প্রশ্ন ২০ --> কাফের, মুশরিক, নাস্তিক, মুরতাদদের মৃত্যুর পর আমরা তাদের জন্য জানাজা ও দুআ করতে পারব কি না?
উত্তর :
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
জানাযা পড়া হবে একমাত্র মুসলমানের। কাফের, মুশরিক তথা বিধর্মীর জানাযা পড়া হারাম। শুধু ঐ মৃতের জানাযা পড়তে হবে, যিনি মুসলমান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। মুসলমান পরিবারের কোনো সদস্য যদি নাস্তিক হয়, যদি সে আল্লাহ-রাসূলকে অস্বীকার করে অথবা আল্লাহ রাববুল আলামীন, রাসূলে কারীম (সা) , কুরআন মজীদ বা শরীয়তের অকাট্য অন্য কোনো বিধিবিধান নিয়ে কটূক্তি, কটাক্ষ করে তবে সে কাফের; বরং মুসলিম-পরিবারে জন্মগ্রহণকারী বা জীবনের একটি অংশে মুসলমান থেকে পরবর্তীতে অবিশ্বাসী হওয়ায় সে নিকৃষ্টতম কাফের। শরীয়তের পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘মুরতাদ।’ এদের শাস্তি কাফেরদের চেয়েও বেশি। এ সকল অবিশ্বাসী ও মুরতাদের জানাযায় অংশ গ্রহণ করা, তাদের জানাযায় ইমামতি করা সুস্পষ্ট হারাম। এমনকি তাদের নিকটতম মুসলমান আত্মীয়দের জন্যও এদের জানাযা পড়া জায়েয নেই। এমনিভাবে যারা প্রকাশ্যে নিজেদেরকে মুসলমান বলে, কিন্তু বাস্তবে সে কাফের ও অবিশ্বাসী, এরা হল মুনাফিক। আর মুনাফিকের অবিশবাসের বিষয়টি যদি প্রকাশ পেয়ে যায় তবে তার জানাযা পড়ারও সুযোগ নেই।
কাফের, মুশরিক, অবিশ্বাসী নাস্তিক, মুরতাদ তথা অমুসলিমের জানাযার নামায হারাম হওয়ার বিষয়টি শরীয়তের সুস্পষ্ট দলিল দ্বারা প্রমাণিত। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা বলেন-
• কখনো তাদের কেউ মারা গেলে তুমি তার জানাযা পড়ো না এবং তার কবরের পাশে দাঁড়িও না (দুআ-ইস্তিগফারের জন্য বা দাফন-কাফনের জন্য)। তারা তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং না-ফরমান অবস্থায় মারা গেছে।- (সূরা তাওবা : ৮৪)
তাফসীরবিদ ইমাম কুরতুবী (র) আয়াতটির ব্যাখ্যায় বলেন-
هٰذَا نَصٌّ فِيْ الامْتِنَاعِ مِنَ الصَّلاٰةِ عَلىٰ الْكُفَّار
অর্থাৎ এটি সকল কাফেরের জানাযা নিষিদ্ধ হওয়ার সুস্পষ্ট দলিল।(আলজামি’ লিআহকামিল কুরআনিল কারীম ৮/১৪০)
এ জন্যই এ ব্যাপারে উম্মতের সকল ফকীহ একমত। কোনো মাযহাবেই এ বিষয়ে ভিন্নমত নেই।
(দ্রষ্টব্য : হানাফী ফিকহের জন্য : কিতাবুল আছল ১/৪১১; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৫৪;
মালেকী মাযহাবের জন্য : আলমুদাওয়ানাহ ১/১৬৩; মাওয়াহিবুল জলীল ৩/৭০; আলবয়ান ওয়াত তাহসীল ২/২৭৭
শাফেয়ী মাযহাবের জন্য : আলমাজমূ’ ৫/১২০, ২১৮; আলবায়ান ৩/৭৯
