প্রশ্ন ১৯ --> আদর্শ হাক্কানি আলেম এর বৈশিষ্ট্য কি ? কার কথা শুনব ?
মূল প্রশ্ন :
ইসলাম শেখার জন্য সকলেই একজন হাক্কানি আলেম এর সাহায্য নেয়ার পরামর্শ দেন । কিন্তু আমাদের দেশের আলেম সমাজ ই আজ বহুবিভক্ত । দেওবন্দি, বেরেল্ভি, তাবলীগ , মউদুদি , আহলে হাদিস সব ফিরকা এর আলেম ই আপনি পাবেন আর সবাই নিজ নিজ যুক্তিতে অটল । কার কথা শুনব ? আদর্শ হাক্কানি আলেম এর বৈশিষ্ট্য কি ?
উত্তর :
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
যেসব আলেম মুসলিম উম্মাহ, ইসলাম ও ইলম বিষয়ে [মানুষকে] হিতোপদেশ দিয়ে প্রসিদ্ধি অর্জন করেছেন, আমরা আলেম বলতে তাঁদেরকেই বুঝি। ঐসব আলেমের ব্যাপারে আমাদের ভূমিকা দুইভাবে হতে পারে : -
১. [আমাদেরকে জানতে হবে] ঐ সকল আলেম আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূল (সা) -এর সুন্নত মোতাবেক কোন বিষয় হওয়া সত্ত্বেও কেন তদ্বিষয়ে মতানৈক্য করেছেন? মতানৈক্যের কারণগুলো আসলে অনেক- যা শরী‘আতের জ্ঞানপিপাসুর নিকট স্পষ্ট, যদিও তিনি গভীর জ্ঞানের অধিকারী না হন।
২. [এরপর দেখতে হবে] তাঁদের অনুসরণের ব্যাপারে আমাদের করণীয় কি হবে? তাঁদের মধ্যে আমরা কার অনুসরণ করব? মানুষ কি কোন ইমামের এমন অনুসরণ করবে যে, তাঁর কথার বাইরে যাবে না- যদিও হক্ক অন্যের সাথে থাকে- যেমনটি মাযহাবসমূহের অন্ধভক্তদের স্বভাব, নাকি তার কাছে অগ্রাধিকার প্রাপ্ত দলীলের অনুসরণ করবে - যদিও তা তার অনুসারী ইমামের বিরোধী হয়? এই দ্বিতীয়টাই সঠিক জবাব। সেজন্য যিনি দলীল জানতে পারবেন তার উপর সেই দলীলের অনুসরণ করা আবশ্যক- যদিও তা ইমামের বিরোধী হয়। তবে তা যেন ইজমার বিরোধী না হয়ে যায়। আর যে ব্যক্তি বিশ্বাস করবে, রাসূল (সা) ব্যতীত অন্য কারো কথা সর্বাবস্থায় এবং সব সময় অবশ্য পালনীয়, সে অন্য কারো জন্য রিসালাতের বৈশিষ্ট্য প্রমাণ করল। কেননা রাসূল (সা) ব্যতীত অন্য কারো কথার বিধান এমনটা হতে পারে না এবং অন্য কারো কথা সর্বদা শিরোধার্য হতে পারে না।
তবে এ বিষয়ে আরো একটু চিন্তাভাবনার বিষয় রয়েছে। কেননা কুরআন ও সহীহ হাদীছের দলীল থেকে কে হুকুম -আহকাম বের করেবন তদ্বিষয়ে আমরা এখনও গোলকধাঁধায়? এটা মুশিকলও বটে। কেননা প্রত্যেকেই বলছেন, আমি এই ক্ষমতার অধিকারী। এটা আসলে ভাল কথা নয়। যদিও কুরআন ও সুন্নাহ একজন মানুষের গাইড হবে - সেদিক বিবেচনায় সেটা ভাল কথা। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, অর্থ জানুক বা না জানুক কোন রকম দলীল উচ্চারণ করতে পারে এমন প্রত্যেকের জন্য আমরা দরজা খুলে দিব আর বলব, তুমি মুজতাহিদ [শরী‘আত গবেষক], যা ইচ্ছা তুমি তাই বলতে পার। এমনটা হলে ইসলামী শরীআত, মানব ও মানব সমাজে পচন ধরবে। এক্ষেত্রে মানুষ তিন ধরনেরঃ-
