিল। [মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩১৮৪]
অর্থাৎ পবিত্র কুরআনে ‘আযল’ সম্পর্কে কোন নিষেধবাণী আসেনি। আর রাসূলুল্লাহ (সা)ও তা নিষেধ করেননি।
# আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সঙ্গে বনী মুস্তালিকের যুদ্ধে বের হয়ে গেলাম। সেখানে কিছু সংখ্যক আরবকে (দাসী) বন্দী করে নিলাম। তখন আমাদের মধ্যে রমণীদের প্রতি আকর্ষণ জাগে। যৌন ক্ষুধাও তীব্র হয়ে উঠে এবং এ অবস্থায় ‘আযল করাকেই আমরা ভাল মনে করলাম। তখন এ সম্পর্কে নবী করীম (সা)-এর নিকটে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি জবাবে বললেন, তোমরা যদি তা কর তাতে তোমাদের ক্ষতি কি? কেননা আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ সৃষ্টি করবেন, তা তিনি নির্দিষ্ট করে রেখেছেন এবং তা অবশ্যই সৃষ্টি করবেন। [মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩১৮৬]
# রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, তুমি কি সৃষ্টি কর? তুমি কি রিযিক দাও? তাকে তার আসল স্থানেই রাখ, সঠিকভাবে তাকে থাকতে দাও। কেননা এ ব্যাপারে আল্লাহর চূড়ান্ত ফায়ছালা রয়েছে।[সিলসিলা ছহীহাহ হা/৫৭৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৪০৩৮]
ইবনে সীরীন-এর মতে, لاعليكم ان لاتفعلوا এ বাক্যে ‘আযল’ সম্পর্কে স্পষ্ট নিষেধ না থাকলেও এ যে নিষেধের একেবারে কাছাকাছি এতে কোন সন্দেহ নেই। হাসান বছরী বলেন, আল্লাহর শপথ, রাসূলের একথায় ‘আযল’ সম্পর্কে স্পষ্ট ভৎর্সনা ও হুমকি রয়েছে। ইমাম কুরতুবী বলেছেন, সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ (সা)-এর উক্ত কথা থেকে নিষেধই বুঝেছিলেন। ফলে এর অর্থ দাঁড়ায় রাসূল (সা) যেন বলেছেন, لاتعزلوا وعليكم ان لاتفعلوا তোমরা ‘আযল’ কর না, তা না করাই তোমাদের কর্তব্য। রাগিব ইসফাহানীর মতে, ‘আযল’ করে শুক্র বিনষ্ট করা এবং তাকে তার আসল স্থানে নিক্ষেপ না করা সম্পর্কে স্পষ্ট নিষেধ। মুয়াত্তা গ্রন্থ প্রণেতা ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন যে, ইবনে ওমর (রাঃ) ছিলেন তাদের অন্যতম যাঁরা ‘আযল’ পসন্দ করতেন না।
عزل অর্থ হ’ল, পুরুষাঙ্গ স্ত্রী অঙ্গের ভেতর থেকে বের করে নেয়া যেন শুক্র স্ত্রী অঙ্গের ভেতরে স্খলিত হওয়ার পরিবর্তে বাইরে স্খলিত হয়।
আইয়ামে জাহেলিয়াতে যেসব কারণে সন্তান হত্যা করা হ’ত, বর্তমান যামানায় জন্মনিয়ন্ত্রণও ঠিক একই কারণে গ্রহণ করা হচ্ছে। কিন্তু সোনালী যুগের ‘আযল’-এর উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। সে যুগে তিনটি কারণে মুসলমানদের মধ্যে ‘আযল’-এর প্রচলন ছিল।
