প্রশ্ন ৮২ --> নবীজি (স) মুনাফিক সর্দার আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এর জানাজা কেন পড়িয়েছিলেন এটা জানতে চাই। সে তো মুনাফিক ছিল, সে মারা যাবার আগ পর্যন্ত কি নবীজি (স) জানতেন না যে সে মুনাফিক ছিল? নাকি নবীজি (স) ওয়াদা করেছিলেন, সে ওয়াদা রক্ষার জন্যে জানাজা পড়িয়েছিলেন?
উত্তর :
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
সর্বাধিক বিশুদ্ধ ও বলিষ্ঠ সনদ হাদিসসমূহ থেকে এ কথাই প্রতিপন্ন হয় যে, রসূল সা. আব্দুল্লাহ বিন উবাইর জানাযা পড়িয়েছিলেন। কিন্তু পরে তাঁকে সূরা তওবার ৮৪ নং আয়াতের মাধ্যমে মুনাফিকদের জানাযা নামায পড়াতে বারণ করা হয়। ফলে রসূল সা. পরবর্তীকালে আর কখনো এমন কোনো লোকের জানাযা নামায পড়াননি, যার মুনাফিক হওয়া একেবারেই স্পষ্ট ছিলো এবং তা রসূল সা.-এর জানা ছিলো। কিন্তু কিছু কিছু হাদিস থেকে এ কথাও জানা যায় যে, তিনি আব্দুল্লাহ বিন উবাইর জানাযা পড়াননি। তিনি পড়াতে ইচ্ছুক ছিলেন, কিন্তু ওহী দ্বারা তাঁকে নিষেধ করা হয়। যেসব হাদিসে রসূল সা. কর্তৃক জানাযা পড়ানোর উল্লেখ রয়েছে, সেগুলো বুখারি, মুসলিম ও অন্য ছয়টি সহীহ হাদিসগ্রন্থে লিপিবদ্ধ রয়েছে। বুখারি ও মুসলিমের জানাযা অধ্যায়ে এ ধরণের একাধিক হাদিস রয়েছে। বুখারিতে 'জামা দ্বারা কাফন দেয়া।' শিরোনামে হযরত ইবনে ওমর বর্ণিত প্রথম হাদিসের বক্তব্য এই যে, আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইর ছেলে পিতা মারা যাওয়ার পর রসূল সা.-এর নিকট আবেদন জানালেন, "আপনার জামাটা দিন এবং জানাযা পড়িয়ে দিন।" তিনি রাজি হয়ে গেলে হযরত ওমর রা. বললেন : "আল্লাহ তায়ালা কি আপনাকে মুনাফিকদের জানাযা পড়াতে নিষেধ করেননি।" রসূল সা. বললেন : "আমাকে এখতিয়ার দেয়া হয়েছে, পড়াতেও পারি, নাও পড়াতে পারি।" অবশেষে তিনি জানাযা পড়ালেন। পড়ানোর পর এ আয়াত নাযিল হয়।
কিন্তু এ অধ্যায়ে হযরত জাবির বর্ণিত অপর হাদিসটি এরূপ :
"আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইর দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে এলেন। তিনি তার লাশ উঠালেন, তার উপর নিজের পবিত্র লালা দিলেন এবং নিজের জামাটি তার কাফনে জড়িয়ে দিলেন।"
এ হাদিসে রসূল সা. কর্তৃক জানাযা পড়ানোর উল্লেখ নেই। উল্লেখ না থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও বিবেচনা সাপেক্ষ। প্রতীয়মান হয় যে, রসূল সা.-এর পৌঁছতে বিলম্ব হওয়ায় লাশ দাফন সম্পন্ন হয়, কিংবা কমেরপক্ষে তাকে কবরে নামানের পর তিনি পৌঁছেন। জানাযা দাফনের আগেই হয়তো পড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। তবে রসূল সা. তার পুত্র ও গোত্রের মনসন্তুষ্টির জন্য এবং ইসলামের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টির জন্য নিজের মুখের লালা ও জামা দিয়ে কৃতার্থ করেন। এটা ছিলো রসূল সা.