হাম্বলী মাযহাবের জন্য : আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৩/৪৬৬; আররওযুল মুরবি ১/৩২৯; আলফুরূ ১/৫৩৯)
মৃত ব্যক্তির লাশ তার স্বধর্মীয় লোকদের কবরস্থানে দাফন করতে হবে। ইহুদীকে ইহুদীদের গোরস্থানে, খৃষ্টানকে তাদের গোরস্থানে এবং অন্য ধর্মের লোকদেরকে তাদের নিজ নিজ গোরস্থানে সমাহিত করতে হবে। এক ধর্মের লোককে অন্য ধর্মের গোরস্তানে সমাহিত করা যাবে না। আর মুসলমানদের কবরস্তানে একমাত্র মুসলমানদেরকেই দাফন করতে হবে। কোনো অমুসলিমকে সেখানে দাফন করা যাবে না।
আর মুসলিম পরিবারে বড় হওয়া ধর্মত্যাগী নাস্তিক লোকদের বিধান আলাদা। তাদেরকে কোনো ধর্মের কবরস্থানেই জায়গা দেওয়া যাবে না। বরং আলাদা কোনো জায়গায় গর্ত করে মাটিচাপা দিবে।
অমুসলিমের জানাযা নিষিদ্ধের বিধানের মতো এ বিধানেও উম্মতের ঐকমত্য রয়েছে।
ফকীহ ইবনে নুজাইম মিসরী বলেন-" যদি কোনো ব্যক্তি মুরতাদ অবস্থায় মারা যায় বা নিহত হয় তবে তাকে মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না এবং ইসলাম ত্যাগ করে যে ধর্ম সে গ্রহণ করেছিল ঐ ধর্মের কবরস্থানেও না; বরং ... কোনো গর্তে নিক্ষেপ করে মাটিচাপা দেওয়া হবে।" -আশআশবাহ ওয়ান নাযাইর ২/১৯৫
আদ্দুররুল মুখতার ও তার ভাষ্য ফতোয়ায়ে শামীসহ প্রায় সকল ফিকহের কিতাবে এ মাসআলা রয়েছে।
মালেকী মাযহাবের বিখ্যাত ফকীহ ও মুফাসসির কাজী আবু বকর ইবনুল আরাবী একই কথা বলেছেন। (দ্রষ্টব্য : আহকামুল কুরআন, আবু বকর ইবনুল আরাবী ২/৮০২
শাফেয়ী মাযহাবের ফকীহ ও প্রখ্যাত হাদীসভাষ্যকার ইমাম নববী বলেন- "
অর্থাৎ এ ব্যাপারে ফকীহগণ একমত যে, কোনো মুসলমানকে কাফেরদের গোরস্থানে এবং কোনো কাফেরকে মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না।" -শরহুল মুহাযযাব ৫/২৪৮
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ. মুসলমানদের কবরস্থানে অমুসলিম, অবিশ্বাসী ও মুরতাদকে সমাহিত না করার তাৎপর্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন- فيتأذؤا بعذابها অর্থাৎ মুসলমান মাইয়্যেতগণের আত্মাসমূহ যেন কাফের, মুরতাদদের শাস্তির কারণে কষ্ট অনুভব না করে।-আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৩/৫১৩
কুয়েত থেকে প্রকাশিত ফিকহী বিশ্বকোষ ‘আলমাওসূআতুল ফিকহিয়্যা’য় (খন্ড : ২১, পৃষ্ঠা : ১৯) কাফের ও মুরতাদের দাফন সংক্রান্ত মাসআলাটির ক্ষেত্রে সকল ফকীহর ঐকমত্য সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