উপরোক্ত তিনটি কারণের মধ্যে প্রথম দু’টি কারণ আধুনিক যুগে এখন আর নেই। শেষের তিন নম্বর কারণ ব্যতিরেকে সম্পদ সাশ্রয়ের জন্য ও নিজের আমোদ-প্রমোদের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ করা বৈধ নয়।
সাময়িক ব্যবস্থা :
ক. আযল প্রয়োজন অনুযায়ী জায়েজ । পড়ুন
খ. স্বামী স্ত্রীর নিজেদের মধ্যকার আলোচনার মাধ্যমে নিরাপদ সময় মেনে (Safe period) চলায় সমস্যা নেই ।
গ. কনডমের ব্যবহার আযলের মতই । তবে স্বামী স্ত্রী উভয়ের অনুমতি থাকতে হবে কারণ এটি সুখ কমিয়ে দেয় । পড়ুন
ঘ. ইনজেকশন পুশ, পেশীতে বড়ী ব্যবহার , মুখে পিল সেবন ইত্যাদি শরীররের জন্য ক্ষতিকর তাই সাধারণভাবে জায়েজ নাই । অত্যন্ত জরুরি শরীরিক কোন কারণ এবং স্বামীর অনুমতি ব্যতীত এগুলো গ্রহণ করা যাবেও না । পড়ুন
পরিশেষে বলব, জন্মনিয়ন্ত্রণ জনসংখ্যা বিস্ফোরণ সমস্যার প্রকৃত সমাধান নয়। বরং জনসংখ্যাকে দক্ষ শ্রমশক্তিতে রূপান্তর ও উৎপাদন বাড়ানো, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উপকরণাদির উন্নয়ণের মধ্যেই রয়েছে এ সমস্যার প্রকৃত সমাধান। জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণের অর্থ হচ্ছে না বুঝে পরাজয় বরণ করা। একটি কাপড় কারো শরীরে ঠিকমত ফিট না হ’লে কাপড়টি বড় করার পরিবর্তে মানুষটির শরীর কেটে ছেঁটে ছোট করার মতই জন্মনিরোধ ব্যবস্থা অন্যায় ও অস্বাভাবিক। কেননা বিজ্ঞানের যুগে আমরা মানুষের যোগ্যতা অনুযায়ী তার শ্রমশক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারি। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন- আমীন!!
সূত্র : আত তাহরিক
STA-12.34
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
মহান আল্লাহ পৃথিবীতে প্রতিনিধি সৃষ্টি করার ইচ্ছা পোষণ করে আদি পিতা আদম (আঃ)-কে সৃষ্টি করেন। কিন্তু মাতা হাওয়া (আঃ)-কে সৃষ্টির কোন প্রয়োজন ছিল কি? যদি একটু চিন্তা করি, তবে এটাই প্রতীয়মান হয় যে, মহান আল্লাহ আদম (আঃ)-এর একাকীত্ব দূর করতে জীবন সঙ্গিনী হিসাবে হাওয়া (আঃ)-কে শুধু সৃষ্টি করেননি। বরং আরও একটি বিশেষ কারণে তাঁকে সৃষ্টি করেছেন। তাহ’ল মহান আল্লাহ তাদের ঔরশজাত সন্তান দ্বারা সমগ্র পৃথিবী কানায় কানায় পরিপূর্ণ করে দিতে চেয়েছেন। আর সমস্ত মানব তাঁর (আল্লাহর) একত্ব ঘোষণা পূর্বক দাসত্ব করবে। এ হ’ল আদম ও হাওয়া (আঃ)-এর সৃষ্টির একান্ত উদ্দেশ্য। আমরা সেই অনাগত সন্তানদের নির্বিঘ্নে হত্যা করে চলেছি। এ সম্পর্কে মহান আল্লাহ বলেন,
