ASK ISLAM BANGLA
  • Home
  • রচনাবলী
  • সাধারণ প্রশ্ন-উত্তর
  • ইসলামি সাধারণ জ্ঞান
  • ইসলাম বিরোধী প্রশ্নের জবাব
  • ইসলামের সেই কাহিনীগুলো
  • সাহাবীদের কাহিনী
  • গল্পে গল্পে শিখী
  • ROAD TO PEACE
  • Forum

অভিযোগ ১৯ --> মানুষ জান্নাতে যাবে নাকি জাহান্নামে যাবে তা তো আগে থেকেই তাকদীরে লেখা। আর এর ব্যতিক্রমও ঘটবে না। তো, কেউ যদি হিন্দু বা নাস্তিক হওয়ার জন্য জাহান্নামে যায় এটা তো সেই ব্যক্তির দোষ না। এটা সৃষ্টিকর্তারই দোষ। ​

উত্তর :

যাবতীয় প্রশংসা আল্লাহর। দরুদ ও সালাম আল্লাহর রাসূল (সা) এর উপর। পরম করুণাময় ও অসীম দয়ালু আল্লাহর নামে শুরু করছি।

⇛⇛⇛ পবিত্র কুরআন আমাদেরকে জানাচ্ছে যে মহান আল্লাহ অতীত, বর্তমান, ভবিষ্যত সব কিছুর ব্যাপারে জানেন।
এ ব্যাপারে পবিত্র কুরআন যা বলেঃ---

✔ “ নভোমণ্ডল ও ভূমণ্ডলের গোপন রহস্য আল্লাহর কাছেই রয়েছে। ...”
(কুরআন, নাহল১৬:৭৭)
✔ “তুমি কি জান না যে, আল্লাহ জানেন যা কিছু আকাশে ও ভুমণ্ডলে আছে এসব কিতাবে লিখিত আছে। এটা আল্লাহর কাছে সহজ।”
(কুরআন, হাজ্জ ২২:৭০)
✔ “তাঁর কাছেই অদৃশ্য জগতের চাবি রয়েছে। এ গুলো তিনি ব্যতীত কেউ জানে না। স্থলে ও জলে যা আছে, তিনিই জানেন। কোন পাতা ঝরে না; কিন্তু তিনি তা জানেন। কোন শস্য কণা মৃত্তিকার অন্ধকার অংশে পতিত হয় না এবং কোন আর্দ্র ও শুস্ক দ্রব্য পতিত হয় না; কিন্তু তা সব প্রকাশ্য গ্রন্থে রয়েছে।”
(কুরআন, আন’আম ৬:৫৯)
✔ “এগুলো অদৃশ্যের খবর, আমি আপনার কাছে প্রেরণ করি। আপনি তাদের কাছে ছিলেন না, যখন তারা স্বীয় কাজ সাব্যস্ত করছিল এবং চক্রান্ত করছিল।”
(কুরআন, ইউসুফ ১২:১০২)
✔ “ তিনিই সঠিকভাবে নভোমণ্ডল সৃষ্টি করেছেন। যেদিন তিনি বলবেনঃ হয়ে যা, অতঃপর হয়ে যাবে। তাঁর কথা সত্য। যেদিন শিঙ্গায় ফুৎকার করা হবে, সেদিন তাঁরই আধিপত্য হবে। তিনি অদৃশ্য বিষয়ে এবং প্রত্যক্ষ বিষয়ে জ্ঞাত। তিনিই প্রজ্ঞাময়, সর্বজ্ঞ।”
(কুরআন, আন’আম ৬:৭৩) 
✔ “নিশ্চয় আল্লাহর কাছেই কেয়ামতের জ্ঞান রয়েছে। তিনিই বৃষ্টি বর্ষণ করেন এবং গর্ভাশয়ে যা থাকে, তিনি তা জানেন। কেউ জানে না আগামীকল্য সে কি উপার্জন করবে এবং কেউ জানে না কোন দেশে সে মৃত্যুবরণ করবে। আল্লাহ সর্বজ্ঞ, সর্ববিষয়ে সম্যক জ্ঞাত।”
(কুরআন, লুকমান ৩১:৩৪)
✔ “তিনি দৃশ্য ও অদৃশ্যের জ্ঞানী, পরাক্রান্ত, প্রজ্ঞাময়।”
(কুরআন, তাগাবুন ৬৪:১৮)

⇛⇛⇛ কাজেই কে জান্নাতে যাবে আর কে জাহান্নামে যাবে এটাও আল্লাহ তাআলা স্বাভাবিকভাবেই আগে থেকে জানেন।তবে এর মানে এই নয় যে আল্লাহ্‌ জোর করে কাউকে জাহান্নামের পাঠান।
আল্লাহ তা’আলা কখনো চান না যে তাঁর কোন বান্দা জাহান্নামে যাক।
কুরআন ও হাদিসে এ ব্যাপারে বলা হয়েছে----

