প্রশ্ন ১৩৮ --> রাসূল(সাঃ) কে বিদ্রুপকারীর বিধান কি?
উত্তর :
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
প্রথমতঃ এটি হচ্ছে মুসলিমদের জন্য আসন্ন বিজয়ের লক্ষণ
প্রত্যেক মুসলিম আমরা যারা ইসলামের জন্য গর্ববোধ করি তাদের হৃদয় ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায় যখন আমরা শুনি যে, কিছু মূর্খ-জাহিল এই পৃথিবীর বুকে পদচারণ করে যাওয়া সর্বশ্রেষ্ঠ মানব মুহাম্মাদ(সাঃ) যিনি কিনা পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সকল উম্মতের নেতা; তাকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ ও কটুক্তি করেছে। এবং কাফিরদের পক্ষ থেকে এরূপ ভয়াবহ অপরাধ এই-ই প্রথম নয় বরং এটা তাদের পূর্বতন স্বভাব; ইসলামের সূচনা লগ্ন থেকে চলে আসা একটি সংক্রামক রোগ।
যদিও এমন কাজ আমাদের হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করে এবং আমাদের মধ্যে ক্রোধের আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং যার প্রতিশোধ আমরা নিজেদের জীবনের পরোয়া পর্যন্ত করি না, তবুও এটা হচ্ছে এসকল কুফফার শক্তির আসন্ন পরাজয়ের লক্ষণ। কেননা আল্লাহ সুবহান ওয়া তা'আলা আল-কুর'আনে উল্লেখ করেছেন,
"বিদ্রুপকারীদের জন্যে আমিই আপনার পক্ষ থেকে যথেষ্ট।" [সুরা আল হিজরঃ ৯৫]
"যে আপনার শত্রু, সেই তো লেজকাটা, নির্বংশ।" [সুরা আল কাউসারঃ ৩]
"অনেক নির্ভরযোগ্য মুসলিম (যারা অভিজ্ঞ এবং ফকীহ) বেশীরভাগ সময়ই তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন যখন তারা শামের শহর, দূর্গ এবং খ্রিষ্টানদের আবদ্ধ করে রেখেছিলেন; তারা বলেছেন যে, আমরা কোন শহর অথবা দূর্গকে মাসাধিককাল ধরে আবদ্ধ করে রেখেছিলাম। আমাদের অবরোধে তাদের কিছুই করার ছিল না কিন্তু দীর্ঘ সময়ের জন্য আমরা প্রায়ই তাদেরকে ত্যাগ করে ফিরে যাবার অবস্থায় ছিলাম। এরপর যখনি আমরা শুনলাম যে, তারা আল্লাহর রসূল(সাঃ)-কে অভিশাপ দিতে শুরু করেছে; আমরা এটাকে বিজয়ের লক্ষণ হিসেবে গ্রহণ করলাম। কেননা আল্লাহ তার রাসূলের অপমানের প্রতিশোধ গ্রহণে খুব দ্রুতই বিজয় দান করবেন।" [আল শারিম আল মাসলুলঃ ১১৬-১১৭]
দ্বিতীয়তঃ রাসূল(সাঃ) কে অপমানকারী ব্যক্তির ক্ষেত্রে শরীয়তের হুকুমঃ
‘আলিমগণ এই বিষয়ে সর্বসম্মতভাবে একমত যে, যদি কোন মুসলিম রাসূল(সাঃ) কে অপমান করে, তবে সে ব্যক্তি কাফির, মুরতাদ এবং তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করতে হবে। একাধিক ‘আলিম থেকে এই ইজমা বর্ণিত হয়েছে যেমন, ইমাম ইসহাক ইবন রাহাওয়ি, ইবন আল-মুনযির, আল-কাজি ‘ইয়াদ, আল-খাত্তাবি এবং অন্যান্য। [আল-সারিম আল-মাসলুল, ২/১৩-১৬]
কুর’আন এবং সুন্নাহ থেকেও এই হুকুমের পক্ষে দলিল পাওয়া যায়।
পবিত্র কুর’আনে বলা হচ্ছে-
“মুনাফিকরা আশংকা প্রকাশ করে, তোমাদের উপর এমন কোন সূরা নাযিল হয়ে পড়ে কিনা, যা তাদের মনের সবকিছু ফাঁস করে দিবে; তুমি বলো, তোমরা বিদ্রূপ করে নাও! নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু প্রকাশ করে দিবেন, যার আশংকা তোমরা করছো।
তুমি যদি তাদের প্রশ্ন করো, তারা বলবে, আমরা তো একটু অযথা কথাবার্তা ও হাসিঠাট্টা করছিলাম মাত্র। তুমি বলো, তোমরা কি তবে আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলকে বিদ্রূপ করছিলে?
তোমরা দোষ ছাড়ানোর চেষ্টা করো না, ঈমান আনার পর তোমরা পূনরায় কাফির হয়ে গেছো; ..." [সূরা তওবা, ৬৪-৬৬]
এই আয়াতে পরিষ্কার বলা হয়েছে আল্লাহ, তাঁর আয়াত এবং তাঁর রাসূলকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করা কুফর, সুতরাং এই বিষয়গুলো নিয়ে অপমানসূচক কথা বলা তো আরো বড় অপরাধ। এই আয়াত থেকে আরো প্রমাণ পাওয়া যায় যে, যদি কেউ রাসূল(সাঃ) কে খাটো করে, তবে সেও কাফির; চাই তা সত্যিকার অর্থেই হোক কিংবা মজা করার জন্য।
যদি আমরা সুন্নাহর দিকে তাকাই, তবে আবু দাউদ [৪৩৬২] 'আলি থেকে একজন ইহুদি নারীর ঘটনা বর্ণনা করেছেন, যে নারী রাসূল(সাঃ) কে অপমান করতো এবং তাঁর নামে কটূক্তি করতো। এই কারণে এক ব্যক্তি তার শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করে এবং রাসূল(সাঃ) এক্ষেত্রে কোন রক্তমূল্য ধার্য করেননি।'
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ আল-সারিম আল-মাসলুলে বলেছেন [১/১৬২], হাদিসটি যায়্যিদ, এবং এই হাদিসটির সমর্থনে ইবন আব্বাস থেকে বর্ণিত একটি হাদিস পাওয়া যায়, যা আমরা পরবর্তীতে তুলে ধরবো।
এই হাদিস থেকে পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত হয় যে, রাসূল(সাঃ) কে অপমান করার কারণে ঐ নারীকে হত্যা করা বৈধ ছিল।
আবু দাউদ [৪৩৬১] ইবন আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন যে, একজন অন্ধ ব্যক্তির অধীনে একজন দাসী (উম্মু ওয়ালাদ) ছিলো। এই মহিলা রাসূল(সাঃ) কে অভিশাপ দিতো এবং তাকে সাবধান করার পরও সে বিরত হতো না। এক রাতে সে রাসূল(সাঃ) কে অভিশাপ দিতে শুরু করলে, সেই অন্ধ ব্যক্তি একটি ছুরি নিয়ে তার পেটে বিদ্ধ করলেন এবং ভিতরে চাপ দিতে লাগলেন যতক্ষণ না তার মৃত্যু হয়। সকালে রাসূল(সাঃ) এর কাছে খবর পৌছালো। রাসূল(সাঃ) লোকজনকে একত্রিত করে বললেন, আমি আল্লাহর নামে তোমাদের আদেশ করছি, যে কাজটি করেছো উঠে দাঁড়াও। অন্ধ ব্যক্তিটি উঠে দাঁড়ালেন এবং হেঁটে রাসূল(সাঃ) এর সামনে এসে বসে পড়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমিই সেই ব্যক্তি যে কাজটি করেছে। সে আপনাকে অভিশাপ দিতো এবং তাকে বিরত থাকার কথা বলার পরও সে বিরত হতো না। তার থেকে আমার মুক্তার মত দুটি সন্তান আছে এবং সে আমার প্রতি খুব সদয় ছিলো। কিন্তু গত রাতে সে আপনাকে অভিশাপ দিতে লাগলো। তাই আমি একটি ছুরি নিয়ে তার পেটে ঢুকিয়ে দিলাম এবং মৃত্যু না পর্যন্ত তা চেপে ধরে রাখলাম। রাসূল(সাঃ) বললেন, জেনে রেখো, তার জন্য কোন রক্তমূল্য নেই”। [আলবানি-সাহিহ আবু দাউদ, ৩৬৫৫]
