প্রশ্ন ১১ --> সুদ এবং ব্যাংক
উত্তর :
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
সুদ প্রথা দিয়ে টাকা উপার্জন করা, ইসলামী সমাজে একটি অমার্জনীয় অপরাধ । ইসলামের দৃষ্টিতে উহা একটি মারাত্মক ও ধ্বংসাত্বক শোষণের কৌশল । আরবীতে একে বলা হয় রিবা, ইংরেজীতে Interest ।
পবিত্র কোরআন এর দলিলঃ
• হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় কর। যাতে তোমরা সাফল্য লাভ করতে পার। (সুরা আলে ইমরান-১৩০)
• যারা সুদ খায় তারা ( কেয়ামতের দিন ) সে ব্যক্তির মত দাঁড়াবে, যাকে শয়তান আপন স্পর্শ দিয়ে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্হার কারণ, তারা বলে বেড়াতোঃ ব্যবসা তো সুদের মতই। অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল আর সুদকে হারাম করেছেন।(সূরা আল বাকারা- ২৭৫)
• আল্লাহ তা’আলা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ পছন্দ করেন না কোন অবিশ্বাসী পাপীকে। ( সূরা আল বাকারা - ২৭৬)
• হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সমস্ত বকেয়া আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক। ( সূরা আল বাকারা ২৭৮)
পবিত্র হাদিস এর দলিলঃ
# মেরাজ রাতে আমাকে উর্ধ্বলোকে বিচরণ করানোর সময় আমি আমার মাথার উপরে সপ্তম আকাশে বজ্রে প্রচন্ড গর্জনের শব্দ শুনতে পেলাম। চোখ মেলে এমন কিছু লোক দেখতে পেলাম, যাদের পেটগুলো বিশাল ঘরের মত সামনের দিকে বের হয়ে আছে। তা ছিলো অসংখ্য সাপ ও বিচ্ছুতে পরিপূর্ণ। যেগুলো পেটের বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছিলো। অনন্তর আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরাঈল ! এরা কারা? তিনি বললেনঃ এরা সুদখোর।’ (ইবনে মাযা ও আহমদ)
# হযরত আবদুর রহমান ইবনে মাসউদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত আছে, যখন কোন জাতির মধ্যে ব্যভিচার ও সুদ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে, তখন আল্লাহ পাক সেই জাতিকে ধ্বংস করার নির্দেশ দেন। (আবু ইয়া’লা ও হাকেম)
# সে সমাজে সুদ বিস্তার লাভ করে, তাদের মধ্যে পাগলের সংখ্যা বেড়ে যায়। যে সমাজে ব্যভিচারের ব্যপকতা ঘটে, তাদের মৃত্যুর হার বেড়ে যায়। আর ওজনে কম বেশী করার অভ্যাসে অভ্যস্তদের উপর আল্লাহ সামান্য ফোঁটা পরিমাণ বৃষ্টিও বন্ধ করে দেন। (ইবনে মাজা, বায়হাকী ও হাকেম)
# সুদ থেকে অর্জিত এক দিরহাম পরিমাণ অর্থ ইসলামের দৃষ্টিতে ৩৬বার ব্যভিচার করা অপেক্ষা গুরুতর অপরাধ। (ইবনে মাজা, বায়হাকী)
# সুদখোর, সুদ প্রদানকারী, উভয়ের উপর আল্লাহ অভিসম্পাত করেন। (মুসলিম) [তিরমিযির বর্ণনায় "সুদের সাক্ষী ও লেখক" কথা দুটি যোগ হয়েছে।]
# সুদের গুনাহ সত্তরটি। তার মধ্যে অপরাধের দিক থেকে সর্বনিম্ন গুনাহটি হল, আপন মায়ের সাথে যৌনাচারের গুনাহের সমান। আর সবচেয়ে জঘন্য প্রকারের সুদ হলো, সুদের পাওনা আদায়ের জন্য কোন মুসলমান ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি করা বা তার সম্পদ দখল করা। (ইবনে মাজা, তাবারানী)
এখানে আমরা প্রমাণ পেলাম সুদ হারাম ও কত বড় গুনাহর কাজ ।
