প্রশ্ন ৪১ --> কুরআন স্পর্শ করার পূর্বে ওজু করা কি বাধ্যতামূলক ?
উত্তর :
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
কুরআন পাঠ করার পূর্বে ওজু করা সর্বোত্তম । তবে ওজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা যাবে না এমনটা কেউ বলেন না । আলেমরা সর্বোচ্চ বলেন ওজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা মাকরুহু তাহরীমী বা খুবই অপছন্দনীয় । তবে কেউ এটাকে হারাম প্রমাণ করতে পারেনি । আসুন আমরা কুরআন হাদিসের আলোকে ব্যপারটা জেনে নেই ।
▞ যত্ন সহকারে পড়ুন, তাড়াহুড়ো করবেন না অন্যথায় আপনি পুরো বিষয়টি ধরতে পারবেন না।
✒ ✒ ✒ কুরআন :
• যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না। ( সূরা ওয়াকিয়া :79 )
বস্তুত এই আয়াতটি "অজু করা বা না করা" এই প্রসঙ্গে নাজিল হয়নি, যা আয়াতের শানে নুযুল হতে স্পষ্টভাবে বুঝা যায়।তাফসীর ইবনে কাসির,তাবারি সহ প্রখ্যাত তাফসীরকারকদের মতে,যখন জিবরীল আমীন রাসুলুল্লাহ সাঃ নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে ওহী নিয়ে অবতরণ হচ্ছিলেন, তখন মক্কার কাফেরেরা রাসূল (সা) নামে অপপ্রচার শুরু করল যে,এই মহা পবিত্র ওহী আল-কুরআন আল্লাহর পক্ষ হতে নয় বরং শয়তানের নিকট হতে অবতীর্ণ হয় নাউজুবিল্লাহ।যার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা তাদের মিথ্যা বিবৃতির জবাবস্বরূপ এই আয়াতগুলো নাযিল করেন-
• যা আছে এক গোপন কিতাবে, (78) যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না। (79) এটা বিশ্ব-পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। (80) [সূরা ওয়াকিয়া]
"কিতাবুন মাকনুন" মানে সুরক্ষিত কিতাব। এটা প্রিন্টেড বইকে নির্দেশ করে না বরং লাউহে মাহফুযকে নির্দেশ করে। পাশাপাশি "মুতাহহিরিন" শব্দটি শারীরিক পবিত্রতা নয় বরং পাপ ও খারাপ কাজ হতে পবিত্রতা নির্দেশ করে । যা একমাত্র ফেরেশতাগণদের দ্বারাই সম্ভব। তাবারী বলেন মুতাহহিরিন মানে ফেরেশতা। লাউহে মাহফুয সম্পর্কে আরেকটি আয়াত-
• বরং এটা মহান কোরআন, (21) লওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ। (22) [সূরা বুরুজ]
যেহেতু কুরআনের এই আয়াত দলিল হিসেবে উপযুক্ত নয় তাই কেউ কেউ কিছু হাদিসের উল্লেখ করেন।
✒ ✒ হাদিস:
ইবনে হাযমের মতে,ওযুকে বাধ্যতামূলক প্রমাণের জন্য কোন গ্রহণযোগ্য হাদিস নেই । এ বিষয়ে যেসব হাদিস রয়েছে তাও দুর্বল।
১.