✔ “…আল্লাহ এমন নন যে, তোমাদের ঈমান নষ্ট করে দেবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ, মানুষের প্রতি অত্যন্ত স্নেহশীল, করুনাময়।”
(কুরআন, বাকারাহ ২:১৪৩)
✔ “তিনিই(আল্লাহ) প্রথমবার অস্তিত্ব দান করেন এবং পুনরায় জীবিত করেন। তিনি ক্ষমাশীল, প্রেমময়; মহান আরশের অধিকারী।”
(কুরআন, বুরুজ ৮৫:১৩-১৫)

► উমার ইবন খাত্তাব (রা) থেকে বর্ণিত। তিনি বলেন, একবার নবী (ﷺ)-এর নিকট কিছু সংখ্যক বন্দী আসে। বন্দীদের মধ্যে একজন মহিলা ছিল। তার স্তন দুধে পূর্ণ ছিল। সে বন্দীদের মধ্যে কোন শিশু পেলে তাকে ধরে কোলে নিত এবং দুধ পান করাতো। নবী (ﷺ) আমাদের বললেনঃ তোমরা কি মনে কর এ মহিলা তার সন্তানকে আগুনে ফেলে দিতে পারে? আমরা বললামঃ না। ফেলার ক্ষমতা রাখলেও সে কখনো ফেলবে না। তারপর তিনি বললেনঃ এ মহিলাটি তার সন্তানের উপর যতটুকু দয়ালু, আল্লাহ তাঁর বান্দার প্রতি এর চেয়েও বেশি দয়ালু।
[সহীহ বুখারী,হাদিস: ৫৯৯৯;সহীহ মুসলিম, হাদিস : ২৭৫৪]
►আবু হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত আছে যে, রাসুলুল্লাহ (ﷺ) বলেনঃ যে ব্যক্তি নেক কাজের ইচ্ছা করে অথচ সস্পাদন করে নি, তার জন্য একটি সাওয়াব লেখা হয় । আর যে ইচ্ছা করার পর কার্য সস্পাদন করে, তবে তার ক্ষেত্রে দশ থেকে সাতশ, গুণ পর্যন্ত সাওয়াব লেখা হয় । পক্ষান্তরে যে কোন মন্দ কাজের ইচ্ছা করে আর তা না করে তবে কোন শুনাহ লেখা হয় না; আর তা করলে (একটি) শুনাহ লেখা হয় । 
[সহিহ মুসলিম, খন্ড ১, হাদিস ২৩৬]

⇛⇛⇛ একজন আবহাওয়াবিদ যেমন প্রযুক্তির মাধ্যমে আগে থেকেই জানতে পারেন যে কখন ঝড় বা বৃষ্টি হবে। কিন্তু ঝড় বা বৃষ্টির জন্য কি আবহাওয়াবিদ দায়ী? মোটেও না। সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞানী ও সর্বশক্তিমান আল্লাহ আগে থেকেই জানেন কে জান্নাতে যাবে বা কে জাহান্নামে যাবে। হাদিসের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি যে আল্লাহ আগে থেকেই তাদের পরিনতি জানেন বলে তারা জান্নাতী বা জাহান্নামী নয় বরং তারা জান্নাতে বা জাহান্নামে যাবে বলে আল্লাহ তা জানেন।তাদের কর্মই তাদের জিম্মাদারী। 

⇛⇛⇛ তাকদিরের এই প্রশ্নের সাথে সম্পর্কিত আরেকটি প্রশ্ন আসতে পারে যে—মুসলিমরা মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করে আবার হিন্দু,বৌদ্ধ,খ্রিষ্ট­ানরা নিজ নিজ পরিবারে জন্মগ্রহণ করে।আবার অনেকের কাছে হয়তো আদৌ ইসলামের দাওয়াতই পৌঁছেনি।এদের কী হবে?
ইসলাম এসব ব্যাপারে খুব পরিষ্কারভাবে আমাদেরকে অবহিত করেছে।
যারা মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছে, তারা জন্মের জন্য জান্নাতে যাবে না, বরং তাদের বিশ্বাস ও কর্মের জন্য জান্নাতে যাবে। অনেক মানুষ আছে যারা মুসলিম পরিবারে জন্ম নিয়েও নামায আদায় করে না অথচ নামায ঈমান ও কুফরের পার্থক্যকারী। আবার অনেকেই মুসলিম পরিবারে জন্মেও ইসলাম ত্যাগ করে। মুসলিম পরিবারে জন্ম নেওয়া অবশ্যই জান্নাতের গ্যারান্টি নয়।আর যে অমুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেছে, তার জন্য সেটি একটি পরীক্ষা।সে যদি যথার্থভাবে ইসলামের দাওয়াত পায়, তাহলে ইসলাম গ্রহণ করা তার জন্য অবশ্য কর্তব্য হবে।

