প্রশ্ন ১৩০ --> দাজ্জালের বিরুদ্ধে মেয়েরা কেমন প্রস্তুতি গ্রহণ করবে জানতে চাই
উত্তর :
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
# হযরত আবু উমামা বাহেলি (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “ইসলামের কড়াগুলো একটি একটি করে ভেঙ্গে যাবে। একটি ভেঙ্গে যাওয়ার পর মানুষ তার পরেরটি আঁকড়ে ধরবে। তো সর্বপ্রথম যে কড়াটি ভাঙবে, সেটি হল ইসলামী শাসন। আর সর্বশেষটি হল নামাজ”। (সু’আবুল ইমান খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২৩৬; আল মু’জামুল কাবীর খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ৯৮; মাওয়ারিদুয যাম’আন খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৮৭)
অর্থাৎ মুসলিম জাতি অধঃপতনের ধারাবাহিকতায় সর্বপ্রথম যে বিষয়টি পরিত্যাগ করবে, সেটি হল ইসলামী শাসন। আল্লাহপাকের ঠিক করে দেওয়া যাবতীয় হক আদায় করা, যতসব ফরজ আদায় করা এবং ইসলামের দণ্ডবিধির অনুসরণ করা। এই সবগুলি বিষয় ইসলামী খেলাফতের অধীনে অত্যন্ত সুন্দর ও সুচারুরূপে বাস্তবায়িত হয়। কাজেই ইসলামী শাসননীতি অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়।
মোটকথা, মুসলমানের জীবন থেকে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি হারিয়ে যাবে বলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভবিষ্যৎবাণী করেছেন, সেটি হল খেলাফত।
যদি খেলাফতে উসমানিয়ার পতনের (১৯২৪ সাল) এর পর থেকে এ সময় পর্যন্তকার ইতিহাস অধ্যায়ন করা হয়, তাহলে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা ও সভ্যতা সংস্কৃতির সংরক্ষণ আমাদের ঘরগুলোরই মাধ্যমে আঞ্জাম দেওয়া হয়েছে এবং এই ঘরগুলোই মুসলিম সমাজকে এই পর্যন্ত টিকিয়ে রেখেছে। বহু মুসলিম ভূখণ্ডে এমনও ঘটেছে যে, এই সর্বশেষ দুর্গটি ছাড়া মুসলমানদের কাছে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকেনি। এমনকি মসজিদ মাদ্রাসাগুলো পর্যন্ত কাফেরদের দখলে চলে গিয়েছিল। কিন্তু এই দুর্গগুলোতে অবস্থানরত ইসলামী বাহিনীগুলো সাহস হারায়নি এবং নিজ নিজ রণাঙ্গনে দৃঢ়পদে টিকে রয়েছে।
ইসলামের এই দুর্গগুলোতে যে বাহিনী আছে, তারা হল মুসলিম নারীদের বাহিনী, যারা ইসলামের জন্য সেই মহান কীর্তি আঞ্জাম দিয়েছে, যা ইসলামবিরোধীদের হাজার প্রচেষ্টার পর আজও অটুট রয়েছে। বর্তমানে মুসলিম জাতি যে পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে, তা মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি। কাজেই এই পরিস্থিতিতে মুসলিম মহিলাদের দায়িত্বও আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। ঈমানদার মা ও বোনদেরকে এখন আগের তুলনায় বেশি সচেতনতা, সাহসিকতা ও পরিশ্রমের সঙ্গে আপন দায়িত্ব পালন করতে হবে।