প্রথম প্রকার ব্যক্তি - শর‘ঈ বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে এবং মত পেশ করতে পারেন; বরং কারো বিরোধী হলেও তাঁর উপর দলীল অনুযায়ী বক্তব্য পেশ করা ওয়াজিব। কেননা তিনি তদ্বিষয়ে আদিষ্ট। মহান আল্লাহ বলেন,
• ‘…তবে তাদের মধ্যে তত্ত্বানুসন্ধিৎসুগণ ওটা উপলব্ধি করত’। ( সূরা নিসা : ৮৩ )
এই শ্রেণীর আলেমগণই কুরআন-সুন্নাহ থেকে হুকুম -আহকাম উদঘাটনের অধিকারী- যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল(সা)এর বক্তব্য বুঝেন।
দ্বিতীয় শ্রেণীর ব্যক্তি - যাকে আল্লাহ জ্ঞান দিয়েছেন কিন্তু তিনি প্রথম শ্রেণী পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি, তার জন্য কোন দোষ নেই- যদি তিনি সাধারণ বিষয়গুলো এবং তাঁর কাছে যে জ্ঞানটুকু পৌঁছেছে তার অনুসরণ করেন। তবে তাঁকে খুব সতর্ক থাকতে হবে এবং তাঁর চেয়ে বড় আলেমকে জিজ্ঞেস করার ক্ষেত্রে মোটেও শিথিলতা প্রদর্শন করা যাবে না। কেননা তিনি ভুল করতে
পারেন এবং তার জ্ঞান সে বিষয় পর্যন্ত নাও পৌঁছতে পারে– যা
কোন ‘আম’ عم -কে ‘খাছ’ خص করে দিয়েছে অথবা ‘মুতলাক্ক’ مطلق ( এমন শব্দ- যা একাধিক বস্তুকে শামিল করে, তবে একই সঙ্গে নয়। বরং এটার পরিবর্তে ওটা এই সূত্রে। যেমনঃ যদি বলা হয়, একজন পুরুষ, তাহলে তা সব পুরুষকে শামিল করবে। তবে একই সঙ্গে নয়; বরং একজন একজন করে। ) -কে ‘মুক্কাইয়াদ’ مقيد ( এর পরিসর মুতলাক্কের তুলনায় সংকুচিত ) করে দিয়েছে। অথবা মানসূখ হওয়া কোন বিষয়কে তিনি না জেনে মুহকাম মনে করেছেন।
আর তৃতীয় শ্রেণীর ব্যক্তি– যার কোন ইলম নেই–তার জন্য আলেমগণকে জিজ্ঞেস করা আবশ্যক। আল্লাহ বলেন,
• ‘অতএব তোমরা যদি না জান তবে যারা স্মরণ রাখে তাদেরকে জিজ্ঞেস কর। ’। ( সূরা আম্বিয়া ৭)
অন্য আয়াতে এসেছে,
• ‘অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে’। (সূরা আন নাহল ৪৩)
সুতরাং এই শ্রেণীর ব্যক্তির দায়িত্ব ও কর্তব্য হল, জিজ্ঞেস করা। কিন্তু সে কাকে জিজ্ঞেস করবে? দেশে অনেক আলেম আছেন এবং সবাই বলেছেন যে, তিনি আলেম অথবা সবার সম্পর্কে বলা হচ্ছে যে, তিনি আলেম! তাহলে কাকে জিজ্ঞেস করবে ? আমরা কি বলব যে, যিনি সঠিকতার অধিকতর কাছাকাছি আপনাকে তাঁকে খুজে বের করতে হবে এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করে তাঁর কথা মেনে চলতে হবে? নাকি বলব, যে কাউকে ইচ্ছা আপনি জিজ্ঞেস করতে পারেন। কেননা নির্দিষ্ট কোন মাসআলায় কোন কোন সময় জ্ঞানে তুলনামূলক নিম্নস্তরের আলেম তার চেয়ে উপরের স্তরের আলেমের চেয়ে বেশী তওফীকপ্রাপ্ত হতেই পারেন?