-এর সর্বোচ্চ মানের মহানুভবতা ও ক্ষমার বহি:প্রকাশ। কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য তাঁকে কখনো কোনো মুনাফিকের জানাযা পড়াতে এমনকি তার কবরের কাছে দাঁড়িয়ে দোয়া বা শোক প্রকাশ করতেও নিষেধ করে দেয়া হয়। হাদিস ব্যাখ্যাকারীগণ হযরত জাবিরের বর্ণিত এই হাদিস এবং অন্যান্য হাদিসের মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করেছেন। তারা বলেছেন, রসূল সা. যখন লাশ বের করে এমন অসাধারণ অনুকম্পার মনোভাব অবলম্বন করেছেন, তখন নামাযও হয়তো পড়িয়েছেন। কিন্তু হযরত জাবির এ কথার উল্লেখ করেননি। বস্তুত: রসূল সা.-এর আগমনের আগে যে দাফনক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল, সেটা জানাযা বাদ দিয়ে হওয়ার কথা নয়। কেননা জানাযা আগে হয় এবং দাফনের পালা পরে আসে।
দ্বিতীয় হাদিসটি হযরত আনাস থেকে বর্ণিত। এ হাদিস থেকে জানা যায়, সূরা তাওবার ৮৪ নং আয়াত জানাযা পড়ার আগেই নাযিল হয়ে গিয়েছিল এবং এর কারণে রসূল সা. জানাযা পড়া থেকে বিরত থাকেন। 'মাজমায়ুয্ যাওয়াইদ' গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ডে ৪২ পৃষ্ঠায় 'মুনাফিকদের জানাযায় নিষেধাজ্ঞা' শিরোনামের অধীনে হাদিসটির বিবরণ এরূপ :
# "হযরত আনাস বিন মালিক জানান, রসূল সা. আব্দুল্লাহ বিন উবাইর জানাযা পড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জিবরীল তাঁকে থামালেন এবং এই ওহী শোনালেন 'ওদের কারো জানাযা পড়োনা এবং কবরেও দাঁড়িওনা।' মুসনদে আবু ইয়ালাতে এ হাদিস বর্ণিত। এর বর্ণনাকারীদের মধ্যে একজন রয়েছেন ইয়াযীদ রাক্কাশী। কোনো কোনো হাদিসশাস্ত্রবিদ তাঁর সম্পর্কে আপত্তি তুলেছেন। আবার কেউ কেউ তাঁকে নির্ভরযোগ্যও বলেছেন।"
হাদিসটির বর্ণনাকারীদের সকলের নামসহ পুরো সনদ ইমাম ইবনে জারীর স্বীয় সূরা তাওবার তফসীরে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন :
হযরত জাবির থেকে বর্ণিত যে হাদিসটি ইতিপূর্বে বুখারি শরিফ থেকে উদ্ধৃত হয়েছে, সেটি অল্পবিস্তর শাব্দিক পার্থক্যসহ মুসনদে আহমদ এবং অন্যান্য হাদিসগ্রন্থেও লিপিবদ্ধ রয়েছে এবং সে সব গ্রন্থেও হযরত জাবির বলেননি যে, রসূল সা. জানাযা পড়িয়েছেন। মুসনদে আহমদ তৃতীয় খণ্ড, ৩৭১৬ পৃষ্ঠায় একটি বর্ণনা এরূপ লিপিবদ্ধ রয়েছে :