ইসলামের শত্রুরা আপনার মোকাবেলায় একনাগাড়ে ৯০ বছর যাবত পরাজয় বরণ করে আসছে। এসব পরাজয় থেকে তারা এই ফলাফলে উপনীত হয়েছে যে, মোকাবেলা করে এই বাহিনীটির বিরুদ্ধে জয়ী হওয়া যাবে না – আমাদেরকে অন্য কৌশল অবলম্বন করতে হবে। এবার তারা যে কৌশলটি অবলম্বন করেছে, তা হল মুসলমানদের ঘরগুলোতে যে ইসলামী বাহিনীটি অবস্থান নিয়ে আছে, তাদেরকে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে উদাসীন করে দিতে হবে। এই কৌশলটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অনেকগুলো মনোমুগ্ধকর শ্লোগান নিয়ে দরদী বন্ধুর রূপ ধারণ করে তারা আপনার সামনে এসে হাজির হয়েছে।
কাজেই আমার মা ও বোনেরা! সময়ের নাজুকতা ও শত্রুপক্ষের ধোঁকা-প্রতারণা উপলব্ধি করে আপনাদেরকে তাদের মোকাবিলা করতে হবে। আপন দায়িত্ব কর্তব্য থেকে উদাসীন হবেন না। মুসলমান পুরুষদের বাহিনী, যারা আপন দায়িত্ব থেকে গা বাঁচানোর চেষ্টা করছে, যারা মানসিকভাবে পরাজয়ের শিকার হয়ে আছে, হতাশার কালো মেঘ যাদের ঘিরে রেখেছে, আপনারা মহিলাদেরকে আল্লাহ এই যোগ্যতা দান করেছেন যে, আপনারা পলায়মান এই বাহিনীটিকে সম্মুখপানে এগিয়ে যাওয়ার সাহস জোগাতে পারেন, তাদের অবশ বাহুগুলোতে বিদ্যুৎ সঞ্চারিত করে দিতে পারেন, ভীত সন্ত্রস্ত পুরুষদের মাঝে আত্মপরিচয় ও আত্মমর্যাদাবোধ জাগিয়ে তাদেরকে কর্তব্য পালনের উপযোগী বানিয়ে তুলতে পারেন।
মহান আল্লাহ আপনাদেরকে সত্তাগতভাবেই একটি সংগঠন হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। একজন নারী মানেই একটি সংগঠন। একারণে দাজ্জালের ফেতনার বিরুদ্ধে আপনারা অনেক বেশি কাজ করতে পারেন।
সন্তানদেরকে খাঁটি মুসলমান বানানো এবং তাদেরকে সর্বাবস্থায় ইসলামী নীতি-আদর্শের প্রহরী হিসাবে গড়ে তোলা মহিলাদেরই দায়িত্ব। সন্তানদের মন মস্তিস্ককে শৈশব থেকেই একথাটি বসিয়ে দিতে হবে যে, তার ঈমান জগতের প্রতিটি বস্তুর চেয়ে মূল্যবান। কাজেই ঈমানকে বাঁচিয়ে রাখতে যদি সমগ্র দুনিয়াকেও কুরবান দিতে হয়, তাহলে অকুণ্ঠচিত্তে তা করতে হবে। তবুও ঈমানের গাঁয়ে আঁচড়টিও লাগতে দেওয়া যাবে না।