✔ “যিনি[আল্লাহ] সৃষ্টি করেছেন মরণ ও জীবন, যাতে তোমাদেরকে পরীক্ষা করতে পারেন-কে তোমাদের মধ্যে কর্মে শ্রেষ্ঠ। তিনি পরাক্রমশালী, ক্ষমাময়।”
(কুরআন, মুলক ৬৭:২)
✔ “...অতঃপর যদি তোমাদের নিকট আমার পক্ষ থেকে কোন হেদায়েত পৌঁছে, তবে যে ব্যক্তি আমার সে হেদায়েত অনুসারে চলবে, তার উপর না কোন ভয় আসবে, না (কোন কারণে) তারা চিন্তাগ্রস্ত ও সন্তপ্ত হবে।আর যে লোক তা অস্বীকার করবে এবং আমার নিদর্শনগুলোকে মিথ্যা প্রতিপন্ন করার প্রয়াস পাবে, তারাই হবে জাহান্নামবাসী; অন্তকাল সেখানে থাকবে।”
(কুরআন, বাকারাহ ২:৩৮-৩৯)

⇛⇛⇛ এক্ষেত্রে আরেকটি প্রশ্ন আসে যে অনেকের কাছে তো ইসলামের দাওয়াতই পৌঁছায় না।পৃথিবীতে অনেক দুর্গম জায়গা আছে যেখানে হয়তো ইসলামের দাওয়াত যায়নি।আবার অনেকের কাছে বিভিন্ন কারণেই ঠিকভাবে ইসলামের বাণী পৌঁছায়নি।এসব ব্যাপারেও ইসলাম আমাদেরকে সুস্পষ্টভাবে অভিহীত করে।আল্লাহ কারো প্রতি সামান্যতম অন্যায় করবেন না।এটি আল্লাহর সিফাত বা গুণ নয় যে তিনি বান্দার প্রতি বিন্দুমাত্রও জুলম করেন।

✔ “নিশ্চয়ই আল্লাহ কারো প্রতি বিন্দুমাত্রও জুলুম করেন না; আর যদি তা[মানুষের কর্ম] সৎকর্ম হয়, তবে তাকে দ্বিগুণ করে দেন এবং নিজের পক্ষ থেকে বিপুল সওয়াব দান করেন।”
(কুরআন, নিসা ৪:৪০)
✔ “...বস্তুতঃ আল্লাহ তাদের উপর কোন অন্যায় করেননি, কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের উপর অত্যাচার করছিল।”
(কুরআন, আলি ইমরান ৩:১১৭)
✔ “আমি প্রত্যেককেই তার অপরাধের কারণে পাকড়াও করেছি। তাদের কারও প্রতি প্রেরণ করেছি প্রস্তরসহ প্রচন্ড বাতাস, কাউকে পেয়েছে বজ্রপাত, কাউকে আমি বিলীন করেছি ভূগর্ভে এবং কাউকে করেছি নিমজ্জত। আল্লাহ তাদের প্রতি যুলুম করার ছিলেন না; কিন্তু তারা নিজেরাই নিজেদের প্রতি যুলুম করেছে।”
(কুরআন, আনকাবুত ২৯:৪০)
✔ “ আর যখন তোমার পালনকর্তা বনী আদমের পৃষ্টদেশ থেকে বের করলেন তাদের সন্তানদেরকে এবং নিজের উপর তাদেরকে প্রতিজ্ঞা করালেন, আমি কি তোমাদের পালনকর্তা নই ? তারা বলল, অবশ্যই, আমরা অঙ্গীকার করছি। আবার না কেয়ামতের দিন বলতে শুরু কর যে, এ বিষয়টি আমাদের জানা ছিল না।”
(কুরআন, আরাফ ৭:১৭২)