ব্যাংকের মূল কাজটাই হল সে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিবে ও একটা ইনটারেস্ট বা সুদ দিবে এবং যারা ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিবে তারা ব্যাংককে সুদ দিবে । অর্থাৎ পুরো কাজটাই সুদ নির্ভর এবং সম্পূর্ণ হারাম । তাই স্পষ্ট সুদি বা সন্দেহযুক্ত সুদি ব্যাংকে চাকুরি করে জীবিকা নির্বাহ করা বৈধ হবে না। সুদি কারবারে যে চার শ্রেণীর লোক সমানভাবে জড়িত, তারা হ'ল (ক) সুদ দাতা (খ) সুদ গ্রহীতা (গ) সাক্ষী (ঘ) লেখক (বুখারী হা/৫৯৬২, মুসলিম হা/১৫৯৮, বুলুগুল মারাম হা/৮১৬)।
আলেমরা বলেন ব্যাংকের কোন চাকরিই জায়েজ না । তবে কেউ কেউ বলেন ঝাড়ুদার, সুইপার , দাড়োয়ান ইত্যাদি অর্থাৎ লেনদেনের সাথে সম্পর্কহীন পদে চাকরি করা জায়েজ আছে ।
ইসলামি ব্যাংকিং বলে, সুদভিত্তিক প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিপরীতে তাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থা পরিচালিত হয় লাভ-ক্ষতি ভাগাভাগির শর্তানুসারে। মুদারাবা, মুশারাকা, মুরাবাহা ইত্যাদি নানা নামের অর্থনৈতিক লেনদেনের নিয়ম রয়েছে তাদের। এখন প্রশ্ন হলো, পারস্পরিক নির্ভরশীল বর্তমান বিশ্ব অর্থব্যবস্থায় কোনো বিশেষ ব্যাংকিং ব্যবস্থার পক্ষে কি বাদবাকি ব্যাংকিং ব্যবস্থার সাথে লেনদেন না করে থাকা সম্ভব? আর যখন একই দেশে অন্যান্য ব্যাংকিং ব্যবস্থা রয়েছে এবং যেখানে তাদের সবাইকে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বাধ্যতামূলক লেনদেন করতে হয় তখন সেখানে শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকিং কীভাবে হবে? আমাদের দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বাধ্যতামূলক একটা জামানত রাখতে হয়, লেনদেন করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক কি ইসলামভিত্তিক লেনদেন করছে, না বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন অনুযায়ী করছে? অর্থাৎ একটা দেশের সব ব্যবস্থা যখন ধর্মনিরপেক্ষ, তখন শুধু ব্যাংকিং ব্যবস্থা ইসলামি হওয়া সম্ভব নয়। আর সাধারণ ব্যাংক যাকে সুদ বলে, ইসলামি ব্যাংক তাকেই বলে মুদারাবা বা প্রফিট শেয়ারিং। অর্থাৎ আপনার টাকা খাটিয়ে ব্যাংক যদি প্রফিট করে তাহলে আপনি তার ভাগ পাবেন, কিন্তু লস করলে আপনি কিছু পাবেন না। কিন্তু আপনি যদি ব্যাংকের টাকা নিয়ে লস করেন তাহলে ব্যাংক আপনার এই লস শেয়ার করবে না। তাহলে এটা ব্যবসা হলো কীভাবে? অর্থাৎ সবই এক, শুধু নামগুলো আরবি। অর্থাৎ সুদকেই ঘুরিয়ে খাওয়া আরকি ।