◘ হযরত ইমরান ইবনে সুলাইম কালায়ি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, “একজন নারীর নিজ গৃহের মাঝে ছুটে বেড়ানো তার জন্য জুতাজোড়া অপেক্ষা উত্তম। স্থুলাকায়া নারীদের জন্য ধ্বংস অবধারিত। সুসংবাদ গরীব মহিলাদের জন্য। তোমরা তোমাদের নারীদেরকে সোলওয়ালা শক্ত জুতা পরিধান করাও আর তাদেরকে তাদের ঘরের মাঝে হাঁটাচলা করার প্রশিক্ষন দাও। কারণ, অদূর ভবিষ্যতে তারা এই কাজটি করতে বাধ্য হতে পারে”। (আল ফিতান, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৫১)
এই বর্ণনায় বলা হয়েছে, মুসলিম নারীদেরকে আরাম প্রিয় না হওয়া উচিৎ। বরং তাদেরকে সোলওয়ালা শক্ত জুতা পরিধান করে নিজ ঘরে হাঁটা চলা করে জীবন অতিবাহিত করায় অভ্যস্ত হতে হবে, যাতে শরীরটা ক্ষীণ থাকে। কারণ, তাদের জীবনে এমন পরিস্থিতি আগমন করতে পারে যে, তখন নিজের সম্ভ্রম ও ঈমান বাঁচানোর তাগিদে তাদেরকে পাহাড়-বনে-জঙ্গলে পায়ে হেঁটে সফর করতে হবে। যেমনটি আফগানিস্তান, ইরাক, ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, সিরিয়ায় ঘটছে।
তাই কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক শরীয়তের গণ্ডির মধ্যে থেকে আমল করুন এবং গোটা পরিবার ও বংশের লোকদের মাঝে যথারীতি ঈমানের অভিযান পরিচালনা করুন। দাজ্জালের মহা ফেতনার ভয়াবহতা সম্পর্কে নিজেও সজাগ সচেতন থাকুন, অন্যদেরকেও সচেতন করে তুলুন।
স্মরণ করুন ইরাকের সেই অসহায় মায়েদের, ফিলিস্তিনের সেই বোনদের, যাদের হাতের মেহেদী শুকানোর আগেই তাদের সোহাগ উজাড় করে দেওয়া হয়েছে।
স্মরণ করুন, কাশ্মীর ও আফগানিস্তানের সে কন্যাদের, যারা জীবনের প্রতিটি পলক ও প্রতিটি মুহূর্ত বিহ্বলতার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে থাকে।
স্মরণ করুন, সিরিয়ার সেই নিস্পাপ শিশুদের, যারা খোলা আকাশের নিচে মা! মা! করে চিৎকার করছে, কিন্তু তাদের মায়েদের ইমাম মাহদির আগমনপূর্ব আলামত বহনকারী নুসাইরিয়া সম্প্রদায়ের বনু কাল্ব গোত্রের জালেমরা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।
আমাদের মা ও বোনদের ভুলে গেলে চলবে না, যে দাজ্জালের সঙ্গে মহাযুদ্ধের ক্ষেত্রে এই অঞ্চলের (ভারতীয় উপমহাদেশের) মুজাহিদদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
◘ হযরত নাহীক ইবনে সারীম (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নিঃসন্দেহে তোমরা মুশরিকদের (মূর্তিপূজারীদের) সঙ্গে যুদ্ধ করবে। এমনকি এই যুদ্ধে তোমাদের বেঁচে যাওয়া মুজাহিদরা উর্দুন (জর্ডান) নদীর তীরে দাজ্জালের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। এই যুদ্ধে তোমরা পূর্ব দিকে অবস্থান গ্রহণ করবে আর দাজ্জালের অবস্থান হবে পশ্চিম দিকে”। (আল ইসাবা, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪৭৬)