# "আব্দুল্লাহ বিন উবাই মারা গেলে তার ছেলে রসূর সা.-এর নিকট এসে বললেন : ইয়া রসূলুল্লাহ! আপনি যদি জানাযায় না আসেন, তবে সেটা আমাদের জন্য অত্যন্ত অবমাননাকর ব্যাপার হবে। তাই রসূল সা. উপস্থিত হলেন, কিন্তু ততোক্ষণে লাশ কবরে নামানো হয়ে গেছে। রসূল সা. বললেন : তোমরা দাফনের আগে আমাকে জানালে না কেন? অত:পর তিনি কবর থেকে লাশ বের করলেন, তার সমগ্র শরীরে নিজের লালা মাখিয়ে দিলেন এবং নিজের জামা পরিয়ে দিলেন।"
যাই হোক, রসূল সা. জানাযা হয়তো পড়াননি। হয়তো তিনি শুধু লালা ও জামা দিয়েই ক্ষান্ত ছিলেন। এমনও হতে পারে যে, জানাযা পড়াবেন বলে মনস্থ করেছিলেন, কিন্তু পড়ানোর আগেই ওহী নাযিল হয়ে যায়। এ সম্ভাবনার কথা আমরা আগেও বলেছি। তবে বিশুদ্ধতর হাদিসে জানাযা পড়ানোর উল্লেখ রয়েছে এবং তাতেও কোনো জটিলতা নেই। কেননা এ জানাযার আগে দোয়া করতে নিষেধ করা হয়েছিল শুধু কাফের ও মুশরিকের জন্য। মুনাফিকদের ব্যাপার একটু স্বতন্ত্র। বাহ্যত তারা মুসলিম সমাজের অন্তর্ভুক্ত ছিলো এবং সামাজিক সুযোগ সুবিধা মুসলমানদের মতোই ভোগ করতো। তাই রসূল সা.-কে অকাট্য ও দ্ব্যর্থহীনভাবে নিষেধ না করা পর্যন্ত মুনাফিকদের জানাযা পড়া না পড়ার ব্যাপারে তিনি স্বাধীন ছিলেন।
তবে আসল লক্ষণীয় ও শিক্ষণীয় বিষয়টি এখানে এই যে, মুনাফিকের জন্য আল্লাহর রসূলের মাগফিরাতের দোয়াও গ্রহণগোয্য নয় এবং মুনাফিকের কবরে যদি আল্লাহর নবীর মুখের লালা এবং লালা এবং গায়ের জামাও রেখে দেয়া হয়, তবু এই বরকতময় জিনিস মুনাফিককে দোযখের আগুন থেকে বাঁচাতে পারবেনা। আল্লাহ প্রত্যেক কলেমা বলা মুসলমানকে শির্ক ও নিফাকের পংকিলতা থেকে রক্ষা করুন এবং আল্লাহ ও রসূল সা.-এর আনুগত্যের তাওফীক দিন। আমীন!
[তরজমানুল কুরআন, নভেম্বর ১৯৭৯]
STA-51.91
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
সর্বাধিক বিশুদ্ধ ও বলিষ্ঠ সনদ হাদিসসমূহ থেকে এ কথাই প্রতিপন্ন হয় যে, রসূল সা. আব্দুল্লাহ বিন উবাইর জানাযা পড়িয়েছিলেন। কিন্তু পরে তাঁকে সূরা তওবার ৮৪ নং আয়াতের মাধ্যমে মুনাফিকদের জানাযা নামায পড়াতে বারণ করা হয়। ফলে রসূল সা. পরবর্তীকালে আর কখনো এমন কোনো লোকের জানাযা নামায পড়াননি, যার মুনাফিক হওয়া একেবারেই স্পষ্ট ছিলো এবং তা রসূল সা.-এর জানা ছিলো। কিন্তু কিছু কিছু হাদিস থেকে এ কথাও জানা যায় যে, তিনি আব্দুল্লাহ বিন উবাইর জানাযা পড়াননি। তিনি পড়াতে ইচ্ছুক ছিলেন, কিন্তু ওহী দ্বারা তাঁকে নিষেধ করা হয়। যেসব হাদিসে রসূল সা. কর্তৃক জানাযা পড়ানোর উল্লেখ রয়েছে, সেগুলো বুখারি, মুসলিম ও অন্য ছয়টি সহীহ হাদিসগ্রন্থে লিপিবদ্ধ রয়েছে। বুখারি ও মুসলিমের জানাযা অধ্যায়ে এ ধরণের একাধিক হাদিস রয়েছে। বুখারিতে 'জামা দ্বারা কাফন দেয়া।' শিরোনামে হযরত ইবনে ওমর বর্ণিত প্রথম হাদিসের বক্তব্য এই যে, আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইর ছেলে পিতা মারা যাওয়ার পর রসূল সা.