প্রশ্ন ৬৪ --> সব জাতির নিকট রাসুল প্রেরণ করা হলে পৃথিবীতে এত ধর্ম কেন?
উত্তর :
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
আল্লাহ প্রাচীনকাল থেকেই মানবজাতির হেদায়েতের জন্য নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন।প্রথম মানুষ এবং নবী আদম(আ) থেকে এই ধারা শুরু হয়েছে এবং শেষ নবী মুহাম্মাদ(স) দ্বারা এই ধারা শেষ হয়েছে।মানব ইতিহাসের একেবারে শুরু থেকেই আল্লাহ মানুষকে সত্য ধর্ম দিয়েছেন,যার মূল ছিল তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ববাদ।আদিকাল থেকেই এই সত্য ইসলাম ধর্ম আল্লাহ মানুষকে নবী-রাসুলের মাধ্যমে দিয়ে আসছেন,আমাদের পূর্ববর্তী জাতিগুলোও মুসলিম নামে অভহীত হত[দেখুনঃ আলি ইমরান ৩:৬৭,আলি ইমরান ৩:৫২,ইউসুস ১২:১০১]; কিন্তু শয়তানের কুপ্ররোরচনায় এবং নিজ নফসের খেয়ালের দ্বারা মানুষ যখনই আল্লাহর দেওয়া একত্ববাদের ধর্ম থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে,আল্লাহর সঙ্গে অন্য উপাস্য গ্রহণ করেছে কিংবা আল্লাহর বিধানকে অস্বীকার করেছে,তখনই আল্লাহ পুনরায় নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন।যারা তাঁদেরকে মেনেছে,আল্লাহর বিধান মেনেছে,তারা মুক্তি পেয়েছে।আর বাকিরা পূর্ব ধর্মেই রয়ে গেছে,তারা ধ্বংস হয়েছে।পৃথিবীতে এত ধর্ম থাকার কারণ হিসাবে এক কথায় বলা যায় যে,আল্লাহর দেওয়া আদি ধর্ম থেকে বিচ্যুতিই পৃথিবীতে এত ধর্ম থাকার কারণ।
আল্লাহ বলেছেন,
• আপনার পূর্ববর্তী অনেক রাসুলকে মিথ্যা বলা হয়েছে। তাঁরা এতে ছবর করেছেন। তাদের কাছে আমার সাহায্য পৌঁছে পর্যন্ত তারা নির্যাতিত হয়েছেন। আল্লাহর বানী কেউ পরিবর্তন করতে পারে না। আপনার কাছে রাসুলদের কিছু কাহিনী পৌঁছেছে।(সুরা আনআম ৩৪)
প্রত্যেক জাতির নিকট আল্লাহর নবী-রাসুল প্রেরণঃ
এটি কুরআন দ্বারা প্রমাণিত যে আল্লাহ সব সম্প্রদায়ের নিকট রাসুল পাঠিয়েছেন।
• আর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের একেকজন রসূল রয়েছে। (সুরা ইউনুস ৪৭)
• প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যে পথপ্রদর্শক হয়েছে। (সুরা রা'দ ৭)
• প্রত্যেক যুগের জন্যই (ছিল এক) একটি কিতাব।(রা’দ ৩৮)
অর্থাত,প্রত্যেক সময়ের জন্য কিতাব রয়েছে।আমাদের সময়ের কিতাব কুরআন।
পূর্ববর্তী জাতিগুলোর প্রতি নবী-রাসুল প্রেরণের ব্যাপারে কুরআনে আরো বলা হয়েছে,
• আমি আপনার(মুহাম্মাদ(স)) পূর্বে পূর্ববর্তী সম্প্রদায়ের মধ্যে রসূল প্রেরণ করেছি। (সুরা হিজর ১০)
• আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুত থেকে নিরাপদ থাক। অতঃপর তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যককে আল্লাহ হেদায়েত করেছেন এবং কিছু সংখ্যকের জন্যে বিপথগামিতা অবধারিত হয়ে গেল। সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ মিথ্যারোপকারীদের কিরূপ পরিণতি হয়েছে। (সুরা নাহল ৩৬)