► কোন একটি লোক রাসুল(ﷺ) কে জিজ্ঞেস করেন, হে আল্লাহর রাসুল(ﷺ)! আমলগুলো নতুনভাবে কি ফলদায়ক, না যা হবার তা হয়েই গেছে? উত্তরে রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেনঃ [সৃষ্টির শুরুতে] আদম(আ) থেকে আল্লাহ্‌ তা’আলা তাঁর সন্তানদেরকে বের করেন।তারপর তিনি তাদের মুখ থেকেই তাঁর একত্ববাদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেন।অতঃপর তিনি তাদেরকে স্বীয় দু’ মুষ্টিতে ভরে নেন এবং বলেনঃ “এই মুষ্টির লোকগুলো জান্নাতী এবং ঐ মুষ্টির লোকগুলো জাহান্নামী।জান্নাত ও জাহান্নাম আমলের উপর নির্ভরশীল বটে, কিন্তু জান্নাতবাসীর আমল কার জন্য সহজ হবে এবং জাহান্নামবাসীর আমল কার জন্য সহজ হবে এটা আমার জানা আছে।এখন এর উপরে ভিত্তি করেই কেউ জান্নাতী হবে এবং কেউ জাহান্নামী হবে।আযলের [যেদিন আদম(আ) এর পিঠ থেকে মানবজাতিকে বের করা হয়েছিল] দিন আমি তাদেরকে জান্নাতী বা জাহান্নামী বানাইনি।তাদের আমলগুলোই তাদের জিম্মাদার।কিন্তু তখন থেকেই আমি তাদের আমল সম্পর্কে পূর্ণ অবহিত।”
[তাফসির ইবন কাসির, সুরা আরাফের ১৭২ নং এর তাফসিরে ইমাম ইবন কাসির(র) বর্ণণা করেছেন; হিশাম ইবন হাকিম(র) এর নীতিতে ইবন জারির(র) ও ইবন মিরদুয়াই(র) থেকে বর্ণিত।]
✔ “কোন রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকেই শাস্তি দান করি না।”
(কুরআন, বনী ইস্রাইল(ইসরা) ১৭:১৫)