***ফিকহ উস সুন্নাহ খন্ড ১, পবিত্রতা ও নামায, সেকশন ২: ওযু***
আবু বকর ইবনে মাহমুদ তার পিতার মাধ্যমে দাদা হতে বর্নণা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) ইয়েমেন বাসীর নিকট একটি পত্র প্রেরণ করেছিলেন যাতে লেখাছিল, "কেউই পবিত্র না হয়ে কুরআন স্পর্শ করবে না।"
আন নাসাঈ, আদ দারাকুতনি, আল বায়হাকি ও আল আতরামে এই হাদিসটি বর্ণিত। হাদিসটির সনদ সম্পর্কে ইবনে আবদুল বার বলেন, "এর সনদ ঠিক আছে বলে মনে হয়।"
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর বলেন রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন ," কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত।
আল হাইতামি "মজমা আজ জাওইদ" কিতাবে এটা উল্লেখ করেন এবং বলেন এর বর্নণাকারীগণ বিশ্বাসযোগ্য।বস্তুত এই হাদিসে একটি সমস্যা আছে।এখানে "পবিত্র হওয়া" শব্দটি একটি বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে। যারফলে, ছোট অপবিত্রতাতেও কুরআন স্পর্শ করা যাবে না, এমনটি বলার কোন মানেই হয় না।
আল্লাহর বাণী,
• "........যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না[ ওয়াকিয়া ৭৯]
এখানে সেই লুকানো কিতাবটি( আগের আয়াত হতে)হচ্ছে "সংরক্ষিত কিতাব" আর "পবিত্ররা" হল ফেরেশতা;এটাই নির্দেশ করে । এটা অনেকটা এই আয়াতের মত -
• এটা লিখিত আছে সম্মানিত, (13) উচ্চ পবিত্র পত্রসমূহে, (14) লিপিকারের হস্তে, (15) যারা মহৎ, পূত চরিত্র। (16) [ সূরা আবাসা]
ইবনে আব্বাস, আশসাবি. আজ জাহাক, জাইদ ইবনে আলি, আল মুআইয়াদ বিল্লাহ, দাউদ, ইবনে হাজম এবং হাম্মাদ ইবনে আবু সুলাইমান প্রমুখের মতে,ছোট অপবিত্রতায় যে কেউ কুরআন স্পর্শ করতে পারবে। তবে প্রায় সব আলেম একমত যে, একজন ওজু ছাড়াও মুখে মুখে কুরআন তিলাওয়াত করতে পারবে ।
২. কেউ কেউ হযরত ওমন বিন খাত্তাব (রা) এর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা উল্লেখ করেন যেখানে তিনি সূরা তাহা পড়ার পূর্বে পরিচ্ছন্ন হয়ে ছিলেন।
উত্তর : কয়েকটি প্রশ্ন আসবে ঘটনাটি শোনার পর ।
* তিনি ওযু বা গোসলে ছিলেন কিনা ?
* যদিও থেকে থাকেন তবে তিনি কিভাবে সঠিক পদ্ধতি জেনেছিলেন ?
আরেকটি কথা :
যদি কুরআন এমপিথ্রি প্লেয়ার, মোবাইল, পিসি, লাপটপে থাকে তখন? এগুলো চালানোর বা বহনের পূর্বে কি ওযু করতে হবে ?আজকের প্রযুক্তি কাগজ কলম, কিছুদিন পর হয়ত আমরা এগুলো আর ব্যবহার করব না । শুধু টাচস্ক্রিন থাকবে তখন । কুরআন এসব ডিভাইসে ইনস্টল করা থাকবে এবং তারা হবে "মুসাফের" নতুন রূপ । এমকি ইলেক্ট্রনিক চিপ আমাদের শরীরের ভিতরেও প্রবেশ করানো যেতে পারে, যাতে কুরআন ইনস্টল করা থাকবে। তখন আপনি উক্ত আয়াতটিকে কিভাবে বুঝবেন ?
অবশেষে অমুসলিমদের কুরআন দেবার ক্ষেত্রে :
অমুসলিমদের অবশ্যই কুরআন দেওয়া যাবে । আর এটা হচ্ছে অমুসলিম,অবিশ্বাসীদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ যে, পারলে তারা কুরআনের অনুরূপ একটি আয়াত রচনা করে দেখাক।
ইনশাআল্লাহ এই বিষয়ে আপনার সব ভুল ধারণার অবসান হয়েছে।
See Tafsir
Fiqh-us-Sunnah Volume 001, Purification and Prayer, Fiqh 1.040A.