এছাড়া সুরা আরাফ এর ৫৯-১০০ আয়াত পর্যন্ত দেখুন আল্লহ কিভাবে প্রাচীনকালে বিভিন্ন জনপদে নবী পাঠিয়েছেন।সেই জাতিগুলোর কাহিনী এই আয়াতগুলোতে রয়েছে।
পূর্ববর্তী জাতিগুলোর সত্য ধর্ম থেকে বিচ্যুতিঃ
পূর্ববর্তী জাতিগুলোর মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর দেওয়া সত্য তাওহীদের পথ থেকে বার বার বিচ্যুত হয়েছে এবং আজ পর্যন্ত এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা বংশ পরম্পরায় এসব ভ্রান্ত পথের অনুসরণ করে।
• তারা সম্প্রদায়ের সর্দাররা বললঃ আমরা তোমাকে নির্বোধ দেখতে পাচ্ছি এবং আমরা তোমাকে মিথ্যাবাদী মনে করি।(সুরা আরাফ ৬৬)
এইরূপে বহু মানুষ রাসুলদের অস্বীকার করত।অনেকে রাসুলদের অনুসরণ করত।কিন্তু কালের পরিক্রমায় তাঁদের শিক্ষা ভুলে গিয়ে পাপাচারে মত্ত হত।ফলে তারা আল্লহর ধর্ম থেকে খারিজ হয়ে যেত।
• এরাই তারা-নবীগণের মধ্য থেকে যাদেরকে আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন। এরা আদমের বংশধর এবং যাদেরকে আমি নূহের সাথে নৌকায় আরোহন করিয়েছিলাম, তাদের বংশধর, এবং ইব্রাহীম ও ইসরাঈলের বংশধর এবং যাদেরকে আমি পথ প্রদর্শন করেছি ও মনোনীত করেছি, তাদের বংশোদ্ভূত। তাদের কাছে যখন দয়াময় আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করা হত, তখন তারা সেজদায় লুটিয়ে পড়ত এবং ক্রন্দন করত।অতঃপর তাদের পরে এল অপদার্থ পরবর্তীরা। তারা নামায নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হল। সুতরাং তারা অচিরেই পথভ্রষ্টতা প্রত্যক্ষ করবে। (মারইয়াম ১৯:৫৮,৫৯)
সত্য ধর্ম থেকে বিচ্যুতির কারণঃ
শয়তান তার কুপ্ররোচণা দিয়ে মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে সরিয়ে দিতে চায়।
• সে বললঃ হে আমার পালনকর্তা, আপনি আমাকে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন।আল্লাহ বললেনঃ তোমাকে অবকাশ দেয়া হল।
সেই অবধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত।সে বললঃ হে আমার পলনকর্তা, আপনি যেমন আমাকে পথ ভ্রষ্ট করেছেন, আমিও তাদের সবাইকে পৃথিবীতে নানা সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করব এবং তাদের সবাইকে পথ ভ্রষ্ঠ করে দেব।আপনার মনোনীত বান্দাদের ব্যতীত।আল্লাহ বললেনঃ এটা আমা পর্যন্ত সোজা পথ।যারা আমার বান্দা, তাদের উপর তোমার কোন ক্ষমতা নেই; কিন্তু পথভ্রান্তদের মধ্য থেকে যারা তোমার পথে চলে।তাদের সবার নির্ধারিত স্থান হচ্ছে জাহান্নাম। (সুরা হিজর ১৫:৩৬-৪৩)
• আল্লাহর কসম, আমি আপনার পূর্বে বিভিন্ন সম্প্রদায়ে রাসূল প্রেরণ করেছি, অতঃপর শয়তান তাদেরকে কর্ম সমূহ শোভনীয় করে দেখিয়েছে। আজ সেই তাদের অভিভাবক এবং তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সুরা নাহল ৬৩)