হাদিসের বর্ণনা শুনে মনে হয়, এই মহিলা সম্ভবত কাফির ছিল, মুসলিম নয়। কারণ কোন মুসলিমের পক্ষে এ ধরনের হীন কাজ করা সম্ভব নয়। কিন্তু যদি সে মুসলিমও হতো, এই কাজের কারণে সে মুরতাদ হয়ে যেতো এবং তার মালিকের জন্য তাকে রাখা আর বৈধ হতো না। এবং সেক্ষেত্রে তার মালিকের জন্য তাকে নিজের কাছে রেখে শুধুমাত্র সাবধান করাই যথেষ্ট বলে গণ্য হতো না।
আন-নাসাঈ [৪০৭১] আবু বারযাহ আল-আসলামি থেকে বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি আবু বাকর আস-সিদ্দিকের সাথে কর্কশ ভাষায় কথা বললে আমি বললাম, আমি কি তাকে হত্যা করবো? তিনি আমাকে তিরস্কার করলেন এবং বললেন, রাসূল(সাঃ)-এর পর আর কারো জন্য তা প্রযোজ্য নয়। [সাহিহ আন-নাসাঈ, ৩৭৯৫]
এই বর্ণনা থেকে বুঝা যায়, রাসূল(সাঃ) এর এই অধিকার ছিল যে, কেউ তাঁকে অপমান করলে কিংবা তাঁর সাথে কর্কশ ভাষায় কথা বললে তিনি তাকে হত্যা করতে পারতেন, সে কাফির হোক কিংবা মুসলিম।
তৃতীয়তঃ রাসূল(সাঃ) কে অপমানকারী ব্যক্তি যদি তওবা করে, তবে তার তওবা কবুল হবে কি হবে নাঃ
‘আলিমগণ একমত যে, যদি এ ধরনের কোন ব্যক্তি আন্তরিকভাবে তওবা করে এবং তার কাজের জন্য লজ্জিত হয়, তবে কিয়ামতের দিন তা তার জন্য লাভজনক হবে এবং আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন। কিন্তু এই পৃথিবীতে তার তওবা গ্রহণযোগ্য হবে কিনা এবং তার শাস্তি রহিত হবে কিনা, এই বিষয়ে ‘আলিমগণ ভিন্নমত পোষণ করেছেন।
ইমাম মালিক এবং আহমাদের মতে তা গ্রহণযোগ্য হবে না এবং তওবা করার পরও তাকে হত্যা করতে হবে। তারা নিচের হাদিসসমূহ দলিলস্বরূপ পেশ করেছেন-
আবু দাউদ [২৬৮৩] থেকে বর্ণিত, সা’দ ইবন আবি ওয়াক্কাস বলেছেন, মক্কা বিজয়ের দিন রাসূল(সাঃ) সবার জন্য নিরাপত্তার ঘোষণা দিয়েছিলেন, চার জন পুরুষ এবং দুইজন মহিলা ব্যতীত; এরপর তিনি তাদের নাম বললেন... এবং ইবন আবি সারহ। আর ইবন আবি সারহ, উসমান ইবন আফফানের সাথে লুকিয়ে ছিলো। যখন রাসূল(সাঃ) লোকেদের বাইয়াতের জন্য ডাকলেন, তিনি (উসমান) তাকে সাথে করে রাসূল(সাঃ) এর সামনে হাজির হলেন এবং বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল! আব্দুল্লাহর বাইয়াত গ্রহণ করুন”। তিনি তিনবার তাঁর মাথা উঠালেন এবং তার দিকে তাকিয়ে বাইয়াত গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালেন। তৃতীয়বারে তিনি বাইয়াত গ্রহণ করলেন। তারপর তিনি তাঁর সাহাবীদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “যখন আমি তাকে নিজের হাত বাড়িয়ে দিতে এবং বাইয়াত গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালাম, তোমাদের মধ্যে কি এমন কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি ছিলো না, যে এই লোককে হত্যা করতে পারতে?” তারা বললো, “হে আল্লাহর রাসূল, আপনার অন্তরে কী আছে তা আমরা বুঝতে পারিনি। আপনি কেন আমাদের চোখ দিয়ে ইশারা করলেন না?” তিনি জবাব দিলেন, “চোখ দিয়ে ইশারার মাধ্যমে কোন ব্যক্তিকে ধোঁকা দেয়া একজন নবীর জন্য শোভনীয় নয়”। [সাহিহ আবু দাউদ, ২৩৩৪]
এই হাদিস থেকে এটি সুস্পষ্ট যে, এখানে যে মুরতাদ ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, এমন ব্যক্তির তওবা গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক নয়, বরং সে তওবা করার পরও তাকে হত্যা করা বৈধ।
আবদুল্লাহ ইবন সা’দ ছিলেন একজন ওহী লেখক, কিন্তু পরবর্তীতে তিনি মুরতাদ হয়ে যান এবং দাবি করেন যে, তিনি লেখার সময় ওহীর সাথে তার ইচ্ছামত কথা জুড়ে দিতেন। এটি ছিল রাসূল(সাঃ) এর প্রতি মিথ্যা আরোপ এবং এক ধরনের অবমাননা। পরবর্তীতে অবশ্য তিনি আবার মুসলিম হয়ে যান এবং অত্যন্ত ভালো মুসলিম ছিলেন, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন। [আল-সারিম, ১১৫]
এই হাদিসটির সঠিক ব্যাখ্যা হলো-
রাসূল(সাঃ) এর প্রতি কোন অবমাননার ক্ষেত্রে দু’ধরনের অধিকার লঙ্ঘন করা হয়; আল্লাহর অধিকার এবং বান্দার অধিকার। আল্লাহর অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি সুস্পষ্ট; কারণ এক্ষেত্রে তাঁর আয়াত, তাঁর কিতাব এবং তাঁর নাযিলকৃত ধর্মের উপর নিন্দা আরোপ করা হচ্ছে। আর বান্দার অধিকারের বিষয়টিও সুস্পষ্ট; কারণ রাসূল(সাঃ) কে অপমান করা, তাঁর উপর মিথ্যা আরোপ করার শামিল। যেক্ষেত্রে আল্লাহর হক্ব এবং বান্দার হক্ব উভয়ই জড়িত থাকে, সেক্ষেত্রে অপরাধী ব্যক্তি তওবা করলেই বান্দার হক্ব লঙ্ঘনের শাস্তি মাফ হয়ে যায় না। উদাহরণস্বরূপ, ডাকাতি করার শাস্তির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে, যদি একজন দস্যু কোন মানুষকে খুন করে, তবে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু যদি সে দস্যু ধরা পড়ার আগেই তওবা করে, তাহলে আল্লাহর যে হক্ব অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড আর কার্যকরী নয়। কিন্তু অন্যান্য মানুষের যে হক্ব অর্থাৎ ক্বিসাসের হুকুম তখনও কার্যকরী থাকে। এক্ষেত্রেও ঠিক একই ধরনের হুকুম প্রযোজ্য। যদি কোন ব্যক্তি রাসূল(সাঃ)-কে অপমান করার পর তওবা করে, তবে আল্লাহর হক্ব লঙ্ঘনের বিষয়টি আর উপস্থিত নয় কিন্তু রাসূল(সাঃ) এর হক্ব লঙ্ঘনের বিষয়টি তার তওবা করার পরও নিষ্পত্তি হয়ে যায়নি।