-এর নিকট আবেদন জানালেন, "আপনার জামাটা দিন এবং জানাযা পড়িয়ে দিন।" তিনি রাজি হয়ে গেলে হযরত ওমর রা. বললেন : "আল্লাহ তায়ালা কি আপনাকে মুনাফিকদের জানাযা পড়াতে নিষেধ করেননি।" রসূল সা. বললেন : "আমাকে এখতিয়ার দেয়া হয়েছে, পড়াতেও পারি, নাও পড়াতে পারি।" অবশেষে তিনি জানাযা পড়ালেন। পড়ানোর পর এ আয়াত নাযিল হয়।
কিন্তু এ অধ্যায়ে হযরত জাবির বর্ণিত অপর হাদিসটি এরূপ :
"আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইর দাফন সম্পন্ন হওয়ার পর রসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সেখানে এলেন। তিনি তার লাশ উঠালেন, তার উপর নিজের পবিত্র লালা দিলেন এবং নিজের জামাটি তার কাফনে জড়িয়ে দিলেন।"
এ হাদিসে রসূল সা. কর্তৃক জানাযা পড়ানোর উল্লেখ নেই। উল্লেখ না থাকাটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ ও বিবেচনা সাপেক্ষ। প্রতীয়মান হয় যে, রসূল সা.-এর পৌঁছতে বিলম্ব হওয়ায় লাশ দাফন সম্পন্ন হয়, কিংবা কমেরপক্ষে তাকে কবরে নামানের পর তিনি পৌঁছেন। জানাযা দাফনের আগেই হয়তো পড়িয়ে দেয়া হয়েছিল। তবে রসূল সা. তার পুত্র ও গোত্রের মনসন্তুষ্টির জন্য এবং ইসলামের প্রতি আকর্ষণ সৃষ্টির জন্য নিজের মুখের লালা ও জামা দিয়ে কৃতার্থ করেন। এটা ছিলো রসূল সা.-এর সর্বোচ্চ মানের মহানুভবতা ও ক্ষমার বহি:প্রকাশ। কিন্তু ভবিষ্যতের জন্য তাঁকে কখনো কোনো মুনাফিকের জানাযা পড়াতে এমনকি তার কবরের কাছে দাঁড়িয়ে দোয়া বা শোক প্রকাশ করতেও নিষেধ করে দেয়া হয়। হাদিস ব্যাখ্যাকারীগণ হযরত জাবিরের বর্ণিত এই হাদিস এবং অন্যান্য হাদিসের মধ্যে সমন্বয় সাধনের চেষ্টা করেছেন। তারা বলেছেন, রসূল সা. যখন লাশ বের করে এমন অসাধারণ অনুকম্পার মনোভাব অবলম্বন করেছেন, তখন নামাযও হয়তো পড়িয়েছেন। কিন্তু হযরত জাবির এ কথার উল্লেখ করেননি। বস্তুত: রসূল সা.-এর আগমনের আগে যে দাফনক্রিয়া সম্পন্ন হয়েছিল, সেটা জানাযা বাদ দিয়ে হওয়ার কথা নয়। কেননা জানাযা আগে হয় এবং দাফনের পালা পরে আসে।
দ্বিতীয় হাদিসটি হযরত আনাস থেকে বর্ণিত। এ হাদিস থেকে জানা যায়, সূরা তাওবার ৮৪ নং আয়াত জানাযা পড়ার আগেই নাযিল হয়ে গিয়েছিল এবং এর কারণে রসূল সা. জানাযা পড়া থেকে বিরত থাকেন। 'মাজমায়ুয্ যাওয়াইদ' গ্রন্থের তৃতীয় খণ্ডে ৪২ পৃষ্ঠায় 'মুনাফিকদের জানাযায় নিষেধাজ্ঞা' শিরোনামের অধীনে হাদিসটির বিবরণ এরূপ :