• ‘তোমরা তোমাদের সন্তানদের হত্যা কর না দারিদ্রের কারণে, আমিই তোমাদের রিযিক দান করি এবং তাদেরও আমিই রিযিক দান করব’ (সূরা আন‘আম ৬/১৫১)।
আলোচ্য আয়াতে খাবারের অভাবের আশংকায় অনাগত সন্তানকে হত্যা করতে মহান আল্লাহ স্পষ্ট নিষেধ করেছেন। আবার বললেন, ‘আমি তোমাদের রিযিক দান করি এবং তাদেরও আমিই দিব’। ‘আমিই দিব’ এই প্রতিশ্রুতির ব্যাখ্যা হ’ল অনাগত সন্তানদের রিযিকের মালিক আল্লাহ। তাঁর খাদ্য ভান্ডারে খাবারের হিসাব অকল্পনীয়। আবার তিনি বললেন,
• ‘নিশ্চয়ই তাদের হত্যা করা মারাত্মক ভুল’ (সূরা বনী ইসরাইল ১৭/৩১)।
তিনি যথার্থই বলেছেন, অনাগত সন্তান হত্যা করা বিরাট ভুল। ভূপৃষ্ঠে একচতুর্থাংশ স্থল, বাকী সব সাগর, মহাসাগর। কিন্তু বর্তমানে মহাসাগরে হাওয়াইন দ্বীপপুঞ্জের মত ছোট-বড় দ্বীপ জেগে উঠেছে এবং নদী ভরাট হয়ে চর জেগে উঠেছে। এভাবে আমাদের আবাদী জমি ও বাসস্থান বাড়ছে এতে কোন সন্দেহ নেই।
মহান আল্লাহ বলেন,
• ‘ধন-সম্পদ ও সন্তান-সন্তুতি দুনিয়ার জীবনের সৌন্দর্য ও সুখ-শান্তির উপাদান ও বাহন’ ( সূরা কাহাফ ১৮/৪৬)।
আল্লামা আলুসী এ আয়াতের ব্যাখ্যায় বলেছেন, ধন-সম্পদ হচ্ছে প্রাণ বাঁচানোর উপায়। আর সন্তান হচ্ছে বংশ তথা মানব প্রজাতি রক্ষার মাধ্যম।
জনৈক রুশ লেখক তার Biological Tragedy of Woman গ্রন্থে বলেছেন, নারী জন্মের উদ্দেশ্যই হচ্ছে মানববংশ রক্ষা করা। যৌন প্রেরণার অন্তর্নিহিত লক্ষ্য মানববংশ বৃদ্ধির সঙ্গে দেহের প্রতিটি অঙ্গ স্ব স্ব দায়িত্ব পালনে তৎপর। নারী দেহের বৃহত্তম অংশ গর্ভধারণ ও সন্তান জন্মানোর উদ্দেশ্যেই সৃষ্ট। মা হাওয়াসহ পৃথিবীর সমস্ত নারী সৃষ্টির উদ্দেশ্য মানব বংশ রক্ষা ও সন্তান উৎপাদনের মাধ্যমে পারিবারিক কাঠামোতে সন্তানের সুষ্ঠু লালন-পালন।
জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি :
জন্ম নিয়ন্ত্রণের পদ্ধতি দু’প্রকার :
- স্থায়ী ব্যবস্থা
- সাময়িক ব্যবস্থা
১. স্থায়ী ব্যবস্থা :
- পুরুষের অপারেশন
- নারীর অপারেশন
২. সাময়িক ব্যবস্থা :
- আযল তথা ভিতরে বীর্যপাত না করা (With drawal)
- নিরাপদ সময় মেনে চলা (Safe period) ।
- কনডম ব্যবহার।
- ইনজেকশন পুশ।
- পেশীতে বড়ী ব্যবহার।
- মুখে পিল সেবন ইত্যাদি।
আযল-এর বিধান :