যদি কেউ বলে, “আমরা কি তাকে ক্ষমা করে দিতে পারি না? কারণ রাসূল(সাঃ) তাঁর জীবদ্দশায় তো অনেককে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন”। এই কথার জবাব হলো-
রাসূল(সাঃ) তাঁর উদ্দেশ্যে কটূক্তিকারীদের কাউকে কখনও ক্ষমা করে দিয়েছেন আবার কখনও করেননি। কিন্তু এখন তাঁর মৃত্যুর পর, তাঁর ক্ষমা করার বিষয়টি আর জেনে নেয়া সম্ভব নয় এবং অন্যদিকে এই মৃত্যুদণ্ড আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনদের হক্ব হিসেবে বিদ্যমান। তাই এই শাস্তি অবশ্যই কার্যকর করতে হবে। [আল-সারিম আল-মাসলুল, ২/৪৩৮]
রাসূল(সাঃ) কে অপমান করা হারাম কাজসমূহের মাঝে একটি নিকৃষ্টতম কাজ এবং ‘আলিমগণের ইজমা রয়েছে যে, এটি এমন কুফর যা একজনকে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের করে দেয়, তা সে উদ্দেশ্যকৃতভাবেই করুক কিংবা ঠাট্টাচ্ছলে। সে ব্যক্তি মুসলিমই হোক আর কাফির, সে তওবা করার পরও তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করতে হবে। যদি সে ব্যক্তি আন্তরিকভাবে তওবা করে এবং তার কাজের জন্য লজ্জিত হয়, তবে কিয়ামতের দিন তা তার জন্য লাভজনক হবে এবং আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহিমাহুল্লাহ এই বিষয়ে অত্যন্ত মূল্যবান একটি বই লিখেছেন, যার নাম ‘আল-সারিম আল-মাসলুল ‘আলা শাতিম আর-রাসূল’। এই বইটি প্রত্যেক মুমিনের পড়া উচিত; বিশেষত সাম্প্রতিক সময়ে যখন মুনাফিক আর নাস্তিকের দল রাসূল(সাঃ) কে নিয়ে কটূক্তি করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। কারণ তারা দেখতে পাচ্ছে, মুসলিমরা আজ ভাবলেশহীন এবং নিজেদের ধর্ম আর রাসূলের প্রতি যে গিরাহ, তা তারা হারিয়ে ফেলেছে। এবং মুসলিমরা আজ শার’ঈ শাস্তি বাস্তবায়ন করছে না, যা এই সকল লোকেদের এই ধরনের সুস্পষ্ট কুফরী কাজের পুনরাবৃত্তি করা থেকে বিরত রাখতো।
চতুর্থতঃ কেউ রাসুলের (সাঃ) অপমান করলে তাদের জবাব দেয়া কি জরুরী?
রাসুল(সাঃ) কে অপমান করা এক ধরনের কুফর যা কোন মুসলিম করে থাকলে সেটা তাকে দ্বীন থেকে বের করে দেয় এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের (শাসকদের) উচিত যে এই কাজটি করেছে তাকে হত্যার মাধ্যমে আল্লাহতা’আলা ও তাঁর রাসুলের (সাঃ) এই বিষয়টিকে প্রতিরোধ করা। যদি অপমানকারী জনসম্মুখে এবং সত্যিকার অর্থেই কেউ তওবাহ করে এ কাজের জন্য তবে আল্লাহতা’আলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন কিন্তু সেটা তার শাস্তিকে মোটেই কমাবে না, আর এই শাস্তিটি হচ্ছে হত্যা করা।
যদি অপমানকারী মুসলিমদের সাথে চুক্তিবদ্ধ কোন অমুসলিম হয়ে থাকে তবে তৎক্ষণাৎ তার সেই চুক্তি ভেঙ্গে যাবে এবং তাকে অবশ্যই হত্যা করতে হবে কিন্তু এই দ্বায়িত্বটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়া উচিত। যদি কোন মুসলিম কোন খ্রিস্টান বা অন্য কাউকে রাসুল (সাঃ) কে অপমান করতে দেখে তবে তাকে কঠোর ভাষায় তাকে তিরষ্কার করতে হবে। সে লোককে তিরষ্কার করা অনুমোদিত কারন সেই প্রথম এটা শুরু করেছে। এটা কীভাবে সম্ভব যে রাসুলের (সাঃ) সম্মানে আমরা চুপ করে বসে থাকবো? যথাযথ কর্তৃপক্ষ যে তাকে শাস্তি দিতে পারবে তাকে বিষয়টি জানানো ওয়াজিব। যদি এমন কেউ না থাকে যে আল্লাহ ও তার রাসুলের (সাঃ) নির্ধারিত “হাদ শাস্তি” [এক্ষেত্রে মৃত্যুদন্ড] দিতে পারবে, তবে একজন মুসলিমকে সে যতটুকু পারে ততটুকুই করে যেতে হবে যতক্ষণ না পর্যন্ত অন্য কেউ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। কিন্তু যদি একজন মুসলিম কোন কাফিরকে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে ব্যঙ্গ করতে শোনে এবং চুপ থাকে এই ভয়ে যে ঐ লোক হয়ত আরও বেশি করে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করবে তবে তার এই চিন্তাভাবনা ভুল। এই আয়াতটি,
“আর তারা আল্লাহ ছাড়া অন্য যাদের ইবাদত করে তাদেরকে মন্দ বলো না, সেক্ষেত্রে তারাও আল্লাহকে ভুলবশত অজ্ঞতার কারনে গালি দেবে।“ [সুরা আল আনাম ৬,১০৮]
এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় যেখানে তারাই আল্লাহ ও তার রাসুলকে (সাঃ) প্রথমে বিদ্রুপ করা শুরু করেছে। বরং এখানে বোঝানো হয়েছে যে মুশরিকদের দেবতাদেরকে প্রথমে মন্দ বলা হারাম কারন তারাও না জেনে আল্লাহ সম্পর্কে সেক্ষেত্রে বাজে মন্তব্য করবে। কিন্তু যদি তারাই প্রথমে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ)কে বিদ্রুপ করা শুরু করে, তখন আমাদেরকে অবশ্যই জবাব দিতে হবে এবং তাদেরকে শাস্তি দিতে হবে এমনভাবে যেন তা তাদের শত্রুতা ও কুফর থেকে বিরত করে। যদি আমরা কাফির ও নাস্তিকদেরকে তিরষ্কার ও শাস্তি না দিয়ে তাদের ইচ্ছেমত বলে যেতে দেই যেটা তারা ভালবাসে তবে অনেক বড় ফিতনা সৃষ্টি হবে।
তাদের কথায় মোটেই পাত্তা দেয়া যাবে না যারা বলে যে তাদেরকে অপমান করলে এবং তাদের কথার প্রতিবাদ করলে তাদের একগুয়েমী আরও বাড়বে। একজন মুসলিমের অবশ্যই প্রতিরোধমূলক ঈর্ষাবোধ থাকতে হবে এবং আল্লাহতা’আলার সন্তুষ্টির জন্য এ বিষয়ে তাকে উত্তেজিত হতে হবে। যে কেউ রাসুলের (সাঃ) অপমান হতে দেখবে এবং কোন ধরনের ক্রোধ বা হিংসা অনুভব করবে না সে মুমিন হতে পারে না। -আমরা আল্লাহতা’আলার কাছে অপমান, কুফর ও শয়তানের হাত থেকে সুরক্ষা চাই। [শেইখ আবদ আর-রহমান আল-বাররাক, মাজাল্লাত আদ-দাওয়াহ, মহররম, ইস্যু নং ১৯৩৩]
পঞ্চমতঃ শাসকের অনুমতি না নিয়ে যদি কেউ নিজে থেকে রাসূল(সাঃ) এর বিদ্রুপকারীকে হত্যা করে তার ক্ষেত্রে হুকুম কি?