এখানে মুশরিকদের দ্বারা উদ্দেশ্য উপমহাদেশের মূর্তিপূজারী জাতি। তার মানে এটি হাদিস শরীফে বর্ণিত সেই যুদ্ধ – “গাজওয়াতুল হিন্দ”, যেখানে মুজাহিদরা এই উপমহাদেশে আক্রমণ চালাবে, আল্লাহ তাদেরকে বিজয় দান করবেন, ক্ষমা করে দেবেন, বেঁচে যাওয়া মুজাহিদরা জেরুজালেমে ফিরে যাবে এবং সেখানে ঈসা (আঃ) সাক্ষাত পাবে এবং ঈসা (আঃ) নেতৃত্বে দাজ্জালের বিরুদ্ধে মহাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে।
গাজওয়াতুল হিন্দের হাদিসগুলো পাবেন এই লিংকে
বর্তমানে এই উপমহাদেশের মুর্তিপুজারী ভূখণ্ডের মুসলিম প্রধান ভূখণ্ডের উপর সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আগ্রাসনের অব্যাহত প্রচেষ্টা দেখলে বুঝা যায় যে, এটি একদিন চূড়ান্ত সংঘাতময়রূপ ধারণ করবে এবং এখানকার দ্বীন ইসলামকে টিকিয়ে রাখতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভবিষ্যৎ বাণী মোতাবেক উম্মতের একটি দলকে এই দিকে অগ্রসর হতে হবে। এবং এটি ঘটবে সেই সম সাময়িক সময়ে যখন সমগ্র দুনিয়াতে ইসলামের ক্রান্তিলগ্নে ইসলামকে খেলাফতের আদলে সাজাতে আল্লাহ ইমাম মাহদিকে প্রেরণ করবেন আর যার খেলাফতের সপ্তম বছরে দাজ্জালের আবির্ভাব হবে এবং দাজ্জালের সাথে মহাযুদ্ধের নেতৃত্ব দিতে ঈসা (আঃ) এর আগমন ঘটবে।
তাই, দ্বীনের উপর দৃঢ়পদ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রেখে যাওয়া দায়িত্ব আমাদের মা বোনদের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। আল্লাহ আমাদের সাহায্য করুন আমিন।
উৎস - আমিন বেইগের ব্লগ
STA-95.149
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
# হযরত আবু উমামা বাহেলি (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “ইসলামের কড়াগুলো একটি একটি করে ভেঙ্গে যাবে। একটি ভেঙ্গে যাওয়ার পর মানুষ তার পরেরটি আঁকড়ে ধরবে। তো সর্বপ্রথম যে কড়াটি ভাঙবে, সেটি হল ইসলামী শাসন। আর সর্বশেষটি হল নামাজ”। (সু’আবুল ইমান খণ্ড ৪, পৃষ্ঠা ২৩৬; আল মু’জামুল কাবীর খণ্ড ৮, পৃষ্ঠা ৯৮; মাওয়ারিদুয যাম’আন খণ্ড ১, পৃষ্ঠা ৮৭)
অর্থাৎ মুসলিম জাতি অধঃপতনের ধারাবাহিকতায় সর্বপ্রথম যে বিষয়টি পরিত্যাগ করবে, সেটি হল ইসলামী শাসন। আল্লাহপাকের ঠিক করে দেওয়া যাবতীয় হক আদায় করা, যতসব ফরজ আদায় করা এবং ইসলামের দণ্ডবিধির অনুসরণ করা। এই সবগুলি বিষয় ইসলামী খেলাফতের অধীনে অত্যন্ত সুন্দর ও সুচারুরূপে বাস্তবায়িত হয়। কাজেই ইসলামী শাসননীতি অতীব গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায়।
