প্রশ্ন ১২৫ --> টেলিফোনে বিয়ে কি বৈধ?
উত্তর :
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
ইসলামের দৃষ্টিতে অধুনা প্রচলিত টেলিফোনে বিয়ে কোনোক্রমেই জায়েজ নয়। কারণ ইসলামী শরিয়তের বিধানানুযায়ী বিয়ে সঠিক হওয়ার জন্য সাক্ষী শর্ত। সাক্ষী ছাড়া বিয়ে হয় না। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “সাক্ষী ছাড়া কোনো বিয়ে হয় না।“ (জামে তিরমিজি, বিয়ে অধ্যায়, অনুচ্ছেদঃ সাক্ষী ছাড়া বিয়ে হয় না)।
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত অপর এক হাদিসে রয়েছে, “যেসব মহিলা সাক্ষী ছাড়া বিয়ে করে তারা ব্যভিচারিণী।“ ইমাম তিরমিজির উপরোক্ত হাদিস দুটি বর্ণনা করার পর লিখেন, এ ধরনের হাদিসের ভিত্তিতেই সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন তাবে-তাবেঈন ও চার মাজহাবের ইমামরা বলেছেন, সাক্ষী ছাড়া কোনো বিয়ে হয় না। এ বিষয়ে তাদের মধ্যে কোনো ধরনের মতবিরোধ নেই। সবাই এ ব্যাপারে একমত। ফিকহ ও ফতোয়ার কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, “কোনো দুজন মুসলমান নর-নারীর বিয়ে দুজন স্বাধীন, সুস্থ জ্ঞানসম্পন্ন, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দুজন মহিলা সাক্ষীর উপস্থিতি ছাড়া সংঘটিত হবে না।“ (হিদায়া-দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ২৭৬, শামি চতুর্থ খণ্ড, পৃ. ৮৬-৮৭, আলমগীরি-প্রথম খণ্ড, পৃ. ২৬৭ ইত্যাদি)।
সব ফিকহ ও ফতোয়ার কিতাবে এ কথাও উল্লেখ রয়েছে যে বিয়ে অনুষ্ঠানে বর বা বরের উকিল এবং কনে বা কনের উকিল একই বৈঠকে একই স্থানে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে এবং সে অনুষ্ঠানে সাক্ষীরাও সশরীরে উপস্থিত থেকে বর বা বরের উকিল ও কনে বা কনের উকিলের ইজাব-কবুল সরাসরি ও সামনাসামনি শুনতে হবে। তবেই তাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে, অন্যথায় নয়। (ফতোয়ায়ে আলমগীরি, প্রথম খণ্ড, পৃ. ২৬৯)।
সাক্ষীরা যদি বিয়ের অনুষ্ঠানে বর বা বরের উকিল এবং কনের উকিলকে সশরীরে সামনাসামনি না দেখেন, তাহলে বিয়ে হবে না। তদ্রূপ একই বৈঠকে বিয়ে অনুষ্ঠান হতে হবে। বৈঠক দুই হলে বিয়ে হবে না। টেলিফোনে বিয়ের ক্ষেত্রে যেহেতু বর এক দেশে এবং কনে বা কনের উকিল অন্য দেশে পৃথক দুটি স্থানে অবস্থান করেন, উপরন্তু সাক্ষীরা ইজাব-কবুল ফোনের মাধ্যমে শুনে থাকেন, সরাসরি বর বা বরের উকিল, কনে বা কনের উকিলকে দেখেন না এবং তাদের কথাও শোনেন না; সেহেতু ইসলামের দৃষ্টিতে এমন বিয়ে জায়েজ নয়। প্রাচীনকালে ফোন ছিল না, তাই ফোনে বিয়ের বিষয়টি সেকালের কিতাবাদিতে সুস্পষ্ট উল্লেখ নেই। তবে পূর্বোক্ত বিষয়গুলো সেকাল ও একালের সব কিতাবে উল্লেখ রয়েছে। যা দ্বারা সুস্পষ্ট বোঝা যায় যে ফোনে বিয়ে কোনোক্রমেই জাযেজ নয়। তদুপরি ফোনে বিয়ে প্রবর্তনের পর অনেক বিশ্ববরেণ্য মুফতিই নিজ নিজ কিতাবে পরিষ্কার ভাষায়ই উল্লেখ করেছেন যে টেলিফোনে বিয়ে আদৌ জায়েজ নয়। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া, ১১শ খণ্ড, পৃ. ১৬২-১৬৩, ফতোয়ায়ে নিজামিয়া, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ২০৬, জাদিদ ফিকহি মাসাইল)।