প্রাচীনকালে আরব সমাজে ‘আযল’ করার যে প্রচলন ছিল। এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে কোন আলোচনা খুঁজে পাওয়া যায় না। তবে হাদীছে স্পষ্ট আলোচনা আছে। নিম্নে এ বিষয়ে আলোচনা করা হ’ল-
# জাবির (রাঃ) বলেন, كُنَّا نَعْزِلُ وَالْقُرْآنُ يَنْزِلُ ‘আমরা রাসূলের জীবদ্দশায় ‘আযল’ করতাম অথচ তখনও কুরআন নাযিল হচ্ছিল। [মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩১৮৪]
অর্থাৎ পবিত্র কুরআনে ‘আযল’ সম্পর্কে কোন নিষেধবাণী আসেনি। আর রাসূলুল্লাহ (সা)ও তা নিষেধ করেননি।
# আবু সাঈদ খুদরী (রাঃ) বলেন, আমরা রাসূলুল্লাহ (সা)-এর সঙ্গে বনী মুস্তালিকের যুদ্ধে বের হয়ে গেলাম। সেখানে কিছু সংখ্যক আরবকে (দাসী) বন্দী করে নিলাম। তখন আমাদের মধ্যে রমণীদের প্রতি আকর্ষণ জাগে। যৌন ক্ষুধাও তীব্র হয়ে উঠে এবং এ অবস্থায় ‘আযল করাকেই আমরা ভাল মনে করলাম। তখন এ সম্পর্কে নবী করীম (সা)-এর নিকটে জিজ্ঞেস করলাম। তিনি জবাবে বললেন, তোমরা যদি তা কর তাতে তোমাদের ক্ষতি কি? কেননা আল্লাহ তা‘আলা ক্বিয়ামত পর্যন্ত যত মানুষ সৃষ্টি করবেন, তা তিনি নির্দিষ্ট করে রেখেছেন এবং তা অবশ্যই সৃষ্টি করবেন। [মুত্তাফাক্ব আলাইহ, মিশকাত হা/৩১৮৬]
# রাসূলুল্লাহ (সা) বলেছেন, তুমি কি সৃষ্টি কর? তুমি কি রিযিক দাও? তাকে তার আসল স্থানেই রাখ, সঠিকভাবে তাকে থাকতে দাও। কেননা এ ব্যাপারে আল্লাহর চূড়ান্ত ফায়ছালা রয়েছে।[সিলসিলা ছহীহাহ হা/৫৭৫; ছহীহুল জামে‘ হা/৪০৩৮]
ইবনে সীরীন-এর মতে, لاعليكم ان لاتفعلوا এ বাক্যে ‘আযল’ সম্পর্কে স্পষ্ট নিষেধ না থাকলেও এ যে নিষেধের একেবারে কাছাকাছি এতে কোন সন্দেহ নেই। হাসান বছরী বলেন, আল্লাহর শপথ, রাসূলের একথায় ‘আযল’ সম্পর্কে স্পষ্ট ভৎর্সনা ও হুমকি রয়েছে। ইমাম কুরতুবী বলেছেন, সাহাবীগণ রাসূলুল্লাহ (সা)-এর উক্ত কথা থেকে নিষেধই বুঝেছিলেন। ফলে এর অর্থ দাঁড়ায় রাসূল (সা) যেন বলেছেন, لاتعزلوا وعليكم ان لاتفعلوا তোমরা ‘আযল’ কর না, তা না করাই তোমাদের কর্তব্য। রাগিব ইসফাহানীর মতে, ‘আযল’ করে শুক্র বিনষ্ট করা এবং তাকে তার আসল স্থানে নিক্ষেপ না করা সম্পর্কে স্পষ্ট নিষেধ। মুয়াত্তা গ্রন্থ প্রণেতা ইমাম মালেক (রহঃ) বলেন যে, ইবনে ওমর (রাঃ) ছিলেন তাদের অন্যতম যাঁরা ‘আযল’ পসন্দ করতেন না।
عزل অর্থ হ’ল, পুরুষাঙ্গ স্ত্রী অঙ্গের ভেতর থেকে বের করে নেয়া যেন শুক্র স্ত্রী অঙ্গের ভেতরে স্খলিত হওয়ার পরিবর্তে বাইরে স্খলিত হয়।