মোটকথা, মুসলমানের জীবন থেকে সর্বপ্রথম যে বিষয়টি হারিয়ে যাবে বলে আল্লাহর রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ভবিষ্যৎবাণী করেছেন, সেটি হল খেলাফত।
যদি খেলাফতে উসমানিয়ার পতনের (১৯২৪ সাল) এর পর থেকে এ সময় পর্যন্তকার ইতিহাস অধ্যায়ন করা হয়, তাহলে সুস্পষ্ট প্রমাণিত হয় যে, ইসলামী সমাজ ব্যবস্থা ও সভ্যতা সংস্কৃতির সংরক্ষণ আমাদের ঘরগুলোরই মাধ্যমে আঞ্জাম দেওয়া হয়েছে এবং এই ঘরগুলোই মুসলিম সমাজকে এই পর্যন্ত টিকিয়ে রেখেছে। বহু মুসলিম ভূখণ্ডে এমনও ঘটেছে যে, এই সর্বশেষ দুর্গটি ছাড়া মুসলমানদের কাছে আর কিছুই অবশিষ্ট থাকেনি। এমনকি মসজিদ মাদ্রাসাগুলো পর্যন্ত কাফেরদের দখলে চলে গিয়েছিল। কিন্তু এই দুর্গগুলোতে অবস্থানরত ইসলামী বাহিনীগুলো সাহস হারায়নি এবং নিজ নিজ রণাঙ্গনে দৃঢ়পদে টিকে রয়েছে।
ইসলামের এই দুর্গগুলোতে যে বাহিনী আছে, তারা হল মুসলিম নারীদের বাহিনী, যারা ইসলামের জন্য সেই মহান কীর্তি আঞ্জাম দিয়েছে, যা ইসলামবিরোধীদের হাজার প্রচেষ্টার পর আজও অটুট রয়েছে। বর্তমানে মুসলিম জাতি যে পরিস্থিতির মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছে, তা মানব ইতিহাসের সবচেয়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি। কাজেই এই পরিস্থিতিতে মুসলিম মহিলাদের দায়িত্বও আগের চেয়ে অনেক বেড়ে গেছে। ঈমানদার মা ও বোনদেরকে এখন আগের তুলনায় বেশি সচেতনতা, সাহসিকতা ও পরিশ্রমের সঙ্গে আপন দায়িত্ব পালন করতে হবে।
ইসলামের শত্রুরা আপনার মোকাবেলায় একনাগাড়ে ৯০ বছর যাবত পরাজয় বরণ করে আসছে। এসব পরাজয় থেকে তারা এই ফলাফলে উপনীত হয়েছে যে, মোকাবেলা করে এই বাহিনীটির বিরুদ্ধে জয়ী হওয়া যাবে না – আমাদেরকে অন্য কৌশল অবলম্বন করতে হবে। এবার তারা যে কৌশলটি অবলম্বন করেছে, তা হল মুসলমানদের ঘরগুলোতে যে ইসলামী বাহিনীটি অবস্থান নিয়ে আছে, তাদেরকে তাদের দায়িত্ব ও কর্তব্য থেকে উদাসীন করে দিতে হবে। এই কৌশলটি বাস্তবায়নের লক্ষ্যে অনেকগুলো মনোমুগ্ধকর শ্লোগান নিয়ে দরদী বন্ধুর রূপ ধারণ করে তারা আপনার সামনে এসে হাজির হয়েছে।