কিন্তু শয়তানের কোন ক্ষমতা নেই বাধ্য করার।তার আধিপত্য সবার উপর নেই।
• তার(শয়তানের) আধিপত্য চলে না তাদের উপর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আপন পালন কর্তার উপর ভরসা রাখে। (সুরা নাহল ৯৯)
মানুষ তার পূর্বপুরুষদের ভিত্তিহীন আচার অনুষ্ঠান দেখে নিজেরাও পথভ্রষ্ট হয়।কিন্তু তাদের ঐ আচার মোটেও আল্লাহর বিধান নয়।
• তারা যখন কোন মন্দ কাজ করে, তখন বলে আমরা বাপ-দাদাকে এমনি করতে দেখেছি এবং আল্লাহও আমাদেরকে এ নির্দেশই দিয়েছেন। আল্লাহ মন্দকাজের আদেশ দেন না। এমন কথা আল্লাহর প্রতি কেন আরোপ কর, যা তোমরা জান না।(সুরা আরাফ ২৮)
কিন্তু তারা ভিত্তিহীন প্রথার অনুসরণ করে।
• বস্তুতঃ তাদের অধিকাংশই শুধু আন্দাজ-অনুমানের উপর চলে, অথচ আন্দাজ-অনুমান সত্যের বেলায় কোন কাজেই আসে না। আল্লাহ ভাল করেই জানেন, তারা যা কিছু করে। (সুরা ইউনুস ৩৬)
মোটকথা,আল্লাহর পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়ে গিয়ে মানুষ নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ ও শয়তানের কুপ্ররোচনায় বিভিন্ন রকম পন্থা ও ধর্ম উদ্ভাবন করেছে।এ কারণেই পৃথিবীতে এত প্রকারের ধর্ম।একারণেই ভারত ও চীনে মুসলিমের সংখ্যা কম।তারা(অমুসলিমরা) পূর্বপুরুষের তাওহিদের দ্বীন থেকে বিচ্যুত এবং শেষ নবী মুহাম্মাদ(স) প্রচারিত ধর্মও গ্রহণ করেনি।প্রকৃত সত্য ধর্ম একটিই।কুরআনের আয়াত দ্বারা এটি প্রমাণিত যে প্রতিটি সময়ের জন্যই গ্রন্থ রয়েছে এবং প্রতিটি জাতির নিকটেই রাসুল পৌঁছেছেন।আমাদের একেবারে পূর্ববর্তী যারা আসমানী কিতাব ও নবী পেয়েছে তারা হচ্ছে খ্রিষ্টান জাতি।নবী(স) এর আগমনের মাত্র সাড়ে পাঁচশ বছর আগে নবুয়ত পেয়েছিলেন ঈসা(আ); কিন্তু মাত্র সাড়ে পাঁচশ বছরের মধ্যে তারা ঈসা(আ) এর তাওহীদের ধর্ম থেকে বিচ্যুত হয়ে নতুন এক ধর্মালম্বিতে পরিণত হয়েছিল।তার বহু বছর আগে বহু প্রাচীনকালে যারা নবী পেয়েছিল, বিশাল সময়ে তারা কী পরিমাণ ভ্রষ্ট হয়ে যেতে পারে তা তো অনুমানই করা যেতে পারে।ধর্মগুলোর বৈচিত্র্য দেখেই তা বোঝা যায়।যাহোক,শেষ নবী মুহাম্মাদ(স) সারা পৃথিবীর সব জাতির জন্য রাসুল হয়ে এসেছিলেন।তাঁর প্রচারিত দ্বীন সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য,সব জনপদের জন্য।
• আমি তাদের কাছে গ্রন্থ পৌছিয়েছি, যা আমি স্বীয় জ্ঞানে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি, যা পথপ্রদর্শক এবং মুমিনদের জন্যে রহমত।তারা কি এখন এ অপেক্ষায়ই আছে যে, এর বিষয়বস্তু প্রকাশিত হোক? যেদিন এর বিষয়বস্তু প্রকাশিত হবে, সেদিন পূর্বে যারা একে ভূলে গিয়েছিল, তারা বলবেঃ বাস্তবিকই আমাদের প্রতিপালকের পয়গম্বরগণ সত্যসহ আগমন করেছিলেন। অতএব, আমাদের জন্যে কোন সুপারিশকারী আছে কি যে, সুপারিশ করবে অথবা আমাদেরকে পুনঃ প্রেরণ করা হলে আমরা পূর্বে যা করতাম তার বিপরীত কাজ করে আসতাম। নিশ্চয় তারা নিজেদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তারা মনগড়া যা বলত, তা উধাও হয়ে যাবে। (সুরা আরাফ ৫২-৫৩)