“হাদ শাস্তি” (এক্ষেত্রে যেটা মৃত্যুদন্ড) কেবল শাসক বা শাসকের নিযুক্ত কেউ কার্যকর করতে পারে এই ধারনার বিষয়ে, শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ(রহিমাহুল্লাহ) এই বিষয় সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন,
“এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দ্বীনত্যাগকারীর হুদুদ শাস্তি কেবল শাসক কিংবা তার নিযুক্ত কেউ কার্যকর করতে পারে।“
তারপর তিনি বলেন,
১. মুনীব তার দাসের হুদুদ শাস্তি কার্যকর করতে পারেন এই দলীলের ভিত্তিতে যে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসেদের হুদুদ শাস্তি কার্যকর কর।” (আহমদ(৭৩৬) এবং অন্যান্যদের দ্বারা বর্ণিত, দলীল দ্বারা হাসান বলে সাব্যস্ত বলেছেন আল-আরনাউত; যদিও আলবানীর অভিমত যে এটি আলী (রাঃ) এর বক্তব্য, আল ইরওয়া (২৩২৫) দ্রষ্টব্য।) এবং তিনি (সাঃ) বলেছেন, “যদি তোমাদের দাসী কেউ ব্যাভিচারে লিপ্ত হয় তবে সেজন্য তার শাস্তি কার্যকর কর।” (আবু দাউদ (৪৪৭০),সহীহা গ্রন্থেও এমন একটি বর্ণনা রয়েছে) আমি হাদিস শাস্ত্রের “ফুকাহাহ”দের (যিনি ফিকহ জানেন) মাঝে এমন কারও কথা জানি না যিনি এ বিষয়ে দ্বিমত করেছেন যে সে (মনিব) তার (দাসীর) ওপর শাস্তি কার্যকর করতে পারে। ... ... [এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত দলীলাদি দেবার পর] সুতরাং এই হাদিসটি তাদের জন্য দলীল যারা বলেন যে মনিব দাসের হুদুদ শাস্তি দিতে পারেন তার জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে, সব ক্ষেত্রে।
২. বড়জোর যেটা বলা চলে এ ব্যাপারে তা হলো সে শাসকের অধিকার খর্ব করেছে এবং শাসক চাইলে তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন যে হুদুদ শাস্তি কার্যকর করেছে শাসককে বিষয়টি অবহিত করা ছাড়া।
৩. যদিও এটা একটা হুদুদ শাস্তি, এটা একজন “হারবি” (একজন মুসলিমের সাথে যুদ্ধে রত অমুসলিম)কে হত্যার আওতায়ও পড়ে এবং একটা “হারবি”কে মারা যে কারও জন্য অনুমোদিত।
৪. রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সময়ও অনুরুপ ঘটনা ঘটেছিল যেমন আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) মীমাংসা মেনে নিতে অস্বীকার করায় উমার (রাঃ) এর হাতে এক মুনাফিক খুন হয়েছিল রাসুল (সাঃ) এর অনুমতি ছাড়াই। এবং এর পরে উমার (রাঃ) এর কাজটিকে অনুমোদন করে কুরআনে আয়াত নাজিল হয়েছিল। এছাড়াও মারওয়ানের কন্যাকে [আসমা বিনতে মারওয়ান] এক ব্যক্তি হত্যা করে এবং রাসুল (সাঃ) তাকে আল্লাহ ও রাসুলের সাহায্যকারী হিসেবে অভিহিত করেন। [দ্রষ্টব্যঃ আসমা বিনতে মারওয়ানের হত্যার হাদিসটি দুর্বল, যদিও শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ এখানে এটিকে দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছেন আবু দাঊদ (৪৩৬১), সুনানে নাসাঈ (৪০৮১) এ বর্ণিত হাদিসের আলোকে শাসকের অনুমতি ছাড়াই হত্যার বিষয়টিকে প্রমাণ করার জন্য।] এর কারন হচ্ছে যে লোকের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা অনিবার্য হয়ে পড়ে দ্বীনকে ধ্বংস করবার অপচেষ্টার জন্য, সেটা যাকে জিনা কিংবা এরকম বিষয়গুলোর কারনে হত্যা করা হয় তার মতন না। [আল-সারিম আল মাসলুল (২৮৫-২৮৬)]
এবং আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন।
MMM-1.2
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
প্রথমতঃ এটি হচ্ছে মুসলিমদের জন্য আসন্ন বিজয়ের লক্ষণ
প্রত্যেক মুসলিম আমরা যারা ইসলামের জন্য গর্ববোধ করি তাদের হৃদয় ভেঙ্গে চুরমার হয়ে যায় যখন আমরা শুনি যে, কিছু মূর্খ-জাহিল এই পৃথিবীর বুকে পদচারণ করে যাওয়া সর্বশ্রেষ্ঠ মানব মুহাম্মাদ(সাঃ) যিনি কিনা পূর্ববর্তী এবং পরবর্তী সকল উম্মতের নেতা; তাকে নিয়ে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ ও কটুক্তি করেছে। এবং কাফিরদের পক্ষ থেকে এরূপ ভয়াবহ অপরাধ এই-ই প্রথম নয় বরং এটা তাদের পূর্বতন স্বভাব; ইসলামের সূচনা লগ্ন থেকে চলে আসা একটি সংক্রামক রোগ।
যদিও এমন কাজ আমাদের হৃদয়কে ক্ষত-বিক্ষত করে এবং আমাদের মধ্যে ক্রোধের আগুন জ্বালিয়ে দেয় এবং যার প্রতিশোধ আমরা নিজেদের জীবনের পরোয়া পর্যন্ত করি না, তবুও এটা হচ্ছে এসকল কুফফার শক্তির আসন্ন পরাজয়ের লক্ষণ। কেননা আল্লাহ সুবহান ওয়া তা'আলা আল-কুর'আনে উল্লেখ করেছেন,