কাজেই আমার মা ও বোনেরা! সময়ের নাজুকতা ও শত্রুপক্ষের ধোঁকা-প্রতারণা উপলব্ধি করে আপনাদেরকে তাদের মোকাবিলা করতে হবে। আপন দায়িত্ব কর্তব্য থেকে উদাসীন হবেন না। মুসলমান পুরুষদের বাহিনী, যারা আপন দায়িত্ব থেকে গা বাঁচানোর চেষ্টা করছে, যারা মানসিকভাবে পরাজয়ের শিকার হয়ে আছে, হতাশার কালো মেঘ যাদের ঘিরে রেখেছে, আপনারা মহিলাদেরকে আল্লাহ এই যোগ্যতা দান করেছেন যে, আপনারা পলায়মান এই বাহিনীটিকে সম্মুখপানে এগিয়ে যাওয়ার সাহস জোগাতে পারেন, তাদের অবশ বাহুগুলোতে বিদ্যুৎ সঞ্চারিত করে দিতে পারেন, ভীত সন্ত্রস্ত পুরুষদের মাঝে আত্মপরিচয় ও আত্মমর্যাদাবোধ জাগিয়ে তাদেরকে কর্তব্য পালনের উপযোগী বানিয়ে তুলতে পারেন।
মহান আল্লাহ আপনাদেরকে সত্তাগতভাবেই একটি সংগঠন হিসাবে সৃষ্টি করেছেন। একজন নারী মানেই একটি সংগঠন। একারণে দাজ্জালের ফেতনার বিরুদ্ধে আপনারা অনেক বেশি কাজ করতে পারেন।
সন্তানদেরকে খাঁটি মুসলমান বানানো এবং তাদেরকে সর্বাবস্থায় ইসলামী নীতি-আদর্শের প্রহরী হিসাবে গড়ে তোলা মহিলাদেরই দায়িত্ব। সন্তানদের মন মস্তিস্ককে শৈশব থেকেই একথাটি বসিয়ে দিতে হবে যে, তার ঈমান জগতের প্রতিটি বস্তুর চেয়ে মূল্যবান। কাজেই ঈমানকে বাঁচিয়ে রাখতে যদি সমগ্র দুনিয়াকেও কুরবান দিতে হয়, তাহলে অকুণ্ঠচিত্তে তা করতে হবে। তবুও ঈমানের গাঁয়ে আঁচড়টিও লাগতে দেওয়া যাবে না।
◘ হযরত ইমরান ইবনে সুলাইম কালায়ি থেকে বর্ণিত, তিনি বলেছেন, “একজন নারীর নিজ গৃহের মাঝে ছুটে বেড়ানো তার জন্য জুতাজোড়া অপেক্ষা উত্তম। স্থুলাকায়া নারীদের জন্য ধ্বংস অবধারিত। সুসংবাদ গরীব মহিলাদের জন্য। তোমরা তোমাদের নারীদেরকে সোলওয়ালা শক্ত জুতা পরিধান করাও আর তাদেরকে তাদের ঘরের মাঝে হাঁটাচলা করার প্রশিক্ষন দাও। কারণ, অদূর ভবিষ্যতে তারা এই কাজটি করতে বাধ্য হতে পারে”। (আল ফিতান, খণ্ড ২, পৃষ্ঠা ৪৫১)
এই বর্ণনায় বলা হয়েছে, মুসলিম নারীদেরকে আরাম প্রিয় না হওয়া উচিৎ। বরং তাদেরকে সোলওয়ালা শক্ত জুতা পরিধান করে নিজ ঘরে হাঁটা চলা করে জীবন অতিবাহিত করায় অভ্যস্ত হতে হবে, যাতে শরীরটা ক্ষীণ থাকে। কারণ, তাদের জীবনে এমন পরিস্থিতি আগমন করতে পারে যে, তখন নিজের সম্ভ্রম ও ঈমান বাঁচানোর তাগিদে তাদেরকে পাহাড়-বনে-জঙ্গলে পায়ে হেঁটে সফর করতে হবে। যেমনটি আফগানিস্তান, ইরাক, ফিলিস্তিন, কাশ্মীর, সিরিয়ায় ঘটছে।
তাই কুরআন ও সুন্নাহ মোতাবেক শরীয়তের গণ্ডির মধ্যে থেকে আমল করুন এবং গোটা পরিবার ও বংশের লোকদের মাঝে যথারীতি ঈমানের অভিযান পরিচালনা করুন। দাজ্জালের মহা ফেতনার ভয়াবহতা সম্পর্কে নিজেও সজাগ সচেতন থাকুন, অন্যদেরকেও সচেতন করে তুলুন।
স্মরণ করুন ইরাকের সেই অসহায় মায়েদের, ফিলিস্তিনের সেই বোনদের, যাদের হাতের মেহেদী শুকানোর আগেই তাদের সোহাগ উজাড় করে দেওয়া হয়েছে।
