প্রশ্ন ১০৫ --> ঠাট্টা- মস্করা , রসিকতা করা কি ইসলামে জায়েজ ?
উত্তর :
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবনীর দিকে যদি আমরা চোখ রাখি তাহলে একজন মহামানবের চরিত্র ও সুন্দর মনের এমন কোন দিক নেই যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শিক দিক নির্দেশনা নেই। মানব সভ্যতার কোন পথ এমন নেই যে পথে পড়েনি তাঁর নির্দেশনামূলক পথ রেখা। একজন মানুষের জীবন চলার পথে যত ধরনের সমস্যা আছে সকল ধরনের সমস্যার সমাধান রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবনাদর্শের মাঝে নিহিত রয়েছে। ব্যক্তিগত, সাংসারিক, পারিবারিক, রাষ্ট্রীয়, আন্তর্জাতিক এমনকি বাথরূমে যাওয়া-আসা থেকে নিয়ে সকল বিষয়ে তাঁর জীবনাদর্শ বিদ্যমান রয়েছে।
ঠিক তেমনিভাবে হাস্য-রসিকতা কিভাবে করতে হবে সেখানেও তাঁর দিক নির্দেশনা বিদ্যমান। যদিও তিনি সর্বদা চিন্তাশীল ছিলেন একথা যেমন ঠিক, তেমনিভাবে তিনি মাঝেমধ্যে হাস্য-রসিকতাও করতেন এটাও ঠিক। সীমানার ভিতরে থেকে হাসি-আনন্দ করা শরীয়তের চাহিদা। শরীয়তের গন্ডির ভিতরে থেকে হাস্য-রসিকতা করাকে শরীয়তের পরিপন্থী ভাবা অন্যায়। যারা এমন ধারণা করে তারা হয়ত অজ্ঞতার কারণে এমন করে অথবা অন্যান্য বিকৃত ও সীমাবদ্ধ ধর্মের ন্যায় ইসলামকেও বৈরাগ্যের আদলে সাজাতে চায়। তবে আমাদের হাস্য ও রসিকতা হতে হবে শরীয়তের গন্ডির ভিতরে। এর বাইরে এমন কোন হাসি তামাশা করা যাবে না যার কারণে অন্তরে মরিচা পড়ে যায় । হাস্য রসিকতা এমন হবে যেন -
আমাদের রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো মিথ্যে বলতেন না। মজা করেও না। তার মানে এই না যে তিনি মজা করতেন না।
# একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের সাথে বসে খেজুর খাচ্ছিলেন। উক্ত মজলিসে হযরত আলী রা.ও ছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং কয়েকজন সাহাবী খেজুর খেয়ে বীচিগুলো হযরত আলী রা.এর সামনে রেখে দিচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রসিকতা করে বললেন, বীচি দেখে অনুমান করা যায় কে বেশি খেজুর খেয়েছে। একথা শুনে আলী রা. উত্তর দিলেন, এতে অবশ্য দর্শক একথাও বুঝতে পারে যে, কোন মানুষটি বীচিগুলো বাদ দিয়ে শুধু খেজুর খেয়েছে আর কে বীচিসহ খেজুর খেয়ে ফেলেছে।
তিনি আনাস ইবন মালিক (রা) কে মজা করে ডাকতেন "হে দুই কান ওয়ালা" বলে।
# আনাস (রা) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে আছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার তাকে এ বলে সম্বোধন করেছিলেন: ‘হে দুই কান বিশিষ্ট ব্যক্তি’ হাদীসের একজন বর্ণনাকারী আবু উসামা বলেন: অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে রসিকতা করছিলেন। (তিরমিজিঃ ৩৫)
এতে কৌতুকও হল এবং সে এতে মনে কষ্টও পেল না আর বাস্তবতাকে অস্বীকারও করা হল না। কারণ সে তো দুই কান ওয়ালা এমনিতেই আছে।