Islam QA - Ruling on a person touching the Qur’aan without wudoo’
STA-24.64
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
কুরআন পাঠ করার পূর্বে ওজু করা সর্বোত্তম । তবে ওজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা যাবে না এমনটা কেউ বলেন না । আলেমরা সর্বোচ্চ বলেন ওজু ছাড়া কুরআন স্পর্শ করা মাকরুহু তাহরীমী বা খুবই অপছন্দনীয় । তবে কেউ এটাকে হারাম প্রমাণ করতে পারেনি । আসুন আমরা কুরআন হাদিসের আলোকে ব্যপারটা জেনে নেই ।
▞ যত্ন সহকারে পড়ুন, তাড়াহুড়ো করবেন না অন্যথায় আপনি পুরো বিষয়টি ধরতে পারবেন না।
✒ ✒ ✒ কুরআন :
• যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না। ( সূরা ওয়াকিয়া :79 )
বস্তুত এই আয়াতটি "অজু করা বা না করা" এই প্রসঙ্গে নাজিল হয়নি, যা আয়াতের শানে নুযুল হতে স্পষ্টভাবে বুঝা যায়।তাফসীর ইবনে কাসির,তাবারি সহ প্রখ্যাত তাফসীরকারকদের মতে,যখন জিবরীল আমীন রাসুলুল্লাহ সাঃ নিকট আল্লাহর পক্ষ হতে ওহী নিয়ে অবতরণ হচ্ছিলেন, তখন মক্কার কাফেরেরা রাসূল (সা) নামে অপপ্রচার শুরু করল যে,এই মহা পবিত্র ওহী আল-কুরআন আল্লাহর পক্ষ হতে নয় বরং শয়তানের নিকট হতে অবতীর্ণ হয় নাউজুবিল্লাহ।যার পরিপ্রেক্ষিতে আল্লাহ তায়ালা তাদের মিথ্যা বিবৃতির জবাবস্বরূপ এই আয়াতগুলো নাযিল করেন-
• যা আছে এক গোপন কিতাবে, (78) যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না। (79) এটা বিশ্ব-পালনকর্তার পক্ষ থেকে অবতীর্ণ। (80) [সূরা ওয়াকিয়া]
"কিতাবুন মাকনুন" মানে সুরক্ষিত কিতাব। এটা প্রিন্টেড বইকে নির্দেশ করে না বরং লাউহে মাহফুযকে নির্দেশ করে। পাশাপাশি "মুতাহহিরিন" শব্দটি শারীরিক পবিত্রতা নয় বরং পাপ ও খারাপ কাজ হতে পবিত্রতা নির্দেশ করে । যা একমাত্র ফেরেশতাগণদের দ্বারাই সম্ভব। তাবারী বলেন মুতাহহিরিন মানে ফেরেশতা। লাউহে মাহফুয সম্পর্কে আরেকটি আয়াত-
• বরং এটা মহান কোরআন, (21) লওহে মাহফুযে লিপিবদ্ধ। (22) [সূরা বুরুজ]
যেহেতু কুরআনের এই আয়াত দলিল হিসেবে উপযুক্ত নয় তাই কেউ কেউ কিছু হাদিসের উল্লেখ করেন।
✒ ✒ হাদিস:
ইবনে হাযমের মতে,ওযুকে বাধ্যতামূলক প্রমাণের জন্য কোন গ্রহণযোগ্য হাদিস নেই । এ বিষয়ে যেসব হাদিস রয়েছে তাও দুর্বল।
১.