আইয়ামে জাহেলিয়াতে যেসব কারণে সন্তান হত্যা করা হ’ত, বর্তমান যামানায় জন্মনিয়ন্ত্রণও ঠিক একই কারণে গ্রহণ করা হচ্ছে। কিন্তু সোনালী যুগের ‘আযল’-এর উদ্দেশ্য সম্পূর্ণ ভিন্ন। সে যুগে তিনটি কারণে মুসলমানদের মধ্যে ‘আযল’-এর প্রচলন ছিল।
- দাসীর গর্ভে নিজের কোন সন্তান জন্মানো তাঁরা পসন্দ করতেন না, সামাজিক হীনতার কারণে।
- দাসীর গর্ভে কারো সন্তান জন্মালে উক্ত সন্তানের মাকে হস্তান্তর করা যাবে না, অথচ স্থায়ীভাবে দাসীকে নিজের কাছে রেখে দিতেও তারা প্রস্ত্তত ছিল না।
- দুগ্ধপায়ী শিশুর মা পুনরায় গর্ভ ধারণ করার ফলে প্রথম শিশুর স্বাস্থ্যহানীর আশংকা অথবা পুনরায় সন্তান গর্ভে ধারণ করলে মায়ের স্বাস্থ্যের বিপর্যয়ের আশংকা, কিংবা সন্তান প্রসবের কষ্ট সহ্য করার অনুপযুক্ত তা চিকিৎসকের পরামর্শে যথাযোগ্য বিবেচনায় এক্ষেত্রে ব্যবস্থা গ্রহণ করা যেতে পারে।
উপরোক্ত তিনটি কারণের মধ্যে প্রথম দু’টি কারণ আধুনিক যুগে এখন আর নেই। শেষের তিন নম্বর কারণ ব্যতিরেকে সম্পদ সাশ্রয়ের জন্য ও নিজের আমোদ-প্রমোদের জন্য জন্মনিয়ন্ত্রণ করা বৈধ নয়।
সাময়িক ব্যবস্থা :
ক. আযল প্রয়োজন অনুযায়ী জায়েজ । পড়ুন
খ. স্বামী স্ত্রীর নিজেদের মধ্যকার আলোচনার মাধ্যমে নিরাপদ সময় মেনে (Safe period) চলায় সমস্যা নেই ।
গ. কনডমের ব্যবহার আযলের মতই । তবে স্বামী স্ত্রী উভয়ের অনুমতি থাকতে হবে কারণ এটি সুখ কমিয়ে দেয় । পড়ুন
ঘ. ইনজেকশন পুশ, পেশীতে বড়ী ব্যবহার , মুখে পিল সেবন ইত্যাদি শরীররের জন্য ক্ষতিকর তাই সাধারণভাবে জায়েজ নাই । অত্যন্ত জরুরি শরীরিক কোন কারণ এবং স্বামীর অনুমতি ব্যতীত এগুলো গ্রহণ করা যাবেও না । পড়ুন
পরিশেষে বলব, জন্মনিয়ন্ত্রণ জনসংখ্যা বিস্ফোরণ সমস্যার প্রকৃত সমাধান নয়। বরং জনসংখ্যাকে দক্ষ শ্রমশক্তিতে রূপান্তর ও উৎপাদন বাড়ানো, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উপকরণাদির উন্নয়ণের মধ্যেই রয়েছে এ সমস্যার প্রকৃত সমাধান। জন্মনিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা গ্রহণের অর্থ হচ্ছে না বুঝে পরাজয় বরণ করা। একটি কাপড় কারো শরীরে ঠিকমত ফিট না হ’লে কাপড়টি বড় করার পরিবর্তে মানুষটির শরীর কেটে ছেঁটে ছোট করার মতই জন্মনিরোধ ব্যবস্থা অন্যায় ও অস্বাভাবিক। কেননা বিজ্ঞানের যুগে আমরা মানুষের যোগ্যতা অনুযায়ী তার শ্রমশক্তিকে সঠিকভাবে কাজে লাগিয়ে উৎপাদন বৃদ্ধি এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নে যথেষ্ট ভূমিকা রাখতে পারি। আল্লাহ আমাদের সহায় হৌন- আমীন!!
সূত্র : আত তাহরিক
STA-12.34
© 2013 by Ask Islam Bangla.