# নাম তার আব্দুর রহমান। আসহাবে সুফফাদের অন্যতম। রাসূলের সার্বক্ষণিক সাথী। খেয়ে না খেয়ে রাসূলের আনুগত্য ও অহির জ্ঞানলাভে সারাক্ষণ রাসূলের বাড়িতেই পড়ে থাকেন। তিনিই রাসূলের মহববতের আবু হোরায়রা বা বিড়ালের বাবা। আব্দুর রহমান বিড়াল বাচ্চা কোলে নিয়ে রাসূলের কাছে যেতেন। একদিন তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে রসিকতা করে বললেন, হে আবু হোরায়রা। সেখান থেকেই আব্দুর রহমান হয়ে গেলেন আবু হোরায়রা। আবু হোরায়রা সর্বোচ্চ সংখ্যক হাদিস বর্ণনাকারী।
# এক ব্যাক্তি একবার তাঁর কাছে একটি উট চাইলে তিনি বলেন, "আমি তোমাকে একটা উটের বাচ্চা দেব।" সে ব্যক্তি বললেন, "উটের বাচ্চা দিয়ে আমি কি করবো?" রাসুলাল্লাহ (সা) বললেন, "উট কি উটের বাচ্চা নয়?" (আবু দাউদ, তিরমিযী)
# হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যাহের ইবনে হারাম নামে একজন গ্রাম্য লোক ছিল। সে গ্রাম থেকে আসার সময় নবী করিম (সা)এর জন্য গ্রামীণ হাদিয়া নিয়ে আসত, আর সে মদিনা থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় তিনি তাকে শহুরে হাদিয়া দিয়ে দিতেন। নবী করিম (সা) একবার কৌতুক করে বলেন, যাহের আমাদের গ্রাম আর আমরা তার শহর। তিনি তাকে অত্যন্ত মহব্বত করতেন। সে দেখতে ছিল খুব কুৎসিত। একদা কোনো স্থানে দাঁড়িয়ে সে পণ্য বিক্রি করছিল। ইত্যবসরে নবী করিম (সা) এসে বগলের নিচ দিয়ে তাকে এমন ভাবে ধরলেন যে, সে তাকে দেখতে পারছিল না। সে বলে উঠল কে রে! ছেড়ে দে। কিন্তু কোনোভাবে নবীজীকে একটু চিনতে পেরে ভালোভাবে তার বুকের সঙ্গে আপন পৃষ্ঠকে ঘষতে থাকল। নবী করিম (সা) বললেন, কে এই গোলামকে খরিদ করবে? যাহের বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে তো নিতান্তই কম মূল্যে বিক্রি করতে হবে। তিনি বললেন, "আল্লাহর নিকট তোমার মূল্য অনেক" (আহমাদ, তিরমিযী)
# এক বৃদ্ধা রাসূলাল্লাহর (সা) কাছে এসে তাঁর কাছে অনুরোধ করেন সে বৃদ্ধার জন্যে দু'আ করতে যাতে তিনি জান্নাতে যেতে পারেন। রাসূলাল্লাহ (সা) বললেন, "হে অমুকের মা! কোন বৃদ্ধা জান্নাতে যাবেনা।" এটা শুনে বৃদ্ধা কাঁদতে শুরু করলে রাসূলাল্লাহ (সা) তাঁকে বুঝিয়ে বলেন যে জান্নাতে কেউ বৃদ্ধ থাকবেনা। সবাই যুব বয়সী থাকবে। (তিরমিযী)
# অন্য এক বর্ণনায় আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত এক ব্যাক্তি রাসূলাল্লাহকে (সা) জিজ্ঞেস করেন "হে আল্লাহর রাসূল! আপনি নাকি আমাদের সাথে কৌতুক করেন?" রাসুলাল্লাহ (সা) জবাব দেন, "আমি সত্য বিনা বলিনা"।