"বিদ্রুপকারীদের জন্যে আমিই আপনার পক্ষ থেকে যথেষ্ট।" [সুরা আল হিজরঃ ৯৫]
"যে আপনার শত্রু, সেই তো লেজকাটা, নির্বংশ।" [সুরা আল কাউসারঃ ৩]
"অনেক নির্ভরযোগ্য মুসলিম (যারা অভিজ্ঞ এবং ফকীহ) বেশীরভাগ সময়ই তাদের অভিজ্ঞতার কথা বলেছেন যখন তারা শামের শহর, দূর্গ এবং খ্রিষ্টানদের আবদ্ধ করে রেখেছিলেন; তারা বলেছেন যে, আমরা কোন শহর অথবা দূর্গকে মাসাধিককাল ধরে আবদ্ধ করে রেখেছিলাম। আমাদের অবরোধে তাদের কিছুই করার ছিল না কিন্তু দীর্ঘ সময়ের জন্য আমরা প্রায়ই তাদেরকে ত্যাগ করে ফিরে যাবার অবস্থায় ছিলাম। এরপর যখনি আমরা শুনলাম যে, তারা আল্লাহর রসূল(সাঃ)-কে অভিশাপ দিতে শুরু করেছে; আমরা এটাকে বিজয়ের লক্ষণ হিসেবে গ্রহণ করলাম। কেননা আল্লাহ তার রাসূলের অপমানের প্রতিশোধ গ্রহণে খুব দ্রুতই বিজয় দান করবেন।" [আল শারিম আল মাসলুলঃ ১১৬-১১৭]
দ্বিতীয়তঃ রাসূল(সাঃ) কে অপমানকারী ব্যক্তির ক্ষেত্রে শরীয়তের হুকুমঃ
‘আলিমগণ এই বিষয়ে সর্বসম্মতভাবে একমত যে, যদি কোন মুসলিম রাসূল(সাঃ) কে অপমান করে, তবে সে ব্যক্তি কাফির, মুরতাদ এবং তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করতে হবে। একাধিক ‘আলিম থেকে এই ইজমা বর্ণিত হয়েছে যেমন, ইমাম ইসহাক ইবন রাহাওয়ি, ইবন আল-মুনযির, আল-কাজি ‘ইয়াদ, আল-খাত্তাবি এবং অন্যান্য। [আল-সারিম আল-মাসলুল, ২/১৩-১৬]
কুর’আন এবং সুন্নাহ থেকেও এই হুকুমের পক্ষে দলিল পাওয়া যায়।
পবিত্র কুর’আনে বলা হচ্ছে-
“মুনাফিকরা আশংকা প্রকাশ করে, তোমাদের উপর এমন কোন সূরা নাযিল হয়ে পড়ে কিনা, যা তাদের মনের সবকিছু ফাঁস করে দিবে; তুমি বলো, তোমরা বিদ্রূপ করে নাও! নিশ্চয়ই আল্লাহ সবকিছু প্রকাশ করে দিবেন, যার আশংকা তোমরা করছো।
তুমি যদি তাদের প্রশ্ন করো, তারা বলবে, আমরা তো একটু অযথা কথাবার্তা ও হাসিঠাট্টা করছিলাম মাত্র। তুমি বলো, তোমরা কি তবে আল্লাহ, তাঁর আয়াতসমূহ ও তাঁর রাসূলকে বিদ্রূপ করছিলে?
তোমরা দোষ ছাড়ানোর চেষ্টা করো না, ঈমান আনার পর তোমরা পূনরায় কাফির হয়ে গেছো; ..." [সূরা তওবা, ৬৪-৬৬]
এই আয়াতে পরিষ্কার বলা হয়েছে আল্লাহ, তাঁর আয়াত এবং তাঁর রাসূলকে নিয়ে হাসিঠাট্টা করা কুফর, সুতরাং এই বিষয়গুলো নিয়ে অপমানসূচক কথা বলা তো আরো বড় অপরাধ। এই আয়াত থেকে আরো প্রমাণ পাওয়া যায় যে, যদি কেউ রাসূল(সাঃ) কে খাটো করে, তবে সেও কাফির; চাই তা সত্যিকার অর্থেই হোক কিংবা মজা করার জন্য।
যদি আমরা সুন্নাহর দিকে তাকাই, তবে আবু দাউদ [৪৩৬২] 'আলি থেকে একজন ইহুদি নারীর ঘটনা বর্ণনা করেছেন, যে নারী রাসূল(সাঃ) কে অপমান করতো এবং তাঁর নামে কটূক্তি করতো। এই কারণে এক ব্যক্তি তার শ্বাসরোধ করে তাকে হত্যা করে এবং রাসূল(সাঃ) এক্ষেত্রে কোন রক্তমূল্য ধার্য করেননি।'
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ আল-সারিম আল-মাসলুলে বলেছেন [১/১৬২], হাদিসটি যায়্যিদ, এবং এই হাদিসটির সমর্থনে ইবন আব্বাস থেকে বর্ণিত একটি হাদিস পাওয়া যায়, যা আমরা পরবর্তীতে তুলে ধরবো।
এই হাদিস থেকে পরিষ্কারভাবে প্রমাণিত হয় যে, রাসূল(সাঃ) কে অপমান করার কারণে ঐ নারীকে হত্যা করা বৈধ ছিল।
আবু দাউদ [৪৩৬১] ইবন আব্বাস থেকে বর্ণনা করেন যে, একজন অন্ধ ব্যক্তির অধীনে একজন দাসী (উম্মু ওয়ালাদ) ছিলো। এই মহিলা রাসূল(সাঃ) কে অভিশাপ দিতো এবং তাকে সাবধান করার পরও সে বিরত হতো না। এক রাতে সে রাসূল(সাঃ) কে অভিশাপ দিতে শুরু করলে, সেই অন্ধ ব্যক্তি একটি ছুরি নিয়ে তার পেটে বিদ্ধ করলেন এবং ভিতরে চাপ দিতে লাগলেন যতক্ষণ না তার মৃত্যু হয়। সকালে রাসূল(সাঃ) এর কাছে খবর পৌছালো। রাসূল(সাঃ) লোকজনকে একত্রিত করে বললেন, আমি আল্লাহর নামে তোমাদের আদেশ করছি, যে কাজটি করেছো উঠে দাঁড়াও। অন্ধ ব্যক্তিটি উঠে দাঁড়ালেন এবং হেঁটে রাসূল(সাঃ) এর সামনে এসে বসে পড়ে বললেন, হে আল্লাহর রাসূল! আমিই সেই ব্যক্তি যে কাজটি করেছে। সে আপনাকে অভিশাপ দিতো এবং তাকে বিরত থাকার কথা বলার পরও সে বিরত হতো না। তার থেকে আমার মুক্তার মত দুটি সন্তান আছে এবং সে আমার প্রতি খুব সদয় ছিলো। কিন্তু গত রাতে সে আপনাকে অভিশাপ দিতে লাগলো। তাই আমি একটি ছুরি নিয়ে তার পেটে ঢুকিয়ে দিলাম এবং মৃত্যু না পর্যন্ত তা চেপে ধরে রাখলাম। রাসূল(সাঃ) বললেন, জেনে রেখো, তার জন্য কোন রক্তমূল্য নেই”। [আলবানি-সাহিহ আবু দাউদ, ৩৬৫৫]