তবে ইসলাম ‘ফিতরাত’ তথা স্বভাব- প্রকৃতির ধর্ম। সহজ-সরল পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করা বা বিষিয়ে তোলা ইসলামের কাম্য নয়। তাই প্রবাসীদের বিয়ে-শাদীর বাস্তব সমস্যাকে ইসলাম জিইয়ে রাখেনি। বরং ইসলামের দৃষ্টিতে ফোনে বিয়ের একটি বিকল্প ব্যবস্থাও রয়েছে। জানা থাকলে ফোনে বিয়ের প্রয়োজনই পড়ে না। তা হচ্ছে, প্রবাসী পাত্র বা পাত্রী কোনো আপনজন বা যে কাউকে চিঠি, ফোন, ফ্যাক্স, ই-মেইল ইত্যাদির মাধ্যমে নিজের উকিল বানাবেন। উকিল অপর পক্ষের সামনে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে বিয়ে সম্পন্ন করবেন। এতে উভয় পক্ষ ও সাক্ষীরা একই বৈঠকে বিয়ে সম্পন্ন করতে সমর্থ হবেন। তাহলে ইসলামের দৃষ্টিতে আর কোনো আপত্তি থাকবে না। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া, ১১শ খণ্ড, পৃ. ১৬৩, ফতোয়ায়ে নিজামিয়া দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ২০৭)।
দেশের ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ অনেকেই মনে করেন, টেলিফোনে বিয়ে ইসলামসম্মত। তাই, অধুনা প্রায়ই ফোনে বিয়ে হচ্ছে। অনেক প্রবাসীর বিয়ে এভাবে হয়েছে। কারণ, তাঁরা জানতেনই না যে এটা ইসলামসম্মত বা জায়েজ নয়। এ জন্য আমরা অনুরোধ করব, যাঁদের বিয়ে টেলিফোনে হয়েছে তাঁরা যেন আবারও যথারীতি বিয়ে সম্পন্ন করে নেন এবং অতীতের এত বড় মারাত্মক পাপের জন্য আল্লাহ তায়ালার দরবারে কায়মনোবাক্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ইসলামের প্রকৃত বিধান সম্পর্কে জানার পরও যদি কেউ সংশোধন না হন, তাহলে তিনি সর্বদা গুনাহগারই থেকে যাবেন। ইসলামের দৃষ্টিতে টেলিফোনে বিয়ে হওয়া দম্পতির দাম্পত্য জীবন(?) হবে সম্পূর্ণ অবৈধ। তাই সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক হওয়ার জন্য আমরা বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
>> মুফতী মুতীউর রাহমান
STA-90.140
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
ইসলামের দৃষ্টিতে অধুনা প্রচলিত টেলিফোনে বিয়ে কোনোক্রমেই জায়েজ নয়। কারণ ইসলামী শরিয়তের বিধানানুযায়ী বিয়ে সঠিক হওয়ার জন্য সাক্ষী শর্ত। সাক্ষী ছাড়া বিয়ে হয় না। হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনঃ “সাক্ষী ছাড়া কোনো বিয়ে হয় না।“ (জামে তিরমিজি, বিয়ে অধ্যায়, অনুচ্ছেদঃ সাক্ষী ছাড়া বিয়ে হয় না)।
হজরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত অপর এক হাদিসে রয়েছে, “যেসব মহিলা সাক্ষী ছাড়া বিয়ে করে তারা ব্যভিচারিণী।“ ইমাম তিরমিজির উপরোক্ত হাদিস দুটি বর্ণনা করার পর লিখেন, এ ধরনের হাদিসের ভিত্তিতেই সাহাবায়ে কেরাম, তাবেঈন তাবে-তাবেঈন ও চার মাজহাবের ইমামরা বলেছেন, সাক্ষী ছাড়া কোনো বিয়ে হয় না। এ বিষয়ে তাদের মধ্যে কোনো ধরনের মতবিরোধ নেই। সবাই এ ব্যাপারে একমত। ফিকহ ও ফতোয়ার কিতাবে উল্লেখ করা হয়েছে, “কোনো দুজন মুসলমান নর-নারীর বিয়ে দুজন স্বাধীন, সুস্থ জ্ঞানসম্পন্ন, প্রাপ্তবয়স্ক পুরুষ অথবা একজন পুরুষ ও দুজন মহিলা সাক্ষীর উপস্থিতি ছাড়া সংঘটিত হবে না।“ (হিদায়া-দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ২৭৬, শামি চতুর্থ খণ্ড, পৃ. ৮৬-৮৭, আলমগীরি-প্রথম খণ্ড, পৃ. ২৬৭ ইত্যাদি)।