আল্লাহ আমাদের সকলকে এই বিরাট গোনাহের কাজ হতে হেফাজত রাখুন এই দুআই করি ।
দেখুন ভিডিও
চাকরির ব্যাপারে ভিডিও
ইসলামি ব্যাংক ভিডিও
STA-5.19
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
সুদ প্রথা দিয়ে টাকা উপার্জন করা, ইসলামী সমাজে একটি অমার্জনীয় অপরাধ । ইসলামের দৃষ্টিতে উহা একটি মারাত্মক ও ধ্বংসাত্বক শোষণের কৌশল । আরবীতে একে বলা হয় রিবা, ইংরেজীতে Interest ।
পবিত্র কোরআন এর দলিলঃ
• হে বিশ্বাসীগণ! তোমরা চক্রবৃদ্ধি হারে সুদ খেয়ো না এবং আল্লাহকে ভয় কর। যাতে তোমরা সাফল্য লাভ করতে পার। (সুরা আলে ইমরান-১৩০)
• যারা সুদ খায় তারা ( কেয়ামতের দিন ) সে ব্যক্তির মত দাঁড়াবে, যাকে শয়তান আপন স্পর্শ দিয়ে মোহাবিষ্ট করে দেয়। তাদের এ অবস্হার কারণ, তারা বলে বেড়াতোঃ ব্যবসা তো সুদের মতই। অথচ আল্লাহ ব্যবসাকে হালাল আর সুদকে হারাম করেছেন।(সূরা আল বাকারা- ২৭৫)
• আল্লাহ তা’আলা সুদকে নিশ্চিহ্ন করেন এবং দান খয়রাতকে বর্ধিত করেন। আল্লাহ পছন্দ করেন না কোন অবিশ্বাসী পাপীকে। ( সূরা আল বাকারা - ২৭৬)
• হে ঈমানদারগণ, তোমরা আল্লাহকে ভয় কর এবং সুদের যে সমস্ত বকেয়া আছে, তা পরিত্যাগ কর, যদি তোমরা ঈমানদার হয়ে থাক। ( সূরা আল বাকারা ২৭৮)
পবিত্র হাদিস এর দলিলঃ
# মেরাজ রাতে আমাকে উর্ধ্বলোকে বিচরণ করানোর সময় আমি আমার মাথার উপরে সপ্তম আকাশে বজ্রে প্রচন্ড গর্জনের শব্দ শুনতে পেলাম। চোখ মেলে এমন কিছু লোক দেখতে পেলাম, যাদের পেটগুলো বিশাল ঘরের মত সামনের দিকে বের হয়ে আছে। তা ছিলো অসংখ্য সাপ ও বিচ্ছুতে পরিপূর্ণ। যেগুলো পেটের বাইরে থেকে দেখা যাচ্ছিলো। অনন্তর আমি জিজ্ঞেস করলাম, হে জিবরাঈল ! এরা কারা? তিনি বললেনঃ এরা সুদখোর।’ (ইবনে মাযা ও আহমদ)
# হযরত আবদুর রহমান ইবনে মাসউদ (রাঃ) কর্তৃক বর্ণিত আছে, যখন কোন জাতির মধ্যে ব্যভিচার ও সুদ ব্যাপক আকারে ছড়িয়ে পড়ে, তখন আল্লাহ পাক সেই জাতিকে ধ্বংস করার নির্দেশ দেন। (আবু ইয়া’লা ও হাকেম)
# সে সমাজে সুদ বিস্তার লাভ করে, তাদের মধ্যে পাগলের সংখ্যা বেড়ে যায়। যে সমাজে ব্যভিচারের ব্যপকতা ঘটে, তাদের মৃত্যুর হার বেড়ে যায়। আর ওজনে কম বেশী করার অভ্যাসে অভ্যস্তদের উপর আল্লাহ সামান্য ফোঁটা পরিমাণ বৃষ্টিও বন্ধ করে দেন। (ইবনে মাজা, বায়হাকী ও হাকেম)
# সুদ থেকে অর্জিত এক দিরহাম পরিমাণ অর্থ ইসলামের দৃষ্টিতে ৩৬বার ব্যভিচার করা অপেক্ষা গুরুতর অপরাধ। (ইবনে মাজা, বায়হাকী)
# সুদখোর, সুদ প্রদানকারী, উভয়ের উপর আল্লাহ অভিসম্পাত করেন। (মুসলিম) [তিরমিযির বর্ণনায় "সুদের সাক্ষী ও লেখক" কথা দুটি যোগ হয়েছে।]
# সুদের গুনাহ সত্তরটি। তার মধ্যে অপরাধের দিক থেকে সর্বনিম্ন গুনাহটি হল, আপন মায়ের সাথে যৌনাচারের গুনাহের সমান। আর সবচেয়ে জঘন্য প্রকারের সুদ হলো, সুদের পাওনা আদায়ের জন্য কোন মুসলমান ভাইয়ের সম্ভ্রমহানি করা বা তার সম্পদ দখল করা। (ইবনে মাজা, তাবারানী)
এখানে আমরা প্রমাণ পেলাম সুদ হারাম ও কত বড় গুনাহর কাজ ।