হাদিসের বর্ণনা শুনে মনে হয়, এই মহিলা সম্ভবত কাফির ছিল, মুসলিম নয়। কারণ কোন মুসলিমের পক্ষে এ ধরনের হীন কাজ করা সম্ভব নয়। কিন্তু যদি সে মুসলিমও হতো, এই কাজের কারণে সে মুরতাদ হয়ে যেতো এবং তার মালিকের জন্য তাকে রাখা আর বৈধ হতো না। এবং সেক্ষেত্রে তার মালিকের জন্য তাকে নিজের কাছে রেখে শুধুমাত্র সাবধান করাই যথেষ্ট বলে গণ্য হতো না।
আন-নাসাঈ [৪০৭১] আবু বারযাহ আল-আসলামি থেকে বর্ণনা করেন, এক ব্যক্তি আবু বাকর আস-সিদ্দিকের সাথে কর্কশ ভাষায় কথা বললে আমি বললাম, আমি কি তাকে হত্যা করবো? তিনি আমাকে তিরস্কার করলেন এবং বললেন, রাসূল(সাঃ)-এর পর আর কারো জন্য তা প্রযোজ্য নয়। [সাহিহ আন-নাসাঈ, ৩৭৯৫]
এই বর্ণনা থেকে বুঝা যায়, রাসূল(সাঃ) এর এই অধিকার ছিল যে, কেউ তাঁকে অপমান করলে কিংবা তাঁর সাথে কর্কশ ভাষায় কথা বললে তিনি তাকে হত্যা করতে পারতেন, সে কাফির হোক কিংবা মুসলিম।
তৃতীয়তঃ রাসূল(সাঃ) কে অপমানকারী ব্যক্তি যদি তওবা করে, তবে তার তওবা কবুল হবে কি হবে নাঃ
‘আলিমগণ একমত যে, যদি এ ধরনের কোন ব্যক্তি আন্তরিকভাবে তওবা করে এবং তার কাজের জন্য লজ্জিত হয়, তবে কিয়ামতের দিন তা তার জন্য লাভজনক হবে এবং আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন। কিন্তু এই পৃথিবীতে তার তওবা গ্রহণযোগ্য হবে কিনা এবং তার শাস্তি রহিত হবে কিনা, এই বিষয়ে ‘আলিমগণ ভিন্নমত পোষণ করেছেন।
ইমাম মালিক এবং আহমাদের মতে তা গ্রহণযোগ্য হবে না এবং তওবা করার পরও তাকে হত্যা করতে হবে। তারা নিচের হাদিসসমূহ দলিলস্বরূপ পেশ করেছেন-
আবু দাউদ [২৬৮৩] থেকে বর্ণিত, সা’দ ইবন আবি ওয়াক্কাস বলেছেন, মক্কা বিজয়ের দিন রাসূল(সাঃ) সবার জন্য নিরাপত্তার ঘোষণা দিয়েছিলেন, চার জন পুরুষ এবং দুইজন মহিলা ব্যতীত; এরপর তিনি তাদের নাম বললেন... এবং ইবন আবি সারহ। আর ইবন আবি সারহ, উসমান ইবন আফফানের সাথে লুকিয়ে ছিলো। যখন রাসূল(সাঃ) লোকেদের বাইয়াতের জন্য ডাকলেন, তিনি (উসমান) তাকে সাথে করে রাসূল(সাঃ) এর সামনে হাজির হলেন এবং বললেন, “হে আল্লাহর রাসূল! আব্দুল্লাহর বাইয়াত গ্রহণ করুন”। তিনি তিনবার তাঁর মাথা উঠালেন এবং তার দিকে তাকিয়ে বাইয়াত গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালেন। তৃতীয়বারে তিনি বাইয়াত গ্রহণ করলেন। তারপর তিনি তাঁর সাহাবীদের দিকে তাকিয়ে বললেন, “যখন আমি তাকে নিজের হাত বাড়িয়ে দিতে এবং বাইয়াত গ্রহণে অস্বীকৃতি জানালাম, তোমাদের মধ্যে কি এমন কোন বুদ্ধিমান ব্যক্তি ছিলো না, যে এই লোককে হত্যা করতে পারতে?” তারা বললো, “হে আল্লাহর রাসূল, আপনার অন্তরে কী আছে তা আমরা বুঝতে পারিনি। আপনি কেন আমাদের চোখ দিয়ে ইশারা করলেন না?” তিনি জবাব দিলেন, “চোখ দিয়ে ইশারার মাধ্যমে কোন ব্যক্তিকে ধোঁকা দেয়া একজন নবীর জন্য শোভনীয় নয়”। [সাহিহ আবু দাউদ, ২৩৩৪]
এই হাদিস থেকে এটি সুস্পষ্ট যে, এখানে যে মুরতাদ ব্যক্তির কথা উল্লেখ করা হয়েছে, এমন ব্যক্তির তওবা গ্রহণ করা বাধ্যতামূলক নয়, বরং সে তওবা করার পরও তাকে হত্যা করা বৈধ।
আবদুল্লাহ ইবন সা’দ ছিলেন একজন ওহী লেখক, কিন্তু পরবর্তীতে তিনি মুরতাদ হয়ে যান এবং দাবি করেন যে, তিনি লেখার সময় ওহীর সাথে তার ইচ্ছামত কথা জুড়ে দিতেন। এটি ছিল রাসূল(সাঃ) এর প্রতি মিথ্যা আরোপ এবং এক ধরনের অবমাননা। পরবর্তীতে অবশ্য তিনি আবার মুসলিম হয়ে যান এবং অত্যন্ত ভালো মুসলিম ছিলেন, আল্লাহ তার প্রতি সন্তুষ্ট থাকুন। [আল-সারিম, ১১৫]
এই হাদিসটির সঠিক ব্যাখ্যা হলো-
রাসূল(সাঃ) এর প্রতি কোন অবমাননার ক্ষেত্রে দু’ধরনের অধিকার লঙ্ঘন করা হয়; আল্লাহর অধিকার এবং বান্দার অধিকার। আল্লাহর অধিকার লঙ্ঘনের বিষয়টি সুস্পষ্ট; কারণ এক্ষেত্রে তাঁর আয়াত, তাঁর কিতাব এবং তাঁর নাযিলকৃত ধর্মের উপর নিন্দা আরোপ করা হচ্ছে। আর বান্দার অধিকারের বিষয়টিও সুস্পষ্ট; কারণ রাসূল(সাঃ) কে অপমান করা, তাঁর উপর মিথ্যা আরোপ করার শামিল। যেক্ষেত্রে আল্লাহর হক্ব এবং বান্দার হক্ব উভয়ই জড়িত থাকে, সেক্ষেত্রে অপরাধী ব্যক্তি তওবা করলেই বান্দার হক্ব লঙ্ঘনের শাস্তি মাফ হয়ে যায় না। উদাহরণস্বরূপ, ডাকাতি করার শাস্তির কথা উল্লেখ করা যেতে পারে, যদি একজন দস্যু কোন মানুষকে খুন করে, তবে তার শাস্তি মৃত্যুদণ্ড। কিন্তু যদি সে দস্যু ধরা পড়ার আগেই তওবা করে, তাহলে আল্লাহর যে হক্ব অর্থাৎ মৃত্যুদণ্ড আর কার্যকরী নয়। কিন্তু অন্যান্য মানুষের যে হক্ব অর্থাৎ ক্বিসাসের হুকুম তখনও কার্যকরী থাকে। এক্ষেত্রেও ঠিক একই ধরনের হুকুম প্রযোজ্য। যদি কোন ব্যক্তি রাসূল(সাঃ)-কে অপমান করার পর তওবা করে, তবে আল্লাহর হক্ব লঙ্ঘনের বিষয়টি আর উপস্থিত নয় কিন্তু রাসূল(সাঃ) এর হক্ব লঙ্ঘনের বিষয়টি তার তওবা করার পরও নিষ্পত্তি হয়ে যায়নি।