►আলী (রঃ) হতে বর্ণিতঃ তিনি বলেন- বাকীউল গারকাদ নামক স্থানে এক জানাজায় আমরা অংশ নিয়েছিলাম। এরপর রসূল (ﷺ) আমাদের কাছে এসে বসলেন। আমরাও তাঁর চারপাশে গিয়ে বসলাম। এসময় তাঁর হাতে একটি কাঠি ছিল। তিনি তাঁর মাথা নিচু করে সেটি দিয়ে মাটি খুঁড়তে শুরু করলেন। এরপর বললেন, তোমাদের মধ্যে এমন কোন ব্যক্তি নেই যার স্থান জান্নাত বা জাহান্নামে নির্ধারিত হয়নি, কিংবা তাকে ভাগ্যবান বা হতভাগ্য লিখা হয়নি। একথা শুনে জনৈক সাহাবী বললেন, হে আল্লাহর রসূল (ﷺ)! তাহলে কি আমরা আমল করা বাদ দিয়ে নিয়তির উপর নির্ভর করে বসে থাকব? আমাদের মধ্যে যে সৌভাগ্যবান সে তো সৌভাগ্যবান লোকদের মাঝেই শামিল হয়ে যাবে, আর আমাদের মধ্যে যে হতভাগা, সে তো হতভাগা লোকদের আমলের দিকেই এগিয়ে যাবে। তখন আল্লাহর রসূল (ﷺ) বললেন, সৌভাগ্যের অধিকারী লোকদের জন্য সৌভাগ্য লাভ করার মত আমল সহজ করে দেয়া হবে। এবং দুর্ভাগ্যের অধিকারী লোকদের জন্য দুর্ভাগ্য লাভ করার মত আমল সহজ করে দেয়া হবে। এরপর তিনি পাঠ করলেন, “সুতরাং কেউ দান করলে, মুত্তাকী হলে এবং যা উত্তম তা গ্রহণ করলে, আমি তার জন্য সুগম করে দেব সহজ পথ এবং কেউ কার্পণ্য করলে ও নিজেকে স্বয়ংসম্পূর্ণ মনে করলে, এবং যা উত্তম তা বর্জন করলে, তার জন্য আমি সুগম করে দেব কঠোর পরিণামের পথ” (সূরা লাইল ৯২:৫-১০)
[সহীহ বুখারী, হাদিস : ৪৯৪৯]
► চার প্রকারের লোক কিয়ামতের দিন আল্লাহ্‌ তা’আলার সাথে কথোপকথন করবে।প্রথম হল বধির লোক, যে কিছুই শুনতে পায় না; দ্বিতীয় হল সম্পূর্ণ নির্বোধ ও পাগল লোক যে কিছুই জানে না।তৃতীয় হল অত্যন্ত বৃদ্ধ যার জ্ঞান লোপ পেয়েছে।চতুর্থ হল ঐ ব্যক্তি যে এমন যুগে জীবন যাপন করেছে যে যুগে কোণ নবী আগমন করেননি বা কোন ধর্মীয় শিক্ষাও বিদ্যমান ছিল না।বধির লোকটী বলবেঃ “ইসলাম এসেছিল, কিন্তু আমার কানে কোন শব্দ পৌঁছেনি”।পাগল বলবেঃ “ইসলাম এসেছিল বটে, কিন্তু আমার অবস্থা তো এই ছিল যে শিশুরা আমার উপর গোবর নিক্ষেপ করত।” বৃদ্ধ বলবে” “ইসলাম এসেছিল, কিন্তু আমার জ্ঞান সম্পূর্ণ লোপ পেয়েছিল”আমি কিছুই বুঝতাম না।“ আর যে লোকটির কাছে কোনও রাসুল আসেনি এবং সে তাঁর কোন শিক্ষাও পায়নি সে বলবেঃ “আমার কাছে কোনও রাসুল আসেননি এবং আমি কোন সত্যও পাইনি।সুতরাং আমি আমল করতাম কিভাবে?”
তাদের এসব কথা শুনে আল্লাহ্‌ তা’আলা তাদেরকে নির্দেশ দেবেনঃ “আচ্ছা যাও, জাহান্নামে লাফিয়ে পড়।” রসূল (ﷺ) বলেনঃ “যাঁর হাতে আমার প্রাণ রয়েছে তাঁর শপথ! যদি তারা আল্লাহর আদেশ মেনে নেয় এবং জাহান্নামে লাফিয়ে পড়ে তবে জাহান্নামের আগুন তাদের জন্য ঠাণ্ডা আরামদায়ক হয়ে যাবে।”
অন্য বিবরণে আছে যে, যারা জাহান্নামে লাফিয়ে পড়বে তা তাদের জন্য হয়ে যাবে ঠাণ্ডা ও শান্তিদায়ক।আর যারা বিরত থাকবে তাদের হুকুম অমান্যের কারণে টেনে হিঁচড়ে জাহান্নামে নিক্ষেপ করা হবে।
ইমাম ইবনু জারির(র) এই হাদিসটি বর্ণণা করার পরে আবু হুরাইরা(রা)র নিম্নের ঘোষণাটি উল্লেখ করেছেনঃ “এর সত্যতা প্রমাণ হিসেবে তোমরা ইচ্ছা করলে আল্লাহ্‌ তা’আলার وَمَا كُنَّا مُعَذِّبِينَ حَتَّىٰ نَبْعَثَ رَسُولًا [কোন রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকেই শাস্তি দান করি না।] বাক্যও পাঠ করতে পার।”
[মুসনাদ আহমাদ, তাফসির ইবন কাসির, সুরা বনী ইস্রাইল ১৫নং আয়াতের তাফসির]
[ইমাম মুহাম্মাদ ইবনু ইয়াহইয়া যাহলী(র) কর্তৃক বর্ণিত একটি রেওয়াতে নবীশূণ্য যুগের লোক, পাগল ও শিশুর কথাও এসেছে।]
► কিয়ামতের দিন অজ্ঞ ও বোধহীন লোকেরা নিজেদের বোঝা কোমরে বহন করে নিয়ে আসবে এবং আল্লাহ্‌ তা’আলার সামনে ওজর পেশ করে বলবেঃ “আমাদের কাছে কোন রাসুল আসেননি এবং আপনার কোন হুকুমও পৌঁছেনি।এরূপ হলে আমরা মন খুলে আপনার কথা মেনে চলতাম।” তখন আল্লাহ্‌ তা’আলা বলবেন, “আচ্ছা এখন যা হুকুম করবো তা মানবে তো?” উত্তরে তারা বলবেঃ “হাঁ, অবশ্যই বিনা বাক্য ব্যয়ে মেনে নেবো।” তখন মহামহিমান্বিত আল্লাহ্‌ বলবেন, “আচ্ছা যাও, জাহান্নামের পার্শ্বে গিয়ে তাতে প্রবেশ কর।” তারা তখন অগ্রসর হয়ে জাহান্নামের পার্শ্বে পৌঁছে যাবে।সেখানে গিয়ে যখন ওর উত্তেজনা, শব্দ এবং শাস্তি দেখবে তখন ফিরে আসবে এবং বলবেঃ “হে আল্লাহ্‌ আমাদেরকে এর থেকে রক্ষা করুন।” আল্লাহ্‌ তা’আলা বলবেনঃ “দেখো, তোমরা অঙ্গীকার করেছো যা আমার হুকুম মানবে আবার এই নাফরমানী কেন?” তারা উত্তরে বলবেঃ “আচ্ছা, এবার মানবো।” অতঃপর তাদের কাছ থেকে দৃঢ় অঙ্গীকার নেয়া হবে।তারপর এরা ফিরে এসে বলবেঃ “হে আল্লাহ্‌, আমরা তো ভয় পেয়ে গেছি।আমাদের দ্বারা তো আপনার এই আদেশ মান্য করা সম্ভব নয়” তখন প্রবল প্রতাপান্বিত আল্লাহ্‌ বলবেন, “তোমরা নাফরমানী করেছো।সুতরাং এখন লাঞ্ছনার সাথে জাহান্নামী হয়ে যাও।” রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেন যে, প্রথমবার তারা যদি আল্লাহর নির্দেশ অনুযায়ী জাহান্নামে লাফিয়ে পড়তো তবে ওর অগ্নি তাদের জন্য ঠাণ্ডা হয়ে যেত এবং তাদের দেহের একটি লোমও পুড়তো না।
[মুসনাদ বাযযার, ইমাম ইবন কাসির(র) এর মতে ইমাম ইবন হাব্বান(র) নির্ভরযোগ্যরূপে বর্ণণা করেছেন; তাফসির ইবন কাসির, সুরা বনী ইস্রাইল ১৫নং আয়াতের তাফসির, ইয়াহইয়া ইবন মুঈন(র) ও নাসাঈ(র) এর মতে এতে(সনদের ব্যাপারে) ভয়ের কোন কারণ নেই। ]