***ফিকহ উস সুন্নাহ খন্ড ১, পবিত্রতা ও নামায, সেকশন ২: ওযু***
আবু বকর ইবনে মাহমুদ তার পিতার মাধ্যমে দাদা হতে বর্নণা করেন যে, রাসূলুল্লাহ (সা) ইয়েমেন বাসীর নিকট একটি পত্র প্রেরণ করেছিলেন যাতে লেখাছিল, "কেউই পবিত্র না হয়ে কুরআন স্পর্শ করবে না।"
আন নাসাঈ, আদ দারাকুতনি, আল বায়হাকি ও আল আতরামে এই হাদিসটি বর্ণিত। হাদিসটির সনদ সম্পর্কে ইবনে আবদুল বার বলেন, "এর সনদ ঠিক আছে বলে মনে হয়।"
আবদুল্লাহ ইবনে ওমর বলেন রাসূলুল্লাহ (সা) বলেন ," কেউ কুরআন স্পর্শ করবে না পবিত্র না হওয়া পর্যন্ত।
আল হাইতামি "মজমা আজ জাওইদ" কিতাবে এটা উল্লেখ করেন এবং বলেন এর বর্নণাকারীগণ বিশ্বাসযোগ্য।বস্তুত এই হাদিসে একটি সমস্যা আছে।এখানে "পবিত্র হওয়া" শব্দটি একটি বিশেষ অর্থ প্রকাশ করে। যারফলে, ছোট অপবিত্রতাতেও কুরআন স্পর্শ করা যাবে না, এমনটি বলার কোন মানেই হয় না।
আল্লাহর বাণী,
• "........যারা পাক-পবিত্র, তারা ব্যতীত অন্য কেউ একে স্পর্শ করবে না[ ওয়াকিয়া ৭৯]
এখানে সেই লুকানো কিতাবটি( আগের আয়াত হতে)হচ্ছে "সংরক্ষিত কিতাব" আর "পবিত্ররা" হল ফেরেশতা;এটাই নির্দেশ করে । এটা অনেকটা এই আয়াতের মত -
• এটা লিখিত আছে সম্মানিত, (13) উচ্চ পবিত্র পত্রসমূহে, (14) লিপিকারের হস্তে, (15) যারা মহৎ, পূত চরিত্র। (16) [ সূরা আবাসা]
ইবনে আব্বাস, আশসাবি. আজ জাহাক, জাইদ ইবনে আলি, আল মুআইয়াদ বিল্লাহ, দাউদ, ইবনে হাজম এবং হাম্মাদ ইবনে আবু সুলাইমান প্রমুখের মতে,ছোট অপবিত্রতায় যে কেউ কুরআন স্পর্শ করতে পারবে। তবে প্রায় সব আলেম একমত যে, একজন ওজু ছাড়াও মুখে মুখে কুরআন তিলাওয়াত করতে পারবে ।
২. কেউ কেউ হযরত ওমন বিন খাত্তাব (রা) এর ইসলাম গ্রহণের ঘটনা উল্লেখ করেন যেখানে তিনি সূরা তাহা পড়ার পূর্বে পরিচ্ছন্ন হয়ে ছিলেন।
উত্তর : কয়েকটি প্রশ্ন আসবে ঘটনাটি শোনার পর ।
* তিনি ওযু বা গোসলে ছিলেন কিনা ?
* যদিও থেকে থাকেন তবে তিনি কিভাবে সঠিক পদ্ধতি জেনেছিলেন ?
আরেকটি কথা :
যদি কুরআন এমপিথ্রি প্লেয়ার, মোবাইল, পিসি, লাপটপে থাকে তখন? এগুলো চালানোর বা বহনের পূর্বে কি ওযু করতে হবে ?আজকের প্রযুক্তি কাগজ কলম, কিছুদিন পর হয়ত আমরা এগুলো আর ব্যবহার করব না । শুধু টাচস্ক্রিন থাকবে তখন । কুরআন এসব ডিভাইসে ইনস্টল করা থাকবে এবং তারা হবে "মুসাফের" নতুন রূপ । এমকি ইলেক্ট্রনিক চিপ আমাদের শরীরের ভিতরেও প্রবেশ করানো যেতে পারে, যাতে কুরআন ইনস্টল করা থাকবে। তখন আপনি উক্ত আয়াতটিকে কিভাবে বুঝবেন ?
অবশেষে অমুসলিমদের কুরআন দেবার ক্ষেত্রে :
অমুসলিমদের অবশ্যই কুরআন দেওয়া যাবে । আর এটা হচ্ছে অমুসলিম,অবিশ্বাসীদের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ যে, পারলে তারা কুরআনের অনুরূপ একটি আয়াত রচনা করে দেখাক।
ইনশাআল্লাহ এই বিষয়ে আপনার সব ভুল ধারণার অবসান হয়েছে।
See Tafsir
Fiqh-us-Sunnah Volume 001, Purification and Prayer, Fiqh 1.040A.
Islam QA - Ruling on a person touching the Qur’aan without wudoo’
STA-24.64
© 2013 by Ask Islam Bangla.