এই ছিল রাসূলাল্লাহর (সা) সুন্দর, মধুময় ও নিষ্কলুষ হাস্য-রসিকতা। এ অনুপম ও অমূল্য হাস্যরস উপহার যেমন পবিত্রতা, শালীনতা ও সৌন্দর্যের নিদর্শন, তেমনি এতে রয়েছে নির্মল, নির্দোষ আনন্দ। হৃদয়ের গহীনে পুঞ্জিভূত দুঃখ-দুশ্চিন্তার কালো মেঘ সরিয়ে দিয়ে যেখানে সূর্যালোকের ঝলকানি আনয়ন করে তাই হচ্ছে রসিকতা। পক্ষান্তরে রসিকতা করতে আমরা অবলীলায় কত ধোঁকা-প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে থাকি। কৌতুকের ছলে মিথ্যাকে আমরা মিথ্যাই মনে করি না। অথচ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাস্য-রসিকতার ক্ষেত্রেও মিথ্যা, প্রহসনকে এড়িয়ে চলেছেন। চলুন সত্যাশ্রয়ী কৌতুক ও রসিকতায় জীবনকে নিরপরাধ আনন্দময় করে তুলি। আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাস্য-রসিকতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন।
আমিন।
আরো পড়ুন
11 Rules In Islam On Joking
STA-70.110
যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।
সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ মানব রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবনীর দিকে যদি আমরা চোখ রাখি তাহলে একজন মহামানবের চরিত্র ও সুন্দর মনের এমন কোন দিক নেই যেখানে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর আদর্শিক দিক নির্দেশনা নেই। মানব সভ্যতার কোন পথ এমন নেই যে পথে পড়েনি তাঁর নির্দেশনামূলক পথ রেখা। একজন মানুষের জীবন চলার পথে যত ধরনের সমস্যা আছে সকল ধরনের সমস্যার সমাধান রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর জীবনাদর্শের মাঝে নিহিত রয়েছে। ব্যক্তিগত, সাংসারিক, পারিবারিক, রাষ্ট্রীয়, আন্তর্জাতিক এমনকি বাথরূমে যাওয়া-আসা থেকে নিয়ে সকল বিষয়ে তাঁর জীবনাদর্শ বিদ্যমান রয়েছে।
ঠিক তেমনিভাবে হাস্য-রসিকতা কিভাবে করতে হবে সেখানেও তাঁর দিক নির্দেশনা বিদ্যমান। যদিও তিনি সর্বদা চিন্তাশীল ছিলেন একথা যেমন ঠিক, তেমনিভাবে তিনি মাঝেমধ্যে হাস্য-রসিকতাও করতেন এটাও ঠিক। সীমানার ভিতরে থেকে হাসি-আনন্দ করা শরীয়তের চাহিদা। শরীয়তের গন্ডির ভিতরে থেকে হাস্য-রসিকতা করাকে শরীয়তের পরিপন্থী ভাবা অন্যায়। যারা এমন ধারণা করে তারা হয়ত অজ্ঞতার কারণে এমন করে অথবা অন্যান্য বিকৃত ও সীমাবদ্ধ ধর্মের ন্যায় ইসলামকেও বৈরাগ্যের আদলে সাজাতে চায়। তবে আমাদের হাস্য ও রসিকতা হতে হবে শরীয়তের গন্ডির ভিতরে। এর বাইরে এমন কোন হাসি তামাশা করা যাবে না যার কারণে অন্তরে মরিচা পড়ে যায় । হাস্য রসিকতা এমন হবে যেন -
- কোন মিথ্যা কিছু থাকবে না ।
- ইসলামের কোন বিষয় যেন হাসি-ঠাট্টার অন্তর্ভুক্ত হয়ে না পরে ।
- কাউকে এমনভাবে হাসির পাত্র বানানো যাবে না যাতে সে মনে কোন কষ্ট পায় ।