সব ফিকহ ও ফতোয়ার কিতাবে এ কথাও উল্লেখ রয়েছে যে বিয়ে অনুষ্ঠানে বর বা বরের উকিল এবং কনে বা কনের উকিল একই বৈঠকে একই স্থানে সশরীরে উপস্থিত থাকতে হবে এবং সে অনুষ্ঠানে সাক্ষীরাও সশরীরে উপস্থিত থেকে বর বা বরের উকিল ও কনে বা কনের উকিলের ইজাব-কবুল সরাসরি ও সামনাসামনি শুনতে হবে। তবেই তাদের সাক্ষ্য গ্রহণযোগ্য হবে, অন্যথায় নয়। (ফতোয়ায়ে আলমগীরি, প্রথম খণ্ড, পৃ. ২৬৯)।
সাক্ষীরা যদি বিয়ের অনুষ্ঠানে বর বা বরের উকিল এবং কনের উকিলকে সশরীরে সামনাসামনি না দেখেন, তাহলে বিয়ে হবে না। তদ্রূপ একই বৈঠকে বিয়ে অনুষ্ঠান হতে হবে। বৈঠক দুই হলে বিয়ে হবে না। টেলিফোনে বিয়ের ক্ষেত্রে যেহেতু বর এক দেশে এবং কনে বা কনের উকিল অন্য দেশে পৃথক দুটি স্থানে অবস্থান করেন, উপরন্তু সাক্ষীরা ইজাব-কবুল ফোনের মাধ্যমে শুনে থাকেন, সরাসরি বর বা বরের উকিল, কনে বা কনের উকিলকে দেখেন না এবং তাদের কথাও শোনেন না; সেহেতু ইসলামের দৃষ্টিতে এমন বিয়ে জায়েজ নয়। প্রাচীনকালে ফোন ছিল না, তাই ফোনে বিয়ের বিষয়টি সেকালের কিতাবাদিতে সুস্পষ্ট উল্লেখ নেই। তবে পূর্বোক্ত বিষয়গুলো সেকাল ও একালের সব কিতাবে উল্লেখ রয়েছে। যা দ্বারা সুস্পষ্ট বোঝা যায় যে ফোনে বিয়ে কোনোক্রমেই জাযেজ নয়। তদুপরি ফোনে বিয়ে প্রবর্তনের পর অনেক বিশ্ববরেণ্য মুফতিই নিজ নিজ কিতাবে পরিষ্কার ভাষায়ই উল্লেখ করেছেন যে টেলিফোনে বিয়ে আদৌ জায়েজ নয়। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া, ১১শ খণ্ড, পৃ. ১৬২-১৬৩, ফতোয়ায়ে নিজামিয়া, দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ২০৬, জাদিদ ফিকহি মাসাইল)।
তবে ইসলাম ‘ফিতরাত’ তথা স্বভাব- প্রকৃতির ধর্ম। সহজ-সরল পূর্ণাঙ্গ জীবনব্যবস্থা। মানুষের জীবনযাত্রাকে কঠিন করা বা বিষিয়ে তোলা ইসলামের কাম্য নয়। তাই প্রবাসীদের বিয়ে-শাদীর বাস্তব সমস্যাকে ইসলাম জিইয়ে রাখেনি। বরং ইসলামের দৃষ্টিতে ফোনে বিয়ের একটি বিকল্প ব্যবস্থাও রয়েছে। জানা থাকলে ফোনে বিয়ের প্রয়োজনই পড়ে না। তা হচ্ছে, প্রবাসী পাত্র বা পাত্রী কোনো আপনজন বা যে কাউকে চিঠি, ফোন, ফ্যাক্স, ই-মেইল ইত্যাদির মাধ্যমে নিজের উকিল বানাবেন। উকিল অপর পক্ষের সামনে সাক্ষীদের উপস্থিতিতে বিয়ে সম্পন্ন করবেন। এতে উভয় পক্ষ ও সাক্ষীরা একই বৈঠকে বিয়ে সম্পন্ন করতে সমর্থ হবেন। তাহলে ইসলামের দৃষ্টিতে আর কোনো আপত্তি থাকবে না। (ফতোয়ায়ে মাহমুদিয়া, ১১শ খণ্ড, পৃ. ১৬৩, ফতোয়ায়ে নিজামিয়া দ্বিতীয় খণ্ড, পৃ. ২০৭)।
দেশের ধর্মপ্রাণ সাধারণ মানুষ অনেকেই মনে করেন, টেলিফোনে বিয়ে ইসলামসম্মত। তাই, অধুনা প্রায়ই ফোনে বিয়ে হচ্ছে। অনেক প্রবাসীর বিয়ে এভাবে হয়েছে। কারণ, তাঁরা জানতেনই না যে এটা ইসলামসম্মত বা জায়েজ নয়। এ জন্য আমরা অনুরোধ করব, যাঁদের বিয়ে টেলিফোনে হয়েছে তাঁরা যেন আবারও যথারীতি বিয়ে সম্পন্ন করে নেন এবং অতীতের এত বড় মারাত্মক পাপের জন্য আল্লাহ তায়ালার দরবারে কায়মনোবাক্যে ক্ষমা প্রার্থনা করেন। ইসলামের প্রকৃত বিধান সম্পর্কে জানার পরও যদি কেউ সংশোধন না হন, তাহলে তিনি সর্বদা গুনাহগারই থেকে যাবেন। ইসলামের দৃষ্টিতে টেলিফোনে বিয়ে হওয়া দম্পতির দাম্পত্য জীবন(?) হবে সম্পূর্ণ অবৈধ। তাই সবাইকে এ বিষয়ে সতর্ক হওয়ার জন্য আমরা বিনীত অনুরোধ জানাচ্ছি।
>> মুফতী মুতীউর রাহমান
STA-90.140
© 2014 by Ask Islam Bangla.