⇛⇛⇛ আল্লাহর গুণাবলী সম্পর্কে কুরআন ও হাদিস থেকে আমরা যা জানতে পারি, তা থেকে নিঃসন্দেহে বলা যায় যে, যারা আদৌ ইসলামের দাওয়াত পাবে না, তাদের প্রতি পরকালে যে পরীক্ষা হবে তা মোটেও তাদের সাধ্যাতিত কিছু হবে না। অনেক লোকই আগুনের সেই পরীক্ষাতেও নিজ যোগ্যতায় পাশ করে যাবে এবংঅনেকে নিজ অযোগ্যতায় ব্যার্থ হবে।

✔ “আল্লাহ কাউকে তার সাধ্যাতীত কোন কাজের ভার দেন না; সে তাই পায় যা সে উপার্জন করে এবং তাই তার উপর বর্তায় যা সে করে। ...”
(কুরআন, বাকারাহ ২:২৮৬)

⇛⇛⇛ইসলাম বলে যে-- আল্লাহ মানবজাতির পিতা আদম(আ) এর পৃষ্ঠ থেকে মানবজাতিকে বের করে তাদের থেকে তাঁর একত্ববাদের সাক্ষ্য নেন। 
পৃথিবীতে আল্লাহ তাদেরকে জীবন ও মৃত্যু দেন।কিন্তু এই জীবনে মানবজাতির সেই অঙ্গীকার স্মরণে থাকে না। এটাই মানুষের পরীক্ষা। কিন্তু শেষ বিচারের দিন এই অঙ্গীকার মানুষের স্মরণে আসবে।ব্যাপারটি অনেকটা এরকম—একজন পরীক্ষক পরীক্ষার হলে শিক্ষার্থীদের বই দেখতে দেন না।কিন্তু পরীক্ষা শেষে তারা বই দেখতে পারে।
আল্লাহ আদি যুগ থেকে নবী-রাসুল প্রেরণ করে মানুষকে একত্ববাদের ধর্মের দিকে আহ্বান করেছেন।শেষ নবী মুহাম্মাদ(ﷺ) এর মাধ্যমে এই ধর্মের প্রচার আজো আছে।যুগে যুগে প্রত্যেকের কাছেই আল্লাহর পক্ষ থেকে দূত এসেছে।যারা তাদের নিজ যুগের নবীকে মেনেছে বা মানবে, তারা মুক্তি পাবে।আর যাদের কাছে আদৌ এই আহ্বান পৌঁছেনি, তাদের ফয়সালার কথা ইতিমধ্যে উল্লেখ করা হয়েছে। 