- কারো দুর্ঘটনা/দুরাবস্থা নিয়ে হাসি-ঠাট্টা করা যাবে না । যেমন- কেউ কলার ছিলকায় পা পিছলে পড়ে গেল তখন এটাকে ঠাট্টার বিষয় বানানো যাবে না ।
- মজা করার জন্য কাউকে ভরকিয়ে দেওয়া বা ভয় পাইয়ে দেওয়া যাবে না ।
- গীবত-পরনিন্দার কোন স্থান তার মধ্যে হতে পারবে না ।
- সবসময় মাত্রাতিরিক্ত হাসি-ঠাট্টা করা যাবে না ।
- স্থান-কাল -পাত্র বিবেচনা করে হাসি-ঠাট্টা করতে হবে । পিকনিকের মুডের জোকস , কেউ মারা গেছে এমন বাড়ি গিয়ে করা যাবে না ।
- অশ্লীল শব্দ ব্যবহার করা যাবে না ।
- কাউকে নিয়ে মজা করলে তার অবস্থান, সম্মান , মর্যাদা বিবেচনায় রাখতে হবে যেন কারো কোন অসম্মান না হয় ।
আমাদের রাসূলাল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম কখনো মিথ্যে বলতেন না। মজা করেও না। তার মানে এই না যে তিনি মজা করতেন না।
# একদা রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম সাহাবীগণের সাথে বসে খেজুর খাচ্ছিলেন। উক্ত মজলিসে হযরত আলী রা.ও ছিলেন। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম এবং কয়েকজন সাহাবী খেজুর খেয়ে বীচিগুলো হযরত আলী রা.এর সামনে রেখে দিচ্ছিলেন। এক পর্যায়ে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম রসিকতা করে বললেন, বীচি দেখে অনুমান করা যায় কে বেশি খেজুর খেয়েছে। একথা শুনে আলী রা. উত্তর দিলেন, এতে অবশ্য দর্শক একথাও বুঝতে পারে যে, কোন মানুষটি বীচিগুলো বাদ দিয়ে শুধু খেজুর খেয়েছে আর কে বীচিসহ খেজুর খেয়ে ফেলেছে।
তিনি আনাস ইবন মালিক (রা) কে মজা করে ডাকতেন "হে দুই কান ওয়ালা" বলে।
# আনাস (রা) থেকে বর্ণিত এক হাদিসে আছে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম একবার তাকে এ বলে সম্বোধন করেছিলেন: ‘হে দুই কান বিশিষ্ট ব্যক্তি’ হাদীসের একজন বর্ণনাকারী আবু উসামা বলেন: অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তার সাথে রসিকতা করছিলেন। (তিরমিজিঃ ৩৫)
এতে কৌতুকও হল এবং সে এতে মনে কষ্টও পেল না আর বাস্তবতাকে অস্বীকারও করা হল না। কারণ সে তো দুই কান ওয়ালা এমনিতেই আছে।
# নাম তার আব্দুর রহমান। আসহাবে সুফফাদের অন্যতম। রাসূলের সার্বক্ষণিক সাথী। খেয়ে না খেয়ে রাসূলের আনুগত্য ও অহির জ্ঞানলাভে সারাক্ষণ রাসূলের বাড়িতেই পড়ে থাকেন। তিনিই রাসূলের মহববতের আবু হোরায়রা বা বিড়ালের বাবা। আব্দুর রহমান বিড়াল বাচ্চা কোলে নিয়ে রাসূলের কাছে যেতেন। একদিন তাই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম তাকে রসিকতা করে বললেন, হে আবু হোরায়রা। সেখান থেকেই আব্দুর রহমান হয়ে গেলেন আবু হোরায়রা। আবু হোরায়রা সর্বোচ্চ সংখ্যক হাদিস বর্ণনাকারী।