যে ব্যক্তি ঈমান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে একমাত্র তার জন্যই দুআ করা যাবে। এছাড়া অন্য কোনো ধর্মের লোক বা অবিশ্বাসী-মুরতাদদের জন্য কোনোক্রমেই দুআ করা যাবে না, অন্য কাউকে দুআ করতে অনুরোধও করা যাবে না। এটা সুস্পষ্ট হারাম। আল্লাহ রাববুল আলামীন কুরআন মজীদের বিভিন্ন আয়াতে তার নবীদেরকে কাফের-মুশরিকদের জন্য দুআ-ইস্তিগফার করতে সুস্পষ্ট ভাষায় নিষেধ করেছেন। এমনকি যদি ঐ মৃত কাফের নবীর পিতা বা পুত্রও হয়। (দ্রষ্টব্য : সূরা তাওবা (বারাআহ) (৯): ৮০, ১১৩, ও ১১৪; সূরা হুদ (১১) : ৪৫, ৪৬, ৪৭ )
মুসলিম উম্মাহর কোনো ফকীহ বা আলেমের এ বিষয়ে ভিন্ন মত নেই। (আলমাজমূ ৫/১২০)
• তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর আর না কর। যদি তুমি তাদের জন্য সত্তর বারও ক্ষমাপ্রার্থনা কর, তথাপি কখনোই তাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। তা এজন্য যে, তারা আল্লাহকে এবং তাঁর রসূলকে অস্বীকার করেছে। বস্তুতঃ আল্লাহ না-ফারমানদেরকে পথ দেখান না। ( সূরা তাওবা : 80)
• নবী ও মুমিনের উচিত নয় মুশরেকদের মাগফেরাত কামনা করে, যদিও তারা আত্নীয় হোক একথা সুস্পষ্ট হওয়ার পর যে তারা দোযখী। (113) আর ইব্রাহীম কর্তৃক স্বীয় পিতার মাগফেরাত কামনা ছিল কেবল সেই প্রতিশ্রুতির কারণে, যা তিনি তার সাথে করেছিলেন। অতঃপর যখন তাঁর কাছে একথা প্রকাশ পেল যে, সে আল্লাহর শত্রু তখন তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে নিলেন। নিঃসন্দেহে ইব্রাহীম ছিলেন বড় কোমল হৃদয়, সহনশীল। (114) [ সূরা তাওবা ]
• আর নূহ তাঁর পালনকর্তাকে ডেকে বললেন-হে পরওয়ারদেগার, আমার পুত্র তো আমার পরিজনদের অন্তর্ভুক্ত; আর আপনার ওয়াদাও নিঃসন্দেহে সত্য আর আপনিই সর্বাপেক্ষা বিজ্ঞ ফয়সালাকারী। (45) আল্লাহ বলেন, হে নূহ! নিশ্চয় সে আপনার পরিবারভুক্ত নয়। নিশ্চই সে দুরাচার! সুতরাং আমার কাছে এমন দরখাস্ত করবেন না, যার খবর আপনি জানেন না। আমি আপনাকে উপপদেশ দিচ্ছি যে, আপনি অজ্ঞদের দলভুক্ত হবেন না। (46) { নূহ (আঃ) } বলেন-হে আমার পালনকর্তা আমার যা জানা নেই এমন কোন দরখাস্ত করা হতে আমি আপনার কাছেই আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আপনি যদি আমাকে ক্ষমা না করেন, দয়া না করেন, তাহলে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হব। (47) [ সূরা হুদ ]
সুতরাং কোনোক্রমেই কাফের, মুশরিক বা বে-দ্বীন মুরতাদের জন্য দুআ করা বা দুআর জন্য অনুরোধ করা যাবে না। এমন দুআ কবুলের কোনো সম্ভাবনা তো নেই-ই; বরং দুআকারী এবং তাকে অনুরোধকারী উল্টো হারাম কাজ করার গুনাহয় লিপ্ত হবে। কেউ যদি না জেনে বা না বুঝে এমনটি করে ফেলে তবে অবিলম্বে আল্লাহর দরবারে তওবা-ইস্তিগফার করে নিবে।