✔ “সকল মানুষ একই জাতিস্বত্তার অন্তর্ভুক্ত ছিল। অতঃপর আল্লাহ তা’আলা নবীদের পাঠালেন সুসংবাদদাতা ও ভীতি প্রদর্শনকরী হিসাবে। আর তাঁদের সাথে অবর্তীণ করলেন সত্য কিতাব, যাতে মানুষের মাঝে বিতর্কমূলক বিষয়ে মীমাংসা করতে পারেন। বস্তুতঃ কিতাবের ব্যাপারে অন্য কেউ মতভেদ করেনি; কিন্তু পরিষ্কার নির্দেশ এসে যাবার পর নিজেদের পারস্পরিক জেদবশতঃ তারাই করেছে, যারা কিতাব প্রাপ্ত হয়েছিল। অতঃপর আল্লাহ ঈমানদারদেরকে হেদায়েত করেছেন সেই সত্য বিষয়ে, যে ব্যাপারে তারা মতভেদ লিপ্ত হয়েছিল। আল্লাহ যাকে ইচ্ছা, সরল পথ বাতলে দেন।”
(কুরআন, বাকারাহ ২:২১৩)
✔ আমি আপনার(মুহাম্মাদ(ﷺ)) পূর্বে পূর্ববর্তী সম্প্রদায়ের মধ্যে রসূল প্রেরণ করেছি।
(কুরআন, হিজর ১৫:১০)
✔ আমি প্রত্যেক উম্মতের মধ্যেই রাসূল প্রেরণ করেছি এই মর্মে যে, তোমরা আল্লাহর ইবাদত কর এবং তাগুত থেকে নিরাপদ থাক। অতঃপর তাদের মধ্যে কিছু সংখ্যককে আল্লাহ হেদায়েত করেছেন এবং কিছু সংখ্যকের জন্যে বিপথগামিতা অবধারিত হয়ে গেল। সুতরাং তোমরা পৃথিবীতে ভ্রমণ কর এবং দেখ মিথ্যারোপকারীদের কিরূপ পরিণতি হয়েছে।
(কুরআন, নাহল ১৬:৩৬)
✔ “যে কেউ সৎপথে চলে, তারা নিজের মঙ্গলের জন্যেই সৎ পথে চলে। আর যে পথভ্রষ্ট হয়, তারা নিজের অমঙ্গলের জন্যেই পথভ্রষ্ট হয়। কেউ অপরের বোঝা বহন করবে না। কোন রাসূল না পাঠানো পর্যন্ত আমি কাউকেই শাস্তি দান করি না।”
(কুরআন, ইসরা ১৭:১৫)
✔ “তোমরা যদি অকৃতজ্ঞতা দেখাও,তবে আল্লাহ নিশ্চয়ই তোমাদের উপর নির্ভর করেন না; কিন্তু তিনি তাঁর বান্দাদের অকৃতজ্ঞতা পছন্দ করেন না। আর যদি তোমরা কৃতজ্ঞতা প্রকাশ কর তবে তাতে তিনি তোমাদের প্রতি প্রসন্ন হবেন। আর কোনো ভারবাহী অন্যের বোঝা বহন করবে না। তারপর তোমাদের প্রভুর নিকটেই তোমাদের প্রত্যাবর্তন, তখন তিনি তোমাদের জানিয়ে দেবেন যা তোমরা করে যাচ্ছিলে। নিঃসন্দেহ অন্তরের ভেতরে যা আছে সে সন্বন্ধে তিনি সম্যক অবগত।”
(কুরআন, যুমার ৩৯:৭)

⇛⇛⇛ প্রত্যেক মানুষকেই স্রষ্টা আল্লাহ সঠিক ফিতরাত বা প্রকৃতির উপরে সৃষ্টি করেন।আর সেটি হচ্ছে একত্ববাদ, স্রষ্টার প্রতি পূর্ণাঙ্গ আত্মসমর্পণ বা ইসলাম।পরবর্তীতে মানুষ পিতামাতা ও পারিপার্শ্বিক প্রভাবে বিভিন্ন ধর্মবিশ্বাস লাভ করে।
বিভিন্ন অমুসলিম সম্প্রদায়[হিন্দু,খ্র­িষ্টান,বৌদ্ধ,ইহুদি] এর শিশুসন্তা্নের ব্যাপারে ইসলাম যা বলে--

► আবূ হুরায়রা (রা) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, রাসূলুল্লাহ্‌ (ﷺ) ইরশাদ করেছেন, প্রতিটি নবজাতকই জন্মলাভ করে ফিতরাতের উপর। এরপর তা মা-বাপ তাকে ইয়াহুদী বা খ্রিষ্টান বা অগ্নিপূজারী রূপে গড়ে তোলে। যেমন, চতুষ্পদ পশু একটি পূর্ণাংগ বাচ্চা জন্ম দেয়। তোমরা কি তাদের মধ্যে কোন (জন্মগত) কানকাটা দেখতে পাও? পরে আবূ হুরায়রা (রা) তিলাওয়াত করলেন- { فِطْرَةَ اللَّهِ الَّتِي فَطَرَ النَّاسَ عَلَيْهَا لاَ تَبْدِيلَ لِخَلْقِ اللَّهِ ذَلِكَ الدِّينُ الْقَيِّمُ } আল্লাহর দেওয়া ফিতরাতের[অর্থাৎ ইসলাম] অনুসরণ কর, যে ফিতরাতের উপর তিনি মানুষ সৃষ্টি করেছেন, এটাই সরল সুদৃঢ় দ্বীন (সূরা রূম: ৩০:৩০)।
[সহীহ বুখারী, হাদিস : ১৩৫৯]
► রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেনঃ “প্রত্যেক শিশু ফিতরাতের(চিরন্তন প্রকৃতি) উপর জন্মগ্রহণ করে থাকে।” জনগণ তখন উচ্চস্বরে তাঁকে জিজ্ঞেস করেনঃ “মুশরিকদের শিশুরাও কি?” উত্তরে তিনি বলেনঃ “মুশরিকদের শিশুরাও”
[হাফিজ আবু বকর বারকানী(র), আল মুস্তাখরিজু ‘আলাল বুখারী]
► রাসুলুল্লাহ(ﷺ) বলেছেন যে, মুশরিকদের শিশুদেরকে জান্নাতবাসীদের খাদেম বানানো হবে।
[তাবারানী,তাফসির ইবন কাসির, সুরা বনী ইস্রাইল ১৫নং আয়াতের তাফসির]