যদি কেউ বলে, “আমরা কি তাকে ক্ষমা করে দিতে পারি না? কারণ রাসূল(সাঃ) তাঁর জীবদ্দশায় তো অনেককে ক্ষমা করে দিয়েছিলেন”। এই কথার জবাব হলো-
রাসূল(সাঃ) তাঁর উদ্দেশ্যে কটূক্তিকারীদের কাউকে কখনও ক্ষমা করে দিয়েছেন আবার কখনও করেননি। কিন্তু এখন তাঁর মৃত্যুর পর, তাঁর ক্ষমা করার বিষয়টি আর জেনে নেয়া সম্ভব নয় এবং অন্যদিকে এই মৃত্যুদণ্ড আল্লাহ, তাঁর রাসূল ও মুমিনদের হক্ব হিসেবে বিদ্যমান। তাই এই শাস্তি অবশ্যই কার্যকর করতে হবে। [আল-সারিম আল-মাসলুল, ২/৪৩৮]
রাসূল(সাঃ) কে অপমান করা হারাম কাজসমূহের মাঝে একটি নিকৃষ্টতম কাজ এবং ‘আলিমগণের ইজমা রয়েছে যে, এটি এমন কুফর যা একজনকে ইসলামের গণ্ডি থেকে বের করে দেয়, তা সে উদ্দেশ্যকৃতভাবেই করুক কিংবা ঠাট্টাচ্ছলে। সে ব্যক্তি মুসলিমই হোক আর কাফির, সে তওবা করার পরও তাকে মৃত্যুদণ্ড প্রদান করতে হবে। যদি সে ব্যক্তি আন্তরিকভাবে তওবা করে এবং তার কাজের জন্য লজ্জিত হয়, তবে কিয়ামতের দিন তা তার জন্য লাভজনক হবে এবং আল্লাহ তাকে ক্ষমা করে দিবেন।
শাইখুল ইসলাম ইবন তাইমিয়্যাহ রহিমাহুল্লাহ এই বিষয়ে অত্যন্ত মূল্যবান একটি বই লিখেছেন, যার নাম ‘আল-সারিম আল-মাসলুল ‘আলা শাতিম আর-রাসূল’। এই বইটি প্রত্যেক মুমিনের পড়া উচিত; বিশেষত সাম্প্রতিক সময়ে যখন মুনাফিক আর নাস্তিকের দল রাসূল(সাঃ) কে নিয়ে কটূক্তি করার দুঃসাহস দেখাচ্ছে। কারণ তারা দেখতে পাচ্ছে, মুসলিমরা আজ ভাবলেশহীন এবং নিজেদের ধর্ম আর রাসূলের প্রতি যে গিরাহ, তা তারা হারিয়ে ফেলেছে। এবং মুসলিমরা আজ শার’ঈ শাস্তি বাস্তবায়ন করছে না, যা এই সকল লোকেদের এই ধরনের সুস্পষ্ট কুফরী কাজের পুনরাবৃত্তি করা থেকে বিরত রাখতো।
চতুর্থতঃ কেউ রাসুলের (সাঃ) অপমান করলে তাদের জবাব দেয়া কি জরুরী?
রাসুল(সাঃ) কে অপমান করা এক ধরনের কুফর যা কোন মুসলিম করে থাকলে সেটা তাকে দ্বীন থেকে বের করে দেয় এবং যথাযথ কর্তৃপক্ষের (শাসকদের) উচিত যে এই কাজটি করেছে তাকে হত্যার মাধ্যমে আল্লাহতা’আলা ও তাঁর রাসুলের (সাঃ) এই বিষয়টিকে প্রতিরোধ করা। যদি অপমানকারী জনসম্মুখে এবং সত্যিকার অর্থেই কেউ তওবাহ করে এ কাজের জন্য তবে আল্লাহতা’আলা তাকে ক্ষমা করে দেবেন কিন্তু সেটা তার শাস্তিকে মোটেই কমাবে না, আর এই শাস্তিটি হচ্ছে হত্যা করা।
যদি অপমানকারী মুসলিমদের সাথে চুক্তিবদ্ধ কোন অমুসলিম হয়ে থাকে তবে তৎক্ষণাৎ তার সেই চুক্তি ভেঙ্গে যাবে এবং তাকে অবশ্যই হত্যা করতে হবে কিন্তু এই দ্বায়িত্বটি যথাযথ কর্তৃপক্ষের হাতে তুলে দেয়া উচিত। যদি কোন মুসলিম কোন খ্রিস্টান বা অন্য কাউকে রাসুল (সাঃ) কে অপমান করতে দেখে তবে তাকে কঠোর ভাষায় তাকে তিরষ্কার করতে হবে। সে লোককে তিরষ্কার করা অনুমোদিত কারন সেই প্রথম এটা শুরু করেছে। এটা কীভাবে সম্ভব যে রাসুলের (সাঃ) সম্মানে আমরা চুপ করে বসে থাকবো? যথাযথ কর্তৃপক্ষ যে তাকে শাস্তি দিতে পারবে তাকে বিষয়টি জানানো ওয়াজিব। যদি এমন কেউ না থাকে যে আল্লাহ ও তার রাসুলের (সাঃ) নির্ধারিত “হাদ শাস্তি” [এক্ষেত্রে মৃত্যুদন্ড] দিতে পারবে, তবে একজন মুসলিমকে সে যতটুকু পারে ততটুকুই করে যেতে হবে যতক্ষণ না পর্যন্ত অন্য কেউ ক্ষতির সম্মুখীন হয়। কিন্তু যদি একজন মুসলিম কোন কাফিরকে রাসুলুল্লাহ (সাঃ) কে ব্যঙ্গ করতে শোনে এবং চুপ থাকে এই ভয়ে যে ঐ লোক হয়ত আরও বেশি করে ব্যঙ্গ-বিদ্রুপ করবে তবে তার এই চিন্তাভাবনা ভুল। এই আয়াতটি,
“আর তারা আল্লাহ ছাড়া অন্য যাদের ইবাদত করে তাদেরকে মন্দ বলো না, সেক্ষেত্রে তারাও আল্লাহকে ভুলবশত অজ্ঞতার কারনে গালি দেবে।“ [সুরা আল আনাম ৬,১০৮]