মোটকথা, মুসলমানদের জন্য কোনো বিধর্মী বা অবিশ্বাসী নাস্তিক, মুরতাদের জানাযা পড়া, তাদেরকে মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করা এবং তাদের জন্য দুআ করা বা দুআ করতে বলা সম্পূর্ণ হারাম।
মহান আল্লাহ সকলকে সঠিক কথা বলার ও সঠিক পথে চলার তাওফীক দান করুন। আমীন।
সূত্র: আল কাউসার
STA-11.33
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
জানাযা পড়া হবে একমাত্র মুসলমানের। কাফের, মুশরিক তথা বিধর্মীর জানাযা পড়া হারাম। শুধু ঐ মৃতের জানাযা পড়তে হবে, যিনি মুসলমান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছেন। মুসলমান পরিবারের কোনো সদস্য যদি নাস্তিক হয়, যদি সে আল্লাহ-রাসূলকে অস্বীকার করে অথবা আল্লাহ রাববুল আলামীন, রাসূলে কারীম (সা) , কুরআন মজীদ বা শরীয়তের অকাট্য অন্য কোনো বিধিবিধান নিয়ে কটূক্তি, কটাক্ষ করে তবে সে কাফের; বরং মুসলিম-পরিবারে জন্মগ্রহণকারী বা জীবনের একটি অংশে মুসলমান থেকে পরবর্তীতে অবিশ্বাসী হওয়ায় সে নিকৃষ্টতম কাফের। শরীয়তের পরিভাষায় যাকে বলা হয় ‘মুরতাদ।’ এদের শাস্তি কাফেরদের চেয়েও বেশি। এ সকল অবিশ্বাসী ও মুরতাদের জানাযায় অংশ গ্রহণ করা, তাদের জানাযায় ইমামতি করা সুস্পষ্ট হারাম। এমনকি তাদের নিকটতম মুসলমান আত্মীয়দের জন্যও এদের জানাযা পড়া জায়েয নেই। এমনিভাবে যারা প্রকাশ্যে নিজেদেরকে মুসলমান বলে, কিন্তু বাস্তবে সে কাফের ও অবিশ্বাসী, এরা হল মুনাফিক। আর মুনাফিকের অবিশবাসের বিষয়টি যদি প্রকাশ পেয়ে যায় তবে তার জানাযা পড়ারও সুযোগ নেই।
কাফের, মুশরিক, অবিশ্বাসী নাস্তিক, মুরতাদ তথা অমুসলিমের জানাযার নামায হারাম হওয়ার বিষয়টি শরীয়তের সুস্পষ্ট দলিল দ্বারা প্রমাণিত। কুরআন মজীদে আল্লাহ তাআলা বলেন-
• কখনো তাদের কেউ মারা গেলে তুমি তার জানাযা পড়ো না এবং তার কবরের পাশে দাঁড়িও না (দুআ-ইস্তিগফারের জন্য বা দাফন-কাফনের জন্য)। তারা তো আল্লাহ ও তাঁর রাসূলকে প্রত্যাখ্যান করেছে এবং না-ফরমান অবস্থায় মারা গেছে।- (সূরা তাওবা : ৮৪)
তাফসীরবিদ ইমাম কুরতুবী (র) আয়াতটির ব্যাখ্যায় বলেন-
هٰذَا نَصٌّ فِيْ الامْتِنَاعِ مِنَ الصَّلاٰةِ عَلىٰ الْكُفَّار
অর্থাৎ এটি সকল কাফেরের জানাযা নিষিদ্ধ হওয়ার সুস্পষ্ট দলিল।(আলজামি’ লিআহকামিল কুরআনিল কারীম ৮/১৪০)
এ জন্যই এ ব্যাপারে উম্মতের সকল ফকীহ একমত। কোনো মাযহাবেই এ বিষয়ে ভিন্নমত নেই।
(দ্রষ্টব্য : হানাফী ফিকহের জন্য : কিতাবুল আছল ১/৪১১; আলমাবসূত, সারাখসী ২/৫৪;
মালেকী মাযহাবের জন্য : আলমুদাওয়ানাহ ১/১৬৩; মাওয়াহিবুল জলীল ৩/৭০; আলবয়ান ওয়াত তাহসীল ২/২৭৭
শাফেয়ী মাযহাবের জন্য : আলমাজমূ’ ৫/১২০, ২১৮; আলবায়ান ৩/৭৯