স্মরণ করুন, কাশ্মীর ও আফগানিস্তানের সে কন্যাদের, যারা জীবনের প্রতিটি পলক ও প্রতিটি মুহূর্ত বিহ্বলতার মধ্য দিয়ে অতিক্রম করে থাকে।
স্মরণ করুন, সিরিয়ার সেই নিস্পাপ শিশুদের, যারা খোলা আকাশের নিচে মা! মা! করে চিৎকার করছে, কিন্তু তাদের মায়েদের ইমাম মাহদির আগমনপূর্ব আলামত বহনকারী নুসাইরিয়া সম্প্রদায়ের বনু কাল্ব গোত্রের জালেমরা ছিনিয়ে নিয়ে গেছে।
আমাদের মা ও বোনদের ভুলে গেলে চলবে না, যে দাজ্জালের সঙ্গে মহাযুদ্ধের ক্ষেত্রে এই অঞ্চলের (ভারতীয় উপমহাদেশের) মুজাহিদদের সংশ্লিষ্টতা রয়েছে।
◘ হযরত নাহীক ইবনে সারীম (রাঃ) বর্ণনা করেন, আল্লাহর রাসুল সাল্লল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “নিঃসন্দেহে তোমরা মুশরিকদের (মূর্তিপূজারীদের) সঙ্গে যুদ্ধ করবে। এমনকি এই যুদ্ধে তোমাদের বেঁচে যাওয়া মুজাহিদরা উর্দুন (জর্ডান) নদীর তীরে দাজ্জালের সঙ্গে যুদ্ধে লিপ্ত হবে। এই যুদ্ধে তোমরা পূর্ব দিকে অবস্থান গ্রহণ করবে আর দাজ্জালের অবস্থান হবে পশ্চিম দিকে”। (আল ইসাবা, খণ্ড ৬, পৃষ্ঠা ৪৭৬)
এখানে মুশরিকদের দ্বারা উদ্দেশ্য উপমহাদেশের মূর্তিপূজারী জাতি। তার মানে এটি হাদিস শরীফে বর্ণিত সেই যুদ্ধ – “গাজওয়াতুল হিন্দ”, যেখানে মুজাহিদরা এই উপমহাদেশে আক্রমণ চালাবে, আল্লাহ তাদেরকে বিজয় দান করবেন, ক্ষমা করে দেবেন, বেঁচে যাওয়া মুজাহিদরা জেরুজালেমে ফিরে যাবে এবং সেখানে ঈসা (আঃ) সাক্ষাত পাবে এবং ঈসা (আঃ) নেতৃত্বে দাজ্জালের বিরুদ্ধে মহাযুদ্ধে অংশগ্রহণ করবে।
গাজওয়াতুল হিন্দের হাদিসগুলো পাবেন এই লিংকে
বর্তমানে এই উপমহাদেশের মুর্তিপুজারী ভূখণ্ডের মুসলিম প্রধান ভূখণ্ডের উপর সামাজিক, সাংস্কৃতিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক আগ্রাসনের অব্যাহত প্রচেষ্টা দেখলে বুঝা যায় যে, এটি একদিন চূড়ান্ত সংঘাতময়রূপ ধারণ করবে এবং এখানকার দ্বীন ইসলামকে টিকিয়ে রাখতে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের ভবিষ্যৎ বাণী মোতাবেক উম্মতের একটি দলকে এই দিকে অগ্রসর হতে হবে। এবং এটি ঘটবে সেই সম সাময়িক সময়ে যখন সমগ্র দুনিয়াতে ইসলামের ক্রান্তিলগ্নে ইসলামকে খেলাফতের আদলে সাজাতে আল্লাহ ইমাম মাহদিকে প্রেরণ করবেন আর যার খেলাফতের সপ্তম বছরে দাজ্জালের আবির্ভাব হবে এবং দাজ্জালের সাথে মহাযুদ্ধের নেতৃত্ব দিতে ঈসা (আঃ) এর আগমন ঘটবে।
তাই, দ্বীনের উপর দৃঢ়পদ ভবিষ্যৎ প্রজন্ম রেখে যাওয়া দায়িত্ব আমাদের মা বোনদের উপর অনেকাংশে নির্ভরশীল। আল্লাহ আমাদের সাহায্য করুন আমিন।
উৎস - আমিন বেইগের ব্লগ
STA-95.149
© 2014 by Ask Islam Bangla.