# "হযরত আনাস বিন মালিক জানান, রসূল সা. আব্দুল্লাহ বিন উবাইর জানাযা পড়াতে চেয়েছিলেন। কিন্তু জিবরীল তাঁকে থামালেন এবং এই ওহী শোনালেন 'ওদের কারো জানাযা পড়োনা এবং কবরেও দাঁড়িওনা।' মুসনদে আবু ইয়ালাতে এ হাদিস বর্ণিত। এর বর্ণনাকারীদের মধ্যে একজন রয়েছেন ইয়াযীদ রাক্কাশী। কোনো কোনো হাদিসশাস্ত্রবিদ তাঁর সম্পর্কে আপত্তি তুলেছেন। আবার কেউ কেউ তাঁকে নির্ভরযোগ্যও বলেছেন।"
হাদিসটির বর্ণনাকারীদের সকলের নামসহ পুরো সনদ ইমাম ইবনে জারীর স্বীয় সূরা তাওবার তফসীরে বর্ণনা করেছেন। তিনি বলেন :
হযরত জাবির থেকে বর্ণিত যে হাদিসটি ইতিপূর্বে বুখারি শরিফ থেকে উদ্ধৃত হয়েছে, সেটি অল্পবিস্তর শাব্দিক পার্থক্যসহ মুসনদে আহমদ এবং অন্যান্য হাদিসগ্রন্থেও লিপিবদ্ধ রয়েছে এবং সে সব গ্রন্থেও হযরত জাবির বলেননি যে, রসূল সা. জানাযা পড়িয়েছেন। মুসনদে আহমদ তৃতীয় খণ্ড, ৩৭১৬ পৃষ্ঠায় একটি বর্ণনা এরূপ লিপিবদ্ধ রয়েছে :
# "আব্দুল্লাহ বিন উবাই মারা গেলে তার ছেলে রসূর সা.-এর নিকট এসে বললেন : ইয়া রসূলুল্লাহ! আপনি যদি জানাযায় না আসেন, তবে সেটা আমাদের জন্য অত্যন্ত অবমাননাকর ব্যাপার হবে। তাই রসূল সা. উপস্থিত হলেন, কিন্তু ততোক্ষণে লাশ কবরে নামানো হয়ে গেছে। রসূল সা. বললেন : তোমরা দাফনের আগে আমাকে জানালে না কেন? অত:পর তিনি কবর থেকে লাশ বের করলেন, তার সমগ্র শরীরে নিজের লালা মাখিয়ে দিলেন এবং নিজের জামা পরিয়ে দিলেন।"
যাই হোক, রসূল সা. জানাযা হয়তো পড়াননি। হয়তো তিনি শুধু লালা ও জামা দিয়েই ক্ষান্ত ছিলেন। এমনও হতে পারে যে, জানাযা পড়াবেন বলে মনস্থ করেছিলেন, কিন্তু পড়ানোর আগেই ওহী নাযিল হয়ে যায়। এ সম্ভাবনার কথা আমরা আগেও বলেছি। তবে বিশুদ্ধতর হাদিসে জানাযা পড়ানোর উল্লেখ রয়েছে এবং তাতেও কোনো জটিলতা নেই। কেননা এ জানাযার আগে দোয়া করতে নিষেধ করা হয়েছিল শুধু কাফের ও মুশরিকের জন্য। মুনাফিকদের ব্যাপার একটু স্বতন্ত্র। বাহ্যত তারা মুসলিম সমাজের অন্তর্ভুক্ত ছিলো এবং সামাজিক সুযোগ সুবিধা মুসলমানদের মতোই ভোগ করতো। তাই রসূল সা.-কে অকাট্য ও দ্ব্যর্থহীনভাবে নিষেধ না করা পর্যন্ত মুনাফিকদের জানাযা পড়া না পড়ার ব্যাপারে তিনি স্বাধীন ছিলেন।
তবে আসল লক্ষণীয় ও শিক্ষণীয় বিষয়টি এখানে এই যে, মুনাফিকের জন্য আল্লাহর রসূলের মাগফিরাতের দোয়াও গ্রহণগোয্য নয় এবং মুনাফিকের কবরে যদি আল্লাহর নবীর মুখের লালা এবং লালা এবং গায়ের জামাও রেখে দেয়া হয়, তবু এই বরকতময় জিনিস মুনাফিককে দোযখের আগুন থেকে বাঁচাতে পারবেনা। আল্লাহ প্রত্যেক কলেমা বলা মুসলমানকে শির্ক ও নিফাকের পংকিলতা থেকে রক্ষা করুন এবং আল্লাহ ও রসূল সা.-এর আনুগত্যের তাওফীক দিন। আমীন!
[তরজমানুল কুরআন, নভেম্বর ১৯৭৯]
STA-51.91
© 2013 by Ask Islam Bangla.