হাম্বলী মাযহাবের জন্য : আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৩/৪৬৬; আররওযুল মুরবি ১/৩২৯; আলফুরূ ১/৫৩৯)
মৃত ব্যক্তির লাশ তার স্বধর্মীয় লোকদের কবরস্থানে দাফন করতে হবে। ইহুদীকে ইহুদীদের গোরস্থানে, খৃষ্টানকে তাদের গোরস্থানে এবং অন্য ধর্মের লোকদেরকে তাদের নিজ নিজ গোরস্থানে সমাহিত করতে হবে। এক ধর্মের লোককে অন্য ধর্মের গোরস্তানে সমাহিত করা যাবে না। আর মুসলমানদের কবরস্তানে একমাত্র মুসলমানদেরকেই দাফন করতে হবে। কোনো অমুসলিমকে সেখানে দাফন করা যাবে না।
আর মুসলিম পরিবারে বড় হওয়া ধর্মত্যাগী নাস্তিক লোকদের বিধান আলাদা। তাদেরকে কোনো ধর্মের কবরস্থানেই জায়গা দেওয়া যাবে না। বরং আলাদা কোনো জায়গায় গর্ত করে মাটিচাপা দিবে।
অমুসলিমের জানাযা নিষিদ্ধের বিধানের মতো এ বিধানেও উম্মতের ঐকমত্য রয়েছে।
ফকীহ ইবনে নুজাইম মিসরী বলেন-" যদি কোনো ব্যক্তি মুরতাদ অবস্থায় মারা যায় বা নিহত হয় তবে তাকে মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না এবং ইসলাম ত্যাগ করে যে ধর্ম সে গ্রহণ করেছিল ঐ ধর্মের কবরস্থানেও না; বরং ... কোনো গর্তে নিক্ষেপ করে মাটিচাপা দেওয়া হবে।" -আশআশবাহ ওয়ান নাযাইর ২/১৯৫
আদ্দুররুল মুখতার ও তার ভাষ্য ফতোয়ায়ে শামীসহ প্রায় সকল ফিকহের কিতাবে এ মাসআলা রয়েছে।
মালেকী মাযহাবের বিখ্যাত ফকীহ ও মুফাসসির কাজী আবু বকর ইবনুল আরাবী একই কথা বলেছেন। (দ্রষ্টব্য : আহকামুল কুরআন, আবু বকর ইবনুল আরাবী ২/৮০২
শাফেয়ী মাযহাবের ফকীহ ও প্রখ্যাত হাদীসভাষ্যকার ইমাম নববী বলেন- "
অর্থাৎ এ ব্যাপারে ফকীহগণ একমত যে, কোনো মুসলমানকে কাফেরদের গোরস্থানে এবং কোনো কাফেরকে মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করা যাবে না।" -শরহুল মুহাযযাব ৫/২৪৮
ইমাম আহমদ ইবনে হাম্বল রাহ. মুসলমানদের কবরস্থানে অমুসলিম, অবিশ্বাসী ও মুরতাদকে সমাহিত না করার তাৎপর্য বর্ণনা করতে গিয়ে বলেছেন- فيتأذؤا بعذابها অর্থাৎ মুসলমান মাইয়্যেতগণের আত্মাসমূহ যেন কাফের, মুরতাদদের শাস্তির কারণে কষ্ট অনুভব না করে।-আলমুগনী, ইবনে কুদামা ৩/৫১৩
কুয়েত থেকে প্রকাশিত ফিকহী বিশ্বকোষ ‘আলমাওসূআতুল ফিকহিয়্যা’য় (খন্ড : ২১, পৃষ্ঠা : ১৯) কাফের ও মুরতাদের দাফন সংক্রান্ত মাসআলাটির ক্ষেত্রে সকল ফকীহর ঐকমত্য সুস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে।