ব্যাংকের মূল কাজটাই হল সে মানুষের কাছ থেকে টাকা নিবে ও একটা ইনটারেস্ট বা সুদ দিবে এবং যারা ব্যাংকের কাছ থেকে ঋণ নিবে তারা ব্যাংককে সুদ দিবে । অর্থাৎ পুরো কাজটাই সুদ নির্ভর এবং সম্পূর্ণ হারাম । তাই স্পষ্ট সুদি বা সন্দেহযুক্ত সুদি ব্যাংকে চাকুরি করে জীবিকা নির্বাহ করা বৈধ হবে না। সুদি কারবারে যে চার শ্রেণীর লোক সমানভাবে জড়িত, তারা হ'ল (ক) সুদ দাতা (খ) সুদ গ্রহীতা (গ) সাক্ষী (ঘ) লেখক (বুখারী হা/৫৯৬২, মুসলিম হা/১৫৯৮, বুলুগুল মারাম হা/৮১৬)।
আলেমরা বলেন ব্যাংকের কোন চাকরিই জায়েজ না । তবে কেউ কেউ বলেন ঝাড়ুদার, সুইপার , দাড়োয়ান ইত্যাদি অর্থাৎ লেনদেনের সাথে সম্পর্কহীন পদে চাকরি করা জায়েজ আছে ।
ইসলামি ব্যাংকিং বলে, সুদভিত্তিক প্রচলিত ব্যাংকিং ব্যবস্থার বিপরীতে তাদের ব্যাংকিং ব্যবস্থা পরিচালিত হয় লাভ-ক্ষতি ভাগাভাগির শর্তানুসারে। মুদারাবা, মুশারাকা, মুরাবাহা ইত্যাদি নানা নামের অর্থনৈতিক লেনদেনের নিয়ম রয়েছে তাদের। এখন প্রশ্ন হলো, পারস্পরিক নির্ভরশীল বর্তমান বিশ্ব অর্থব্যবস্থায় কোনো বিশেষ ব্যাংকিং ব্যবস্থার পক্ষে কি বাদবাকি ব্যাংকিং ব্যবস্থার সাথে লেনদেন না করে থাকা সম্ভব? আর যখন একই দেশে অন্যান্য ব্যাংকিং ব্যবস্থা রয়েছে এবং যেখানে তাদের সবাইকে দেশের কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে বাধ্যতামূলক লেনদেন করতে হয় তখন সেখানে শরিয়াভিত্তিক ব্যাংকিং কীভাবে হবে? আমাদের দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোকে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে বাধ্যতামূলক একটা জামানত রাখতে হয়, লেনদেন করতে হয়। বাংলাদেশ ব্যাংক কি ইসলামভিত্তিক লেনদেন করছে, না বাংলাদেশ ব্যাংকের আইন অনুযায়ী করছে? অর্থাৎ একটা দেশের সব ব্যবস্থা যখন ধর্মনিরপেক্ষ, তখন শুধু ব্যাংকিং ব্যবস্থা ইসলামি হওয়া সম্ভব নয়। আর সাধারণ ব্যাংক যাকে সুদ বলে, ইসলামি ব্যাংক তাকেই বলে মুদারাবা বা প্রফিট শেয়ারিং। অর্থাৎ আপনার টাকা খাটিয়ে ব্যাংক যদি প্রফিট করে তাহলে আপনি তার ভাগ পাবেন, কিন্তু লস করলে আপনি কিছু পাবেন না। কিন্তু আপনি যদি ব্যাংকের টাকা নিয়ে লস করেন তাহলে ব্যাংক আপনার এই লস শেয়ার করবে না। তাহলে এটা ব্যবসা হলো কীভাবে? অর্থাৎ সবই এক, শুধু নামগুলো আরবি। অর্থাৎ সুদকেই ঘুরিয়ে খাওয়া আরকি ।
আল্লাহ আমাদের সকলকে এই বিরাট গোনাহের কাজ হতে হেফাজত রাখুন এই দুআই করি ।
দেখুন ভিডিও
চাকরির ব্যাপারে ভিডিও
ইসলামি ব্যাংক ভিডিও
STA-5.19
© 2013 by Ask Islam Bangla.