আশা করি আপনার উত্তরটি পেয়েছেন।
এবং আল্লাহই ভালো জানেন।
MRM-3.6
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
আল্লাহ প্রাচীনকাল থেকেই মানবজাতির হেদায়েতের জন্য নবী-রাসুল প্রেরণ করেছেন।প্রথম মানুষ এবং নবী আদম(আ) থেকে এই ধারা শুরু হয়েছে এবং শেষ নবী মুহাম্মাদ(স) দ্বারা এই ধারা শেষ হয়েছে।মানব ইতিহাসের একেবারে শুরু থেকেই আল্লাহ মানুষকে সত্য ধর্ম দিয়েছেন,যার মূল ছিল তাওহীদ বা আল্লাহর একত্ববাদ।আদিকাল থেকেই এই সত্য ইসলাম ধর্ম আল্লাহ মানুষকে নবী-রাসুলের মাধ্যমে দিয়ে আসছেন,আমাদের পূর্ববর্তী জাতিগুলোও মুসলিম নামে অভহীত হত[দেখুনঃ আলি ইমরান ৩:৬৭,আলি ইমরান ৩:৫২,ইউসুস ১২:১০১]; কিন্তু শয়তানের কুপ্ররোরচনায় এবং নিজ নফসের খেয়ালের দ্বারা মানুষ যখনই আল্লাহর দেওয়া একত্ববাদের ধর্ম থেকে বিচ্যুত হয়ে পড়েছে,আল্লাহর সঙ্গে অন্য উপাস্য গ্রহণ করেছে কিংবা আল্লাহর বিধানকে অস্বীকার করেছে,তখনই আল্লাহ পুনরায় নবী-রাসুল পাঠিয়েছেন।যারা তাঁদেরকে মেনেছে,আল্লাহর বিধান মেনেছে,তারা মুক্তি পেয়েছে।আর বাকিরা পূর্ব ধর্মেই রয়ে গেছে,তারা ধ্বংস হয়েছে।পৃথিবীতে এত ধর্ম থাকার কারণ হিসাবে এক কথায় বলা যায় যে,আল্লাহর দেওয়া আদি ধর্ম থেকে বিচ্যুতিই পৃথিবীতে এত ধর্ম থাকার কারণ।
আল্লাহ বলেছেন,
• আপনার পূর্ববর্তী অনেক রাসুলকে মিথ্যা বলা হয়েছে। তাঁরা এতে ছবর করেছেন। তাদের কাছে আমার সাহায্য পৌঁছে পর্যন্ত তারা নির্যাতিত হয়েছেন। আল্লাহর বানী কেউ পরিবর্তন করতে পারে না। আপনার কাছে রাসুলদের কিছু কাহিনী পৌঁছেছে।(সুরা আনআম ৩৪)
প্রত্যেক জাতির নিকট আল্লাহর নবী-রাসুল প্রেরণঃ
এটি কুরআন দ্বারা প্রমাণিত যে আল্লাহ সব সম্প্রদায়ের নিকট রাসুল পাঠিয়েছেন।
• আর প্রত্যেক সম্প্রদায়ের একেকজন রসূল রয়েছে। (সুরা ইউনুস ৪৭)
• প্রত্যেক সম্প্রদায়ের জন্যে পথপ্রদর্শক হয়েছে। (সুরা রা'দ ৭)
• প্রত্যেক যুগের জন্যই (ছিল এক) একটি কিতাব।(রা’দ ৩৮)
অর্থাত,প্রত্যেক সময়ের জন্য কিতাব রয়েছে।আমাদের সময়ের কিতাব কুরআন।
পূর্ববর্তী জাতিগুলোর প্রতি নবী-রাসুল প্রেরণের ব্যাপারে কুরআনে আরো বলা হয়েছে,
• আমি আপনার(মুহাম্মাদ(স)) পূর্বে পূর্ববর্তী সম্প্রদায়ের মধ্যে রসূল প্রেরণ করেছি। (সুরা হিজর ১০)
• আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুত থেকে নিরাপদ থাক। অতঃপর তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যককে আল্লাহ হেদায়েত করেছেন এবং কিছু সংখ্যকের জন্যে বিপথগামিতা অবধারিত হয়ে গেল। সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ মিথ্যারোপকারীদের কিরূপ পরিণতি হয়েছে। (সুরা নাহল ৩৬)
এছাড়া সুরা আরাফ এর ৫৯-১০০ আয়াত পর্যন্ত দেখুন আল্লহ কিভাবে প্রাচীনকালে বিভিন্ন জনপদে নবী পাঠিয়েছেন।সেই জাতিগুলোর কাহিনী এই আয়াতগুলোতে রয়েছে।
পূর্ববর্তী জাতিগুলোর সত্য ধর্ম থেকে বিচ্যুতিঃ
পূর্ববর্তী জাতিগুলোর মধ্যে কেউ কেউ আল্লাহর দেওয়া সত্য তাওহীদের পথ থেকে বার বার বিচ্যুত হয়েছে এবং আজ পর্যন্ত এমন অনেক মানুষ রয়েছে যারা বংশ পরম্পরায় এসব ভ্রান্ত পথের অনুসরণ করে।
• তারা সম্প্রদায়ের সর্দাররা বললঃ আমরা তোমাকে নির্বোধ দেখতে পাচ্ছি এবং আমরা তোমাকে মিথ্যাবাদী মনে করি।(সুরা আরাফ ৬৬)
এইরূপে বহু মানুষ রাসুলদের অস্বীকার করত।অনেকে রাসুলদের অনুসরণ করত।কিন্তু কালের পরিক্রমায় তাঁদের শিক্ষা ভুলে গিয়ে পাপাচারে মত্ত হত।ফলে তারা আল্লহর ধর্ম থেকে খারিজ হয়ে যেত।
• এরাই তারা-নবীগণের মধ্য থেকে যাদেরকে আল্লাহ নেয়ামত দান করেছেন। এরা আদমের বংশধর এবং যাদেরকে আমি নূহের সাথে নৌকায় আরোহন করিয়েছিলাম, তাদের বংশধর, এবং ইব্রাহীম ও ইসরাঈলের বংশধর এবং যাদেরকে আমি পথ প্রদর্শন করেছি ও মনোনীত করেছি, তাদের বংশোদ্ভূত। তাদের কাছে যখন দয়াময় আল্লাহর আয়াতসমূহ পাঠ করা হত, তখন তারা সেজদায় লুটিয়ে পড়ত এবং ক্রন্দন করত।অতঃপর তাদের পরে এল অপদার্থ পরবর্তীরা। তারা নামায নষ্ট করল এবং কুপ্রবৃত্তির অনুবর্তী হল। সুতরাং তারা অচিরেই পথভ্রষ্টতা প্রত্যক্ষ করবে। (মারইয়াম ১৯:৫৮,৫৯)
সত্য ধর্ম থেকে বিচ্যুতির কারণঃ
শয়তান তার কুপ্ররোচণা দিয়ে মানুষকে আল্লাহর পথ থেকে সরিয়ে দিতে চায়।
• সে বললঃ হে আমার পালনকর্তা, আপনি আমাকে পুনরুত্থান দিবস পর্যন্ত অবকাশ দিন।আল্লাহ বললেনঃ তোমাকে অবকাশ দেয়া হল।
সেই অবধারিত সময় উপস্থিত হওয়ার দিন পর্যন্ত।সে বললঃ হে আমার পলনকর্তা, আপনি যেমন আমাকে পথ ভ্রষ্ট করেছেন, আমিও তাদের সবাইকে পৃথিবীতে নানা সৌন্দর্যে আকৃষ্ট করব এবং তাদের সবাইকে পথ ভ্রষ্ঠ করে দেব।আপনার মনোনীত বান্দাদের ব্যতীত।আল্লাহ বললেনঃ এটা আমা পর্যন্ত সোজা পথ।যারা আমার বান্দা, তাদের উপর তোমার কোন ক্ষমতা নেই; কিন্তু পথভ্রান্তদের মধ্য থেকে যারা তোমার পথে চলে।তাদের সবার নির্ধারিত স্থান হচ্ছে জাহান্নাম। (সুরা হিজর ১৫:৩৬-৪৩)
• আল্লাহর কসম, আমি আপনার পূর্বে বিভিন্ন সম্প্রদায়ে রাসূল প্রেরণ করেছি, অতঃপর শয়তান তাদেরকে কর্ম সমূহ শোভনীয় করে দেখিয়েছে। আজ সেই তাদের অভিভাবক এবং তাদের জন্যে রয়েছে যন্ত্রণাদায়ক শাস্তি। (সুরা নাহল ৬৩)
কিন্তু শয়তানের কোন ক্ষমতা নেই বাধ্য করার।তার আধিপত্য সবার উপর নেই।