যে ব্যক্তি ঈমান অবস্থায় মৃত্যুবরণ করেছে একমাত্র তার জন্যই দুআ করা যাবে। এছাড়া অন্য কোনো ধর্মের লোক বা অবিশ্বাসী-মুরতাদদের জন্য কোনোক্রমেই দুআ করা যাবে না, অন্য কাউকে দুআ করতে অনুরোধও করা যাবে না। এটা সুস্পষ্ট হারাম। আল্লাহ রাববুল আলামীন কুরআন মজীদের বিভিন্ন আয়াতে তার নবীদেরকে কাফের-মুশরিকদের জন্য দুআ-ইস্তিগফার করতে সুস্পষ্ট ভাষায় নিষেধ করেছেন। এমনকি যদি ঐ মৃত কাফের নবীর পিতা বা পুত্রও হয়। (দ্রষ্টব্য : সূরা তাওবা (বারাআহ) (৯): ৮০, ১১৩, ও ১১৪; সূরা হুদ (১১) : ৪৫, ৪৬, ৪৭ )
মুসলিম উম্মাহর কোনো ফকীহ বা আলেমের এ বিষয়ে ভিন্ন মত নেই। (আলমাজমূ ৫/১২০)
• তুমি তাদের জন্য ক্ষমা প্রার্থনা কর আর না কর। যদি তুমি তাদের জন্য সত্তর বারও ক্ষমাপ্রার্থনা কর, তথাপি কখনোই তাদেরকে আল্লাহ ক্ষমা করবেন না। তা এজন্য যে, তারা আল্লাহকে এবং তাঁর রসূলকে অস্বীকার করেছে। বস্তুতঃ আল্লাহ না-ফারমানদেরকে পথ দেখান না। ( সূরা তাওবা : 80)
• নবী ও মুমিনের উচিত নয় মুশরেকদের মাগফেরাত কামনা করে, যদিও তারা আত্নীয় হোক একথা সুস্পষ্ট হওয়ার পর যে তারা দোযখী। (113) আর ইব্রাহীম কর্তৃক স্বীয় পিতার মাগফেরাত কামনা ছিল কেবল সেই প্রতিশ্রুতির কারণে, যা তিনি তার সাথে করেছিলেন। অতঃপর যখন তাঁর কাছে একথা প্রকাশ পেল যে, সে আল্লাহর শত্রু তখন তার সাথে সম্পর্ক ছিন্ন করে নিলেন। নিঃসন্দেহে ইব্রাহীম ছিলেন বড় কোমল হৃদয়, সহনশীল। (114) [ সূরা তাওবা ]
• আর নূহ তাঁর পালনকর্তাকে ডেকে বললেন-হে পরওয়ারদেগার, আমার পুত্র তো আমার পরিজনদের অন্তর্ভুক্ত; আর আপনার ওয়াদাও নিঃসন্দেহে সত্য আর আপনিই সর্বাপেক্ষা বিজ্ঞ ফয়সালাকারী। (45) আল্লাহ বলেন, হে নূহ! নিশ্চয় সে আপনার পরিবারভুক্ত নয়। নিশ্চই সে দুরাচার! সুতরাং আমার কাছে এমন দরখাস্ত করবেন না, যার খবর আপনি জানেন না। আমি আপনাকে উপপদেশ দিচ্ছি যে, আপনি অজ্ঞদের দলভুক্ত হবেন না। (46) { নূহ (আঃ) } বলেন-হে আমার পালনকর্তা আমার যা জানা নেই এমন কোন দরখাস্ত করা হতে আমি আপনার কাছেই আশ্রয় প্রার্থনা করছি। আপনি যদি আমাকে ক্ষমা না করেন, দয়া না করেন, তাহলে আমি ক্ষতিগ্রস্ত হব। (47) [ সূরা হুদ ]
সুতরাং কোনোক্রমেই কাফের, মুশরিক বা বে-দ্বীন মুরতাদের জন্য দুআ করা বা দুআর জন্য অনুরোধ করা যাবে না। এমন দুআ কবুলের কোনো সম্ভাবনা তো নেই-ই; বরং দুআকারী এবং তাকে অনুরোধকারী উল্টো হারাম কাজ করার গুনাহয় লিপ্ত হবে। কেউ যদি না জেনে বা না বুঝে এমনটি করে ফেলে তবে অবিলম্বে আল্লাহর দরবারে তওবা-ইস্তিগফার করে নিবে।
মোটকথা, মুসলমানদের জন্য কোনো বিধর্মী বা অবিশ্বাসী নাস্তিক, মুরতাদের জানাযা পড়া, তাদেরকে মুসলমানদের কবরস্থানে দাফন করা এবং তাদের জন্য দুআ করা বা দুআ করতে বলা সম্পূর্ণ হারাম।
মহান আল্লাহ সকলকে সঠিক কথা বলার ও সঠিক পথে চলার তাওফীক দান করুন। আমীন।
সূত্র: আল কাউসার
STA-11.33
© 2013 by Ask Islam Bangla.