এক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয় যেখানে তারাই আল্লাহ ও তার রাসুলকে (সাঃ) প্রথমে বিদ্রুপ করা শুরু করেছে। বরং এখানে বোঝানো হয়েছে যে মুশরিকদের দেবতাদেরকে প্রথমে মন্দ বলা হারাম কারন তারাও না জেনে আল্লাহ সম্পর্কে সেক্ষেত্রে বাজে মন্তব্য করবে। কিন্তু যদি তারাই প্রথমে আল্লাহ ও তাঁর রাসুল (সাঃ)কে বিদ্রুপ করা শুরু করে, তখন আমাদেরকে অবশ্যই জবাব দিতে হবে এবং তাদেরকে শাস্তি দিতে হবে এমনভাবে যেন তা তাদের শত্রুতা ও কুফর থেকে বিরত করে। যদি আমরা কাফির ও নাস্তিকদেরকে তিরষ্কার ও শাস্তি না দিয়ে তাদের ইচ্ছেমত বলে যেতে দেই যেটা তারা ভালবাসে তবে অনেক বড় ফিতনা সৃষ্টি হবে।
তাদের কথায় মোটেই পাত্তা দেয়া যাবে না যারা বলে যে তাদেরকে অপমান করলে এবং তাদের কথার প্রতিবাদ করলে তাদের একগুয়েমী আরও বাড়বে। একজন মুসলিমের অবশ্যই প্রতিরোধমূলক ঈর্ষাবোধ থাকতে হবে এবং আল্লাহতা’আলার সন্তুষ্টির জন্য এ বিষয়ে তাকে উত্তেজিত হতে হবে। যে কেউ রাসুলের (সাঃ) অপমান হতে দেখবে এবং কোন ধরনের ক্রোধ বা হিংসা অনুভব করবে না সে মুমিন হতে পারে না। -আমরা আল্লাহতা’আলার কাছে অপমান, কুফর ও শয়তানের হাত থেকে সুরক্ষা চাই। [শেইখ আবদ আর-রহমান আল-বাররাক, মাজাল্লাত আদ-দাওয়াহ, মহররম, ইস্যু নং ১৯৩৩]
পঞ্চমতঃ শাসকের অনুমতি না নিয়ে যদি কেউ নিজে থেকে রাসূল(সাঃ) এর বিদ্রুপকারীকে হত্যা করে তার ক্ষেত্রে হুকুম কি?
“হাদ শাস্তি” (এক্ষেত্রে যেটা মৃত্যুদন্ড) কেবল শাসক বা শাসকের নিযুক্ত কেউ কার্যকর করতে পারে এই ধারনার বিষয়ে, শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ(রহিমাহুল্লাহ) এই বিষয় সম্পর্কে উল্লেখ করেছেন এবং বলেছেন,
“এটা বলার অপেক্ষা রাখে না যে, দ্বীনত্যাগকারীর হুদুদ শাস্তি কেবল শাসক কিংবা তার নিযুক্ত কেউ কার্যকর করতে পারে।“
তারপর তিনি বলেন,
১. মুনীব তার দাসের হুদুদ শাস্তি কার্যকর করতে পারেন এই দলীলের ভিত্তিতে যে রাসুল (সাঃ) বলেছেন, “তোমরা তোমাদের অধিকারভুক্ত দাসেদের হুদুদ শাস্তি কার্যকর কর।” (আহমদ(৭৩৬) এবং অন্যান্যদের দ্বারা বর্ণিত, দলীল দ্বারা হাসান বলে সাব্যস্ত বলেছেন আল-আরনাউত; যদিও আলবানীর অভিমত যে এটি আলী (রাঃ) এর বক্তব্য, আল ইরওয়া (২৩২৫) দ্রষ্টব্য।) এবং তিনি (সাঃ) বলেছেন, “যদি তোমাদের দাসী কেউ ব্যাভিচারে লিপ্ত হয় তবে সেজন্য তার শাস্তি কার্যকর কর।” (আবু দাউদ (৪৪৭০),সহীহা গ্রন্থেও এমন একটি বর্ণনা রয়েছে) আমি হাদিস শাস্ত্রের “ফুকাহাহ”দের (যিনি ফিকহ জানেন) মাঝে এমন কারও কথা জানি না যিনি এ বিষয়ে দ্বিমত করেছেন যে সে (মনিব) তার (দাসীর) ওপর শাস্তি কার্যকর করতে পারে। ... ... [এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত দলীলাদি দেবার পর] সুতরাং এই হাদিসটি তাদের জন্য দলীল যারা বলেন যে মনিব দাসের হুদুদ শাস্তি দিতে পারেন তার জ্ঞানের ওপর ভিত্তি করে, সব ক্ষেত্রে।
২. বড়জোর যেটা বলা চলে এ ব্যাপারে তা হলো সে শাসকের অধিকার খর্ব করেছে এবং শাসক চাইলে তাকে ক্ষমা করে দিতে পারেন যে হুদুদ শাস্তি কার্যকর করেছে শাসককে বিষয়টি অবহিত করা ছাড়া।
৩. যদিও এটা একটা হুদুদ শাস্তি, এটা একজন “হারবি” (একজন মুসলিমের সাথে যুদ্ধে রত অমুসলিম)কে হত্যার আওতায়ও পড়ে এবং একটা “হারবি”কে মারা যে কারও জন্য অনুমোদিত।
৪. রাসুলুল্লাহ (সাঃ) এর সময়ও অনুরুপ ঘটনা ঘটেছিল যেমন আল্লাহর রাসুলের (সাঃ) মীমাংসা মেনে নিতে অস্বীকার করায় উমার (রাঃ) এর হাতে এক মুনাফিক খুন হয়েছিল রাসুল (সাঃ) এর অনুমতি ছাড়াই। এবং এর পরে উমার (রাঃ) এর কাজটিকে অনুমোদন করে কুরআনে আয়াত নাজিল হয়েছিল। এছাড়াও মারওয়ানের কন্যাকে [আসমা বিনতে মারওয়ান] এক ব্যক্তি হত্যা করে এবং রাসুল (সাঃ) তাকে আল্লাহ ও রাসুলের সাহায্যকারী হিসেবে অভিহিত করেন। [দ্রষ্টব্যঃ আসমা বিনতে মারওয়ানের হত্যার হাদিসটি দুর্বল, যদিও শায়খুল ইসলাম ইবনে তাইমিয়্যাহ এখানে এটিকে দলীল হিসেবে উল্লেখ করেছেন আবু দাঊদ (৪৩৬১), সুনানে নাসাঈ (৪০৮১) এ বর্ণিত হাদিসের আলোকে শাসকের অনুমতি ছাড়াই হত্যার বিষয়টিকে প্রমাণ করার জন্য।] এর কারন হচ্ছে যে লোকের মৃত্যুদন্ড কার্যকর করা অনিবার্য হয়ে পড়ে দ্বীনকে ধ্বংস করবার অপচেষ্টার জন্য, সেটা যাকে জিনা কিংবা এরকম বিষয়গুলোর কারনে হত্যা করা হয় তার মতন না। [আল-সারিম আল মাসলুল (২৮৫-২৮৬)]
এবং আল্লাহ সবচেয়ে ভালো জানেন।
MMM-1.2
© 2015 by Ask Islam Bangla.