আলেম সমাজ এ বিষেয় বিভিন্ন মত দিয়েছনঃ
কারো মতে, সাধারণ ব্যক্তির উপর তার এলাকার সবেচেয় বিশ্বস্ত আলেমকে জিজ্ঞেস করা আবশ্যক। কেননা মানুষের শারীরিক অসুস্থতার কারণে যেমন সে সবচেয়ে ভাল ডাক্তার খুঁজে, তেমনি এ ক্ষেত্রেও তাই করবে। কারণ জ্ঞান হল মনের ওষুধ। আপনি আপনার অসুখের জন্য যেমন ভাল ডাক্তার নির্ণয় করেন, এক্ষেত্রেও ভাল আলেম নির্ণয় করতে হবে। দুটোর মধ্যে কোনই পার্থক্য নেই।
আবার কেউ কেউ বলেন, তার জন্য এটা আবশ্যক নয়। কেননা ভাল আলেম নির্দষ্টভাবে প্রত্যেকটি মাসআলায় তুলনামূলক নীচের স্তরের আলেমের চেয়ে জ্ঞানী নাও হতে পারেন। সেজন্য দেখা যায়, সাহাবীগণ (রা) -এর যুগে মানুষ বেশী জ্ঞানী সাহাবী থাকা সত্ত্বেও তুলনামূলক কম জ্ঞানের সাহাবীকে [অনেক সময়] জিজ্ঞেস করতেন।
এ বিষয়ে অভিমত হল, আপনি দ্বীনদারিতায় ও জ্ঞানে তুলনামূলক উত্তম ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করবেন। তবে এটা ওয়াজিব নয়। কেননা তুলনামূলক বেশী জ্ঞানী ব্যক্তি নির্দিষ্ট ঐ মাসআলায় ভুল করতে পারেন এবং তুলনামূলক কম জ্ঞানী ব্যক্তিও সঠিক ফাতাওয়া দিতে পারেন। সুতরাং অগ্রগণ্যতার দিক থেকে জ্ঞান , আল্লাহভীতি ও দ্বীনদারিতায় অধিকতর সঠিকতার নিকটবর্তী ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করবেন ।
তবে সব আলেমই মানুষ তাই তাদের কোন না কোন ছোটখাট ভুল হতে পারে । কারণ কোন মানুষই ভুলের উর্ধ্বে নয় । আপনি কোন বিষয়ে একজন আলেমকে অনুসরণ না করে কয়েকজনের কাছ হতে মতামত দলিল সহ গ্রহণ করবেন ও যিনি কুরআন- হাদিসের অধিক নিকটবর্তী বলে আপনি বুঝতে পারবেন তারটা গ্রহণ করবেন । কোন ক্ষেত্রে পাবেন সালাফি আলেমকে অধিক সঠিক , কখনো হানাফী আলেমকে অধিক সঠিক পাবেন আবার কোন ক্ষেত্রে আরেকজনকে অধিক সঠিক পাবেন ।
আশা করি বুঝতে পেরেছেন ।
বিস্তারিত জানতে এই বইটি ডাউনলোড করে পড়ুন
STA-10.32
ইসলাম শেখার জন্য সকলেই একজন হাক্কানি আলেম এর সাহায্য নেয়ার পরামর্শ দেন । কিন্তু আমাদের দেশের আলেম সমাজ ই আজ বহুবিভক্ত । দেওবন্দি, বেরেল্ভি, তাবলীগ , মউদুদি , আহলে হাদিস সব ফিরকা এর আলেম ই আপনি পাবেন আর সবাই নিজ নিজ যুক্তিতে অটল । কার কথা শুনব ? আদর্শ হাক্কানি আলেম এর বৈশিষ্ট্য কি ?