# এক ব্যাক্তি একবার তাঁর কাছে একটি উট চাইলে তিনি বলেন, "আমি তোমাকে একটা উটের বাচ্চা দেব।" সে ব্যক্তি বললেন, "উটের বাচ্চা দিয়ে আমি কি করবো?" রাসুলাল্লাহ (সা) বললেন, "উট কি উটের বাচ্চা নয়?" (আবু দাউদ, তিরমিযী)
# হযরত আনাস (রা) থেকে বর্ণিত তিনি বলেন, যাহের ইবনে হারাম নামে একজন গ্রাম্য লোক ছিল। সে গ্রাম থেকে আসার সময় নবী করিম (সা)এর জন্য গ্রামীণ হাদিয়া নিয়ে আসত, আর সে মদিনা থেকে প্রত্যাবর্তনের সময় তিনি তাকে শহুরে হাদিয়া দিয়ে দিতেন। নবী করিম (সা) একবার কৌতুক করে বলেন, যাহের আমাদের গ্রাম আর আমরা তার শহর। তিনি তাকে অত্যন্ত মহব্বত করতেন। সে দেখতে ছিল খুব কুৎসিত। একদা কোনো স্থানে দাঁড়িয়ে সে পণ্য বিক্রি করছিল। ইত্যবসরে নবী করিম (সা) এসে বগলের নিচ দিয়ে তাকে এমন ভাবে ধরলেন যে, সে তাকে দেখতে পারছিল না। সে বলে উঠল কে রে! ছেড়ে দে। কিন্তু কোনোভাবে নবীজীকে একটু চিনতে পেরে ভালোভাবে তার বুকের সঙ্গে আপন পৃষ্ঠকে ঘষতে থাকল। নবী করিম (সা) বললেন, কে এই গোলামকে খরিদ করবে? যাহের বলল, ইয়া রাসুলাল্লাহ! আমাকে তো নিতান্তই কম মূল্যে বিক্রি করতে হবে। তিনি বললেন, "আল্লাহর নিকট তোমার মূল্য অনেক" (আহমাদ, তিরমিযী)
# এক বৃদ্ধা রাসূলাল্লাহর (সা) কাছে এসে তাঁর কাছে অনুরোধ করেন সে বৃদ্ধার জন্যে দু'আ করতে যাতে তিনি জান্নাতে যেতে পারেন। রাসূলাল্লাহ (সা) বললেন, "হে অমুকের মা! কোন বৃদ্ধা জান্নাতে যাবেনা।" এটা শুনে বৃদ্ধা কাঁদতে শুরু করলে রাসূলাল্লাহ (সা) তাঁকে বুঝিয়ে বলেন যে জান্নাতে কেউ বৃদ্ধ থাকবেনা। সবাই যুব বয়সী থাকবে। (তিরমিযী)
# অন্য এক বর্ণনায় আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত এক ব্যাক্তি রাসূলাল্লাহকে (সা) জিজ্ঞেস করেন "হে আল্লাহর রাসূল! আপনি নাকি আমাদের সাথে কৌতুক করেন?" রাসুলাল্লাহ (সা) জবাব দেন, "আমি সত্য বিনা বলিনা"।
এই ছিল রাসূলাল্লাহর (সা) সুন্দর, মধুময় ও নিষ্কলুষ হাস্য-রসিকতা। এ অনুপম ও অমূল্য হাস্যরস উপহার যেমন পবিত্রতা, শালীনতা ও সৌন্দর্যের নিদর্শন, তেমনি এতে রয়েছে নির্মল, নির্দোষ আনন্দ। হৃদয়ের গহীনে পুঞ্জিভূত দুঃখ-দুশ্চিন্তার কালো মেঘ সরিয়ে দিয়ে যেখানে সূর্যালোকের ঝলকানি আনয়ন করে তাই হচ্ছে রসিকতা। পক্ষান্তরে রসিকতা করতে আমরা অবলীলায় কত ধোঁকা-প্রতারণার আশ্রয় নিয়ে থাকি। কৌতুকের ছলে মিথ্যাকে আমরা মিথ্যাই মনে করি না। অথচ নবী করিম সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম হাস্য-রসিকতার ক্ষেত্রেও মিথ্যা, প্রহসনকে এড়িয়ে চলেছেন। চলুন সত্যাশ্রয়ী কৌতুক ও রসিকতায় জীবনকে নিরপরাধ আনন্দময় করে তুলি। আল্লাহ তা’আলা আমাদেরকে নবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম-এর হাস্য-রসিকতা থেকে শিক্ষা গ্রহণ করার তাওফিক দান করুন।
আমিন।
আরো পড়ুন
11 Rules In Islam On Joking
STA-70.110
© 2013 by Ask Islam Bangla.