• তার(শয়তানের) আধিপত্য চলে না তাদের উপর যারা বিশ্বাস স্থাপন করে এবং আপন পালন কর্তার উপর ভরসা রাখে। (সুরা নাহল ৯৯)
মানুষ তার পূর্বপুরুষদের ভিত্তিহীন আচার অনুষ্ঠান দেখে নিজেরাও পথভ্রষ্ট হয়।কিন্তু তাদের ঐ আচার মোটেও আল্লাহর বিধান নয়।
• তারা যখন কোন মন্দ কাজ করে, তখন বলে আমরা বাপ-দাদাকে এমনি করতে দেখেছি এবং আল্লাহও আমাদেরকে এ নির্দেশই দিয়েছেন। আল্লাহ মন্দকাজের আদেশ দেন না। এমন কথা আল্লাহর প্রতি কেন আরোপ কর, যা তোমরা জান না।(সুরা আরাফ ২৮)
কিন্তু তারা ভিত্তিহীন প্রথার অনুসরণ করে।
• বস্তুতঃ তাদের অধিকাংশই শুধু আন্দাজ-অনুমানের উপর চলে, অথচ আন্দাজ-অনুমান সত্যের বেলায় কোন কাজেই আসে না। আল্লাহ ভাল করেই জানেন, তারা যা কিছু করে। (সুরা ইউনুস ৩৬)
মোটকথা,আল্লাহর পথ থেকে ভ্রষ্ট হয়ে গিয়ে মানুষ নিজের প্রবৃত্তির অনুসরণ ও শয়তানের কুপ্ররোচনায় বিভিন্ন রকম পন্থা ও ধর্ম উদ্ভাবন করেছে।এ কারণেই পৃথিবীতে এত প্রকারের ধর্ম।একারণেই ভারত ও চীনে মুসলিমের সংখ্যা কম।তারা(অমুসলিমরা) পূর্বপুরুষের তাওহিদের দ্বীন থেকে বিচ্যুত এবং শেষ নবী মুহাম্মাদ(স) প্রচারিত ধর্মও গ্রহণ করেনি।প্রকৃত সত্য ধর্ম একটিই।কুরআনের আয়াত দ্বারা এটি প্রমাণিত যে প্রতিটি সময়ের জন্যই গ্রন্থ রয়েছে এবং প্রতিটি জাতির নিকটেই রাসুল পৌঁছেছেন।আমাদের একেবারে পূর্ববর্তী যারা আসমানী কিতাব ও নবী পেয়েছে তারা হচ্ছে খ্রিষ্টান জাতি।নবী(স) এর আগমনের মাত্র সাড়ে পাঁচশ বছর আগে নবুয়ত পেয়েছিলেন ঈসা(আ); কিন্তু মাত্র সাড়ে পাঁচশ বছরের মধ্যে তারা ঈসা(আ) এর তাওহীদের ধর্ম থেকে বিচ্যুত হয়ে নতুন এক ধর্মালম্বিতে পরিণত হয়েছিল।তার বহু বছর আগে বহু প্রাচীনকালে যারা নবী পেয়েছিল, বিশাল সময়ে তারা কী পরিমাণ ভ্রষ্ট হয়ে যেতে পারে তা তো অনুমানই করা যেতে পারে।ধর্মগুলোর বৈচিত্র্য দেখেই তা বোঝা যায়।যাহোক,শেষ নবী মুহাম্মাদ(স) সারা পৃথিবীর সব জাতির জন্য রাসুল হয়ে এসেছিলেন।তাঁর প্রচারিত দ্বীন সারা পৃথিবীর মানুষের জন্য,সব জনপদের জন্য।
• আমি তাদের কাছে গ্রন্থ পৌছিয়েছি, যা আমি স্বীয় জ্ঞানে বিস্তারিত বর্ণনা করেছি, যা পথপ্রদর্শক এবং মুমিনদের জন্যে রহমত।তারা কি এখন এ অপেক্ষায়ই আছে যে, এর বিষয়বস্তু প্রকাশিত হোক? যেদিন এর বিষয়বস্তু প্রকাশিত হবে, সেদিন পূর্বে যারা একে ভূলে গিয়েছিল, তারা বলবেঃ বাস্তবিকই আমাদের প্রতিপালকের পয়গম্বরগণ সত্যসহ আগমন করেছিলেন। অতএব, আমাদের জন্যে কোন সুপারিশকারী আছে কি যে, সুপারিশ করবে অথবা আমাদেরকে পুনঃ প্রেরণ করা হলে আমরা পূর্বে যা করতাম তার বিপরীত কাজ করে আসতাম। নিশ্চয় তারা নিজেদেরকে ক্ষতিগ্রস্ত করেছে। তারা মনগড়া যা বলত, তা উধাও হয়ে যাবে। (সুরা আরাফ ৫২-৫৩)
আশা করি আপনার উত্তরটি পেয়েছেন।
এবং আল্লাহই ভালো জানেন।
MRM-3.6
© 2013 by Ask Islam Bangla.