উত্তর :
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
যেসব আলেম মুসলিম উম্মাহ, ইসলাম ও ইলম বিষয়ে [মানুষকে] হিতোপদেশ দিয়ে প্রসিদ্ধি অর্জন করেছেন, আমরা আলেম বলতে তাঁদেরকেই বুঝি। ঐসব আলেমের ব্যাপারে আমাদের ভূমিকা দুইভাবে হতে পারে : -
১. [আমাদেরকে জানতে হবে] ঐ সকল আলেম আল্লাহর কিতাব ও তাঁর রাসূল (সা) -এর সুন্নত মোতাবেক কোন বিষয় হওয়া সত্ত্বেও কেন তদ্বিষয়ে মতানৈক্য করেছেন? মতানৈক্যের কারণগুলো আসলে অনেক- যা শরী‘আতের জ্ঞানপিপাসুর নিকট স্পষ্ট, যদিও তিনি গভীর জ্ঞানের অধিকারী না হন।
২. [এরপর দেখতে হবে] তাঁদের অনুসরণের ব্যাপারে আমাদের করণীয় কি হবে? তাঁদের মধ্যে আমরা কার অনুসরণ করব? মানুষ কি কোন ইমামের এমন অনুসরণ করবে যে, তাঁর কথার বাইরে যাবে না- যদিও হক্ক অন্যের সাথে থাকে- যেমনটি মাযহাবসমূহের অন্ধভক্তদের স্বভাব, নাকি তার কাছে অগ্রাধিকার প্রাপ্ত দলীলের অনুসরণ করবে - যদিও তা তার অনুসারী ইমামের বিরোধী হয়? এই দ্বিতীয়টাই সঠিক জবাব। সেজন্য যিনি দলীল জানতে পারবেন তার উপর সেই দলীলের অনুসরণ করা আবশ্যক- যদিও তা ইমামের বিরোধী হয়। তবে তা যেন ইজমার বিরোধী না হয়ে যায়। আর যে ব্যক্তি বিশ্বাস করবে, রাসূল (সা) ব্যতীত অন্য কারো কথা সর্বাবস্থায় এবং সব সময় অবশ্য পালনীয়, সে অন্য কারো জন্য রিসালাতের বৈশিষ্ট্য প্রমাণ করল। কেননা রাসূল (সা) ব্যতীত অন্য কারো কথার বিধান এমনটা হতে পারে না এবং অন্য কারো কথা সর্বদা শিরোধার্য হতে পারে না।
তবে এ বিষয়ে আরো একটু চিন্তাভাবনার বিষয় রয়েছে। কেননা কুরআন ও সহীহ হাদীছের দলীল থেকে কে হুকুম -আহকাম বের করেবন তদ্বিষয়ে আমরা এখনও গোলকধাঁধায়? এটা মুশিকলও বটে। কেননা প্রত্যেকেই বলছেন, আমি এই ক্ষমতার অধিকারী। এটা আসলে ভাল কথা নয়। যদিও কুরআন ও সুন্নাহ একজন মানুষের গাইড হবে - সেদিক বিবেচনায় সেটা ভাল কথা। কিন্তু এর মানে এই নয় যে, অর্থ জানুক বা না জানুক কোন রকম দলীল উচ্চারণ করতে পারে এমন প্রত্যেকের জন্য আমরা দরজা খুলে দিব আর বলব, তুমি মুজতাহিদ [শরী‘আত গবেষক], যা ইচ্ছা তুমি তাই বলতে পার। এমনটা হলে ইসলামী শরীআত, মানব ও মানব সমাজে পচন ধরবে। এক্ষেত্রে মানুষ তিন ধরনেরঃ-
- প্রকৃত আলেম– যাঁকে আল্লাহ ইলম ও উপলব্ধি দুটোই দান করেছেন।
- [দ্বীনের] জ্ঞানপিপাসু- যার ইলম রয়েছে। কিন্তু [প্রথম শ্রেণীর] ঐ গভীর জ্ঞানের অধিকারী ব্যক্তি পর্যন্ত তিনি পৌঁছতে পারনেনি। ( যেমন এই পেজের এডমিনরা )