⇛⇛⇛ শিশু অবস্থায় মারা গেলে সেটি তাদের জন্য ওজর হিসাবে গণ্য হতে পারে।কিন্তু প্রাপ্তবয়স্ক অবস্থায় যে কোন মানুষের স্বাধীন বুদ্ধি ও বিবেক থাকে।এই সময়ে যদি তার কাছে ইসলামের দাওয়াত পৌঁছায় এবং সে যদি তা গ্রহণ না করে, তাহলে হিন্দু,খ্রিষ্টান বা নাস্তিক পরিবারে জন্মগ্রহণ করা তার জন্য অজুহাত হতে পারে না।নিজ কর্মের জন্যই সে জাহান্নামের উপযুক্ত হয়।তার জন্য নির্ধারিত পরীক্ষায় অকৃতকার্য হবার দ্বারা। পৃথিবীতে বহু মানুষ এই পরীক্ষায় কৃতকার্য হচ্ছে, অমুসলিম থেকে ইসলাম ধর্ম গ্রহণ করছে।

☛☛☛ আমরা উপসংহারে বলতে পারি যে—আল্লাহ মানুষের তাকদির নির্ধারণ করেছেন।কিন্তু এর ফলে মানুষের জান্নাত বা জাহান্নাম নির্ধারিত হয় না বরং মানূষের বিশ্বাস ও কর্ম দ্বারা জান্নাত বা জাহান্নাম নির্ধারিত হয়।আল্লাহ মানুষের প্রতি বিন্দুমাত্র জুলুমও করেন না। তাকদিরে লেখা হয়েছে বলে একটা মানুষের জান্নাত বা জাহান্নাম নির্ধারিত হয় না বরং বিশ্বাস ও কর্মের দ্বারা তা নির্ধারন হয়। একজন ভালো শিক্ষক অনেক সময় পরীক্ষা নেবার আগেই বুঝতে পারেন যে কোন ছাত্র প্রথম হবে আর কোন কোন ছাত্র ফেল করবে।এ কারণে যদি তিনি পরীক্ষা না নেন, তাহলে কি তাকে ন্যায়বান শিক্ষক বলা যাবে? একইভাবে পরিনতি জানা সত্ত্বেয় আল্লাহ মানুষকে দুনিয়ার পরীক্ষাক্ষেত্রে পাঠান, তার ভালোমন্দ পরীক্ষা করার জন্য।মানুষের কর্ম অনুযায়ী আল্লাহ এর প্রতিদান দেন।আল্লাহ সব থেকে বড় ন্যায়বিচারক।মানুষকে স্বাধীন চেতনা, বিচারবুদ্ধি দেওয়া হয়েছে।আল্লাহ মানুষকে বিবেক-বুদ্ধি এইজন্য দিয়েছেন যেন মানুষ তা ব্যবহার করে।সুনির্দিষ্টভাবে সাহাবীদের-- “তাহলে কি আমরা আমল করা বাদ দিয়ে নিয়তির উপর নির্ভর করে বসে থাকব?”--প্রশ্নের উত্তরে রাসুল(ﷺ) এটি করতে নিষেধ করেছেন এবং সাধ্যানুযায়ী সৎকর্মের উপদেশ দিয়েছেন।মানুষ যদি এরপরেও যদি তাকদিরের উপর দোষ দিয়ে বসে থাকে ও সৎকর্ম না করে, তবে এজন্য আল্লাহ মোটেও দায়ী নন।কারণ তাকে তো তার তাকদির জানিয়ে দেওয়া হয়নি।কে তাকে বলে দিয়েছে যে সে জাহান্নামেই যাবে? বরং এই বসে থাকাটাই তার জন্য অপরাধ হিসেবে গণ্য হবে।

এবং আল্লাহ ভালো জানেন।
​

MRM-1.9
site search by freefind advanced

© 2015 by Ask Islam Bangla.
Powered by Create your own unique website with customizable templates.