- সাধারণ মানুষ- যে কিছুই জানে না।
প্রথম প্রকার ব্যক্তি - শর‘ঈ বিষয় নিয়ে গবেষণা করতে এবং মত পেশ করতে পারেন; বরং কারো বিরোধী হলেও তাঁর উপর দলীল অনুযায়ী বক্তব্য পেশ করা ওয়াজিব। কেননা তিনি তদ্বিষয়ে আদিষ্ট। মহান আল্লাহ বলেন,
• ‘…তবে তাদের মধ্যে তত্ত্বানুসন্ধিৎসুগণ ওটা উপলব্ধি করত’। ( সূরা নিসা : ৮৩ )
এই শ্রেণীর আলেমগণই কুরআন-সুন্নাহ থেকে হুকুম -আহকাম উদঘাটনের অধিকারী- যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসূল(সা)এর বক্তব্য বুঝেন।
দ্বিতীয় শ্রেণীর ব্যক্তি - যাকে আল্লাহ জ্ঞান দিয়েছেন কিন্তু তিনি প্রথম শ্রেণী পর্যন্ত পৌঁছতে পারেননি, তার জন্য কোন দোষ নেই- যদি তিনি সাধারণ বিষয়গুলো এবং তাঁর কাছে যে জ্ঞানটুকু পৌঁছেছে তার অনুসরণ করেন। তবে তাঁকে খুব সতর্ক থাকতে হবে এবং তাঁর চেয়ে বড় আলেমকে জিজ্ঞেস করার ক্ষেত্রে মোটেও শিথিলতা প্রদর্শন করা যাবে না। কেননা তিনি ভুল করতে
পারেন এবং তার জ্ঞান সে বিষয় পর্যন্ত নাও পৌঁছতে পারে– যা
কোন ‘আম’ عم -কে ‘খাছ’ خص করে দিয়েছে অথবা ‘মুতলাক্ক’ مطلق ( এমন শব্দ- যা একাধিক বস্তুকে শামিল করে, তবে একই সঙ্গে নয়। বরং এটার পরিবর্তে ওটা এই সূত্রে। যেমনঃ যদি বলা হয়, একজন পুরুষ, তাহলে তা সব পুরুষকে শামিল করবে। তবে একই সঙ্গে নয়; বরং একজন একজন করে। ) -কে ‘মুক্কাইয়াদ’ مقيد ( এর পরিসর মুতলাক্কের তুলনায় সংকুচিত ) করে দিয়েছে। অথবা মানসূখ হওয়া কোন বিষয়কে তিনি না জেনে মুহকাম মনে করেছেন।
আর তৃতীয় শ্রেণীর ব্যক্তি– যার কোন ইলম নেই–তার জন্য আলেমগণকে জিজ্ঞেস করা আবশ্যক। আল্লাহ বলেন,
• ‘অতএব তোমরা যদি না জান তবে যারা স্মরণ রাখে তাদেরকে জিজ্ঞেস কর। ’। ( সূরা আম্বিয়া ৭)
অন্য আয়াতে এসেছে,
• ‘অতএব জ্ঞানীদেরকে জিজ্ঞেস কর, যদি তোমাদের জানা না থাকে’। (সূরা আন নাহল ৪৩)
সুতরাং এই শ্রেণীর ব্যক্তির দায়িত্ব ও কর্তব্য হল, জিজ্ঞেস করা। কিন্তু সে কাকে জিজ্ঞেস করবে? দেশে অনেক আলেম আছেন এবং সবাই বলেছেন যে, তিনি আলেম অথবা সবার সম্পর্কে বলা হচ্ছে যে, তিনি আলেম! তাহলে কাকে জিজ্ঞেস করবে ? আমরা কি বলব যে, যিনি সঠিকতার অধিকতর কাছাকাছি আপনাকে তাঁকে খুজে বের করতে হবে এবং তাঁকে জিজ্ঞেস করে তাঁর কথা মেনে চলতে হবে? নাকি বলব, যে কাউকে ইচ্ছা আপনি জিজ্ঞেস করতে পারেন। কেননা নির্দিষ্ট কোন মাসআলায় কোন কোন সময় জ্ঞানে তুলনামূলক নিম্নস্তরের আলেম তার চেয়ে উপরের স্তরের আলেমের চেয়ে বেশী তওফীকপ্রাপ্ত হতেই পারেন?
আলেম সমাজ এ বিষেয় বিভিন্ন মত দিয়েছনঃ
কারো মতে, সাধারণ ব্যক্তির উপর তার এলাকার সবেচেয় বিশ্বস্ত আলেমকে জিজ্ঞেস করা আবশ্যক। কেননা মানুষের শারীরিক অসুস্থতার কারণে যেমন সে সবচেয়ে ভাল ডাক্তার খুঁজে, তেমনি এ ক্ষেত্রেও তাই করবে। কারণ জ্ঞান হল মনের ওষুধ। আপনি আপনার অসুখের জন্য যেমন ভাল ডাক্তার নির্ণয় করেন, এক্ষেত্রেও ভাল আলেম নির্ণয় করতে হবে। দুটোর মধ্যে কোনই পার্থক্য নেই।
আবার কেউ কেউ বলেন, তার জন্য এটা আবশ্যক নয়। কেননা ভাল আলেম নির্দষ্টভাবে প্রত্যেকটি মাসআলায় তুলনামূলক নীচের স্তরের আলেমের চেয়ে জ্ঞানী নাও হতে পারেন। সেজন্য দেখা যায়, সাহাবীগণ (রা) -এর যুগে মানুষ বেশী জ্ঞানী সাহাবী থাকা সত্ত্বেও তুলনামূলক কম জ্ঞানের সাহাবীকে [অনেক সময়] জিজ্ঞেস করতেন।
এ বিষয়ে অভিমত হল, আপনি দ্বীনদারিতায় ও জ্ঞানে তুলনামূলক উত্তম ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করবেন। তবে এটা ওয়াজিব নয়। কেননা তুলনামূলক বেশী জ্ঞানী ব্যক্তি নির্দিষ্ট ঐ মাসআলায় ভুল করতে পারেন এবং তুলনামূলক কম জ্ঞানী ব্যক্তিও সঠিক ফাতাওয়া দিতে পারেন। সুতরাং অগ্রগণ্যতার দিক থেকে জ্ঞান , আল্লাহভীতি ও দ্বীনদারিতায় অধিকতর সঠিকতার নিকটবর্তী ব্যক্তিকে জিজ্ঞেস করবেন ।
তবে সব আলেমই মানুষ তাই তাদের কোন না কোন ছোটখাট ভুল হতে পারে । কারণ কোন মানুষই ভুলের উর্ধ্বে নয় । আপনি কোন বিষয়ে একজন আলেমকে অনুসরণ না করে কয়েকজনের কাছ হতে মতামত দলিল সহ গ্রহণ করবেন ও যিনি কুরআন- হাদিসের অধিক নিকটবর্তী বলে আপনি বুঝতে পারবেন তারটা গ্রহণ করবেন । কোন ক্ষেত্রে পাবেন সালাফি আলেমকে অধিক সঠিক , কখনো হানাফী আলেমকে অধিক সঠিক পাবেন আবার কোন ক্ষেত্রে আরেকজনকে অধিক সঠিক পাবেন ।
আশা করি বুঝতে পেরেছেন ।
বিস্তারিত জানতে এই বইটি ডাউনলোড করে পড়ুন
STA-10.32
© 2013 by Ask Islam Bangla.